📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 শামসুদ্দিন আসবাহানি কম খেতেন, যেন বাথরুমে যাতায়াতের কারণে সময় নষ্ট না হয়

📄 শামসুদ্দিন আসবাহানি কম খেতেন, যেন বাথরুমে যাতায়াতের কারণে সময় নষ্ট না হয়


হাফেজ ইবনে হাজার রহ. লিখিত 'আদদুরারুল কামিনাহ' গ্রন্থে ও শাওকানি লিখিত রহ. 'আল-বদরুত তালে' গ্রন্থে বিখ্যাত উসুলবিদ, ফকিহ, মুফাসসির ইমাম আল্লাম শামসুদ্দিন আবুস সানা আসবাহানি মাহমুদ ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আহমদ শাফেয়ি রহ.-এর জীবনী আলোচনায় নিম্নোক্ত বিবরণ রয়েছে : তিনি মাতৃভূমিতে ইলম অর্জন শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে তিনি দক্ষতা অর্জন করেন ও বিভিন্ন বিষয়ে অগ্রসর হন। ৭২৫ হি. সনের সফর মাসে কুদস পরিদর্শন করার পর তিনি দামেশকে আগমন করেন। তার গুণাবলি দামেশকবাসীকে চরমভাবে মুগ্ধ করে। শায়খ তাকিউদ্দিন ইবনে তাইমিয়া রহ. তার কথা শুনে তাকে অত্যন্ত সম্মান করেন। তিনি একদা বলেন, চুপ করো, আমাদেরকে এই মহান জ্ঞানী মনীষীর বক্তব্য শুনতে দাও! তার মতো আলেম ইতিপূর্বে আমাদের এই এলাকায় আসেনি। এরপর তিনি কায়রোতে চলে যান। সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

ইলমের প্রতি তার আগ্রহ ও সময় ব্যয়ে তার কৃপণতা সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তার একজন ছাত্র বর্ণনা করতেন যে, তিনি খুব কম খেতেন, যেন পানি পানের প্রয়োজন না হয়। কারণ, তাহলে বাথরুমে বেশি যেতে হবে আর তাতে তার সময় নষ্ট হবে। লেখক বলেন, পাঠক! দেখুন, এই মহান ইমামের নিকট সময়ের মূল্য কত বেশি ছিল! আর সময়ের মূল্য বেশি হওয়ার কারণ হলো ইলমের মূল্যায়ন। কি আশ্চর্য! তিনি কত দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ছিলেন!

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 ইবনে রজব হাম্বলি রহ.-এর ইলম চর্চায় চরম তন্ময়তা

📄 ইবনে রজব হাম্বলি রহ.-এর ইলম চর্চায় চরম তন্ময়তা


'জাইলু ইউসুফ ইবনে আব্দুল হাদি হাম্বলি আলা তাবাকাতি ইবনে রজব' নামক গ্রন্থে হাফেজ ইবনে রজব (আব্দুর রহমান ইবনে আহমদ ইবনে রজব) বাগদাদি অতঃপর দামেশকি হাম্বলি রহ.-এর জীবনী আলোচনায় আছে, তিনি দুনিয়ার কোনো কিছুই জানতেন না। তিনি নেতৃত্বমুক্ত ছিলেন। ইলম চর্চা ছাড়া তার কোনো ব্যস্ততা ছিল না। আমাদের শায়খ শিহাবুদ্দিন ইবনে জাইদ আমাদেরকে বলেছেন, একদা তার স্ত্রী গোসলখানায় গোসল করে সেজেগুজে তার কাছে এলো। কিন্তু তিনি তার প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ করলেন না। স্ত্রী তখন বলল, তোমাদের কেউ কেবল এমন লোক চায় যে তাকে কুকুরের মতো ছেড়ে দেয়। এ কথা বলে স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায়।

লেখক বলেন, আমার মনে হয় তখন তিনি কেবল ইলম, গবেষণা ও তথ্যানুসন্ধানের মজা উপভোগ করছিলেন। তাই অন্য কোনো উপভোগ্য জিনিসের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেননি। সাজগোজ ও পরিচ্ছন্নতার সুরভিও তাকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়নি। তিরস্কারবাণ, হুলফুটানো বাক্যের কোনো পরোয়া তিনি করেননি।

এ ধরনের বিষয়েই কবি বলেছেন—
আমি যখন কিতাব অধ্যয়ন করি তার গণ্ডদ্বয় ছেড়ে
সে তখন কিতাবের প্রতি যারপরনাই অভিমান বোধ করে।

আরেক কবি বলেছেন—
গায়িকার সাথে কোলাকুলি ও দৈহিক মিলন করা যেমন প্রিয়
ইলম চর্চার জন্য বিনিদ্র রজনি আমার তদপেক্ষা অধিক প্রিয়।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 ইমাম মুহাম্মদ আবেদ সিন্ধি রহ. সফরব্যবস্থায়ও লিখতেন এবং নুসখা তৈরি করতেন

📄 ইমাম মুহাম্মদ আবেদ সিন্ধি রহ. সফরব্যবস্থায়ও লিখতেন এবং নুসখা তৈরি করতেন


ইমাম মুহাদ্দিস ফকিহ মুহাম্মদ আবেদ সিন্ধি আনসারি রহ., (জন্ম: ১১৯০ হিজরি, মৃত্যু: ১২৫৭ হিজরি) তিনি ইমাম শাফেয়ির মুসনাদটির বিন্যাস, সংক্ষেপায়ন ও যাচাই-বাছাইয়ের কাজটি করেছেন সফরাবস্থায়। আরাম ও পানাহারের জন্য বিরতির সময়। তিনি 'তারতিবু মুসনাদিল ইমামিশ শাফেয়ি' কিতাবটির সমাপ্তিতে বলেছেন, সংকলনটি শুরু করেছিলাম ১২২৯ হিজরি সনের জিলকদ মাসে হজের সফরের জন্য পশুবাহিত গাড়িতে চড়ার পর। আর তা সমাপ্ত হলো ১২৩০ হিজরি সনের রবিউল আওয়াল মাসের বিশ তারিখ রোজ বুধবার আসরের পর। হারামাইন শরিফাইন থেকে ফিরে আসার সময় কুনফুজা জামে মসজিদে। আমি শুধু পানি পান করার জন্য সামান্য বিরতি ও আরামের জন্য সফর বিরতির সময়ই কেবল লিখতে সক্ষম হতাম। এটা কেবল আল্লাহর দেওয়া নিয়ামত। তিনি আমাকে এমন সময় রাসুল সা.-এর সুন্নাহর সেবা করার তাওফিক দিয়েছেন, যখন সাধারণত এ ধরনের কাজ করা আদৌ সম্ভব হয় না।

অনুরূপভাবে তিনি 'লিসানুল মিজান' কিতাবটির অর্ধেক নকল করেছেন ওমরার জন্য মদিনা থেকে মক্কা যাওয়ার পথে। এ সময় মাহমুদিয়া লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত তার নিজ হাতে লেখা প্রথম খণ্ডটির শেষে লেখা আছে—
১২৫১ হিজরি সনের শাবান মাসের আটাশ তারিখে প্রথম খণ্ডটি সমাপ্ত হলো। আমরা এখন রমজান মাসে ওমরা করার উদ্দেশ্যে যাবার পথে রাবেগ নামক স্থানের নিকটে শাদোন নামক স্থানে অবস্থান করছি। এরপর দ্বিতীয় খণ্ডটি শুরু হবে ইনশাআল্লাহ।

সে সময়কার যুগে সফরের অবস্থা, যানবাহন ও আরামের স্থানগুলোর অবস্থা সকলেরই জানা। যদি তিনি মনে না করতেন যে, কিতাব নকল করা ও রচনা অন্যতম একটি মহান ইবাদত, তাহলে সফরে আরামের সময়টা তিনি আদৌ এ কাজে ব্যয় করতেন না।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 আল্লামা আব্দুল্লাহ বাশরি রহ. বাসর রাতেও কিতাব অধ্যয়নে মগ্ন ছিলেন, নববধূর প্রতি আদৌ তাকিয়ে দেখেননি

📄 আল্লামা আব্দুল্লাহ বাশরি রহ. বাসর রাতেও কিতাব অধ্যয়নে মগ্ন ছিলেন, নববধূর প্রতি আদৌ তাকিয়ে দেখেননি


আল্লামা মুহাম্মদ আহমদ উমর শাতেরি এ কিতাবটির (কিমাতুজ জামান) পঞ্চম সংস্করণটি পড়ার পর আমার পিতার নিকট প্রেরিত একটি চিঠিতে বলেছেন, কিতাবটি পড়ার পর আমার মনে পড়ছে আল্লামা মুফতি হাবিব আব্দুল্লাহ ইবনে উমর ইবনে ইয়াহইয়া বালাবি রহ. (মৃত্যু: হাজরামওতে ১২৬৫ হিজরি সনে)- এর কথা। তার কাছে তার নববিবাহিতা স্ত্রীকে পাঠানো হলো। তিনি বাসর ঘরে প্রবেশ করে দেখেন সেখানে কয়েকজন মহিলা রয়েছে। ঘটনাটি মধ্যরাতের। তাই তিনি শায়খ ইসমাইল ইবনে মুকরি ইয়ামানি শাফেয়ি (মৃত্যু: ৮৩৭ হিজরি)-এর লেখা 'আল-ইরশাদ' কিতাবটি হাতে নিলেন। ইতিমধ্যে মহিলারা চলে গেল। কিন্তু তিনি ফজর পর্যন্ত কয়েক ঘণ্টা যাবৎ কিতাবটি অধ্যয়নে তন্ময় হয়ে থাকলেন। নববধূ হেলান দিয়ে বসে রইল। তিনি উক্ত দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তার দিকে চোখ তুলে তাকানোর কথাও ভুলে গেলেন। কারণ, তিনি ওই ইলমের অধ্যয়নে লিপ্ত ছিলেন যা তার কাছে নববধূর চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। (সালমান)

আল্লাহর জন্যে আল্লামা জামাখশারির সকল মঙ্গল,

তিনি বলেন—
গায়িকার সাথে কোলাকুলি ও দৈহিক মিলন করা যেমন প্রিয়
ইলম চর্চার জন্য বিনিদ্র রজনি আমার তদপেক্ষা অধিক প্রিয়
তরুণীর বাদ্যের ধ্বনির চেয়ে বিদ্যাচর্চা বেশি প্রিয়
কিতাব, কাগজ ও পাণ্ডুলিপির আবর্জনা সরানো আমার প্রিয়।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন