📄 হিংসার চিকিৎসা
সুতরাং যে ব্যক্তি নিজেকে এমন অবস্থায় পায় যে, সে তার আত্মায় কারো প্রতি হিংসার আশ্রয় দিয়েছে, তবে তার দায়িত্ব হল সবর ও তাকওয়ার দ্বারা এর চিকিৎসা করা আর তার আত্মায় এটি থাকাটা অপছন্দ করা। যে ব্যক্তিকে হিংসা করা হয়, অনেক ধার্মিক ব্যক্তিই তার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেন না, আর না তারা সাহায্য করেন সে ব্যক্তিকে যে তার উপর যুলুম করে, না তারা তার ন্যায্য সম্পর্কিত আবশ্যকর্তব্য প্রতিষ্ঠা করে। বরং হিংসা করা হয় এমন ব্যক্তিকে যখন কেউ তিরস্কার করে, তখন তারা সেই ব্যক্তির সাথে একমত হয় না বা তাকে তিরস্কারে সাহায্যও করে না, আর না তারা তার প্রশংসনীয় গুণাবলীর উল্লেখ করে। অনুরূপভাবে, কেউ যদি তার প্রশংসা করে তবে তারা নীরব থাকে।
সুতরাং এই ব্যক্তিগুলো যে ব্যক্তির ব্যাপারে হিংসা করা হয়, তার ন্যায্য সম্পর্কিত হুকুম ত্যাগ করার জন্য দায়বদ্ধ। আর তারা এতে যথাযথ সীমা অতিক্রম করেছে যদিও তারা তার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেনি। এই ব্যক্তিগুলোর প্রতিদান এই যে, এর ফলে তাদের ন্যায্যগুলো উপেক্ষিত হবে আর কিছু ক্ষেত্রে তাদের সাথে ন্যায্য আচরন করা হবে না, আর না তাদের সাহায্য করা হবে যে তাদেরকে দমিয়ে রেখেছে তার বিরুদ্ধে; যেমনিভাবে তারা যে ব্যক্তিকে হিংসা করা হয় তাকে সাহায্য করেনি, যে ছিল নিপীড়িত।
আর প্রকৃতপক্ষে কোন ব্যক্তি কথা বা কাজের দ্বারা যে ব্যক্তিকে হিংসা করা হয় তার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করলে সে এর জন্য শাস্তিপ্রাপ্ত হবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে ও সবর অবলম্বন করবে এবং যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে না, তার তাকওয়ার জন্য আল্লাহ তার কল্যাণ করবেন।
📄 হিংসার কারণ
এটি যাইনাব বিনতে জাহশ (রাঃ) এর সাথে ঘটেছিল। তিনি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রীদের মধ্যে থেকে আয়েশা (রাঃ) এর সাথে প্রতিযোগিতা করতেন।
কিছু মহিলার অন্যদের প্রতি হিংসা প্রদর্শন করাটা মহান, বিশেষ করে এটি তাদের জন্য সত্য যারা একজন স্বামীকে বিয়ে করেছে। একজন মহিলা তার স্বামী থেকে বরাদ্দকৃত সময় আরো বেশী পরিমাণে পেতে চায়, কারন কোন কোন সময় অন্যান্য স্ত্রীদের সময় দেওয়ার কারনে তার প্রতি বরাদ্দকৃত সময় সে মিস করে।
এই হিংসা সাধারণভাবে ঘটে থাকে কতৃত্ব বা ধনসম্পদের ৩৮ অংশীদারদের মধ্যে, যখন তাদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি তা থেকে একটি অংশ গ্রহণ করে আর অন্যরা কিছু ছাড়াই বিদায় হয়। এটি তর্ককারীদের মধ্যেও ঘটে থাকে, কারন তারা ঘৃণা করে যে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী তাদের তুলনায় আরো ভালোভাবে তর্ক করবে; যেমনটি হল ইউসুফ (আঃ) এর ভাইদের হিংসা, অথবা আদম (আঃ) এর দুই সন্তানের মধ্যে একজনের অপরের প্রতি হিংসা এক্ষেত্রে এক ভাই অপর ভাই দ্বারা হিংসার কবলে পড়েছিল আল্লাহ কর্তৃক তার ত্যাগ গ্রহণ হওয়ার কারনে, অপর ভাইয়ের ত্যাগ গ্রহণ করা হয়নি, এর ফলে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। আর একটি উদাহারন হল ইয়াহুদি কর্তৃক মুসলিমদের প্রতি হিংসা প্রদর্শন।
বলা হয়ে থাকে, “সর্বপ্রথম যে পাপগুলো দিয়ে আল্লাহকে অমান্য করা হয় সেগুলো তিনটি লোভ, অহংকার আর হিংসা। আদম (আঃ) লোভ করেছিলেন, ইবলিস অহংকার করেছিল আর কাবিল হিংসাবশত হাবিলকে হত্যা করেছিলো।” ৩৯
এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, "এমন তিনটি পাপ আছে যা থেকে কেউই রক্ষা পায় না হিংসা, সন্দেহ আর পূর্বলক্ষণ। আমি কি তোমাদের বলবো যে কি তোমাদেরকে এগুলো থেকে সরিয়ে দিবে যখন তোমার হিংসা হবে তখন ঘৃণা করবে না, যখন তোমার সন্দেহ হবে তখন সন্দেহকে বাস্তবে পরিণত করবে না, আর যখন তুমি পূর্বলক্ষণ দেখবে তখন সেগুলো উপেক্ষা করবে." ৪০
সুনানে বর্ণিত আছে যে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিদের ব্যাধি - হিংসা ও ঘৃণা দ্বারা পীড়িত। এগুলো হল কর্তনকারী; আমি এটি বুঝাচ্ছি না যে সেগুলো চুল কর্তনকারী, বরং সেগুলো দ্বীন কর্তনকারী।” ৪১
সুতরাং রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) হিংসাকে একটি ব্যাধি বলেছেন, যেমনটি তিনি (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে কৃপণতা একটি ব্যাধি-
"আর কোন ব্যাধিটি কৃপণতা থেকে অধিকতর মন্দ?” ৪২
আরেকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, "আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই মন্দ চরিত্র ও আচার-ব্যবহার, নিরর্থক কামনা এবং অসুস্থতা থেকে।”
এখানে অসুস্থতাকে আচার ব্যবহার ও নিরর্থক কামনার পাশাপাশি উল্লেখ করা হয়েছে। আচার-ব্যবহার হল সেগুলো, যেগুলোতে আত্মা এমনভাবে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে যে সেগুলো আত্মার স্বভাব ও প্রকৃতি হয়ে যায়। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ (٤)
“এবং নিঃসন্দেহে তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত।” (সূরা কালাম, ৬৮: ৪)
এই আয়াতের তাফসীরে ইবন আব্বাস, ইবন উনাইনাহ এবং আহমাদ ইবনে হানবাল বলেন, "এর অর্থ হল 'একটি মহান দ্বীনের উপর'"। ইবন আব্বাসের ভিন্ন বর্ণনায় রয়েছে, “দ্বীন ইসলামের উপর।”
এটি একইভাবে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, “কুরআনই ছিল তার (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) চরিত্র।”
আর হাসান আল- বাসরি বলেন, "কুরআনের আচার-ব্যবহারই হল 'চরিত্রের মর্যাদাপূর্ণ মানদণ্ড' "।
'নিরর্থক কামনা-বাসনা' হল সাময়িক অস্বাভাবিক অবস্থা, এবং 'ব্যাধি' হল অসুস্থতা এটি এমন এক দুর্দশা যা অন্তরের ক্ষতি করে আর একে বিকৃত করে।
প্রথম হাদিসটিতে হিংসাকে ঘৃণার সাথে উল্লেখ করা হয়েছে। কারন হিংসুক ব্যক্তি প্রথমে হিংসার শিকার হওয়া ব্যক্তির উপর আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত অনুগ্রহকে অপছন্দ করে, এরপর সে সেই ব্যক্তিকে ঘৃণা করতে শুরু করে। এটা এ কারনে যে, প্রদত্ত অনুগ্রহের প্রতি ঘৃণা করাটা অনুগ্রহপ্রাপ্ত ব্যক্তির প্রতি ঘৃণা করার দিকে পরিচালিত করে। কারন ব্যক্তি যখন আল্লাহ'র অনুগ্রহপ্রাপ্ত হয়, হিংসুক পছন্দ করে যে সেই অনুগ্রহগুলো যেন চলে যায়; আর যে ব্যক্তিকে হিংসা করা হয় তার দ্বারা চলে যাওয়া ছাড়া সেগুলো চলে যাবে না। সুতরাং হিংসুক ব্যক্তি তাকে ঘৃণা করে আর এটি ভালবাসে যে ওই ব্যক্তি অনুগ্রহপ্রাপ্তদের মধ্যে থাকবে না।
হিংসা অবধারিতভাবে কামনা-বাসনা আর ঘৃণার দিকে পরিচালিত করে, যেমনটি আল্লাহ আমাদের জানিয়েছেন আমাদের পূর্ববর্তীদের সম্পর্কে যে তারা পৃথক হয়ে গিয়েছিলো,
إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ وَمَا اخْتَلَفَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ إِلَّا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ ۖ وَمَن يَكْفُرْ بِايَاتِ اللَّهِ فَإِنَّ اللَّهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ
(১৯) “যাদেরকে আল্লাহ'র পক্ষ থেকে কিতাব দেওয়া হয়েছিলো, তাদের কাছে (আল্লাহ'র পক্ষ থেকে) সঠিক জ্ঞান আসার পর তারা (এ জীবনবিধান থেকে বিচ্যুত হয়ে) নিজেরা একে অপরের প্রতি হিংসা বশত (বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে) মতানৈক্যে লিপ্ত হয়ে পড়েছিলো।” (সূরা আল ইমরান, ৩: ১৯)
সুতরাং জ্ঞানের অভাবের কারনে এই পৃথক হয়ে যাওয়া ঘটেনি, বরং তারা সত্য জানত; এটি ঘটার কারন হল তাদের মধ্যে কিছু লোক অপরদের ঘৃণা করতো, যেমনটি হিংসুক ব্যক্তি তাকে ঘৃণা করে যাকে হিংসা করা হয়।
আল-বুখারি ও মুসলিমের সাহিহতে আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, "তোমরা একে অপরকে হিংসা করো না, একে অপরকে ঘৃণা করো না, একে অপরের বিরোধিতা করো না আর সম্পর্ক ছিন্ন করো না; বরং (একে অপরের) ভাই হিসেবে আল্লাহ'র গোলাম হও। একজন মুসলিমের জন্য এটি অনুমোদিত না যে সে তার ভাইয়ের তিন দিনের বেশী সময় ধরে বিচ্ছিন্ন থাকবে এভাবে যে তারা (একে অপরের সাথে) সাক্ষাৎ করবে না আর একজন অপরজনকে উপেক্ষা করবে; এবং তাদের মধ্যে সর্বোত্তম হল যে শুরুতেই সালাম দেয়।” ৪৩
আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত এক নির্ভরযোগ্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে সত্তার হাতে আমার আত্মা রয়েছে তার শপথ, তোমাদের মধ্যে কেউই ঈমান আনলো না যতক্ষণ না পর্যন্ত সে নিজের জন্য যা ভালবাসে তার ভাইয়ের জন্যও তা ভালবাসে।” ৪৪
মহান আল্লাহ বলেন,
وَإِنَّ مِنكُمْ لَمَن لَّيُبَطِّئَنَّ فَإِنْ أَصَابَتْكُم مُّصِيبَةٌ قَالَ قَدْ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيَّ إِذْ لَمْ أَكُن مَّعَهُمْ شَهِيدًا (۷۲) وَلَئِنْ أَصَابَكُمْ فَضْلٌ مِّنَ اللَّهِ لَيَقُولَنَّ كَأَن لَّمْ تَكُن بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُ مَوَدَّةٌ يَا لَيْتَنِي كُنتُ مَعَهُمْ فَأَفُوزَ فَوْزًا عَظِيمًا (۷۳)
"তোমাদের মধ্যে অবশ্যই এমন (মুনাফিক) লোক থাকবে, যে (যুদ্ধের ব্যাপারে) গড়িমসি করবে, তোমাদের উপর কোন বিপদ-মুসিবত এলে সে বলবেঃ আল্লাহ সত্যিই আমার উপর বড় অনুগ্রহ করেছেন, (কেননা) আমি সে সময় তাদের সাথে ছিলাম না। আর যদি তোমাদের উপর আল্লাহ'র পক্ষ থেকে (বিজয়ের) অনুগ্রহ আসে, তখন সে (এমনভাবে) বলে, যেন তার সাথে তোমাদের কোন রকম বন্ধুত্বই ছিল না, সে (তখন আরো) বলেঃ কতই না ভালো হতো যদি আমি তাদের সাথে থাকতাম, তাহলে (আজ) আমিও অনেক বড় সফলতা অর্জন করতে পারতাম।” (সূরা নিসা, ৪: ৭২-৭৩)
সুতরাং পিছনে পড়ে থেকে গড়িমসি করা এসব লোকগুলো নিজেদের জন্য যেটি পছন্দ করে, তাদের অপর মুসলিম ভাইদের জন্য তা পছন্দ করেনি। বরং যদি মুসলিমেরা কোন বিপদে পড়ে দুর্দশাগ্রস্ত হয়, তখন তারা আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় এজন্য যে কেবল সেই মুসলিমরাই দুর্দশাগ্রস্ত হয়েছে; আর যদি মুসলিমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হয়, তবে তারা আনন্দিত হয় না বরং তারা আশা করে যে তাদেরও সেই অনুগ্রহের এক অংশ যদি থাকতো!
সুতরাং এই দুনিয়া থেকে কিছু পাওয়া ছাড়া বা এই দুনিয়ার কোন অমঙ্গল তাদের থেকে সরে যাওয়া ছাড়া তারা আনন্দিত হয় না। এটি ছিল আল্লাহ ও তার রসূল (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এবং আখিরাতের আবাসকে না ভালোবাসার কারনে। কারন, যদি তারা এগুলোর প্রতি অন্তরে ভালোবাসা রাখতো, তবে তারা তাদের ভাইদের ভালোবাসতো আর তাদের ভাইদের আল্লাহ'র পক্ষ থেকে অনুগ্রহপ্রাপ্ত হওয়াকে ভালোবাসতো আর তাদের মুসলিম ভাইদের বিপদ - যা তাদের দুর্দশা করেছে, তা দ্বারা তারা আহত হতো।
যে ব্যক্তি মুসলিমদের আনন্দিত করার বিষয়ে আনন্দিত হয় না এবং মুসলিমদের কষ্ট দেয় এমন বিষয়ে কষ্টবোধ করে না, সে তাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়।
আল-বুখারি ও মুসলিমের সাহিহতে আমির আশ-শা'বি থেকে বর্ণিত আছে যে তিনি বলেনঃ আমি নু'মান বিন বাশিরকে খুৎবা দিতে শুনলাম, তিনি বলেছিলেন যে তিনি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেন, "পরস্পর বন্ধুত্ব, দয়া, একে অপরের প্রতি আকর্ষণ ও ঐক্যের ক্ষেত্রে মুমিনের উদাহারন হল একটি শরীর। যখন শরীরের কোন একটি অংশ পীড়িত হয়ে পড়ে তখন শরীরের অবশিষ্ট অংশের ঘুম আসে না। অস্বস্তিবোধ হয় আর জ্বর এসে যায়।” ৪৫
আল-বুখারি ও মুসলিমের সাহিহতে আবু মুসা আল- আশ'আরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, "মুমিন মুমিনের জন্য ইমারতের ন্যায়, যার এক অংশ অন্য অংশকে মজবুত করে রাখে।” এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) হাতের আঙ্গুলগুলো আরেক হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে ঢুকালেন। ৪৬
টিকাঃ
(৩৮) অথবা যাদের ইলম রয়েছে, এ কারনেই হাদিসের আলিমরা সেই সব আলিমদের বর্ণনা গ্রহণ করেন না যারা তাদের সমসাময়িক আলিম কর্তৃক সমালোচিত।
(৩৯) এই বর্ণনাটি জয়ীফ যা হাসান আল-বাসরি থেকে মুরসাল বর্ণনায় আবু আশ-শাইখ আর তাবারানি বর্ণনা করেছেন।
(৪০) মুসনাদে আহমাদ (১৪১২, ১৪৩০) এবং তিরমিযি (২৫১২) তে এটি বর্ণিত হয়েছে। এর ইসনাদে অপরিচিত রাবি রয়েছে, কিন্তু হাদিসের সাক্ষী আছে, এটি আবু আদ-দারদা আর আবু- হুরাইরা বর্ণনা করেছেন যা হাদিসটিকে জোরদার করেছে। মাজমা' আয-যাওয়াইদ (১০/৮) এ লেখক এই হাদিসটি আল-বাজ্জারের সাথে সম্পর্কযুক্ত করেছেন। আল- মুনযিরি বলেছেন যে এর ইসনাদ ভালো।
(৪১) তিরমিযি, তাবারানি, মুসতাদরাক হাকিম; তারা বলেছেন যে হাদিসটি সহিহ
(৪২) হাদিসটি ইমাম আহমাদ, হাকিম এবং অন্যান্যরা বর্ণনা করেছেন। হাদিসটি সহিহ। দেখুনঃ সাহিহ আল-জামি' (৭১০৪) এবং আত- তাহাওি'র শারহ মুসকিল আল-আসারের উপর শু'আইব আল-আরনা'উতের টীকা।
(৪৩) সাহিহ বুখারি- ৮/৫৮, হাদিস ৯১; সাহিহ মুসলিম ৪/১৩৬০, হাদিস ৬২০৫, ৬২১০
(৪৪) সাহিহ বুখারি- ১/১৯, হাদিস ১২; সাহিহ মুসলিম ১/৩১, হাদিস ৭২,৭৩
(৪৫) সাহিহ বুখারি- ৮/২৬, হাদিস ৪০; সাহিহ মুসলিম ৪/১৩৬৮, হাদিস ৬২৫৮
(৪৬) সাহিহ বুখারি- ৮/৩৪, হাদিস ৫৫; সাহিহ মুসলিম ৪/১৩৬৮, হাদিস ৬২৫৭
📄 হিংসা ও কৃপণতার মাঝে
কৃপণতার মতো একটি অসুস্থতা হল লোভ-লালসা, আর হিংসা হল কৃপণতার থেকেও অধিক মন্দ, যেমনটি আবু দাউদে ৪৭ বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে যে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, "হিংসা সৎ কর্মসমূহকে ক্ষয় করে যেমনটি আগুন জ্বালানী কাঠকে ক্ষয় করে, আর সাদকা করা পাপসমূহকে নিভিয়ে দেয় যেমনটি পানি নিভিয়ে দেয় আগুনকে।”
কারন কৃপণ ব্যক্তি তো কেবল কল্যাণ পাওয়া থেকে নিজেকে নিবৃত্ত করে, কিন্তু হিংসুক ব্যক্তি তো আল্লাহ'র অনুগ্রহ তার গোলামকে প্রদান করাটা অপছন্দ করে। এটি সম্ভব যে একজন ব্যক্তি তার থেকে কম সম্পদ থাকা একজনকে সম্পদ দান করে, যে তাকে সাহায্য করবে তার উদ্দেশ্য অর্জন করার জন্য আর তা সত্ত্বেও তার মত অনুরূপ স্তরের ব্যক্তিদের প্রতি হিংসা প্রদর্শন করবে, যেমনভাবে তার জন্য এটি সম্ভব যে সে কৃপণতা করবে অন্যদের প্রতি হিংসা না দেখিয়েই। লোভই হল এর ভিত্তি যেমনটা আল্লাহ বলেছেন –
وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ (۹) "যারা কার্পণ্য থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করেছে তারাই সফলকাম।” (সূরা হাশর, ৫৯ : ৯)
সাহিহ বুখারি ও সাহিহ মুসলিমে ৪৮ বর্ণিত আছে যে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা লোভ করা থেকে সতর্ক হও, কারন এটি তোমাদের পূর্ববর্তীদের ধ্বংস করে দিয়েছে। এটি তাদেরকে আদেশ করেছিল কৃপণ হওয়ার আর তারা তা হয়েছিলো, এটি তাদেরকে আদেশ করেছিলো যালিম হওয়ার জন্য আর তারা তা হয়েছিলো আর এটি তাদেরকে আদেশ করেছিলো আত্মীয়তার বন্ধন ভেঙে দেওয়ার আর তারা তা করেছিলো।”
'আব্দুর রহমান বিন আওফ (রাঃ) ৪৯ 'তাওয়াফ করার সময় তার দুয়ায় বারবার বলতেন "হে আল্লাহ, আমার আত্মাকে লোভ লালসা থেকে রক্ষা করুন।” এক ব্যক্তি তাকে বললো, "আপনার এই দুয়াটি বারবার পড়ার কারন কি?” তিনি বললেন, "যখন আমি নিজেকে লোভ লালসা থেকে রক্ষা করি, তখন আমি নিজেকে রক্ষা করি লোভ, কার্পণ্য আর আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা থেকে।”
আর হিংসা তো অবধারিতভাবেই জুলুমের দিকে পরিচালিত করে।
টিকাঃ
(৪৭) এখানে ইবনে তাইমিয়্যাহ'র একটি ভুল হয়েছে, এই পূর্ণ হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে ইবনে মাজাহতে (৪২১০), আবু দাউদে বর্ণনাটির কেবল প্রথম বাক্যটি রয়েছে আর এই হাদিসটির ইসনাদে অপরিচিত রাবি রয়েছে।
(৪৮) এটিও ইবনে তাইমিয়্যাহ'র আর একটি ভুল, হাদিসটি বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত হয়নি, বরং এটি আবু দাউদ (২/৪৪৫, হাদিস ১৬৯৪) আর মুসতাদরাক হাকিমে (১/১১) বর্ণিত হয়েছে, এর ইসনাদ সাহিহ।
(৪৯) সংরক্ষিত উৎস থেকে আমি যতদূর জানি, ইনি ছিলেন সা'দ ইবন আবি ওয়াক্কাস।