সহিহ মুসলিম > যিক্‌র, দু’আ, তওবা ও ইস্‌তিগফার > বিছানা গ্রহণ ও ঘুমানোর সময় যা বলতে হয়

৬৭৭৫

বারা'আ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

(তিনি বলেন,) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তুমি তোমার বিছানা গ্রহণ করবে তখন সলাতের ওযূর মতো তুমি ওযূ করে নিবে। এরপর তুমি তোমার ডান কাতে শুয়ে পড়বে। তারপর তুমি বলবে, “হে আল্লাহ! আমি আমার চেহারাকে তোমার প্রতি সমর্পণ করলাম, আমার কাজ-কর্ম তোমার নিকট অর্পণ করলাম। আমি প্রতিদান পাওয়ার প্রত্যাশায় এবং শাস্তির ভয় পূর্বক তোমার নিকট আশ্রয় চাইলাম। তুমি ব্যতীত নেই কোন আশ্রয়স্থল ও নেই কোন মুক্তির স্থান। তুমি যে কিতাব অবতীর্ণ করেছ তার উপর বিশ্বাস আনলাম, তুমি যে নাবীকে পাঠিয়েছ তাঁর প্রতি বিশ্বাস আনলাম।” আর এ বাক্যগুলোকে তোমার শেষ কথা বলে গণ্য করে নাও। এরপর যদি তুমি ঐ রাতে মারা যাও তাহলে তুমি ফিতরাতের উপরই মৃত্যুবরণ করলে। বারা (রাঃ) বলেন, আমি এ দু‘আগুলো মনে রাখার জন্যে বার বার পড়তে গিয়ে আমি বললাম, (হে আল্লাহ) আমি আপনার রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি যাকে আপনি প্রেরণ করেছেন। অর্থাৎ- (‘তোমার নাবীর’ স্থানে ‘তোমার রসূল’ বললাম)। তিনি বললেন, তুমি বলো, আমি বিশ্বাস স্থাপন করেছি তোমার নাবীর প্রতি যাকে তুমি প্রেরণ করেছ। (ই.ফা. ৬৬৩৪, ই.সে. ৬৬৮৮)


৬৭৭৬

বারা'আ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

তিনি মানসূর বর্ণিত হাদীসটি সম্পূর্ণ বর্ণনা করেছেন। আর হুসায়ন-এর হাদীসে ‘যদি সে সকালে উপনীত হয় তাহলে সে কল্যাণপ্রাপ্ত হবে’ কথাটি বর্ধিত বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৬৬৩৫, ই.সে. ৬৬৮৯)


৬৭৭৭

বারা'আ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক লোককে আদেশ করলেন রাত্রে সে শয্যা গ্রহণ করবে তখন সে বলবে- “আল্ল-হুম্মা আস্লাম্তু নাফসী ইলাইকা ওয়া ওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজ্হি ইলাইকা ওয়া আল জা’তু যাহ্রী ইলাইকা ওয়াফাও ওয়ায্তু আম্রী ইলাইকা রাগ্বাতান্ ওয়া রাহ্বাতান্ ইলাইকা লা- মাল্জাআ ওয়ালা- মান্জা- মিন্কা ইল্লা- ফিত্রাহ্”। অর্থাৎ- “হে আল্লাহ! আমি আমার আত্মাকে আপনার নিকট সমর্পণ করলাম। আমার মুখমণ্ডল আপনার দিকে ফিরালাম। আমার পিঠকে আপনার নিকট দিলাম পুরস্কারের আশায় ও শাস্তির ভয়ে; আপনি ভিন্ন নেই কোন আশ্রয়স্থল আর নেই কোন মুক্তির পথ। আমি বিশ্বাস স্থাপন করেছি আপনার কিতাবের উপর যা আপনি অবতীর্ণ করেছেন এবং আপনার রসূলের প্রতি (বিশ্বাস স্থাপন করেছি) যাকে আপনি পাঠিয়েছেন।” এরপর যদি সে লোক ঐ রাতে মারা যায় তাহলে ফিতরাতের উপরই মৃত্যুবরণ করেছে (বলে গণ্য হবে)। ইবনু বাশ্শার (রহঃ) তার বর্ণিত হাদীসে (আরবী) ‘রাত্রিকালে’ কথাটি বর্ণনা করেননি। (ই.ফা. ৬৬৩৬, ই.সে. ৬৬৮৯)


৬৭৭৮

বারা'আ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক লোককে বললেন, ‘হে অমুক! যখন তুমি তোমার বিছানায় আশ্রয় গ্রহণ করবে।’ এরপর ‘আম্‌র ইবনু মুর্রাহ্ বর্ণিত হাদীসের অবিকল বর্ণনা করলেন। কিন্তু পার্থক্য এই যে, তিনি বলেছেন, “ওয়াবি নাবিয়্যিকাল্লাযী আর্সাল্তা” অর্থাৎ- “এবং আপনার সে নাবীর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছি, যাকে আপনি প্রেরণ করেছেন।” যদি তুমি সে রাত্রে মৃত্যুবরণ করো তাহলে ফিতরাতের উপরই মৃত্যুবরণ করলে। আর যদি ভোরে উপনীত হও তবে তুমি কল্যাণপ্রাপ্ত হবে। (ই.ফা. ৬৬৩৭, ই.সে. ৬৬৯১)


৬৭৭৯

বারা'আ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক লোককে আদেশ করলেন। তারপর তার অবিকল। কিন্তু তিনি “যদি তুমি ভোরে উপনীত হও তবে তুমি কল্যাণপ্রাপ্ত হবে” কথাটি বর্ণনা করেননি। (ই.ফা. ৬৬৩৮, ই.সে. নেই)


৬৭৮০

বারা'আ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন শয্যাগ্রহণ করতেন তখন তিনি বলতেন, “আল্ল-হুম্মা বিস্মিকা আহ্ইয়া- ওয়া বিস্মিকা আমূতু” অর্থাৎ- “হে আল্লাহ! আমি তোমার নামেই জীবিত আছি আর তোমার নামেই মৃত্যুবরণ করছি।” আর যখত তিনি ঘুম হতে সজাগ হতেন তখন বলতেন, “আল্হাম্দু লিল্লা-হিল্লাযী আহ্ইয়া-না- বা‘দা মা- আমা-তানা- ওয়া ইলাইহিন্ নুশূর” অর্থাৎ- “সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যই যিনি আমাদেরকে মৃত্যুবরণের পর জীবিত করছেন। আর তার দিকেই প্রত্যাবর্তন।” (ই.ফা. ৬৬৩৯, ই.সে. ৬৬৯২)


৬৭৮১

আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

তিনি এক লোককে আদেশ করলেন, যখন শয্যাগ্রহণ করবে তখন বলবে, “আল্ল-হুম্মাখ লাক্তা নাফসী ওয়া আন্তা তা ওয়াফ্ফা-হা লাকা মামা-তুহা ওয়া মাহ্ইয়া-হা ইন্ আহ্ ইয়াইতাহা- ফাহ্ফাযহা- ওয়া ইন্ আমাত্তাহা- ফাগ্ফির লাহা- আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকাল ‘আ-ফিয়াহ্” অর্থাৎ- “হে আল্লাহ! আপনি আমার জীবন সৃষ্টি করেছেন এবং আপনিই তাকে (আমার জীবনকে) মৃত্যুদান করে। আপনার কাছে (নাফ্সের) জীবন ও মরণ। যদি আপনি একে জীবিত রাখেন তাহলে আপনি এর হিফাযাত করুন। আর যদি আপনি এর মৃত্যু দান করেন তাহলে একে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে সুস্থতা প্রার্থনা করছি”। তখন সে লোকটি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি তা ‘উমার (রাঃ) হতে শুনছেন? তিনি বললেন, ‘উমার-এর চেয়ে যিনি উত্তম (অর্থাৎ-) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে শুনেছি। ইবনু নাফি‘ (রহঃ) তার বর্ণনায় বলেছেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু হারিস (রহঃ) হতে এবং তিনি (আরবী) (আমাকে শুনেছি) শব্দটি বলেননি। (ই.ফা. ৬৬৪০, ই.সে. ৬৬৯৩)


৬৭৮২

সুহায়ল ইবনু আবু সালেহ (রহঃ) থেকে বর্নিতঃ

তিনি বলেন, আবূ সালিহ্ আমাদেরকে আদেশ করতেন, যখন আমাদের কেউ ঘুমাতে যায় সে যেন ডান পার্শ্বে কাত হয়ে শয্যাগ্রহন করে। এরপর যেন বলেন, “আল্ল-হুম্মা রব্বাস্ সামা-ওয়া-তি ওয়া রব্বাল আর্যি ওয়া রব্বাল ‘আর্শিল ‘আযীম, রব্বানা- ওয়া রব্বা কুল্লি শাইয়িন্ ফা-লিকাল্ হাব্বি ওয়ান্ নাওয়া ওয়া মুন্যিলাত্ তাওর-তি ওয়াল ইন্জীলি ওয়াল ফুর্কা-নি আ‘ঊযুবিকা মিন্ শার্রি কুল্লি শাইয়িন্ আন্তা আ-খিযুন্ বিনা-সিয়াতিহি, আল্ল-হুম্মা আন্তাল্ আও্ওয়ালু ফালাইসা কাব্লাকা শাইউন্ ওয়া আন্তাল আ-খিরু ফালাইসা বা‘দাকা শাইউন্ ওয়া আন্তায্ যা-হিরু ফালাইসা ফাওকাকা শাইউন্ ওয়া আন্তাল বা-তিনু ফালাইসা দূনাকা শাইউন্ ইক্যি ‘আন্নাদ্ দাইনা ওয়া আগ্নিনা- মিনাল ফাক্রি” অর্থাৎ- “হে আল্লাহ! আপনি আকাশমণ্ডলী, জামিন ও মহান ‘আর্শের রব। আমাদের রব ও সব কিছুর পালনকর্তা। আপনি শস্য ও বীজের সৃষ্টিকর্তা, আপনি তাওরাত, ইন্জীল ও কুরআনের অবতীর্ণকারী। আমি আপনার নিকট সকল বিষয়ের খারাবী হতে আশ্রয় চাই। আপনিই একমাত্র সব বিষয়ের পরিচর্যাকারী। হে আল্লাহ! আপনিই শুরু, আপনার আগে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই এবং আপনিই শেষ, আপনার পরে কোন কিছু নেই। আপনিই প্রকাশ, আপনার উর্ধ্বে কেউ নেই। আপনিই বাতিন, আপনার অগোচরে কিছু নেই। আমাদের ঋণকে আদায় করে দিন এবং অভাব থেকে আমাদেরকে সচ্ছলতা দিন।” তিনি (আবূ সালিহ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে আবূ হুরায়রা্ (রাঃ)-এর সূত্রেও এ হাদীসটি রিওয়ায়াত করতেন। (ই.ফা. ৬৬৪১, ই.সে. ৬৬৯৪)


৬৭৮৩

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের আদেশ করতেন যে, যখন আমরা শয্যাগ্রহণ করি তখন যেন পড়ি। তারপর জারীর-এর হাদীসের হুবহু হাদীস। আর তিনি বলেছেন, সকল জীবের অকল্যাণ হতে যাদের ধারণকারী আপনিই। (ই.ফা. ৬৬৪২, ই.সে. ৬৬৯৫)


৬৭৮৪

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

তিনি বলেন, ফাতিমাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে একজন খাদিমের জন্য আবেদন করলেন। তখন তিনি তাঁকে বললেনঃ তুমি বলো, “সাত আসমানের রব হে আল্লাহ! .....” (তারপর) সুহায়ল-এর পিতা থেকে বর্ণিত হাদীসের অবিকল উল্লেখ করেছেন। (ই.ফা. ৬৬৪৩, ই.সে. ৬৬৯৬)


৬৭৮৫

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন তার শয্যাগ্রহণ করতে বিছানায় আসে, সে যেন তার কাপড়েরর আঁচল দিয়ে বিছানাটি ঝাড়া দিয়ে নেয় এবং ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করে নেয়। কেননা সে জানে না যে, বিছানা ছাড়ার পর তার বিছানায় কি আছে। তারপর যখন সে শয্যাগ্রহণ করতে ইচ্ছা করে তখন যেন ডান কাত হয়ে শয্যাগ্রহণ করে। এরপর সে যেন বলে, “সুবহা- নাকাল্লা-হুম্মা রব্বী বিকা ওয়া যা‘তু জামবী ওয়াবিকা আর্ ফা‘উহু ইন্ আম্সাক্তা নাফ্সী ফাগ্ফির্ লাহা- ওয়া ইন্ আর্সাল্তাহা- ফাহ্ফায্হা- বিমা- তাহ্ফাযু বিহি ‘ইবা-দাকাস্ স-লিহীন” অর্থাৎ- “আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, হে আমার প্রতিপালক! আপনার নামেই আমি আমার পার্শ্ব (দেহ) রাখলাম, আপনার নামেই তা তুলব। আপনি যদি আমার প্রাণ আটকিয়ে রাখেন তাহলে আমাকে মাফ করে দিন। আর যদি আপনি তাকে উঠবার অবকাশ দেন তাহলে তাকে রক্ষা করুন, যেমন আপনি আপনার নেক বান্দাদের রক্ষা করে থাকেন।” (ই.ফা. ৬৬৪৪, ই.সে. ৬৬৯৭)


৬৭৮৬

উবাইদুল্লাহ ইবনু উমার (রহঃ) থেকে বর্নিতঃ

হুবহু হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, এরপর সে যেন বলে, “বিস্মিকা রব্বী ওয়াযা‘তু জামবী ফা ইন্ আহ্ ইয়াইতা নাফ্সী ফার্হামহা-” অর্থাৎ- “হে আমার রব! তোমার নামে আমার পার্শ্ব রাখলাম। যদি আপনি আমাকে জীবিত রাখেন তাহলে তার উপর দয়া করুন।” (ই.ফা. ৬৬৪৫, ই.সে. ৬৬৯৮)


৬৭৮৭

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন বিছানায় আশ্রয় গ্রহণ করতেন তখন তিনি বলতেন, “আল্হাম্‌দু লিল্লা-হিল্লাযী আত্ ‘আমানা- ওয়া সাকা-না- ওয়া কাফা-না- ওয়া আ-ওয়া-না ফাকাম মিম্মান্ লা- কা-ফিয়া লাহু ওয়ালা- মু’বিয়া” অর্থাৎ- “সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের জীবিকা দিয়েছেন, পানি পান করিয়েছেন, তিনি আমাদেরকে দায়িত্ব বহন করেছেন, আমাদের আশ্রয় দিয়েছেন। এমন অনেক আছে যাদের জন্য কোন দায়িত্ব বহনকারী নেই, আশ্রয় দাতাও নেই।” (ই.ফা. ৬৬৪৬, ই.সে. ৬৬৯৯)


লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন