📄 তৃতীয়ত, শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে অপরের অনুভূতির প্রতি লক্ষ রাখা
১. প্রশ্নকারীর অনুভূতির প্রতি লক্ষ রাখা, যখন সে প্রশ্ন করতে লজ্জাবোধ করে এবং প্রশ্নের সময় মুফতির দিকটিরও খেয়াল রাখা
মুসলিমের জন্য আবশ্যক হলো, তার দ্বীনি বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত শরয়ি বিধানগুলো সম্পর্কে অবগত হওয়া। যে তার ওপর আবশ্যক বিষয়গুলো সম্পর্কে অজ্ঞ, তার জন্য ইলম অর্জন করা জরুরি। আর ইলম অর্জনের একটি উপায় হলো, আলিমদের প্রশ্ন করা। ফরজসমূহ বা যে বিধানের ব্যাপারে জ্ঞান না থাকে, সে ব্যাপারে প্রশ্ন করা ওয়াজিব। কারণ, এই অজ্ঞতা অচিরেই হারামে লিপ্ত হওয়ার কারণ হবে। কিন্তু যদি প্রশ্নকারী কোনো কারণে প্রশ্ন করতে লজ্জাবোধ করে, তাহলে তার জন্য আবশ্যক হলো, ফতোয়া জিজ্ঞাসার জন্য উপযুক্ত কোনো মাধ্যম গ্রহণ করা। তবে এই ক্ষেত্রে শরয়ি আবশ্যগুলোর প্রতি লক্ষ রাখতে হবে।
আলিম ও মুফতির জন্য মানুষের অনুভূতির প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি এবং যথাসম্ভব চেষ্টা করবে তাদেরকে জটিল কোনো পরিস্থিতিতে না ফেলতে। আলি বিন আবু তালিব ﷺ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি এমন লোক ছিলাম, যার সব সময় মজি বের হতো। কিন্তু রাসুল ﷺ-এর কন্যার সাথে দাস্পত্য সম্পর্ক থাকার কারণে আমি ব্যাপারটি তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে লজ্জা করছিলাম। তাই মিকদাদ বিন আসওয়াদকে প্রশ্ন করতে বললাম। নবিজি ﷺ বলেন, (فِيهِ الْوُضُوءُ) “এ ক্ষেত্রে অজু করতে হবে।”৫৮ আরেকটি বর্ণনায় আছে, (يَغْسِلُ ذَكَرَهُ) “তুমি অজু করবে এবং তোমার লজ্জাস্থান ধুয়ে নেবে।”’৫৯
ইবনে হাজার ﷺ বলেন, ‘এখানে সামাজিকভাবে লজ্জার বিষয়গুলো সরাসরি উপস্থাপনে পরোক্ষতার ক্ষেত্রে আদবের ব্যবহার, জামাইদের সাথে উত্তম আচরণ এবং আত্মীয়-স্বজনের উপস্থিতিতে স্ত্রীর সাথে সহবাস ইত্যাদির সাথে সম্পৃক্ত বিষয়গুলোর আলোচনা পরিহারের কথা উল্লেখ হয়েছে। এর মাধ্যমে মুসান্নিফ ﷺ কিতাবুল ইলমে দলীল পেশ করেছেন যে লজ্জাকে অন্যকে প্রশ্নের আদেশ করবে; কারণ, এতে দুটি কল্যাণ একত্রিত হবে : লজ্জার ব্যবহার এবং বিধান জানার ক্ষেত্রে শিথিলতা না করা।’৬০
ইমাম বুখারি ﷺ তার সহিহ বুখারিতে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন :
بَابُ الْحَيَاءِ فِي الْعِلْمِ
‘ইলমের ক্ষেত্রে লজ্জার অধ্যায়’
মুজাহিদ ﷺ বলেন, ‘লজ্জাশীল বা অহংকারী কেউ ইলম শিখতে পারে না।’ আয়েশা ﷺ বলেন, ‘আনসারি নারীগণ কতই না উত্তম নারী! লজ্জা তাদের জন্য দ্বীনের জ্ঞান অর্জনে প্রতিবন্ধক হয় না।’৬১,৬২
ইবনে হাজার ﷺ বলেন, (بَابُ الْحَيَاءِ) অর্থাৎ লজ্জার বিধান। পেছনে গত হয়েছে যে, লজ্জা হলো ইমানের অংশ। আর এটি শরিয়তসম্মত, যা বড়দের সম্মান ও মর্যাদার কারণে হয়ে থাকে। আর এটি প্রশংসনীয় বিষয়। আর যা কোনো শরয়ি প্রয়োজনের কারণ হয়, তা নিন্দনীয় এবং তা শরিয়তসম্মত কোনো লজ্জা নয়। এটি হলো দুর্বলতা ও হীনতা। এ এমনই লজ্জাই উদ্দেশ্য : কোনো লজ্জাশীল ইলম শিখতে পারে না। যেন তিনি শিক্ষার্থীদের অক্ষমতা ও অহংকার দূর করতে উৎসাহিত করছেন; এই দুটির প্রত্যেকটি শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধ তৈরি করে।৬৩
২. অজ্ঞদের অনুভূতির প্রতি লক্ষ রাখা ও তাদের সাথে কোমল আচরণ করা
শিক্ষার বার্তা একটি মহৎ বার্তা। এটি নবিগণের সবচেয়ে বড় কাজ। এটি দ্বীনের প্রচার-প্রসারে সবচেয়ে উত্তম মাধ্যম।
শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ রাখা উচিত, তার একটি হলো, শিক্ষাদানকালীন ছাত্রের প্রতি কোমলতা প্রদর্শন। কেননা, আচরণ, দয়া ও চিন্তাভাবনায় মানুষ বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। তাই শিক্ষকের জন্য এসব পার্থক্যের প্রতি খেয়াল রাখা উচিত এবং শিক্ষার্থীর সাথে কোমল আচরণ করা উচিত। বিশেষ করে যখন শিক্ষার্থী কোনো ভুলে পতিত হয়, তখন তার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখবে। কারণ, ভুলকারীর মন অধিকাংশ সময় ভাঙা থাকে। আনাস ﷺ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন :
‘একদা আমরা রাসুল ﷺ-এর সাথে মসজিদে ছিলাম। ইত্যবসরে এক বেদুঈন আসলো। সে মসজিদে দাঁড়িয়ে পেশাব করতে লাগল। তা দেখে রাসুল ﷺ-এর সাহাবিগণ বললেন, “থামো, থামো!” রাসুল ﷺ বললেন :
لَا تُزْرِمُوهُ دَعُوهُ
“তোমরা তাকে বাধা দিয়ো না, তাকে ছেড়ে দাও।”’
এরপর রাসুল ﷺ তাকে ডেকে এনে বললেন :
إِنَّ هَذِهِ الْمَسَاجِدَ لَا تَصْلُحُ لِشَيْءٍ مِنْ هَذَا الْبَوْلِ، وَلَا الْقَذَرِ إِنَّمَا هِيَ لِذِكْرِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ، وَالصَّلَاةِ وَقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ
“এটা হলো মসজিদ। এখানে পেশাব করা কিংবা ময়লা আবর্জনা ফেলা যায় না। বরং এ হলো আল্লাহর জিকির, সালাত আদায় ও কুরআন পাঠ করার স্থান।”
অথবা রাসুল ﷺ যেভাবে বলেছেন, অনরূপ। এরপর রাসুল ﷺ সবার মধ্য থেকে এক ব্যক্তিকে এক বালতি পানি আনতে আদেশ করলেন। তারপর সে এক বালতি পানি আনল এবং তা পেশাবের ওপর ঢেলে দিল।’৬৪
ইবনে হাজার ﷺ বলেন :
‘এতে এই বিষয়টি রয়েছে যে, অজ্ঞদের সাথে কোমল আচরণ করতে হবে; যদি তার মধ্যে অকর্মন্যতা না থাকে, তাহলে কঠোরতা না করে যেভাবে তাকে শিক্ষা দেওয়া দরকার, সেভাবে শিক্ষা দেবে। বিশেষ করে যার জন্য বস্তুত্ব প্রয়োজন, তার জন্য বিষয়টি আরও বেশি খেয়াল রাখতে হবে। এখানে নবিজি ﷺ-এর দয়া ও উত্তম চরিত্রের ব্যাপারটি ফুটে উঠেছে। ইবনে মাজাহ ও ইবনে হিব্বান ﷺ আবু হুরাইরা ﷺ-এর হাদিসে উল্লেখ করেন :
‘বেদুঈন লোকটি ইসলামি জ্ঞান অর্জনের পর রাসুল ﷺ-এর কাছে গিয়ে বলল, “আমার পিতামাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক।” তিনি তাকে তিরস্কারও করেননি এবং বকাও দিলেন না।’
প্রিয় মুসলিম ভাই, আপনি কি ভুলকারীর ব্যাপারে রাসুল ﷺ-এর এই মহান আদর্শের প্রতি খেয়াল করেছেন? বিশেষ করে এমন অজ্ঞের ব্যাপারে তাঁর আচরণ কেমন ছিল, যে বুঝতে পারছে না যে, সে ভুল করছে এবং তার ভুলের বিশালতাও উপলব্ধি করতে পারেনি। সে নিজের কাজকর্মের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপও করেনি; সুতরাং আমরা যেন রাসুল ﷺ-এর জীবনকে উত্তম আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করি।
৩. যে ভুলে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, উপদেশ ও শিক্ষাদানের সময় তার অনুভূতির প্রতি লক্ষ রাখা
যে একটি বিষয় সব সময় করে আসছে এবং তার সাথে একটি সম্পর্ক হয়ে গেছে এবং সে এটার ওপর অবিচল রয়েছে, তার জন্য বিষয়টি পরিত্যাগ করা কঠিন বটে। তা পরিত্যাগের জন্য তাকে সব সময় ইমান ও দৃঢ় শক্তির অধিকারী হতে হবে; মুক্ত হতে হবে নফসের কামনা-বাসনা থেকে এবং কাজের ক্ষেত্রে সর্বদা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের কাছে তাৎক্ষণিক সাড়া প্রদানের তওফিয়ত প্রাপ্ত হতে হবে।৬৫
এ কারণেই মানুষকে উপদেশ ও শরণ করানোর ক্ষেত্রে দারিদ্রকে প্রজ্ঞা পরিচয় দিতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে নবিজি ﷺ-এর সুন্নাহর অনুসরণ করতে হবে। মানুষের অবস্থা অনুযায়ী তাদেরকে শরিয়তের বিকল্প ব্যবস্থার দিকে দিক-নির্দেশনা দিতে হবে। এটিকে বলা হয় তাহলিয়া (সজ্জিত করা)-এর নীতি অবলম্বন। অর্থাৎ শরিয়তের বিপরীত জিনিস থেকে খালি হয়ে যাবে এবং ইমান ও নেক আমলের মাধ্যমে সজ্জিত হবে।
সাইদ বিন আবুল হাসান ﷺ বলেন, ‘জনৈক লোক ইবনে আব্বাস ﷺ-এর নিকট এসে বলল, “আমি এমন এক লোক, যে এই ছবিগুলো অঙ্কন করি। এ ব্যাপারে আমাকে ফতোয়া দিন?” তিনি বললেন, “তুমি আমার কাছে এসো!” সে তাঁর কাছে এল। এরপর তিনি বললেন, “তুমি আমার কাছে এসো।” সে আরও কাছে এল। একপর্যায়ে তিনি তার মাথার ওপর নিজের হাত রেখে বললেন, “আমি তোমাকে রাসুলুল্লাহ ﷺ থেকে যা শুনেছি, তা-ই বর্ণনা করছি। আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি :
كُلُّ مُصَوِّرٍ فِي النَّارِ، يَجْعَلُ لَهُ، بِكُلِّ صُورَةٍ صَوَّرَهَا، نَفْسًا فَتُعَذِّبُهُ فِي جَهَنَّمَ
“প্রত্যেক ছবি প্রস্তুতকারী জাহান্নামের অধিবাসী হবে। তৈরিকৃত প্রতিটি ছবিতে জীবন দেওয়া হবে, আর জাহান্নামে তাকে ওইগুলো আজাব দিতে থাকবে।”’
তিনি আরও বললেন : (وَمَا لَا نَفْسَ لَهُ) “একান্তই যদি করতে হয়, তাহলে গাছপালা এবং প্রাণহীন বস্তুর ছবি অঙ্কন করো।”’৬৬
ইবনে আব্বাস ﷺ-এর কথাটি চিন্তা করে দেখুন, ‘আমি তোমাকে রাসুলুল্লাহ ﷺ থেকে যা শুনেছি, তা-ই বর্ণনা করছি।’ এটি ছিল ইবনে আব্বাস ﷺ-এর প্রজ্ঞার পরিচয়। কারণ, তিনি প্রশ্নকারীর সামনে সে বিষয়টি প্রস্তুত করেছেন, যার ফলে তার হৃদয় সে ফতোয়া গ্রহণ করবে, যার মাধ্যমে তার প্রিয় ও অত্যন্ত বিষয়টি তার জন্য হারাম করে দেওয়া হবে। ইবনে আব্বাস ﷺ তাকে নিজের পক্ষ থেকে ফতোয়া দেননি। বরং ফতোয়াকে সাহায্য করে দিয়েছেন রাসুল ﷺ-এর দিকে। এরপর তিনি শরিয়তসম্মত বিকল্প পদ্ধতি বলে দিয়েছেন। এটিই হলো ফতোয়ার জ্ঞান।
শরিয়তের নীতিমালা থেকে এটি সর্বজনবিদিত যে, তা যেকোনো হারাম উপকরণের পরিবর্তে বিকল্প সিস্টেম পেশ করে দেয়। জিনা হারাম করে বিয়েকে হালাল করে দেওয়া হয়েছে। সুদকে হারাম করে ব্যবসাকে হালাল করা হয়েছে। যেমন শূকর, মৃতপ্রাণী ও প্রত্যেক হিংস্র প্রাণী হারাম করা হয়েছে, তখন চতুষ্পদ জন্তু ও অন্যান্য কিছু প্রাণী জবাই হালাল করে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য সকল বিধানের ব্যাপারটিও এমনই। এরপর যদি কোনো ব্যক্তি হারামে পতিত হয়, তাহলে শরিয়ত তাকে তাওবা ও কাফফারার মাধ্যমে তা থেকে বের হওয়ার সিস্টেম বলে দিয়েছে; যেমনটি কাফফারাসংক্রান্ত অধ্যায়গুলোতে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং দায়িত্ব হলো, বিকল্প বিষয় পেশ করা এবং শরয়ি বিষয়সমূহের ব্যাপারে পরিপূর্ণরূপে শরিয়তের অনুসরণ করা।
এখানে এই বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করা উচিত যে, বিকল্প পেশ করতে হবে এবং সামর্থ্য অনুযায়ী। অনেক সময় হতে পারে বিষয়টি ভুল এবং তা থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক; কিন্তু তার জন্য উপযুক্ত কোনো বিকল্প পাওয়া যাচ্ছে না—হয়তো অজ্ঞতা বিশৃঙ্খল হওয়ার কারণে মানুষ শরিয়ত থেকে দূরে সরে পড়ার কারণে, কিংবা সৎকাজের আদেশকারী ও অসৎকাজে বাধাদানকারী কিছু স্মরণ করতে পারছে না বা অজ্ঞতার ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট বিকল্প পদ্ধতিগুলোর ব্যাপারে কোনো ধারণা নেই—যদি তার কাছে এমন বিকল্প কিছু না থাকে, যে এ ব্যাপারে বলবে বা নির্দেশনা দেবে, তাহলে এই অবস্থায় ওই লোকটি ভেঙে পড়বে এবং ভুল নির্জীবিত হবে। এমনটি সাধারণত আর্থিক লেনদেন ও বিনিময়ের ব্যবস্থায় হয়ে থাকে, যেমন ইসলামি সমাজব্যবস্থা থেকে শরিয়তের সাথে সাংঘর্ষিক এমন বিষয়গুলো আমদানি করা হয়েছে। আর মুসলিমদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা হলো শরিয়তসম্মত পদ্ধতির অধিকার করা বা ব্যাপক করে দিতে না পারা। আর এই দুর্বলতা ও অক্ষমতার মাঝে। আল্লাহ তাআলার সিস্টেম বিকল্প পদ্ধতি এবং পথ বিদ্যমান আছে, যা সমস্যা দূর করবে এবং মুসলিমদের থেকে কষ্ট লাঘব করবে। সেগুলোর ব্যাপারে যে জানতে পেরেছে, সে তো জেনছে; আর যে রয়েছে, সে অজ্ঞ রয়েছে।৬৭
৪. ছোট ছোট তালিকা ইলমের প্রতি লক্ষ রাখা, পরিবার থেকে যারা দীর্ঘ সময় দূরে রয়েছে
মালিক বিন হুয়াইরিস ﷺ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন :
‘আমার নবিজি ﷺ-এর কাছে গেলাম। আমরা সবাই সমবয়সী যুবক ছিলাম। আমরা বিশ দিন রাত তাঁর কাছে অবস্থান করলাম। রাসুল ﷺ ছিলেন দয়ালু কোমল হৃদয়ের অধিকারী। তিনি যখন অনুমান করলেন যে, আমরা স্ত্রী-পরিবারের প্রতি ঝুঁকে পড়েছি বা আসক্ত হয়ে পড়েছি, তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আমরা বাড়িতে কাদের রেখে এসেছি? আমরা তাঁকে তা জানালাম। তিনি বললেন :
ارْجِعُوا إِلَى أَهْلِيكُمْ، فَأَقِيمُوا فِيهِمْ وَعَلِّمُوهُمْ وَمُرُوهُمْ
“তোমরা তোমাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাও এবং তাদের মাঝে অবস্থান করো। আর তাদের (দ্বীন) শিক্ষা দাও এবং সৎকাজের) আদেশ করো।”’
তিনি তাদের প্রতি দয়াবশত হয়ে এবং পরিবারদের ব্যাপারে তাদের আগ্রহ ও অনুভূতির প্রতি লক্ষ রেখে তাদের ফিরে যেতে আদেশ করেছেন। এবং তাদের পরিবারের লোকদের মাঝে ইলম ছড়িয়ে দেওয়া, তাদেরকে ইসলামের বিধিবিধান, আদব ও শরয়ি ইলম শিক্ষা দিতে আদেশ করেছেন।
৫. যখন কেউ করণীয় কোনো বিষয় ভুলে যায়, তখন তার অনুভূতির প্রতি লক্ষ রাখা
মুহাম্মাদ বিন হুমাইদ ﷺ বলেন, ‘আব্দুল্লাহ বিন মুবারকের নিকট এক লোক হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলেনি। ইবনে মুবারক তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “হাঁচিদাতা হাঁচি দিয়ে কী বলবে?” সে বলল, “আলহামদুলিল্লাহ বলবে।” তিনি তাকে বললেন, “আল্লাহ তোমার ওপর দয়া করুন।” আমরা সবাই তার এত সুন্দর শিষ্টাচার বিস্মিত হলাম।’
এই হলো ইবনুল মুবারকের অবস্থান। তিনি হাঁচিদাতাকে এমন করেছেন তার দুর্বলতা দূর করার জন্য। যেন সে জানতে না যে, হাঁচি দিলে কী বলতে হয় অথবা স্বভাবত সে ভুলে গেছে বা হতে পারে সে নওমুসলিম। এটি হলো আল্লাহ তাআলার দাপ্তরিক ক্ষেত্রে প্রজ্ঞা। আল্লাহ তাআলা বলেন :
يُؤْتِي الْحِكْمَةَ مَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ أُوتِيَ خَيْرًا كَثِيرًا ۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ
‘তিনি যাকে দান প্রজ্ঞা দান করেন। আর যাকে প্রজ্ঞা দান করা হয়, তাকে প্রভূত কল্যাণ করা হয়। উপদেশ তারাই গ্রহণ করে, যারা জ্ঞানবান।’৭০
টিকাঃ
৫৮. সহিহুল বুখারি : ১৩২।
৫৯. সহিহুল বুখারি : ২৬১।
৬০. ফাতহুল বারি : ১/৩৮১।
৬১. সহিহুল বুখারি : ১/১০৫।
৬২. হিলইয়াতুল আউলিয়া : ২/২২০।
৬৩. ফাতহুল বারি : ১/২২৯।
৬৪. সহিহুল বুখারি : ২২১, সহিহু মুসলিম : ২৮৫।
৬৫. ফাতহুল বারি : ১/৩২৯।
৬৬. সহিহুল বুখারি : ২২২৫, সহিহু মুসলিম : ২১৯০।
৬৭. আল-আদাবুন নাবায়িয়্যাহ ফি তিয়ামিল মাআয আখতারিন নাস : ৫০।
📄 চতুর্থত, অভাবীদের অনুভূতির প্রতি খেয়াল করা
এই অধ্যায়ে কোনো কন্টেন্ট এখনো যোগ করা হয়নি।