📘 অন্তরের ব্যাধি সমূহ ও তার চিকিৎসা > 📄 আল্লাহকে ভালবাসাই হল অন্তরের সহজাত প্রবৃত্তি

📄 আল্লাহকে ভালবাসাই হল অন্তরের সহজাত প্রবৃত্তি


অন্তরকে কেবল আল্লাহ'র ইবাদাতের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। আর এটিই হল সহজাত প্রকৃতি (ফিতরাত), যেটির উপরে আল্লাহ তার গোলামদের সৃষ্টি করেছেন, যেমনটি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন –

"প্রত্যেক শিশু ফিতরাতের উপর ভুমিষ্ট হয়ে থাকে। এরপর তার পিতামাতা তাকে ইয়াহুদি, খ্রিস্টান ও মাজুসি করে গড়ে তোলে। যেমনটি বকরীর নিখুঁত বাচ্চা পয়দা হয়, এরপর বকরীর মালিক তার কান কেটে দেয়।”

এরপর আবু হুরাইরা (রাঃ) বললেন, যদি চাও আল্লাহ'র এই আয়াত তিলাওয়াত করো -
فِطْرَتَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا
"যে প্রকৃতি অনুযায়ী তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন; আল্লাহ'র সৃষ্টিতে কোন পরিবর্তন নেই।” (সুরা রুম, ৩০: ৩০)

সুতরাং আল্লাহ তার গোলামের সহজাত স্বভাব করে দিয়েছেন তাকে ভালোবাসার জন্য আর একমাত্র তারই ইবাদাত করার জন্য। সুতরাং, যদি সহজাত স্বভাবের বিকৃতি সাধন ছাড়াই এটি কারো থেকে চলে যায় তবে এ ব্যাপারে আল্লাহ'ই ভালো জানেন, একমাত্র তাকেই ভালবাসতে হবে। কিন্তু অন্তরের অসুস্থতার কারনে সহজাত প্রবৃত্তি বিকৃত হয়ে থাকে, যেমন - পিতামাতা কর্তৃক একে ইয়াহুদি বা খ্রিস্টান বানানো; এমনকি যদিও এটি আল্লাহ'র ইচ্ছা ও পূর্বনির্ধারণের কারনে হয়, যেমনটি শরীরের পরিবর্তন ঘটে অঙ্গচ্ছেদের দ্বারা। কিন্তু এর পরেও এটি সম্ভব যে অন্তর এর সহজাত স্বভাবে ফিরে আসবে যদি আল্লাহ সে ব্যক্তির জন্য সহজ করে দেন - যে ব্যক্তি সহজাত স্বভাবে ফিরে যাওয়ার জন্য তার সর্বাধিক প্রচেষ্টা করবে।

রসূলদের প্রেরণ করা হয়েছিলো সহজাত স্বভাবের সত্যতা সমর্থন ও এর পুনঃ প্রতিষ্ঠার জন্য আর এটিকে যথাযথ করার জন্য, এর পরিবর্তনের জন্য নয়। সুতরাং অন্তর যখন কেবলই আল্লাহকে ভালবাসে, একনিষ্ঠভাবে তার জন্যই দ্বীন পালন করে, তখন এটি অন্য কাউকে ভালবাসবে না।

এখানে প্রবল আবেগতাড়িত ভালোবাসা সহকারে চেষ্টা করার উল্লেখ করা হয়নি, কারন এটি যদি প্রবল আবেগতাড়িত ভালোবাসা দিয়ে নিপীড়িত হতো তবে এটি কেবলই আল্লাহ'র প্রতি ভালোবাসা কমিয়ে দিতো। এ কারনেই ইউসুফ (আঃ) কে যখন তার প্রতি এই প্রবল আবেগতাড়িত ভালোবাসা (ইশক) দ্বারা চেষ্টা করা হয়েছিলো, তখন তার কেবল আল্লাহ'র প্রতি ভালোবাসা আর একমাত্র আল্লাহ'র জন্যই একনিষ্ঠভাবে দ্বীন পালন করা তাকে এর দ্বারা পরাস্ত হতে সম্মতি দেয়নি, বরং আল্লাহ বলেন,
لَوْلَا أَن رَّأَى بُرْهَانَ رَبِّهِ ۚ كَذَلِكَ لِنَصْرِفَ عَنْهُ السُّوءَ وَالْفَحْشَاءَ ۚ إِنَّهُ مِنْ عِبَادِنَا الْمُخْلَصِينَ (٢٤)
"এভাবেই (আমি ইউসুফকে নৈতিকতার উচ্চমানে প্রতিষ্ঠিত রাখলাম) যেন আমি তার থেকে অন্যায় ও অশ্লীলতাপূর্ণ কাজ দূরে সরিয়ে রাখতে পারি, অবশ্যই সে ছিল আমার নিষ্ঠাবান বানাদাদের একজন।” (সুরা ইউসুফ, ১২ : ২৪)

আল-আযীযের স্ত্রী আর তার জাতি ছিল মুশরিক, তাই সে প্রবল আবেগতাড়িত ভালবাসা দিয়ে নিপীড়িত হয়েছিল। কেবলমাত্র আল্লাহ'র ইবাদাত ও ঈমানের হ্রাস করা ছাড়া কেউই প্রবল আবেগতাড়িত ভালোবাসা (ইশক) দিয়ে নিপীড়িত হয় না।

যে অন্তর আল্লাহ'র কাছে তওবা করে আর তাকে ভয় করে, তার দুটো পথ আছে, যা দ্বারা সে তার এই প্রবল আবেগতাড়িত ভালোবাসা দূর করতে পারে।

📘 অন্তরের ব্যাধি সমূহ ও তার চিকিৎসা > 📄 প্রবল আবেগতাড়িত ভালোবাসা প্রতিরোধের উপায়

📄 প্রবল আবেগতাড়িত ভালোবাসা প্রতিরোধের উপায়


১) আল্লাহ'র কাছে তাওবা করা আর তাকে ভালবাসা, কারন নিশ্চয়ই এটিই হল যেকোন কিছু থেকে অধিকতর সন্তোষজনক ও পবিত্র; আর আল্লাহ'র পাশাপাশি ভালোবাসার মতো আর কিছুই থাকবে না।

২) আল্লাহকে ভয় করা, কারন নিশ্চয়ই ভয় হল প্রবল আবেগতাড়িত ভালবাসার বিপরীত আর এটিকে দূর করে।

সুতরাং, যারা কাউকে গভীর আসক্তি সহকারে বা অন্যভাবে কোন কিছুকে ভালবাসে, তাদের এই ভালোবাসা দূর করা যাবে এর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বী অধিকতর প্রিয় কিছুকে ভালোবাসা দ্বারা। ৫৪

এই ভালোবাসা দূর করার আরও একটি উপায় হল এমন ক্ষতিসাধনের ব্যাপারে ভয় করা, যেটি ব্যক্তির নিকট এই ভালোবাসা বর্জন করার থেকেও অধিকতর ঘৃণ্য। সুতরাং যখন গোলামের কাছে যে কোন কিছু থেকে আল্লাহই অধিকতর প্রিয় হবেন আর সে যেকোন কিছু থেকে আল্লাহকেই অধিকতর ভয় করবে, তখন সে প্রবল আবেগতাড়িত ভালোবাসায় পড়বে না বা আল্লাহ'র প্রতি ভালোবাসার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বী কোন ভালোবাসা পাবে না এটি ব্যতীত যে অবহেলা করা বা কিছু ফরয দায়িত্ব ও কিছু হারাম কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে এই ভালোবাসা ও ভয় দুর্বল হয়ে যাবে। কারন, নিশ্চয়ই ঈমান বৃদ্ধি পায় আল্লাহ'র আনুগত্য করার মাধ্যমে আর কমে যায় আল্লাহ'র অবাধ্য হওয়ার মাধ্যমে। সুতরাং গোলাম যখন ভালোবাসা ও ভয়বশত আল্লাহ'র আনুগত্য করবে আর তার প্রতি ভালোবাসা ও ভয়বশত একটি হারাম কাজ ত্যাগ করবে, তার ভালোবাসা ও ভয় অধিকতর শক্তিশালী হবে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর প্রতি ভালোবাসা বা ভয় তার অন্তর থেকে চলে যাবে।

টিকাঃ
(৫৪) ইবনুল কায়ি‍্যমের রাওদাহ আল-muhibbin কিতাবে এর উল্লেখ আছে, এ সম্পর্কে তার চমৎকার এক আলোচনা আছে।

📘 অন্তরের ব্যাধি সমূহ ও তার চিকিৎসা > 📄 অন্তরের জন্য কিছু চিকিৎসা

📄 অন্তরের জন্য কিছু চিকিৎসা


অনুরূপ বিষয়টি শারীরিক অসুস্থতার জন্য সত্য, কারন শরীরের স্বাস্থ্য অনুরূপ কিছু দ্বারা সংরক্ষিত থাকে এবং অসুস্থতা বিপরীত দ্বারা অবদমিত হয়। অন্তরে ঈমানের বিশুদ্ধতা এর অনুরূপ দ্বারা সংরক্ষিত হয়; এর অর্থ হল, কল্যাণকর ইলম ও সৎকর্মসমূহ থেকে যা কিছু অন্তরে ঈমানের বৃদ্ধি ঘটাবে। কারন এগুলো হল অন্তরের প্রয়োজনীয় খাবার, যেমনটা ইবনে মাসউদের হাদিস থেকে জানা যায়, যা তার উক্তি হিসেবে আর রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদিস হিসেবে বর্ণিত হয়েছে -

"নিশ্চয়ই প্রত্যেক নিমন্ত্রণকর্তাই ভালবাসে যে লোকেরা তার ছড়ানো দস্তরখানায় আসবে, আর নিশ্চয়ই আল্লাহ'র ছড়ানো দস্তরখানা হল কুরআন।"

সুতরাং কুরআন হল আল্লাহ'র ছড়ানো দস্তরখানা।

যে সকল বিষয় অন্তরকে পরিপুষ্ট করে সেগুলো হল রাতের শেষভাগে দুয়া করা, আযান ও ইকামাতের সময় দুয়া করা, সিজদায় দুয়া করা, সালাতের শেষে দুয়া করা। তাওবা করাও। কারন, নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি তাওবা করে আল্লাহ'র কাছে ফিরে যায়, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন। তিনি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাকে সুখ দান করবেন - সে বর্ণিত আযকার দিনে আর রাতে ঘুমাবার সময় পাঠ করে; এগুলো থেকে তাকে বিমুখ করে দিবে - এমন প্রলুব্ধকর বিষয়গুলো সে সবরের সাথে সহ্য করে, কারন আল্লাহ তাকে তার থেকে একটি স্পিরিট দিয়ে সাহায্য করবেন আর তার অন্তরে ঈমান লিপিবদ্ধ করে দিবেন; সে ফরয কাজগুলো সম্পূর্ণ করতে আগ্রহী হবে, যেমন - অন্তর দিয়ে ও বাহ্যিকভাবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে, কারন সেগুলো হল দ্বীনের স্তম্ভ। সাহায্য প্রার্থনার জন্য সে বলবে -
لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ লা হাওলা ওয়ালা কুউওওাতা ইল্লা বিল্লাহ

কারন সেগুলো দ্বারা কাজের গুরুভার বহন করা যায়, ভয়ভীতিকে পরাস্ত করা যায় আর বেঁচে থাকার জন্য গোলাম শ্রেষ্ঠ অবস্থা দ্বারা পুরস্কৃত হয়। তাই দুয়া করা আর আল্লাহ'র নিকট সাহায্য চাওয়া ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। কারন তাড়াহুড়ো করার আগ পর্যন্ত গোলামকে তার রব তার দুয়ার জবাব দিবেন, যেমনটি হাদিসে উল্লেখ করা আছে যে -

"আমি দুয়া করলাম অথচ আল্লাহ কবুল করেননি।”

তার জেনে রাখা উচিত, সাহায্য আসে সবরের সাথে, মুক্তি আসে বেদনা ও উদ্বেগের পর, প্রত্যেক কাঠিন্যতার পর আসে শান্তি।

সে যেন জেনে রাখে, কোন নবী বা তাদের মর্যাদার নিচে কেউ সবর ছাড়া কল্যাণ দ্বারা পুরস্কৃত হয়নি।

আর সকল প্রশংসা আর শুকরিয়া রব্বুল আ'লামিন আল্লাহ'র জন্যই। আমাদেরকে ইসলাম আর সুন্নাহ'র দিকে পথ দেখানোর জন্য তো সকল প্রশংসা আর অনুগ্রহ তারই, এমন এক প্রশংসা যা বাহ্যিকভাবে ও অভ্যন্তরীণভাবে আমাদের উপর তার অনুগ্রহের জন্য পর্যাপ্ত, যেমনটি তা তার মর্যাদাপূর্ণ মুখ আর তার বিশালতার প্রতাপের জন্য প্রয়োজন। অজস্র সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের শিক্ষক মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) আর তার (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) পরিবার, সাহাবী ও তার (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীদের উপর যারা মুমিনদের মা, এবং তাদের উপরও যারা তাদেরকে বিচার দিবসের আগ পর্যন্ত কল্যাণে অনুসরণ করবেন।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন