📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 ইলমের প্রতি আকর্ষণ তো একেই বলে

📄 ইলমের প্রতি আকর্ষণ তো একেই বলে


ইমাম মুহাম্মদ রহ. এক জায়গায় দরস দিতেন। সেখান থেকে কয়েক মাইল দূরে একটি বস্তি ছিল। সে বস্তির কিছু লোক তার কাছে এসে আবেদন করল, হজরত! আপনি আমাদের এখানে তাশরিফ আনুন। আমাদেরকে আপনার দরসে বসার সুযোগ করে দিন। তিনি বললেন, আমার হাতে সময় খুব কম। তারা বলল, হজরত! আমরা আপনার জন্য সওয়ারির ব্যবস্থা করব। এখানে পায়ে হেঁটে আসতে আপনার যে সময়টুকু ব্যয় হয়, সওয়ারিতে আরোহণ করে এসে সে সময়টুকু আমাদেরকে দিন।

তিনি তাদের এ প্রস্তাব কবুল করলেন। যখন তিনি সেখানে দরস প্রদান শুরু করলেন তখন তার দরসে হজরত ইমাম শাফি রহ.-ও উপস্থিত হলেন। তিনি আবেদন করলেন, হজরত! আমি আপনার নিকট অমুক কিতাবটি পড়তে চাই। তখন ইমাম মুহাম্মদ রহ. বললেন, ভাই! আমার হাতে তো সময় খুবই কম। আমাকে এখানেও পড়াতে হবে আবার ওই এলাকাতেও পড়াতে হবে। সুতরাং তোমাকে আলাদা সময় দেওয়ার মতো সময় তো আমার হাতে নেই। ইমাম শাফি রহ. বললেন, হজরত! আপনি এখান থেকে দরস শেষ করে যখন সওয়ারিতে আরোহণ করে ওই এলাকায় যাবেন, তখন আপনি সওয়ারিতে বসে বসে আমাকে দরস প্রদান করবেন। আর আমি দৌড়ে দৌড়ে আপনার দরস শুনব।

চিন্তা করুন! পৃথিবীতে ইলম ও জ্ঞানার্জনের প্রতি আকর্ষণের এরচে' উৎকৃষ্ট কোনো উদাহরণ আর কী হতে পারে? এটা হলো ইসলামের সৌন্দর্য।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 ইলমের আকর্ষণে ঘুম উড়ে যায়

📄 ইলমের আকর্ষণে ঘুম উড়ে যায়


ইমাম মুহাম্মদ রহ. ছিলেন ইমাম শাফি রহ.-এর উস্তাদ। ইমাম শাফি রহ. বলেন, একবার আমার উস্তাদ ইমাম মুহাম্মদ রহ.-এর কাছে রাত্রিযাপনের সুযোগ হয়েছিল। আমি দেখলাম, তিনি এশার নামাজের পর বাতি জ্বালিয়ে কিছু সময় কিতাব অধ্যয়নের পর শুয়ে পড়লেন। এরপর কিছু সময় পরে তিনি উঠে বাতি জ্বালিয়ে কিছু সময় পড়লেন এবং বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়লেন। আমি সারা রাত জেগেছিলাম। আমি দেখলাম, তিনি সারা রাতে সতেরো বার বিছানা থেকে উঠলেন এবং বাতি জ্বালিয়ে কিছু সময় কিতাব পড়ে আবার বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়লেন।

ইমাম শাফি রহ. বলেন, আমি সকালে হজরতকে জিজ্ঞাসা করলাম, হজরত! আপনি সারা রাতে সতেরো বার জাগ্রত হয়েছেন। তাহলে ঘুমিয়েছেন কখন? আমার প্রিয় শায়েখ তখন বললেন, আমি তো রাতে ঘুমাইনি। বরং সারা রাতে এক হাজার মাসআলার সমাধান বের করেছি।

আল্লাহু আকবার! এখন চিন্তা করুন তার অবস্থা। আর তিনি যে বারে বারে বাতি নিভিয়ে দিচ্ছিলেন, এর কারণ হলো, যাতে অযথা তেল না ফুরায়। অপচয় থেকে বাঁচা যায়।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 জ্ঞানার্জনের মেহনত

📄 জ্ঞানার্জনের মেহনত


আমাদের পূর্বসূরিগণ এ ইলম অর্জনের জন্য এত পরিশ্রম করেছেন যে, আজ আমরা তাদের পরিশ্রম ও কীর্তি শুনে বিস্মিত হই। চিন্তা করা যায়! ইমাম শাফি রহ. মাত্র তেরো বছর বয়সে 'ইমাম' হয়েছিলেন। তেরো বছর বয়সে কুরআন-হাদিসের জ্ঞানার্জন করে মানুষকে হাদিসের দরস প্রদান করেছিলেন। এ ছিল তাদের ইলম অর্জনের মেহনত। ঐকান্তিক চেষ্টার ফলেই তারা জ্ঞানের সমুদ্রে পাড়ি দিতে সক্ষম হয়েছিলেন।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 অন্তিম মুহূর্তেও ইলমের প্রতি আকর্ষণ

📄 অন্তিম মুহূর্তেও ইলমের প্রতি আকর্ষণ


হজরত আবু ইউসুফ রহ. যখন মৃত্যুশয্যায় শায়িত, তখন তার এক ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করলেন, আরোহী অবস্থায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা উত্তম নাকি পায়ে হাঁটা অবস্থায়? ছাত্র বলল, আরোহী অবস্থায়। তিনি বললেন, না। তখন ছাত্র আবার বলল, পায়ে হাঁটা অবস্থায়। তিনি তখনও বললেন, না। এরপর জিজ্ঞাসা করলেন, আরোহী অবস্থায় কখন কঙ্কর নিক্ষেপ করা উত্তম আর পায়ে হেঁটে কখন উত্তম? এ মাসআলা সম্পর্কে আলোচনা করতে করতে মৃত্যুবরণ করেন।

মুমূর্ষু অবস্থায় এ মাসআলা সম্পর্কে আলোচনা করার কারণ কী? ওলামায়ে কেরাম এ প্রশ্ন করেছেন আবার এর জবাবও লিখেছেন। মুমূর্ষু অবস্থায় শয়তান মানুষের কাছে আসে। হয়তো তার কাছেও অভিশপ্ত শয়তান এসেছিল। যখন তিনি শয়তানকে দেখতে পান তখন মাসআলা নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। এ মাসআলার অসিলায় হয়তো আল্লাহ তাআলা তাকে শয়তানের ধোঁকা থেকে রক্ষা করেছেন।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন