📄 অন্তরের একটি চিকিৎসা হল আল-কুরআন
অন্তরে যা রয়েছে তার চিকিৎসা হল আল-কুরআন। যে ব্যক্তির অন্তরে সন্দেহ ও কামনা-বাসনার অসুস্থতা রয়েছে কুরআন তার জন্যও চিকিৎসা, কারন এতে রয়েছে পরিস্কার প্রমাণাদি যা বাতিল থেকে হকের পার্থক্য নির্দেশ করে আর মিথ্যা সংশয়-সন্দেহের অসুস্থতাকে অন্তর থেকে দূর করে দিয়ে সুনিশ্চিত জ্ঞান, সঠিক উপলব্ধি ও বোধশক্তিকে এমনভাবে অন্তরে স্থান করে দেয় যে অন্তর কোন বিষয় বা ঘটনাকে তাদের বাস্তবতা অনুযায়ী প্রত্যক্ষ করে।
কুরআনে রয়েছে হিকমত, রয়েছে চমৎকার উপদেশ যা সৎ কাজ করার ও মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকার উৎসাহ প্রদান করে, আরও রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষামূলক কাহিনী যেগুলো জানার মাধ্যমে অন্তর তার জন্য যেটি কল্যাণকর সেটি কামনা করবে আর যেটি তার জন্য ক্ষতিকর সেটিকে ঘৃণা করবে – আর এগুলো দ্বারা অন্তর অবধারিতভাবে সংশোধনের দিকে পরিচালিত হবে। সুতরাং পূর্বে যে অন্তর তাকে পথভ্রষ্ট করা কোন বিষয়ের প্রতি কামনা রাখতো আর তাকে পথপ্রদর্শনকারী কোন কিছুকে ঘৃণা করতো, সেই অন্তরই কুরআনের কারনে যা তাকে পথপ্রদর্শন করবে তার ব্যাপারে কামনা রাখবে আর যা তাকে পথভ্রষ্ট করবে তাকে ঘৃণা করবে।
মিথ্যা কামনা-বাসনাকে আহবানকারী সকল অসুস্থতাকে কুরআন দূর করে দেয় যতক্ষণ পর্যন্ত না অন্তর পবিত্র হয়ে যায়, যার ফলে এর কামনা-বাসনাও পবিত্র হয় আর এটি স্বাভাবিক অবস্থায় (ফিতরাত) ফিরে যায় – যে ফিতরাতের উপর তাকে সৃষ্টি করা হয়েছিল; ঠিক যেমনটি চিকিৎসাপ্রাপ্ত হওয়ার পর শরীর তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়। অন্তর ঈমান ও কুরআন দ্বারা এমনভাবে প্রতিপালিত হবে যে তা শক্তিশালী হয়ে পড়বে, কারন নিশ্চয়ই অন্তরের পরিশুদ্ধির ব্যাপারটি শরীরের বেড়ে উঠার মতই।
অন্তরে যা রয়েছে তার চিকিৎসা হল আল-কুরআন। যে ব্যক্তির অন্তরে সন্দেহ ও কামনা-বাসনার অসুস্থতা রয়েছে কুরআন তার জন্যও চিকিৎসা, কারন এতে রয়েছে পরিস্কার প্রমাণাদি যা বাতিল থেকে হকের পার্থক্য নির্দেশ করে আর মিথ্যা সংশয়-সন্দেহের অসুস্থতাকে অন্তর থেকে দূর করে দিয়ে সুনিশ্চিত জ্ঞান, সঠিক উপলব্ধি ও বোধশক্তিকে এমনভাবে অন্তরে স্থান করে দেয় যে অন্তর কোন বিষয় বা ঘটনাকে তাদের বাস্তবতা অনুযায়ী প্রত্যক্ষ করে।
কুরআনে রয়েছে হিকমত, রয়েছে চমৎকার উপদেশ যা সৎ কাজ করার ও মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকার উৎসাহ প্রদান করে, আরও রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষামূলক কাহিনী যেগুলো জানার মাধ্যমে অন্তর তার জন্য যেটি কল্যাণকর সেটি কামনা করবে আর যেটি তার জন্য ক্ষতিকর সেটিকে ঘৃণা করবে – আর এগুলো দ্বারা অন্তর অবধারিতভাবে সংশোধনের দিকে পরিচালিত হবে। সুতরাং পূর্বে যে অন্তর তাকে পথভ্রষ্ট করা কোন বিষয়ের প্রতি কামনা রাখতো আর তাকে পথপ্রদর্শনকারী কোন কিছুকে ঘৃণা করতো, সেই অন্তরই কুরআনের কারনে যা তাকে পথপ্রদর্শন করবে তার ব্যাপারে কামনা রাখবে আর যা তাকে পথভ্রষ্ট করবে তাকে ঘৃণা করবে।
মিথ্যা কামনা-বাসনাকে আহবানকারী সকল অসুস্থতাকে কুরআন দূর করে দেয় যতক্ষণ পর্যন্ত না অন্তর পবিত্র হয়ে যায়, যার ফলে এর কামনা-বাসনাও পবিত্র হয় আর এটি স্বাভাবিক অবস্থায় (ফিতরাত) ফিরে যায় – যে ফিতরাতের উপর তাকে সৃষ্টি করা হয়েছিল; ঠিক যেমনটি চিকিৎসাপ্রাপ্ত হওয়ার পর শরীর তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়। অন্তর ঈমান ও কুরআন দ্বারা এমনভাবে প্রতিপালিত হবে যে তা শক্তিশালী হয়ে পড়বে, কারন নিশ্চয়ই অন্তরের পরিশুদ্ধির ব্যাপারটি শরীরের বেড়ে উঠার মতই।
📄 অন্তরের একটি চিকিৎসা হল সৎ কাজ করা
যাকাহ (পরিশোধন) এর ভাষাগত অর্থ হল পরিশুদ্ধতা বৃদ্ধি পাওয়া। যখন কোন কিছুর পরিশুদ্ধতা বৃদ্ধি পায় তখন বলা হয়, “কোন কিছুর যাকাহ হয়েছে।” অন্তরকে লালনপালন করার প্রয়োজন রয়েছেন যাতে করে এটি পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয় এবং পরিপূর্ণ ও পরিশুদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়; যেমনটি শরীরকে লালনপালনের প্রয়োজন রয়েছে যা এর জন্য কল্যাণকর, কিন্তু এর পাশাপাশি এর ক্ষতি করা থেকে যেকোন কিছুকে প্রতিরোধ করারও প্রয়োজন রয়েছে। সুতরাং শরীর বৃদ্ধি পাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না এটি কল্যাণকর বিষয়াদি লাভ করবে আর এর ক্ষতিকর কিছু থেকে বিরত থাকবে। অনুরূপভাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না অন্তর এর উপকারী বিষয়গুলো অর্জন করবে আর এর ক্ষতিকারক বিষয়গুলোকে দমন করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এটি এমনভাবে পরিশুদ্ধ হবে না যে এটি উন্নতিলাভ করবে আর এর পরিশুদ্ধতার ব্যাপারে পূর্ণতাপ্রাপ্ত হবে; যেমনিভাবে এই দুটো ফ্যাক্টর ছাড়া ফুল বৃদ্ধি পায় না।
সাদাকাহ (দান করা) করার কারনে অন্তর পরিশুদ্ধতা লাভ করে কারন সাদাকাহ পাপসমূহকে প্রশমিত করে, যেমনটা পানি প্রশমিত করে আগুনকে। এর যাকাহ বলতে বুঝায় এর অতিরিক্ত কিছু, যা হল কেবলই পাপ থেকে মুক্তি। মহিমান্বিত আল্লাহ বলেন,
خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ إِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ (۱۰۳)
"তাদের কাছ থেকে সাদাকাহ গ্রহণ করো তাদেরকে পবিত্র করার জন্য আর এটির মাধ্যমে তাদের পরিশুদ্ধ করো।” (সূরা তাওবাহ, ৯ : ১০৩)
যাকাহ (পরিশোধন) এর ভাষাগত অর্থ হল পরিশুদ্ধতা বৃদ্ধি পাওয়া। যখন কোন কিছুর পরিশুদ্ধতা বৃদ্ধি পায় তখন বলা হয়, “কোন কিছুর যাকাহ হয়েছে।” অন্তরকে লালনপালন করার প্রয়োজন রয়েছেন যাতে করে এটি পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয় এবং পরিপূর্ণ ও পরিশুদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়; যেমনটি শরীরকে লালনপালনের প্রয়োজন রয়েছে যা এর জন্য কল্যাণকর, কিন্তু এর পাশাপাশি এর ক্ষতি করা থেকে যেকোন কিছুকে প্রতিরোধ করারও প্রয়োজন রয়েছে। সুতরাং শরীর বৃদ্ধি পাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না এটি কল্যাণকর বিষয়াদি লাভ করবে আর এর ক্ষতিকর কিছু থেকে বিরত থাকবে। অনুরূপভাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না অন্তর এর উপকারী বিষয়গুলো অর্জন করবে আর এর ক্ষতিকারক বিষয়গুলোকে দমন করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এটি এমনভাবে পরিশুদ্ধ হবে না যে এটি উন্নতিলাভ করবে আর এর পরিশুদ্ধতার ব্যাপারে পূর্ণতাপ্রাপ্ত হবে; যেমনিভাবে এই দুটো ফ্যাক্টর ছাড়া ফুল বৃদ্ধি পায় না।
সাদাকাহ (দান করা) করার কারনে অন্তর পরিশুদ্ধতা লাভ করে কারন সাদাকাহ পাপসমূহকে প্রশমিত করে, যেমনটা পানি প্রশমিত করে আগুনকে। এর যাকাহ বলতে বুঝায় এর অতিরিক্ত কিছু, যা হল কেবলই পাপ থেকে মুক্তি। মহিমান্বিত আল্লাহ বলেন,
خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ إِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ (۱۰۳)
"তাদের কাছ থেকে সাদাকাহ গ্রহণ করো তাদেরকে পবিত্র করার জন্য আর এটির মাধ্যমে তাদের পরিশুদ্ধ করো।” (সূরা তাওবাহ, ৯ : ১০৩)
📄 অন্তরের একটি চিকিৎসা হল অশালীন কাজ বর্জন করা
একইভাবে, অশালীন কাজ আর পাপ থেকে বিরত থাকা অন্তরকে এর পরিশুদ্ধির দিকে পরিচালিত করে, কারন এগুলো শরীরের কুষ্ঠরোগ বা ফুলের কাঁটার ন্যায় একই স্তরের। সুতরাং উদাহারনস্বরূপ বলা যায়, শরীর থেকে যখন অতিরিক্ত রক্ত কমিয়ে ফেলার মাধ্যমে একে কুষ্ঠরোগমুক্ত করা হয়, তখন শরীরের স্বাভাবিক শক্তি প্রকাশিত হয় আর এটি রোগ থেকে মুক্তি পেয়ে উন্নতিলাভ করে।
অনুরূপভাবে, যখন কেউ পাপ থেকে তাওবা করে তখন অন্তর অপবিত্রতা থেকে মুক্ত হয়, যা দ্বারা এটি পাপগুলোর সাথে সৎ কাজগুলোকে মিশ্রিত করে দেয়। সুতরাং যখন কেউ পাপ থেকে তাওবা করে তখন অন্তরের শক্তি এমনভাবে উত্থিত হয় যে এটি সৎ কাজ করার ব্যাপারে কামনা করে এবং যে বাতিল ও বিকৃত ব্যাপারগুলোতে সে একসময় নিমজ্জিত ছিল তা থেকে মুক্তি লাভ করে।
সুতরাং অন্তরের যাকাহ বলতে এর উন্নতিলাভ আর পরিপূর্ণ হওয়াকে বুঝায়। গৌরবান্বিত আল্লাহ বলেন,
وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ مَا زَكَى مِنكُم مِّنْ أَحَدٍ أَبَدًا وَلَكِنَّ اللَّهَ يُزَكِّي مَن يَشَاءُ
"আল্লাহ'র দয়া ও অনুগ্রহ না থাকলে তোমাদের কেউই কখনো পরিশুদ্ধ হতে পারতে না...।" (সূরা নূর, ২৪: ২১)
فَإِن لَّمْ تَجِدُوا فِيهَا أَحَدًا فَلَا تَدْخُلُوهَا حَتَّى يُؤْذَنَ لَكُمْ ۖ وَإِن قِيلَ لَكُمُ ارْجِعُوا فَارْجِعُوا هُوَ أَزْكَى لَكُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ (۲۸)
"...আর যদি তোমাদেরকে বলা হয়ঃ ফিরে যাও, তবে তোমরা ফিরে যাবে, এটিই তোমাদের জন্য অধিকতর বিশুদ্ধ ..।" (সূরা নূর, ২৪: ২৮)
قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ (۳۰)
"মুমিনদেরকে তাদের দৃষ্টি অবনত করতে আর তাদের গোপন অঙ্গের হিফাযত করতে বল। এটিই তাদের জন্য অধিকতর বিশুদ্ধ...।” (সূরা নূর, ২৪ : ৩০)
قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّى (١٤) وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ فَصَلَّى (١٥)
"নিশ্চয়ই যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে, সে সফলতা অর্জন করলো, এবং তার রবের নাম স্মরণ করলো অতঃপর সালাত আদায় করলো।” (সূরা 'আলা, ৮৭: ১৪-১৫)
قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا (۹) وَقَدْ خَابَ مَن دَسَّاهَا (۱۰)
"নিশ্চয়ই যে এটিকে পরিশুদ্ধ করে সে সফল, আর যে এটিকে কলুষিত করে সে ব্যর্থ।” (সূরা আশ-শামস, ৯১ : ৯-১০)
وَمَا يُدْرِيكَ لَعَلَّهُ يَزَّكَّى (۳)
"তুমি কেমন করে জানবে সে হয়তো নিজেকে পরিশুদ্ধ করতো?” (সূরা 'আবাসা, ৮০: ৩)
فَقُلْ هَل لَّكَ إِلَىٰ أَن تَزَكَّى (۱۸) وَأَهْدِيَكَ إِلَىٰ رَبِّكَ فَتَخْشَىٰ (۱۹)
"আর তাকে বলা হলঃ তুমি কি তোমাকে পরিশুদ্ধ করতে চাও? আর (এটি চাও যে) আমি তোমাকে তোমার রবের পথে পরিচালিত করি যাতে তুমি তাকে ভয় করো?” (সূরা নাযি'আত, ৭৯ : ১৮-১৯)
সুতরাং, যদিও তাযকিয়্যাহ (পরিশুদ্ধি) এর মৌলিক অর্থ হল উন্নতি হওয়া, দয়া এবং ধার্মিকতা বৃদ্ধি হওয়া, এটি কেবলমাত্র মন্দকে অপসারণের মাধ্যমেই অর্জন করা যাবে আর এ কারনেই আত্মার পরিশুদ্ধি উভয় বিষয়ের (সৎ কাজ করা আর পাপ কাজ এড়িয়ে চলা) সমন্বয়ে গঠিত। মহান আল্লাহ বলেন,
وَوَيْلٌ لِّلْمُشْرِكِينَ (٦) الَّذِينَ لَا يُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُم بِالْآخِرَةِ هُمْ كَافِرُونَ (۷)
"দুর্ভোগ মুশরিকদের জন্য, যারা যাকাত প্রদান করে না আর তারা আখিরাতেও অবিশ্বাসী।” (সূরা ফুসসিলাت, ৪১ : ৬-৭)
যাকাত, তাওহীদ আর ঈমান – এগুলো দ্বারা অন্তর পরিশুদ্ধ হয়। কারন, নিঃসন্দেহে তাওহীদ অন্তর্ভুক্ত করে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কতৃত্ব অস্বীকার করাকে এবং অন্তরে আল্লাহ'র কতৃত্বের সত্যতা সমর্থন করাকে, এটি হল "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই) এর বাস্তবতা এবং এটিই হল সেই মূল ভিত্তি যেটি দ্বারা অন্তর পরিশুদ্ধ হয়।
তাযকিয়্যাহ (পরিশুদ্ধি) হল কেবলমাত্র কোন কিছুকে বা বিশ্বাসে বা বিবরণীতে বিশুদ্ধ করার একটি ক্রিয়া। অনুরূপভাবে বলা হয় "আদালতুহু” যখন আপনি ন্যায়সঙ্গত হবেন বা লোকদের বিশ্বাসে ন্যায়পরায়ণ হবেন। মহান আল্লাহ বলেন,
فَلَا تُزَكُّوا أَنفُسَكُمْ
"সুতরাং তোমাদের পরিশুদ্ধতা আছে বলে মনে করো না..." (সূরা নাযম, ৫৩: ৩২)
অর্থাৎ, তোমরা ঘোষণা করো না যে তোমরা পরিশুদ্ধ, আর এটি আল্লাহ'র সেই আয়াতের অনুরূপ নয় যেখানে তিনি বলেন-
قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا (৯)
"নিশ্চয়ই যে এটিকে পরিশুদ্ধ করে সে সফল।” (সূরা আশ-শামস, ৯১ : ৯)
এ কারনে মহান আল্লাহ বলেন,
هُوَ أَعْلَمُ بِمَنِ اتَّقَى (৩২)
"তিনিই সবচেয়ে ভালো জানেন যে কে তার ব্যাপারে তাকওয়া অবলম্বন করে।” (সূরা নাযম, ৫৩: ৩২)
যায়নাব প্রথমে বুররা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বলা হয়ে থাকে যে তিনি নিজেকে পরিশুদ্ধ করলেন, তাই রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে যায়নাব বলে ডাকলেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يُزَكُّونَ أَنفُسَهُم بَلِ اللَّهُ يُزَكِّي مَن يَشَاءُ
"তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করো নি যারা নিজের পরিশুদ্ধতার দাবী করে? বরং আল্লাহ, যাকে ইচ্ছা তিনি পবিত্র করেন...।" (সূরা নিসা', ৪ : ৪৯)
এর অর্থ হল, তিনি যাকে খুশী তাকে পরিশুদ্ধ করেন আর তার পরিশুদ্ধতা পরিচিত করে দেন, যেমনটা একজন সংশোধনকারী কেবল তাদের পরিশুদ্ধতার ব্যাপারে ঘোষণা করেন, যাদের ন্যায়বিচারের প্রতি তিনি সাক্ষ্য বহন করতে পারেন।
একইভাবে, অশালীন কাজ আর পাপ থেকে বিরত থাকা অন্তরকে এর পরিশুদ্ধির দিকে পরিচালিত করে, কারন এগুলো শরীরের কুষ্ঠরোগ বা ফুলের কাঁটার ন্যায় একই স্তরের। সুতরাং উদাহারনস্বরূপ বলা যায়, শরীর থেকে যখন অতিরিক্ত রক্ত কমিয়ে ফেলার মাধ্যমে একে কুষ্ঠরোগমুক্ত করা হয়, তখন শরীরের স্বাভাবিক শক্তি প্রকাশিত হয় আর এটি রোগ থেকে মুক্তি পেয়ে উন্নতিলাভ করে।
অনুরূপভাবে, যখন কেউ পাপ থেকে তাওবা করে তখন অন্তর অপবিত্রতা থেকে মুক্ত হয়, যা দ্বারা এটি পাপগুলোর সাথে সৎ কাজগুলোকে মিশ্রিত করে দেয়। সুতরাং যখন কেউ পাপ থেকে তাওবা করে তখন অন্তরের শক্তি এমনভাবে উত্থিত হয় যে এটি সৎ কাজ করার ব্যাপারে কামনা করে এবং যে বাতিল ও বিকৃত ব্যাপারগুলোতে সে একসময় নিমজ্জিত ছিল তা থেকে মুক্তি লাভ করে।
সুতরাং অন্তরের যাকাহ বলতে এর উন্নতিলাভ আর পরিপূর্ণ হওয়াকে বুঝায়। গৌরবান্বিত আল্লাহ বলেন,
وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ مَا زَكَى مِنكُم مِّنْ أَحَدٍ أَبَدًا وَلَكِنَّ اللَّهَ يُزَكِّي مَن يَشَاءُ
"আল্লাহ'র দয়া ও অনুগ্রহ না থাকলে তোমাদের কেউই কখনো পরিশুদ্ধ হতে পারতে না...।" (সূরা নূর, ২৪: ২১)
فَإِن لَّمْ تَجِدُوا فِيهَا أَحَدًا فَلَا تَدْخُلُوهَا حَتَّى يُؤْذَنَ لَكُمْ ۖ وَإِن قِيلَ لَكُمُ ارْجِعُوا فَارْجِعُوا هُوَ أَزْكَى لَكُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ (۲۸)
"...আর যদি তোমাদেরকে বলা হয়ঃ ফিরে যাও, তবে তোমরা ফিরে যাবে, এটিই তোমাদের জন্য অধিকতর বিশুদ্ধ ..।" (সূরা নূর, ২৪: ২৮)
قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ (۳۰)
"মুমিনদেরকে তাদের দৃষ্টি অবনত করতে আর তাদের গোপন অঙ্গের হিফাযত করতে বল। এটিই তাদের জন্য অধিকতর বিশুদ্ধ...।” (সূরা নূর, ২৪ : ৩০)
قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّى (١٤) وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ فَصَلَّى (١٥)
"নিশ্চয়ই যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে, সে সফলতা অর্জন করলো, এবং তার রবের নাম স্মরণ করলো অতঃপর সালাত আদায় করলো।” (সূরা 'আলা, ৮৭: ১৪-১৫)
قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا (۹) وَقَدْ خَابَ مَن دَسَّاهَا (۱۰)
"নিশ্চয়ই যে এটিকে পরিশুদ্ধ করে সে সফল, আর যে এটিকে কলুষিত করে সে ব্যর্থ।” (সূরা আশ-শামস, ৯১ : ৯-১০)
وَمَا يُدْرِيكَ لَعَلَّهُ يَزَّكَّى (۳)
"তুমি কেমন করে জানবে সে হয়তো নিজেকে পরিশুদ্ধ করতো?” (সূরা 'আবাসা, ৮০: ৩)
فَقُلْ هَل لَّكَ إِلَىٰ أَن تَزَكَّى (۱۸) وَأَهْدِيَكَ إِلَىٰ رَبِّكَ فَتَخْشَىٰ (۱۹)
"আর তাকে বলা হলঃ তুমি কি তোমাকে পরিশুদ্ধ করতে চাও? আর (এটি চাও যে) আমি তোমাকে তোমার রবের পথে পরিচালিত করি যাতে তুমি তাকে ভয় করো?” (সূরা নাযি'আত, ৭৯ : ১৮-১৯)
সুতরাং, যদিও তাযকিয়্যাহ (পরিশুদ্ধি) এর মৌলিক অর্থ হল উন্নতি হওয়া, দয়া এবং ধার্মিকতা বৃদ্ধি হওয়া, এটি কেবলমাত্র মন্দকে অপসারণের মাধ্যমেই অর্জন করা যাবে আর এ কারনেই আত্মার পরিশুদ্ধি উভয় বিষয়ের (সৎ কাজ করা আর পাপ কাজ এড়িয়ে চলা) সমন্বয়ে গঠিত। মহান আল্লাহ বলেন,
وَوَيْلٌ لِّلْمُشْرِكِينَ (٦) الَّذِينَ لَا يُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُم بِالْآخِرَةِ هُمْ كَافِرُونَ (۷)
"দুর্ভোগ মুশরিকদের জন্য, যারা যাকাত প্রদান করে না আর তারা আখিরাতেও অবিশ্বাসী।” (সূরা ফুসসিলাت, ৪১ : ৬-৭)
যাকাত, তাওহীদ আর ঈমান – এগুলো দ্বারা অন্তর পরিশুদ্ধ হয়। কারন, নিঃসন্দেহে তাওহীদ অন্তর্ভুক্ত করে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কতৃত্ব অস্বীকার করাকে এবং অন্তরে আল্লাহ'র কতৃত্বের সত্যতা সমর্থন করাকে, এটি হল "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই) এর বাস্তবতা এবং এটিই হল সেই মূল ভিত্তি যেটি দ্বারা অন্তর পরিশুদ্ধ হয়।
তাযকিয়্যাহ (পরিশুদ্ধি) হল কেবলমাত্র কোন কিছুকে বা বিশ্বাসে বা বিবরণীতে বিশুদ্ধ করার একটি ক্রিয়া। অনুরূপভাবে বলা হয় "আদালতুহু” যখন আপনি ন্যায়সঙ্গত হবেন বা লোকদের বিশ্বাসে ন্যায়পরায়ণ হবেন। মহান আল্লাহ বলেন,
فَلَا تُزَكُّوا أَنفُسَكُمْ
"সুতরাং তোমাদের পরিশুদ্ধতা আছে বলে মনে করো না..." (সূরা নাযম, ৫৩: ৩২)
অর্থাৎ, তোমরা ঘোষণা করো না যে তোমরা পরিশুদ্ধ, আর এটি আল্লাহ'র সেই আয়াতের অনুরূপ নয় যেখানে তিনি বলেন-
قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا (৯)
"নিশ্চয়ই যে এটিকে পরিশুদ্ধ করে সে সফল।” (সূরা আশ-শামস, ৯১ : ৯)
এ কারনে মহান আল্লাহ বলেন,
هُوَ أَعْلَمُ بِمَنِ اتَّقَى (৩২)
"তিনিই সবচেয়ে ভালো জানেন যে কে তার ব্যাপারে তাকওয়া অবলম্বন করে।” (সূরা নাযম, ৫৩: ৩২)
যায়নাব প্রথমে বুররা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বলা হয়ে থাকে যে তিনি নিজেকে পরিশুদ্ধ করলেন, তাই রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে যায়নাব বলে ডাকলেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يُزَكُّونَ أَنفُسَهُم بَلِ اللَّهُ يُزَكِّي مَن يَشَاءُ
"তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করো নি যারা নিজের পরিশুদ্ধতার দাবী করে? বরং আল্লাহ, যাকে ইচ্ছা তিনি পবিত্র করেন...।" (সূরা নিসা', ৪ : ৪৯)
এর অর্থ হল, তিনি যাকে খুশী তাকে পরিশুদ্ধ করেন আর তার পরিশুদ্ধতা পরিচিত করে দেন, যেমনটা একজন সংশোধনকারী কেবল তাদের পরিশুদ্ধতার ব্যাপারে ঘোষণা করেন, যাদের ন্যায়বিচারের প্রতি তিনি সাক্ষ্য বহন করতে পারেন।
📄 অন্তরের পরিশুদ্ধতার উপর পাপের প্রভাব
'আদল (সুবিচার ও ন্যায়বিচার) হল ই'তিদাল (ভারসাম্য), আর ভারসাম্যেই নির্ভর করে অন্তরের সংশোধন, যেমনটি যুলমে (ভারসাম্যহীনতা/অত্যাচার) রয়েছে অন্তরের বিকৃতি। এ কারনেই একজন ব্যক্তি প্রতিটি পাপ করার করার মাধ্যমে নিজের উপর অত্যাচার (যালিমান লি নাফসিহি) করে। যুলমের বিপরীত হল 'আদল, তাই সেই পাপী ব্যক্তি নিজের প্রতি ন্যায়পরায়ণ থাকেনি বরং সে অন্তরকে অত্যাচার করেছে। অন্তরের সংশোধন নির্ভর করে 'আদল এর উপর আর এর বিকৃত হওয়া নির্ভর করে যুলমের উপর। সুতরাং, আল্লাহ'র গোলাম যখন নিজেকে অত্যাচার করে তখন সে একই সময়ে অত্যাচারী আর অত্যাচারীত। অনুরূপভাবে, যখন সে ন্যায়পরায়ণ, তখন সে একজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি আর সেই ব্যক্তির মত, যার উপর ন্যায়বিচার করা হয়।
ব্যক্তি কোন কাজ সম্পাদন করলে সে তার সেই কাজের ফল পাবে, হোক সেটি তিক্ত বা মধুর। আল্লাহ বলেন,
لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ
"... সে যা অর্জন করেছে (সৎ কাজ) সেটির জন্য তার পুরস্কার রয়েছে, এবং সে যা অর্জন করেছে (পাপ কাজ) সেটির জন্য সে শাস্তিপ্রাপ্ত হবে..." (সূরা বাকারাহ, ২ : ২৮৬)
কাজ শরীরকে প্রভাবিত করার পূর্বেই অন্তরকে প্রভাবিত করে হয় উপকারের মাধ্যমে বা ক্ষতির মাধ্যমে বা সংশোধন করার মাধ্যমে। সৎ ও পবিত্র কাজ আত্মার জন্য ন্যায়বিচার স্থাপন করে, অপরদিকে মন্দ কাজ আত্মাকে অত্যাচার করে। মহান আল্লাহ বলেন,
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِنَفْسِهِ وَمَنْ أَسَاء فَعَلَيْهَا وَمَا رَبُّكَ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيدِ (٤٦)
"যে সৎ কাজ করে সে নিজের কল্যাণের জন্যই তা করে এবং যে মন্দ কাজ করে সে তার নিজের বিরুদ্ধেই সেটি করে।” (সূরা ফুসসিলাত, ৪১ : ৪৬)
إِنْ أَحْسَنتُمْ أَحْسَنتُمْ لِأَنفُسِكُمْ وَإِنْ أَسَأْتُمْ فَلَهَا
"যদি তোমরা সৎ কাজ করো তবে সেটি তোমাদের নিজেদের কল্যাণের জন্যই করলে, আর যদি মন্দ কাজ করো তবে সেটি তোমরা নিজেদের বিরুদ্ধেই করলে।” (সূরা আল-ইসরা', ১৭ : ৭)
সালাফদের ১৫ মধ্যে বেশ কিছু ব্যক্তি বলেন, “নিশ্চয়ই সৎ কাজগুলো অন্তরের একটি জ্যোতি, শরীরের জন্য শক্তি বৃদ্ধিকারী, চেহারার জ্যোতি, ব্যাপক রিযকের কারন এবং সৃষ্টির অন্তরগুলোতে ভালোবাসা। নিশ্চয়ই মন্দ কাজগুলো অন্তরে একটি অন্ধকার, চেহারার উপর অন্ধকারময়তা, শরীরের জন্য দুর্বলতা, রিযক কমে যাওয়ার কারন আর সৃষ্টির অন্তরগুলোতে ঘৃণা।”
মহান আল্লাহ বলেন,
كُلُّ امْرِئٍ بِمَا كَسَبَ رَهِينٌ (۲۱)
"প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়ী।” (সূরা তুর, ৫২ : ২১)
كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ رَهِينَةٌ (۳۸)
"প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের দায়ে আবদ্ধ।” (সূরা মুদদাসসির, ৭৪ : ৩৮)
وَذَكِّرْ بِهِ أَن تُبْسَلَ نَفْسٌ بِمَا كَسَبَتْ لَيْسَ لَهَا مِن دُونِ اللَّهِ وَلِيٌّ وَلَا شَفِيعٌ وَإِن تَعْدِلْ كُلَّ عَدْلٍ لَّا يُؤْخَذْ مِنْهَا ۚ أُولَئِكَ الَّذِينَ أُبْسِلُوا بِمَا كَسَبُوا
"কুরআন দিয়ে তাদেরকে উপদেশ দিতে থাকুন, যাতে কোন ব্যক্তি নিজের কৃতকর্মের জন্য ধ্বংস না হয়, আল্লাহ ছাড়া তার কোন বন্ধু, সাহায্যকারী ও সুপারিশকারী থাকবে না, আর এই অবস্থার সম্মুখীন না হয় যে দুনিয়াভর বিনিময় বস্তু দিয়েও মুক্তি পেতে চাইলে সেই বিনিময় গ্রহণ করা হবে না, তারা এমনই লোক যে, নিজেদের কর্মদোষে আটকা পড়ে গেছে।” (সূরা আন'আম, ৬: ৭০)
"তাবসালা” অর্থ হল নিপীড়ন করা, শেকল দিয়ে আটকে রাখা এবং আকৃষ্ট করা।
একইভাবে, শরীর যখন অসুস্থতা থেকে মুক্তি পায় তখন বলা হয়, "তার স্বভাব ও প্রকৃতির ভারসাম্য হয়েছে।” এর কারন হল, ন্যায় ও অন্যায় মিশে যাওয়া থেকে নিরাপদ - এমন পরিপূর্ণ ভারসাম্য অর্জনের কোন উপায় না থাকা সত্ত্বেও অসুস্থতা স্বভাব-প্রকৃতিকে বিকৃত করে দেয়, কিন্তু আদর্শ বা আদর্শের কাছাকাছি ভারসাম্যের জন্য লক্ষ্য রাখতে হবে।
একই অবস্থা অন্তরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এর স্বাস্থ্য আর সংশোধন নির্ভর করে ভারসাম্যের উপর আর এর অসুস্থতা নির্ভর করে পথভ্রষ্টতা, অত্যাচার ও অবান্তরতার উপর। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ভারসাম্য রক্ষা করাটা অসম্ভব - হোক সেটি কাজ বা জ্ঞানের ক্ষেত্রে। কিন্তু আদর্শ বা আদর্শের কাছাকাছি ভারসাম্যের জন্য লক্ষ্য রাখতে হবে। এ কারনেই সালাফি পদ্ধতিকে বলা হয় "আদর্শিক পদ্ধতি”। আল্লাহ বলেন,
وَلَن تَسْتَطِيعُوا أَن تَعْدِلُوا بَيْنَ النِّسَاءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ ۖ فَلَا تَمِيلُوا كُلَّ الْمَيْلِ
"তোমরা কখনো স্ত্রীদের মধ্যে সুবিচার করতে পারবে না যদিও তোমরা কামনা করো..." (সূরা নিসা', ৪ : ১২৯)
وَأَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيزَانَ بِالْقِسْطِ لَا نُكَلِّفُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا
"...আর আদান-প্রদানে পরিমান ও ওজন সঠিকভাবে করবে, আমি কারো উপর তার সাধ্যাতীত ভার (দায়িত্ব-কর্তব্য) অর্পণ করি না...” (সূরা আন'আম, ৬ : ১৫২)
মহিমান্বিত আল্লাহ তার রসূলদেরকে প্রেরণ করেছিলেন আর নাযিল করেছিলেন আসমানি কিতাবসমূহ, যাতে করে মানুষ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। ন্যায়বিচারের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ রূপটি হল আল্লাহ'র সাথে কোন অংশীদার স্থাপন না করে একমাত্র আল্লাহ'র ইবাদাহ করা, এরপর লোকজনের অধিকারের প্রতি উপযুক্ত ন্যায়বিচার করা, এরপর নিজের ব্যাপারে ন্যায়পরায়ণ হওয়া।
টিকাঃ
১৫. যেমনটি বলেছেন ইবনে আব্বাস (রাঃ), যা ইবনুল কায়্যিম আল-জাওাব আল-কাফি তে উল্লেখ করেছেন।
'আদল (সুবিচার ও ন্যায়বিচার) হল ই'তিদাল (ভারসাম্য), আর ভারসাম্যেই নির্ভর করে অন্তরের সংশোধন, যেমনটি যুলমে (ভারসাম্যহীনতা/অত্যাচার) রয়েছে অন্তরের বিকৃতি। এ কারনেই একজন ব্যক্তি প্রতিটি পাপ করার করার মাধ্যমে নিজের উপর অত্যাচার (যালিমান লি নাফসিহি) করে। যুলমের বিপরীত হল 'আদল, তাই সেই পাপী ব্যক্তি নিজের প্রতি ন্যায়পরায়ণ থাকেনি বরং সে অন্তরকে অত্যাচার করেছে। অন্তরের সংশোধন নির্ভর করে 'আদল এর উপর আর এর বিকৃত হওয়া নির্ভর করে যুলমের উপর। সুতরাং, আল্লাহ'র গোলাম যখন নিজেকে অত্যাচার করে তখন সে একই সময়ে অত্যাচারী আর অত্যাচারীত। অনুরূপভাবে, যখন সে ন্যায়পরায়ণ, তখন সে একজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি আর সেই ব্যক্তির মত, যার উপর ন্যায়বিচার করা হয়।
ব্যক্তি কোন কাজ সম্পাদন করলে সে তার সেই কাজের ফল পাবে, হোক সেটি তিক্ত বা মধুর। আল্লাহ বলেন,
لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ
"... সে যা অর্জন করেছে (সৎ কাজ) সেটির জন্য তার পুরস্কার রয়েছে, এবং সে যা অর্জন করেছে (পাপ কাজ) সেটির জন্য সে শাস্তিপ্রাপ্ত হবে..." (সূরা বাকারাহ, ২ : ২৮৬)
কাজ শরীরকে প্রভাবিত করার পূর্বেই অন্তরকে প্রভাবিত করে হয় উপকারের মাধ্যমে বা ক্ষতির মাধ্যমে বা সংশোধন করার মাধ্যমে। সৎ ও পবিত্র কাজ আত্মার জন্য ন্যায়বিচার স্থাপন করে, অপরদিকে মন্দ কাজ আত্মাকে অত্যাচার করে। মহান আল্লাহ বলেন,
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِنَفْسِهِ وَمَنْ أَسَاء فَعَلَيْهَا وَمَا رَبُّكَ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيدِ (٤٦)
"যে সৎ কাজ করে সে নিজের কল্যাণের জন্যই তা করে এবং যে মন্দ কাজ করে সে তার নিজের বিরুদ্ধেই সেটি করে।” (সূরা ফুসসিলাত, ৪১ : ৪৬)
إِنْ أَحْسَنتُمْ أَحْسَنتُمْ لِأَنفُسِكُمْ وَإِنْ أَسَأْتُمْ فَلَهَا
"যদি তোমরা সৎ কাজ করো তবে সেটি তোমাদের নিজেদের কল্যাণের জন্যই করলে, আর যদি মন্দ কাজ করো তবে সেটি তোমরা নিজেদের বিরুদ্ধেই করলে।” (সূরা আল-ইসরা', ১৭ : ৭)
সালাফদের ১৫ মধ্যে বেশ কিছু ব্যক্তি বলেন, “নিশ্চয়ই সৎ কাজগুলো অন্তরের একটি জ্যোতি, শরীরের জন্য শক্তি বৃদ্ধিকারী, চেহারার জ্যোতি, ব্যাপক রিযকের কারন এবং সৃষ্টির অন্তরগুলোতে ভালোবাসা। নিশ্চয়ই মন্দ কাজগুলো অন্তরে একটি অন্ধকার, চেহারার উপর অন্ধকারময়তা, শরীরের জন্য দুর্বলতা, রিযক কমে যাওয়ার কারন আর সৃষ্টির অন্তরগুলোতে ঘৃণা।”
মহান আল্লাহ বলেন,
كُلُّ امْرِئٍ بِمَا كَسَبَ رَهِينٌ (۲۱)
"প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়ী।” (সূরা তুর, ৫২ : ২১)
كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ رَهِينَةٌ (۳۸)
"প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের দায়ে আবদ্ধ।” (সূরা মুদদাসসির, ৭৪ : ৩৮)
وَذَكِّرْ بِهِ أَن تُبْسَلَ نَفْسٌ بِمَا كَسَبَتْ لَيْسَ لَهَا مِن دُونِ اللَّهِ وَلِيٌّ وَلَا شَفِيعٌ وَإِن تَعْدِلْ كُلَّ عَدْلٍ لَّا يُؤْخَذْ مِنْهَا ۚ أُولَئِكَ الَّذِينَ أُبْسِلُوا بِمَا كَسَبُوا
"কুরআন দিয়ে তাদেরকে উপদেশ দিতে থাকুন, যাতে কোন ব্যক্তি নিজের কৃতকর্মের জন্য ধ্বংস না হয়, আল্লাহ ছাড়া তার কোন বন্ধু, সাহায্যকারী ও সুপারিশকারী থাকবে না, আর এই অবস্থার সম্মুখীন না হয় যে দুনিয়াভর বিনিময় বস্তু দিয়েও মুক্তি পেতে চাইলে সেই বিনিময় গ্রহণ করা হবে না, তারা এমনই লোক যে, নিজেদের কর্মদোষে আটকা পড়ে গেছে।” (সূরা আন'আম, ৬: ৭০)
"তাবসালা” অর্থ হল নিপীড়ন করা, শেকল দিয়ে আটকে রাখা এবং আকৃষ্ট করা।
একইভাবে, শরীর যখন অসুস্থতা থেকে মুক্তি পায় তখন বলা হয়, "তার স্বভাব ও প্রকৃতির ভারসাম্য হয়েছে।” এর কারন হল, ন্যায় ও অন্যায় মিশে যাওয়া থেকে নিরাপদ - এমন পরিপূর্ণ ভারসাম্য অর্জনের কোন উপায় না থাকা সত্ত্বেও অসুস্থতা স্বভাব-প্রকৃতিকে বিকৃত করে দেয়, কিন্তু আদর্শ বা আদর্শের কাছাকাছি ভারসাম্যের জন্য লক্ষ্য রাখতে হবে।
একই অবস্থা অন্তরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এর স্বাস্থ্য আর সংশোধন নির্ভর করে ভারসাম্যের উপর আর এর অসুস্থতা নির্ভর করে পথভ্রষ্টতা, অত্যাচার ও অবান্তরতার উপর। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ভারসাম্য রক্ষা করাটা অসম্ভব - হোক সেটি কাজ বা জ্ঞানের ক্ষেত্রে। কিন্তু আদর্শ বা আদর্শের কাছাকাছি ভারসাম্যের জন্য লক্ষ্য রাখতে হবে। এ কারনেই সালাফি পদ্ধতিকে বলা হয় "আদর্শিক পদ্ধতি”। আল্লাহ বলেন,
وَلَن تَسْتَطِيعُوا أَن تَعْدِلُوا بَيْنَ النِّسَاءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ ۖ فَلَا تَمِيلُوا كُلَّ الْمَيْلِ
"তোমরা কখনো স্ত্রীদের মধ্যে সুবিচার করতে পারবে না যদিও তোমরা কামনা করো..." (সূরা নিসা', ৪ : ১২৯)
وَأَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيزَانَ بِالْقِسْطِ لَا نُكَلِّفُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا
"...আর আদান-প্রদানে পরিমান ও ওজন সঠিকভাবে করবে, আমি কারো উপর তার সাধ্যাতীত ভার (দায়িত্ব-কর্তব্য) অর্পণ করি না...” (সূরা আন'আম, ৬ : ১৫২)
মহিমান্বিত আল্লাহ তার রসূলদেরকে প্রেরণ করেছিলেন আর নাযিল করেছিলেন আসমানি কিতাবসমূহ, যাতে করে মানুষ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। ন্যায়বিচারের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ রূপটি হল আল্লাহ'র সাথে কোন অংশীদার স্থাপন না করে একমাত্র আল্লাহ'র ইবাদাহ করা, এরপর লোকজনের অধিকারের প্রতি উপযুক্ত ন্যায়বিচার করা, এরপর নিজের ব্যাপারে ন্যায়পরায়ণ হওয়া।
টিকাঃ
১৫. যেমনটি বলেছেন ইবনে আব্বাস (রাঃ), যা ইবনুল কায়্যিম আল-জাওাব আল-কাফি তে উল্লেখ করেছেন।