📘 আল আযকার > 📄 যেসব শব্দ মাকরুহ নয়

📄 যেসব শব্দ মাকরুহ নয়


যে সব শব্দ একদল আলেমদের দৃষ্টিতে মাকরুহ, অথচ এগুলো মাকরুহ নয়
জেনে রাখুন, এ অধ্যায় এ জন্যে যাতে বাতিল মতবাদে কেউ ধোঁকাগ্রস্ত না হয়। এগুলো বিশ্বাস না করে।
জেনে রাখুন, শরিয়তের বিধান পাঁচটি: ওয়াজিব, মুস্তাহাব, হারাম, মাকরুহ এবং মুবাহ। এগুলোর কোনোটাই দলিল ছাড়া প্রমাণিত হয় না। শরিয়তের দলিলাদি প্রসিদ্ধ বিষয়। অতএব, যেটার পক্ষে দলিল থাকবে না সেটার দিকে কর্ণপাত করা হবে না। সেটা খণ্ডনেরও মুখাপেক্ষী নয়। কেননা সেটা যখন দলিল নয়, খণ্ডনেরও প্রয়োজন নেই। এতদসত্ত্বেও উলামায়ে কেরাম এমন বিষয়ের খণ্ডনে দলিল উল্লেখের কসরত করেছেন। আমার এই ভূমিকা উল্লেখের কারণ হল, আমি যা উল্লেখ করব যে, অমুক একে অপছন্দ করেছেন। অতঃপর বলব, অথচ এটা অপছন্দনীয় নয় অথবা এ কথা বাতিল ইত্যাদি। তখন যাতে এটা বাতিলকরণে দলিলের প্রয়োজন না পড়ে। কোথাও দলিল উল্লেখ করলে সেটা হবে অতিরিক্ত। আমার এ অধ্যায় কায়েমের অভীষ্ট লক্ষ্যই হল, শুদ্ধ-অশুদ্ধের পার্থক্য করা। যাতে করে এই বাতিল উক্তির সম্বন্ধিত ব্যক্তির মর্যাদার কারণে কেউ ধোঁকাগ্রস্ত না হয়।
জেনে রাখুন, আমি এ সকল বাক্য অপছন্দনীয় বলা ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করব না, যাতে তাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ না হয়। তাদের প্রতি মানুষের খারাপ ধারণা সৃষ্টি না হয়। তাদের দুর্নাম করা উদ্দেশ্য নয়। তাদের থেকে বর্ণিত বাতিল উক্তি সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করাই লক্ষ্য। চাই এগুলো তাদের থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হোক অথবা না হোক। বিশুদ্ধ হলেও তাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে না, যেমনটা অতীত হয়েছে। তবে কখনো আমি ভালো নিয়তে কিছু সংযোজনও করেছি...।
ইমাম আবু জাফর নাহহাস তার কিতাব 'শরহু আসমায়িল্লাহি সুবহানাহু ওয়া তাআলা'য় কিছু আলেম থেকে নকল করেছেন- তিনি এ কথা বলতে অপছন্দ করতেন যে, “আল্লাহ পাক তোমাকে দান করেছেন”। তিনি বলতেন, কেননা দানকারী প্রতিদানের আকাঙ্ক্ষা রাখে।
ইমাম নববি বলেন, এই হুকুম সুস্পষ্ট ভুল ও নিকৃষ্ট মূর্খতা। এই যুক্তিপ্রদান অত্যন্ত নিন্দনীয়। অথচ সহিহ মুসলিমে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ভ্রমণে নামাজ সংক্ষিপ্তকরণের ব্যাপারে বর্ণিত আছে-
صَدَقَةٌ تَصَدَّقَ اللهُ بِهَا عَلَيْكُمْ، فَاقْبَلُوا صَدَقَتَهُ.
অর্থ: এটা আল্লাহ পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য দানস্বরূপ। সুতরাং তার দান গ্রহণ কর。
“হে আল্লাহ আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাও” বলা মাকরুহ নয়
ইমাম নাহহাস পূর্বের বক্তা থেকে নকল করেন যে, তিনি اللَّهُمَّ أَعْتِقْنِي مِنَ النَّارِ : হে আল্লাহ আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাও- বলতে অপছন্দ করতেন। কেননা, তিনি সওয়াবের প্রত্যাশী ছাড়া অন্য কাউকে মুক্তি দেন না।
ইমাম নববি বলেন, এই দাবী ও যুক্তি অত্যন্ত মারাত্মক ভুল ও শরিয়তের বিধান সম্পর্কে হীনতর মূর্খতা। যদি আল্লাহ তাআলা-কর্তৃক তার ইচ্ছানুযায়ী সৃষ্টিকে ক্ষমা বিষয়ক সহিহ হাদিসগুলো অনুসন্ধান করি, তাহলে কিতাবের কলেবর অনেক বড় হয়ে যাবে। যেমন-
مَنْ أَعْتَقَ رَقَبَةً مُسْلِمَةً، أَعْتَقَ اللهُ بِكُلِّ عُضْرٍ مِنْهُ عُضْوًا مِنْهُ مِنَ النَّارِ.
অর্থ: যে ব্যক্তি কোনো দাস মুক্ত করবে, আল্লাহ পাক তার প্রত্যেক অঙ্গের বদলে তার একটি অঙ্গ থেকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন。
مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ مِنْ أَنْ يُعْتِقَ اللهُ فِيْهِ عَبْدًا مِنَ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ.
অর্থ: আল্লাহ পাক আরাফার দিনে যত মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন, অন্য কোনো দিন তত মানুষকে মুক্তি দেন না。
আল্লাহর নামে এরকম কর বলা মাকরুহ নয়
কারো কারো উক্তি- “আল্লাহর নামের ওপর (নামে) এরকম কর” বলা মাকরুহ। কেননা, আল্লাহর নাম সবকিছুর উপরে। কাজি ইয়াজসহ অনেকে বলেছেন, এই বক্তব্য গলদ। সহিহ সনদে বর্ণিত আছে যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানির ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরামকে বলেছেন-
اذْبَحُوا عَلَى اسْمِ اللهِ .
অর্থ: তোমরা আল্লাহর নামের ওপর জবাই কর। অর্থাৎ বিসমিল্লাহ বল।
"আল্লাহ পাক আমাদেরকে তার রহমতের নিবাসে একত্রিত করুন” বলা মাকরুহ নয়
ইমাম নাহহাস আবু বকর মুহাম্মাদ বিন ইয়াহিয়া থেকে নকল করেছেন। তিনি একজন ফকিহ ও আদিব ছিলেন। তিনি বলতেন, এরকম বলবে না যে, আল্লাহ পাক আমাদেরকে তার রহমতের নিবাসে একত্রিত করেছেন। কেননা আল্লাহর রহমত নিবাসের ঊর্ধ্বে। তিনি আরো বলেন, এও বলবে না যে, হে আল্লাহ, আপনার রহমতে আমাদের ওপর রহমত করুন।
ইমাম নববি বলেন, তার দাবীকৃত বাক্যদ্বয়ের কোনো দলিল আমাদের জানা নেই এবং এর কোনো দলিলও নেই। কেননা, রহমতের নিবাস দ্বারা বক্তার অভীষ্ট: জান্নাত। পুরো বাক্যের অর্থ দাঁড়ায়: আল্লাহ পাক আমাদেরকে জান্নাতে একত্রিত করুক, যা প্রশান্তি, অবস্থান ও নিবাসের ঘর। সেখানে প্রবেশকারীরা আল্লাহর রহমতেই প্রবেশ করবে, যেই প্রবেশ করবে চিরদিন বসবাস করবে। সে বিপদাপদ ও পঙ্কিলতামুক্ত থাকবে। এটা স্রেফ আল্লাহর রহমতে অর্জন হবে। অতএব, সে যেন বলছে- আমাদেরকে এমন অবস্থানস্থলে একত্রিত করুন, যাতে আমরা আপনার রহমত আহরণ করতে পারি।
“হে আল্লাহ, আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন” এবং “হে আল্লাহ, আমাদের জন্য নবিজির সুপারিশ কবুল করুন” বলা মাকরুহ নয়।
ইমাম নাহহাস ঐ আবু বকর থেকে নকল করেন। তিনি বলতেন, এভাবে বলবে না-
اللَّهُمَّ أَجِرْنَا مِنَ النَّارِ : হে আল্লাহ, আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন
এবং এভাবে বলবে না-
اللَّهُمَّ ارْزُقْنَا شَفَاعَةَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : হে আল্লাহ, আমাদের জন্য নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুপারিশ কবুল করুন।
কেননা, সুপারিশ তো তার জন্যই করা হয়, যার জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে যায়।
ইমাম নববি বলেন, এটা গুরুতর ভ্রান্তি ও সুস্পষ্ট মূর্খতা। যদি এই ভুলে মানুষ ধোঁকাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা না থাকত এবং তা লিখিত কিতাবাদিতে না হত তাহলে আমি এটা নকল করার দুঃসাহস দেখাতাম না। অথচ বহু সহিহ হাদিসে পরিপূর্ণ ঈমানদারকে উৎসাহ প্রদানে তাদের সাথে কৃত নবিজির সুপারিশের কথা এসেছে। যেমন:
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী-
مَنْ قَالَ مِثْلَ مَا يَقُوْلُ المُؤَذِّنُ حَلَّتْ لَهُ شَفَاعَتِي.
অর্থ: যে মুয়াজ্জিনের উক্তির ন্যায় আজানের জবাব দিবে, তার জন্য আমার সুপারিশ অবধারিত হয়ে যাবে。
ইমাম হাফেজ ফকিহ আবুল ফজল ইয়াজ রহ. কতইনা সুন্দর বলেছেন- সালাফে সালেহ রাদিয়াল্লাহু আনহুম-কর্তৃক নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুপারিশ কামনা করা এবং এর প্রতি তাদের আগ্রহের বিষয়টি সুপ্রসিদ্ধ বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত। তিনি আরো বলেন, যারা একে অপছন্দ করেন এবং একে পাপীষ্ঠদের সাথে বিশিষ্ট করেন, তাদের কথায় কর্ণপাত করা যাবে না। কেননা, সুপারিশের মাধ্যমে কিছু লোকের বিনা হিসাবে জান্নাতে যাওয়ার এবং কিছু লোকের জান্নাতে স্তর বৃদ্ধির কথা সহিহ মুসলিম ইত্যাদির হাদিসে প্রমাণিত আছে। তিনি আরো বলেন, প্রত্যেক সমঝদার লোকই নিজের শিথিলতার স্বীকারকারী, ক্ষমার মুখাপেক্ষী এবং ধ্বংসের আশঙ্কাকারী। অতএব, এমন কথার বক্তাকে মাগফিরাত ও রহমতের প্রত্যাশা করাও অনুচিত। কারণ, এগুলো পাপীষ্ঠদের জন্য। এগুলো সালাফ-খালাফের প্রসিদ্ধ দুআর খেলাপ।
"আমি আমার রব রাব্বে কারিমের ওপর ভরসা করলাম” বলা মাকরুহ নয়
ইমাম নাহহাস ঐ আবু বকর থেকে নকল করেছেন যে, তুমি এরকম বলবে-
تَوَكَّلْتُ عَلَى رَبِّيَّ الرَّبِّ الْكَرِيمِ : আমি আমার রব রাব্বে কারিমের ওপর ভরসা করলাম; বরং বলবে-
تَوَكَّلْتُ عَلَى رَبِّيَّ الْكَرِيمِ : আমি আমার রাব্বে কারিমের ওপর ভরসা করলাম।
ইমাম নববি বলেন, তার কথার কোনো ভিত্তি নেই।
বায়তুল্লাহর তাওয়াফকে শাওত ও দাওর বলা মাকরুহ নয়
একদল আলেমদের থেকে কথিত আছে যে, তারা বায়তুল্লাহর তাওয়াফকে শাওত (রাউন্ড) ও দাওর (চক্র) বলতে অপছন্দ করতেন। তারা বলতেন, বরং প্রথমবারকে বলবে তাওফা, দ্বিতীয়বারকে তাওফাতাইন, তৃতীয়বারকে তাওফাত এবং সপ্তমবারকে তাওয়াফ।
ইমাম নববি বলেন, আমার জানা মতে তাদের এ কথার কোনো ভিত্তি নেই। এগুলো জাহিলি যুগের শব্দ হওয়ার দরুন হয়তবা তারা অপছন্দ করেছেন, তবে এতে কোনো অপছন্দনীয়তা নেই। এটাই বিশুদ্ধ মত。
(৯৯১) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
أَمَرَهُمُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَرْمُلُوا الْأَشْوَاطَ الثَّلَاثَةَ، وَلَمْ يَمْنَعْهُ أَنْ يَأْمُرَهُمْ أَنْ يَرْمُلُوا الْأَشْوَاطَ كُلَّهَا إِلَّا الْإِبْقَاءُ عَلَيْهِمْ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে তিন শাওতে (চক্রে) দুলে দুলে চলতে নির্দেশ দিয়েছেন। স্রেফ তাদের প্রতি করুণা স্বরূপ সকল চক্রে দুলে দুলে চলতে নির্দেশ দেননি。
"আমরা রমজানের রোজা রেখেছি" এবং "রমজান এসেছে” বলার হুকুম
আমরা রমজানের রোজা রেখেছি এবং রমজান এসেছে ইত্যাদি দ্বারা রমজান মাস উদ্দেশ্য নিলে এটা মাকরুহ হওয়ার ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে।
একদল পূর্বসূরীদের মতে মাসের বৃদ্ধি ছাড়া স্রেফ রমজান বলা মাকরুহ। এ কথা হাসান বাসরি ও মুজাহিদ থেকে বর্ণিত। ইমাম বাইহাকি রহ. বলেন, তাদের উভয় পর্যন্ত সনদ দুর্বল। আর আমাদের উলামাদের মাজহাব হল, এরকম বলা মাকরুহ- রমজান এসেছে, রমজান প্রবেশ করেছে, রমজান উপস্থিত হয়েছে অথবা এ জাতীয় কিছু। যাতে এগুলো দ্বারা মাস অভীষ্ট হওয়ার কোনো আলামত থাকে না। তবে সাথে মাস বুঝায় এমন কোনো আলামত থাকলে মাকরুহ নয়। যেমন- আমি রমজানের রোজা রেখেছি, আমি রমজানের রাতে কিয়াম করেছি, রমজানের রোজা ফরজ, বরকতময় মাস রমজান হাজির হয়েছে। অথবা এ জাতীয় কিছু। আমাদের উলামায়ে কেরামগণ এমনই বলেছেন। ইমাম কাজি আবুল হাসান মাওয়ারদি তার কিতাব "আলহাভি” (৩/২৪১) এ এবং আবু নাসর বিন সাব্বাগ তার "আশশামিল” কিতাবে আমাদের আলেমদের থেকে এমনই নকল করেছেন। তাদের ছাড়া অন্যান্য আলেমগণও মুক্তভাবে নকল করেছেন। তারা নিম্নোক্ত হাদিস দ্বারা যুক্তিপ্রদান করেন।
(৯৯২) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَا تَقُوْلُوْا رَمَضَانَ، فَإِنَّ رَمَضَانَ اسْمُ مِنْ أَسْمَاءِ اللَّهِ تَعَالَى، وَلَكِنْ قُوْلُوا: شَهْرُ رَمَضَانَ.
অর্থ: তোমরা রমজান বলবে না। কেননা, রমজান আল্লাহর নামসমূহের এক নাম। তবে তোমরা বলবে, রমজান মাস。
এই হাদিস দুর্বল। স্বয়ং ইমাম বাইহাকি একে দুর্বল আখ্যায়িত করেছেন। এর দুর্বলতা সুস্পষ্ট, কারণ আল্লাহর নামসমূহের ওপর অনেকেই কিতাবাদি লিখেছেন, কিন্তু কেউই রমজান কোনো নাম উল্লেখ করেননি।
ইমাম নববি বলেন, বিশুদ্ধ মত মনে হচ্ছে তাই (আল্লাহই ভালো জানেন) যা ইমাম আবু আবদুল্লাহ বুখারি রহ. তার সহিহে (৩/২৫) এবং অন্যান্য মুহাক্কিক আলেমরা বলেছেন। এতে মুক্তভাবে কোনো অপছন্দনীয়তা নেই, যেভাবেই বলে বলুক। কেননা, দলিল ছাড়া মাকরুহ সাব্যস্ত হয় না, আর এটা মাকরুহ হওয়ার বিষয়ে কোনো দলিল নেই। বরং হাদিসে বিপরীতে বৈধতা প্রমাণিত। এ ব্যাপারে সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম ইত্যাদিতে অগণিত হাদিস বিদ্যমান। আমি সেগুলো একত্রিত করতে গেলে শতাধিক হয়ে যাবে। তবে মাত্র একটি হাদিস দ্বারা লক্ষ্যার্জন হয়ে যায়, সেটা হল-
(৯৯৩) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِذَا جَاءَ رَمَضَانُ ؛ فُتَّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ، وَصُفِّدَتِ الشَّيَاطِينُ. وَفِي بَعْضِ رِوَايَاتِ الصَّحِيحَيْنِ فِي هَذَا الْحَدِيْثِ: إِذَا دَخَلَ رَمَضَانُ. وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ: إِذَا كَانَ رَمَضَانَ. وَفِي الصَّحِيحِ لَا تَقَدَّمُوْا رَمَضَانَ.
অর্থ: রমজান আসলে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। শয়তানকে শিকলাবদ্ধ করা হয়。
অন্য বর্ণনায় এই হাদিসে আছে- যখন রমজান প্রবেশ করে。
সহিহ মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে- যখন রমজান হয়...。
সহিহ হাদিসে আছে- তোমরা রমজানের অগ্রবর্তী হয়ো না。
সহিহ হাদিসে আছে- ইসলামের মৌলিক ভিত্তি পাঁচ বস্তুর ওপর... তন্মধ্যে রয়েছে: রমজানের রোজা।
এরকম আরো বহু প্রসিদ্ধ হাদিস বিদ্যমান।
"সুরা বাকারা” ইত্যাদি বলা মাকরুহ নয়
কিছু পূর্ববর্তী থেকে কথিত আছে যে, তারা সুরা বাকারা, সুরা নিসা, সুরা দুখান, সুরা আনকাবুত, সুরা রোম, সুরা আহজাব ইত্যাদি বলাকে অপছন্দ করতেন। তারা বলতেন, বরং এভাবে বলবে- ঐ সুরা যাতে বাকারার কথা আলোচিত হয়েছে, ঐ সুরা যাতে নিসা আলোচিত হয়েছে ইত্যাদি।
ইমাম নববি বলেন, এ কথা ভ্রান্ত ও সুন্নাহর বিপরীত। হাদিসে অসংখ্য জায়গায় এরকম ব্যবহার বিদ্যমান। যেমন: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী-
الْآيَتَانِ مِنْ آخِرِ سُوْرَةِ الْبَقَرَةِ مَنْ قَرَأَهُمَا فِي لَيْلَةٍ كَفَتَاهُ.
অর্থ: যে ব্যক্তি রাতে সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করবে, তা তার নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে。
এরকম আরো অগণিত হাদিস রয়েছে।
"আল্লাহ তাআলা তার কিতাবে বলেন” বলা মাকরুহ নয়
হজরত মুতাররিফ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি এরকম বলতে অপছন্দ করতেন- আল্লাহ তাআলা তার কিতাবে বলেন, বরং এভাবে বলবে যে, আল্লাহ তাআলা বলেন। এটা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কালবাচক ক্রিয়া হওয়ার কারণে হয়তবা তিনি অপছন্দ করতেন। অথচ আল্লাহর বাণী হচ্ছে তার কালাম, যা কাদিম (অবিনশ্বর)।
ইমাম নববি বলেন, এ কথা গ্রহণযোগ্য নয়,। কারণ, বহু সহিহ হাদিসে বিভিন্নভাবে এর ব্যবহার এসেছে। আমি শরহে সহিহ মুসলিম (৭/৮৪) এ এবং আদাবুল কুররা (পৃ. ১৫৩) এ এ বিষয়ে সতর্ক করেছি।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَاللَّهُ يَقُوْلُ الْحَقَّ .
অর্থ: আল্লাহ পাক সত্য বলছেন。
সহিহ মুসলিমে হজরত আবু জর রাদি. থেকে বর্ণিত-
يَقُوْلُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا.
অর্থ: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা বলছেন, যে ব্যক্তি একটি পুণ্য সম্পাদন করবে তার জন্য এর সমপরিমাণ (لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا) দশটি পুণ্য থাকবে。
সহিহ বুখারিতে আয়াতের ব্যাখ্যায় আছে-
অর্থ: হজরত আবু তালহা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা বলছেন-
لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا.
অর্থ: তোমরা পরিপূর্ণ কল্যাণ ততক্ষণ অর্জন করতে পারবে না, যতক্ষণ নিজের প্রিয় বস্তু থেকে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করবে না。

টিকাঃ
১৪৬৯. সহিহ মুসলিম: ৬৮৬, সুনানে আবু দাউদ: ১১৯৯, সুনানে তিরমিজি: ৩০৩৭, সুনানে নাসাঈ ৩/১১৬।
১৪৭০. সহিহ বুখারি: ৬৭১৫, সহিহ মুসলিম ১৫০৯/২২।
১৪৭১. সহিহ মুসলিম: ১৩৪৮, সুনানে নাসাঈ ৫/২৫১।
১৪৭২. সহিহ মুসলিম: ৩৮৪।
১৪৭৩. সহিহ বুখারি: ১৬০২, সহিহ মুসলিম: ১২৬৬।
১৪৭৪. সুনানে বাইহাকি ৪/২০১।
১৪৭৫. সহিহ বুখারি: ১৮৯৮, সহিহ মুসলিম: ১০৭৯।
১৪৭৬. সহিহ বুখারি: ৩২৭৭, সহিহ মুসলিম: ১০৭৯।
১৪৭৭. সহিহ মুসলিম: ১০৭৯।
১৪৭৮. সহিহ বুখারি: ১৯১৪, সহিহ মুসলিম ১০৮২।
১৪৭৯. সহিহ বুখারি: ৮, সহিহ মুসলিম: ১৬।
১৪৮০. সহিহ বুখারি: ৪০০৮, সহিহ মুসলিম: ৮০৭।
১৪৮১. সুরা আহজাব: ৪।
১৪৮২. সহিহ মুসলিম: ২৬৮৭।
১৪৮৩. সহিহ বুখারি: ৪৫৫৪।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন