📘 অপরের অনুভূতির প্রতি লক্ষ রেখো > 📄 দ্বিতীয়ত, মেহমানদারির ক্ষেত্রে মুসলিমদের অনুভূতির প্রতি লক্ষ রাখা

📄 দ্বিতীয়ত, মেহমানদারির ক্ষেত্রে মুসলিমদের অনুভূতির প্রতি লক্ষ রাখা


১. অতিথি মেহমানদারির জন্য ওজরখাহি করলে দাতার অনুভূতির প্রতি লক্ষ রাখা
মেহমানের মেহমানদারি হলো তার জন্য সম্মান প্রদর্শন, তাকে অভ্যর্থনা জানানো এবং তার প্রতি ইহসান বা অনুগ্রহ করা। আর ইহসানের হক হলো অনুরূপ জিনিস দিয়ে তা পরিশোধ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন :
هَلْ جَزَاءُ الْإِحْسَانِ إِلَّا الْإِحْسَانُ
‘উত্তম কাজের প্রতিদান উত্তম ছাড়া আর কী হতে পারে?’৩৫
এটিই নীতি; যতক্ষণ না এখানে কোনো প্রতিবন্ধক থাকে। যেমন সেখানে শরয়ি কোনো সমস্যা থাকতে পারে অথবা বাস্তবিক কোনো সমস্যা থাকতে পারে অথবা এ ধরনের অন্য কোনো বিষয় থাকতে পারে। সুতরাং তার জন্য শরয়ি দিকটির প্রতি লক্ষ রাখতে হবে এবং তাকে তার মাখলুক ও নফসের ওপর অগ্রাধিকার দিতে হবে।৩৬ তবে তিনি নিজের ওজরের সংবাদ দেবেন খুব কোমলতার সাথে।
সব বিন জাসসামাহ আল-লাইসি থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুল ﷺ-কে আবওয়া বা ওয়াদ্দান নামক জায়গায় অবস্থান অবস্থায় একটি বন্য গাধা উপঢৌকন দিলে তিনি তা ফিরিয়ে দেন। এরপর নবিজি ﷺ তাঁর চেহারায় মনঃক্ষুণ্ণ ভাব দেখে বললেন, (إِنَّا لَمْ نَرُدَّهُ عَلَيْكَ إِلَّا أَنَّا حُرُمٌ) ‘ওটা আমি কখনো তোমাকে ফিরিয়ে দিতাম না, যদি না আমি মুহরিম হতাম।’৩৭
ইবনে হাজার ﷺ বলেন, ‘এতে প্রমাণ রয়েছে যে, কোনো কারণে হাদিয়া ফিরিয়ে দেওয়া জায়েজ। মুসান্নিফ (ইমাম বুখারি) ﷺ এর তরজমা করেছেন এভাবে : “যে কোনো কারণে হাদিয়া ফিরিয়ে দিয়েছে।” এতে হাদিয়া ফিরিয়ে দেওয়ার দ্বারা হাদিয়াদাতার অন্তরে প্রশান্তি জরুরি এবং হেবা বা দান কবুল করা ছাড়া মালিকানায় প্রবেশ করে না এবং মালিকানার ক্ষমতা থাকলেই কেউ মালিক হয়ে যায় না—এই ব্যাপারেও উল্লেখ রয়েছে। আর মুহরিম ব্যক্তির হাতে যদি তার জন্য শিকার নিষিদ্ধ এমন কোনো জিনিস চলে আসে, তাহলে সেটি তার জন্য ছেড়ে দেওয়া আবশ্যক—এটিও বুঝা যায়।’৩৮
ইবনুল মুলাক্কিন ﷺ বলেন, ‘আর হাদিসের কিছু ফায়দা হলো, যখন ফিরিয়ে দেওয়ার মতো কোনো প্রতিবন্ধক সৃষ্টি না হবে, তখন হাদিয়া দেওয়া ও গ্রহণ করা জায়েজ। আর যখন হাদিয়াদাতার হাদিয়া গ্রহণ করা না, তখন তার সামনে ওজরখাহি করবে। তাহলে ওজর নির্ধারিত হয়ে যাওয়ার কারণে হাদিয়াদাতার অন্তর প্রশান্তি লাভ করবে। আবু আলি আন-নিশাপুরি ﷺ বলেন, “এটি ওজরখাহির ব্যাপারে বিশুদ্ধ হাদিস।”’৩৯
২. যখন মেজবান মেহমানকে সম্মান করার মতো কিছু না পান, তখন মেজবানের অনুভূতির প্রতি লক্ষ রাখা
অনেক সময় কোনো মুসলিম কোনো মেহমানের আগমনে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যান। কারণ, মেহমান এমন অবস্থায় এসেছে, যখন সে খুব কঠিন অবস্থা পার করছে বা ব্যস্ত আছে অথবা তার ঘরে সে সংকীর্ণ হয়ে আছে বা তার হাত সংকীর্ণ হয়ে আছে।
এই সময় মেহমানের জন্য আদব হলো, মেজবানের সমস্যা দূর করা—কোমল ভাষার মাধ্যমে, যা তার দৃষ্টি ও পেরেশানি দূর করে দেবে এবং সে যে সমস্যায় নিপতিত হয়েছে, তা থেকে বের হয়ে আসতে পারবে।
উত্তম হলো, কোনো মুসলিমের জীবনে সমস্যা পতিত হওয়ার আগেই এ ধরনের অবস্থান্তরের প্রতি খেয়াল রাখা।৪০
৩. মেহমানের অনুভূতির প্রতি লক্ষ রাখা
ইসলাম যে মেহমানদারির প্রতি উৎসাহিত করেছে, তার একটি আদব হলো, মেজবান ও তার পরিবারের লোকেরা মেহমানের খাওয়ার সময় তার অনুভূতির প্রতি খেয়াল রাখবে। তারা মেহমানকে এটা বুঝতে দেবে না যে, সে তাদের কষ্টে ফেলে দিয়েছে। তারা এমন কোনো কাজ করবে না, যার কারণে মেহমানের মনে হবে যে, সে তাদের সংকীর্ণতায় ফেলে দিয়েছে; যেমন : মেহমানের খাওয়া অবস্থায় তাদের দৃষ্টি তাকে অনুসরণ করা অথবা তার উপস্থিতিতে তারা সকলে নীরবতা অবলম্বন করা, যা মেহমানের মাঝে সমস্যার অনুভূতি সৃষ্টি করে এবং সে তাড়াহুড়া করতে বাধ্য হয়।
বরং উচিত হলো, মেহমানের সামনে তাদের আনন্দ প্রকাশ করা এবং তার আগমনে তারা যে প্রফুল্ল এবং মেহমানদারির জন্য প্রয়োজনে তারা নিজেদের সবকিছু কুরবান করতে প্রস্তুত—এটি বোঝানো।
আবু হুরাইরা ﷺ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘জনৈক বেদুঈন রাসুল ﷺ-এর কাছে এসে বলল, “আমি চরম অনাহারে ভুগছি।” রাসুল ﷺ তাঁর এক স্ত্রীর নিকট লোক পাঠালে তিনি বললেন, “যে সত্তা আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন—তাঁর কসম, আমার নিকট পানি ব্যতীত আর কিছু নেই।” তিনি তাঁর অপর এক স্ত্রীর নিকট পাঠালে তিনিও অনুরূপ কথা বললেন। এভাবে তাঁরা সবাই একই কথা বললেন যে, “সে সত্তার কসম—যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন, আমার কাছে পানি ব্যতীত আর কিছুই নেই।” তখন তিনি বললেন, (مَنْ يُضِيفُ هَذَا اللَّيْلَةَ رَحِمَهُ اللَّهُ) “আজ এ রাতে কে লোকটির মেহমানদারি করবে? আল্লাহ তার ওপর দয়া করুন!” তখন এক আনসারি সাহাবি উঠে বললেন, “হে আল্লাহর রাসুল, আমি।” অতঃপর লোকটিকে নিয়ে আনসারি সাহাবি নিজ বাড়িতে গেলেন এবং তার স্ত্রীকে বললেন, “তোমার নিকট কিছু আছে কি?” সে বলল, “না। তবে বাচ্চাদের জন্য অল্প কিছু খাবার আছে।” তিনি বললেন, “তুমি কিছু একটা দিয়ে তাদের ব্যস্ত রাখো। আর যখন খাওয়ার সময়) তখন তুমি বাতিটি নিভিয়ে দিয়ো। আর তাকে বোঝাবে যে, আমরাও খাচ্ছি। সে যখন খাওয়া আরম্ভ করবে, তখন তুমি আলোর পাশে গিয়ে সেটি নিভিয়ে দেবে।” রাবি বলেন, ‘তারা বসে থাকলেন এবং অতিথি খেতে শুরু করল। সকালে ওই আনসারি সাহাবি নবিজি ﷺ-এর কাছে আসলে তিনি বললেন : (قَدْ عَجِبَ اللَّهُ مِنْ صَنِيعِكُمَا بِضَيْفِكُمَا اللَّيْلَةَ) “রাতে অতিথির সঙ্গে তোমাদের উভয়ের ব্যবহারে আল্লাহ খুশি হয়েছেন।”’৪০
এটি নিষিদ্ধ কষ্ট স্বীকারের অন্তর্ভুক্ত নয়; কারণ, এই বেদুঈন ছিল অনাহারী; আর সে ছিল রাসুল ﷺ-এর মেহমান।
আর আনসারি নিজের কাছে যা আছে, তা দিয়েই তাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।
কিন্তু যদি মেজবান নিজের সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে কষ্ট স্বীকার করে বা কষ্টদায়ক কোনো ঋণ বা এ জাতীয় কিছু গ্রহণ করে, তাহলে এটি নিষিদ্ধ। রাসুল ﷺ বলেন :
لَا يَتَكَلَّفَنَّ أَحَدٌ لِضَيْفِهِ مَا لَا يَقْدِرُ عَلَيْهِ
‘কেউ যেন মেহমানের জন্য নিজের সাধ্যের বাইরে কষ্ট স্বীকার না করে।’৪১
আবু হুরাইরা ﷺ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল ﷺ এবং আবু বকর ও উমর ﷺ বের হলেন। প্রচণ্ড ক্ষুধায় তাঁদের বের করেছে। তাঁরা জনৈক আনসারির কাছে আসলেন। কিন্তু তখন সে আনসারি বাড়িতে ছিলেন না। তার স্ত্রী তাঁদের দেখে বলল, “মারহাবান ওয়া আহলান!” রাসুল ﷺ তাকে বললেন, “অমুক কোথায়?” সে বলল, “আমাদের জন্য মিষ্টি পানি আনতে গেছেন।” ঠিক তখনই ওই আনসারি সাহাবি চলে এলেন। এরপর তিনি রাসুল ﷺ ও তাঁর সাথিদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আলহামদুলিল্লাহ, আজ মেহমানের দিক থেকে আমার চেয়ে অধিক সৌভাগ্যবান আর কেউ নেই।” তারপর তিনি গিয়ে খেজুরের ছড়া নিয়ে আসলেন—যাতে কাঁচা, পাঁকা ও শুকনো খেজুর ছিল। তিনি বললেন, “আপনারা এ ছড়া থেকে খান।” এরপর তিনি ছুরি নিলেন (বকরি জবাই করার জন্য)। তখন রাসুল ﷺ তাকে বললেন, “সাবধান, দুধেল বকরি জবাই করবে না।” এরপর তাদের জন্য বকরি জবাই করা হলো। তারা তার গোশত ও কাঁদির খেজুর খেলেন এবং পানি পান করলেন। যখন তারা সকলেই ক্ষুধা মিটিয়ে পরিতৃপ্ত হলেন। তখন রাসুল ﷺ আবু বকর ও উমর ﷺ-কে বললেন :
وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَتُسْأَلُنَّ عَنْ هَذَا النَّعِيمِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، أَخْرَجَكُمْ مِنْ بُيُوتِكُمُ الْجُوعُ، ثُمَّ لَمْ تَرْجِعُوا حَتَّى أَصَابَكُمْ هَذَا النَّعِيمُ
“যে সত্তার হাতে আমার জীবন—তাঁর কসম, কিয়ামতের দিন এই নিয়ামত সম্বন্ধে তোমাদের জিজ্ঞাসিত হবে। ক্ষুধা তোমাদের বাড়ি হতে বের করেছে; অথচ তোমরা এ নিয়ামত লাভ না করে ফেরত যাওনি।”’৪২
ইমাম নববি ﷺ বলেন, ‘সালাফের একদল মেহমানের কষ্টে নিপতিত হওয়াকে অপছন্দ করেছেন। তবে সেই ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, যখন গৃহকর্তার জন্য মেহমানদারি করা বাহ্যিকভাবে কঠিন হবে; কারণ, এই অবস্থা ও মেহমানের আগমনে পরিপূর্ণ আনন্দ প্রকাশ প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় এর কিছু অংশ তার মাঝে প্রকাশও পেতে পারে। ফলে এর মাধ্যমে মেহমান কষ্ট পাবে। অনেক সময় সে মেহমানের জন্য এমন কোনো জিনিস উপস্থিত করতে পারে, যা থেকে মেহমান বুঝবে যে, সে তার জন্য কঠিন হয়ে গেছে এবং মেজবানের জন্য অনেক কষ্ট স্বীকার করছে। তার প্রতি দয়াবশত সে কষ্ট পাবে। আর এ সবই হলো রাসুল ﷺ-এর এই বাণীর বিপরীত :
مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ
“যে আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের প্রতি ইমান রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে।”৪৩
কারণ, মেহমানের প্রতি সম্মান পূর্ণতা হবে, যদি তার মনকে তৃপ্তি দেওয়া হয় এবং তার কার্যাআনন্দ প্রকাশ করা হয়। আর ওই আনসারি সাহাবির কর্ম ও তাঁর বকরি জবাই তাঁর জন্য কোনো কঠিন ব্যাপার ছিল না। বরং যদি তিনি অনেকগুলো ভেড়া বা উটও জবাই করতেন এবং রাসুল ﷺ ও তাঁর দুই সাহাবি মেহমানদারিতে তা পেশ করতেন, তবুও তিনি এর মাধ্যমে আনন্দিত হতেন এবং এর মাধ্যমে সর্বাধিক সম্মানিত হতেন। আর আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত।’৪৪
৪. এমনভাবে মেহমানের অনুভূতির প্রতি লক্ষ রাখা যে, সে যেন ধারণা করতে না পারে, তারা তার জন্য কষ্ট স্বীকার করছে
অনেক সময় মেহমান অনুভব করতে পারে যে, গৃহকর্তা তার জন্য কষ্ট স্বীকার করছে। সুতরাং গৃহকর্তার জন্য মেহমানের এই অনুভূতি দূর করা আবশ্যক। বনু মুত্তাফিকের প্রতিনিধি লাকিত বিন সাবরাহ ﷺ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন :
انْطَلَقْتُ أَنَا وَصَاحِبٌ لِي حَتَّى أَتَيْنَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمْ نُصَادِفْهُ، فَوَجَدْنَا عَائِشَةَ أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ قَائِمَةً تُصْلِحُ شَيْئًا مِنْ أَمْرِهَا، فَأَطْعَمَتْنَا تَمْرًا، وَعَصَدَتْ لَنَا عَصِيدَةً، إِذْ جَاءَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَقَلَّعُ فَقَالَ: «هَلْ أَطْعَمْتُمْ مِنْ شَيْءٍ؟» ، قُلْنَا: نَعَمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَبَيْنَا نَحْنُ كَذَلِكَ رَافِعٌ رَأْسِيَ الْغَنَمَ فِي الْمَرَاحِ عَلَى يَدِهِ سَخْلَةٌ، قَالَ: «هَلْ وَلَدَتْ؟» ، قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: «فَاذْبَحْ لَنَا شَاةً» ، ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَيْنَا فَقَالَ: «لَا تَحْسَبَنَّ - وَلَمْ يَقُلْ: لَا تَحْسَبَنِّنَا - إِنَّا ذَبَحْنَا الشَّاةَ مِنْ أَجْلِكُمَا، لَنَا غَنَمٌ مِائَةٌ لَا نُرِيدُ أَنْ نَزِيدَ عَلَيْهَا فَإِذَا وَلَّدَ الرَّاعِي بَهْمَةً أَمَرْنَاهُ بِذَبْحِ شَاةٍ»
‘আমি ও আমার এক সাথি রাসুল ﷺ-এর নিকট গেলাম। কিন্তু তাঁকে পেলাম না। আয়েশা ﷺ আমাদেরকে খেজুর খাওয়ালেন এবং আমাদের জন্য সারিদ তৈরি করলেন। ইত্যবসরে রাসুল ﷺ সেখানে মহল্লার গরিব আগমন করলেন। তিনি বললেন, “তোমরা কি কিছু খেয়েছ?” আমরা বললাম, “হ্যাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ!” আমরা সাথে ছিলাম, এমতাবস্থায় এক মেষপালক রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর বকরির পাল চরিয়ে নিয়ে এল, তখন তার হাতে একটি ছাগলছানা ছিল। তিনি বললেন, “বাচ্চা জন্ম নিয়েছে?” সে বলল, “হ্যাঁ।” রাসুলুল্লাহ ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, “আমাদের জন্য একটি বকরি জবাই করো।” এরপর তিনি আমাদের দিকে এসে বললেন, “মনে করো না যে, আমরা তোমাদের জন্য বকরি জবাই করছি; আমাদের একশটি ছাগল আছে। আমরা চাই না, তা একশর থেকে বেড়ে যাক। সে জন্যই রাখাল কোনো ছাগলছানার জন্ম জানালে আমরা তাকে একটি বকরি জবাই করতে আদেশ করি।”’৪৫
(لِذَبْحِ الشَّاةِ مِنْ أَجْلِكُمَا) ‘তোমাদের জন্য বকরি জবাই করেছি’—এর দ্বারা রাসুল ﷺ ইচ্ছা করেছেন যে, আমরা তোমাদের জন্য কষ্ট করছি না, তোমরা আমাদের ব্যাপারে অসন্তুষ্ট হবে এবং মেহমানদারি দেখে বিস্মিত ও অবাক হবে।
(أَمَرْنَاهُ بِذَبْحِ شَاةٍ) ‘আমরা তাকে একটি বকরি জবাই করতে আদেশ করি।’ সুতরাং আমার আপনার ব্যাপারে ধারণা করো না যে, আমি তোমাদের জন্য কষ্ট করছি। এই কথা থেকে যা বোঝা যায়, যখন তাঁরা রাসুল ﷺ-এর জবাইয়ের আদেশ শুনলেন এবং বলা, ‘আমাদের জন্য আপনি নিজে কষ্ট করবেন না!’ তখন নবিজি ﷺ উত্তরে বললেন, ‘তোমরা ধারণা করো না যে, আমরা তোমাদের জন্য বকরি জবাই করছি।’ পূর্বের ঘটনা থেকে এটিই বুঝা আসে।৪৬
৫. সাফিদের মাঝে গৃহকর্তার ক্ষমতা ও ইমামতি রক্ষার মাধ্যমে তার অনুভূতির প্রতি লক্ষ রাখা
আবু মাসউদ আল-আনসারি ﷺ থেকে বর্ণিত, নবিজি ﷺ বলেছেন :
يَؤُمُّ الْقَوْمَ أَقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللَّهِ، وَأَقْدَمُهُمْ قِرَاءَةً، فَإِنْ كَانَتْ قِرَاءَتُهُمْ سَوَاءً، فَلِيَؤُمَّهُمْ أَقْدَمُهُمْ هِجْرَةً، فَإِنْ كَانُوا فِي الْهِجْرَةِ سَوَاءً، فَلِيَؤُمَّهُمْ أَكْبَرُهُمْ سِنًّا
‘আল্লাহর কিতাব কুরআন মজিদের জ্ঞান যার সবচেয়ে বেশি এবং যে কুরআন তিলাওয়াতে সুন্দরভাবে করতে পারে, সে-ই সালাতে জামাতে ইমামতি করবে। সুন্দর কিরাআতের ব্যাপারে সবাই যদি সমকক্ষ হয়, তাহলে তাদের মধ্যে যে হিজরতের ব্যাপারে সবচেয়ে অগ্রগামী, সে-ই ইমামতি করবে। হিজরতের ব্যাপারেও যদি সবাই সমকক্ষ হয়, তাহলে তাদের মধ্যে যে বয়সে প্রবীণ, সে-ই ইমামতি করবে।’
গৃহকর্তা হলো তার ঘরের ক্ষমতার অধিকারী। আর ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তির সামনে কেউ অগ্রসর হবে না। আর ইমাম হলো মুসলিমদের মাঝে ক্ষমতার অধিকারী। সুতরাং গৃহকর্তার অনুমতি ব্যতীত কেউ ইমামতি করতে পারবে না। এ কারণেই নবিজি ﷺ পূর্বের হাদিসের শেষে উল্লেখ করেছেন :
وَلَا تَؤُمَّنَّ الرَّجُلَ فِي سُلْطَانِهِ، وَلَا فِي أَهْلِهِ، وَلَا تَجْلِسْ عَلَى تَكْرِمَتِهِ فِي بَيْتِهِ إِلَّا أَنْ يَأْذَنَ لَكَ، أَوْ بِإِذْنِهِ
‘কোনো ব্যক্তি যেন কারও নিজের বাড়িতে (বাড়ির কর্তাকে বাদ দিয়ে) কিংবা কারও ক্ষমতাধীন এলাকায় নিজে ইমামতি না করে। আর কেউ যেন কারও বাড়িতে গিয়ে অনুমতি ছাড়া তার বিছানায় না বসে।’৪৭
এই হাদিসের কাছাকাছি অর্থে আরেকটি হাদিস আছে, যেখানে বলা হয়েছে, বাহনের মালিকই বাহনের সামনে বসার ব্যাপারে অধিক হকদার। বুরাইদা ﷺ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন :
بَيْنَمَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمْشِي إِذْ جَاءَهُ رَجُلٌ وَمَعَهُ حِمَارٌ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، ارْكَبْ، وَتَأَخَّرَ الرَّجُلُ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا، أَنْتَ أَحَقُّ بِصَدْرِ دَابَّتِكَ مِنِّي إِلَّا أَنْ تَجْعَلَهُ لِي قَالَ: قَدْ جَعَلْتُهُ لَكَ، فَرَكِبَ
‘একদা নবিজি ﷺ পায়ে হাঁটছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি একটি গাধা নিয়ে এসে বলল, “হে আল্লাহর রাসুল, আরোহণ করুন।” এ বলে লোকটি পেছনে সরে গেল। রাসুল ﷺ বললেন, “না, আমার চেয়ে তুমিই তোমার দিকে বসার অধিক হকদার। অবশ্য তুমি আমার জন্য তা ছেড়ে দিলে ভিন্ন কথা।” সে বলল, “আমি তা আপনার জন্য ছেড়ে দিলাম।” অতঃপর তিনি তাতে আরোহণ করলেন।’৪৮
৬. গৃহকর্তাকে বিরক্ত না করার মাধ্যমে তার অনুভূতির প্রতি খেয়াল রাখা
আনাস বিন মালিক ﷺ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যখন রাসুল ﷺ জয়নাব বিনতে জাহাশকে বিয়ে করেন, তখন তিনি লোকদের দাওয়াত করলেন। লোকেরা আহারের পর বসে কথাবার্তা বলতে লাগল। তিনি উঠে যেতে চাইলে উঠলেন। এ অবস্থা দেখে তিনি উঠে যাওয়ার পর যারা উঠবার তারা উঠে গেল। কিন্তু তিন ব্যক্তি বসেই থাকল। নবিজি ﷺ ঘরে প্রবেশের জন্য ফিরে এসে দেখেন, তারা তখনো বসেই আছে। অতঃপর তারাও উঠে গেল। আমি গিয়ে রাসুল ﷺ-কে তাদের চলে যাওয়ার সংবাদ দিলাম। তারপর তিনি এসে প্রবেশ করলেন। এরপর আমি প্রবেশ করতে চাইলে তিনি আমার ও তাঁর মাঝে পর্দা ঝুলিয়ে দিলেন। তখন আল্লাহ তাআলা এই আয়াতগুলো অবতীর্ণ করেন :
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتَ النَّبِيِّ إِلَّا أَن يُؤْذَنَ لَكُمْ إِلَىٰ طَعَامٍ غَيْرَ نَاظِرِينَ إِنَاهُ وَلَٰكِنْ إِذَا دُعِيتُمْ فَادْخُلُوا فَإِذَا طَعِمْتُمْ فَانتَشِرُوا وَلَا مُسْتَأْنِسِينَ لِحَدِيثٍ ۚ إِنَّ ذَٰلِكُمْ كَانَ يُؤْذِي النَّبِيَّ فَيَسْتَحْيِي مِنكُمْ ۖ وَاللَّهُ لَا يَسْتَحْيِي مِنَ الْحَقِّ ۚ وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِن وَرَاءِ حِجَابٍ ۚ ذَٰلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ ۚ وَمَا كَانَ لَكُمْ أَن تُؤْذُوا رَسُولَ اللَّهِ وَلَا أَن تَنكِحُوا أَزْوَاجَهُ مِن بَعْدِهِ أَبَدًا ۚ إِنَّ ذَٰلِكُمْ كَانَ عِندَ اللَّهِ عَظِيمًا
“হে ইমানদারগণ, তোমরা নবির ঘরে প্রবেশ করো না। অবশ্য তোমাদেরকে খাদ্য গ্রহণের জন্য অনুমতি দেওয়া হলে সেখানে প্রবেশ করতে পারো; তবে তা এত আগে নয় যে, খাবার খাওয়ার সময় হওয়ার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকবে। বরং তোমাদেরকে যখন ডাকা হবে, তখনই প্রবেশ করবে। এরপর যখন খাওয়া শেষ করবে, তখন বেরিয়ে পড়বে। কথাবার্তায় মশগুল হবে না। তাতে নবির কষ্ট হয়; কিন্তু তিনি তোমাদের (উঠিয়ে দিতে) সংকোচবোধ করেন। তবে আল্লাহ সত্যকথা বলতে সংকোচবোধ করেন না। আর তোমরা নবির স্ত্রীদের কাছে কোনো জিনিস চাইলে তা পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তর এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। আল্লাহর রাসুলকে কষ্ট দেওয়া এবং তাঁর পরে তাঁর স্ত্রীদেরকে কখনো বিয়ে করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়। তোমাদের এ রকম কাজ আল্লাহর কাছে একটা গুরুতর অপরাধ।”’৪৯,৫০
ইমাম বুখারি আরেকটি বর্ণনায় বিষয়টিকে এভাবে তুলে ধরে টাকায় সংযুক্ত করেছেন, ‘কিন্তু লোক রয়ে গেল এবং তারা আলাপ করতে লাগল। তিনি (আনাস ﷺ) বলেন, (وَجَعَلْتُ أَغْتَمُّ) “আমি বিরক্তিবোধ করছিলাম।”’৫১
ইবনে হাজার ﷺ বলেন, ‘(وَجَعَلْتُ أَغْتَمُّ) শব্দটি الغَم (পেরেশানি) শব্দ থেকে নির্গত। আর এর কারণ হলো, তিনি নবিজি ﷺ-এর লজ্জার ব্যাপারটি পেরেশানিতে পড়ছিলেন। যার ফলে নবিজি ﷺ তাদেরকে উঠে যাওয়ার ব্যাপারে আদেশ করেননি।’৫২
ইবানে বাত্তাল ﷺ বলেছেন, ‘এতে এ বিষয়টি বোঝা যায় যে, কারও জন্য অনুমতি ছাড়া অন্যের ঘরে প্রবেশ করা উচিত নয় এবং যে বিষয়ে তাকে অনুমতি প্রদান করা হয়েছে, তা পূর্ণ করার পর সেখানে দীর্ঘ সময় বসে থাকাও উচিত নয়; যেন গৃহকর্তাদের কষ্ট না হয় এবং তাদের জন্য প্রয়োজন পূরণে প্রতিবন্ধক না হয়। এতে আরও বোঝা যায় যে, গৃহকর্তা যদি তার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে সে নিজের বিরক্তি প্রকাশ করবে এবং ওই লোকের অনুমতি ছাড়াই উঠে যাবে; যেন লোকটিও বুঝতে পারে। আর যদি গৃহকর্তা নিজে গৃহ থেকে বের হয়ে যায়, তাহলে যাকে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করা হয়েছিল, সে নতুন অনুমতি ব্যতীত সেখানে অবস্থান করতে পারবে না। আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।’৫৩
ইবনে হাজার ﷺ আরও বলেন :
‘ইবনে মারদাওয়াইহ ইবনে আব্বাস ﷺ-এর হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “জনৈক লোক নবিজি ﷺ-এর নিকট প্রবেশ করল। সে নিজের অবস্থানে দীর্ঘ করল। ফলে নবিজি ﷺ তিনবার তার থেকে বের হলেন; যেন সে বের হয়ে যায়। কিন্তু লোকটি তা করল না। এরপর উমর ﷺ প্রবেশ করে রাসুল ﷺ-এর চেহারায় বিরক্তি দেখে বললেন। তখন তিনি লোকটিকে বললেন, “সম্ভবত তুমি নবিজি ﷺ-কে কষ্ট দিয়েছ।” নবিজি ﷺ বললেন, “আমি তোমার উদ্দেশ্যি; যেন সে আমার অনুসরণ করে। কিন্তু সে তা করেনি।”’৫৪ তখন উমর ﷺ বললেন, “হে আল্লাহর রাসুল, যদি আপনি পর্দা ব্যবহার করতেন। কারণ, আপনার স্ত্রীগণ অন্য সব স্ত্রীর মতো নয়। পর্দা তাদের হৃদয়কে বেশি পবিত্র রাখবে।” তখন পর্দার আয়াত নাজিল হয়।’৫৫
আবু ওরাইহ আল-কারি ﷺ বলেন, রাসুল ﷺ বলেছেন :
مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ جَائِزَتَهُ يَوْمٌ وَلَيْلَةٌ، وَالضِّيَافَةُ ثَلَاثَةُ أَيَّامٍ، فَمَا بَعْدَ ذَلِكَ فَهُوَ صَدَقَةٌ، وَلَا يَحِلُّ لَهُ أَنْ يَثْوِيَ عِنْدَهُ حَتَّى يُحْرِجَهُ
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। মেহমানের প্রাপ্য হলো একদিন ও একরাত (ভালোভাবে মেহমানদারি করা)। আর তিন দিন সাধারণ মেহমানদারি। আর তার চেয়ে অধিক হলো তা হলো সদকা। মেজবানকে কষ্ট দিয়ে তার কাছে মেহমানের অবস্থান করা বৈধ নয়।’৫৬
ইবনে হাজার ﷺ বলেন :
‘(حَتَّى يُحْرِجَهُ) শব্দটি الحَرَج থেকে গঠিত হয়েছে, এর অর্থ হলো সংকীর্ণ অবস্থান করা। ইমাম খাত্তাবি ﷺ সহিহ মুসলিমের এক বর্ণনায় উল্লেখ করেন : (حَتَّى يُؤْثِمَهُ) অর্থাৎ তাকে গুনাহে পতিত করে; কারণ, তার দীর্ঘ অবস্থানের ফলে মেজবান তার গিবত করতে পারে বা তাকে কষ্ট দেবে এমন কোনো বিষয় তার সামনে নিয়ে আসতে পারে অথবা তার ব্যাপারে মেজবান মন্দ ধারণা করতে পারে। এ সবগুলো তখনই প্রযোজ্য হবে, যখন গৃহকর্তার অবস্থান ব্যাপারে অনুমতি না থাকবে; যে ক্ষেত্রে আগন্তুক বেশি অবস্থানের চেয়ে নেয়া বা তার ধারণায় প্রবল হবে যে, মেজবান এটি অপছন্দ করবে না, সেটি ভিন্ন বিষয়। আর এটি বোঝা যায় এ কথা থেকে : (حَتَّى يُخْرِجَهُ) “যতক্ষণ না তাকে কষ্ট ফেলে দেয়।” কারণ, এ থেকে বোঝা যায় যে, যখন সমস্যা কেটে যাবে, তখন অবস্থান জায়েজ হবে। ইবনে বাত্তাল ﷺ বলেন, “তার (মেহমানের) জন্য তিন দিন অবস্থানের পর থাকাটি অপছন্দনীয় করা হয়েছে; যেন প্রতিদান পাওয়ার পর সে মেজবানকে কষ্ট না দেয় এবং তাকে গুনাহে লিপ্ত না করে।”’৫৭

টিকাঃ
৩৫. সূরা আর-রহমান, ৫৫ : ৬০।
৩৬. আল-ইলাম লি ইবনিল মুলাক্কিন : ৬/৪২০।
৩৭. সহিহুল বুখারি : ১৮২৫।
৩৮. ফাতহুল বারি : ৪/৩৪।
৩৯. আল-ইলাম লি ইবনিল মুলাক্কিন : ৬/৪১৯।
৪০. সহিহুল বুখারি : ৩৭৬৮, সহিহু মুসলিম : ২০৫৪।
৪১. শুআবুল ইমান : ৯১৫৪।
৪২. সহিহু মুসলিম : ২০৩৮।
৪৩. সহিহুল বুখারি : ৬১৩৮।
৪৪. শারহুন নববি আলা মুসলিম : ১৩/২১৩-২১৫।
৪৫. মুসনাদু আহমাদ : ১৬৩৮৪।
৪৬. আবদুল মালেক : ১/১৬৪ (ঈষৎ পরিবর্তিত)।
৪৭. মুসনাদু আহমাদ : ৯৭৯৩, সুনানু আবি দাউদ : ৪৯৩১।
৪৮. ফাতহুল বারি : ১১/৮৫।
৪৯. আল-মুগনি আন হামলিল আসফার : ৫৩২১।
৫০. সহিহুল বুখারি : ৫১৬৪, সহিহু মুসলিম : ১৪২৮।
৫১. সহিহুল বুখারি : ৫১৬৩।
৫২. ফাতহুল বারি : ৯/২২৮।
৫৩. ফাতহুল বারি : ১১/৮৫।
৫৪. আল-মুজামুল আওসাত : ৬৬২১।
৫৫. ফাতহুল বারি : ৯/৩৪১।
৫৬. সহিহুল বুখারি : ৬১৩৫।
৫৭. ফাতহুল বারি : ১০/৫৫০।

📘 অপরের অনুভূতির প্রতি লক্ষ রেখো > 📄 তৃতীয়ত, শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে অপরের অনুভূতির প্রতি লক্ষ রাখা

📄 তৃতীয়ত, শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে অপরের অনুভূতির প্রতি লক্ষ রাখা


১. প্রশ্নকারীর অনুভূতির প্রতি লক্ষ রাখা, যখন সে প্রশ্ন করতে লজ্জাবোধ করে এবং প্রশ্নের সময় মুফতির দিকটিরও খেয়াল রাখা
মুসলিমের জন্য আবশ্যক হলো, তার দ্বীনি বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত শরয়ি বিধানগুলো সম্পর্কে অবগত হওয়া। যে তার ওপর আবশ্যক বিষয়গুলো সম্পর্কে অজ্ঞ, তার জন্য ইলম অর্জন করা জরুরি। আর ইলম অর্জনের একটি উপায় হলো, আলিমদের প্রশ্ন করা। ফরজসমূহ বা যে বিধানের ব্যাপারে জ্ঞান না থাকে, সে ব্যাপারে প্রশ্ন করা ওয়াজিব। কারণ, এই অজ্ঞতা অচিরেই হারামে লিপ্ত হওয়ার কারণ হবে। কিন্তু যদি প্রশ্নকারী কোনো কারণে প্রশ্ন করতে লজ্জাবোধ করে, তাহলে তার জন্য আবশ্যক হলো, ফতোয়া জিজ্ঞাসার জন্য উপযুক্ত কোনো মাধ্যম গ্রহণ করা। তবে এই ক্ষেত্রে শরয়ি আবশ্যগুলোর প্রতি লক্ষ রাখতে হবে।
আলিম ও মুফতির জন্য মানুষের অনুভূতির প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি এবং যথাসম্ভব চেষ্টা করবে তাদেরকে জটিল কোনো পরিস্থিতিতে না ফেলতে। আলি বিন আবু তালিব ﷺ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি এমন লোক ছিলাম, যার সব সময় মজি বের হতো। কিন্তু রাসুল ﷺ-এর কন্যার সাথে দাস্পত্য সম্পর্ক থাকার কারণে আমি ব্যাপারটি তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে লজ্জা করছিলাম। তাই মিকদাদ বিন আসওয়াদকে প্রশ্ন করতে বললাম। নবিজি ﷺ বলেন, (فِيهِ الْوُضُوءُ) “এ ক্ষেত্রে অজু করতে হবে।”৫৮ আরেকটি বর্ণনায় আছে, (يَغْسِلُ ذَكَرَهُ) “তুমি অজু করবে এবং তোমার লজ্জাস্থান ধুয়ে নেবে।”’৫৯
ইবনে হাজার ﷺ বলেন, ‘এখানে সামাজিকভাবে লজ্জার বিষয়গুলো সরাসরি উপস্থাপনে পরোক্ষতার ক্ষেত্রে আদবের ব্যবহার, জামাইদের সাথে উত্তম আচরণ এবং আত্মীয়-স্বজনের উপস্থিতিতে স্ত্রীর সাথে সহবাস ইত্যাদির সাথে সম্পৃক্ত বিষয়গুলোর আলোচনা পরিহারের কথা উল্লেখ হয়েছে। এর মাধ্যমে মুসান্নিফ ﷺ কিতাবুল ইলমে দলীল পেশ করেছেন যে লজ্জাকে অন্যকে প্রশ্নের আদেশ করবে; কারণ, এতে দুটি কল্যাণ একত্রিত হবে : লজ্জার ব্যবহার এবং বিধান জানার ক্ষেত্রে শিথিলতা না করা।’৬০
ইমাম বুখারি ﷺ তার সহিহ বুখারিতে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন :
بَابُ الْحَيَاءِ فِي الْعِلْمِ
‘ইলমের ক্ষেত্রে লজ্জার অধ্যায়’
মুজাহিদ ﷺ বলেন, ‘লজ্জাশীল বা অহংকারী কেউ ইলম শিখতে পারে না।’ আয়েশা ﷺ বলেন, ‘আনসারি নারীগণ কতই না উত্তম নারী! লজ্জা তাদের জন্য দ্বীনের জ্ঞান অর্জনে প্রতিবন্ধক হয় না।’৬১,৬২
ইবনে হাজার ﷺ বলেন, (بَابُ الْحَيَاءِ) অর্থাৎ লজ্জার বিধান। পেছনে গত হয়েছে যে, লজ্জা হলো ইমানের অংশ। আর এটি শরিয়তসম্মত, যা বড়দের সম্মান ও মর্যাদার কারণে হয়ে থাকে। আর এটি প্রশংসনীয় বিষয়। আর যা কোনো শরয়ি প্রয়োজনের কারণ হয়, তা নিন্দনীয় এবং তা শরিয়তসম্মত কোনো লজ্জা নয়। এটি হলো দুর্বলতা ও হীনতা। এ এমনই লজ্জাই উদ্দেশ্য : কোনো লজ্জাশীল ইলম শিখতে পারে না। যেন তিনি শিক্ষার্থীদের অক্ষমতা ও অহংকার দূর করতে উৎসাহিত করছেন; এই দুটির প্রত্যেকটি শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধ তৈরি করে।৬৩
২. অজ্ঞদের অনুভূতির প্রতি লক্ষ রাখা ও তাদের সাথে কোমল আচরণ করা
শিক্ষার বার্তা একটি মহৎ বার্তা। এটি নবিগণের সবচেয়ে বড় কাজ। এটি দ্বীনের প্রচার-প্রসারে সবচেয়ে উত্তম মাধ্যম।
শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ রাখা উচিত, তার একটি হলো, শিক্ষাদানকালীন ছাত্রের প্রতি কোমলতা প্রদর্শন। কেননা, আচরণ, দয়া ও চিন্তাভাবনায় মানুষ বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। তাই শিক্ষকের জন্য এসব পার্থক্যের প্রতি খেয়াল রাখা উচিত এবং শিক্ষার্থীর সাথে কোমল আচরণ করা উচিত। বিশেষ করে যখন শিক্ষার্থী কোনো ভুলে পতিত হয়, তখন তার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখবে। কারণ, ভুলকারীর মন অধিকাংশ সময় ভাঙা থাকে। আনাস ﷺ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন :
‘একদা আমরা রাসুল ﷺ-এর সাথে মসজিদে ছিলাম। ইত্যবসরে এক বেদুঈন আসলো। সে মসজিদে দাঁড়িয়ে পেশাব করতে লাগল। তা দেখে রাসুল ﷺ-এর সাহাবিগণ বললেন, “থামো, থামো!” রাসুল ﷺ বললেন :
لَا تُزْرِمُوهُ دَعُوهُ
“তোমরা তাকে বাধা দিয়ো না, তাকে ছেড়ে দাও।”’
এরপর রাসুল ﷺ তাকে ডেকে এনে বললেন :
إِنَّ هَذِهِ الْمَسَاجِدَ لَا تَصْلُحُ لِشَيْءٍ مِنْ هَذَا الْبَوْلِ، وَلَا الْقَذَرِ إِنَّمَا هِيَ لِذِكْرِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ، وَالصَّلَاةِ وَقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ
“এটা হলো মসজিদ। এখানে পেশাব করা কিংবা ময়লা আবর্জনা ফেলা যায় না। বরং এ হলো আল্লাহর জিকির, সালাত আদায় ও কুরআন পাঠ করার স্থান।”
অথবা রাসুল ﷺ যেভাবে বলেছেন, অনরূপ। এরপর রাসুল ﷺ সবার মধ্য থেকে এক ব্যক্তিকে এক বালতি পানি আনতে আদেশ করলেন। তারপর সে এক বালতি পানি আনল এবং তা পেশাবের ওপর ঢেলে দিল।’৬৪
ইবনে হাজার ﷺ বলেন :
‘এতে এই বিষয়টি রয়েছে যে, অজ্ঞদের সাথে কোমল আচরণ করতে হবে; যদি তার মধ্যে অকর্মন্যতা না থাকে, তাহলে কঠোরতা না করে যেভাবে তাকে শিক্ষা দেওয়া দরকার, সেভাবে শিক্ষা দেবে। বিশেষ করে যার জন্য বস্তুত্ব প্রয়োজন, তার জন্য বিষয়টি আরও বেশি খেয়াল রাখতে হবে। এখানে নবিজি ﷺ-এর দয়া ও উত্তম চরিত্রের ব্যাপারটি ফুটে উঠেছে। ইবনে মাজাহ ও ইবনে হিব্বান ﷺ আবু হুরাইরা ﷺ-এর হাদিসে উল্লেখ করেন :
‘বেদুঈন লোকটি ইসলামি জ্ঞান অর্জনের পর রাসুল ﷺ-এর কাছে গিয়ে বলল, “আমার পিতামাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক।” তিনি তাকে তিরস্কারও করেননি এবং বকাও দিলেন না।’
প্রিয় মুসলিম ভাই, আপনি কি ভুলকারীর ব্যাপারে রাসুল ﷺ-এর এই মহান আদর্শের প্রতি খেয়াল করেছেন? বিশেষ করে এমন অজ্ঞের ব্যাপারে তাঁর আচরণ কেমন ছিল, যে বুঝতে পারছে না যে, সে ভুল করছে এবং তার ভুলের বিশালতাও উপলব্ধি করতে পারেনি। সে নিজের কাজকর্মের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপও করেনি; সুতরাং আমরা যেন রাসুল ﷺ-এর জীবনকে উত্তম আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করি।
৩. যে ভুলে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, উপদেশ ও শিক্ষাদানের সময় তার অনুভূতির প্রতি লক্ষ রাখা
যে একটি বিষয় সব সময় করে আসছে এবং তার সাথে একটি সম্পর্ক হয়ে গেছে এবং সে এটার ওপর অবিচল রয়েছে, তার জন্য বিষয়টি পরিত্যাগ করা কঠিন বটে। তা পরিত্যাগের জন্য তাকে সব সময় ইমান ও দৃঢ় শক্তির অধিকারী হতে হবে; মুক্ত হতে হবে নফসের কামনা-বাসনা থেকে এবং কাজের ক্ষেত্রে সর্বদা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের কাছে তাৎক্ষণিক সাড়া প্রদানের তওফিয়ত প্রাপ্ত হতে হবে।৬৫
এ কারণেই মানুষকে উপদেশ ও শরণ করানোর ক্ষেত্রে দারিদ্রকে প্রজ্ঞা পরিচয় দিতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে নবিজি ﷺ-এর সুন্নাহর অনুসরণ করতে হবে। মানুষের অবস্থা অনুযায়ী তাদেরকে শরিয়তের বিকল্প ব্যবস্থার দিকে দিক-নির্দেশনা দিতে হবে। এটিকে বলা হয় তাহলিয়া (সজ্জিত করা)-এর নীতি অবলম্বন। অর্থাৎ শরিয়তের বিপরীত জিনিস থেকে খালি হয়ে যাবে এবং ইমান ও নেক আমলের মাধ্যমে সজ্জিত হবে।
সাইদ বিন আবুল হাসান ﷺ বলেন, ‘জনৈক লোক ইবনে আব্বাস ﷺ-এর নিকট এসে বলল, “আমি এমন এক লোক, যে এই ছবিগুলো অঙ্কন করি। এ ব্যাপারে আমাকে ফতোয়া দিন?” তিনি বললেন, “তুমি আমার কাছে এসো!” সে তাঁর কাছে এল। এরপর তিনি বললেন, “তুমি আমার কাছে এসো।” সে আরও কাছে এল। একপর্যায়ে তিনি তার মাথার ওপর নিজের হাত রেখে বললেন, “আমি তোমাকে রাসুলুল্লাহ ﷺ থেকে যা শুনেছি, তা-ই বর্ণনা করছি। আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি :
كُلُّ مُصَوِّرٍ فِي النَّارِ، يَجْعَلُ لَهُ، بِكُلِّ صُورَةٍ صَوَّرَهَا، نَفْسًا فَتُعَذِّبُهُ فِي جَهَنَّمَ
“প্রত্যেক ছবি প্রস্তুতকারী জাহান্নামের অধিবাসী হবে। তৈরিকৃত প্রতিটি ছবিতে জীবন দেওয়া হবে, আর জাহান্নামে তাকে ওইগুলো আজাব দিতে থাকবে।”’
তিনি আরও বললেন : (وَمَا لَا نَفْسَ لَهُ) “একান্তই যদি করতে হয়, তাহলে গাছপালা এবং প্রাণহীন বস্তুর ছবি অঙ্কন করো।”’৬৬
ইবনে আব্বাস ﷺ-এর কথাটি চিন্তা করে দেখুন, ‘আমি তোমাকে রাসুলুল্লাহ ﷺ থেকে যা শুনেছি, তা-ই বর্ণনা করছি।’ এটি ছিল ইবনে আব্বাস ﷺ-এর প্রজ্ঞার পরিচয়। কারণ, তিনি প্রশ্নকারীর সামনে সে বিষয়টি প্রস্তুত করেছেন, যার ফলে তার হৃদয় সে ফতোয়া গ্রহণ করবে, যার মাধ্যমে তার প্রিয় ও অত্যন্ত বিষয়টি তার জন্য হারাম করে দেওয়া হবে। ইবনে আব্বাস ﷺ তাকে নিজের পক্ষ থেকে ফতোয়া দেননি। বরং ফতোয়াকে সাহায্য করে দিয়েছেন রাসুল ﷺ-এর দিকে। এরপর তিনি শরিয়তসম্মত বিকল্প পদ্ধতি বলে দিয়েছেন। এটিই হলো ফতোয়ার জ্ঞান।
শরিয়তের নীতিমালা থেকে এটি সর্বজনবিদিত যে, তা যেকোনো হারাম উপকরণের পরিবর্তে বিকল্প সিস্টেম পেশ করে দেয়। জিনা হারাম করে বিয়েকে হালাল করে দেওয়া হয়েছে। সুদকে হারাম করে ব্যবসাকে হালাল করা হয়েছে। যেমন শূকর, মৃতপ্রাণী ও প্রত্যেক হিংস্র প্রাণী হারাম করা হয়েছে, তখন চতুষ্পদ জন্তু ও অন্যান্য কিছু প্রাণী জবাই হালাল করে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য সকল বিধানের ব্যাপারটিও এমনই। এরপর যদি কোনো ব্যক্তি হারামে পতিত হয়, তাহলে শরিয়ত তাকে তাওবা ও কাফফারার মাধ্যমে তা থেকে বের হওয়ার সিস্টেম বলে দিয়েছে; যেমনটি কাফফারাসংক্রান্ত অধ্যায়গুলোতে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং দায়িত্ব হলো, বিকল্প বিষয় পেশ করা এবং শরয়ি বিষয়সমূহের ব্যাপারে পরিপূর্ণরূপে শরিয়তের অনুসরণ করা।
এখানে এই বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করা উচিত যে, বিকল্প পেশ করতে হবে এবং সামর্থ্য অনুযায়ী। অনেক সময় হতে পারে বিষয়টি ভুল এবং তা থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক; কিন্তু তার জন্য উপযুক্ত কোনো বিকল্প পাওয়া যাচ্ছে না—হয়তো অজ্ঞতা বিশৃঙ্খল হওয়ার কারণে মানুষ শরিয়ত থেকে দূরে সরে পড়ার কারণে, কিংবা সৎকাজের আদেশকারী ও অসৎকাজে বাধাদানকারী কিছু স্মরণ করতে পারছে না বা অজ্ঞতার ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট বিকল্প পদ্ধতিগুলোর ব্যাপারে কোনো ধারণা নেই—যদি তার কাছে এমন বিকল্প কিছু না থাকে, যে এ ব্যাপারে বলবে বা নির্দেশনা দেবে, তাহলে এই অবস্থায় ওই লোকটি ভেঙে পড়বে এবং ভুল নির্জীবিত হবে। এমনটি সাধারণত আর্থিক লেনদেন ও বিনিময়ের ব্যবস্থায় হয়ে থাকে, যেমন ইসলামি সমাজব্যবস্থা থেকে শরিয়তের সাথে সাংঘর্ষিক এমন বিষয়গুলো আমদানি করা হয়েছে। আর মুসলিমদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা হলো শরিয়তসম্মত পদ্ধতির অধিকার করা বা ব্যাপক করে দিতে না পারা। আর এই দুর্বলতা ও অক্ষমতার মাঝে। আল্লাহ তাআলার সিস্টেম বিকল্প পদ্ধতি এবং পথ বিদ্যমান আছে, যা সমস্যা দূর করবে এবং মুসলিমদের থেকে কষ্ট লাঘব করবে। সেগুলোর ব্যাপারে যে জানতে পেরেছে, সে তো জেনছে; আর যে রয়েছে, সে অজ্ঞ রয়েছে।৬৭
৪. ছোট ছোট তালিকা ইলমের প্রতি লক্ষ রাখা, পরিবার থেকে যারা দীর্ঘ সময় দূরে রয়েছে
মালিক বিন হুয়াইরিস ﷺ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন :
‘আমার নবিজি ﷺ-এর কাছে গেলাম। আমরা সবাই সমবয়সী যুবক ছিলাম। আমরা বিশ দিন রাত তাঁর কাছে অবস্থান করলাম। রাসুল ﷺ ছিলেন দয়ালু কোমল হৃদয়ের অধিকারী। তিনি যখন অনুমান করলেন যে, আমরা স্ত্রী-পরিবারের প্রতি ঝুঁকে পড়েছি বা আসক্ত হয়ে পড়েছি, তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আমরা বাড়িতে কাদের রেখে এসেছি? আমরা তাঁকে তা জানালাম। তিনি বললেন :
ارْجِعُوا إِلَى أَهْلِيكُمْ، فَأَقِيمُوا فِيهِمْ وَعَلِّمُوهُمْ وَمُرُوهُمْ
“তোমরা তোমাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাও এবং তাদের মাঝে অবস্থান করো। আর তাদের (দ্বীন) শিক্ষা দাও এবং সৎকাজের) আদেশ করো।”’
তিনি তাদের প্রতি দয়াবশত হয়ে এবং পরিবারদের ব্যাপারে তাদের আগ্রহ ও অনুভূতির প্রতি লক্ষ রেখে তাদের ফিরে যেতে আদেশ করেছেন। এবং তাদের পরিবারের লোকদের মাঝে ইলম ছড়িয়ে দেওয়া, তাদেরকে ইসলামের বিধিবিধান, আদব ও শরয়ি ইলম শিক্ষা দিতে আদেশ করেছেন।
৫. যখন কেউ করণীয় কোনো বিষয় ভুলে যায়, তখন তার অনুভূতির প্রতি লক্ষ রাখা
মুহাম্মাদ বিন হুমাইদ ﷺ বলেন, ‘আব্দুল্লাহ বিন মুবারকের নিকট এক লোক হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলেনি। ইবনে মুবারক তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “হাঁচিদাতা হাঁচি দিয়ে কী বলবে?” সে বলল, “আলহামদুলিল্লাহ বলবে।” তিনি তাকে বললেন, “আল্লাহ তোমার ওপর দয়া করুন।” আমরা সবাই তার এত সুন্দর শিষ্টাচার বিস্মিত হলাম।’
এই হলো ইবনুল মুবারকের অবস্থান। তিনি হাঁচিদাতাকে এমন করেছেন তার দুর্বলতা দূর করার জন্য। যেন সে জানতে না যে, হাঁচি দিলে কী বলতে হয় অথবা স্বভাবত সে ভুলে গেছে বা হতে পারে সে নওমুসলিম। এটি হলো আল্লাহ তাআলার দাপ্তরিক ক্ষেত্রে প্রজ্ঞা। আল্লাহ তাআলা বলেন :
يُؤْتِي الْحِكْمَةَ مَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ أُوتِيَ خَيْرًا كَثِيرًا ۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ
‘তিনি যাকে দান প্রজ্ঞা দান করেন। আর যাকে প্রজ্ঞা দান করা হয়, তাকে প্রভূত কল্যাণ করা হয়। উপদেশ তারাই গ্রহণ করে, যারা জ্ঞানবান।’৭০

টিকাঃ
৫৮. সহিহুল বুখারি : ১৩২।
৫৯. সহিহুল বুখারি : ২৬১।
৬০. ফাতহুল বারি : ১/৩৮১।
৬১. সহিহুল বুখারি : ১/১০৫।
৬২. হিলইয়াতুল আউলিয়া : ২/২২০।
৬৩. ফাতহুল বারি : ১/২২৯।
৬৪. সহিহুল বুখারি : ২২১, সহিহু মুসলিম : ২৮৫।
৬৫. ফাতহুল বারি : ১/৩২৯।
৬৬. সহিহুল বুখারি : ২২২৫, সহিহু মুসলিম : ২১৯০।
৬৭. আল-আদাবুন নাবায়িয়্যাহ ফি তিয়ামিল মাআয আখতারিন নাস : ৫০।

📘 অপরের অনুভূতির প্রতি লক্ষ রেখো > 📄 চতুর্থত, অভাবীদের অনুভূতির প্রতি খেয়াল করা

📄 চতুর্থত, অভাবীদের অনুভূতির প্রতি খেয়াল করা


এই অধ্যায়ে কোনো কন্টেন্ট এখনো যোগ করা হয়নি।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন