📄 উঁচু মর্যাদা বিশিষ্ট ব্যক্তি ওমরা থেকে সুরক্ষিত
অনুরূপভাবে, সাহাবীদের মধ্য থেকে আবু 'উবাইদাহ বিন জাররাহ (রাঃ) আর তার মতো অন্যান্য সাহাবীরা এই ধরনের চিন্তা থেকে মুক্ত থাকার কারনে তারা সে সকল ব্যক্তি থেকে অধিকতর মর্যাদাপূর্ণ ছিলেন, যারা প্রতিযোগিতা করতেন আর গুতবা প্রদর্শন করতেন, যদিও এটি প্রদর্শন করা অনুমোদিত। এ কারনেই আবু উবাইদাহ (রাঃ) “এই উম্মাহ'র একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি” ৩৬ হিসেবে আখ্যায়িত হওয়ার যোগ্য। কারন বিশ্বস্ত ব্যক্তির যদি কোন প্রতিযোগিতা না থাকে আর যেটি তাকে ন্যস্ত করা হয় সেটির জন্য তার নিজের মধ্যে কামনা না থাকে, তবে বিশ্বাস করার ব্যাপারে তিনি সবচেয়ে বেশী উপযুক্ত। যে ব্যক্তি বৃহত্তর বিষয়গুলোতে কোন প্রতিযোগিতা করার ব্যাপারে আচ্ছন্ন না হওয়ার ব্যাপারে পরিচিত, ক্ষুদ্রতর বিষয়গুলোও তাকে ন্যস্ত করা হয়; আর যে ব্যক্তির পক্ষে ধনসম্পদ থেকে চুরি করার কোন কারন নেই, তাকে ধনসম্পদের দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়। যে ব্যক্তি নিজের মধ্যে বিশ্বাসঘাতকতা খুঁজে পায় যার সাদৃশ্য হল ভেড়ার দায়িত্ব পাওয়া নেকড়ের ন্যায়, তবে তাকে যেটি ন্যস্ত করা হয়েছে সেটির জন্য তার অন্তরে কামনা থাকার কারনে যে ব্যাপারে তার উপর আস্থা রাখা হয়েছে তা সে সম্পাদন করতে পারবে না।
ইমাম আহমাদের মুসনাদে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি বলেনঃ আমরা রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে বসা ছিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, "এখন তোমাদের সামনে একজন জান্নাতী ব্যক্তি উপস্থিত হবে।” কিছুক্ষন পর এক আনসারী ব্যক্তি বাম হাতে তার জুতো ধরে নতুনভাবে উযু করা অবস্থায় উপস্থিত হলেন। তার দাঁড়ি থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় উযুর পানি ঝরছিল। দ্বিতীয় দিনও আমরা অনুরূপভাবে বসেছিলাম, তখনো তিনি (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) সেই কথাই বললেন আর ওই লোকটি সেই একইভাবে আসলেন। তৃতীয় দিনও সেই একই ব্যাপার ঘটলো।
অতঃপর রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন থেকে উঠে গেলেন, তখন আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল 'আস (রাঃ) তার পিছু নিলেন। তাকে তিনি বললেন, "জনাব, আমার আর আমার পিতার মধ্যে কিছু বাদানুবাদ হয়েছে। তাই আমি শপথ করে বসেছি যে তিন দিন পর্যন্ত আমি বাড়িতে প্রবেশ করবো না। সুতরাং যদি দয়া করে আমাকে অনুমতি দেন তবে এই দিনগুলো আমি আপনার বাড়িতে কাটিয়ে দিবো।” তিনি বললেন, "বেশ, ঠিক আছে।”
সুতরাং তিন দিন আমি তার সাথে তার বাড়িতে অতিবাহিত করলাম। দেখলাম যে তিনি রাতে তাহাজ্জুদের সালাতও আদায় করলেন না। শুধু এতটুকু করলেন যে, জেগে উঠে বিছানায় শুয়ে শুয়েই আল্লাহ'র যিকর ও তার শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করতে থাকলেন। হ্যা, তবে এটি অবশ্যই ছিল যে, আমি তার মুখে ভালো কথা ছাড়া আর কিছুই শুনিনি।
তিন রাত অতিবাহিত হলে তার আমল আমার কাছে হালকা লাগলো। অতঃপর আমি তাকে বললাম, "জনাব, আমার ও আমার পিতার মধ্যে কোন বাদানুবাদ হয়নি এবং অসন্তুষ্টির কারনে আমি বাড়িও ছাড়িনি। বরং প্রকৃত ব্যাপার এই যে, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) উপর্যুপরি তিন দিন বললেন যে, এখনই একটি জান্নাতি লোক আসবে, আর তিন দিনই আপনার আগমন ঘটে। তাই আমি ইচ্ছা করলাম কয়েকদিন আপনার সাহচর্যে আমি কাটিয়ে দিবো। এরপর এটি লক্ষ্য করবো আপনি এমন কি আমল করেন যার কারনে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবিতাবস্থাতেই আপনার জান্নাতি হওয়ার সুসংবাদ আমাদেরকে প্রদান করলেন। তাই আমি এই কৌশল অবলম্বন করলাম এবং তিন দিন পর্যন্ত আপনার খেদমতে থাকলাম, যেন আপনার আমল দেখে আমিও ঐরূপ আমল করে জান্নাতবাসী হতে পারি। কিন্তু আমি তো আপনাকে কোন নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ আমল করতে দেখলাম না আর ইবাদাতেও তো অন্যদেরকে ছাড়িয়ে যেতে দেখলাম না। এখন আমি আপনার কাছ থেকে বিদায় গ্রহণ করছি। কিন্তু বিদায় বেলায় আমি আপনার কাছ থেকে জানতে চাই, এমন কি আমল করেন যে যার কারনে স্বয়ং রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনার জান্নাতি হওয়ার কথা বললেন?”
উত্তরে তিনি আমাকে বললেন, "আপনি আমাকে যে আমল করতে দেখেছেন এটি ছাড়া অন্য কোন বিশেষ ও গোপনীয় আমল আমি করি না।”
তার এ জবাব শুনে আমি তার কাছ থেকে বিদায় গ্রহণ করে চলতে শুরু করলাম। অল্প দূরে গিয়েছি, ইতিমধ্যে তিনি আমাকে ডাক দিয়ে বললেন, "আমার একটি আমল রয়েছে, সেটা এই যে, আমি কখনো কোন মুসলমানের প্রতি হিংসা পোষণ করিনি আর কখনো কোন মুসলমানের অমঙ্গল কামনা করিনি।”
আমি তার কথা শুনে বললাম, "হ্যা, এবার আমার জানা হয়ে গেছে যে, আপনার এই আমলই আপনাকে এই মর্যাদায় পৌঁছে দিয়েছে। আর এটি তো এমনই এক আমল যে, অনেকেই এটির ক্ষমতা রাখে না।”
সুতরাং আবদুল্লাহ বিন আমর তাকে যা বললেন – “হ্যা, এবার আমার জানা হয়ে গেছে যে, আপনার এই আমলই আপনাকে এই মর্যাদায় পৌঁছে দিয়েছে। আর এটি তো এমনই এক আমল যে, অনেকেই এটির ক্ষমতা রাখে না।” – এটি নির্দেশ করে যে, তার মধ্যে হিংসার অনুপস্থিতি ছিল আর তিনি সব ধরনের হিংসা থেকে নিরাপদ ছিলেন। এ কারনেই আল্লাহ আনসারদের ব্যাপারে প্রশংসা করে বলেছেন -
وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمْ حَاجَةً مِّمَّا أُوتُوا وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ (۹)
"...এবং মুহাজিরদের যা দেওয়া হয়েছে তার জন্য তারা অন্তরে আকাংখা পোষণ করে না, আর তারা নিজেদের উপর তাদেরকে প্রাধান্য দেয় নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও...।" (সূরা হাশর, ৫৯ : ৯)
এর অর্থ হল আনসারদের মুহাজির ভাইদেরকে যা দেওয়া হয় সেটি। মুফাসসিররা বলেছেন, "মুহাজিরদের যা প্রদান করা হয় সে ব্যাপারে তাদের (আনসারদের) অন্তরে হিংসা ও ঘৃণা থাকে না।” মুফাসসিরদের মধ্যে কেউ বলেন, "ফাই এর মাল থেকে তাদের যা প্রদান করা হয়।" আর অন্যান্যরা বলেছেন, "তাদেরকে যে প্রাধান্য ও অনুগ্রহ প্রদান করা হয়।”
সুতরাং মুহাজিরদের যে ধনসম্পদ আর মর্যাদা দেওয়া হয় সেগুলোর ব্যাপারে তারা কোন প্রয়োজন খুঁজেন না, যদিওবা এই ধরনের ব্যাপারগুলোতে হিংসা জাগ্রত হয়।
আওস আর খাজরাজ গোত্রের মধ্যে দ্বীনের ব্যাপারে প্রতিযোগিতা হতো, যেমন যদি এদের একটি গোত্র এমন কিছু করে যেটির কারনে তারা আল্লাহ ও তার রসূল (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুগ্রহপ্রাপ্ত বলে গণ্য হবে, তবে অপর গোত্রও একই কাজ করার ব্যাপারে কামনা রাখতো। সুতরাং এটি ছিল এমনই এক প্রতিযোগিতা যা তাদেরকে আল্লাহ'র নিকটবর্তী করতো। আল্লাহ বলেন,
وَفِي ذَلِكَ فَلْيَتَنَافَسِ الْمُتَنَافِسُونَ (٢٦)
"এবং এর জন্য প্রতিযোগীরা প্রতিযোগিতা করুক।” (সূরা মুতাফফিফিন, ৮৩ : ২৬)
টিকাঃ
(৩৬) সাহিহ বুখারি ও সাহিহ মুসলিমে এর বর্ণনা রয়েছে।
📄 নিন্দনীয় হিংসা
সম্পূর্ণভাবেই নিন্দিত হিংসার ব্যাপারে উল্লেখ করতে গিয়ে আল্লাহ ইয়াহুদিদের সম্পর্কে বলেন,
وَدَّ كَثِيرٌ مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَوْ يَرُدُّونَكُم مِّن بَعْدِ إِيمَانِكُمْ كُفَّارًا حَسَدًا مِّنْ عِندِ أَنفُسِهِم مِّن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْحَقُّ
"কিতাবিদের অনেকে তাদের প্রতি সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর তারা তাদের অন্তর্নিহিত হিংসার কারনে (তোমরা) বিশ্বাস স্থাপনের পর তোমাদেরকে অবিশ্বাসী করার কামনা করে...।" (সূরা বাকারাহ, ২: ১০৯)
"তারা কামনা করে” এর অর্থ হল, তারা হিংসা বশতঃ তোমাদেরকে দ্বীন ত্যাগ করানোর আশা করে। সুতরাং সত্য তাদের নিকটে পরিস্কার হয়ে যাওয়ার পরও তাদের এই কামনার পিছনে সিদ্ধান্তের প্রকৃত বাস্তবতা ছিল হিংসা। এর কারন হল, যখন তারা দেখলো যে আপনারা এমন কিছু অনুগ্রহ অর্জন করছেন যা তারা প্রকৃতপক্ষে কখনোই অর্জন করেনি, তখন তারা আপনাদের ব্যাপারে হিংসুকে পরিণত হয়। অনুরূপভাবে আরেকটি আয়াতে এর উল্লেখ রয়েছে -
أَمْ يَحْسُدُونَ النَّاسَ عَلَى مَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ فَقَدْ آتَيْنَا آلَ إِبْرَاهِيمَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَآتَيْنَاهُم مُّلْكًا عَظِيمًا (٥٤) فَمِنْهُم مَّنْ آمَنَ بِهِ وَمِنْهُم مَّن صَدَّ عَنْهُ وَكَفَى بِجَهَنَّمَ سَعِيرًا (٥٥)
"তবে কি লোকদের প্রতি এ জন্য তারা হিংসা করে যে আল্লাহ তাদেরকে নিজের সম্পদ থেকে কিছু দান করেছেন? ফলতঃ নিশ্চয়ই আমি ইব্রাহীম বংশীয়গণকে কিতাব ও হিকমত প্রদান করেছি এবং তাদেরকে বিশাল সাম্রাজ্য প্রদান করেছি। অনন্তর তাদের মধ্যে অনেকেই ওর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে আর অনেকেই ওটা থেকে বিরত রয়েছে; এবং (তাদের জন্য) শিখা বিশিষ্ট জাহান্নামই যথেষ্ট।” (সূরা নিসা', ৪: ৫৪-৫৫)
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ (১) مِن شَرِّ مَا خَلَقَ (২) وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ (৩) وَمِن شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ (৪) وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ (৫)
“বলঃ আমি উজ্জ্বল প্রভাতের রবের কাছে আশ্রয় চাই; (আশ্রয় চাই) তার সৃষ্টি করা (প্রতিটি জিনিষের) অনিষ্ট থেকে; আমি আশ্রয় চাই রাতের (অন্ধকারে সংঘটিত) অনিষ্ট থেকে, (বিশেষ করে) যখন রাত তার অন্ধকার বিছিয়ে দেয়; (আমি আশ্রয় চাই) গিরায় ফুঁক দিয়ে যাদুটোনাকারিণীদের অনিষ্ট থেকে; হিংসুক ব্যক্তির (সব ধরনের হিংসার) অনিষ্ট থেকেও (আমি আপনার আশ্রয় চাই) যখন সে হিংসা করে।” (সূরা ফালাক, ১১৩ : ১-৫}
একদল মুফাসসির উল্লেখ করেছেন, এই সূরাটি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি ইয়াহুদিদের হিংসার পরিপ্রেক্ষিতে নাযিল করা হয়। তারা রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি এতই হিংসুটে ছিল যে তারা রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর যাদু করতো। ইয়াহুদি লাবিদ বিন আল- 'আসাম যাদুর কাজ করতো। ৩৭
সুতরাং যে হিংসুক ব্যক্তি কারো উপর আল্লাহ প্রদত্ত অনুগ্রহকে ঘৃণা করে, সে তার হিংসার কারনে সীমা অতিক্রম করে; সে একজন যালিম। যে ব্যক্তি অন্য কারো অনুগ্রহপ্রাপ্ত হওয়াটা অপছন্দ করে অথচ সে একইভাবে অনুগ্রহপ্রাপ্ত হওয়ার কামনা করে, তার জন্য এটি করাটা নিষিদ্ধ, তবে সেটি ছাড়া যা তাকে আল্লাহ'র নিকটবর্তী করবে। সুতরাং ব্যক্তি যদি এমন কিছুর কামনা করে যা অন্য কোন ব্যক্তিকে প্রদান করা হয়েছে, যেটি কিনা তাকে আল্লাহ'র নিকটবর্তী হতে সাহায্য করবে- তবে এতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু সেই ব্যক্তি যদি তার অন্তরে অন্য কোন ব্যক্তির অবস্থার প্রতি না তাকিয়ে সেই অনুগ্রহের জন্য কামনা করে, তবে সেটিই হবে অধিকতর উত্তম আর অধিকতর চমৎকার।
এ ব্যক্তি যদি এই হিংসা কর্তৃক প্ররোচিত হয়ে আমল করে, তবে সে সীমা অতিক্রম করে যালিমে পরিণত হবে আর শাস্তির যোগ্য হবে যদি সে তাওবা না করে। সুতরাং হিংসুক দ্বারা প্রভাবিত ব্যক্তি নিপীড়িত এবং তাকে সবর ও তাকওয়া অবলম্বন করতে হবে। হিংসুক কর্তৃক সে যে ক্ষতি দ্বারা প্রভাবিত হবে সেটির উপর তাকে সবর অবলম্বন করতে হবে এবং তার উচিত হবে ক্ষমা করে দেওয়া ও উপেক্ষা করা। আল্লাহ বলেন,
وَدَّ كَثِيرٌ مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَوْ يَرُدُّونَكُم مِّن بَعْدِ إِيمَانِكُمْ كُفَّارًا حَسَدًا مِّنْ عِندِ أَنفُسِهِم مِّن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْحَقُّ ۖ فَاعْفُوا وَاصْفَحُوا حَتَّىٰ يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ
"কিতাবিদের অনেকে তাদের প্রতি সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর তারা তাদের অন্তর্নিহিত হিংসার কারনে (তোমরা) বিশ্বাস স্থাপনের পর তোমাদেরকে অবিশ্বাসী করার কামনা করে, কিন্তু যে পর্যন্ত আল্লাহ স্বয়ং আদেশ আনয়ন না করেন সে পর্যন্ত তোমরা ক্ষমা ও উপেক্ষা করতে থাকো।” (সূরা বাকারাহ, ২: ১০৯)
প্রকৃতপক্ষে ইউসুফ (আঃ) ও তার ভাইদের হিংসার শিকার হয়েছিলেন-
إِذْ قَالُوا لَيُوسُفُ وَأَخُوهُ أَحَبُّ إِلَىٰ أَبِينَا مِنَّا
"যখন তারা (একজন আরেকজনকে) বললো, 'আমাদের পিতার কাছে নিঃসন্দেহে ইউসুফ আর তার ভাই (বিনইয়ামীন) আমাদের চেয়েও বেশী প্রিয়...।'” (সূরা ইউসুফ, ১২ : ৮)
সুতরাং এই দুই ভাইকে তাদের পিতা তাদের অন্যান্য ভাইদের চেয়ে বেশী দয়া দেখানোর কারনে তাদের ভাইয়েরা তাদের দুজনের ব্যাপারে হিংসাবোধ করেছিল। এ কারনেই পিতা ইয়াকুব (আঃ) তার পুত্র ইউসুফ (আঃ) কে বললেন,
قَالَ يَا بُنَيَّ لَا تَقْصُصْ رُؤْيَاكَ عَلَى إِخْوَتِكَ فَيَكِيدُوا لَكَ كَيْدًا ۖ إِنَّ الشَّيْطَانَ للْإِنسَانِ عَدُوٌّ مُّبِينٌ (٥)
"সে বললোঃ হে আমার পুত্র, তোমার স্বপ্নের বৃত্তান্ত তোমার ভাইদের কাছে বর্ণনা করো না, (তা) করলে তারা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে, শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।” (সূরা ইউসুফ, ১২ : ৫)
তার ভাইয়েরা তাকে হত্যা করার ব্যাপারে আলোচনা করা আর তাকে কূপে ফেলে দেওয়ার মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে যুলুম করলো। এরপর তাকে যে ব্যক্তি গোলাম হিসেবে কিনে নেয় সে ব্যক্তি ইউসুফ (আঃ) কে কাফিরদের ভূমিতে নিয়ে যায় এবং পরবর্তীকালে সেই কাফির লোকগুলো তার মালিকানা লাভ করে। এভাবে নিপীড়িত হওয়ার পর ইউসুফ (আঃ) কে এক মহিলা অশ্লীল কাজে আহবান করলো আর তাকে সে কাজে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করলো এবং যারা এ কাজে তাকে সাহায্য করতে পারবে সে মহিলা তাদের কাছে এই কাজে সাহায্য চেয়েছিল, কিন্তু ইউসুফ (আঃ) এটি থেকে নিরাপদ ছিলেন। সেই অশ্লীল কাজ করার পরিবর্তে তিনি কারারুদ্ধ হওয়াকেই বেছে নিলেন, আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে পরকালের শাস্তির পরিবর্তে এই পার্থিব জগতের শাস্তিই পছন্দ করলেন আর প্রাধান্য দিলেন।
সুতরাং তিনি নির্যাতিত হলেন এমন একজন দ্বারা, যে নিজের নিকৃষ্ট কামনা আর অসৎ উদ্দেশ্যের কারনে তাকে কামনা করেছিলো। সুতরাং যে ভালোবাসা দ্বারা সে ইউসুফ (আঃ) কে কামনা করেছিলো, সেটি তার অন্তরের নিরর্থক কামনার প্রতি নিমজ্জিত হয়ে যাওয়ার কারন হিসেবে জাগ্রত হয়েছিলো। আর সেই অন্তরের সুখ বা বিষণ্ণতা নির্ভর করেছিলো ইউসুফ (আঃ) কর্তৃক সেই প্রলোভন গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করার উপর।
ইউসুফ (আঃ) তাদের দ্বারাও জুলুমের শিকার হয়েছিলেন যারা অন্তরে তার প্রতি এমন ঘৃণা রেখে তাকে ঘৃণা করেছিলো, যার কারনে তাকে কূপে পতিত হতে হয়েছিলো। এরপর তিনি বন্দী হলেন আর মালিকানাধীন হলেন তার নিজের ইচ্ছা ছাড়াই, এ কারনে সেই লোকেরা তাকে পূর্ণ স্বাধীনতা থেকে সরিয়ে রাখে। মিথ্যা উপাসকদের দাসত্ব করার জন্য তাকে জোর করা হয়েছিলো; এটি তাকে বাধ্য করেছিল ইচ্ছাকৃতভাবে কারাগারে আশ্রয় নেওয়ার জন্য, যার ফলে তার পরীক্ষা আরও বিশাল হয়ে পড়ে।
এই ঘটনায় তার সবর জাগ্রত হয় তার নিজের ইচ্ছাবশত, যা আল্লাহ'র ব্যাপারে তাকওয়া অবলম্বনের সাথে জড়িত ছিল। এভাবে তাদের ভিন্ন নির্যাতনের সামনে তার ভিন্ন ধরনের সবর দেখা যায়, যেগুলো ছিল দুঃখ দুর্দশার শুরুতেই সবর অবলম্বন করা। যদি কোন ব্যক্তি এগুলোর অনুরূপ সবর অবলম্বন করতে না পারে তবে সে নিছকই পশুদের পথ ও পদ্ধতি গ্রহণ করবে।
এই দ্বিতীয় ধরনের সবর জাগ্রত হয় ব্যক্তির স্বাধীন ইচ্ছা থেকে। এটি দুই ধরনের সবর থেকে অধিকতর চমৎকার। এ কারনেই আল্লাহ বলেন,
إِنَّهُ مَن يَتَّقِ وَيَصْبِرْ فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِينَ (۹۰)
“যে ব্যক্তি মুত্তাকী ও সবরকারী, আল্লাহ সেরকম সৎ কর্মপরায়ণদের শ্রমের ফল নষ্ট করেন না।” (সূরা ইউসুফ, ১২ : ৯০)
অনুরূপভাবে, যখন একজন মুসলিম তার ঈমানের কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়; তার থেকে কুফর, সীমালঙ্ঘন ও অবাধ্যতা চাওয়া হলে যদি সে তা গ্রহণ না করে তবে তার ক্ষতি করা হবে আর শাস্তি দেওয়া হবে, এমন অবস্থায় তার উচিত হবে তার দ্বীন ত্যাগ না করে এই ক্ষতি আর শাস্তিকে বেছে নেওয়া, এমনকি তাকে যদি এটির কারনে কারাদণ্ড পেতে হয় বা তার ভুমি থেকে তাকে নির্বাসনে পাঠানো হয় তবুও; যেমনটা ঘটেছিলো মুহাজিরদের ক্ষেত্রে – তারা তাদের দ্বীন ইসলাম ত্যাগ করার পরিবর্তে তাদের উপনিবেশ ত্যাগ করেছিলেন, যেটির জন্য তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে আর শাস্তিপ্রাপ্ত হতে হয়েছিলো।
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বিভিন্ন উপায়ে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছিলো, কিন্তু তিনি (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) সবর অবলম্বনের ইচ্ছাবশত সম্পূর্ণরূপেই সবর অবলম্বন করেছিলেন; আর এটি করার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন কেবল এটির জন্য যে তিনি (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ ইচ্ছাবশত তা করেছিলেন।
সুতরাং রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সবর ইউসুফ (আঃ) এর সবরের থেকেও অধিকতর মহান। কারন ইউসুফ (আঃ) থেকে কেবল একটি অশ্লীল কাজ চাওয়া হয়েছিলো আর তিনি এতে অসম্মত হওয়ায় কেবল তখনই কারাবন্দী হওয়ার মাধ্যমে শাস্তি পেলেন। কিন্তু রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) আর তার (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের কাছ থেকে চাওয়া হয়েছিলো কুফর। যখন তারা এটি করলেন না, তখন তাদেরকে হত্যা ও অনুরূপ ক্ষতির মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হয়েছিলো আর ন্যূনতম শাস্তি ছিল বন্দী ও অবরুদ্ধ করে রাখা। মুশরিকেরা রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) আর বানু হাশিমকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পাহাড়ের গিরিপথে অবরোধ করে রেখেছিলো। আর আবু তালিবের মৃত্যুর পর তো তারা রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিরুদ্ধে আরও বেশী কঠোর হয়ে যায়। আনসাররা যখন তাকে (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বাইয়াত (আনুগত্যের শপথ) প্রদান করেন আর যখন মুশরিকেরা এটি জানতে পারে, তখন তারা রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত না করার জন্য প্রতিরোধের চেষ্টা করলো এবং রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তার (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করলো। এরপর 'উমার বিন আল-খাত্তাব (রাঃ) এর মতো কিছু সাহাবী ছাড়া সবাই গোপনে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করলেন।
সুতরাং, মুসলিমের উপর যা আপতিত হয় সেটি হল আল্লাহ ও তার রসূল (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি আনুগত্যকে বেছে নেওয়ার ফলাফল। এগুলো এমন কোন দুর্দশা নয় যা আল্লাহ'র গোলামের নিজ থেকে বেছে নেওয়া ছাড়াই ঘটে, যেমনটা ঘটেছিল ইউসুফ (আঃ) এর সাথে আর তার পিতা থেকে পৃথক হয়ে যাওয়ার ঘটনার ন্যায়। সুতরাং একজন মুসলিমের এই ধরনের অবলম্বন করা সবর হল দুই ধরনের সবরের মধ্যে অধিকতর উঁচু, আর পদমর্যাদার দিক থেকে এই ধরনের সবরকারী ব্যক্তি অধিকতর শ্রেষ্ঠ।
যে ব্যক্তি তার ইচ্ছা ছাড়াই পরীক্ষায় পতিত হবে, সে তার সবর ও তাকদিরের ব্যাপারে সন্তুষ্ট থাকার জন্য পুরস্কৃত হবে আর তার পাপগুলোর প্রায়শ্চিত্ত হবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ'র আনুগত্য করাকে বেছে নেওয়ার কারনে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সে বাস্তব দুর্দশার জন্য পুরস্কৃত হবে আর তার জন্য এটি সৎ কাজ হিসেবে লেখা হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
ذلِكَ بِأَنَّهُمْ لَا يُصِيبُهُمْ ظَمَأٌ وَلَا نَصَبٌ وَلَا مَخْمَصَةٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَطَئُونَ مَوْطِئًا يَغِيظُ الْكُفَّارَ وَلَا يَنَالُونَ مِنْ عَدُوٍّ نَّيْلًا إِلَّا كُتِبَ لَهُم بِهِ عَمَلٌ صَالِحٌ إِنَّ اللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِينَ (۱۲۰)
"এটির (অর্থাৎ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গী হওয়ার প্রয়োজনীয়তার) কারন এই যে, আল্লাহ'র পথে তাদের যে পিপাসা দেখা দেয়, যে ক্লান্তি স্পর্শ করে, আর যে ক্ষুধা পায়, আর তাদের এমন পদক্ষেপ যা কাফিরদের ক্রোধের কারন হয়ে থাকে, আর দুশমনদের থেকে তারা যা কিছু প্রাপ্ত হয় এর প্রত্যেকটির বিনিময়ে তাদের জন্য একটি নেক আমল লিপিবদ্ধ হয়ে যায়, নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎ কর্মশীল লোকদের পুণ্যফল বিনষ্ট করবেন না।” (সূরা তাওবাহ, ৯ : ১২০)
এটি হল সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিপরীত, যাকে পরীক্ষা করা হয় তার নিজ থেকে ইচ্ছা করা ছাড়াই, যেমন অসুস্থ হওয়া, মৃত্যুবরণ করা বা তার কাছ থেকে কিছু চুরি হয়ে যাওয়া; তবে এই ব্যক্তি কেবল তার সবরের জন্য পুরস্কৃত হবে, বাস্তবে ঘটে যাওয়া দুর্দশার জন্য নয় আর এ থেকে যে ফল আসে সেটির জন্যও নয়।
আর যেসব ব্যক্তি আল্লাহ'র প্রতি তাদের ঈমানের কারনে এবং আল্লাহ ও তার রসূল (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি আনুগত্যের কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়; আর এর ফলে কষ্টে পতিত হয়, অসুস্থ হয়, বন্দী বা অবরুদ্ধ হয়, তাদের ভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়, তাদের সম্পদ ও পরিবার তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়, প্রহার ও অপব্যবহার করা হয়, অথবা তাদের অবস্থা ও সম্পদ খর্ব করা হয়; তবে তারা নবীদের আর তাদের অনুসারীদের পথের উপরই থাকেন যেমনটি ছিলেন মুহাজিরগণ।
তাই যেগুলোর কারনে এসব ব্যক্তির ক্ষতি হয়েছে, সেগুলোর কারনে তারা পুরস্কৃত হবেন আর এর কারনে তাদের জন্য একটি সৎ কর্ম লিপিবদ্ধ করা হবে, যেমনটি একজন মুজাহিদ পুরস্কৃত হোন ক্ষুধা লাগা, পিপাসিত হওয়া আর দুর্দশাগ্রস্ত হওয়ার ফলে অবসাদের শিকার হওয়ার জন্য আর কাফিরদেরকে ক্ষিপ্ত করে দেওয়ার জন্যও, যদিও এর প্রভাব এমন কিছু না হয় যা সে শারীরিকভাবে প্রদর্শন করে; কিন্তু তার জিহাদ করার ক্রিয়া থেকে সেগুলো ফলপ্রাপ্ত হয়, যা কিনা সে করতে পছন্দ করেছে।
এ ব্যাপারে মতভিন্নতা আছে যে, এটি কি বলা যাবে যে, এ প্রভাবগুলোর জন্য এগুলোর পরিণতি হিসেবে প্রাপ্ত ফলাফলগুলো কারন সম্পর্কিত কর্ম সম্পাদনকারীর কর্ম, নাকি এগুলো আল্লাহ'র কর্ম, অথবা নাকি সেগুলোর কোন কর্ম সম্পাদনকারী নেই? সঠিক মত হল এই যে, সেগুলো কারন সম্পর্কিত কর্ম সম্পাদনকারী আর কারনসমূহের সাকল্যে কর্ম সম্পাদনকারীর মধ্যে ভাগ করা হয়েছে, আর এ কারনেই তার জন্য একটি সৎ কর্ম লিপিবদ্ধ করা হয়।
এই আলোচনার পিছনে উদ্দেশ্য হল, হিংসা করা অন্তরের অন্যতম অসুস্থতা আর এটি এমন এক ব্যাধি যা মানবজাতির অধিকাংশকেই পীড়িত করে এবং কেবল অল্প কিছু ব্যক্তি এ থেকে নিরাপদে থাকতে পারেন। এ কারনেই বলা হয়ে থাকে, "শরীর তো কখনোই হিংসা থেকে মুক্ত নয়, কিন্তু হীনতা একে বের করে নিয়ে আসে আর মহত্ত্ব একে গোপন করে রাখে।"
আল হাসান আল বাসরি কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, "একজন মুসলিমকে কি হিংসা করা যায়?” তিনি জবাব দিলেন, “কিসে আপনাকে ভুলিয়ে দিলো ইউসুফ (আঃ) আর তার ভাইদের কথা, আপনার কি পিতা নেই? আপনার উচিত হল হিংসার উদ্রেক হলে সেটিকে আপনার অন্তরে অন্ধ করে রাখা। কারন আপনি সেটি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না যেটি আপনি বলার বা করার মাধ্যমে সম্পাদন করবেন না।”
টিকাঃ
(৩৭) যেমনটি বর্ণনা করেছেন আল-বুখারি, মুসলিম আর আহমাদ।
📄 হিংসার চিকিৎসা
সুতরাং যে ব্যক্তি নিজেকে এমন অবস্থায় পায় যে, সে তার আত্মায় কারো প্রতি হিংসার আশ্রয় দিয়েছে, তবে তার দায়িত্ব হল সবর ও তাকওয়ার দ্বারা এর চিকিৎসা করা আর তার আত্মায় এটি থাকাটা অপছন্দ করা। যে ব্যক্তিকে হিংসা করা হয়, অনেক ধার্মিক ব্যক্তিই তার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেন না, আর না তারা সাহায্য করেন সে ব্যক্তিকে যে তার উপর যুলুম করে, না তারা তার ন্যায্য সম্পর্কিত আবশ্যকর্তব্য প্রতিষ্ঠা করে। বরং হিংসা করা হয় এমন ব্যক্তিকে যখন কেউ তিরস্কার করে, তখন তারা সেই ব্যক্তির সাথে একমত হয় না বা তাকে তিরস্কারে সাহায্যও করে না, আর না তারা তার প্রশংসনীয় গুণাবলীর উল্লেখ করে। অনুরূপভাবে, কেউ যদি তার প্রশংসা করে তবে তারা নীরব থাকে।
সুতরাং এই ব্যক্তিগুলো যে ব্যক্তির ব্যাপারে হিংসা করা হয়, তার ন্যায্য সম্পর্কিত হুকুম ত্যাগ করার জন্য দায়বদ্ধ। আর তারা এতে যথাযথ সীমা অতিক্রম করেছে যদিও তারা তার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেনি। এই ব্যক্তিগুলোর প্রতিদান এই যে, এর ফলে তাদের ন্যায্যগুলো উপেক্ষিত হবে আর কিছু ক্ষেত্রে তাদের সাথে ন্যায্য আচরন করা হবে না, আর না তাদের সাহায্য করা হবে যে তাদেরকে দমিয়ে রেখেছে তার বিরুদ্ধে; যেমনিভাবে তারা যে ব্যক্তিকে হিংসা করা হয় তাকে সাহায্য করেনি, যে ছিল নিপীড়িত।
আর প্রকৃতপক্ষে কোন ব্যক্তি কথা বা কাজের দ্বারা যে ব্যক্তিকে হিংসা করা হয় তার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করলে সে এর জন্য শাস্তিপ্রাপ্ত হবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে ও সবর অবলম্বন করবে এবং যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে না, তার তাকওয়ার জন্য আল্লাহ তার কল্যাণ করবেন।
📄 হিংসার কারণ
এটি যাইনাব বিনতে জাহশ (রাঃ) এর সাথে ঘটেছিল। তিনি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রীদের মধ্যে থেকে আয়েশা (রাঃ) এর সাথে প্রতিযোগিতা করতেন।
কিছু মহিলার অন্যদের প্রতি হিংসা প্রদর্শন করাটা মহান, বিশেষ করে এটি তাদের জন্য সত্য যারা একজন স্বামীকে বিয়ে করেছে। একজন মহিলা তার স্বামী থেকে বরাদ্দকৃত সময় আরো বেশী পরিমাণে পেতে চায়, কারন কোন কোন সময় অন্যান্য স্ত্রীদের সময় দেওয়ার কারনে তার প্রতি বরাদ্দকৃত সময় সে মিস করে।
এই হিংসা সাধারণভাবে ঘটে থাকে কতৃত্ব বা ধনসম্পদের ৩৮ অংশীদারদের মধ্যে, যখন তাদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি তা থেকে একটি অংশ গ্রহণ করে আর অন্যরা কিছু ছাড়াই বিদায় হয়। এটি তর্ককারীদের মধ্যেও ঘটে থাকে, কারন তারা ঘৃণা করে যে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী তাদের তুলনায় আরো ভালোভাবে তর্ক করবে; যেমনটি হল ইউসুফ (আঃ) এর ভাইদের হিংসা, অথবা আদম (আঃ) এর দুই সন্তানের মধ্যে একজনের অপরের প্রতি হিংসা এক্ষেত্রে এক ভাই অপর ভাই দ্বারা হিংসার কবলে পড়েছিল আল্লাহ কর্তৃক তার ত্যাগ গ্রহণ হওয়ার কারনে, অপর ভাইয়ের ত্যাগ গ্রহণ করা হয়নি, এর ফলে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। আর একটি উদাহারন হল ইয়াহুদি কর্তৃক মুসলিমদের প্রতি হিংসা প্রদর্শন।
বলা হয়ে থাকে, “সর্বপ্রথম যে পাপগুলো দিয়ে আল্লাহকে অমান্য করা হয় সেগুলো তিনটি লোভ, অহংকার আর হিংসা। আদম (আঃ) লোভ করেছিলেন, ইবলিস অহংকার করেছিল আর কাবিল হিংসাবশত হাবিলকে হত্যা করেছিলো।” ৩৯
এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, "এমন তিনটি পাপ আছে যা থেকে কেউই রক্ষা পায় না হিংসা, সন্দেহ আর পূর্বলক্ষণ। আমি কি তোমাদের বলবো যে কি তোমাদেরকে এগুলো থেকে সরিয়ে দিবে যখন তোমার হিংসা হবে তখন ঘৃণা করবে না, যখন তোমার সন্দেহ হবে তখন সন্দেহকে বাস্তবে পরিণত করবে না, আর যখন তুমি পূর্বলক্ষণ দেখবে তখন সেগুলো উপেক্ষা করবে." ৪০
সুনানে বর্ণিত আছে যে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিদের ব্যাধি - হিংসা ও ঘৃণা দ্বারা পীড়িত। এগুলো হল কর্তনকারী; আমি এটি বুঝাচ্ছি না যে সেগুলো চুল কর্তনকারী, বরং সেগুলো দ্বীন কর্তনকারী।” ৪১
সুতরাং রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) হিংসাকে একটি ব্যাধি বলেছেন, যেমনটি তিনি (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে কৃপণতা একটি ব্যাধি-
"আর কোন ব্যাধিটি কৃপণতা থেকে অধিকতর মন্দ?” ৪২
আরেকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, "আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই মন্দ চরিত্র ও আচার-ব্যবহার, নিরর্থক কামনা এবং অসুস্থতা থেকে।”
এখানে অসুস্থতাকে আচার ব্যবহার ও নিরর্থক কামনার পাশাপাশি উল্লেখ করা হয়েছে। আচার-ব্যবহার হল সেগুলো, যেগুলোতে আত্মা এমনভাবে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে যে সেগুলো আত্মার স্বভাব ও প্রকৃতি হয়ে যায়। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ (٤)
“এবং নিঃসন্দেহে তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত।” (সূরা কালাম, ৬৮: ৪)
এই আয়াতের তাফসীরে ইবন আব্বাস, ইবন উনাইনাহ এবং আহমাদ ইবনে হানবাল বলেন, "এর অর্থ হল 'একটি মহান দ্বীনের উপর'"। ইবন আব্বাসের ভিন্ন বর্ণনায় রয়েছে, “দ্বীন ইসলামের উপর।”
এটি একইভাবে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, “কুরআনই ছিল তার (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) চরিত্র।”
আর হাসান আল- বাসরি বলেন, "কুরআনের আচার-ব্যবহারই হল 'চরিত্রের মর্যাদাপূর্ণ মানদণ্ড' "।
'নিরর্থক কামনা-বাসনা' হল সাময়িক অস্বাভাবিক অবস্থা, এবং 'ব্যাধি' হল অসুস্থতা এটি এমন এক দুর্দশা যা অন্তরের ক্ষতি করে আর একে বিকৃত করে।
প্রথম হাদিসটিতে হিংসাকে ঘৃণার সাথে উল্লেখ করা হয়েছে। কারন হিংসুক ব্যক্তি প্রথমে হিংসার শিকার হওয়া ব্যক্তির উপর আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত অনুগ্রহকে অপছন্দ করে, এরপর সে সেই ব্যক্তিকে ঘৃণা করতে শুরু করে। এটা এ কারনে যে, প্রদত্ত অনুগ্রহের প্রতি ঘৃণা করাটা অনুগ্রহপ্রাপ্ত ব্যক্তির প্রতি ঘৃণা করার দিকে পরিচালিত করে। কারন ব্যক্তি যখন আল্লাহ'র অনুগ্রহপ্রাপ্ত হয়, হিংসুক পছন্দ করে যে সেই অনুগ্রহগুলো যেন চলে যায়; আর যে ব্যক্তিকে হিংসা করা হয় তার দ্বারা চলে যাওয়া ছাড়া সেগুলো চলে যাবে না। সুতরাং হিংসুক ব্যক্তি তাকে ঘৃণা করে আর এটি ভালবাসে যে ওই ব্যক্তি অনুগ্রহপ্রাপ্তদের মধ্যে থাকবে না।
হিংসা অবধারিতভাবে কামনা-বাসনা আর ঘৃণার দিকে পরিচালিত করে, যেমনটি আল্লাহ আমাদের জানিয়েছেন আমাদের পূর্ববর্তীদের সম্পর্কে যে তারা পৃথক হয়ে গিয়েছিলো,
إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ وَمَا اخْتَلَفَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ إِلَّا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ ۖ وَمَن يَكْفُرْ بِايَاتِ اللَّهِ فَإِنَّ اللَّهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ
(১৯) “যাদেরকে আল্লাহ'র পক্ষ থেকে কিতাব দেওয়া হয়েছিলো, তাদের কাছে (আল্লাহ'র পক্ষ থেকে) সঠিক জ্ঞান আসার পর তারা (এ জীবনবিধান থেকে বিচ্যুত হয়ে) নিজেরা একে অপরের প্রতি হিংসা বশত (বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে) মতানৈক্যে লিপ্ত হয়ে পড়েছিলো।” (সূরা আল ইমরান, ৩: ১৯)
সুতরাং জ্ঞানের অভাবের কারনে এই পৃথক হয়ে যাওয়া ঘটেনি, বরং তারা সত্য জানত; এটি ঘটার কারন হল তাদের মধ্যে কিছু লোক অপরদের ঘৃণা করতো, যেমনটি হিংসুক ব্যক্তি তাকে ঘৃণা করে যাকে হিংসা করা হয়।
আল-বুখারি ও মুসলিমের সাহিহতে আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, "তোমরা একে অপরকে হিংসা করো না, একে অপরকে ঘৃণা করো না, একে অপরের বিরোধিতা করো না আর সম্পর্ক ছিন্ন করো না; বরং (একে অপরের) ভাই হিসেবে আল্লাহ'র গোলাম হও। একজন মুসলিমের জন্য এটি অনুমোদিত না যে সে তার ভাইয়ের তিন দিনের বেশী সময় ধরে বিচ্ছিন্ন থাকবে এভাবে যে তারা (একে অপরের সাথে) সাক্ষাৎ করবে না আর একজন অপরজনকে উপেক্ষা করবে; এবং তাদের মধ্যে সর্বোত্তম হল যে শুরুতেই সালাম দেয়।” ৪৩
আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত এক নির্ভরযোগ্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে সত্তার হাতে আমার আত্মা রয়েছে তার শপথ, তোমাদের মধ্যে কেউই ঈমান আনলো না যতক্ষণ না পর্যন্ত সে নিজের জন্য যা ভালবাসে তার ভাইয়ের জন্যও তা ভালবাসে।” ৪৪
মহান আল্লাহ বলেন,
وَإِنَّ مِنكُمْ لَمَن لَّيُبَطِّئَنَّ فَإِنْ أَصَابَتْكُم مُّصِيبَةٌ قَالَ قَدْ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيَّ إِذْ لَمْ أَكُن مَّعَهُمْ شَهِيدًا (۷۲) وَلَئِنْ أَصَابَكُمْ فَضْلٌ مِّنَ اللَّهِ لَيَقُولَنَّ كَأَن لَّمْ تَكُن بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُ مَوَدَّةٌ يَا لَيْتَنِي كُنتُ مَعَهُمْ فَأَفُوزَ فَوْزًا عَظِيمًا (۷۳)
"তোমাদের মধ্যে অবশ্যই এমন (মুনাফিক) লোক থাকবে, যে (যুদ্ধের ব্যাপারে) গড়িমসি করবে, তোমাদের উপর কোন বিপদ-মুসিবত এলে সে বলবেঃ আল্লাহ সত্যিই আমার উপর বড় অনুগ্রহ করেছেন, (কেননা) আমি সে সময় তাদের সাথে ছিলাম না। আর যদি তোমাদের উপর আল্লাহ'র পক্ষ থেকে (বিজয়ের) অনুগ্রহ আসে, তখন সে (এমনভাবে) বলে, যেন তার সাথে তোমাদের কোন রকম বন্ধুত্বই ছিল না, সে (তখন আরো) বলেঃ কতই না ভালো হতো যদি আমি তাদের সাথে থাকতাম, তাহলে (আজ) আমিও অনেক বড় সফলতা অর্জন করতে পারতাম।” (সূরা নিসা, ৪: ৭২-৭৩)
সুতরাং পিছনে পড়ে থেকে গড়িমসি করা এসব লোকগুলো নিজেদের জন্য যেটি পছন্দ করে, তাদের অপর মুসলিম ভাইদের জন্য তা পছন্দ করেনি। বরং যদি মুসলিমেরা কোন বিপদে পড়ে দুর্দশাগ্রস্ত হয়, তখন তারা আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় এজন্য যে কেবল সেই মুসলিমরাই দুর্দশাগ্রস্ত হয়েছে; আর যদি মুসলিমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হয়, তবে তারা আনন্দিত হয় না বরং তারা আশা করে যে তাদেরও সেই অনুগ্রহের এক অংশ যদি থাকতো!
সুতরাং এই দুনিয়া থেকে কিছু পাওয়া ছাড়া বা এই দুনিয়ার কোন অমঙ্গল তাদের থেকে সরে যাওয়া ছাড়া তারা আনন্দিত হয় না। এটি ছিল আল্লাহ ও তার রসূল (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এবং আখিরাতের আবাসকে না ভালোবাসার কারনে। কারন, যদি তারা এগুলোর প্রতি অন্তরে ভালোবাসা রাখতো, তবে তারা তাদের ভাইদের ভালোবাসতো আর তাদের ভাইদের আল্লাহ'র পক্ষ থেকে অনুগ্রহপ্রাপ্ত হওয়াকে ভালোবাসতো আর তাদের মুসলিম ভাইদের বিপদ - যা তাদের দুর্দশা করেছে, তা দ্বারা তারা আহত হতো।
যে ব্যক্তি মুসলিমদের আনন্দিত করার বিষয়ে আনন্দিত হয় না এবং মুসলিমদের কষ্ট দেয় এমন বিষয়ে কষ্টবোধ করে না, সে তাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়।
আল-বুখারি ও মুসলিমের সাহিহতে আমির আশ-শা'বি থেকে বর্ণিত আছে যে তিনি বলেনঃ আমি নু'মান বিন বাশিরকে খুৎবা দিতে শুনলাম, তিনি বলেছিলেন যে তিনি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেন, "পরস্পর বন্ধুত্ব, দয়া, একে অপরের প্রতি আকর্ষণ ও ঐক্যের ক্ষেত্রে মুমিনের উদাহারন হল একটি শরীর। যখন শরীরের কোন একটি অংশ পীড়িত হয়ে পড়ে তখন শরীরের অবশিষ্ট অংশের ঘুম আসে না। অস্বস্তিবোধ হয় আর জ্বর এসে যায়।” ৪৫
আল-বুখারি ও মুসলিমের সাহিহতে আবু মুসা আল- আশ'আরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, "মুমিন মুমিনের জন্য ইমারতের ন্যায়, যার এক অংশ অন্য অংশকে মজবুত করে রাখে।” এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) হাতের আঙ্গুলগুলো আরেক হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে ঢুকালেন। ৪৬
টিকাঃ
(৩৮) অথবা যাদের ইলম রয়েছে, এ কারনেই হাদিসের আলিমরা সেই সব আলিমদের বর্ণনা গ্রহণ করেন না যারা তাদের সমসাময়িক আলিম কর্তৃক সমালোচিত।
(৩৯) এই বর্ণনাটি জয়ীফ যা হাসান আল-বাসরি থেকে মুরসাল বর্ণনায় আবু আশ-শাইখ আর তাবারানি বর্ণনা করেছেন।
(৪০) মুসনাদে আহমাদ (১৪১২, ১৪৩০) এবং তিরমিযি (২৫১২) তে এটি বর্ণিত হয়েছে। এর ইসনাদে অপরিচিত রাবি রয়েছে, কিন্তু হাদিসের সাক্ষী আছে, এটি আবু আদ-দারদা আর আবু- হুরাইরা বর্ণনা করেছেন যা হাদিসটিকে জোরদার করেছে। মাজমা' আয-যাওয়াইদ (১০/৮) এ লেখক এই হাদিসটি আল-বাজ্জারের সাথে সম্পর্কযুক্ত করেছেন। আল- মুনযিরি বলেছেন যে এর ইসনাদ ভালো।
(৪১) তিরমিযি, তাবারানি, মুসতাদরাক হাকিম; তারা বলেছেন যে হাদিসটি সহিহ
(৪২) হাদিসটি ইমাম আহমাদ, হাকিম এবং অন্যান্যরা বর্ণনা করেছেন। হাদিসটি সহিহ। দেখুনঃ সাহিহ আল-জামি' (৭১০৪) এবং আত- তাহাওি'র শারহ মুসকিল আল-আসারের উপর শু'আইব আল-আরনা'উতের টীকা।
(৪৩) সাহিহ বুখারি- ৮/৫৮, হাদিস ৯১; সাহিহ মুসলিম ৪/১৩৬০, হাদিস ৬২০৫, ৬২১০
(৪৪) সাহিহ বুখারি- ১/১৯, হাদিস ১২; সাহিহ মুসলিম ১/৩১, হাদিস ৭২,৭৩
(৪৫) সাহিহ বুখারি- ৮/২৬, হাদিস ৪০; সাহিহ মুসলিম ৪/১৩৬৮, হাদিস ৬২৫৮
(৪৬) সাহিহ বুখারি- ৮/৩৪, হাদিস ৫৫; সাহিহ মুসলিম ৪/১৩৬৮, হাদিস ৬২৫৭