সহিহ মুসলিম > ঈমান > শুরুতেই ইসলাম ছিল অপরিচিত; শিঘ্রই আবার তা অপরিচিতের ন্যায় হয়ে যাবে এবং তা দু’ মাসজিদ (মাসজিদুল হারাম ও মাসজিদুন নাবাবী) এর মাঝে আশ্রয় নিবে

২৬৪

হুযাইফাহ (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

তিনি বলেন, একদিন আমরা ‘উমার (রাঃ)-এর কাছে ছিলাম। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ফিত্‌নাহ সম্পর্কে আলোচনা করতে শুনেছ? উপস্থিত একদল বললেন, আমরা শুনেছি। ‘উমার (রাঃ) বললেন, তোমরা হয়তো একজনের পরিবার ও প্রতিবেশীর ফিতনার কথা মনে করেছ। তারা বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি বললেন, সলাত, সিয়াম ও সদাকার মাধ্যমে এগুলোর কাফ্‌ফারাহ্‌ হয়ে যায়। কিন্তু তোমাদের মধ্যে কে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বড় বড় ফিত্‌নার কথা বর্ণনা করতে শুনেছ, যা সমুদ্র তরঙ্গের ন্যায় ধেয়ে আসবে। হুযাইফাহ্‌ (রাঃ) বলেন, প্রশ্ন শুনে সবাই চুপ হয়ে গেল। আমি বললাম, আমি (শুনেছি)। ‘উমার (রাঃ) বললেন, তুমি শুনেছ, মাশাআল্লাহ। হুযাইফাহ্‌ (রাঃ) বললেন, আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) —কে বলতে শুনেছি, চাটাই বুননের মত এক এক করে ফিত্‌না মানুষের অন্তরে আসতে থাকে। যে অন্তরে তা গেঁথে যায় তাতে একটি করে কালো দাগ পড়ে। আর যে অন্তর তা প্রত্যাখ্যান করবে তাতে একটি উজ্জ্বল দাগ পড়বে। এমনি করে দু’টি অন্তর দু’ধরনের হয়ে যায়। এটি সাদা পাথরের ন্যায়; আসমান ও জমিন যতদিন থাকবে ততদিন কোন ফিত্‌না তার কোন ক্ষতি করতে পারে না। আর অপরটি হয়ে যায় উল্টানো সাদা মিশ্রিত কলসির ন্যায়, তার প্রবৃত্তির মধ্যে যা গেছে তা ছাড়া ভাল-মন্দ বলতে সে কিছুই চিনে না। হুযাইফাহ্‌ (রাঃ) বললেন, ‘উমার (রাঃ)-কে আমি আরো বললাম, আপনি এবং সে ফিতনার মধ্যে একটি বন্ধ দরজা রয়েছে। অচিরেই সেটি ভেঙ্গে ফেলা হবে। ‘উমার (রাঃ) বললেন, সর্বনাশ! তা ভেঙ্গে ফেলা হবে? যদি ভেঙ্গে ফেলা না হত তাহলে হয়ত পুনরায় বন্ধ করা যেত। হুযাইফাহ্‌ (রাঃ) উত্তর করলেন, না ভেঙ্গে ফেলাই হবে। হুযাইফাহ্‌ (রাঃ) বললেন, আমি ‘উমার (রাঃ)-কে এ কথাও শুনিয়েছি, সে দরজাটি হলো একজন মানুষ; সে নিহত হবে কিংবা স্বাভাবিত মৃত্যুবরণ করবে। এটি কোন গল্প নয় বরং রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস। বর্ণনাকারী আবূ খালিদ বলেনঃ আমি সা’দকে জিজ্ঞেস করলাম, এর অর্থ কী? উত্তরে তিনি বললেন, ‘কালো-সাদায় মিশ্রিত রং’। আমি বললাম, এর অর্থ কী? তিনি বললেন, ‘উল্টানো কলসি’। (ই.ফা. ২৬৭; ই.সে. ২৭৭)


২৬৫

রিবঈ ইবনু হিরাশ (রহঃ) থেকে বর্নিতঃ

হুযাইফাহ্‌ (রাঃ)-এর নিকট থেকে ফিরে এসে আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করছিলেন। তিনি বললেন, গতকাল যখন আমি আমীরুল মু’মিনীন ‘উমার (রাঃ)-এর কাছে বসা ছিলাম, তখন তিনি তাঁর সঙ্গীদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমাদের মধ্যে কার ফিত্‌না সম্পর্কীয় হাদীস স্মরণ আছে .....। এরপর রাবী আবূ খালিদ বর্ণিত পূর্বের হাদীসটির ন্যায় বর্ণনা করেন। তবে তিনি এর আবূ মালিক বর্ণিত ব্যাখ্যার উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ২৬৮; ই.সে. ২৭৮)


২৬৬

রিবঈ ইবনু হিরাশ (রহঃ) থেকে বর্নিতঃ

তিনি বলেন, একদিন ‘উমার (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফিত্‌নাহ্‌ সম্পর্কে কি বলেছেন এ সম্পর্কে তোমাদের কেউ আমাকে হাদীস বর্ণনা করতে পারবে? তখন হুযাইফাহ্‌ (রাঃ)-ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, আমি পারব .....। এরপর রিব’ঈ-এর সূত্রে বর্ণিত আবূ মালিক-এর রিওয়ায়াতের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে বর্ণনাকারী এ হাদীসে এও উল্লেখ করেন যে, হুযাইফাহ্‌ (রাঃ) বলেছেন, আমি ‘উমার (রাঃ)-কে যে হাদীস বর্ণনা করেছি তা কোন বানোয়াট কথা নয়; বরং রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকেই তা বর্ণনা করেছি। (ই.ফা. ২৬৯; ই.সে. ২৭৯)


২৬৭

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : ইসলাম শুরুতে অপরিচিত ছিল, অচিরেই তা আবার শুরুর মতো অপরিচিত হয়ে যাবে। [৫৪] সুতরাং এরূপ অপরিচিত অবস্থায়ও যারা ইসলামের উপর টিকে থাকবে তাদের জন্য মুবারাকবাদ। (ই.ফা ২৭০; ই.সে. ২৮০)

[৫৪] ইসলামের শুরু হয়েছে মাদীনাহ্‌ হতে অর্থাৎ পবিত্র মাক্কাহ্‌ হতে কিছু অপরিচিত মানুষ হিজরত করে মাদীনায় আসেন। তাদের দ্বারাই ইসলাম শুরু হয়েছে। ইসলাম শেষ যুগে ঐ অবস্থায় ফিরে যাবে। অর্থাৎ সারা বিশ্বে কাফির ও বেঈমানদের রাজ্য কায়িম হবে। আর ঈমানদারগণ ওদের ভয়ে মাদীনায় ফিরে আসবে। কাযী ইয়াজ বলেন : হাদীসের উদ্দেশ্য এই যে, প্রথমে ইসলাম আরম্ভ হয়েছিল অল্প সংখ্যক লোকের দ্বারা, শেষে যুগে কমতে কমতে ইসলাম আবার অল্প সংখ্যক লোকের মধ্যে রয়ে যাবে। (সংক্ষিপ্ত নাবাবী)

২৬৮

আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করে বলেন, অপরিচিতের ন্যায় ইসলাম শুরু হয়েছিল, অচিরেই তা আবার অপরিচিত অবস্থায় ফিরে যাবে। সাপ যেমন সংকুচিত হয়ে তার গর্তে প্রবেশ করে তদ্রূপ ইসলামও দুই মাসজিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে। [৫৫] (ই.ফা. ২৭১; ই.সে. ২৮১)

[৫৫] যখন পৃথিবীতে আল্লাহর নাম বলার মতো লোক থাকবে না। তখন মহাপ্রলয় সংঘটিত হবে। ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ যখন সমস্ত মানুষ অসৎ ও নিকৃষ্ট হয়ে যাবে তখন কিয়ামাত সংঘটিত হবে। আর অন্য হাদীসে আছে কিয়ামাতের পূর্বে ইয়ামানের দিক হতে এক প্রকার হাওয়া প্রবাহিত হয়ে আসবে যার ফলে সব ঈমানদার লোক মৃত্যুবরণ করবে। আর কিয়ামাতের ‘আযাব নিকৃষ্ট দুর্ভাগা লোকদের উপরই কায়িম হবে। (নাবাবী)

২৬৯

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সাপ যেমন সংকুচিত হয়ে আপন গর্তের দিকে প্রত্যাবর্তন করে তদ্রূপ ইসলামও সংকুচিত হয়ে মাদীনার দিকে প্রত্যাবর্তন করবে। (ই.ফা. ২৭২; ই.সে. ২৮২)


লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন