সহিহ মুসলিম > মসজিদ ও সালাতের স্থানসমূহ > যখন মুসলিমদের ওপর কোন বিপদ আপতিত হয়, তখন সকল সলাতে ‘কুনূ্তে নাযিলাহ্’ পাঠ মুস্তাহাব

১৪২৬

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজ্‌রের সলাতে ক্বিরাআত শেষ তাকবীর দিয়ে রুকূ‘তে গিয়ে রুকূ‘ থেকে যখন মাথা উঠাতেন তখন বলতেনঃ “সামি‘আল্ল-হু লিমান হামিদাহ, রব্বানা-ওয়ালাকাল হাম্‌দ” - (অর্থাৎ - যে আল্লাহর প্রশংসা করে আল্লাহ তাঁর প্রশংসা শুনেন। হে আমাদের প্রভু ! সকল প্রশংসা তোমারই জন্য নির্দিষ্ট।)। এরপর তিনি দাঁড়িয়ে বলতেনঃ হে আল্লাহ! ওয়ালীদ ইবনু ওয়ালীদ, সালামাহ্‌ ইবনু হিশাম ও ‘আইয়্যাশ ইবনু রবী‘আহ্‌ এবং দুর্বল ও নিপীড়িত মু‘মিনদের নাযাত দান করো। হে আল্লাহ ! তুমি মুযার গোত্রকে কঠোরহস্তে পাকড়াও করো। আর ইউসুফ (আঃ) -এর সময়ের দুর্ভিক্ষের মতো দুর্ভিক্ষ দিয়ে তাদের শায়েস্তা করো। হে আল্লাহ ! তুমি লিহ্‌ইয়ান, রি‘লান, যাক্‌ওয়ান ও ‘উসাইয়্যাহ্‌ গোত্রের ওপর অভিসম্পাত বর্ষণ করো। কেননা তারা আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের অবাধ্য হয়েছে। অতঃপর আমরা জানতে পারলাম যে, আয়াত- “হে নবী ! এর ব্যাপারে তোমার কোন করণীয় নেই। আল্লাহ তাদের তাওবাহ্‌ কবূল করুন আর তাদেরকে শাস্তি দান করুন এ ব্যাপারে তিনি পূর্ণ ইখতিয়ারের অধিকারী। কেননা তারা তো যালিম” – (সূরাহ্‌ আ-লি ‘ইমরান ৩: ১২৮)। অবতীর্ণ হওয়ার পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এভাবে কুনূত পড়া ছেড়ে দিয়েছিলেন। (ই.ফা.১৪১১, ই.সে.১৪২২)


১৪২৭

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে এতে ইউসুফের সময়ে দুর্ভিক্ষের মত দুর্ভিক্ষের মুখোমুখী করা পর্যন্ত উল্লেখ করেছেন। পরের অংশটুকু উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ১৪১২, ই.সে. ১৪২২)


১৪২৮

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক সময় একমাস যাবৎ ফাজরের সলাতে দ্বিতীয় রাক‘আতে রুকূ থেকে ওঠার পরে কুনূত পড়েছেন। এতে তিনি যখন রুকূ‘ থেকে উঠে “সামিআল্ল-হু লিমান হামিদাহ” বলতেন তখন কুনূত পড়তে গিয়ে বলতেনঃ হে আল্লাহ, ওয়ালীদ ইবনু ওয়ালীদকে মুক্ত করে দাও। হে আল্লাহ ! সালামাহ্‌ ইবনু হিশামকে মুক্তি দাও। হে আল্লাহ ! ‘আয়িশাহ্‌ ইবনু আবূ রাবী‘আহ্‌কে মুক্তি দাও। হে আল্লাহ ! দুর্বল অসহায় মু‘মিনদেরকেও মুক্তি দাও। হে আল্লাহ ! তুমি মুযার গোত্রকে তোমার কঠোরতা দ্বারা পিষে মারো। হে আল্লাহ ! তুমি তাদের ওপর ইউসুফ (আঃ) -এর সময়ের দুর্ভিক্ষের মতো দুর্ভিক্ষ দান করো। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেছেন, পরে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে এ দু‘আ পরিত্যাগ করতে দেখেছি। এতে আমি বিস্মিত হয়ে বললামঃ আমি দেখছি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এখন তাদের জন্য দু‘আ করা ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেনঃ আমাকে তখন বলা হলো তুমি কি দেখছনা যে, তারা সবাই মুক্ত হয়ে চলে এসেছেন? (ই.ফা. ১৪১৩, ই.সে. ১৪২৩)


১৪২৯

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ইশার সলাত আদায় করেছিলেন। সাজদাহ্ করার পূর্বে রুকূ’ থেকে উঠে যখন তিনি “সামি‘আল্ল-হু লিমান হামিদাহ” বললেন তখন এ বলে দু‘আ করলেনঃ “হে আল্লাহ! ‘আইয়্যাশ ইবনু রাবী‘আকে মুক্তিদান করো” এতটুকু বর্ণনা করার পর আবূ হুরায়রাহ্ আওযা‘ঈ বর্ণিত হাদীসের বা সিনী ইউসুফ [অর্থাৎ- ইউসুফ (আঃ) ]-এর যুগের দুর্ভিক্ষের ন্যায় দুর্ভিক্ষ দিয়ে শাস্তিদান করো পর্যন্ত উল্লেখ করলেন। এতে তিনি আওযা‘ঈ বর্ণিত হাদীসের পরের অংশটুকু উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ১৪১৪, ই.সে. ১৪২৪)


১৪৩০

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ আমি তোমাদেরকে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর মতো করে (প্রায় অনুরূপ) সলাত আদায় করে দেখাব। এরপর আবূ হুরায়রাহ্ যুহর, ‘ইশা ও ফাজরের সলাতে কুনূত পড়তেন। এতে তিনি মু‘মিনদের জন্য দু‘আ করতেন এবং কাফিরদেরকে অভিসম্পাত করতেন। (ই.ফা. ১৪১৫, ই.সে. ১৪২৫)


১৪৩১

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

তিনি বলেন, “বি‘রি মা‘উনাহ্‌” নামক স্থানে যে মু‘মিনদেরকে হত্যা করা হয়েছিল, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের হত্যাকারীদের জন্য ত্রিশদিন পর্যন্ত ফাজরের সলাতে বদ দু‘আ করেছিলেন। আনাস বর্ণনা করেছেন, “বি‘রি মা‘উনাহ্‌” নামক স্থানে নিহতদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা আয়াত অবতীর্ণ করে ছিলেন যা আমরা পাঠ করতাম। অবশেষে তা মানসুখ বা রহিত করে দেয়া হয়েছিল। আয়াতটি ছিল- অর্থাৎ“আমাদের ক্বওমকে এ সংবাদ পৌছিয়ে দাও যে, আমরা আমাদের প্রভুর সাক্ষাৎ লাভ করেছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন। আর আমরাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছি।” (ই.ফা. ১৪১৬, ই.সে. ১৪২৬)


১৪৩২

থেকে বর্নিতঃ

তিনি বলেন, আমি আনাসকে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি ফাজ্‌রের সলাতে কুনূত পড়তেন? জবাবে তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, রুকূ‘র পরে সংক্ষিপ্তভাবে পড়তেন। (ই.ফা. ১৪১৭, ই.সে.১৪২৭)


১৪৩৩

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মাস যাবৎ ফাজ্‌রের সলাতে রুকূ’ করার পর কুনূত পড়েছেন। এতে তিনি রি‘ল ও যাক্‌ওয়ান গোত্রদ্বয়ের জন্য বদ-দু‘আ করতেন। আর ‘উসাইয়্যাহ্‌ গোত্র সম্পর্কে বলতেন যে, ‘উসায়ইয়্যাহ্‌ আল্লাহ ও তার রাসূলের অবাধ্য হয়েছে। (ই.ফা. ১৪১৮, ই.সে. ১৪২৮)


১৪৩৪

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মাস যাবৎ ফাজ্‌রের সলাতে রুকূ‘ থেকে উঠার পর কুনূতে বানূ ‘উসাইয়্যাহ্‌ গোত্রের জন্য বদ-দু‘আ করেছেন। (ই.ফা. ১৪১৯, ই.সে. ১৪২৯)


১৪৩৫

আসিম (রহঃ) থেকে বর্নিতঃ

তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) - কে কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম যে, কুনূত রুকূ’ করার পূর্বে পড়তে হবে না পরে? জবাবে তিনি বললেনঃ রুকূ’ করার পূর্বে পড়তে হবে। তিনি বলেন, এ কথা শুনে আমি আবার বললাম যে, কোন কোন লোক বলে থাকে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূ’ করার পর কুনূত পড়তেন। আনাস (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (রুকূর পরে) একমাস কুনূত পাঠ করেছেন। তখন তিনি ঐ সব লোকদের জন্য বদ-দু‘আ করতেন যারা তাঁর (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) সহাবীকে হত্যা করেছিল যাদেরকে ‘ক্বারী’ বলে সম্বোধন করা হত। (ই.ফা. ১৪২০, ই.সে. ১৪৩০)


১৪৩৬

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

তিনি বলেন, বি‘রি মা‘উনাহ্‌-এর ঘটনায় ‘ক্বারী’ বলে পরিচিত সত্তর জন সহাবীকে হত্যার কারণে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যতখানি বেদনাহত হয়ে ছিলেন এমনটি আর কোন সেনাদলের ক্ষেত্রে হতে দেখিনি। এ ঘটনার পর তিনি একমাস পর্যন্ত (ঐসব সাহাবার) হত্যাকারীদের জন্য বদ-দু‘আ করেছিলেন। (ই.ফা. ১৪২১, ই.সে ১৪৩১)


১৪৩৭

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে উভয়েই কিছুটা অতিরিক্ত শাব্দিক তারতম্যসহ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১৪২২, ই.সে.১৪৩২)


১৪৩৮

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

এক সময়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রি‘ল, যাক্‌ওয়ান ও ‘উসাইয়্যাহ্‌ গোত্রসমূহকে লা’নত করে একমাস পর্যন্ত সলাতে কূনূত পড়েছেন। এরা সবাই আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে নাফরমানী করেছিল। (ই.ফা. ১৪৩২, ই.সে. ১৪৩৩)


১৪৩৯

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ (অর্থবোধক) হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১৪২৪, ই.সে. ১৪৩৪)


১৪৪০

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরবে কিছু গোত্রের জন্য এক সময়ে একমাস যাবৎ বদ-দু‘আ করেছিলেন। কিন্তু পরে তিনি তা পরিত্যাগ করেন। (ই.ফা. ১৪২৫, ই.সে.১৪৩৫)


১৪৪১

বারা'আ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজ্‌র এবং মাগরিবের সলাতে কুনূত পড়তেন। (ই.ফা. ১৪২৬, ই.সে. ১৪৩৬)


১৪৪২

বারা'আ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজ্‌র ও মাগরিবের সলাতে কুনূত পড়তেন। (ই.ফা. ১৪২৭, ই.সে. ১৪৩৭)


১৪৪৩

থেকে বর্নিতঃ

তিনি বলেন, কোন এক সলাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ বলে বদ- দু‘আ করলেনঃ হে আল্লাহ ! তুমি বানী লিহ্‌ইয়ান, রি‘ল যাক্‌ওয়ান ও ‘উসাইয়্যাহ্‌ গোত্রসমূহের ওপর লা‘নাত বর্ষণ করো। তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নাফরমানী করেছে। আর গিফার গোত্রকে আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করুন এবং আসলাম গোত্রকে নিরাপদ রাখুন। (ই.ফা. ১৪২৮, ই.সে. ১৪৩৮)


১৪৪৪

থেকে বর্নিতঃ

তিনি বলেন, খুফাফ ইবনু ঈমা বর্ণনা করেছেন। তিনি (খুফাফ ইবনু ঈমা) বলেন, একদিন সলাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূ’ করলেন এবং তারপর রুকূ’ থেকে মাথা তুলে বললেনঃ গিফার গোত্রকে আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করুন। আসলাম গোত্রকে আল্লাহ নিরাপদে রাখুন। আর ‘উসাইয়্যাহ্‌ গোত্র তো আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নাফরমানী করেছে। এরপর তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ ! তুমি বানী লিহ্‌ইয়ান গোত্রের ওপর লা‘নাত বর্ষণ করো, রি‘ল ও যাকওয়ান গোত্রদ্বয়ের ওপর লা‘নাত বর্ষণ করো। এরপর তিনি সাজদায় চলে গেলেন। খুফাফ ইবনু ঈমা বলেছেনঃ এ কারণেই কুনূতে কাফিরদের লা‘নাত করা হয়ে থাকে। (ই.ফা. ১৪২৯, ই.সে. ১৪৩৯)


১৪৪৫

থেকে বর্নিতঃ

অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি তাতে “এ কারণেই কুনূতে কাফিরদের লা‘নাত করা হয়ে থাকে” কথাটি বলেননি। (ই.ফা. ১৪৩০, ই.সে. নেই)


লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন