📄 দ্বিতীয় মূলনীতি: সিফাতের অধ্যায় নামের অধ্যায় থেকে প্রশস্ততর
দ্বিতীয় মূলনীতি: সিফাতের অধ্যায় নামের অধ্যায় থেকে প্রশস্ততর।
কারণ প্রতিটি নামই একটি গুণকে শামিল করে আছে, যেমন আল্লাহর নাম-বিষয়ক মূলনীতির তৃতীয়টিতে উল্লিখিত হয়েছে। আর যেহেতু আল্লাহর সিফাত আল্লাহর কার্যাদির সঙ্গে সম্পৃক্ত, আর আল্লাহর কার্যাদির কোনো সীমা পরিসীমা নেই, যেমন তার কথারও কোনো সীমা পরিসীমা নেই। ইরশাদ হয়েছে:
﴿وَلَوْ أَنَّمَا فِي الْأَرْضِ مِن شَجَرَةٍ أَقْلَامُ وَالْبَحْرُ يَمُدُّهُ مِنْ بَعْدِهِ سَبْعَةُ أَبْحُرٍ مَّا نَفِدَتْ كَلِمَاتُ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ ﴾ [لقمان: ٢٧]
'আর জমিনে যত গাছ আছে তা যদি কলম হয়, আর সমুদ্র (হয় কালি), তার সাথে কালিতে পরিণত হয় আরো সাত সমুদ্র, তবুও আল্লাহর বাণীসমূহ শেষ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা লুকমান: ৩১: ২৭)
এর উদাহরণ: আল্লাহর গুণসমূহের মধ্যে কয়েকটি হলো নিম্নরূপ:
الإتيان আগমণ করা, الأخذ পাকড়াও করা, الإمساك ধরা, البطش পাকড়াও করা এবং এজাতীয় আরও অগণিত সিফাত। আল্লাহ তা'আলা বলেন:
﴿وَجَاءَ رَبُّكَ﴾ [الفجر: ٢٢]
আর তোমার রব আসবেন... (সূরা ফজর: ৮৯: ২২)
هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا أَن يَأْتِيَهُمُ اللَّهُ فِي ظُلَلٍ مِّنَ الْغَمَامِ ﴾ [البقرة: ٢١٠]
'তারা কি এরই অপেক্ষা করছে যে, মেঘের ছায়ায় আল্লাহ তাদের নিকট আগমন করবেন।' (সূরা আল বাকারা: ২: ২১০)
আল্লাহ বলেছেন:
فَأَخَذَهُمُ اللَّهُ بِذُنُوبِهِمْ ﴾ [ال عمران: ١١]
ফলে তাদের পাপের কারণে আল্লাহ তাদরেকে পাকড়াও করেছেন। (সূরা আলে ইমরান: ৩: ১১)
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন:
يُمْسِكُ السَّمَاءَ أَن تَقَعَ عَلَى الْأَرْضِ إِلَّا بِإِذْنِهِ ﴾ [الحج: ٦٥]
'আর তিনিই আসমানকে আটকিয়ে রেখেছেন, যাতে তাঁর অনুমতি ছাড়া তা জমিনের উপর পড়ে না যায়।' (সূরা আল হাজ্জ: ২২: ৬৫)
আল্লাহ আরো বলেন:
إِنَّ بَطْشَ رَبِّكَ لَشَدِيدٌ ﴾ [البروج: ١٢]
'নিশ্চয় তোমার রবের পাকড়াও বড়ই কঠিন।' (সূরা আল বুরুজ: ৮৫: ১২)
আবার ইরশাদ হয়েছে: يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ) [البقرة: ١٨٥]
আল্লাহ তোমাদের জন্য সবকিছু সহজ করে দিতে চান এবং কঠিন চান না। (সূরা আল বাকারা: ২: ১৮৫)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ينزل ربنا كل ليلة إلى السماء الدنيا
(আমাদের রব প্রতিদিনই নিম্নাকাশে নেমে আসেন।)"
অতএব, আমরা আল্লাহর সঙ্গে এসব গুণ ঠিক সেভাবেই সম্পৃক্ত করব যেভাবে ওপরে বর্ণিত হলো। আর এগুলো দিয়ে আল্লাহ তা'আলার নাম তৈরি করব না, বলব না যে আল্লাহর নাম হলো الجائي (আগন্তক), الآتي (আগন্তক), الأخذ (পাকড়াওকারী), الممسك (ধারক), الباطش (পাকড়াও কারী), المريد (ইচ্ছুক), النازل (অবতরণকারী) ইত্যাদি। যদিও আমরা এসব গুণ ব্যবহার করে আল্লাহ তা'আলার ব্যাপারে সংবাদ দিই এবং এসব গুণে আল্লাহ তা'আলাকে গুণান্বিত করি。
টিকাঃ
” - বুখারী, হাদীস নং (১১৪৫), মুসলিম, হাদীস নং (৭৫৮)
📄 তৃতীয় মূলনীতি: আল্লাহ তা'আলার গুণসমূহ দু'ভাগে বিভক্ত। সাব্যস্তজাত গুণ ও অসাব্যস্তজাত গুণ
তৃতীয় মূলনীতি: আল্লাহ তা'আলার গুণসমূহ দু'ভাগে বিভক্ত। সাব্যস্তজাত গুণ ও অসাব্যস্তজাত গুণ。
সাব্যস্তজাত গুণ: যা আল্লাহ তা'আলা তার কিতাবে অথবা তার রাসূলের যবানে নিজের জন্য সাব্যস্ত করেছেন। আর এসবই হলো পূর্ণাঙ্গ গুণ যাতে কোনো অপূর্ণাঙ্গতা নেই। যেমন জীবন, ইলম, কুদরত, আরশের ওপরে থাকা, নিম্নাকাশে অবতরণ, চেহারা, দু'হাত, ইত্যাদি。
এসব গুণ আল্লাহ তা'আলার জন্য তাঁর শান অনুযায়ী প্রকৃত অর্থে সাব্যস্ত করা ওয়াজিব। এর দলিল হলো ওহী ও আকল।
ওহী থেকে দলিল হলো, আল্লাহ তা'আলার বাণী:
يَأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا عَامِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي نَزَّلَ عَلَى رَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي أَنزَلَ مِن قَبْلُ وَمَن يَكْفُرْ بِاللَّهِ وَمَلَ بِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا [النساء : ١٣٦]
হে মুমিনগণ, তোমরা ঈমান আন আল্লাহর প্রতি, তাঁর রাসূলের প্রতি এবং সে কিতাবের প্রতি যা তিনি তাঁর রাসূলের উপর নাযিল করেছেন এবং সে কিতাবের প্রতি যা তিনি পূর্বে নাযিল করেছেন। আর যে আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কেউ কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং শেষ দিনকে অস্বীকার করবে, সে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত হবে। (সূরা আন নিসা: ৪: ১৩৬)
আল্লাহর প্রতি ঈমান তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমানকেও শামিল করে। আর রাসূলের প্রতি যে কিতাব নাযিল হয়েছে তাঁর প্রতি ঈমান, কিতাবে-থাকা আল্লাহর সকল গুণের প্রতিও ঈমান। আর প্রেরিত পুরুষ হিসেবে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান ওইসব সংবাদের প্রতি ঈমানকেও শামিল করে যা তিনি তাঁর প্রেরক অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা সম্পর্কে দিয়েছেন。
মানব বিবেক-বুদ্ধির দলিল হলো, আল্লাহ তা'আলা নিজের ব্যাপারে এসব বিষয়ের সংবাদ দিয়েছেন। আর তিনি নিজের ব্যাপারে অন্যের চেয়ে ভালো জানেন। তিনি সর্বোচ্চ সত্যবাদী এবং তাঁর কথা সর্বোচ্চ সৌন্দর্যমন্ডিত। অতএব আল্লাহ তা'আলা যেভাবে সংবাদ দিয়েছেন বিনা দ্বিধায় তা আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা ওয়াজিব; কেননা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব তো তখন আসে যখন সংবাদটি এমন কোনো উৎস থেকে আসে যার ব্যাপারে অজ্ঞতা, মিথ্যা ও ভাব প্রকাশে অপারগতার ধারণা করা যেতে পারে। আর এ তিন প্রকার দোষের প্রতিটি থেকেই আল্লাহ তা'আলা পবিত্র。
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা'আলার ব্যাপারে যেসব সংবাদ দিয়েছেন সেসবের ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য; কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রবের ব্যাপারে সকল মানুষের চেয়ে ভালো জানেন। তিনি এ ব্যাপারে সমধিক সত্যবাদী ও শুভাকাঙ্খী। আর ভাব প্রকাশে তিনি মানুষের মধ্যে সব থেকে অধিক পারঙ্গম। অতএব তিনি যেসব সংবাদ দিয়েছেন তা গ্রহণ করা ওয়াজিব।
অসাব্যস্তজাত সিফাত: আর তা হলো আল্লাহ তা'আলা তাঁর কিতাবে অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যবানে যা অসাব্যস্ত করেছেন তা। আর এসবই হলো আল্লাহর জন্য অপূর্ণাঙ্গ গুণ। যেমন মৃত্যু, নিদ্রা, অজ্ঞতা, ভুলে যাওয়া, অক্ষমতা এবং অবসাদ। অতএব এসব গুণ আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত না করা ওয়াজিব। এর পাশাপাশি এসবের বিপরীত গুণগুলো পূর্ণাঙ্গরূপে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা ওয়াজিব। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা নিজের জন্য যা অসাব্যস্ত করেছেন তা এ জন্য অসাব্যস্ত করেছেন যে এসবের বিপরীতগুলো আল্লাহর জন্য পূর্ণাঙ্গরূপে সাব্যস্ত। শুধু অসাব্যস্ত করা উদ্দেশ্য নয়। কেননা অসাব্যস্ত করা কোনো পূর্ণাঙ্গতা নয়। তবে যদি অসাব্যস্তকরণ পূর্ণাঙ্গতা শামিল করে তবে তার কথা ভিন্ন। এটা এ কারণে যে অসাব্যস্ত বিষয় হলো অস্তিত্বহীন বিষয়। আর অস্তিত্বহীন বিষয় কোনো বিষয়ই না। অতএব তা পূর্ণাঙ্গ হওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আর অসাব্যস্তকরণ কখনো কখনো পাত্রের অনুপযোগিতার কারণে হয়ে থাকে। অতএব এ অবস্থায়ও তা পূর্ণাঙ্গতাকে হারায়। উদাহরণত, যদি বলি দেওয়াল জুলুম করে না, তবে এ কথা শুদ্ধ হবে না; কারণ দেওয়ালের জুলুম করার কোনো ক্ষমতাই নাই।
আবার কখনো কখনো অপূর্ণাঙ্গতা হয় অক্ষমতার কারণে, ফলে তা অপূর্ণাঙ্গতা বিবেচিত হয়। যেমন কোনো কবি বলেন,
এ গোত্র কোনো যিম্মাদারীরই অন্যথা করতে পারে না,
তারা মানুষকে সরিষা পরিমাণও জুলুমের ক্ষমতা রাখে না
অন্য কবি বলেন,
কিন্তু আমার জাতি যদিও তারা অনেক সম্মানিত বংশীয় তবুও তারা
যত অপমানিতই হোক না কেন কোনো অনিষ্টের ক্ষমতা রাখে না।12।
কোনো গুণকে অসাব্যস্ত করার অর্থ তার বিপরীত পূর্ণাঙ্গ গুণকে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা। এর উদাহরণ আল্লাহ তা'আলার বাণী:
﴿وَتَوَكَّلْ عَلَى الْحَيِّ الَّذِي لَا يَمُوتُ ﴾ [الفرقان: ٥٧]
আর তুমি ভরসা কর এমন চিরঞ্জীব সত্তার উপর যিনি মরবেন না। (সূরা আল ফুরকান: ২৫: ৫৮)
অতএব আল্লাহর জন্য মৃত্যুকে অসাব্যস্ত করার মধ্যে পূর্ণাঙ্গ জীবনকে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা শামিল রয়েছে。
আরেকটি উদাহরণ:
﴿وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا ﴾ [الكهف: ٤٩]
আর তোমার রব কারো প্রতি জুলুম করেন না। (সূরা আল কাহাফ: ১৮: ৪৯)
অতএব আল্লাহর জন্য জুলুম অসাব্যস্ত করার মধ্যে তাঁর জন্যে পূর্ণাঙ্গ ইনসাফ সাব্যস্ত করা শামিল রয়েছে।
তৃতীয় উদাহরণ: আল্লাহ তা'আলার বাণী: وَمَا كَانَ اللهُ لِيُعْجِزَهُ مِن شَيْءٍ فِي السَّمَوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ [فاطر: ٤٤]
আল্লাহ তো এমন নন যে, আসমানসমূহ ও জমিনের কোনো কিছু তাকে অক্ষম করে দেবে। (সূরা ফাতির: ৩৫: ৪৪)
এখানে আল্লাহ তা'আলার জন্য অক্ষমতাকে অসাব্যস্ত করা হয়েছে। আর অক্ষমতাকে অসাব্যস্ত করার মধ্যে আল্লাহর জন্য ইলম ও কুদরতকে পূর্ণাঙ্গরূপে সাব্যস্ত করা শামিল রয়েছে। এজন্যই আল্লাহ তা'আলা আয়াতের শেষে বলেছেন: إِنَّهُ كَانَ عَلِيمًا قَدِيرًا
নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। (সূরা ফাতির: ৩৫: 88)
কেননা অক্ষমতার কারণ হয়তো কোনো কিছুকে অস্তিত্বদানের কার্যকারণের ব্যাপারে অজ্ঞতা, অথবা ক্ষমতার অপ্রতুলতা। আর আল্লাহ তা'আলা পূর্ণাঙ্গ ইলমের অধিকারী এবং আকাশ ও পৃথিবীতে তাঁর ক্ষমতাকে খর্বকারী কেউ নেই。
এ উদাহরণ থেকে জানা গেল যে অসাব্যস্তজাত গুণগুলো কখনো কখনো একাধিক পূর্ণাঙ্গতাকে শামিল করে।
টিকাঃ
12 উভয় কবিই প্রকারান্তরে তাদের গোত্রের অযোগ্যতা ও অক্ষমতার কথাই প্রকাশ করেছে। [সম্পাদক]
📄 চতুর্থ মূলনীতি: সাব্যস্তজাত গুণগুলো প্রশংসা ও পূর্ণাঙ্গসূচক গুণ। অতএব এসব গুণ যত বেশি হবে এবং এসবের অর্থে যত বেশি বিভিন্নতা আসবে, যিনি এসব গুণে গুণান্বিত তাঁর পূর্ণাঙ্গতা তত অধিক প্রকাশ পাবে
চতুর্থ মূলনীতি:
সাব্যস্তজাত গুণগুলো প্রশংসা ও পূর্ণাঙ্গসূচক গুণ। অতএব এসব গুণ যত বেশি হবে এবং এসবের অর্থে যত বেশি বিভিন্নতা আসবে, যিনি এসব গুণে গুণান্বিত তাঁর পূর্ণাঙ্গতা তত অধিক প্রকাশ পাবে।
এ কারণেই যেমনটি সর্বজন বিদিত যে, সাব্যস্তজাত যেসব গুণের কথা আল্লাহ তা'আলা বলেছেন তা অসাব্যস্তজাত গুণ থেকে অনেক বেশি।
এর বিপরীতে অসাব্যস্তজাত গুণগুলো কেবল তিন অবস্থায় উল্লেখ করা হয়েছে। আর তা হলো নিম্নরূপ:
প্রথমত, আল্লাহর পূর্ণাঙ্গতার ব্যাপকতা বোঝানোর অবস্থায়। যেমন আল্লাহ তা'আলার বাণী: لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ ﴾ [الشورى: ١١]
তাঁর মত কিছু নেই, আর তিনি হলেন সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (সূরা আশ-শুরা: ৪২: ১১)১০
﴿وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ ﴾ [الإخلاص : ٤]
আর তাঁর কোনো সমকক্ষও নেই। (সূরা আল ইখলাস: ১১২: ৪)
দ্বিতীয়ত: মিথ্যাবাদীরা আল্লাহর ব্যাপারে যা দাবি করেছে তা নস্যাৎ করার অবস্থায়। যেমন ইরশাদ হয়েছে: ﴿أَن دَعَوْا لِلرَّحْمَنِ وَلَدًا وَمَا يَنْبَغِي لِلرَّحْمَنِ أَن يَتَّخِذَ وَلَدًا ﴾ [مريم: ٩١، ٩٢]
কারণ তারা পরম করুণাময়ের সন্তান আছে বলে দাবি করে। অথচ সন্তান গ্রহণ করা পরম করুণাময়ের জন্য শোভনীয় নয়। (সূরা মারয়াম: ১৯: ৯১-৯২)
তৃতীয়ত: এই সুনির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলার পূর্ণাঙ্গতায় কোনো কমতি থাকতে পারে এ ধরনের ধারণা নস্যাৎ করার ক্ষেত্রে। যেমন ইরশাদ হয়েছে: ﴿وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاءَ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا لَعِبِينَ ﴾ [الانبياء: ١৬]
আসমান-জমিন ও তাদের মাঝখানে যা কিছু আছে তার কোনো কিছুই আমি খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। (সূরা আল আম্বিয়া: ২১:১৬)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে: وَلَقَدْ خَلَقْنَا السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ وَمَا مَسَّنَا مِن لَّغُوبٍ ) [ق: ٣٨]
আর অবশ্যই আমি আসমানসমূহ ও জমিন এবং এতদোভয়ের মধ্যস্থিত সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছি। আর আমাকে কোনরূপ ক্লান্তি স্পর্শ করেনি। (সূরা ক্বাফ: ৫০: ৩৮)
টিকাঃ
১০ - দেখুন, মুহাম্মদ ইবনে আমীন আশানকিতী, আদওয়াউল বয়ান, - - - - -
📄 পঞ্চম মূলনীতি: সাব্যস্তজাত গুণ দু ভাগে বিভক্ত। আল্লাহর সত্তাসংলগ্ন গুণ ও তাঁর কর্মসংলগ্ন গুণ
পঞ্চম মূলনীতি: সাব্যস্তজাত গুণ দু'ভাগে বিভক্ত। আল্লাহর সত্তাসংলগ্ন গুণ ও তাঁর কর্মসংলগ্ন গুণ।
সত্তাসংলগ্ন গুণ হলো, যেগুলো অনাদি কাল থেকে আল্লাহর সত্তার সঙ্গে রয়েছে এবং অনন্তকাল ধরে থাকবে। যেমন ইলম, কুদরত, শ্রবণ, দর্শন, পরাক্রমশীলতা, হিকমত, সর্বোচ্চতা, 'আযমত। এর মধ্যে সংবাদজাত গুণ যেমন চেহারা, দু'হাত, দু'চোখ ইত্যাদিও শামিল রয়েছে。
আর কর্মসংলগ্ন গুণ হলো ওইসব গুণ, যা আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছার সঙ্গে সম্পৃক্ত। অর্থাৎ এমন সব কর্ম যা আল্লাহ তা'আলা ইচ্ছা করলে করেন এবং ইচ্ছা না করলে করেন না। যেমন আরশের ওপর উঠা এবং নিম্নাকাশে অবতরণ করা।
আবার কখনও কখনও সিফাতে যাতিয়া অর্থাৎ সত্তাসংলগ্ন গুণ দু'ভাবে কর্মসংলগ্ন গুণও হতে পারে, যেমন কালাম বা কথা। এ গুণটি তার মৌলিকতার বিবেচনায় সিফাতে যাতিয়া (সত্তাসংলগ্ন গুণ); কেননা আল্লাহ তা'আলা অনাদি অনন্তকাল ধরে মুতাকাল্লিম থেকেছেন এবং থাকবেন। আর সুনির্দিষ্ট কোনো কথার ক্ষেত্রে 'কালাম' গুণটি সিফাতে ফি'লিয়া তথা কর্মসংলগ্ন গুণ। কেননা কথা বলা আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি যখন যা ইচ্ছা করেন বলেন। যেমন আল্লাহ তা'আলার বাণী:
﴿إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَن يَقُولَ لَهُ كُن فَيَكُونُ ﴾ [يس: ٨٢]
নিশ্চয়ই তাঁর ব্যাপার শুধু এই যে, কোন কিছুকে তিনি যদি 'হও' বলতে চান, তখনই তা হয়ে যায়। (ইয়াসীন: ৩৬: ৮২)
﴿وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَن يَشَاءَ اللهُ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا ﴾ [الانسان: ٣٠]
আর আল্লাহ ইচ্ছা না করলে তোমরা ইচ্ছা করতে পারবে না; নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রাজ্ঞ। (সূরা আল ইনসান:৩০)