📄 হাসাদ ও গিবতার মাঝে
মৌলিকভাবে, হিংসা ঘটে অপর ব্যক্তি ক্ষমতা ও কতৃত্ব অর্জন করলে; নতুবা কর্ম সম্পাদনকারী ব্যক্তিকে সাধারণত হিংসা করা হয় না, যদিও সেই ব্যক্তি অন্যদের তুলনায় আরও অধিকতর খাবার, পানীয় ও স্ত্রী পাওয়ার অনুগ্রহ লাভ করে, যা কিনা ক্ষমতা ও কতৃত্ব – এই দুটো অনুগ্রহের বিপরীত, কারন সেগুলো হল অত্যধিক পরিমাণ হিংসার কারন।
এ কারনেই আপনি দেখবেন যে হিংসা পরিচালিত হয় জ্ঞানী লোকদের প্রতি, যাদের লোকজনের মধ্য থেকে অনুসারী রয়েছে; যা আপনি এমন অন্য কোন ব্যক্তিদের দিকে পরিচালিত হতে দেখতে পাবেন না যাদের এমন কোন অনুসারী নেই।
অনুরূপভাবে, সেই ব্যক্তির প্রতিও হিংসা পরিচালিত হয়, যে তার ধনসম্পদ দান করার মাধ্যমে অনুসারীদের আকৃষ্ট করে, কারন লোকেরা এই ব্যক্তির উপকার করে তার অন্তরকে পরিপুষ্ট করার মাধ্যমে আর এই ব্যক্তি লোকদের উপকার করে তাদের শরীরগুলোকে পরিপুষ্ট করার মাধ্যমে; যা এই উভয় বিষয়ে তাদেরকে সংশোধন করবে, আর মানবজাতির সেটির প্রয়োজন রয়েছে। এ কারনেই সকল অসম্পূর্ণতা থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত মহান আল্লাহ দুটো দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন,
ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا عَبْدًا مَّمْلُوكًا لَّا يَقْدِرُ عَلَى شَيْءٍ وَمَن رَّزَقْنَاهُ مِنَّا رِزْقًا حَسَنًا فَهُوَ يُنفِقُ مِنْهُ سِرًّا وَجَهْرًا هَلْ يَسْتَوُونَ ۚ الْحَمْدُ لِلَّهِ ۚ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ (٧٥) وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا رَّجُلَيْنِ أَحَدُهُمَا أَبْكَمُ لَا يَقْدِرُ عَلَى شَيْءٍ وَهُوَ كَلٌّ عَلَى مَوْلَاهُ أَيْنَمَا يُوَجِّهَهُ لَا يَأْتِ بِخَيْرٍ ۛ هَلْ يَسْتَوِي هُوَ وَمَن يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ ۛ وَهُوَ عَلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ (٧٦)
“আল্লাহ (এখানে অপরের) অধিকারভুক্ত একটি দাসের উদাহারন দিচ্ছেন, যে (নিজে থেকে) কোন কিছুই করার ক্ষমতা রাখে না; এবং (উদাহারন দিচ্ছেন) এমন ব্যক্তির (সাথে), যাকে আমি আমার পক্ষ থেকে উত্তম রিযক দান করেছি এবং সে তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে চলেছে; (তোমরা কি মনে করো) এরা উভয়েই সমান? সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ'র জন্য, কিন্তু এদের অধিকাংশ মানুষই জানে না।
আল্লাহ আরো দুজন মানুষের উদাহারন দিচ্ছেন, তাদের একজন হল বাকশক্তিহীন - সে কোন কিছুই নিজে থেকে করতে (বা বলতে) পারে না, সে (সব সময়) নিজের মনিবের উপর বোঝা হয়ে থাকে, যেখানেই সে তাকে পাঠায় না কেন, সে কোন ভালো কিছু নিয়ে আসতে পারে না; এ (অক্ষম) ব্যক্তিটি কি সমান হতে পারে সে ব্যক্তির, যে (নিজে মূক তো নয় বরং) সে অন্য মানুষদের ন্যায়ের নির্দেশ দেয় আর যে আছে সরল পথে?” (সূরা নাহল, ১৬: ৭৫-৭৬)
আল্লাহ এই দুটো দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন তার নিজের পবিত্র সত্তা আর তাঁকে ছাড়া যেটির ইবাদাত করা হয় সেটির জন্য। কারন, নিঃসন্দেহে মূর্তির কোন কাজ করারই সামর্থ্য নেই যে এটি কারো উপকার করবে, আর এর না আছে কোন কিছু বলার সামর্থ্য যে সেটির মাধ্যমে উপকার করবে। সুতরাং, কারো অধিকারে থাকা একজন সম্পূর্ণ ক্ষমতাহীন দাস (অর্থাৎ, মূর্তি) এবং আরেকজন দাস যাকে আল্লাহ প্রচুর রিযক দিয়েছেন যা থেকে সে প্রকাশ্য ও গোপনে দান করে; যে দাস উপকার করতে অক্ষম এবং যে দাস গোপনে ও প্রকাশ্যে লোকদের উপকারে সক্ষম; তবে কি উপকারে অক্ষম দাস এবং গোপনে ও প্রকাশ্যে লোকদের জন্য উপকারে সক্ষম দাস এরা উভয়ে কখনো সমান হতে পারে? এবং সকল ধরনের ত্রুটি থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত আল্লাহ তার দাসদের উপর কল্যাণ প্রদানে সক্ষম এবং তিনি ক্রমাগত সেটিই করে যাচ্ছেন। সুতরাং কিভাবে এই অক্ষম দাস (অর্থাৎ, মূর্তি), যে কিনা কিছুই করতে সক্ষম নয়, তাকে আল্লাহ'র সাথে এরূপে তুলনা করা হয় যে আল্লাহ'র পাশাপাশি সেটির ইবাদাত করা হবে? সুতরাং এটি হল এক ব্যক্তির দৃষ্টান্ত, যাকে আল্লাহ ধনসম্পদ প্রদান করেছেন, যা থেকে সে দিন-রাত ব্যয় করে।
দ্বিতীয় দৃষ্টান্তে দুটো ব্যক্তিকে বিবেচনা করা হয়েছে, এদের একজন হল বাকশক্তিহীন। সে না পারে বুঝতে আর না পারে কথা বলতে, এবং সে কিছুই করতে সক্ষম নয় আর প্রকৃতপক্ষে সে তার মনিবের উপর একটি বোঝা; কারন মনিব যে পথে তাকে নির্দেশ করে সে কোন কল্যাণ নিয়ে আসতে পারে না, তাই সে একেবারেই কোন কাজের নয়। অপর ব্যক্তি হলেন একজন ন্যায়পরায়ণ আলিম, যিনি ন্যায়ের আদেশ করেন আর ন্যায়সঙ্গতভাবে কাজ করেন, আর সরল পথের উপর অবস্থান করেন। এই ব্যক্তি সেই ব্যক্তির মতোই, যার উপর আল্লাহ হিকমত প্রদান করেন এবং তিনি তা অনুযায়ী আমল করেন ও তা শিক্ষা দেন। আল্লাহ তাঁর নিজের জন্য এই দৃষ্টান্তটি উপস্থাপন করেছেন, কারন তিনিই হলেন সর্বজ্ঞানী, সর্বাধিক ন্যায়পরায়ণ, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আর তিনি ন্যায়পরায়ণের আদেশ করেন। তিনি তাঁর সৃষ্টিকে সরল পথের উপর ন্যায়পরায়নতার সাথেই প্রতিপালন করছেন, যেমনটি তিনি বলেন,
شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ (۱۸)
"(স্বয়ং) আল্লাহ সাক্ষী দিচ্ছেন যে তিনি ছাড়া আর অন্য কোন ইলাহ নেই, ফেরেশতারা আর জ্ঞানবান লোকেরাও (এই একই সাক্ষ্য দিচ্ছে), একমাত্র আল্লাহই ন্যায় ও ইনসাফ কার্যকর করেন, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা আল ইমরান, ৩ : ১৮)
এবং হুদ (আঃ) বলেছিলেন -
إِنَّ رَبِّي عَلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ (٥٦)
“নিশ্চয়ই আমার রব সরল পথের উপর রয়েছেন।” (সূরা হুদ, ১১ : ৫৬)
এ কারনেই লোকেরা আল- 'আব্বাসের ঘরের প্রশংসা করতোঃ 'আবদুল্লাহ লোকদের শিক্ষাদান করতেন আর তার ভাই তাদেরকে খাবার খাওয়াতেন, তাই লোকেরা এ কারনে তাদের প্রশংসা করতো।
মুত্তাওিয়াহ দেখলেন যে লোকেরা ইবন উমারকে হাজ্জের নিয়মকানুন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে আর ইবন উমার তাদেরকে ফাতওয়া দিলেন, এটি দেখে মুত্তাওিয়াহ বললেন, "আল্লাহ কসম, এটিই হল মর্যাদা” অথবা অনুরূপ কিছু।
📄 আস-সিদ্দিক (রাঃ) এবং উমার (রাঃ) এর মধ্যে প্রতিযোগিতা
সাদকা করার ব্যাপারে আবু বকর (রাঃ) এর সাথে 'উমার বিন আল-খাত্তাব (রাঃ) এর প্রতিযোগিতার ব্যাপারটি জানা যায় সাহিহ বুখারিতে বর্ণিত 'উমার বিন আল-খাত্তাব (রাঃ) এর হাদিস থেকে।
তিনি বলেন, “রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সাদকা করার আদেশ দিলেন, তাই আমি আমার অধিকারে থাকা সম্পদগুলো একত্রিত করলাম। আমি নিজেকে বললাম, 'যদি এমন কোন দিন আসে, যেদিন আমি আবু বকরের থেকে অধিকতর উত্তম হতে পারবো, তবে এটিই সেই দিন।' এরপর আমি আমার সম্পদের অর্ধেক সাথে করে নিয়ে গেলাম আর রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, 'তুমি তোমার পরিবারের জন্য কি রেখে এসেছো?' আমি জবাব দিলাম, 'একই পরিমাণ সম্পদ'। এরপর আবু বকর তার অধিকারে থাকা সব সম্পদ নিয়ে আসলেন। রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, 'তোমার পরিবারের জন্য তুমি কি রেখে এসেছো?' তিনি জবাব দিলেন, 'আমি তাদের জন্য আল্লাহ ও তার রসূল (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) কে রেখে এসেছি।' আমি এরপর আবু বকরকে বললাম, 'আমি কখনোই কোন কিছুতে আপনার থেকে অধিকতর উত্তম হতে পারবো না।”
সুতরাং হাদিস থেকে জানা যায় যে, 'উমার (রাঃ) আবু বকর (রাঃ) এর সাথে প্রতিযোগিতা করলেন আর তিনি অনুমোদিত হিংসা (গুতবা) ও করলেন, কিন্তু আবু বকর আস-সিদ্দিক (রাঃ) এর অবস্থা তার তুলনায় উত্তম ছিল।
এভাবেই আবু বকর (রাঃ) অন্যদের অবস্থার প্রতি তার অনাসক্তির কারনে সাধারণত এই ধরনের প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করতেন।
📄 মূসা (আঃ) ওমরা প্রদর্শন করেছিলেন
মুসা (আঃ) এর ক্ষেত্রেও অনুরূপ ঘটনা ঘটেছিলো। মিরাজের হাদিস থেকে জানা যায় যে মুসা (আঃ) প্রতিযোগিতা করেছিলেন আর রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ব্যাপারে হিংসা অনুভব করেছিলেন -
“রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) মিরাজের রাতে তাকে অতিক্রম করে যাওয়ার সময় তিনি কেঁদে উঠলেন। তাকে কাঁদার কারন জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জবাব দিলেন, 'আমি কাঁদছি কারন আমার পর আল্লাহ'র এমন একজন গোলামকে পাঠানো হবে যার উম্মাত আমার উম্মাতের থেকে বেশী পরিমানে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ” ৩৫
সাহিহ-তে ছাড়াও এই হাদিসটি ভিন্ন বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে -
"আমরা একজন ব্যক্তিকে অতিক্রম করলাম, যখন তিনি উচ্চস্বরে বলছিলেন, 'আপনি তাকে অনুগ্রহ দান করেছেন আর তাকে (আমার উপর) সম্মান দিয়েছেন।' সুতরাং আমরা তার কাছে গেলাম আর তাকে আমাদের সালাম দিলাম। তিনি আমাদের সালামের জবাব দিয়ে বললেন, 'হে জিবরাঈল, আপনার সাথে ইনি কে?' তিনি জবাব দিলেন, 'ইনি হলেন আহমাদ।' মুসা (আঃ) বললেন, 'স্বাগতম হে নিরক্ষর নবী, যিনি তার রবের বানী বহন করলেন আর আন্তরিকভাবে তার জাতিকে উপদেশ দিলেন।' এরপর আমরা এগুতে লাগলাম। আমি বললাম, 'হে জিবরাঈল, ইনি কে ছিলেন?' তিনি জবাব দিলেন, 'ইনি ছিলেন মুসা বিন 'ইমরান।' আমি বললাম, 'আর তিনি কার কাছে অনুযোগ করছিলেন?' তিনি জবাব দিলেন, 'তিনি আপনার সম্পর্কে আপনার রবের কাছে অনুযোগ করছিলেন।' আমি বললাম, 'তার রবের প্রতি তিনি তার স্বর উঁচু করলেন?' তিনি জবাব দিলেন, 'নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সত্যবাদিতা সম্পর্কে জানতেন।' ”
সুতরাং উমার (রাঃ) এর ব্যাপারটিও মুসা (আঃ) এর অনুরূপ। আমাদের রসূল (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অবস্থা মুসা (আঃ) এর থেকেও শ্রেষ্ঠত্বর হওয়ার কারনে তাকে (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন অনুমোদিত হিংসা আচ্ছন্ন করেনি।
টিকাঃ
(৩৫) বুখারি ও মুসলিমে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে
📄 উঁচু মর্যাদা বিশিষ্ট ব্যক্তি ওমরা থেকে সুরক্ষিত
অনুরূপভাবে, সাহাবীদের মধ্য থেকে আবু 'উবাইদাহ বিন জাররাহ (রাঃ) আর তার মতো অন্যান্য সাহাবীরা এই ধরনের চিন্তা থেকে মুক্ত থাকার কারনে তারা সে সকল ব্যক্তি থেকে অধিকতর মর্যাদাপূর্ণ ছিলেন, যারা প্রতিযোগিতা করতেন আর গুতবা প্রদর্শন করতেন, যদিও এটি প্রদর্শন করা অনুমোদিত। এ কারনেই আবু উবাইদাহ (রাঃ) “এই উম্মাহ'র একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি” ৩৬ হিসেবে আখ্যায়িত হওয়ার যোগ্য। কারন বিশ্বস্ত ব্যক্তির যদি কোন প্রতিযোগিতা না থাকে আর যেটি তাকে ন্যস্ত করা হয় সেটির জন্য তার নিজের মধ্যে কামনা না থাকে, তবে বিশ্বাস করার ব্যাপারে তিনি সবচেয়ে বেশী উপযুক্ত। যে ব্যক্তি বৃহত্তর বিষয়গুলোতে কোন প্রতিযোগিতা করার ব্যাপারে আচ্ছন্ন না হওয়ার ব্যাপারে পরিচিত, ক্ষুদ্রতর বিষয়গুলোও তাকে ন্যস্ত করা হয়; আর যে ব্যক্তির পক্ষে ধনসম্পদ থেকে চুরি করার কোন কারন নেই, তাকে ধনসম্পদের দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়। যে ব্যক্তি নিজের মধ্যে বিশ্বাসঘাতকতা খুঁজে পায় যার সাদৃশ্য হল ভেড়ার দায়িত্ব পাওয়া নেকড়ের ন্যায়, তবে তাকে যেটি ন্যস্ত করা হয়েছে সেটির জন্য তার অন্তরে কামনা থাকার কারনে যে ব্যাপারে তার উপর আস্থা রাখা হয়েছে তা সে সম্পাদন করতে পারবে না।
ইমাম আহমাদের মুসনাদে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি বলেনঃ আমরা রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে বসা ছিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, "এখন তোমাদের সামনে একজন জান্নাতী ব্যক্তি উপস্থিত হবে।” কিছুক্ষন পর এক আনসারী ব্যক্তি বাম হাতে তার জুতো ধরে নতুনভাবে উযু করা অবস্থায় উপস্থিত হলেন। তার দাঁড়ি থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় উযুর পানি ঝরছিল। দ্বিতীয় দিনও আমরা অনুরূপভাবে বসেছিলাম, তখনো তিনি (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) সেই কথাই বললেন আর ওই লোকটি সেই একইভাবে আসলেন। তৃতীয় দিনও সেই একই ব্যাপার ঘটলো।
অতঃপর রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন থেকে উঠে গেলেন, তখন আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল 'আস (রাঃ) তার পিছু নিলেন। তাকে তিনি বললেন, "জনাব, আমার আর আমার পিতার মধ্যে কিছু বাদানুবাদ হয়েছে। তাই আমি শপথ করে বসেছি যে তিন দিন পর্যন্ত আমি বাড়িতে প্রবেশ করবো না। সুতরাং যদি দয়া করে আমাকে অনুমতি দেন তবে এই দিনগুলো আমি আপনার বাড়িতে কাটিয়ে দিবো।” তিনি বললেন, "বেশ, ঠিক আছে।”
সুতরাং তিন দিন আমি তার সাথে তার বাড়িতে অতিবাহিত করলাম। দেখলাম যে তিনি রাতে তাহাজ্জুদের সালাতও আদায় করলেন না। শুধু এতটুকু করলেন যে, জেগে উঠে বিছানায় শুয়ে শুয়েই আল্লাহ'র যিকর ও তার শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করতে থাকলেন। হ্যা, তবে এটি অবশ্যই ছিল যে, আমি তার মুখে ভালো কথা ছাড়া আর কিছুই শুনিনি।
তিন রাত অতিবাহিত হলে তার আমল আমার কাছে হালকা লাগলো। অতঃপর আমি তাকে বললাম, "জনাব, আমার ও আমার পিতার মধ্যে কোন বাদানুবাদ হয়নি এবং অসন্তুষ্টির কারনে আমি বাড়িও ছাড়িনি। বরং প্রকৃত ব্যাপার এই যে, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) উপর্যুপরি তিন দিন বললেন যে, এখনই একটি জান্নাতি লোক আসবে, আর তিন দিনই আপনার আগমন ঘটে। তাই আমি ইচ্ছা করলাম কয়েকদিন আপনার সাহচর্যে আমি কাটিয়ে দিবো। এরপর এটি লক্ষ্য করবো আপনি এমন কি আমল করেন যার কারনে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবিতাবস্থাতেই আপনার জান্নাতি হওয়ার সুসংবাদ আমাদেরকে প্রদান করলেন। তাই আমি এই কৌশল অবলম্বন করলাম এবং তিন দিন পর্যন্ত আপনার খেদমতে থাকলাম, যেন আপনার আমল দেখে আমিও ঐরূপ আমল করে জান্নাতবাসী হতে পারি। কিন্তু আমি তো আপনাকে কোন নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ আমল করতে দেখলাম না আর ইবাদাতেও তো অন্যদেরকে ছাড়িয়ে যেতে দেখলাম না। এখন আমি আপনার কাছ থেকে বিদায় গ্রহণ করছি। কিন্তু বিদায় বেলায় আমি আপনার কাছ থেকে জানতে চাই, এমন কি আমল করেন যে যার কারনে স্বয়ং রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনার জান্নাতি হওয়ার কথা বললেন?”
উত্তরে তিনি আমাকে বললেন, "আপনি আমাকে যে আমল করতে দেখেছেন এটি ছাড়া অন্য কোন বিশেষ ও গোপনীয় আমল আমি করি না।”
তার এ জবাব শুনে আমি তার কাছ থেকে বিদায় গ্রহণ করে চলতে শুরু করলাম। অল্প দূরে গিয়েছি, ইতিমধ্যে তিনি আমাকে ডাক দিয়ে বললেন, "আমার একটি আমল রয়েছে, সেটা এই যে, আমি কখনো কোন মুসলমানের প্রতি হিংসা পোষণ করিনি আর কখনো কোন মুসলমানের অমঙ্গল কামনা করিনি।”
আমি তার কথা শুনে বললাম, "হ্যা, এবার আমার জানা হয়ে গেছে যে, আপনার এই আমলই আপনাকে এই মর্যাদায় পৌঁছে দিয়েছে। আর এটি তো এমনই এক আমল যে, অনেকেই এটির ক্ষমতা রাখে না।”
সুতরাং আবদুল্লাহ বিন আমর তাকে যা বললেন – “হ্যা, এবার আমার জানা হয়ে গেছে যে, আপনার এই আমলই আপনাকে এই মর্যাদায় পৌঁছে দিয়েছে। আর এটি তো এমনই এক আমল যে, অনেকেই এটির ক্ষমতা রাখে না।” – এটি নির্দেশ করে যে, তার মধ্যে হিংসার অনুপস্থিতি ছিল আর তিনি সব ধরনের হিংসা থেকে নিরাপদ ছিলেন। এ কারনেই আল্লাহ আনসারদের ব্যাপারে প্রশংসা করে বলেছেন -
وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمْ حَاجَةً مِّمَّا أُوتُوا وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ (۹)
"...এবং মুহাজিরদের যা দেওয়া হয়েছে তার জন্য তারা অন্তরে আকাংখা পোষণ করে না, আর তারা নিজেদের উপর তাদেরকে প্রাধান্য দেয় নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও...।" (সূরা হাশর, ৫৯ : ৯)
এর অর্থ হল আনসারদের মুহাজির ভাইদেরকে যা দেওয়া হয় সেটি। মুফাসসিররা বলেছেন, "মুহাজিরদের যা প্রদান করা হয় সে ব্যাপারে তাদের (আনসারদের) অন্তরে হিংসা ও ঘৃণা থাকে না।” মুফাসসিরদের মধ্যে কেউ বলেন, "ফাই এর মাল থেকে তাদের যা প্রদান করা হয়।" আর অন্যান্যরা বলেছেন, "তাদেরকে যে প্রাধান্য ও অনুগ্রহ প্রদান করা হয়।”
সুতরাং মুহাজিরদের যে ধনসম্পদ আর মর্যাদা দেওয়া হয় সেগুলোর ব্যাপারে তারা কোন প্রয়োজন খুঁজেন না, যদিওবা এই ধরনের ব্যাপারগুলোতে হিংসা জাগ্রত হয়।
আওস আর খাজরাজ গোত্রের মধ্যে দ্বীনের ব্যাপারে প্রতিযোগিতা হতো, যেমন যদি এদের একটি গোত্র এমন কিছু করে যেটির কারনে তারা আল্লাহ ও তার রসূল (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুগ্রহপ্রাপ্ত বলে গণ্য হবে, তবে অপর গোত্রও একই কাজ করার ব্যাপারে কামনা রাখতো। সুতরাং এটি ছিল এমনই এক প্রতিযোগিতা যা তাদেরকে আল্লাহ'র নিকটবর্তী করতো। আল্লাহ বলেন,
وَفِي ذَلِكَ فَلْيَتَنَافَسِ الْمُتَنَافِسُونَ (٢٦)
"এবং এর জন্য প্রতিযোগীরা প্রতিযোগিতা করুক।” (সূরা মুতাফফিফিন, ৮৩ : ২৬)
টিকাঃ
(৩৬) সাহিহ বুখারি ও সাহিহ মুসলিমে এর বর্ণনা রয়েছে।