📘 আল্লাহ তাআলার নান্দনিক নাম ও গুণসমগ্র > 📄 প্রথম মূলনীতি: আল্লাহ তা'আলার সকল সিফাতই পূর্ণাঙ্গ এবং এতে কোনো প্রকার অপূর্ণতা নেই

📄 প্রথম মূলনীতি: আল্লাহ তা'আলার সকল সিফাতই পূর্ণাঙ্গ এবং এতে কোনো প্রকার অপূর্ণতা নেই


প্রথম মূলনীতি: আল্লাহ তা'আলার সকল সিফাতই পূর্ণাঙ্গ এবং এতে কোনো প্রকার অপূর্ণতা নেই।
যেমন হায়ত (জীবন), ইলম, (জ্ঞান), কুদরত, (ক্ষমতা) শ্রবণ, দর্শন, রহমত, ইয্যত (পরাক্রমশালিতা), হিকমত (প্রজ্ঞা), সর্বোচ্চে থাকা, আযমত (মহত্ব) ইত্যাদি। এর পক্ষে দলিল হলো ওহী, আকল (বুদ্ধিগত যুক্তি) ও ফিতরাত (স্বচ্ছ মানবপ্রকৃতি)।
ওহী থেকে দলিল: আল্লাহ তা'আলার বাণী:
لِلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ مَثَلُ السَّوْءِ وَلِلَّهِ الْمَثَلُ الْأَعْلَى وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ ﴾ [النحل: ٦٠]
যারা আখিরাতে ঈমান রাখে না, তাদের জন্য মন্দ উদাহরণ এবং আল্লাহর জন্য রয়েছে সর্বোচ্চ উদাহরণ। আর তিনিই পরাক্রমশালী, মহাজ্ঞানী। (সূরা আন্-নাহল: ১৬: ৬০)
'সর্বোচ্চ উদাহরণ' অর্থ হলো সর্বোচ্চ গুণ।
বুদ্ধিগত দলিল হলো: বাস্তবে অস্তিত্ববান প্রতিটি বস্তুরই অবশ্যই কিছু গুণবৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ গুণবৈশিষ্ট্য হয়ত পূর্ণাঙ্গ হবে, অথবা অপূর্ণাঙ্গ। দ্বিতীয়টি অর্থাৎ অপূর্ণাঙ্গ গুণ রব তা'আলার ক্ষেত্রে অপ্রযোজ্য, বরং তা বাতিল। এ কারণেই আল্লাহ তা'আলা মূর্তিসমূহের ইলাহ হওয়ার বাতুলতা এভাবে প্রকাশ করেছেন যে তা অপূর্ণাঙ্গতা ও অক্ষমতার বৈশিষ্ট্যে বিশিষ্ট। ইরশাদ হয়েছে:
وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّن يَدْعُوا مِن دُونِ اللَّهِ مَن لَّا يَسْتَجِيبُ لَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَن دُعَائِهِمْ غَافِلُونَ ﴾ [الاحقاف: ٥]
তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে, যে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কাউকে ডাকে, যে কিয়ামত দিবস পর্যন্তও তার ডাকে সাড়া দেবে না? আর তারা তাদের আহবান সম্পর্কে উদাসীন। (সূরা আল আহকাফ: ৪৬: ৫)
وَالَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ لَا يَخْلُقُونَ شَيْئًا وَهُمْ يُخْلَقُونَ أَمْوَاتُ غَيْرُ أَحْيَاءٍ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ ﴾ [النحل: ٢٠، ٢١]
আর তারা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ডাকে, তারা কিছু সৃষ্টি করতে পারে না, বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়। (তারা) মৃত, জীবিত নয় এবং তারা জানে না কখন তাদের পুনরুজ্জীবিত করা হবে। (সূরা আন নাহল: ১৬: ২০-২১)
আর ইব্রাহীম আ. তাঁর পিতার বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরে যা বলেছেন তার বর্ণনায় আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
﴿ يَاأَبَتِ لِمَ تَعْبُدُ مَا لَا يَسْمَعُ وَلَا يُبْصِرُ وَلَا يُغْنِي عَنكَ شَيْئًا ﴾ [مريم: ٤٢]
হে আমার পিতা, তুমি কেন তার ইবাদাত কর যে না শুনতে পায়, না দেখতে পায় এবং না তোমার কোন উপকারে আসতে পারে? (সূরা মারয়াম: ১৯: ৪২)
ইব্রাহীম আ. তাঁর কাওমের বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরে যা বলেছেন তা উল্লেখপূর্বক ইরশাদ হয়েছে:
﴿ قَالَ أَفَتَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكُمْ شَيْئًا وَلَا يَضُرُّكُمْ أُفٍ لَّكُمْ وَلِمَا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ أَفَلَا تَعْقِلُونَ ﴾ ) [الانبياء: ٦٦، ٦٧]
সে বলল, 'তাহলে কি তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদাত কর, যা তোমাদের কোনো উপকার করতে পারে না এবং কোন ক্ষতিও করতে পারে না'? 'ধিক তোমাদেরকে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদাত কর তাদেরকে! 'তবুও কি তোমরা বুঝবে না'? (সূরা আল আম্বিয়া: ২১: ৬৬-৬৭)
উপরন্তু অনুভূতি ও দৃষ্টির অভিজ্ঞতা থেকে এটা প্রমাণিত যে সৃষ্টিজীবেরও কিছু পূর্ণাঙ্গ গুণ রয়েছে, আর তা আল্লাহ তা'আলারই দেওয়া। অতএব যিনি পূর্ণাঙ্গ বিষয় দিতে পারেন তিনি তো পূর্ণাঙ্গতার ব্যাপারে অধিক হকদার।
স্বচ্ছ মানবপ্রকৃতি তথা ফিতরতগত দলিল হলো: মানব অন্তরসমূহ মূলত এভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে যে তা আল্লাহ তা'আলাকে মহব্বত করবে, তাঁকে তা'যীম ও ইবাদত করবে। স্বচ্ছ অন্তরের অধিকারী প্রতিটি মানুষের এটাই হলো প্রত্যাশা। আর এরূপ অন্তর কেবল ওই সত্তাকেই মহব্বত, তা'যীম ও ইবাদত করতে পারে যার ব্যাপারে জানা আছে যে তিনি তাঁর রুবুবিয়ত ও উলুহিয়তের উপযুক্ত পূর্ণাঙ্গ গুণ মাধুরিতে গুণান্বিত।
যদি কোনো গুণ এমন থাকে যা অসম্পূর্ণ তবে তা আল্লাহর জন্য প্রযোজ্য হবে না। যেমন মৃত্যু, অজ্ঞতা, ভুলে যাওয়া, অক্ষমতা, অন্ধত্ব, বধিরত্ব ইত্যাদি। আল্লাহ তা'আলা বলেন:
بِسْمِ ٱللّٰهِ ٱلرَّحْمٰنِ ٱلرَّحِيمِ وَتَوَكَّلْ عَلَى الْحَيِّ الَّذِي لَا يَمُوتُ ﴾ [الفرقان: ٥٧]
আর তুমি ভরসা কর এমন চিরঞ্জীব সত্তার উপর যিনি মরবেন না। (সূরা আল ফুরকান: ২৫: ৫৮)
মূসা আ. এর কথা উল্লেখ করে আল কুরআনে এসেছে: عِلْمُهَا عِندَ رَبِّي فِي كِتَابٍ لَّا يَضِلُّ رَبِّي وَلَا يَنسَى ﴾ [طه: ٥২]
এর জ্ঞান আমার রবের নিকট কিতাবে আছে। আমার রব বিভ্রান্ত হন না এবং বিস্মৃতও হন না। (সূরা তাহা: ২০: ৫২)
অক্ষমতা আল্লাহ তা'আলাকে স্পর্শ করতে পারে না, এ ব্যাপারে আল কুরআনে এসেছে: وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُعْجِزَهُ مِن شَيْءٍ فِي السَّمَوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ إِنَّهُ كَانَ عَلِيمًا قَدِيرًا ﴾ [فاطر: ৪৪]
আল্লাহ তো এমন নন যে, আসমানসমূহ ও জমিনের কোনো কিছু তাঁকে অক্ষম করে দেবে। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। (সূরা ফাতির: ৩৫: ৪৪)
আল্লাহ তা'আলা সর্বশ্রোতা, এ বিষয়টি তাগিদ করে ইরশাদ হয়েছে:
﴿أَمْ يَحْسَبُونَ أَنَّا لَا نَسْمَعُ سِرَّهُمْ وَنَجْوَلَهُمْ بَلَى وَرُسُلُنَا لَدَيْهِمْ يَكْتُبُونَ ﴾ [الزخرف: ٨٠]
না কি তারা মনে করে, আমি তাদের গোপনীয় বিষয় ও নিভৃত সলাপরামর্শ শুনতে পাই না? অবশ্যই হ্যাঁ, আর আমার ফেরেশতাগণ তাদের কাছে থেকে লিখছে। (আয্‌যুখরুফ: ৪৩: ৮০)
হাদীসে দাজ্জাল সম্পর্কে এসেছে:
إنه أعور وإن ربكم ليس بأعور"
'নিশ্চয় সে কানা, আর তোমাদের রব কানা নন।'
অন্য এক হাদীসে এসেছে:
أيها الناس أربعوا على أنفسكم؛ فإنكم لا تدعون أصم، ولا غائباً
হে লোকসকল, তোমরা তোমাদের নিজেদের উপর প্রশান্ত থেকে তাকে ডাকো; কারণ তোমরা এমন কাউকে ডাকছ না যিনি বধির ও অনুপস্থিত।'
আর যারা আল্লাহ তা'আলাকে অপূর্ণাঙ্গ গুণে গুণান্বিত বলে আখ্যায়িত করেছে আল্লাহ তা'আলা তাদের শাস্তি দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে:
وَقَالَتِ الْيَهُودُ يَدُ اللَّهِ مَغْلُولَةٌ غُلَّتْ أَيْدِيهِمْ وَلُعِنُوا بِمَا قَالُوا بَلْ يَدَاهُ مَبْسُوطَتَانِ يُنفِقُ كَيْفَ يَشَاءُ ﴾ [المائدة: ٦٤]
আর ইয়াহুদীরা বলে: আল্লাহর হাত বাঁধা, তাদের হাতই বেঁধে দেওয়া হয়েছে এবং তারা যা বলেছে তার জন্য তারা লা'নতগ্রস্ত হয়েছে বরং তাঁর দু' হাত প্রসারিত, তিনি যেভাবে ইচ্ছা খরচ করেন'। (সূরা আল-মায়েদা: ৫: ৬৪)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে:
لَقَدْ سَمِعَ اللَّهُ قَوْلَ الَّذِينَ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ فَقِيرٌ وَنَحْنُ أَغْنِيَاءُ سَنَكْتُبُ مَا قَالُوا وَقَتْلَهُمُ الْأَنْبِيَاءَ بِغَيْرِ حَقٍ وَنَقُولُ ذُوقُوا عَذَابَ الحريق ﴾ [ال عمران: ۱۸১]
নিশ্চয় আল্লাহ তাদের কথা শুনেছেন, যারা বলেছে, 'নিশ্চয় আল্লাহ দরিদ্র এবং আমরা ধনী'। অচিরেই আমি লিখে রাখব তারা যা বলেছে এবং নবীদেরকে তাদের অন্যায়ভাবে হত্যার বিষয়টিও এবং আমি বলব, ‘তোমরা উত্তপ্ত আযাব আস্বাদন কর’। (সূরা আল ইমরান: ৩: ১৮১)
তারা আল্লাহ তা'আলার ওপর যেসব অপূর্ণাঙ্গ গুণ আরোপ করে তা থেকে যে তিনি পবিত্র এ বিষয়টি ঘোষণা করে আল্লাহ তা'আলা বলেন:
﴿ سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُونَ وَسَلَامُ عَلَى الْمُرْسَلِينَ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ﴾ [الصافات: ১৮০-১৮২]
‘তারা যা ব্যক্ত করে তোমার রব তা থেকে পবিত্র মহান, সম্মানের মালিক। আর রাসূলদের প্রতি সালাম। আর সকল প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর জন্য।’ (সূরা আস-সাফফাত: ৩৭: ১৮০-১৮২)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে:
﴿ مَا اتَّخَذَ اللَّهُ مِن وَلَدٍ وَمَا كَانَ مَعَهُ مِنْ إِلَهُ إِذَا لَّذَهَبَ كُلُّ إِلَهِ بِمَا خَلَقَ وَلَعَلَا بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يَصِفُونَ ﴾ [المؤمنون: ٩١]
আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি, তাঁর সাথে অন্য কোন ইলাহও নেই। (যদি থাকত) তবে প্রত্যেক ইলাহ নিজের সৃষ্টিকে নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অন্যের উপর প্রাধান্য বিস্তার করত; তারা যা বর্ণনা করে তা থেকে আল্লাহ কত পবিত্র! (সূরা আল মুমিনূন:৯১)
আর যদি গুণটি এমন হয় যা এক অবস্থায় পূর্ণাঙ্গ এবং অন্য অবস্থায় অপূর্ণাঙ্গ, তবে তা উন্মুক্তভাবে আল্লাহর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা বৈধও নয়, আবার নিষিদ্ধও নয়। বরং এ ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা রয়েছে। অর্থাৎ যে অবস্থায় গুণটি পূর্ণাঙ্গ সে অবস্থায় তা আল্লাহর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যাবে। আর যে অবস্থায় তা অপূর্ণাঙ্গ সে অবস্থায় তা আল্লাহর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যাবে না। যেমন ষড়যন্ত্র, কৌশল অবলম্বন, ধোঁকা ইত্যাদি। এসব গুণ ওই অবস্থায় পূর্ণাঙ্গ বলে বিবেচিত হবে যে অবস্থায় তা এমন কারো বিরুদ্ধে করা হবে যে অনুরূপ কর্ম করতে সক্ষম; কেননা তা সে অবস্থায় এটা বোঝাবে যে এ কর্মের কর্তা অভিন্ন ধরনের কর্ম অথবা তার থেকেও শক্তিশালী কর্ম দিয়ে তার শত্রুর মোকাবিলা করতে সক্ষম। এ অবস্থার বিপরীত হলে এ গুণগুলো অপূর্ণাঙ্গ গুণ বলে বিবেচিত হবে। এ কারনেই আল্লাহ তা'আলা তা এমন লোকদের মোকাবিলায় উল্লেখ করেছেন যারা তার সঙ্গে এবং তাঁর রাসূলের সঙ্গে একই আচরণ করে। যেমন ইরশাদ হয়েছে:
وَيَمْكُرُونَ وَيَمْكُرُ اللَّهُ وَاللَّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ ۞ [ الانفال: ٣٠]
'আর তারা ষড়যন্ত্র করে এবং আল্লাহও কৌশল করেন। আর আল্লাহ হচ্ছেন উত্তম কৌশলী। (সূরা আল আনফال: ৮: ৩০)
তিনি আরো বলেছেন:
﴿إِنَّهُمْ يَكِيدُونَ كَيْدًا وَأَكِيدُ كَيْدًا ﴾ [الطارق: ١٥، ١٦]
'নিশ্চয় তারা ভীষণ কৌশল করছে। আর আমিও ভীষণ কৌশল করছি।' (সূরা আত তারিক: ৮৬: ১৫-১৬)
﴿وَالَّذِينَ كَذَّبُوا بِايَاتِنَا سَنَسْتَدْرِجُهُم مِّنْ حَيْثُ لَا يَعْلَمُونَ ) وَأُمْلِي لَهُمْ إِنَّ كَيْدِي مَتِينَ ﴾ [الاعراف: ۱۸২, ১৮৩]
ইরশাদ হয়েছে:
আর যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, অচিরেই আমি তাদেরকে ধীরে ধীরে এমনভাবে পাকড়াও করব যে, তারা জানতেও পারবে না। আর আমি তাদেরকে অবকাশ দিচ্ছি। নিশ্চয় আমার কৌশল শক্তিশালী। (সূরা আল আরাফ: ৭: ১৮২-১৮৩)
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন:
إِنَّ الْمُنَافِقِينَ يُخَادِعُونَ اللَّهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ﴾ [النساء: ١৪২]
নিশ্চয় মুনাফিকরা আললাহকে ধোঁকা দেয়। অথচ তিনি তাদের ধোঁকাদানকারী। (সূরা আন নিসা: ৪: ১৪২)
আল্লাহ আরো বলেন:
﴿وَإِذَا خَلَوْا إِلَى شَيَاطِينِهِمْ قَالُوا إِنَّا مَعَكُمْ إِنَّمَا نَحْنُ قَالُوا عَامَنَّا مُسْتَهْزِءُونَ اللَّهُ يَسْتَهْزِئُ بِهِمْ﴾ [البقرة: ১৪, ১৫]
আর যখন তারা মুমিনদের সাথে মিলিত হয়, তখন বলে 'আমরা ঈমান এনেছি' এবং যখন গোপনে তাদের শয়তানদের সাথে একান্তে মিলিত হয়, তখন বলে, 'নিশ্চয় আমরা তোমাদের সাথে আছি। আমরা তো কেবল উপহাসকারী'। আল্লাহ তাদের প্রতি উপহাস করেন। (সূরা আল বাকারা: ২: ১৪-১৫)
এ কারণেই, যারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাদের মোকাবিলায় আল্লাহ তা'আলাও বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, এ কথা বলা হয় নি। ইরশাদ হয়েছে:
﴿وَإِن يُرِيدُوا خِيَانَتَكَ فَقَدْ خَانُوا اللَّهَ مِن قَبْلُ فَأَمْكَنَ مِنْهُمْ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ ﴾ [الانفال: ৭১]
আর যদি তারা তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার ইচ্ছা করে, তাহলে তারা তো পূর্বে আল্লাহর সাথেও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। অতঃপর তিনি তাদের উপর (তোমাকে) শক্তিশালী করেছেন। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাবান। (সূরা আল আনফাল: ৮: ৭১)
এখানে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন যে 'তিনি তাদের ওপর (তোমাকে) শক্তিশালী করেছেন', একথা বলেননি যে 'তিনিও তাদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন; কেননা বিশ্বাসঘাতকতা আমানতদারির মোকাবেলায় ব্যবহার করা হয়। আর এটা সর্বাবস্থায় খারাপ গুণ।
এ থেকে বুঝা গেল যে, কিছু সাধারণ লোকেরা যে বলে থাকে, 'যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে, আল্লাহও তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন', এ কথাটি নিতান্তই জঘন্য। তা থেকে নিষেধ করা ওয়াজিব।

📘 আল্লাহ তাআলার নান্দনিক নাম ও গুণসমগ্র > 📄 দ্বিতীয় মূলনীতি: সিফাতের অধ্যায় নামের অধ্যায় থেকে প্রশস্ততর

📄 দ্বিতীয় মূলনীতি: সিফাতের অধ্যায় নামের অধ্যায় থেকে প্রশস্ততর


দ্বিতীয় মূলনীতি: সিফাতের অধ্যায় নামের অধ্যায় থেকে প্রশস্ততর।
কারণ প্রতিটি নামই একটি গুণকে শামিল করে আছে, যেমন আল্লাহর নাম-বিষয়ক মূলনীতির তৃতীয়টিতে উল্লিখিত হয়েছে। আর যেহেতু আল্লাহর সিফাত আল্লাহর কার্যাদির সঙ্গে সম্পৃক্ত, আর আল্লাহর কার্যাদির কোনো সীমা পরিসীমা নেই, যেমন তার কথারও কোনো সীমা পরিসীমা নেই। ইরশাদ হয়েছে:
﴿وَلَوْ أَنَّمَا فِي الْأَرْضِ مِن شَجَرَةٍ أَقْلَامُ وَالْبَحْرُ يَمُدُّهُ مِنْ بَعْدِهِ سَبْعَةُ أَبْحُرٍ مَّا نَفِدَتْ كَلِمَاتُ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ ﴾ [لقمان: ٢٧]
'আর জমিনে যত গাছ আছে তা যদি কলম হয়, আর সমুদ্র (হয় কালি), তার সাথে কালিতে পরিণত হয় আরো সাত সমুদ্র, তবুও আল্লাহর বাণীসমূহ শেষ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা লুকমান: ৩১: ২৭)
এর উদাহরণ: আল্লাহর গুণসমূহের মধ্যে কয়েকটি হলো নিম্নরূপ:
الإتيان আগমণ করা, الأخذ পাকড়াও করা, الإمساك ধরা, البطش পাকড়াও করা এবং এজাতীয় আরও অগণিত সিফাত। আল্লাহ তা'আলা বলেন:
﴿وَجَاءَ رَبُّكَ﴾ [الفجر: ٢٢]
আর তোমার রব আসবেন... (সূরা ফজর: ৮৯: ২২)
هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا أَن يَأْتِيَهُمُ اللَّهُ فِي ظُلَلٍ مِّنَ الْغَمَامِ ﴾ [البقرة: ٢١٠]
'তারা কি এরই অপেক্ষা করছে যে, মেঘের ছায়ায় আল্লাহ তাদের নিকট আগমন করবেন।' (সূরা আল বাকারা: ২: ২১০)
আল্লাহ বলেছেন:
فَأَخَذَهُمُ اللَّهُ بِذُنُوبِهِمْ ﴾ [ال عمران: ١١]
ফলে তাদের পাপের কারণে আল্লাহ তাদরেকে পাকড়াও করেছেন। (সূরা আলে ইমরান: ৩: ১১)
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন:
يُمْسِكُ السَّمَاءَ أَن تَقَعَ عَلَى الْأَرْضِ إِلَّا بِإِذْنِهِ ﴾ [الحج: ٦٥]
'আর তিনিই আসমানকে আটকিয়ে রেখেছেন, যাতে তাঁর অনুমতি ছাড়া তা জমিনের উপর পড়ে না যায়।' (সূরা আল হাজ্জ: ২২: ৬৫)
আল্লাহ আরো বলেন:
إِنَّ بَطْشَ رَبِّكَ لَشَدِيدٌ ﴾ [البروج: ١٢]
'নিশ্চয় তোমার রবের পাকড়াও বড়ই কঠিন।' (সূরা আল বুরুজ: ৮৫: ১২)
আবার ইরশাদ হয়েছে: يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ) [البقرة: ١٨٥]
আল্লাহ তোমাদের জন্য সবকিছু সহজ করে দিতে চান এবং কঠিন চান না। (সূরা আল বাকারা: ২: ১৮৫)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ينزل ربنا كل ليلة إلى السماء الدنيا
(আমাদের রব প্রতিদিনই নিম্নাকাশে নেমে আসেন।)"
অতএব, আমরা আল্লাহর সঙ্গে এসব গুণ ঠিক সেভাবেই সম্পৃক্ত করব যেভাবে ওপরে বর্ণিত হলো। আর এগুলো দিয়ে আল্লাহ তা'আলার নাম তৈরি করব না, বলব না যে আল্লাহর নাম হলো الجائي (আগন্তক), الآتي (আগন্তক), الأخذ (পাকড়াওকারী), الممسك (ধারক), الباطش (পাকড়াও কারী), المريد (ইচ্ছুক), النازل (অবতরণকারী) ইত্যাদি। যদিও আমরা এসব গুণ ব্যবহার করে আল্লাহ তা'আলার ব্যাপারে সংবাদ দিই এবং এসব গুণে আল্লাহ তা'আলাকে গুণান্বিত করি。

টিকাঃ
” - বুখারী, হাদীস নং (১১৪৫), মুসলিম, হাদীস নং (৭৫৮)

📘 আল্লাহ তাআলার নান্দনিক নাম ও গুণসমগ্র > 📄 তৃতীয় মূলনীতি: আল্লাহ তা'আলার গুণসমূহ দু'ভাগে বিভক্ত। সাব্যস্তজাত গুণ ও অসাব্যস্তজাত গুণ

📄 তৃতীয় মূলনীতি: আল্লাহ তা'আলার গুণসমূহ দু'ভাগে বিভক্ত। সাব্যস্তজাত গুণ ও অসাব্যস্তজাত গুণ


তৃতীয় মূলনীতি: আল্লাহ তা'আলার গুণসমূহ দু'ভাগে বিভক্ত। সাব্যস্তজাত গুণ ও অসাব্যস্তজাত গুণ。
সাব্যস্তজাত গুণ: যা আল্লাহ তা'আলা তার কিতাবে অথবা তার রাসূলের যবানে নিজের জন্য সাব্যস্ত করেছেন। আর এসবই হলো পূর্ণাঙ্গ গুণ যাতে কোনো অপূর্ণাঙ্গতা নেই। যেমন জীবন, ইলম, কুদরত, আরশের ওপরে থাকা, নিম্নাকাশে অবতরণ, চেহারা, দু'হাত, ইত্যাদি。
এসব গুণ আল্লাহ তা'আলার জন্য তাঁর শান অনুযায়ী প্রকৃত অর্থে সাব্যস্ত করা ওয়াজিব। এর দলিল হলো ওহী ও আকল।
ওহী থেকে দলিল হলো, আল্লাহ তা'আলার বাণী:
يَأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا عَامِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي نَزَّلَ عَلَى رَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي أَنزَلَ مِن قَبْلُ وَمَن يَكْفُرْ بِاللَّهِ وَمَلَ بِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا [النساء : ١٣٦]
হে মুমিনগণ, তোমরা ঈমান আন আল্লাহর প্রতি, তাঁর রাসূলের প্রতি এবং সে কিতাবের প্রতি যা তিনি তাঁর রাসূলের উপর নাযিল করেছেন এবং সে কিতাবের প্রতি যা তিনি পূর্বে নাযিল করেছেন। আর যে আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কেউ কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং শেষ দিনকে অস্বীকার করবে, সে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত হবে। (সূরা আন নিসা: ৪: ১৩৬)
আল্লাহর প্রতি ঈমান তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমানকেও শামিল করে। আর রাসূলের প্রতি যে কিতাব নাযিল হয়েছে তাঁর প্রতি ঈমান, কিতাবে-থাকা আল্লাহর সকল গুণের প্রতিও ঈমান। আর প্রেরিত পুরুষ হিসেবে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান ওইসব সংবাদের প্রতি ঈমানকেও শামিল করে যা তিনি তাঁর প্রেরক অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা সম্পর্কে দিয়েছেন。
মানব বিবেক-বুদ্ধির দলিল হলো, আল্লাহ তা'আলা নিজের ব্যাপারে এসব বিষয়ের সংবাদ দিয়েছেন। আর তিনি নিজের ব্যাপারে অন্যের চেয়ে ভালো জানেন। তিনি সর্বোচ্চ সত্যবাদী এবং তাঁর কথা সর্বোচ্চ সৌন্দর্যমন্ডিত। অতএব আল্লাহ তা'আলা যেভাবে সংবাদ দিয়েছেন বিনা দ্বিধায় তা আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা ওয়াজিব; কেননা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব তো তখন আসে যখন সংবাদটি এমন কোনো উৎস থেকে আসে যার ব্যাপারে অজ্ঞতা, মিথ্যা ও ভাব প্রকাশে অপারগতার ধারণা করা যেতে পারে। আর এ তিন প্রকার দোষের প্রতিটি থেকেই আল্লাহ তা'আলা পবিত্র。
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা'আলার ব্যাপারে যেসব সংবাদ দিয়েছেন সেসবের ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য; কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রবের ব্যাপারে সকল মানুষের চেয়ে ভালো জানেন। তিনি এ ব্যাপারে সমধিক সত্যবাদী ও শুভাকাঙ্খী। আর ভাব প্রকাশে তিনি মানুষের মধ্যে সব থেকে অধিক পারঙ্গম। অতএব তিনি যেসব সংবাদ দিয়েছেন তা গ্রহণ করা ওয়াজিব।
অসাব্যস্তজাত সিফাত: আর তা হলো আল্লাহ তা'আলা তাঁর কিতাবে অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যবানে যা অসাব্যস্ত করেছেন তা। আর এসবই হলো আল্লাহর জন্য অপূর্ণাঙ্গ গুণ। যেমন মৃত্যু, নিদ্রা, অজ্ঞতা, ভুলে যাওয়া, অক্ষমতা এবং অবসাদ। অতএব এসব গুণ আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত না করা ওয়াজিব। এর পাশাপাশি এসবের বিপরীত গুণগুলো পূর্ণাঙ্গরূপে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা ওয়াজিব। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা নিজের জন্য যা অসাব্যস্ত করেছেন তা এ জন্য অসাব্যস্ত করেছেন যে এসবের বিপরীতগুলো আল্লাহর জন্য পূর্ণাঙ্গরূপে সাব্যস্ত। শুধু অসাব্যস্ত করা উদ্দেশ্য নয়। কেননা অসাব্যস্ত করা কোনো পূর্ণাঙ্গতা নয়। তবে যদি অসাব্যস্তকরণ পূর্ণাঙ্গতা শামিল করে তবে তার কথা ভিন্ন। এটা এ কারণে যে অসাব্যস্ত বিষয় হলো অস্তিত্বহীন বিষয়। আর অস্তিত্বহীন বিষয় কোনো বিষয়ই না। অতএব তা পূর্ণাঙ্গ হওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আর অসাব্যস্তকরণ কখনো কখনো পাত্রের অনুপযোগিতার কারণে হয়ে থাকে। অতএব এ অবস্থায়ও তা পূর্ণাঙ্গতাকে হারায়। উদাহরণত, যদি বলি দেওয়াল জুলুম করে না, তবে এ কথা শুদ্ধ হবে না; কারণ দেওয়ালের জুলুম করার কোনো ক্ষমতাই নাই।
আবার কখনো কখনো অপূর্ণাঙ্গতা হয় অক্ষমতার কারণে, ফলে তা অপূর্ণাঙ্গতা বিবেচিত হয়। যেমন কোনো কবি বলেন,
এ গোত্র কোনো যিম্মাদারীরই অন্যথা করতে পারে না,
তারা মানুষকে সরিষা পরিমাণও জুলুমের ক্ষমতা রাখে না
অন্য কবি বলেন,
কিন্তু আমার জাতি যদিও তারা অনেক সম্মানিত বংশীয় তবুও তারা
যত অপমানিতই হোক না কেন কোনো অনিষ্টের ক্ষমতা রাখে না।12।
কোনো গুণকে অসাব্যস্ত করার অর্থ তার বিপরীত পূর্ণাঙ্গ গুণকে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা। এর উদাহরণ আল্লাহ তা'আলার বাণী:
﴿وَتَوَكَّلْ عَلَى الْحَيِّ الَّذِي لَا يَمُوتُ ﴾ [الفرقان: ٥٧]
আর তুমি ভরসা কর এমন চিরঞ্জীব সত্তার উপর যিনি মরবেন না। (সূরা আল ফুরকান: ২৫: ৫৮)
অতএব আল্লাহর জন্য মৃত্যুকে অসাব্যস্ত করার মধ্যে পূর্ণাঙ্গ জীবনকে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা শামিল রয়েছে。
আরেকটি উদাহরণ:
﴿وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا ﴾ [الكهف: ٤٩]
আর তোমার রব কারো প্রতি জুলুম করেন না। (সূরা আল কাহাফ: ১৮: ৪৯)
অতএব আল্লাহর জন্য জুলুম অসাব্যস্ত করার মধ্যে তাঁর জন্যে পূর্ণাঙ্গ ইনসাফ সাব্যস্ত করা শামিল রয়েছে।
তৃতীয় উদাহরণ: আল্লাহ তা'আলার বাণী: وَمَا كَانَ اللهُ لِيُعْجِزَهُ مِن شَيْءٍ فِي السَّمَوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ [فاطر: ٤٤]
আল্লাহ তো এমন নন যে, আসমানসমূহ ও জমিনের কোনো কিছু তাকে অক্ষম করে দেবে। (সূরা ফাতির: ৩৫: ৪৪)
এখানে আল্লাহ তা'আলার জন্য অক্ষমতাকে অসাব্যস্ত করা হয়েছে। আর অক্ষমতাকে অসাব্যস্ত করার মধ্যে আল্লাহর জন্য ইলম ও কুদরতকে পূর্ণাঙ্গরূপে সাব্যস্ত করা শামিল রয়েছে। এজন্যই আল্লাহ তা'আলা আয়াতের শেষে বলেছেন: إِنَّهُ كَانَ عَلِيمًا قَدِيرًا
নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। (সূরা ফাতির: ৩৫: 88)
কেননা অক্ষমতার কারণ হয়তো কোনো কিছুকে অস্তিত্বদানের কার্যকারণের ব্যাপারে অজ্ঞতা, অথবা ক্ষমতার অপ্রতুলতা। আর আল্লাহ তা'আলা পূর্ণাঙ্গ ইলমের অধিকারী এবং আকাশ ও পৃথিবীতে তাঁর ক্ষমতাকে খর্বকারী কেউ নেই。
এ উদাহরণ থেকে জানা গেল যে অসাব্যস্তজাত গুণগুলো কখনো কখনো একাধিক পূর্ণাঙ্গতাকে শামিল করে।

টিকাঃ
12 উভয় কবিই প্রকারান্তরে তাদের গোত্রের অযোগ্যতা ও অক্ষমতার কথাই প্রকাশ করেছে। [সম্পাদক]

📘 আল্লাহ তাআলার নান্দনিক নাম ও গুণসমগ্র > 📄 চতুর্থ মূলনীতি: সাব্যস্তজাত গুণগুলো প্রশংসা ও পূর্ণাঙ্গসূচক গুণ। অতএব এসব গুণ যত বেশি হবে এবং এসবের অর্থে যত বেশি বিভিন্নতা আসবে, যিনি এসব গুণে গুণান্বিত তাঁর পূর্ণাঙ্গতা তত অধিক প্রকাশ পাবে

📄 চতুর্থ মূলনীতি: সাব্যস্তজাত গুণগুলো প্রশংসা ও পূর্ণাঙ্গসূচক গুণ। অতএব এসব গুণ যত বেশি হবে এবং এসবের অর্থে যত বেশি বিভিন্নতা আসবে, যিনি এসব গুণে গুণান্বিত তাঁর পূর্ণাঙ্গতা তত অধিক প্রকাশ পাবে


চতুর্থ মূলনীতি:
সাব্যস্তজাত গুণগুলো প্রশংসা ও পূর্ণাঙ্গসূচক গুণ। অতএব এসব গুণ যত বেশি হবে এবং এসবের অর্থে যত বেশি বিভিন্নতা আসবে, যিনি এসব গুণে গুণান্বিত তাঁর পূর্ণাঙ্গতা তত অধিক প্রকাশ পাবে।
এ কারণেই যেমনটি সর্বজন বিদিত যে, সাব্যস্তজাত যেসব গুণের কথা আল্লাহ তা'আলা বলেছেন তা অসাব্যস্তজাত গুণ থেকে অনেক বেশি।
এর বিপরীতে অসাব্যস্তজাত গুণগুলো কেবল তিন অবস্থায় উল্লেখ করা হয়েছে। আর তা হলো নিম্নরূপ:
প্রথমত, আল্লাহর পূর্ণাঙ্গতার ব্যাপকতা বোঝানোর অবস্থায়। যেমন আল্লাহ তা'আলার বাণী: لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ ﴾ [الشورى: ١١]
তাঁর মত কিছু নেই, আর তিনি হলেন সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (সূরা আশ-শুরা: ৪২: ১১)১০
﴿وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ ﴾ [الإخلاص : ٤]
আর তাঁর কোনো সমকক্ষও নেই। (সূরা আল ইখলাস: ১১২: ৪)
দ্বিতীয়ত: মিথ্যাবাদীরা আল্লাহর ব্যাপারে যা দাবি করেছে তা নস্যাৎ করার অবস্থায়। যেমন ইরশাদ হয়েছে: ﴿أَن دَعَوْا لِلرَّحْمَنِ وَلَدًا وَمَا يَنْبَغِي لِلرَّحْمَنِ أَن يَتَّخِذَ وَلَدًا ﴾ [مريم: ٩١، ٩٢]
কারণ তারা পরম করুণাময়ের সন্তান আছে বলে দাবি করে। অথচ সন্তান গ্রহণ করা পরম করুণাময়ের জন্য শোভনীয় নয়। (সূরা মারয়াম: ১৯: ৯১-৯২)
তৃতীয়ত: এই সুনির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলার পূর্ণাঙ্গতায় কোনো কমতি থাকতে পারে এ ধরনের ধারণা নস্যাৎ করার ক্ষেত্রে। যেমন ইরশাদ হয়েছে: ﴿وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاءَ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا لَعِبِينَ ﴾ [الانبياء: ١৬]
আসমান-জমিন ও তাদের মাঝখানে যা কিছু আছে তার কোনো কিছুই আমি খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। (সূরা আল আম্বিয়া: ২১:১৬)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে: وَلَقَدْ خَلَقْنَا السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ وَمَا مَسَّنَا مِن لَّغُوبٍ ) [ق: ٣٨]
আর অবশ্যই আমি আসমানসমূহ ও জমিন এবং এতদোভয়ের মধ্যস্থিত সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছি। আর আমাকে কোনরূপ ক্লান্তি স্পর্শ করেনি। (সূরা ক্বাফ: ৫০: ৩৮)

টিকাঃ
১০ - দেখুন, মুহাম্মদ ইবনে আমীন আশানকিতী, আদওয়াউল বয়ান, - - - - -

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন