📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 শাহ ইসহাক সাহেব রহ.-এর একটি আশ্চর্য ঘটনা

📄 শাহ ইসহাক সাহেব রহ.-এর একটি আশ্চর্য ঘটনা


হজরত আমির শাহ খান সাহেব রহ.-যিনি হজরত মাওলানা মুহাম্মদ কাসেম নানুতবি রহ.-এর বিশেষ ও খাস মুরিদ ছিলেন-তিনি দিল্লির বুজুর্গানে দীনের ঘটনাবলি সনদসহ বর্ণনা করতেন। তিনি বলেছেন যে, হজরত শাহ ইসহাক সাহেব রহ. নিজ বংশে মেধাবী নয় বলে প্রসিদ্ধ ছিলেন। কারণ, সে বংশ ছিল সব বড়ো বড়ো উলামায়ে কেরামের বংশ। একজনের থেকে আরেকজন বড়ো ছিলেন। যদিও সেই বুজুর্গের-যিনি ওই বংশের মেধাবী নয় বলে প্রসিদ্ধ ছিলেন-তার একটি ঘটনা শুনলে বড়োই আশ্চর্য হতে হয়। ঘটনাটি হলো :
একদিন একজন তালিবে ইলমকে অস্থির অবস্থায় দেখে শাহ সাহেব তার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। কিন্তু প্রথমে সে অহংকারীসুলভ ভঙ্গীতে চোখ ও ঠোঁট দিয়ে একটু ইশারা করে বোঝাল যে, কিছুই হয়নি। এরপর তাকে বারবার জিজ্ঞাসা করায় সে বলল, 'শামসে বাজেগাঁ' (দর্শন শাস্ত্রের দরসি কিতাব)-এর একটি জায়গা বুঝে আসছে না। এবং সে ব্যাপারে আমার উস্তাদের সাথে আমার মতবিরোধ হয়ে গেছে। তিন দিন যাবৎ আমি সেটা নিয়েই আটকে আছি।
হজরত শাহ সাহেব স্নেহ ও শফকতের দৃষ্টিতে বললেন, জায়গাটি আমাকে একটু দেখাও না। ওই তালিবে ইলম ভাবল, ইনি হলেন একজন মুহাদ্দিস। তিনি ইলমে হাদিসের ব্যাপারে হয়তো অভিজ্ঞ হবেন। দর্শনের কিতাবের সাথে তার সম্পর্কই-বা কী আছে। এই ভেবে সে অত্যন্ত অনীহা ও অনাগ্রহ সহকারে কিতাবখানা শুধু তার সামনে রেখে দিলো। হজরত শাহ সাহেব রহ. সে জায়গাটি মুতালাআ করে তার এমন পরিষ্কার মর্ম বয়ান করে দিলেন যার ফলে যে তালিবে ইলমের সংশয় দূরীভূত হয়ে গেল।
এবার এই তালিবে ইলম তো হজরত শাহ সাহেব রহ.-এর পায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। হজরত শাহ সাহেব তখন বললেন, মিয়া, আমরা সবই পড়েছি, তবে এগুলো (দর্শন ও মানতিক)-কে নিষ্প্রয়োজনীয় ও বেহুদা মনে করে ছেড়ে রেখেছি।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 ইমাম আবু ইউসুফ রহ. মৃত্যুর সময়ও একটি ফেকহি মাসআলা নিয়ে আলোচনা করেছেন

📄 ইমাম আবু ইউসুফ রহ. মৃত্যুর সময়ও একটি ফেকহি মাসআলা নিয়ে আলোচনা করেছেন


হাম্মাদ ইবনে সালামা রহ. সদা ইবাদতে ব্যস্ত থাকতেন, হয় হাদিস পড়াতেন বা নিজে পড়তেন বা তাসবিহ পাঠ করতেন বা নামাজ পড়তেন; অন্য কিছু নয়

(হাফেজ জাহাবি রহ. বলেন, তিনি ইমাম, মুহাদ্দিস, নাহভি, শায়খুল ইসলাম, যার মৃত্যু ১৬৮ হি.। পাশাপাশি তিনি একজন ফকিহ, সুন্নাতের অনুসারী আবেদ ছিলেন।)

তার ছাত্র আব্দুর রহমান ইবনে মাহদি রহ. বলেন, হাম্মাদ ইবনে সালামাকে যদি বলা হয় আপনি আগামীকাল মারা যাবেন, তাহলে তিনি তার আমল বাড়াতে পারবেন না। মুসা ইবনে ইসমাইল তাবোজাকি রহ. বলেন, আমি যদি তোমাদেরকে বলি, আমি হাম্মাদ ইবনে সালামাকে কখনো হাসতে দেখিনি তাহলে আমি সত্যবাদী হব। তিনি সব সময় ব্যস্ত থাকতেন। হয় হাদিস পড়াতেন অথবা নিজে পড়তেন কিংবা তাসবিহ পড়তেন অথবা নামাজ পড়তেন। তিনি দিনটাকে এভাবে ভাগ করে নিয়েছিলেন। ইউনুস ইবনে মুআদ্দিব রহ. বলেন, হাম্মাদ ইবনে সালামা নামাজরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহ তাকে রহম করুন!

ইয়াকুব ইবনে ইবরাহিম আনসারি কুফি অতঃপর বাগদাদি (জন্ম: ১১৩ হি., মৃত্যু: ১৮২ হি.) যিনি ফিকাহ ও ইজতিহাদের জগতে ইমাম আবু ইউসুফ নামে পরিচিত। যিনি ইমাম আবু হানিফার শাগরিদ এবং তার ইলম ও মাসলাকের মুখপাত্র। বাদশাহত্রয় মাহদি, হাদি ও হারুন রশিদ আব্বাসির কাজি ছিলেন। যাকে সর্বপ্রধান কাজি উপাধিতে ভূষিত করা হয়। বরং পৃথিবীর প্রথম চিফজাস্টিস উপাধিতে তাকে আখ্যায়িত করা হয়। তিনি মুমূর্ষ অবস্থায়ও তাকে দেখতে আসা একজনের সাথে ফিকাহর একটি মাসআলা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। হয়তো তাতে কোনো ইলম পিপাসুর পরিতৃপ্তি হওয়ার উপকরণ তৈরি হবে। এবং জীবনের শেষ মুহূর্তটাও যেন ইলমি আলোচনা ও ইফাদা-ইস্তিফাদা থেকে শূন্য না থাকে।

তার শাগরিদ কাজি ইবরাহিম ইবনে জাররাহ কুফি অতঃপর মিসরি রহ. বলেন, ইমাম আবু ইউসুফ রহ. অসুস্থ ছিলেন। আমি তাকে দেখতে গেলাম। তো দেখলাম, তিনি অজ্ঞান অবস্থায় আছেন। যখন জ্ঞান ফিরল তিনি আমাকে বললেন, এই মাসআলায় তোমার কী অভিমত? আমি বললাম, হজরত, এই অবস্থাতেও? তিনি বললেন, কোনো সমস্যা নেই। একটু চিন্তাভাবনা করে নিই না? হয়তো এর দ্বারা কারও উপকার হবে। এরপর বললেন, হজের বিধিবিধানে জামারাতের পাথর মারা পায়ে হেঁটে উত্তম না সওয়ার হয়ে করা উত্তম? আমি বললাম, আরোহণ করে করা উত্তম। তিনি বললেন, তুমি ভুল বলছ। অতঃপর আমি বললাম, পায়ে হেঁটে করা উত্তম। তিনি বললেন, এটাও ভুল। আমি বললাম, তাহলে আপনিই বলে দিন, কোনটা সঠিক। তিনি বললেন, যে রমির পরে আরও রমি আছে সেটা পায়ে হেঁটে করা উত্তম। পক্ষান্তরে যে রমির পর আর রমি নেই সেটা আরোহণ করে করা উত্তম। এরপর আমি তার কাছ থেকে উঠে চলে এলাম। দরজার কাছে যেতেই তার ঘর থেকে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। বুঝতে পারলাম কাজি সাহেব তার প্রকৃত মালিকের নিকট পৌঁছে গেছেন।

লেখক বলেন, এটাই ছিল ওলামা ও মাশায়েখদের নীতি। তারা বলেছেন, দোলনা থেকে সমাধি পর্যন্ত ইলম অন্বেষণ করো। (কিন্তু এ কথাটা হাদিস নয়। যদিও একটা চরম সত্য কথা। -আব্দুল ফাত্তাহ রহ.)

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 ইমাম জাজ, ফাতাহ ইবনে খাকান ও কাজি ইসমাইল রহ.-এর ইলমস্পৃহা

📄 ইমাম জাজ, ফাতাহ ইবনে খাকান ও কাজি ইসমাইল রহ.-এর ইলমস্পৃহা


খতিব বাগদাদি রহ. 'তাকইদুল ইলম' নামক কিতাবে আবু আব্বাস মুবাররাদ রহ.-কে উদ্ধৃত করে বলেছেন, তিনি বলেন, আমি তিনজন ব্যক্তিকে সবচেয়ে বেশি ইলমের সৌখিন পেয়েছি—
১. সাহিত্যিককুল শিরোমণি আমর ইবনে বাহর; যিনি জাহেজ নামে বিখ্যাত। (জন্ম: ১৬৩ হি., মৃত্যু: ২৫৫ হি.)
২. স্ব-যুগের সাহিত্যিক ও কবি, অসাধারণ মেধাবী ও ধীমান ব্যক্তিত্ব, আব্বাসি খলিফা মুতাওয়াক্কিলের মন্ত্রী ও পালক ভাই এবং বিশাল গ্রন্থাগারের স্বত্বাধিকারী ফাতাহ ইবনে খাকান (মৃত্যু: ২৪৭ হি.)
৩. স্ব-যুগের ইমাম, ফিকহ ও কাজি ইসমাইল ইবনে ইসহাক মালেকি বাগদাদি (জন্ম: ২০০ হি., মৃত্যু: ২৮২ হি.)

জাহেজের অবস্থা এমন ছিল যে, যখনই কোনো কিতাব তার হস্তগত হতো শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে ফেলতেন। সেটা যে বিষয়েরই হোক না কেন। এমনকি কিতাব ব্যবসায়ীদের দোকানগুলো ভাড়া নিয়ে নিতেন এবং সারা রাত জেগে সেখানে অধ্যয়ন করতেন।

ফাতাহ ইবনে খাকানের অধ্যয়নের আগ্রহ ছিল এমন যে, তিনি তার থলে বা জামার আস্তিনে কিতাব রাখতেন। যখন কোনো প্রয়োজন বা নামাজের জন্য মুতাওয়াক্কিলের মজলিস থেকে উঠতেন, তখন কিতাব বের করে হাঁটতে হাঁটতে অধ্যয়ন করতেন। যেখানে যাওয়ার প্রয়োজন সেখান পর্যন্ত এ অবস্থায়ই যেতেন। ফিরে আসার সময়ও নিজ আসনে পৌঁছা পর্যন্ত এ অবস্থা-ই বিরাজ করত। যখন খলিফা মুতাওয়াক্কিল কোনো প্রয়োজনে মজলিস থেকে উঠে যেতেন, তখন খলিফার ফিরে আসা পর্যন্ত তিনি কিতাব অধ্যয়নে রত থাকতেন।

কাজি ইসমাইল ইবনে ইসহাকের অবস্থা ছিল এমন, যখনই আমি তার কাছে গিয়েছি, তার হাতে কিতাব ছাড়া অন্য কিছু দেখিনি। তাকে অধ্যয়নে তন্ময় থাকতে দেখেছি। অথবা অধ্যয়নের জন্য কোনো কিতাবের খোঁজে ব্যাকুল বা কিতাবগুলোকে ঝাড়তে মুছতে দেখেছি।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 ইবনে সুহনোন রহ.-কে তার বাঁদি রাতের খাবার খাইয়ে দিয়েছে, কিন্তু তিনি রচনার ব্যস্ততায় মুগ্ধতার কারণে টের পাননি

📄 ইবনে সুহনোন রহ.-কে তার বাঁদি রাতের খাবার খাইয়ে দিয়েছে, কিন্তু তিনি রচনার ব্যস্ততায় মুগ্ধতার কারণে টের পাননি


কাজি ইয়াজ রহ. রচিত 'তারতিবুল মাদারেক' নামক কিতাবে মালেকি ফকিহ ও যুগের মুহাদ্দিস মুহাম্মদ ইবনে সুহনোন কায়রাওয়ানি রহ.-এর (জন্ম: ২০২ হি., মৃত্যু: ২৫৬ হি.) জীবনী আলোচনায় আছে:

ইবনে সুহনোনের কাছে উম্মে মুদাম নামী জনৈক বাঁদি ছিল। একদিন মুহাম্মদ ইবনে সুহনোন রহ. তার কাছে ছিলেন। সেদিন তিনি অনেক রাত পর্যন্ত কোনো কিতাব রচনায় নিমগ্ন ছিলেন। খানা এলো, বাঁদি খানা পরিবেশন করার অনুমতি চাইল। তিনি বললেন, এখন আমি ব্যস্ত আছি। অপেক্ষার প্রহর যখন দীর্ঘ হলো বাঁদি নিজ হাতে খাওয়ানো শুরু করল। মুহাম্মদ ইবনে সুহনোন বেখেয়ালে পুরো খানা সাবাড় করলেন। এবং নিজ কাজে তন্ময় থাকলেন। একসময় ফজরের আজান হয়ে গেল। তখন তিনি উম্মে মুদামকে লক্ষ করে বললেন, উম্মে মুদাম! রাতে তোমার খোঁজখবর নিতে পারিনি। যা আছে নিয়ে আসো। সে বলল, আল্লাহর শপথ! আমি আপনাকে স্বহস্তে খাইয়ে দিয়েছি। তিনি বললেন, তাই নাকি? আমি তো টেরই পাইনি।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন