📄 সালামের মর্যাদা ও প্রসারের নির্দেশনা
অধ্যায়- ১৫
সালাম, অনুমতি গ্রহণ, হাঁচির জবাব এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
فَإِذَا دَخَلْتُمْ بُيُوتًا فَسَلِّمُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِّنْ عِنْدِ اللَّهِ مُبْرَكَةً طَيِّبَةً.
অর্থ: অতঃপর যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ কর, তখন নিজেদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র দুআ। ৮১৯ অন্যত্র বলেন-
وَإِذَا حُيِّيْتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا .
অর্থ: তোমাদেরকে কেউ যদি সালাম করে তাহলে তোমরাও তাকে সালাম বল; তার চেয়ে উৎকৃষ্ট অথবা তার মতই ফিরিয়ে বল। ৮২০ -আরো ইরশাদ করেন-
لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا.
অর্থ: হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য গৃহে প্রবেশ কর না, যে পর্যন্ত না পরিচয় না কর এবং গৃহবাসীকে সালাম না কর। ৮২১-আল্লাহ তাআলা আরো বলেন-
وَإِذَا بَلَغَ الْأَطْفَالُ مِنْكُمُ الْحُلُمَ فَلْيَسْتَأْذِنُوْا كَمَا اسْتَأْذَنَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ.
অর্থ: যখন তোমাদের বালকেরা বয়োপ্রাপ্ত হয়, তারাও যেন পূর্ববর্তীদের ন্যায় অনুমতি চায়। ৮২২-অন্য জায়গায় বলেছেন-
هَلْ أَتْكَ حَدِيثُ ضَيْفِ إِبْرَاهِيمَ الْمُكْرَمِينَ إِذْ دَخَلُوْا عَلَيْهِ فَقَالُوا سَلْمًا قَالَ سلم.
অর্থ: হে মুহাম্মাদ! আপনার কাছে কি ইবরাহিমের সম্মানিত অতিথিদের ঘটনা পৌঁছেছে? যখন তারা তার নিকট প্রবেশ করলেন এবং তাকে সালাম বললেন। ইবরাহিমও (তদুত্তরে) সালাম বললেন। ৮২৩
জ্ঞাতব্য বিষয়, সালামের মৌলিক বিষয়টি কুরআন, সুন্নাহ এবং ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। তবে এর শাখাগত মাসআলা অগণিত, আমি এর লক্ষ্যসমূহ সীমিত কিছু পরিচ্ছেদে সংক্ষিপ্তাকারে উপস্থাপন করব ইনশাআল্লাহ। তাঁরই কাছে তাওফিক, পথপ্রদর্শন, যথার্থতা ও তত্ত্বাবধান কামনা করি।
সালামের মর্যাদা ও প্রমাণের নির্দেশনা
(৫৯৯) হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাদি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيُّ الْإِسْلَامِ خَيْرٌ؟ قَالَ: تُطْعِمُ الطَّعَamَ، وَتَقْرَأُ السَّلَامَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ.
অর্থ: জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিজ্ঞাসা করেন, ইসলামে কোন আমলটি উত্তম? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অপরকে অন্ন দিবে এবং পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দিবে। ৮২৪
(৬০০) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
خَلَقَ اللهُ آدَمَ وَطُوْلُهُ سِتُّوْنَ ذِرَاعًا، ثُمَّ قَالَ: اذْهَبْ فَسَلَّمْ عَلَى أُولَئِكَ مِنَ الْمَلَائِكَةِ، فَاسْتَمِعْ مَا يُحَبُّوْنَكَ تَحِيَّتُكَ وَتَحِيَّةُ ذُرِّيَّتِكَ. فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ. فَقَالُوا: السَّلَامُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللهِ، فَزَادُوهُ: وَرَحْمَةُ اللهِ .
অর্থ: আল্লাহ তাআলা আদম আলাইহিস সালামকে তার আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। তার উচ্চতা ছিল ষাট হাত। আল্লাহ তাআলা তাকে সৃষ্টি করে বললেন, যাও, উপবিষ্ট ফেরেশতাদের এই দলকে সালাম প্রদান কর এবং তারা তোমার সালামের উত্তরে কী বলে তা মনোযোগ দিয়ে কোনবে? কেননা এটা তোমার এবং তোমার সন্তানাদির অভিবাদন। অতঃপর আদম আ. গিয়ে তাদের উদ্দেশ্যে বললেন, আসসালামু আলাইকুম, অনন্তর ফেরেশতাগণ উত্তর দিলেন, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। ফেরেশতাগণ 'ওয়া রাহমাতুল্লাহ' অংশটি বৃদ্ধি করেছেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে সে আদম আ. এর আকৃতিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং সে উচ্চতায় হবে ষাট হাত। আর আদম হতে আজ পর্যন্ত সৃষ্টিকুলের উচ্চতা ক্রমাগত হ্রাস পেয়ে আসছে। ৮২৫
(৬০১) হজরত বারা বিন আজিব রাদি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
أَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِسَبْعٍ ؛ بِعِيَادَةِ الْمَرِيضِ، وَاتَّبَاعِ الْجَنَائِزِ، وَتَشْمِيْتِ الْعَاطِسِ، وَنَصْرِ الضَّعِيْفِ، وَعَوْنِ الْمَظْلُومِ، وَإِفْشَاءِ السَّلَامِ، وَإِبْرَارِ الْقَسَمِ.
অর্থ: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাতটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন: রোগীদর্শন করতে, জানাযায় অংশ্রহণ করতে, হাঁচিদাতার জবাব দিতে, দুর্বলকে সাহায্য করতে, মাজলুমকে মদদ করতে, সালামের প্রসার করতে শপথকারীর শপথ পূরণ করতে। ৮২৬
(৬০২) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَا تَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوْا، وَلَا تُؤْمِنُوْا حَتَّى تَحَابُّوْا، أَوَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى شَيْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ؟ أَفْشُوا السَّلَامَ بَيْنَكُمْ.
অর্থ: তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না ঈমান আনবে। আর ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না একে অন্যকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদের তা বলে দেব না যা করলে তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসার সৃষ্টি হবে? তা হল তোমরা পরস্পর বেশি সালাম বিনিময় করবে। ৮২৭
(৬০৩) হজরত আবদুল্লাহ বিন সালাম রাদি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-
يَا أَيُّهَا النَّاسُ، أَفْشُوا السَّلَامَ، وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ، وَصَلُّوْا وَالنَّاسُ نِيَامُ، تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ بِسَلَامٍ.
অর্থ: হে মুমিনগণ! তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও, অন্নদান কর, আত্মীয়তার বন্ধন ধরে রেখ এবং মানুষ ঘুমিয়ে থাকাবস্থায় (তাহাজ্জুদের) নামাজ আদায় কর। তবেই নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ৮২৮-ইমাম তিরমিজি বলেন, এই হাদিস সহিহ।
(৬০৪) হজরত আবু উমামা রাদি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-
أَمَرَنَا نَبِيُّنَا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نُفْشِيَ السَّلَامَ.
অর্থ: নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সালাম প্রসারের নির্দেশ প্রদান করেছেন। ৮২৯
(৬০৫) ইসহাক বিন আবদুল্লাহ বিন আবু তালহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
أَنَّ الطَّفَيْلَ بْنَ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ كَانَ يَأْتِي عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ فَيَغْدُو مَعَهُ إِلَى السُّوقِ، قَالَ : فَإِذَا غَدَوْنَا إِلَى السُّوْقِ لَمْ يَمُرَّ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ عَلَى سَقَاطِ، وَلَا صَاحِبِ بِيْعَةٍ، وَلَا مِسْكِينٍ، وَلَا أَحَدٍ ؛ إِلَّا سَلَّمَ عَلَيْهِ، قَالَ الطُّفَيْلُ : فَجِئْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ يَوْمًا، فَاسْتَتْبَعَنِي إِلَى السُّوْقِ، فَقُلْتُ لَهُ : وَمَا تَصْنَعُ فِي السُّوْقِ، وَأَنْتَ لَا تَقِفُ عَلَى الْبَيِّعِ، وَلَا تَسْأَلُ عَنِ السَّلَعِ، وَلَا تَسُوْمُ بِهَا، وَلَا تَجْلِسُ فِي مَجَالِسِ السُّوْقِ ؟ قَالَ : وَأَقُولُ : اجْلِسْ بِنَا هَاهُنَا نَتَحَدَّثُ، قَالَ : فَقَالَ لِي عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ : يَا أَبَا بَطْنٍ - وَكَانَ الطَّفَيْلُ ذَا بَطْنٍ - إِنَّمَا نَغْدُوْ مِنْ أَجْلِ السَّلَامِ، نُسَلِّمُ عَلَى مَنْ لَقِيَنَا.
অর্থ: তোফায়েল বিন উবাই বিন কাব তাকে জানিয়েছেন যে, আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. এর সাথে তিনি প্রত্যুষে বাজারে যেতেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা প্রত্যুষে বাজারে গেলে তিনি টোকাই (ফেলে যাওয়া জিনিস-পত্র বিক্রেতা) বিক্রেতা, মিসকিন কিংবা অন্য ব্যক্তি সবাইকে সালাম দিতেন। তোফায়েল বলেন, আমি একদিন আবদুল্লাহ বিন উমরের কাছে যাই, তিনি আমাকে নিয়ে বাজারে যেতে চাইলেন। আমি তাকে বললাম, আপনি বাজারে গিয়ে কি করবেন? অথচ আপনি ক্রয়-বিক্রয় করেন না, পণ্য সামগ্রীর মূল্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন না এবং তার দরদামও করেন না। এমনকি বাজারের কোন আসরেও বসেন না। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, এখানে আমাদের নিয়ে বসুন আমরা (দীনি) কথাবার্তা করি। ইবনে উমর আমাকে বললেন, হে পেটমোটা! (তোফায়েল পেটওয়ালা ছিলেন) আমরা সালামের জন্যই প্রত্যুষে বাজারে আসি, যার সাথেই সাক্ষাত হোক তাকে সালাম দেব। ৮৩০
(৬০৬) হজরত আম্মার রাদি. বলেন-
ثَلَاثُ مَنْ جَمَعَهُنَّ فَقَدْ جَمَعَ الْإِيْمَانَ : الْإِنْصَافُ مِنْ نَفْسِكَ، وَبَذْلُ السَّلَامِ لِلْعَالَمِ، وَالْإِنْفَاقُ مِنَ الْإِقْتَارِ.
অর্থ: তিনটি গুণ যে আয়ত্ত করল সে যেন (পূর্ণ) ঈমান লাভ করল: নিজ থেকে ইনসাফ করা, বিশ্বে সালামের প্রসার করা, এবং অভাবগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও দান-খয়রাত করা। ৮৩১ -সহিহ বুখারি ছাড়া অন্য কিতাবে এ হাদিসটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মারফু সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।
ইমাম নববি রহ. বলেন, আমি মনে করি উপরিউক্ত তিন বাক্যে দুনিয়া-আখেরাতের সমূহ কল্যাণ অন্তর্নিহিত হয়ে গেছে। কেননা ইনসাফের দাবি হল, আল্লাহ তাআলার সমস্ত হক আদায় করা, তার নির্দেশনাবলী পালন করা এবং যাবতীয় নিষিদ্ধ বিষয় থেকে বিরত থাকা। পাশাপাশি বান্দার অধিকারসমূহ আদায় করা, অনধিকার চর্চা না করা। নিজের প্রতি ইনসাফ করা, নিজেকে কখনো অসৎ কাজে লিপ্ত করবে না।
আর 'বিশ্বে সালামের প্রসার করা' দ্বারা উদ্দেশ্য হল, সমস্ত মানুষকে সালাম দেয়া। সুতরাং সালামের আবেদন হল, অন্যের প্রতি অহঙ্কার প্রদর্শন না করা এবং একে অপরের প্রতি এরূপ নির্দয় না থাকা, যা পরস্পরে সালাম বিনিময়ে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
আর 'অভাবগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও দান-খয়রাত করা'- এ কথা আল্লাহ তাআলার প্রতি পূর্ণ ভরসা ও আস্থাশীল হওয়া এবং মুসলমানদের প্রতি সহানুভূতি ইত্যাদিরও তাকাজা করে। আল্লাহ তাআলার কাছে উপরিউক্ত বিষয়ের ওপর আমল করার তাওফিক কামনা করি।
টিকাঃ
৮১৯. সুরা নুর: ৬১
৮২০. সুরা নিসা: ৮৬।
৮২১. সূরা নূর: ২৭।
৮২২. সূরা নূর: ৫৯।
৮২৩. সূরা জারিয়াত: ২৪-২৫।
৮২৪. সহিহ বুখারি: ১২, সহিহ মুসলিম: ৩৯, সুনানে নাসাঈ ৮/১০৭, সুনানে আবু দাউদ: ৫১৯৪, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩২৫৩, মুসনাদে আহমাদ ২/১৬৯।
৮২৫. সহিহ বুখারি: ৩৩২৬, সহিহ মুসলিম: ২৮৪১, মুসনাদে আহমাদ ২৪/২৪৪।
৮২৬. সহিহ বুখারি: ৬২৩৫, সহিহ মুসলিম: ২০২৬, সুনানে তিরমিজি: ২৮১০, সুনানে নাসাঈ ৮/২০১, মুসনাদে আহমাদ ৪/২৮৪।
৮২৭. সহিহ মুসলিম; ৫৪, সুনানে তিরমিজি: ২৬৮৯, সুনানে আবু দাউদ: ৫১৯৩, মুসনাদে আহমাদ ২/৩৯১, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৬৮।
৮২৮. সুনানে তিরমিজি: ২৪৮৫, মুসনাদে দারিমি: ১৫০১, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৩৩৪, মুসনাদে আহমাদ ৫/৪৫১, মুসতাদরাকে হাকেম ৪/১৬০।
৮২৯. সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৬৯৩, আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ২১৬।
৮৩০. মুয়াত্তা মালেক: ২/৯৬১, আলআদাব: ১০০৬।
৮৩১. সহিহ বুখারি: ১/৮২, মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ১৯৪৩৯, আলঈমান: ১৩১।
📄 সালাম প্রদানের নিয়ম ও বিধান
জ্ঞাতব্য এই যে, উত্তম হল এক মুসলমান অপর মুসলমানকে বলবে: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ (আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ: আপনাদের ওপর আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক) সালাম গ্রহীতা একজন হলেও বহুবচনের সর্বনাম যোগে সালাম দিবে। উত্তরদাতা সংযুক্তকারী ওয়াও অব্যয়সহ বলবে: وَعَلَيْكُمُ السَّلَامُ (وَ رَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ) ওয়া আলাইকুমুস সালামু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ: আপনাদের ওপরও আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক)
সালামের সূচনাকারী “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ” বলা উত্তম হওয়ার ব্যাপারে অন্যান্যদের পাশাপাশি মতামত পেশ করেছেন বিচারপতি ইমাম আবুল হাসান মাওয়ারদি তার 'আলহাভি ফি কিতাবির সিয়ার' (১৮/১৬৬) কিতাবে এবং ইমাম আবু সাদ মুতাওয়াল্লি তার 'কিতাবু সালাতিল জুমুআ' এ। এ সংক্রান্ত দলিলাদি:
(৬০৭) হজরত ইমরান বিন হুসাইন রাদি. হতে বর্ণিত-
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : السَّلَامُ عَلَيْكُمْ. فَرَدَّ عَلَيْهِ السَّلَامَ، ثُمَّ جَلَسَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : عَشْرُ. ثُمَّ جَاءَ آخَرُ فَقَالَ : السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ . فَرَدَّ عَلَيْهِ، فَجَلَسَ، فَقَالَ : عِشْرُونَ. ثُمَّ جَاءَ آخَرُ فَقَالَ : السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ فَرَدَّ عَلَيْهِ، فَجَلَسَ، فَقَالَ: ثَلَاثُونَ.
অর্থ: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এক লোক এসে বলল: "আসসালামু আলাইকুম"। নবিজি তার সালামের জবাব দিলেন, সে বসে পড়ল। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দশ নেকি। তারপর আরেকজন এসে সালাম দিতে গিয়ে বলল: “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ”, নবিজি জবাব দিয়ে বললেন: বিশ নেকি। অনন্তর আরেকজন এসে বলল: “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ", নবিজি তার সালামের জবাব দিলেন, সে বসে পড়ল। নবিজি বললেন: ত্রিশ নেকি। ৮৩২ -সুনানে আবু দাউদের এক রেওয়ায়েতে হজরত মুআজ বিন আনাস রাদি. এর সূত্রে অতিরিক্ত এসেছে-
ثُمَّ أَلَى آخَرُ فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ وَمَغْفِرَتُهُ. فَقَالَ: أَرْبَعُوْنَ. قَالَ: هَكَذَا تَكُوْنُ الْفَضَائِلُ.
অর্থ: অতঃপর অন্য এক ব্যক্তি এসে সালাম দিতে গিয়ে বলল: "আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ওয়া মাগফিরাতুহ”। নবিজি বললেন, চল্লিশ নেকি। তারপর বললেন, এভাবে ফজিলত বৃদ্ধি হতে থাকবে। ৮৩৩
(৬০৮) হজরত আনাস রাদি. হতে দুর্বল সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন-
كَانَ رَجُلٌ يَمُرُّ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْعَى دَوَابَّ أَصْحَابِهِ فَيَقُولُ : السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ، فَيَقُوْلُ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : وَعَلَيْكَ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ وَمَغْفِرَتُهُ وَرِضْوَانُهُ، فَقِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ تُسَلِّمُ عَلَى هَذَا سَلَاماً مَا تُسَلِّمَهُ عَلَى أَحَدٍ مِنْ أَصْحَابِكَ؟ قَالَ: وَمَا يَمْنَعُنِي مِنْ ذُلِكَ وَهُوَ يَنْصَرِفُ بِأَجْرِ بِضْعَةَ عَشَرَ رَجُلاً؟
অর্থ: জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট দিয়ে অতিক্রম করে, যে নাকি সাহাবায়ে কেরামের গবাদিপশু চরাত। সে বলত, “আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ”। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম "ওয়া আলাইকাস সালামু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ওয়া মাগফিরাতুহু ওয়ারিদওয়ানুহ" বলে তার সালামের উত্তর দিতেন। বলা হল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এই লোকটির সালামের উত্তর এমনভাবে দেন, যা আপনার অন্য কোনো সাহাবিকে দেন না। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাকে এভাবে সালাম দেয়া থেকে কোনো জিনিস বাধাগ্রস্ত করবে? অথচ সে দশটি নেকি নিয়েই প্রস্থান করছে! ৮৩৪
আমাদের মাজহাবের ইমামগণ বলেন, যদি সূচনাকারী 'আসসালামু আলাইকুম', 'আসসালামু আলাইকা' কিংবা 'সালামুন আলাইকা' বলে সালাম প্রদান করে, তাহলে সালামের প্রতিদান অর্জন হয়ে যাবে। আর যদি 'ওয়ালাইকাস সালাম' অথবা 'ওয়ালাইকুমুস সালাম' কিংবা ওয়াও বিলুপ্ত করে 'আলাইকুমুস সালাম' বলে উত্তর প্রদান করে, তাহলে এটিও উত্তর হিসাবে যথেষ্ট হবে। এটাই বিশুদ্ধ মাজহাব। ইমাম শাফেয়ি রহ. তার 'কিতাবুল উম্মে' স্পষ্টভাবে এমনটিই উল্লেখ করেছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামায়ে কেরামও এমনটাই বলেছেন। তবে ইমাম আবু সাদ মুতাওয়াল্লি তার কিতাব 'আততাতিম্মা'য় সুদৃঢ়ভাবে উল্লেখ করেছেন যে, এটা জবাবের জন্য যথেষ্ট নয়। তার এই বক্তব্য দুর্বল অথবা ভুল। এটা কুরআন-সুন্নাহ এবং ইমাম শাফেয়ির বক্তব্যের পরিপন্থী।
কুরআনে রয়েছে, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ফেরেশতারা সালাম করলেন, ইবরাহিমও (উত্তরে) সালাম বললেন। ৮৩৫
এটা যদিও আমাদের পূর্বের শরিয়তের বিধান, কিন্তু আমাদের শরিয়ত একে অনুমোদন করেছে। হজরত আবু হুরায়রা রাদি. এর ঐ হাদিস, যা আমরা ইতিপূর্বে ফেরেশতা-কর্তৃক আদমকে উত্তর প্রদানের আলোচনায় উল্লেখ করেছি। কেননা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে জানিয়েছেন: আল্লাহ তাআলা বলেছেন, এটি তোমার এবং তোমার সন্তানদের অভিবাদন। ৮৩৬ আর এই উম্মতও তার সন্তানাদির অন্তর্ভুক্ত।
আমাদের মাজহাবের ইমামগণ এ ব্যাপারে একমত যে, যদি উত্তরে শুধুমাত্র 'আলাইকুম' বলে তাহলে সেটি উত্তর হিসাবে বিবেচিত হবে না। আর যদি ওয়াওসহ 'ওয়ালাইকুম' বলে তাহলে হবে কিনা? এ ক্ষেত্রে আমাদের ইমামগণের দুটি মত রয়েছে। যদি সূচনাকারী 'সালামুন আলাইকুম' অথবা 'আসসালামু আলাইকুম' বলে সালাম দেয় তাহলে উত্তরদাতার জন্য উভয় সুরতেই 'সালামু আলাইকুম' বলা উচিত। 'আসালামু আলাইকুম'ও বলতে পারবে। কারণ, আল্লাহর ইরশাদ রয়েছে:
قَالُوا سَلْمًا قَالَ سَلْمٌ.
অর্থ: তারা তাকে সালাম বললেন। ইবরাহিমও (তদুত্তরে) সালাম বললেন। ৮৩৭
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক তিনবার সালাম প্রদান বিষয়ক বিশুদ্ধ বর্ণনার মর্মার্থ প্রসঙ্গে
(৬০৯) হজরত আনাস রাদি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
أَنَّهُ كَانَ إِذَا تَكَلَّمَ بِكَلِمَةٍ أَعَادَهَا ثَلَاثًا، حَتَّى تُفْهَمَ عَنْهُ، وَإِذَا أَتَى عَلَى قَوْمٍ فَسَلَّمَ عَلَيْهِمْ سَلَّمَ عَلَيْهِمْ ثَلَاثًا.
অর্থ: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো (গুরুত্বপূর্ণ) কথা বলতেন, তখন তা বুঝে নেয়ার জন্য তিনবার বলতেন। আর যখন তিনি কোনো গোত্রের নিকট এসে সালাম দিতেন, তাদের প্রতি তিনবার সালাম দিতেন। ৮৩৮
আমি বলি: এটা তখন, যখন উপস্থিতি বেশি হয়।
সালাম ও উত্তরের আওয়াজ যেমন হতে হবে এবং এক্ষেত্রে মুস্তাহাব পদ্ধতি
যে পরিমাণ উচ্চ আওয়াজে সালাম প্রদান করলে সালাম দাতা সুন্নাত পদ্ধতিতে সালাম আদায়কারী হবে: আওয়াজ এতটা উঁচু করবে যে, সালাম গ্রহীতা সালামের শব্দ শুনতে পাবে। সে যদি না শোনে তাহলে সালামপ্রদানকারী হিসাবে বিবেচিত হবে না এবং উক্ত সালামের উত্তর দেয়াও আবশ্যক হবে না।
অনুরূপভাবে সালামের উত্তর 'সালাম দাতা স্পষ্টভাবে শুনতে পায় পরিমাণ আওয়াজে' দিলে ফরজ আদায় হবে। ৮৩৯ অতএব, সালাম দাতা যদি না শোনে তাহলে উত্তরদাতার জিম্মা থেকে ফরজ আদায় হবে না। ইমাম মুতাওয়াল্লিসহ অন্যরা এমনই বলেছেন।
ইমাম নববি রহ. বলেন, সালাম গ্রহীতা সালামের আওয়াজ ভালোভাবে শুনতে পায় এমন উচ্চস্বরে সালাম দেয়া মুস্তাহাব। যদি এক্ষেত্রে সংশয় দেখা দেয়, তাহলে পুনরায় (প্রয়োজন মতো) উচ্চ আওয়াজে সালাম দিবে। সতর্ক থাকবে এবং স্পষ্টভাবে সালাম দিবে। পক্ষান্তরে ঘুমন্ত মানুষের পাশে থাকা জাগ্রত ব্যক্তিকে সালাম দেয়ার ক্ষেত্রে এমন ক্ষীণ আওয়াজে সালাম দেয়া সুন্নাত, যাতে জাগ্রতরা শুনতে পায় আবার ঘুমন্তরাও সজাগ না হয়ে যায়।
(৬১০) হজরত মিকদাদ রাদি. থেকে বর্ণিত দীর্ঘ হাদিস আছে, সেখানে তিনি বলেন-
كُنَّا نَرْفَعُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَصِيبَهُ مِنَ اللَّبَنِ، فَيَجِيءُ مِنَ اللَّيْلِ فَيُسَلِّمُ تَسْلِيمًا لَا يُوْقِظُ نَائِمًا، وَيُسْمِعُ الْيَقْظَانَ، وَجَعَلَ لَا يَجِيْتُنِي النَّوْمُ، وَأَمَّا صَاحِبَايَ فَنَامَا، وَلَمْ يَصْنَعَا مَا صَنَعْتُ، قَالَ : فَجَاءَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَسَلَّمَ كَمَا كَانَ يُسَلِّمُ.
অর্থ: আমরা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য (দোহনকৃত দুধের) তার অংশ তুলে রাখতাম। অতঃপর তিনি রাতে আসতেন এবং এমনভাবে সালাম দিতেন যাতে ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত না হয়, আর জাগ্রত ব্যক্তি শুনতে পায়। একদিন আমার ঘুম আসছিল না। আমার সঙ্গীদ্বয় তো ঘুমাচ্ছিলেন। এরপর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে যেভাবে সালাম দিতেন সেভাবেই সালাম দিলেন। ৮৪০
তাৎক্ষণিক সালামের উত্তর দেয়া শর্ত
ইমাম আবু মুহাম্মাদ কাজি হুসাইন এবং ইমাম আবুল হাসান ওয়াহিদিসহ অন্যরা বলেন, সালামের জওয়াব তাৎক্ষণিকভাবে দেয়া আবশ্যক। যদি উত্তর দিতে বিলম্ব করে তাহলে উক্ত উত্তর বিবেচিত হবে না। সে উত্তর না দেয়ার কারণে গুনাহগার হবে।
মুখে উচ্চারণ না করে হাত ইত্যাদি দ্বারা ইশারা করে সালাম দেয়া মাকরুহ
(৬১১) হজরত আমর বিন শুআইব রহ. হতে পর্যায়ক্রমে তার বাবা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا ، لَا تَشَبَّهُوْا بِالْيَهُودِ، وَلَا بِالنَّصَارَى ؛ فَإِنَّ تَسْلِيمَ الْيَهُودِ الْإِشَارَةُ بِالْأَصَابِعِ، وَتَسْلِيمَ النَّصَارَى الْإِشَارَةُ بِالْأَكُفَّ.
অর্থ: বিজাতির অনুকরণকারী ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়। তোমরা ইহুদি-নাসারাদের অনুকরণ কর না, কেননা ইহুদিরা আঙ্গুলের ইশারায় এবং নাসারাগণ হাতের ইশারায় সালাম দেয়। -ইমাম তিরমিজি বলেন, এর সনদ দুর্বল।
(৬১২) হজরত আসমা বিনতে ইয়েজিদ রাদি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ فِي الْمَسْجِدِ يَوْمًا، وَعُصْبَةٌ مِنَ النِّسَاءِ قُعُودُ، فَأَلْوَى بِيَدِهِ بِالتَّسْلِيمِ.
অর্থ: একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে গমন করেন, এমতাবস্থায় সেখানে একদল মহিলা উপবিষ্ট ছিলেন। অতঃপর তিনি হাত উচিয়ে তাদেরকে সালাম দিলেন।
ইমাম নববি রহ. বলেন, এ হাদিসটি এবিষয়ে গ্রহণযোগ্য যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই সাথে মুখে উচ্চারণ ও হাতের ইশারায় সালাম দিয়েছেন। এর দলিল হল, ইমাম আবু দাউদ এই হাদিস নকল করেছেন, সেখানে আছে: অতঃপর তিনি আমাদেরকে সালাম দিলেন।
সালামের বিধান
জ্ঞাতব্য, সালাম দেয়া সুন্নাতে কেফায়া, ওয়াজিব নয়। একাধিক ব্যক্তি হলে একজনের সালামই যথেষ্ট। তবে সবাইকে সালাম দেয়া উত্তম। আমাদের মাজহাবের আলেম ইমাম কাজি হুসাইন রহ. তার কিতাবুস সিয়ারে বলেন, আমাদের নিকট সালাম দেয়া ছাড়া আর কোনো সুন্নাতে কেফায়া নেই।
আমার মতে কাজি সাহেবের এই সীমিতকরণ প্রত্যাখ্যাত, কেননা আমাদের উলামায়ে কেরাম বলেছেন, হাঁচিদাতার উত্তরপ্রদান করাও সুন্নাতে কেফায়া। যেমনটা সামনে এর বিবরণ আসছে। আমাদের ঘরানার প্রায় সকলের ভাষ্যমতে প্রত্যেক পরিবারের জন্য কুরবানি করাও একটি সুন্নাতে কেফায়া। তাদের একজন সকলের তরফে আদায় করলে সকলের পক্ষ থেকে সুন্নাহ ও ইসলামের প্রতীক আদায় হয়ে যাবে।
বাকি রইল সালামের জবাব: সালাম গ্রহীতা একজন হলে জবাব দেয়া তার ওপরই আবশ্যক। আর একাধিক হলে প্রত্যেকের ওপর ফরজে কেফায়া।
(৬১৩) হজরত আলি রাদি. হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
يُجْزِئُ عَنِ الْجَمَاعَةِ إِذَا مَرُّوا أَنْ يُسَلَّمَ أَحَدُهُمْ، وَيُجْزِئُ عَنِ الْجُلُوسِ أَنْ يَرُدَّ أَحَدُهُمْ.
অর্থ: অতিক্রমকারী একদলের পক্ষ থেকে একজনের সালাম সকলের জন্য যথেষ্ট। এমনিভাবে উপবিষ্টদের একজনের উত্তর সকলের জন্য যথেষ্ট। ৮৪৪
(৬১৪) হজরত জায়েদ বিন আসলাম রাদি. হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِذَا سَلَّمَ وَاحِدٌ مِنَ القَوْمِ أَجْزَأَ عَنْهُمْ.
অর্থ: একদল লোকের মধ্য থেকে একজন সালাম দিলে তা সকলের জন্য যথেষ্ট। ৮৪৫ - ইমাম নববি বলেন, হাদিসটি মুরসাল, তবে সনদ সহিহ।
আড়াল হতে অথবা পত্র কিংবা দূতের মারফতে সালাম পাঠালে উত্তর দেয়া ওয়াজিব
ইমাম আবু সাঈদ মুতাওয়াল্লিসহ অন্যরা বলেন, কোনো ব্যক্তি যদি কাউকে আড়াল থেকে ডেকে বলে, "হে অমুক! আসসালামু আলাইকা” অথবা চিঠি লিখল এবং তাতে "হে অমুক! আসসালামু আলাইকা” লিখল অথবা "অমুকের ওপর সালাম”। অথবা দূত পাঠিয়ে বলল, "অমুককে আমার সালাম জানাবে”। অতঃপর পত্র বা দূত উক্ত ব্যক্তির কাছে পৌঁছলে সালামের জবাব দেয়া তার ওপর ওয়াজিব। ওয়াহিদিসহ অন্যান্যরা বলেন, চিঠি প্রাপকের কাছে সালাম পৌঁছলে জবাব দেয়া তার ওপর ওয়াজিব।
(৬১৫) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন-
هَذَا جِبْرِيلُ يَقْرَأُ عَلَيْكِ السَّلَامَ. فَقَالَتْ: وَعَلَيْهِ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ.
অর্থ: এই যে জিবরিল তোমাকে সালাম জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি উত্তরে বললাম: ওয়া আলাইহিস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। ৮৪৬-অনুপস্থিত ব্যক্তিকে সালাম প্রেরণ করা মুস্তাহাব।
সালাম অবহিতকারী ও প্রেরণকারীর উদ্দেশ্যে সালামের উত্তর দেয়া মুস্তাহাব
যখন কোনো ব্যক্তি কারো মাধ্যমে সালাম পাঠায় এবং দূত গিয়ে বলে, অমুক আপনাকে সালাম জানিয়েছেন। তাহলে তৎক্ষণাৎ সালাম গ্রহীতার ওপর উত্তর দেয়া ওয়াজিব, সালামের বাহককেও শরিক করা মুস্তাহাব। অর্থাৎ সালাম গ্রহীতা এভাবে উত্তর দিবে: وَعَلَيْكَ وَعَلَيْهِ السَّلَامُ )ওয়া আলাইকা ওয়া আলাইহিস সালাম: তোমার ওপর এবং তার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক)।
(৬১৬) হজরত গালিব কাত্তানের সূত্রে এক ব্যক্তি থেকে বর্ণিত। তিনি তার পিতার সূত্রে দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন-
بَعَثَنِي أَبِي إِلَى رَسُولِ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ : ائْتِهِ فَأَقْرِتْهُ السَّلَامَ. قَالَ: فَأَتَيْتُهُ فَقُلْتُ: إِنَّ أَبِي يُقْرِئُكَ السَّلَامَ. فَقَالَ: عَلَيْكَ وَعَلَى أَبِيْكَ السَّلَامُ.
অর্থ: আমাকে আমার পিতা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পাঠালেন। তিনি বললেন, তার নিকট গিয়ে আমার সালাম জানাবে। আমি তার নিকট গিয়ে বললাম, আমার পিতা আপনাকে সালাম দিয়েছেন। নবিজি উত্তর দিয়েছেন: عَلَيْكَ وَعَلَى أَبِيْكَ السَّلَامُ )ওয়া আলাইকা ওয়া আলা আবিকাস সালাম: তোমার ওপর এবং তোমার পিতার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক)। ৮৪৭
ইমাম নববি বলেন, এটা যদিও অজ্ঞাত ব্যক্তির বর্ণনা, কিন্তু প্রায় সকল আহলে ইলমের নিকট ফজিলত-সংক্রান্ত দুর্বল হাদিস গ্রহণযোগ্য।
টিকাঃ
সুনানে তিরমিজি: ২৬৯৫।
সুনানে তিরমিজি: ২৬৯৭, সুনানে আবু দাউদ: ৫২০৪, মুসনাদে আহমাদ ৬/৪৫৭-৪৫৮, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৭০১, মুসনাদে দারিমি: ২৬৪০, আলআদাব: ১৪০৭।
সুনানে আবু দাউদ: ৫২০৪।
৮৩৪. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ২৩৫।
৮৩৫. সুরা জারিয়াত: ২৫।
৮৩৬. সহিহ বুখারি: ৩৩২৬, সহিহ মুসলিম: ২৮৪১।
৮৩৭. সুরা জারিয়াত: ২৪-২৫।
৮৩৮. সহিহ বুখারি: ৯৫, সুনানে তিরমিজি: ২৭২৪।
৮৩৯. আমাদের কাছে যেটা ওয়াজিব, শাফেয়িদের কাছে সেটা ফরজ।
৮৪০. সহিহ মুসলিম: ২০৫৫।
৮৩২. মুসনাদে দারেমি: ২৬৮২, সুনানে আবু দাউদ: ৫১৯৫, সুনানে তিরমিজি: ২৬৮৯, আমাল: ৩৩৭, নাসাঈ।
৮৩৩. সুনানে আবু দাউদ: ৫১৯৬।
৮৪৪. সুনানে আবু দাউদ: ৫২১০।
৮৪৫. মুয়াত্তা মালেক ২/৯৫৯।
৮৪৬. সহিহ বুখারি: ৬২১৯, সহিহ মুসলিম: ২৪৪৭, সুনানে তিরমিজি: ৩৮৮১, মুসনাদে আহমাদ ৬/৫৫, সুনানে আবু দাউদ: ৫২৩২, সুনানে নাসাঈ ৭/৬৯, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৬৯৬, আমাল: ৩৭৫, নাসাঈ, আমাল: ২৩৯, ইবনুস সুন্নি।
৮৪৭. সুনানে আবু দাউদ: ৫২৩১।
📄 যাদেরকে সালাম দেয়া যাবে এবং যাদের যাবে না
বধির ও বোবাদের সালাম প্রদান এবং তাদের সালামের উত্তরপ্রদানের পদ্ধতি
ইমাম মুতাওয়াল্লি বলেন, কোনো বধিরকে সালাম করলে সে যদি শুনতে না পায়, তাহলে সামর্থনুযায়ী উচ্চকণ্ঠে সালাম দিবে এবং পাশাপাশি হাত দিয়েও ইশারা করবে, যাতে তাকে বুঝানোর এবং উত্তর প্রাপ্তির উপযুক্ত হয়। অতএব, উচ্চারণ ও হাতের ইশারা উভয়ের সমন্বয়ে সালাম না দিলে সে উত্তর প্রাপ্তির উপযুক্ত হবে না।
অনুরূপভাবে কোনো বধির সুস্থ মানুষকে সালাম দিলে তার জবাবও মুখে উচ্চারণ ও ইশারা করে দিতে হবে। যাতে তাকে বুঝানো সম্ভব হয় এবং উত্তর প্রদানের আবশ্যকতা থেকে দায়মুক্ত হয়।
যদি বোবা ব্যক্তিকে সালাম করে এবং সে ইশারায় সালামের জবাব দেয়, তাহলে তার ফরজ আদায় হয়ে যাবে। কেননা বোবা ব্যক্তির ইশারা বলার স্থলাভিষিক্ত। এমনিভাবে বোবা ব্যক্তি তাকে ইশারায় সালাম করলে সে জবাব প্রাপ্তির উপযুক্ত।
নাবালিগের সালাম এবং তার প্রতি বালিগের মালাম
ইমাম মুতাওয়াল্লি বলেন, অপ্রাপ্ত বয়স্ক কাউকে সালাম দিলে তার জন্য জবাব দেয়া আবশ্যক নয়, কেননা নাবালিগ বাচ্চা ফরজের ভারার্পিত নয়। এটাই বিশুদ্ধ। তবে জবাব দেয়া আদব ও মুস্তাহাবের অন্তর্ভুক্ত।
কাজি হুসাইন এবং তার ছাত্র মুতাওয়াল্লি বলেন, যদি অপ্রাপ্তবয়স্ক বাচ্চা প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে সালাম দেয়, তাহলে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ওপর তার জবাব দেয়া ওয়াজিব হবে কিনা? এক্ষেত্রে দুটি অবস্থা হতে পারে, যা নাবালিগের ইসলাম শুদ্ধ হওয়া না হওয়ার ওপর নির্ভরশীল। যদি বলি, তার ইসলাম শুদ্ধ তাহলে তার সালামের বিধান প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির সালামের নামান্তর। সুতরাং তার সালামের জবাব দেয়া ওয়াজিব। আর যদি বলি: নাবালিগের ইসলাম সহিহ নয়, তাহলে সেক্ষেত্রে তার জবাব দেয়া ওয়াজিব নয়, তবে মুস্তাহাব।
ইমাম নববি রহ. বলেন, আমার নিকট উভয় অবস্থার মাঝে বিশুদ্ধ হল: তার সালামের জবাব দেয়া ওয়াজিব। কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন: তোমাদেরকে কেউ যদি সালাম করে তাহলে তোমরাও তাকে সালাম বল; তার চেয়ে উৎকৃষ্ট অথবা তার মতই ফিরিয়ে বল। ৪৮৮ আর তাদের দুজনের বক্তব্য ভুলের ওপর ভিত্তিশীল, যেমনটা ইমাম শাশি বলেছেন।
যদি প্রাপ্তবয়স্ক একদল মানুষকে সালাম দেয় এবং তাদের কোনো নাবালিগও থাকে, আর সে একাই সালামের উত্তর দেয়, তাহলে কি বাকিদের থেকে উত্তরের অপরিহার্যতা আদায় হয়ে যাবে? এক্ষেত্রেও দুটি অবস্থা: বিশুদ্ধ হচ্ছে, যা কাজি হুসাইন এবং তার ছাত্র মুতাওয়াল্লি বলেছেন, আদায় হবে না, কেননা নাবালিগ ফরজের ভারার্পিত নয়। আর সালামের উত্তর দেয়া ফরজ, তার জবাব দ্বারা আদায় হবে না। যেমনিভাবে নাবালিগ বাচ্চা জানাযার নামাজ পড়লে অন্যদের থেকে ফরজ আদায় হয় না। আর দ্বিতীয় অবস্থা হল: আদায় হয়ে যাবে, যেমনটা পুরুষের পক্ষ থেকে নাবালিগের আজান সহিহ হয়ে যায় এবং তাদের পক্ষে পুনরায় আজান দিতে হয় না। (এটা মুস্তাজহিরি কিতাবের রচয়িতা ইমাম আবু বকর শাশির মত)
ইমাম নববি রহ. বলেন, নাবালিগকর্তৃক জানাযার নামাজ: অন্যদের থেকে জানাযার নামাজের আবশ্যকতা আদায় হয়ে যাবে কিনা এ বিষয়ে আমাদের মাজহাবে প্রসিদ্ধ দুটি মতামত রয়েছে। তন্মধ্য থেকে বিশুদ্ধতম মত হল, সকলের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হয়ে যাবে। এটাই ইমাম শাফেয়ির বক্তব্য। ৪৯
সালাম বিনিময় করতঃ পৃথক হয়ে যাওয়ার পর আবার সক্ষাৎ হলে পুনরায় সালাম দেয়া সুন্নাত
যখন কেউ কাউকে সালাম প্রদান করে, অতঃপর পুনরায় তার সাথে সাক্ষাৎ হয়, তবুও তাকে দ্বিতীয়বার, তৃতীয়বার কিংবা এরচে અધિકবার সালাম করা সুন্নাত। আমাদের উলামায়ে কেরাম এর ওপর একমত, দলিল নিম্নোক্ত:
(৬১৭) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে নামাজ বিনষ্টকারী ব্যক্তির হাদিসে বর্ণিত আছে-
إِنَّهُ جَاءَ فَصَلَّى، ثُمَّ جَاءَ إِلَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ، فَرَدَّ عَلَيْهِ السَّلَامَ، وَقَالَ: ارْجِعْ فَصَلَّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلَّ، فَرَجَعَ فَصَلَّى، ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، حَتَّى فَعَلَ ذَلِكَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ.
অর্থ: জনৈক ব্যক্তি এসে (মসজিদে) নামাজ আদায় করলেন। অতঃপর তিনি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে সালাম দিলেন। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, পুনরায় গিয়ে সালাত আদায় কর, কেননা তুমি তো সালাত আদায় করনি। তিনি ফিরে গিয়ে (পূর্বের ন্যায়) সালাত আদায় করলেন। অতঃপর এসে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম করলেন। তিনি তিনবার এমনটি করলেন। ৮৫০
(৬১৮) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নকল করেন-
إِذَا لَقِيَ أَحَدُكُمْ أَخَاهُ فَلْيُسَلِّمْ عَلَيْهِ، فَإِنْ حَالَتْ بَيْنَهُمَا شَجَرَةٌ أَوْ جِدَارُ أَوْ حَجَرٌ ثُمَّ لَقِيَهُ فَلْيُسَلِّمْ عَلَيْهِ.
অর্থ: যখন তোমাদের একজন অপর মুমিন ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করবে, সে যেন তাকে সালাম দেয়। অতঃপর দুজনের মাঝে যদি গাছ, দেয়াল বা পাথর আড়াল হয়ে দাঁড়ায় এবং পুনরায় সাক্ষাৎ হয়, তবুও তাকে সালাম দেয়। ৮৫১
(৬১৯) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
كَانَ أَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَمَاشَوْنَ، فَإِذَا اسْتَقْبَلَتْهُمْ شَجَرَةٌ أَوْ أَكَمَّةٌ فَتَفَرَّقُوْا يَمِينًا وَشِمَالاً ثُمَّ الْتَقُوْا مِنْ وَرَائِهَا، سَلَّمَ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ.
অর্থ: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিগণ রাস্তায় চলার পথে সামনে কোনো গাছ বা টিলা এসে পড়লে তারা ডানে-বামে আলাদা হয়ে যেতেন। অতঃপর মিলিত হলে একে অপরকে সালাম করতেন। ৮৫২
উভয়ের একসঙ্গে অথবা একটু আগপিছ হওয়া প্রসঙ্গে
যখন দুই ব্যক্তির সাক্ষাৎ হয় এবং প্রত্যেকেই একে অপরকে একই সাথে বা আগে-পরে করে সালাম করে ফেলে, তাহলে কাজি হুসাইন এবং আবু সাঈদ মুতাওয়াল্লি বলেন, উভয়ই সালাম দাতা গণ্য হবে। ফলে প্রত্যেককে অপরের সালামের জবাব দেয়া ওয়াজিব। শাশি রহ. বলেন, উক্ত বক্তব্যে আপত্তি আছে। কেননা এমনটা জবাবের জন্য যথেষ্ট। এভাবে যে, একজনের সালাম আরেকজনের পরে হলে জবাব হয়ে যাবে, আর যদি একই সঙ্গে হয় তাহলে হবে না। শাশির বক্তব্যই বিশুদ্ধ। ৮৫৩
উত্তরের শব্দে সালাম দেয়ার বিধান
কেউ যদি কারো সাথে সাক্ষাতের পরে "ওয়া আলাইকুমুস সালাম” বলে সালাম দেয়, তাহলে ইমাম মুতাওয়াল্লি বলেন, এটা সালাম হিসাবে বিবেচিত হবে না। অতএব, সে জবাব পাওয়ারও উপযুক্ত হবে না। কেননা সালামের জন্য এই শব্দ অনুপযুক্ত।
ইমাম নববি রহ. বলেন, তবে যদি 'ওয়াও' বাদ দিয়ে "আলাইকা” বা "আলাইকুমুস সালাম" বলে- তাহলে আবুল হাসান ওয়াহিদি দৃঢ়ভাবে একে সালাম বিবেচিত করেছেন। সম্বোধিত ব্যক্তিকে জবাব দেয়া আবশ্যক, যদিও সে প্রচলিত শব্দ পরিবর্তন করেছে। এটাই দ্ব্যর্থহীন, এটাই ইমামুল হারামাইনের মাজহাব। অতএব, এতে জবাব ওয়াজিব হবে, কেননা একেও সালাম বলা হয়। এও বলা সম্ভব যে, এটি সালাম হওয়ার ব্যাপারে দুটি বক্তব্য বিদ্যমান, যেমনটা নামাজ থেকে ফারেগ হতে কেউ এমন বললে তার ব্যাপারে আমাদের আলেমদের দুটি বক্তব্য বিদ্যমান: আলাইকুমুস সালাম দ্বার নামাজ থেকে বের হতে পারবে কিনা? বিশুদ্ধ মতে পারবে। এও বলতে পারবে, এই ব্যক্তি কোনো অবস্থায়ই এমন সালামের জবাব প্রাপ্তির উপযুক্ত না। দলিল:
(৬২০) হজরত আবু জুরাই হুজাইমি রাদি. থেকে বর্ণিত (তার নাম জাবের বিন সুলাইম। কেউ বলেছেন, সুলাইম বিন জাবের) তিনি বলেন-
أَتَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ: عَلَيْكَ السَّلَامُ يَا رَسُولَ اللَّهِ . قَالَ: لَا تَقُلْ : عَلَيْكَ السَّلَامُ ؛ فَإِنَّ عَلَيْكَ السَّلَامُ تَحِيَّةُ الْمَوْتَى. السَّلَامُ قَبْلَ الْكَلَامِ.
অর্থ: আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললাম: আলাইকাস সালামু ইয়া রাসুলাল্লাহ। তিনি বললেন: আলাইকাস সালাম বল না, কেননা আলাইকাস সালাম দ্বারা মৃত ব্যক্তিকে সালাম দেয়া হয়। ৮৫৪ -ইমাম তিরমিজি একে হাসান সহিহ বলেছেন।
ইমাম নববি রহ. বলেন, হতে পারে উক্ত হাদিসটি উত্তম ও পূর্ণাঙ্গতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, এটি যে সালামই না এমন উদ্দেশ্য নয়। আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন। অবশ্য ইমাম গাজালি রহ. "ইহয়াউ উলুমিদ্দিন” কিতাবে (২/২০৫) উল্লেখ করেছেন যে, এই হাদিসের কারণে "আলাইকুমুস সালাম” শব্দ দ্বারা সালাম দেয়া মাকরুহ। তবে এ ব্যাপারে পছন্দনীয় মত হল, যদিও এমন শব্দে সালাম দেয়া মাকরুহ, কিন্তু দিয়ে ফেললে জবাব দেয়া ওয়াজিব। কেননা এটাও সালাম।
কথার আগে সালাম দেয়া সুন্নাত
কথা শুরু করার আগে সালাম দেয়া সুন্নাত। সহিহ হাদিস এবং পূর্ববর্তী- পরবর্তীদের আমলও এরকম হওয়ার বিষয়টি সুপ্রসিদ্ধ। দলিলের বিবেচনায় এটাই নির্ভরযোগ্য।
(৬২১) হজরত জাবের রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
অর্থ: কথার আগে সালাম। -এই হাদিস দুর্বল। ৮৫৫ ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি মুনকার।
সালামের উত্তর দেয়ার তুলনায় আগে সালাম করা উত্তম
রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহিহ হাদিসে বর্ণিত- "তাদের দুজনের মাঝে যে আগে সালাম করে সে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।” ৮৫৬ কাজেই পরস্পর দুজন মিলিত হলে প্রত্যেকের জন্য সালাম প্রদানে ব্রতী থাকা একান্ত কাম্য।
(৬২২) হজরত আবু উমামা রাদি. থেকে উত্তম সনদে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِاللَّهِ، مَنْ بَدَأَهُمْ بِالسَّلَامِ
অর্থ: আল্লাহ তাআলার কাছে সর্বোত্তম সেই, যে সর্বাগ্রে সালাম প্রদান করে। ৮৫৭-সুনানে তিরমিজির বর্ণনায় হজরত আবু উমামা থেকেই আছে-
الرَّجُلَانِ يَلْتَقِيَانِ أَيُّهُمَا يَبْدَأُ بِالسَّلَامِ ؟ فَقَالَ: أَوْلَاهُمَا بِاللَّهِ تَعَالَى.
অর্থ: জিজ্ঞাসা করা হল; হে আল্লাহর রাসুল, দুই ব্যক্তির পরস্পর সাক্ষাত হলে কে আগে সালাম দিবে? তিনি বললেন: তাদের মাঝে আল্লাহ তাআলার অধিক নিকটবর্তী ব্যক্তি। ৮৫৮-ইমাম তিরমিজি একে হাসান বলেছেন।
টিকাঃ
৮৫৫. সুনানে তিরমিজি: ২৬৯৯।
৮৫৬. সহিহ বুখারি: ৬০৭৭, সহিহ মুসলিম: ২৫৬০।
৮৫৭. সুনানে আবু দাউদ: ৫১৯৭, সুনানে তিরমিজি: ২৬৯৫, মুসনাদে আহমাদ ৫/২৫৪।
৮৫৮. সুনানে তিরমিজি: ২৬৯৪
৮৪৯. হানাফি মাজহাবের বিশুদ্ধ মত হল, নাবালেগ বাচ্চার (পার্থক্যকারী হোক অথবা না হোক) ইমামিত জায়েজ নয়। ফরজ নামাজের ইমামিত হোক কিংবা নফল নামাজের। দেখুন: ফাতহুল কাদির ১/৩১০।
৮৫০. সহিহ বুখারি: ৭৫৭, সহিহ মুসলিম: ৩৯৭, সুনানে আবু দাউদ: ৮৫৬, সুনানে তিরমিজি: ৩০৩, সুনানে নাসাঈ ২/১২৫, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১০৬১।
৮৫১. সুনানে আবু দাউদ: ৫২০০।
৮৫২. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ২৪৫।
৮৫৩. আমাদের মাজহাবও এরকম।
৮৫৪. সুনানে আবু দাউদ: ৪০৮৪, সুনানে তিরমিজি: ২৭২২, আমাল: ৩১৭-৩২০, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ ৫/৬৩, হাকেম ৪/১৮৬।
৪৮৮. সুরা নিসা: ৮৬।
📄 প্রবেশাধিকার ও অনুমতি চাওয়া
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا.
অর্থ: হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য গৃহে প্রবেশ কর না, যে পর্যন্ত না পরিচয় না কর এবং গৃহবাসীকে সালাম না কর। ৮৯২-আরো ইরশাদ করেন-
وَإِذَا بَلَغَ الْأَطْفَالُ مِنْكُمُ الْحُلُمَ فَلْيَسْتَأْذِنُوْا كَمَا اسْتَأْذَنَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ.
অর্থ: যখন তোমাদের বালকেরা বয়োপ্রাপ্ত হয়, তারাও যেন পূর্ববর্তীদের ন্যায় অনুমতি চায়। ৮৯৩
(৬৪০) হজরত আবু মুসা আশআরি রাদি. হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
الِاسْتِنْذَانُ ثَلَاثُ، فَإِنْ أُذِنَ لَكَ وَإِلَّا فَارْجِعْ.
অর্থ: তিনবার অনুমতি প্রার্থনা করবে। অতঃপর তোমাকে প্রবেশাধিকার দেয়া হলে প্রবেশ করবে, অন্যথায় ফিরে যাবে। ৮৯৪
(৬৪১) হজরত সাহল বিন সাদ রাদি. হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِنَّمَا جُعِلَ الِاسْتِنْذَانُ مِنْ أَجْلِ الْبَصَرِ.
অর্থ: চোখের খেয়ানতের জন্যই অনুমতি গ্রহণের বিধান আরোপিত হয়েছে। ৮৯৫
অনুমতি প্রার্থনার সুন্নাত পদ্ধতি হল, অনুমতিপ্রার্থী প্রথমে সালাম দিবে। অতঃপর দরজার কাছে দাড়িয়ে এমনভাবে অনুমতি প্রার্থনা করবে, যাতে ভিতরে যারা আছে তাদের প্রতি দৃষ্টি না পড়ে। অতঃপর বলবে, আসসালামু আলাইকুম, আমি কি প্রবেশ করতে পারি? যদি কেউ উত্তর না দেয় তাহলে দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার এরূপ করবে। তারপরও কেউ সাড়া না দিলে প্রত্যাগমন করবে।
(৬৪২) প্রসিদ্ধ তাবেঈ হজরত রিবয়ি বিন হিরাশ রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত। তিনি বলেন, বনি আমিরের এক ব্যক্তি আমাকে বলেছেন-
أَنَّهُ اسْتَأْذَنَ عَلَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ فِي بَيْتٍ، فَقَالَ: أَلِجُ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِخَادِمِهِ: اخْرُجْ إِلَى هَذَا فَعَلَّمْهُ الِاسْتِئَذَانَ فَقُلْ لَهُ: قُلِ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ، أَأَدْخُلُ؟ فَسَمِعَهُ الرَّجُلُ فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ، أَ أَدْخُلُ؟ فَأَذِنَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَدَخَلَ.
অর্থ: তিনি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অনুমতি কামনা করেন, এমতাবস্থায় নবিজি ঘরে ছিলেন। তিনি বলেছেন, আমি কি প্রবেশ করতে পারি? নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার খাদেমকে বললেন, তুমি তার নিকট গিয়ে তাকে অনুমতি চাওয়ার নিয়ম শিখিয়ে দাও। তুমি তাকে বলবে: এভাবে বল, আসসালামু আলাইকুম, আমি কি ভিতরে আসতে পারি? লোকটি এ কথা শুনে বলল, আসসালামু আলাইকুম, আমি কি ভিতরে আসতে পারি? অতঃপর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দিলে তিনি ভিতরে প্রবেশ করেন। ৮৯৬
(৬৪৩) হজরত কালাদাহ বিন হাম্বল রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন-
أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَدَخَلْتُ عَلَيْهِ وَلَمْ أُسَلِّمْ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ارْجِعْ فَقُلِ : السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَأَدْخُلُ؟
অর্থ: আমি সালাম না দিয়েই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট প্রবেশ করি। তিনি বললেন, তুমি ফিরে যাও এবং বল- আসসালামু আলাইকুম, আমি কি ভিতরে আসতে পারি?। ৮৯৭ - ইমাম তিরমিজি একে হাসান বলেছেন।
উপরের বর্ণনানুসারে অনুমতি চাওয়ার পূর্বে সালাম করাই বিশুদ্ধ নিয়ম। ইমাম মাওয়ারদি এক্ষেত্রে তিনটি পদ্ধতি উল্লেখ করেছেন: এক. পূর্বের আলোচিত পদ্ধতি, অর্থাৎ আগে সালাম দিবে তারপর অনুমতি প্রার্থনা করবে। দুই. অনুমতি প্রার্থনার পরে সালাম দিবে। তিন. এখতিয়ার। যদি প্রবেশের পূর্বে বাড়িওয়ালার ওপর অনুমতিপ্রার্থীর দৃষ্টি পড়ে যায়, তাহলে সালাম আগে দিবে, অন্যথায় আগে অনুমতি চাইবে। ৮৯৮
তিনবার অনুমতি চাওয়ার পরেও যদি অনুমতিপ্রাপ্ত না হয় এবং সে ধারণা করে যে, ভিতর থেকে শুনতে পায়নি তাহলে কি এর বেশি অনুমতি চাইবে? ইমাম আবু বকর ইবনুল আরাবি মালেকি রহ. এ বিষয়ে তিনটি মত ব্যক্ত করেছেন: এক. পুনরায় অনুমতি প্রার্থনা করবে। দুই. তৃতীয়বারের পর আর অনুমতি প্রার্থনা করবে না। তিন. পূর্বের শব্দযোগে হলে অনুমতি প্রার্থনা করবে না, ভিন্ন শব্দে হলে চাইবে। অতঃপর তিনি বলেন, কোনো অবস্থাতেই তিনবারের পরে আর অনুমতি না চাওয়া বিশুদ্ধ। ইমাম নববি রহ. বলেন, তিনি যেটিকে বিশুদ্ধ আখ্যা দিয়েছেন, এটাই সুন্নাত সম্মত।
অনুমতি চাওয়ার সময় পূর্ণ পরিচয় দেয়া উচিত
সালাম কিংবা দরজায় করাঘাত করে অনুমতি চাওয়ার পরে যদি ভিতর থেকে বলা হয়: তুমি কে? তাহলে বলবে: আমি অমুকের পুত্র অমুক বা আমি অমুক কিংবা অমুক যার পরিচয় এমন। এ জাতীয় আত্মপরিচয়মূলক কিছু বলবে, যার দ্বারা পূর্ণ পরিচিতি লাভ করা যায়। তবে আমি, খাদেম, একজন খাদেম, আপনার একজন ভক্ত বা এজাতীয় অস্পষ্ট পরিচয়ের ওপর ক্ষ্যান্ত করা অপছন্দনীয়।
(৬৪৪) মেরাজের প্রসিদ্ধ হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
ثُمَّ صَعِدَ بِيْ جِبْرِيلُ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَاسْتَفْتَحَ، فَقِيلَ : مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ، قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ ، ثُمَّ صَعِدَ بِي إِلَى السَّمَاءِ الثَّانِيَةِ وَالثَّالِثَةِ وَسَائِرِهِنَّ، وَيُقَالُ فِي بَابِ كُلِّ سَمَاءٍ : مَنْ هَذَا؟ فَيَقُوْلُ: جِبْرِيلُ.
অর্থ: অতঃপর জিবরিল আমাকে নিয়ে দুনিয়ার আকাশে গমন করেন এবং দরজা খুলতে বলেন। জিজ্ঞাসা করা হল: কে আপনি? তিনি বললেন: জিবরিল। আপনার সাথে কে? মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। অতঃপর আমাকে নিয়ে পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয়সহ সব আকাশে আরোহন করলেন এবং প্রত্যেক আকাশেই জিজ্ঞাসা করা হল তুমি কে? উত্তরে তিনি বলতেন: জিবরিল। ৮৯৯
(৬৪৫) হজরত আবু মুসা আশআরি রাদি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
لَمَّا جَلَسَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى بِثْرِ الْبُسْتَانِ وَجَاءَ أَبُو بَكْرٍ فَاسْتَأْذَنَ، فَقَالَ: مَنْ؟ قَالَ: أَبُو بَكْرٍ، ثُمَّ جَاءَ عُمَرَ فَاسْتَأْذَنَ، فَقَالَ: مَنْ: قَالَ عُمَرَ، ثُمَّ عُثْمَانَ كَذَلِكَ
অর্থ: একবার নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আরিস কূপের কিনারায় উপবিষ্ট হলেন। ঘটনাক্রমে আবু বকর রাদি. এসে অনুমতি কামনা করেন। নবিজি জিজ্ঞাসা করলেন: কে? তিনি বললেন, আবু বকর। অতঃপর উমরও এসে অনুমতি চাইলে তিনি বললেন: কে? বলা হল, উমর। অনুরূপভাবে উসমান এসে অনুমতি চাইলেন।৯০০
(৬৪৬) হজরত জাবের রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَدَقَقْتُ الْبَابَ، فَقَالَ: مَنْ ذَا؟ فَقُلْتُ : أَنَا. فَقَالَ: أَنَا أَنَا. كَأَنَّهُ كَرِهَهَا.
অর্থ: আমি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে দরজায় করাঘাত করলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কে? বললাম: আমি। তখন নবিজি আমি আমি বলতে লাগলেন, যেন তিনি এ কথা অপছন্দ করেছেন। ৯০১
যে সম্মানসূচক পরিচয় দেয়া ছাড়া অনুমতি প্রার্থীকে চেনা যায় না তাতে কোনো সমস্যা নেই
সম্বোধিত ব্যক্তি যদি চিনতে না পারে তাহলে অনুমতিপ্রার্থীর জন্য নিজের পরিচিত গুণাবলী উল্লেখ করে পরিচয়দানে কোনো সমস্যা নেই। এভাবে যে, নিজের উপাধি বলবে, কিংবা বলবে, আমি অমুক মুফতি, অমুক কাজি অথবা অমুক শায়খ ইত্যাদি।
(৬৪৭) হজরত উম্মে হানি বিনতে আবু তালিব রাদি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَغْتَسِلُ وَفَاطِمَةُ تَسْتُرُهُ، فَقَالَ: مَنْ هَذِهِ؟ فَقُلْتُ: أَنَا أُمُّ هَانِيَّ.
অর্থ: আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গেলে তাকে গোসলরত অবস্থায় পাই এবং ফাতেমা তাকে পর্দাবৃত করে রেখেছিলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন: ইনি কে? আমি বললাম: উম্মে হানি। ৯০২
(৬৪৮) হজরত আবু জর রাদি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
خَرَجْتُ لَيْلَةً مِنَ اللَّيَالِي، فَإِذَا رَسُوْلُ اللهِ، صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمْشِي وَحْدَهُ، فَجَعَلْتُ أَمْشِي فِي ظِلَّ الْقَمَرِ ، فَالْتَفَتَ فَرَآنِي، فَقَالَ: مَنْ هَذَا؟. قُلْتُ: أَبُو ذَرٍّ.
অর্থ: এক রাতে আমি ঘর থেকে বের হই, অকস্মাৎ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একাকী হাঁটতে দেখি। অতঃপর আমি চন্দ্রালোকে তাকে অনুসরণ করতে লাগি। তিনি পিছনে তাকিয়ে আমাকে দেখে ফেললেন। জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কে? বললাম: আবু জর।১০৩
(৬৪৯) হজরত আবু কাতাদা হারিস বিন রিবয়ি রাদি. থেকে ওজুর পাত্র সংক্রান্ত হাদিসে আছে, যা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অগণিত মুজেজা ও সমুদয় জ্ঞানের সমষ্টি। সেখানে আবু কাতাদা বলেছেন-
فَرَفَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأْسِهِ فَقَالَ: مَنْ هَذَا؟ قُلْتُ: أَبُوْ قَتَادَهُ.
অর্থ: অতঃপর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা তুলে জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কে? বললাম: আবু কাতাদা। ৯০৪
ইমাম নববি রহ. বলেন, এর দৃষ্টান্ত অহরহ বিদ্যমান। তবে প্রয়োজনের তাগিদেই এভাবে পরিচয় দেয়া, গর্ব-অহমিকার অভীষ্টে নয়। কাছাকাছি আরেকটি হাদিস-
(৬৫০) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
قُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ، ، ادْعُ اللهَ أَنْ يَهْدِيَ أُمَّ أَبِي هُرَيْرَةَ .... وَذُكِرَ الْحَدِيثُ إِلَى أَنْ قَالَ: فَرَجَعْتُ فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ ، قَدْ اسْتَجَابَ اللَّهُ دَعْوَتَكَ، وَهَدَى أُمَّ أَبِي هُرَيْرَةَ.
অর্থ: আমি বসলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আবু হুরায়রার মায়ের হেদায়েতের জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করুন। তিনি আরো বলেন, আমি পুনরায় এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা আপনার প্রার্থনা কবুল করেছেন এবং আবু হুরায়রার মাকে হেদায়াত দিয়েছেন। ৯০৫
টিকাঃ
৮৯২. সুরা নুর: ২৭।
৮৯৩. সুরা নুর: ৫৯।
৮৯৪. সহিহ বুখারি: ২০৬২, ৬২৪৫, সহিহ মুসলিম: ৭১৫৪, ২১৫৩, সুনানে আবু দাউদ: ৫১৮০, সুনানে তিরমিজি: ২৬৯১, মুসনাদে আহমাদ ৪/৩৯৩, জামেউল উসুল: ৪৮১৯।
৮৯৫. সহিহ বুখারি: ৬২৪১, সহিহ মুসলিম: ২১৫৬।
৮৯৬. সুনানে আবু দাউদ: ৫১৭৭।
৮৯৭. সুনানে আবু দাউদ: ৫১৭৬, সুনানে তিরমিজি: ২৭১০, মুসনাদে আহমাদ ৩/৪১৪।
৮৯৮. আলহাভি ১৮/১৬৪।
৮৯৯. সহিহ বুখারি: ৩৪৯, সহিহ মুসলিম: ১৬২, সুনানে নাসাঈ ১/২২১, সুনানে তিরমিজি: ৩১৩০, মুসনাদে আহমাদ ৩/১৪৮, জামেউল উসুল: ৮৮৬৭।
৯০০. সহিহ বুখারি: ৩৬৭৪, সহিহ মুসলিম: ২৪০৩।
৯০২. সহিহ বুখারি: ২৮০, সহিহ মুসলিম: ৩৩৬।
৯০৩. সহিহ বুখারি: ৬৪৪৩, সহিহ মুসলিম: ৯৪, মুসনাদে আহমাদ ৫/১৮১।
৯০৪. সহিহ মুসলিম: ৬৮১, সুনানে আবু দাউদ: ৪৩৭।
৯০৫. সহিহ মুসলিম: ২৪৯১।
৯০১. সহিহ বুখারি: ৬২৫০, সহিহ মুসলিম: ২১৫৫, সুনানে তিরমিজি: ২৭১২, সুনানে আবু দাউদ: ৫১৮৭, আমাল: ৩২৮, নাসাঈ।