জামে' আত-তিরমিজি > রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণের মর্যাদা > 'উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর মর্যাদা
৩৬৮১
আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “হে আল্লাহ! আবু জাহ্ল কিংবা 'উমার ইবনুল খাত্তাব- এই দু'জনের মাঝে তোমার নিকট যে বেশি প্রিয়, তার মাধ্যমে তুমি ইসলামকে মজবুত কর ও মর্যাদা দান কর"। ইবনু 'উমার (রাঃ) বলেন, ঐ দু'জনের মাঝে 'উমার (রাঃ)-ই আল্লাহ তা'আলার প্রিয় হিসেবে আবির্ভূত হন। সহীহঃ মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী (৬০৩৬) ।
৩৬৮২
আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা উমার (রাঃ)-এর মুখে ও হৃদয়ে সত্যকে স্থাপন করেছেন। ইবনু 'উমার (রাঃ) বলেন, জনগণের সম্মুখে কখনো কোন প্রসঙ্গ আবির্ভূত হলে লোকজনও তা সম্পর্কে মন্তব্য ব্যক্ত করত এবং 'উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-ও অভিমত ব্যক্ত করতেন। দেখা যেত, 'উমার (রাঃ)-এর অভিমত এর সমর্থনে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১০৮) ।
৩৬৮৭
আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি স্বপ্নে দেখলাম যেন আমার কাছে এক পেয়ালা দুধ আনা হয়েছে, তা হতে আমি পান করলাম এবং বাকি অংশটুকু ‘উমার ইবনুল খাত্তাবকে দিলাম। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এর কি ব্যাখ্যা করেন? তিনি বললেনঃ “জ্ঞান”। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ২২৮৪ নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে।
৩৬৮৮
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ
নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মি’রাজের রাতে আমি জান্নাতে প্রবেশ করে তাতে একখানা সোনার বালাখানা প্রত্যক্ষ করলাম। আমি প্রশ্ন করলাম, এ বালাখানা কার? ফেরেশতারা বললেন, কুরাইশের এক যুবকের। আমি ধারণা করলাম, আমিই সেই যুবক। আমি প্রশ্ন করলামঃ কে সেই যুবক? ফেরেশতারা বললেন, ‘উমার ইবনুল খাত্তাব। সহীহঃ সহীহাহ্ (১৪০৫, ১৪২৩), বুখারী ও মুসলিম।
৩৬৮৯
বুরাইদাহ (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ
এক দিন ভোরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাল (রাঃ)-কে ডেকে বললেনঃ হে বিলাল! তুমি জান্নাতে কি কারণে আমার আগে আগে থাকছ? যখনই আমি জান্নাতে প্রবেশ করেছি সে সময়ই আমার আগে তোমার জুতার শব্দ শুনতে পেয়েছি। গত রাতেও আমি জান্নাতে প্রবেশ করেছি এবং আমার আগে তোমার জুতার শব্দ শুনতে পেয়েছি। আমি স্বর্ণনির্মিত একটি বর্গাকার সুউচ্চ প্রাসাদের নিকট এসে বললামঃ এ প্রাসাদটি কার? ফেরেশতারা বললেন, এটা আরবের এক ব্যক্তির। আমি বললাম, আমি একজন আরব। সুতরাং এ প্রাসাদটি কার? তারা বললেন, কুরাইশ বংশের এক লোকের। আমি বললামঃ আমি কুরাইশ বংশীয়, অতএব এ প্রাসাদটি কার? তারা বললেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উম্মাতের এক ব্যক্তির। আমি বললাম, আমিই মুহাম্মাদ, সুতরাং এ প্রাসাদটি কার? তারা বললেন, ‘উমার ইবনুল খাত্তাবের। তারপর বিলাল (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কখনো আমি আযান দিলেই দুই রাক’আত নামায আদায় করি এবং কখনো আমার উযূ ছুটে গেলেই আমি উযূ করি এবং মনে করি আল্লাহ তা’আলার নামে দুই রাক’আত নামায আদায় করা আমার কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ দু’টি কারণেই (তোমার এ মর্যাদা)। সহীহঃ তা’লীকুর রাগীব (১/৯৯)।
৩৬৯০
বুরাইদাহ (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কোন এক যুদ্ধাভিযানে যান। তিনি ফিরে এলে এক কৃষ্ণবর্ণা মেয়ে এসে বলে, হে আল্লাহর রাসূল! আমি মানত করেছিলাম যে, আপনাকে আল্লাহ তা’আলা হিফাযাতে (সুস্থাবস্থায়) ফিরিয়ে আনলে আপনার সম্মুখে আমি দফ বাজাব এবং গান করব। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি সত্যিই যদি মানত করে থাক তবে দফ বাজাও, তা না হলে বাজিও না। সে দফ (এক মুখ খোলা ঢোল) বাজাতে লাগল। এই অবস্থায় সেখানে আবূ বাক্র (রাঃ) এলেন এবং সে দফ বাজাতে থাকে, তারপর 'আলী (রাঃ) এলেন এবং সে ওটা বাজাতে থাকে। তারপর 'উসমান (রাঃ) এলেন, সে সময়ও সে তা বাজাতে থাকে। তারপর ‘উমার (রাঃ) এসে প্রবেশ করলে সে দফটি তার নিতম্বের নীচে রেখে তার উপর অবস্থান করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে 'উমার! তোমাকে দেখলে শাইতানও ভয় পায়। আমি উপবিষ্ট ছিলাম আর ঐ মেয়েটি দফ বাজাচ্ছিল। পরে আবূ বাক্র এসে প্রবেশ করলে সে সময়ও সে তা বাজাতে থাকে। এরপর 'আলী প্রবেশ করলে সে সময়ও সে তা বাজাতে থাকে। এরপর ‘উসমান এসে প্রবেশ করলে তখনও সে তা বাজাতে থাকে। অবশেষে তুমি এসে যখন প্রবেশ করলে, হে ‘উমার! সে সময় সে দফটি ফেলে দিল। সহীহঃ নাক্বদুল কিত্তানী (৪৭-৪৮), সহিহাহ্ (২২৬১)।
৩৬৯১
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসা ছিলেন। সে সময় আমরা একটা সোরগোল ও শিশুদের হৈচৈ শুনতে পেলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উঠে গিয়ে দেখলেন, এক হাবশী নারী নেচেকুদে খেলা দেখাচ্ছে আর শিশুরা তার চারিদিকে ভীড় জমিয়েছে। তিনি বললেনঃ হে ‘আয়িশাহ্! এসো এবং প্রত্যক্ষ কর। অতএব আমি গেলাম এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাঁধের উপর আমার চিবুক রেখে তার খেলা প্রত্যক্ষ করতে লাগলাম। আমার চিবুক ছিল তাঁর মাথা ও কাঁধের মধ্যবর্তী জায়গায়। (কিছুক্ষণ পর) আমাকে তিনি বললেনঃ তুমি কি তৃপ্ত হওনি, তোমার কি তৃপ্তি পূর্ণ হয়নি? তিনি বলেন, আমি না, না বলতে থাকলাম। আমার লক্ষ্য ছিল, আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কতটুকু খাতির করেন তা পর্যবেক্ষণ করা। ইত্যবসরে ‘উমার (রাঃ) আবির্ভূত হন এবং মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত লোক তার কাছ হতে সটকে পড়ে। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, সে সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি দেখলাম জিন ও মানববেশধারী শাইতানগুলো ‘উমারকে দেখেই সরে যাচ্ছে। তিনি বলেন, তারপর আমি ফিরে এলাম। সহীহঃ মিশকাত (৬০৩৯) ।
৩৬৯৫
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একদিন এক লোক তার মেষ (বকরী) পাল চরাচ্ছিল। হঠাৎ একটি নেকড়ে বাঘ এসে একটি বকরী ধরে ফেলে। তার মালিক এসে নেকড়ের কাছ থেকে বকরীটি ছিনিয়ে নিল। নেকড়ে বলল, হিংস্র জন্তুর দিনে (যেদিন মানুষ মারা যাবে এবং হিংস্র জন্তুরা বাকি থাকবে) তুমি কি করবে, যেদিন আমি ছাড়া এদের কোন রাখাল থাকবে না? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি নিজে এবং আবূ বকর ও ‘উমার এতে (নেকড়ের মন্তব্যে) বিশ্বাস স্থাপন করলাম। আবূ সালামাহ্ (রাঃ) বলেন, সেই মজলিসে ঐ দিন তারা দু’জন হাযির ছিলেন না। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। এটি ৩৬৭৭ নং হাদীসের পূর্ণাঙ্গরূপ।
৩৬৮৬
উকবাহ ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার পরবর্তীতে কেউ নবী হলে অবশ্যই 'উমার ইবনুল খাত্তাবই নবী হত। হাসানঃ সহীহাহ্ (৩২৭) ।
৩৬৯২
আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার জন্যই প্রথমে (কবর) বিদীর্ণ করা হবে, তারপর আবু বকরের, তারপর উমারের জন্য। তারপর আমি আল-বাকী’র কবরবাসীদের নিকট আসব এবং তাদেরকে আমার সাথে হাশরের মাঠে সমবেত করা হবে। তারপর আমি মক্কাবাসীদের জন্য প্রতীক্ষা করব। পরিশেষে হারামাইন শরীফাইন (মক্কা ও মদীনা)-এর মধ্যবর্তী স্থানে আমাকে উঠানো হবে। যঈফ, যঈফা (২৯৪৯)
৩৬৯৪
আবদুল্লাহ ইব্ন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের সামনে জান্নাতীদের একজন আবির্ভূত হবেন। ইত্যবসরে আবু বাকর (রাঃ) আবির্ভূত হন। তিনি আবার বলেনঃ তোমাদের সামনে জান্নাতীদের একজন আবির্ভূত হবেন। ইত্যবসরে উমর (রাঃ) আবির্ভূত হন। যঈফ, মিশকাত (৬০৮৫)
৩৬৮৪
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ
তিনি বলেনঃ উমার (রাঃ) আবু বাকর (রাঃ)-কে বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরেই হে সর্বোত্তম মানুষ। আবূ বাকর (রাঃ) বলেন, আপনি আমার প্রসঙ্গে এমন মন্তব্য করলেন! অথচ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অবশ্যই বলতে শুনেছিঃ উমারের চাইতে অধিক ভালো কোন লোকের উপর দিয়ে সূর্য উঠেনি। মাওযু যঈফা (১৩৫৭)
৩৬৮৫
ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে বর্নিতঃ
আমি মনে করি না যে, এমন কোন ব্যক্তি আছেন যিনি নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ভালবাসেন অথচ আবু বাক্র ও 'উমার (রাঃ)-এর মর্যাদা খাটো করে দেখেন। সনদ সহীহ মাকতু' ।
৩৬৯৩
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সাবেক উম্মাতদের মাঝে ‘মুহাদ্দাস’ (তীক্ষ্ণবুদ্ধি ও সূক্ষদর্শী লোক) আবির্ভাব হতেন। আমার উম্মাতদের মাঝে কেউ মুহাদ্দাস হলে তা ‘উমার ইবনুল খাত্তাবই। হাসান সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
৩৬৮৩
আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “হে আল্লাহ! আবু জাহল ইবনু হিশাম অথবা উমার ইবনুল খাত্তাবের মারফত ইসলামকে শক্তিশালী কর"। রাবী বলেনঃ পরের দিন সকালে উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হাযির হয়ে ইসলাম ক্ববূল করেন। অত্যন্ত দুর্বল, মিশকাত (৬০৩৬)
৩৬৯৩
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সাবেক উম্মাতদের মাঝে ‘মুহাদ্দাস’ (তীক্ষ্ণবুদ্ধি ও সূক্ষদর্শী লোক) আবির্ভাব হতেন। আমার উম্মাতদের মাঝে কেউ মুহাদ্দাস হলে তা ‘উমার ইবনুল খাত্তাবই। হাসান সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
৩৬৯৩
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সাবেক উম্মাতদের মাঝে ‘মুহাদ্দাস’ (তীক্ষ্ণবুদ্ধি ও সূক্ষদর্শী লোক) আবির্ভাব হতেন। আমার উম্মাতদের মাঝে কেউ মুহাদ্দাস হলে তা ‘উমার ইবনুল খাত্তাবই। হাসান সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।