📄 জ্ঞানার্জনের মেহনত
আমাদের পূর্বসূরিগণ এ ইলম অর্জনের জন্য এত পরিশ্রম করেছেন যে, আজ আমরা তাদের পরিশ্রম ও কীর্তি শুনে বিস্মিত হই। চিন্তা করা যায়! ইমাম শাফি রহ. মাত্র তেরো বছর বয়সে 'ইমাম' হয়েছিলেন। তেরো বছর বয়সে কুরআন-হাদিসের জ্ঞানার্জন করে মানুষকে হাদিসের দরস প্রদান করেছিলেন। এ ছিল তাদের ইলম অর্জনের মেহনত। ঐকান্তিক চেষ্টার ফলেই তারা জ্ঞানের সমুদ্রে পাড়ি দিতে সক্ষম হয়েছিলেন।
📄 অন্তিম মুহূর্তেও ইলমের প্রতি আকর্ষণ
হজরত আবু ইউসুফ রহ. যখন মৃত্যুশয্যায় শায়িত, তখন তার এক ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করলেন, আরোহী অবস্থায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা উত্তম নাকি পায়ে হাঁটা অবস্থায়? ছাত্র বলল, আরোহী অবস্থায়। তিনি বললেন, না। তখন ছাত্র আবার বলল, পায়ে হাঁটা অবস্থায়। তিনি তখনও বললেন, না। এরপর জিজ্ঞাসা করলেন, আরোহী অবস্থায় কখন কঙ্কর নিক্ষেপ করা উত্তম আর পায়ে হেঁটে কখন উত্তম? এ মাসআলা সম্পর্কে আলোচনা করতে করতে মৃত্যুবরণ করেন।
মুমূর্ষু অবস্থায় এ মাসআলা সম্পর্কে আলোচনা করার কারণ কী? ওলামায়ে কেরাম এ প্রশ্ন করেছেন আবার এর জবাবও লিখেছেন। মুমূর্ষু অবস্থায় শয়তান মানুষের কাছে আসে। হয়তো তার কাছেও অভিশপ্ত শয়তান এসেছিল। যখন তিনি শয়তানকে দেখতে পান তখন মাসআলা নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। এ মাসআলার অসিলায় হয়তো আল্লাহ তাআলা তাকে শয়তানের ধোঁকা থেকে রক্ষা করেছেন।
📄 যে পথের পথিক আমরা
হজরত বায়েজিদ বোস্তামি রহ.-এর ব্যাপারে হজরত জুনাইদ বাগদাদি রহ. বলেন, আল্লাহ তাআলা হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালামকে যেমন অন্য সকল ফেরেশতাদের ওপর মর্যাদাবান করেছেন, তদ্রূপ হজরত বায়েজিদ বোস্তামি রহ.-কেও আওলিয়ায়ে কেরামের ওপর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী করেছেন।
হজরত জুনাইদ বাগদাদি রহ. আরও বলেন, বোস্তামি রহ. যখন শৈশবে পিতাকে হারান, তখন তার মা তাকে মাদরাসায় ভর্তি করেন এবং শিক্ষককে বলেন, আমার সন্তানকে আপনার নিকটেই রাখবেন। বাড়িতে বেশি যেতে দেবেন না। কারণ, এর দ্বারা তার ইলম থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বোস্তামি রহ. এভাবে মাদরাসায় থাকতে লাগলেন। একদিন হঠাৎ মায়ের কথা খুব মনে হলো। মাকে দেখতে ইচ্ছা হলো। তিনি শিক্ষকের নিকট বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি চাইলেন। শিক্ষক বললেন, যদি তুমি এ পরিমাণ সবক শোনাতে পারো, তাহলে ছুটি পাবে। তিনি ছিলেন প্রখর মেধার অধিকারী। শিক্ষকের নির্ধারিত পরিমাণ সবক শুনিয়ে দিয়ে ছুটি পেলেন। বাড়িতে গিয়ে দরজায় নক করলেন। তখন তার মা অযু করছিলেন। মা জিজ্ঞাসা করলেন, কে। তিনি বললেন, আমি বায়েজিদ। মা বললেন, আমারও একটি ছেলে আছে। তার নামও বায়েজিদ। আমি তাকে আল্লাহর রাস্তায় অর্পণ করেছি। তাহলে তুমি কোন বায়েজিদ? বালক বায়েজিদ রহ.-এর বুঝতে আর বাকি রইল না যে, আমি দরজায় কোনো শব্দ করি, এটা মা চান না। বরং মা চান আমি মাদরাসায় ফিরে গিয়ে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করি। তিনি সোজা মাদরাসায় ফিরে গেলেন। এরপর তিনি 'বায়েজিদ বোস্তামি' হওয়ার আগ পর্যন্ত মাদরাসা থেকে আর কোথাও যাননি। আল্লাহ তাআলা তাকে জমানার বায়েজিদ বানিয়েছিলেন।
📄 ইলমের তৃষ্ণায় জেলখানায় অবস্থান
হজরত ইমাম তাইমিয়া রহ.-এর জীবনীতে পাওয়া যায়। একবার তৎকালীন সময়ের বাদশাহ তার নিকট কোনো বিষয়ের ফতওয়া চাইলেন। কিন্তু তিনি ফতওয়া দেননি। ফলে বাদশাহ তাকে জেলখানায় বন্দি করেন।
এরপর জেলখানায় কেটে গেল টানা তিনটি দিন। একদিন বাদশাহ সিংহাসনে বসে আছেন। এমন সময় রাজদরবারে কাঁদতে কাঁদতে প্রবেশ করল এক তালিবে ইলম। সে ছিল সুন্দর, সুদর্শন যুবক। তার চেহারায় ছিল মায়াবি ছাপ। তাকে দেখামাত্র রাজদরবারে উপস্থিত সকলেরই মায়ার উদ্রেক হলো। এমনকি রাজার মনেও তার প্রতি মায়া জন্মাল। রাজা তাকে অভয় দিয়ে বললেন, হে যুবক! তুমি কাঁদছ কেন? তুমি এভাবে কেঁদো না। এখানে তোমার কোনো ভয় নেই। তুমি কী চাও বলো, আমি তোমার মনোবাসনা পূর্ণ করব।
বাদশাহর অভয়বাণী শুনে যুবক বলল, বাদশাহ সালামত! আপনি আমাকে জেলখানায় বন্দি করুন। তার কথা শুনে বাদশাহ আশ্চর্য হয়ে গেলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, জেলখানায় যাওয়ার জন্য তুমি এমন উৎসুক কেন? যুবক বলল, আজ তিন দিন হলো আপনি আমার উস্তাদকে জেলখানায় বন্দি করে রেখেছেন। যার ফলে আমি আমার উস্তাদের নিকট থেকে সবক পড়তে পারছি না। আপনি যদি আমাকে জেলখানায় বন্দি করেন, তাহলে আমি সেখানে আমার উস্তাদের নিকট থেকে সবক পড়তে পারব। কারাবরণ করার কষ্ট আমার কাছে কোনো কষ্টই মনে হবে না।
এ তালিবুল ইলম ছিল হজরত তাইমিয়া রহ.-এর ছাত্র। কিন্তু আফসোস! বর্তমানে এমন দৃশ্য দেখা যায় না। এমন চরিত্র আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছে। আমাদের সম্পর্ক বর্তমানে টিভি ও ছবির সঙ্গে। কুরআনের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। কুরআন খুলে দেখার সময়ও আমাদের নেই। কিছু পরিবার তো এমন রয়েছে, যাদের কুরআন শরিফ খুলে দেখার সময়ই হয় না।