📘 আল আযকার > 📄 জুমুআর দিন-রাতের দুআ ও জিকির

📄 জুমুআর দিন-রাতের দুআ ও জিকির


অধ্যায়- ৮
বিশেষ নামাজে বিশেষ দুআসমূহ জুমুআর দিন-রাতের দুআ ও জিকির
শুক্রবার রাতে বা দিনে বেশি বেশি তিলাওয়াত, জিকির ও দুআ করা চাই। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর বেশি বেশি দরুদ পড়া চাই। শুক্রবার দিনে সুরা কাহাফ পড়বে। ইমাম শাফেয়ি রহ. কিতাবুল উম্মে উল্লেখ করেছেন, শুক্রবার রাতেও সুরা কাহাফ পড়া আমি মুস্তাহাব মনে করি।
(৪৩৮) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমুআর দিনের আলোচনা করতে গিয়ে বলেন-
فِيْهِ سَاعَةً لَا يُوَافِقُهَا عَبْدُ مُسْلِمٌ وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي يَسْأَلُ اللَّهَ تَعَالَى شَيْئًا إِلَّا أعْطَاهُ إِيَّاهُ وَأَشَارَ بِيَدِهِ يُقَلِّلُهَا.
অর্থ: জুমুআর দিন এমন একটি বিশেষ মুহূর্ত আছে ঐ সময় বান্দা নামাজের জন্য অপেক্ষমান অবস্থায় আল্লাহর কাছে যা চায়, আল্লাহ তাকে তাই দেন। তিনি হাতে সে মুহূর্তের স্বল্পতার প্রতি ইঙ্গিত করেন। ৬০২
নববি রহ. বলেন, উক্ত মুহূর্তটির বিষয়ে আলেমদের মধ্যে অনেক উক্তি রয়েছে। বেশিরভাগ উলামায়ে কেরামের মতে, সেই মুহূর্তটি হল আসরের পর।
وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي দ্বারা উদ্দেশ্য হল, নামাজের জন্য অপেক্ষমান। কেননা, যে ব্যক্তি নামাজের জন্য অপেক্ষা করে সে মূলত নামাজের মাঝেই আছে। সে মুহূর্তটি সম্পর্কে দলিল হচ্ছে-
(৪৩৯) হজরত আবু মুসা আশআরি রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-
هِيَ مَا بَيْنَ أَنْ يَجْلِسَ الْإِمَامُ إِلَى أَنْ تُقْضَي الصَّلَاةُ يَعْنِي يَجْلِسُ عَلَى الْمِنْبَرِ.
অর্থ: দুআ কবুলের মুহূর্তটি হল ইমাম সাহেবের মিম্বরে বসা থেকে নিয়ে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত। ৬০৩
সুরা কাহাফ পড়া ও নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ শরিফ পড়া প্রসঙ্গে অনেক হাদিস আছে। সেগুলো প্রসিদ্ধ বিদায় এখানে উল্লেখ করিনি।
(৪৪০) হজরত আনাস রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি জুমুআর দিন সকালে এ দুআ তিনবার পড়বে, তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হলেও আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন। দুআটি হল-
أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيَّ الْقَيُّوْمَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ.
উচ্চারণ: আসতাগফিরুল্লাহাল লাযি লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইউল কাউয়ুমু ওয়া আতুবু ইলাইহ।
অর্থ: আমি ঐ আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করি, যিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। তিনি চিরজীবি শাশ্বত। আমি তার কাছে তাওবা করি।
(৪৪১) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জুমুআর দিন মসজিদে প্রবেশ করতেন, তখন তিনি মসজিদের দরজার দুই চৌকাঠ ধরে এ দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي أَوْجَهَ مَنْ تَوَجَّهَ إِلَيْكَ، وَأَقْرَبَ مَنْ تَقَرَّبَ إِلَيْكَ، وَأَفْضَلَ مَنْ سَأَلَكَ وَرَغِبَ إِلَيْكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মায আলনি আওযাহা মান তাওয়ায্যাহা ইলাইকা ওয়া আকরাবা মান তাকাররাবা ইলাইকা ওয়া আফদালা মান সাআলাকা ওয়া রাগিবা ইলাইক।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে তোমার অভিমুখীদের মধ্যে বেশি অভিমুখী কর। তোমার সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী কর। যারা তোমার কাছে প্রার্থনা করে, তোমার প্রতি ধাবিত হয় তাদের মধ্যে আমাকে শ্রেষ্ঠ বানাও। ৬০৪ - ইমাম নববি রহ. বলেন, উক্ত দুআটি এভাবে বলা চাই-
اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنْ أَوْجَهِ مَنْ تَوَجَّهَ إِلَيْكَ، وَمِنْ أَقْرَبِ مَنْ تَقَرَّبَ إِلَيْكَ، وَمِنْ أَفْضَلِ مَنْ سَأَلَكَ وَرَغِبَ إِلَيْكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মায আলনি মিন আওযাহি মান তাওয়ায্যাহা ইলাইকা, ওয়া মিন আকরাবি মান তাকাররাবা ইলাইকা, ওয়া মিন আফদালি মান সাআলাকা ওয়া রাগিবা ইলাইক।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে তোমার অভিমুখীদের মধ্যে বেশি অভিমুখী কর। তোমার সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী কর। যারা তোমার কাছে প্রার্থনা করে, তোমার প্রতি ধাবিত হয় তাদের মধ্যে আমাকে শ্রেষ্ঠ বানাও। -অর্থাৎ প্রতিটি বাক্যের শুরুতে مِنْ (মিন) অব্যয় বাড়িয়ে বলা চাই।
জুমুআর দিন জুমুআর নামাজে এবং ফজরের নামাজে কী কিরাত পড়বে তা পূর্বে নামাজের অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
(৪৪২) হজরত আয়েশা রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ قَرَأَ بَعْدَ صَلَاةِ الْجُمُعَةِ: قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ ، وَقُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ ، وَقُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ ، سَبْعُ مَرَّاتٍ ، أَعَاذَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ بِهَا مِنَ السُّوْءِ إِلَى الْجُمُعَةِ الْأُخْرَى.
অর্থ: যে ব্যক্তি জুমুআর নামাজের পরে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস সাতবার পড়বে, আল্লাহ তাআলা পরবর্তী জুমুআ পর্যন্ত সকল সমস্যা দূর করে দিবেন। ৬০৫
জুমুআর নামাজের পর বেশি বেশি জিকির করা মুস্তাহাব
জুমুআর নামাজের পর বেশি বেশি জিকির করা মুস্তাহাব। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلُوةِ فَانْتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوْا مِنْ فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ.
অর্থ: জুমআর নামাজ আদায় হয়ে গেলে তোমরা রিজিকের তালাশে জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর এবং বেশি বেশি আল্লাহর জিকির কর। ৬০৬

টিকাঃ
৬০২. সহিহ বুখারি: ৯৩৫, সহিহ মুসলিম: ৮৫২, মুয়াত্তা মালেক ১/১০৮, মুসনাদে আহমাদ ২/৪৮৬, সুনানে দারিমি: ১৫৭৭, আমাল: ৪৬৯, নাসাঈ, আমাল: ৩৭৩।
৬০৩. সহিহ মুসলিম: ৮৫৩।
৬০৪. ইবনুস সুন্নি: ৩৭৪।
৬০৫. ইবনুস সুন্নি: ৩৭৫।
৬০৬. সুরা জুমআঃ ১০।

📘 আল আযকার > 📄 দুই ঈদের নামাজে পঠিত দুআসমূহ

📄 দুই ঈদের নামাজে পঠিত দুআসমূহ


দুই ঈদের রজনীতে জেগে জিকির, নামাজ ও অন্যান্য নেক আমল করা মুস্তাহাব। হাদিস শরিফে এসেছে-
مَنْ قَامَ لَيْلَتَي الْعِيدَيْنِ مُحْتَسِبًا لِلَّهِ لَمْ يَمُتْ قَلْبُهُ يَوْمَ تَمُوْتُ الْقُلُوْبُ.
অর্থ: যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করবে, যেদিন সকল অন্তর মরে যাবে, সেই দিন তার অন্তর মরবে না। -অন্য বর্ণনায় আছে-
مَنْ أَحْيَا لَيْلَتِي الْعِيدِ لَمْ يَمُتْ قَلْبُهُ يَوْمَ تَمُوْتُ القُلُوْبُ
অর্থ: যে ব্যক্তি সওয়াবের আশায় ঈদের দুই রাত জাগ্রত থেকে ইবাদত করবে, যেদিন সকল অন্তর মরে যাবে, সেই দিন তার অন্তর মরবে না। ৬০৭
যতটুকু সময় রাত জাগলে পরে জাগ্রত থাকা বুঝায় এ নিয়ে মতানৈক্য আছে। প্রসিদ্ধ কথা হল, বেশিরভাগ রাত জাগ্রত থাকলে। কেউ বলেছেন অল্প সময় জাগ্রত থাকলেও জাগ্রত থাকা বুঝাবে।
উভয় ঈদের রজনীতে তাকবির বলা মুস্তাহাব
উভয় ঈদের রাতে তাকবির বলা মুস্তাহাব। ঈদুল ফিতরে সূর্যাস্ত থেকে ইমাম ঈদের নামাজ শুরু করা পর্যন্ত তাকবির বলা মুস্তাহাব। নামাজের পর, লোকের ভীড়ে, শুয়ে-বসে, চলতে-ফিরতে, রাস্তায়, মসজিদে, বিগানায় তাকবির বলবে।
ঈদুল আজহায় আরাফার দিন নবম তারিখের ফজরের নামাজ থেকে নিয়ে আইয়ামে তাশরিকের শেষ দিন আসর পর্যন্ত তাকবির বলবে।
শাফেয়ি উলমায়ে কেরام বলেন, তাকবিরের শব্দ হল-
اللهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ.
উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা মহান, আল্লাহ তাআলা মহান, আল্লাহ তাআলা মহান) ধারাবাহিকভাবে তিনবার বলা। এভাবে যতবার ইচ্ছা বলবে। -ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, বেশি বলতে চাইলে এভাবে বলবে। এমনটা উত্তম-
اللهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا، وَسُبْحَانَ اللهِ بُكْرَةً وَأَصِيلًا، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَلَا نَعْبُدُ إِلَّا إِيَّاهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّيْنَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ، صَدَقَ وَعْدَهُ، وَنَصَرَ عَبْدَهُ، وَهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أكْبَرُ
উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার কাবিরা, ওয়াল হামদুলিল্লাহি কাসিরা, ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতান ওয়া আসিলা। লা ইলাহা ইল্লাহু ওয়ালা নাবুদু ইল্লা ইয়‍্যাহু, মুখলিসিনা লাহুদ্দিন, ওয়া লাউ কারিহাল কাফিরুন। লা ইলাহা ইল্লাহু ওয়াহদাহ, সাদাকা ওয়াহদাহু ওয়া নাসারা আবদাহু ওয়া হাজামাল আহজাবা ওয়াহদাহু, লা ইলাহা ইল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা মহান, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করি। একমাত্র আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কোন সত্য মাবুদ নেই। আমরা খাঁটি অন্তরে তা স্বীকার করি, কাফেররা যতই একে খারাপ মনে করুক। একমাত্র আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কোন সত্য মাবুদ নেই। তিনি তার অঙ্গীকার সত্যে পরিণত করেছেন, তার বিশেষ বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই সকল (কুফরি) শক্তিকে পরাস্ত করেছেন।
কিছু শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, মানুষ যে তাকবির পড়ে থাকে সেটি পড়তে কোন সমস্যা নেই। সেটিও পড়তে পারে। তা হল-
اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ، لا إلهَ إِلَّا اللهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ
উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা মহান, আল্লাহ তাআলা মহান। আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই। আল্লাহ তাআলা মহান, আল্লাহ তাআলা মহান। আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা। ৬০৮
তাকবিরের বিধান
উক্ত দিনগুলোতে যত নামাজ পড়া হবে, সকল নামাজের পর তাকবির বলবে। ফরজ নামাজ হোক বা নফল হোক অথবা জানাযার নামাজ হোক। আদায় নামাজ হোক, কাযা নামাজ হোক বা মানতের নামাজ হোক। এর মাঝে কিছু মতবিরোধ রয়েছে, তবে সেগুলো আলোচনার এটি স্থান নয়। এখানে যা উল্লেখ করা হল এটিই সহিহ ও এর ওপরই ফতোয়া এবং এ অনুযায়ীই আমল করা হবে। ৬০৯
ঈদের নামাজে তাকবির
ঈদের নামাজে প্রথম রাকাতে কিরাত শুরু করার আগে তাকবিরে তাহরিমা ব্যতীত সাত তাকবীর বলবে। আর দ্বিতীয় রাকাতে পাঁচ তাকবির বলবে। প্রথম রাকাতে সানা পড়ার পর তাকবিরগুলো বলবে। আর দ্বিতীয় রাকাতে আউজুবিল্লাহ বলার আগে তাকবিরগুলো বলবে। ৬১০ প্রতি তাকবিরের মাঝে এ দুআটি পড়া মুস্তাহাব-
سُبْحَانَ اللهِ، وَالْحَمْدُ للهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرْ.
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।
অর্থ: আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করি, সকল প্রশংসা তারই। আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। আর আল্লাহ মহান। -কোন কোন উলামায়ে কেরام বলেন, এ দুআটি পড়বে-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ.
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু বিয়াদিহিল খাইরু, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তার কোন অংশীদার নেই। সকল আধিপত্য তারই, তারই সকল প্রশংসা। সকল কল্যাণের চাবিকাঠি তারই হাতে। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। -আবু নাসর রহ. বলেন, মানুষ যে দুআ পড়তে অভ্যস্ত সেটিই পড়া ভালো। আর তা হচ্ছে-
اللهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا ، وَسُبْحَانَ اللهِ، بُكْرَةً وَأَصِيلًا.
উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার কাবিরা, ওয়াল হামদুলিল্লাহি কাসিরা, ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতান ওয়া আসিলা।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা মহান, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করি।
এই সবগুলো পড়ার অনুমোদন আছে; এগুলোতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। যদি এসব দুআ না পড়ে এবং ঈদের নামাজের তাকবিরগুলোও না বলে তাহলে নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে; সেজদায়ে সাহু লাগবে না। তবে ফজিলত থেকে বঞ্চিত হবে। ৬১১
যদি ভুলে তাকবির না বলেই কিরাত শুরু করে দেয় আর তাকবির বলবে না; এটিই সঠিক কথা। তবে এক্ষেত্রে ইমাম শাফেয়ি রহ. থেকে একটি দুর্বল কথা আছে যে, তাকবির বলবে।
ঈদের নামাজের প্রথম খুতবায় নয় তাকবির ও দ্বিতীয় খুতবায় সাত তাকবির বলা মুস্তাহাব। ঈদের নামাজের কিরাতের বিষয়ে পূর্বে নামাজের অধ্যায়ে আলোচনা গেছে। তা হল, প্রথম রাকাতে সুরা ফাতিহার পর সুরা ক্বাফ পড়বে। আর দ্বিতীয় রাকাতে সুরা কামার পড়বে। চাইলে প্রথম রাকাতে সুরা আলা ও দ্বিতীয় রাকাতে সুরা গাশিয়াও পড়তে পারে।

টিকাঃ
৬০৭. সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৭৮২। উভয় হাদিসই দুর্বল। তবে ফাজায়েলের ক্ষেত্রে এগুলো অনুযায়ী আমল করা যায়। ইমাম নববি।
৬০৮. হানাফি উলামায়ে কেরাম উক্ত তাকবির পড়াকেই উত্তম বলে থাকেন। (হেদায়া ১/১৭৫)
৬০৯. হানাফি মাজহাব মতে, প্রতি ফরজ নামাজের পর তাকবির বলা ওয়াজিব। (হেদায়া ১/১৭৫)
৬১০. হানাফিদের মতে, ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয় তাকবির বলা ওয়াজিব। প্রথম রাকাতে তিন তাকবির ও দ্বিতীয় রাকাতে তিন তাকবির। প্রথম রাকাতে সানার পর অতিরিক্ত তিন তাকবির বলবে। আর দ্বিতীয় রাকাতে কিরাতের পর রুকু করার আগে অতিরিক্ত তিন তাকবির বলবে। (হেদায়া: ১/১৭৩)
৬১১. হানাফিদের মতে, ইচ্চাকৃত ছেড়ে দিলে নামাজ শুদ্ধ হবে না। আর ভুলবশতঃ ছুটে গেলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব। তবে ঈদের নামাজে সিজদায়ে সাহু না দিলেও চলবে। কারণ, এখানে অনেক লোকের জমায়েত হয়ে থাকে; সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

📘 আল আযকার > 📄 জিলহজ মাসের প্রথম দশকের আমল

📄 জিলহজ মাসের প্রথম দশকের আমল


আল্লাহ তাআলা বলেন- وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ فِي أَيَّامٍ مَّعْلُوْمُتٍ.
অর্থ: তারা নির্দিষ্ট কিছু দিনে আল্লাহর জিকির করে। ৬১২
আবদুল্লাহ ডবন আব্বাস রাদি., ইমাম শাফেয়ি রহ. ও অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতে أَيَّامٍ مَّعْلُوْمَتٍ (নির্দিষ্ট কিছু দিন) দ্বারা উদ্দেশ্য হল জিলহজ মাসের প্রথম দশক।
জিলহজের প্রথম দশকে অন্যান্য দিন থেকে বেশি জিকির করা মুস্তাহাব। প্রথম দশকের মধ্যে নবম তারিখে অন্যদিনের তুলনায় বেশি জিকির করা চাই।
(৪৪৩) হজরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَا الْعَمَلُ فِي أَيَّامِ الْعَشْرِ أَفْضَلَ مِنَ الْعَمَلِ فِي هَذِهِ . قَالُوا: وَلَا الْجِهَادُ؟ قَالَ: وَلَا الْجِهَادُ، إِلَّا رَجُلٌ خَرَجَ يُخَاطِرُ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فَلَمْ يَرْجِعْ بِشَيْءٍ.
অর্থ: এই দিনগুলোর আমলের চেয়ে উত্তম কোন আমল নেই। সাহাবায়ে কেরام বললেন, জিহাদও উত্তম নয়? তিনি বললেন না, এরচে জিহাদও উত্তম নয়। তবে ঐ ব্যক্তি যে নিজের জান-মালের আশঙ্কা নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে বের হয়েছে এরপর সে কিছুই নিয়ে আসতে পারেনি, তার মর্যাদা এরচে বেশি। ৬১৩- সুনানে তিরমিজির বর্ণনায় রয়েছে-
مَا مِنْ أَيَّامِ الْعَمَلُ الصَّالِحُ فِيْهِنَّ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ، مِنْ هَذِهِ الْأَيَّامِ الْعَشْرِ.
(৪৪৪) মুসনাদে দারিমিতে সহিহাইনের সনদে বর্ণনা করেছেন, সেখানে এসেছে-
مَا الْعَمَلُ فِي أَيَّامٍ أَفْضَلُ مِنَ الْعَمَلِ فِي عَشْرِ ذِي الْحِجَّةِ. قِيلَ: وَلَا الْجِهَادُ؟
অর্থ: জিলহজের দশ দিনের আমল অপেক্ষা উত্তম কোন আমল নেই।... (বাকি হাদিস আগেরটির মতই) ৬১৪
(৪৪৫) হজরত আমার বিন শুআইব রহ. এর সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, উত্তম দুআ হল আরাফার দিনের দুআ। আমি ও আমার পূর্ববর্তী নবিগণ যা বলেছেন, তার মধ্যে উত্তম কথা হল-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ.
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তার কোন অংশীদার নেই। সকল আধিপত্য তারই, তারই সকল প্রশংসা। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। -ইমাম তিরমিজি রহ. এটাকে দুর্বল বলেছেন। ৬১৫
(৪৪৬) মুয়াত্তা মালেকে মুরসাল সনদে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, উত্তম দুআ হল আরাফার দিনের দুআ। আমি ও আমার পূর্ববর্তী নবিদের উত্তম কথা হল-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ.
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহ।
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি একক, তার কোন শরিক নেই। ৬১৬
হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত- তিনি আরাফার দিন এক ব্যক্তিকে মানুষের কাছে ভিক্ষা করতে দেখলেন। তিনি বললেন, হে নির্বোধ, আজকের দিন তুমি আল্লাহর কাছে না চেয়ে মানুষের কাছে চাচ্ছো! ৬১৭
ইমাম বুখারি রহ. বলেন- উমর রাদি. মিনায় তাবুতে থেকে তাকবির বলতেন, মসজিদের সকলেই তা শুনতে পেত। তখন তারাও তাকবির বলত। দোকান-পাটের লোকেরাও তাকবির বলত, ফলে তাকবিরের ধ্বনিতে মিনায় কম্পন শুরু হয়ে যেত। ৬১৮
ইমাম বুখারি রহ. বলেন, হজরত ইবনে উমর রাদি. ও আবু হুরায়রা রাদি. উভয়ে তাকবিরে তাশরিকের দিবসগুলোতে বাজারে চলে যেতেন। সেখানে তাকবির বলতেন। তাদের দেখে অন্যরাও তাকবির বলত।

টিকাঃ
৬১২. সুরা হজ: ২৮।
৬১৩. সহিহ বুখারি: ৯৬৯, সুনানে আবু দাউদ: ২৪৩৮, সুনানে তিরমিজি: ৭৫৭, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৭২৭।
৬১৪. সুনানে দারিমি: ১৭৮০।
৬১৫. সুনানে তিরমিজি: ৩৫৭৯।
৬১৬. মুয়াত্তা মালেক ১/২১৪।
৬১৭. হিলইয়াতুল আউলিয়া ২/১৯৪।
৬১৮. সহিহ বুখারি ২/৪৬১।

📘 আল আযকার > 📄 সূর্য গ্রহণকালের দুআ

📄 সূর্য গ্রহণকালের দুআ


চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণকালে বেশি বেশি জিকির, দুআ করা এবং সকল মুসলমান একত্রিত হয়ে নামাজ পড়া সুন্নাত।
(৪৪৭) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِنَّ الشَّمْسَ وَالقَمَرَ آيَتَانِ مِنْ آيَاتِ اللهِ لَا يُخْسَفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلَا لِحَيَاتِهِ، فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذَلِكَ فَادْعُوا اللَّهَ تَعَالَى وَكَبِرُوْا وَتَصَدَّقُوْا.
অর্থ: চন্দ্র-সূর্য আল্লাহর বড় দুটি নিদর্শন। কারো জন্ম বা মৃত্যুতে চন্দ্র-সূর্য গ্রহণ লাগে না। যদি কখনো এমন গ্রহণ হতে দেখ, তাহলে আল্লাহর কাছে দুআ করবে, তাকবির বলবে এবং দান-সাদকা করবে। -অন্য বর্ণনায় আছে, 'যদি এমন দেখ তাহলে খুব ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে আল্লাহর জিকির, দুআ ও ইস্তেগফার পড়। -অন্য বর্ণনায় আছে, যদি এমন দেখ, তখন দুআ ও নামাজ আদায় কর। ৬১৯
(৪৪৮) হজরত আবদুর রহমান বিন সামুরা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَدْ كَسَفَتِ الشَّمْسُ وَهُوَ قَائِمُ فِي الصَّلَاةِ رَافِعُ يَدَيْهِ، فَجَعَلَ يُسَبِّحُ وَيَحْمَدُ وَيُهَلِّلُ وَيُكَبِّرُ وَيَدْعُوْ، حَتَّى حُسِرَ عَنْهَا، فَلَمَّا حُسِرَ عَنْهَا قَرَأَ سُوْرَتَيْنِ، وَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ.
অর্থ: আমি সূর্য গ্রহণকালে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলাম, তখন তিনি নামাজে দাঁড়িয়েছিলেন। দুই হাত উঠিয়ে তাসবিহ, তাকবির, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহর প্রশংসা এবং দুআ পড়ছিলেন। এভাবে সূর্যগ্রহণ কেটে যাওয়া পর্যন্ত করছিলেন। যখন সূর্য গ্রহণ কেটে গেলে তিনি দুটি সুরা পড়লেন এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। ৬২০
সূর্যগ্রহণের নামাজে দীর্ঘ কিরাত পড়া মুস্তাহাব
প্রথম রাকাতে সুরা বাকারার সমপরিমাণ পড়বে। দ্বিতীয় রাকাতে ২০০ আয়াত সমপরিমাণ পড়বে। তৃতীয় রাকাতে ১৫০ আয়াত ও চতুর্থ রাকাতে ৫০ আয়াত সমপরিমাণ পড়বে।
প্রথম রুকুতে একশ আয়াত পরিমাণ দীর্ঘ তাসবিহ পড়বে। দ্বিতীয় রুকুতে ৭০ আয়াত পরিমাণ, তৃতীয় রুকুতেও অনুরূপ। চতুর্থ রাকাতে ৫০ আয়াত পরিমাণ তাসবিহ পড়বে। সিজদা রুকুর মতো দীর্ঘ করবে। প্রথম সিজদা প্রথম রুকুর মতো। দ্বিতীয় সিজদা দ্বিতীয় রুকুর মতো। এ পদ্ধতিই বিশুদ্ধ।
যদি এই দীর্ঘ কিরাত, রুকু, সিজদা ইত্যাদি না করে শুধু সুরা ফাতিহা ও কিরাত পড়ে নামাজ শেষ করে দেয়, তাহলেও নামাজ হয়ে যাবে।
চন্দ্রগ্রহণের নামাজে উচ্চস্বরে কিরাত পড়া সুন্নাত। আর সূর্যগ্রহণের নামাজে নিম্নস্বরে কিরাত পড়া সুন্নাত। নামাজের পর দুটি খুতবা প্রদান করবে। খুতবায় মানুষকে আল্লাহর শাস্তির ভয় দেখাবে। মানুষকে আল্লাহর ইবাদতের প্রতি উৎসাহিত করবে। দান-সাদকা ও গোলাম আযাদের প্রতি উৎসাহিত করবে। এ বিষয়ে প্রসিদ্ধ সহিহ হাদিস রয়েছে। মানুষকে আল্লাহর নেয়ামতের শোকরিয়া আদায়ের উৎসাহিত করবে। উদাসীনতা ও ধোঁকা থেকে বাঁচতে সতর্ক করবে।
(৪৪৯) হজরত আসমা রাদি. থেকে বর্ণিত-
لَقَدْ أَمَرَ رَسُولُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْعَتَاقَةِ فِي كُسُوْفِ الشَّمْسِ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যগ্রহণের সময় দাস-দাসী আযাদ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ৬২১

টিকাঃ
৬১৯. সহিহ বুখারি: ১০৪৪, ৮৬, সহিহ মুসলিম: ৯০১, ৯০৭, মুয়াত্তা মালেক ১/১৮৬, সুনানে আবু দাউদ: ১১৭৭, সুনানে তিরমিজি: ৫৬১, সুনানে নাসাঈ ৩/১২৭।
৬২০. সহিহ মুসলিম: ৯১৩, সুনানে আবু দাউদ: ১১৯৫, সুনানে নাসাঈ ৩/১২৫।
৬২১. সহিহ বুখারি: ১০৫৪।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন