📘 অন্তরের ব্যাধি সমূহ ও তার চিকিৎসা > 📄 হাসাদের প্রকারভেদ

📄 হাসাদের প্রকারভেদ


যথাযথভাবে বলতে গেলে হাসাদ (হিংসা) হল ঘৃণা, আর যে ব্যক্তির ব্যাপারে হিংসা করা হয় তার ভালো অবস্থাকে অপছন্দ করা। এটি দুই ধরনের-

(১) যে ব্যক্তির ব্যাপারে হিংসা করা হয়, তাকে প্রদান করা অনুগ্রহগুলোকে অবাধে অপছন্দ করা। এটি এমন ধরনের হিংসা যা নিন্দার অধীন। যখন একজন ব্যক্তি কোন কিছু ঘৃণা করে তখন সে তার সেই ঘৃণিত বিষয়বস্তুর অস্তিত্বের দ্বারা আহত হয় ও দুঃখ পায়; আর এটি তার অন্তরে এমনই এক অসুস্থতায় পরিণত হয় যে, যে ব্যক্তির ব্যাপারে ঈর্ষা করা হয় সে ব্যক্তি থেকে অনুগ্রহ দূর হলে হিংসুক ব্যক্তি তৃপ্তি পায়, যদিও এর ফলে তার আত্মার বেদনা দূর হওয়া ছাড়া তার কোন লাভ হয় না।

কিন্তু যে ব্যক্তিকে হিংসা করা হয় সে ব্যক্তিকে ক্রমাগত পর্যবেক্ষণের ফল ছাড়া এই বেদনা দূর হয় না, যাতে করে অনুগ্রহ দূর হওয়ার পর হিংসুক ব্যক্তি বেদনা থেকে মুক্তি পায়; কিন্তু অসুস্থ ব্যক্তির অবস্থার ন্যায় এই ব্যাপারটা অধিকতর তীব্র হয়ে পড়ে, কারন এটি সম্ভব যে এই অনুগ্রহ বা এর অনুরূপ কিছু সেই ব্যক্তির কাছে ফিরে যাবে যেটির ব্যাপারে হিংসা করা হয়। এ কারনেই দ্বিতীয় দল ব্যক্তি বলেছেন, "এটি হল অনুগ্রহ দূর হওয়ার কামনা", কারন নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি নিজের উপর ছাড়া অন্য কারো উপর অনুগ্রহ প্রদান অপছন্দ করে, সে সেগুলো দূর হয়ে যাওয়ার জন্য কামনা করে।

(২) ব্যক্তি তার উপর অন্য কোন ব্যক্তির শ্রেষ্ঠ হওয়াকে অপছন্দ করে আর সেই ব্যক্তি অনুগ্রহপ্রাপ্ত ব্যক্তির মতো বা তার চেয়েও অধিকতর উত্তম হওয়ার কামনা রাখে; তাই এটিও এক ধরনের হিংসা, যাকে বলে গুতবা। আল-বুখারি আর মুসলিম বর্ণিত ইবনে মাস'উদ (রাঃ) ও ইবনে উমার (রাঃ) এর বর্ণিত হাদিস থেকে জানা যায় যে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) এটিকে হাসাদ বলে উল্লেখ করেছেন।

ইবনে মাস'উদ (রাঃ) এর বর্ণনায় রয়েছে যে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, "কেবলমাত্র দুটো ব্যাপারেই হিংসা (হাসাদ) করা যায়- সে ব্যক্তির উপর যাকে আল্লাহ তা'আলা সম্পদ দিয়েছেন, এরপর তাকে হক পথে অকাতরে ব্যয় করার ক্ষমতা দেন; সে ব্যক্তির উপর যাকে আল্লাহ তা'আলা হিকমত দান করেছেন, এরপর সে তার সাহায্যে ফয়সালা করে ও তা শিক্ষা দেয়।” ৩২

ইবনে উমার (রাঃ) বর্ণনায় রয়েছে যে তিনি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেন, “দুটো বিষয় ছাড়া অন্য কোন ব্যাপারে হিংসা (হাসাদ) করা যায় না। একটি হল, আল্লাহ যাকে এই কিতাবের (কুরআনের) জ্ঞান দান করেছেন আর সে তদনুযায়ী দিন-রাত আমল করে; আর অপরটি হল, আল্লাহ যাকে সম্পদ দান করেছেন আর সে তা থেকে রাত-দিন (আল্লাহ'র পথে) সাদকা করে।” ৩৩

আবু হুরায়রা (রাঃ) এর বর্ণনায় রয়েছে যে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, "দুই ব্যক্তি ছাড়া আর কারো সাথে হিংসা (হাসাদ) করা যায় না। এক ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ তা'আলা কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন আর সে তা দিন-রাত তিলাওয়াত করে, আর তা শুনে প্রতিবেশীরা তাকে বলেন, 'হায়! আমাদেরকে যদি এরুপ জ্ঞান দেওয়া হতো, যেরূপ জ্ঞান অমুককে দেওয়া হয়েছে, তাহলে আমিও তার মতো আমল করতাম।' অন্য আরেক ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন আর সে সম্পদ সত্য ও ন্যায়ের পথে ব্যয় করে। এ অবস্থা দেখে অন্য এক ব্যক্তি বলে, 'হায়! আমাকে যদি অমুক ব্যক্তির মতো সম্পদশালী করা হতো, তাহলে সে যেরূপ ব্যয় করছে আমিও সেরূপ ব্যয় করতাম।" ৩৪

সুতরাং রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসাদ করা নিষেধ করেছেন, তবে দুটো পরিস্থিতিতে এটি ব্যতিক্রম, যাকে আল- গুতবা বলে নির্দেশ করা হয়। গুতবা'র অর্থ হলঃ একজন ব্যক্তির অপর কোন ব্যক্তির অবস্থা পছন্দ করা এবং সেই ব্যক্তির সে অবস্থা দূর হওয়ার ব্যাপারে কামনা না রেখেই সেক্ষেত্রে তার তুলনায় সেই ব্যক্তির শ্রেষ্ঠ থাকাটা অপছন্দ করা।

সুতরাং যদি জিজ্ঞেস করা হয়, "তাহলে এটিকে কেন হিংসা বলা হবে, যখন কিনা সে কেবল এটি ভালবাসে যে আল্লাহ তাকে এই অনুগ্রহগুলো প্রদান করুন?"

তবে এর জবাবে বলা হবে, “এই ভালোবাসার সূচনা বিন্দু হল কোন ব্যক্তির উপর আল্লাহ প্রদত্ত অনুগ্রহের দিকে তাকানো আর তার এটি অপছন্দ করা যে সেই ব্যক্তি তার চেয়ে অধিক অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে। সুতরাং অপর ব্যক্তি যদি উপস্থিত না থাকতো তবে তার সেই অনুগ্রহগুলোর ব্যাপারে কামনা থাকতো না। তাই, যেহেতু এই ভালোবাসার সূচনা বিন্দু ছিল অন্য কোন ব্যক্তির তার অবস্থার উপরে উন্নীত থাকাটা অপছন্দ করা, তাই সেই ভালবাসাটা অপছন্দের অনুসরণ করার কারনে এটিকে বলা হল হিংসা। অবশ্য লোকদের বস্তুগত অবস্থা বিবেচনা করা ছাড়া যদি ব্যক্তি তার উপর আল্লাহ'র অনুগ্রহ কামনা করে তবে এক্ষেত্রে এটি হিংসা হিসেবে বিবেচিত হবে না।”

এ কারনে মানবজাতির অধিকাংশই এই দ্বিতীয় প্রকারের হিংসা করার চেষ্টা করে, যাকে আল- মুনাফাসাহ (প্রতিযোগিতা) ও বলা হয়। কারন দুজন ব্যক্তি একই আকাংখিত বিষয়ে প্রতিযোগিতা করে, উভয়ই একই উপকার অর্জনের চেষ্টা করে। তাদের সেটি অর্জন করার চেষ্টার কারন হল, দুই ব্যক্তির মধ্যে একজন এটি অপছন্দ করে যে অপরজন তার উপরে সেই অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে, যেমনটি ঘটে থাকে দুই প্রতিযোগীর মধ্যে যে একজন অপছন্দ করে অপরজন তাকে পরাজিত করবে।

প্রতিযোগিতা করাটা সাধারণভাবে নিন্দনীয় নয়, বরং ধার্মিকতায় প্রতিযোগিতা করাটা প্রশংসনীয় বলে বিবেচিত হবে, গৌরবান্বিত আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الْأَبْرَارَ لَفِي نَعِيمٍ (۲۲) عَلَى الْأَرَائِكِ يَنظُرُونَ (۲۳) تَعْرِفُ فِي وُجُوهِهِمْ نَضْرَةَ النَّعِيمِ (٢٤) يُسْقَوْنَ مِن رَّحِيقٍ مَّخْتُومٍ (٢٥) خِتَامُهُ مِسْكٌ ۚ وَفِي ذَلِكَ فَلْيَتَنَافَسِ الْمُتَنَافِسُونَ (٢٦)
“নিঃসন্দেহে নেককার লোকেরা মহা নিয়ামতে থাকবে, তারা সুসজ্জিত আসনে বসে (সব) অবলোকন করবে, এদের চেহারায় নিয়ামতের (তৃপ্তি ও) সজীবতা তুমি (সহজেই) চিনতে পারবে; ছিপ আঁটা (বোতল) থেকে এদের সেদিন বিশুদ্ধতম পানি পান করানো হবে, (পাত্রজাত করার সময়ই) কস্তুরীর সুগন্ধি দিয়ে যার মুখ বন্ধ (করে দেওয়া হয়েছে); আর এর জন্য প্রতিযোগীরা প্রতিযোগিতা করুক।” (সূরা মুতাফফিফিন, ৮৩: ২২-২৬)

টিকাঃ
(৩২) সাহিহ বুখারি- ১/৬২, হাদিস ৭৩; সাহিহ মুসলিম ২/৩৮৯, হাদিস ১৭৭৯
(৩৩) সাহিহ বুখারি- ৬/৫০০, হাদিস ৫৪৩; সাহিহ মুসলিম ২/৩৮৮, হাদিস ১৭৭৭
(৩৪) সাহিহ বুখারি- ৬/৫০১, হাদিস ৫৪৪

📘 অন্তরের ব্যাধি সমূহ ও তার চিকিৎসা > 📄 হাসাদ ও গিবতার মাঝে

📄 হাসাদ ও গিবতার মাঝে


মৌলিকভাবে, হিংসা ঘটে অপর ব্যক্তি ক্ষমতা ও কতৃত্ব অর্জন করলে; নতুবা কর্ম সম্পাদনকারী ব্যক্তিকে সাধারণত হিংসা করা হয় না, যদিও সেই ব্যক্তি অন্যদের তুলনায় আরও অধিকতর খাবার, পানীয় ও স্ত্রী পাওয়ার অনুগ্রহ লাভ করে, যা কিনা ক্ষমতা ও কতৃত্ব – এই দুটো অনুগ্রহের বিপরীত, কারন সেগুলো হল অত্যধিক পরিমাণ হিংসার কারন।

এ কারনেই আপনি দেখবেন যে হিংসা পরিচালিত হয় জ্ঞানী লোকদের প্রতি, যাদের লোকজনের মধ্য থেকে অনুসারী রয়েছে; যা আপনি এমন অন্য কোন ব্যক্তিদের দিকে পরিচালিত হতে দেখতে পাবেন না যাদের এমন কোন অনুসারী নেই।

অনুরূপভাবে, সেই ব্যক্তির প্রতিও হিংসা পরিচালিত হয়, যে তার ধনসম্পদ দান করার মাধ্যমে অনুসারীদের আকৃষ্ট করে, কারন লোকেরা এই ব্যক্তির উপকার করে তার অন্তরকে পরিপুষ্ট করার মাধ্যমে আর এই ব্যক্তি লোকদের উপকার করে তাদের শরীরগুলোকে পরিপুষ্ট করার মাধ্যমে; যা এই উভয় বিষয়ে তাদেরকে সংশোধন করবে, আর মানবজাতির সেটির প্রয়োজন রয়েছে। এ কারনেই সকল অসম্পূর্ণতা থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত মহান আল্লাহ দুটো দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন,
ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا عَبْدًا مَّمْلُوكًا لَّا يَقْدِرُ عَلَى شَيْءٍ وَمَن رَّزَقْنَاهُ مِنَّا رِزْقًا حَسَنًا فَهُوَ يُنفِقُ مِنْهُ سِرًّا وَجَهْرًا هَلْ يَسْتَوُونَ ۚ الْحَمْدُ لِلَّهِ ۚ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ (٧٥) وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا رَّجُلَيْنِ أَحَدُهُمَا أَبْكَمُ لَا يَقْدِرُ عَلَى شَيْءٍ وَهُوَ كَلٌّ عَلَى مَوْلَاهُ أَيْنَمَا يُوَجِّهَهُ لَا يَأْتِ بِخَيْرٍ ۛ هَلْ يَسْتَوِي هُوَ وَمَن يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ ۛ وَهُوَ عَلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ (٧٦)
“আল্লাহ (এখানে অপরের) অধিকারভুক্ত একটি দাসের উদাহারন দিচ্ছেন, যে (নিজে থেকে) কোন কিছুই করার ক্ষমতা রাখে না; এবং (উদাহারন দিচ্ছেন) এমন ব্যক্তির (সাথে), যাকে আমি আমার পক্ষ থেকে উত্তম রিযক দান করেছি এবং সে তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে চলেছে; (তোমরা কি মনে করো) এরা উভয়েই সমান? সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ'র জন্য, কিন্তু এদের অধিকাংশ মানুষই জানে না।
আল্লাহ আরো দুজন মানুষের উদাহারন দিচ্ছেন, তাদের একজন হল বাকশক্তিহীন - সে কোন কিছুই নিজে থেকে করতে (বা বলতে) পারে না, সে (সব সময়) নিজের মনিবের উপর বোঝা হয়ে থাকে, যেখানেই সে তাকে পাঠায় না কেন, সে কোন ভালো কিছু নিয়ে আসতে পারে না; এ (অক্ষম) ব্যক্তিটি কি সমান হতে পারে সে ব্যক্তির, যে (নিজে মূক তো নয় বরং) সে অন্য মানুষদের ন্যায়ের নির্দেশ দেয় আর যে আছে সরল পথে?” (সূরা নাহল, ১৬: ৭৫-৭৬)

আল্লাহ এই দুটো দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন তার নিজের পবিত্র সত্তা আর তাঁকে ছাড়া যেটির ইবাদাত করা হয় সেটির জন্য। কারন, নিঃসন্দেহে মূর্তির কোন কাজ করারই সামর্থ্য নেই যে এটি কারো উপকার করবে, আর এর না আছে কোন কিছু বলার সামর্থ্য যে সেটির মাধ্যমে উপকার করবে। সুতরাং, কারো অধিকারে থাকা একজন সম্পূর্ণ ক্ষমতাহীন দাস (অর্থাৎ, মূর্তি) এবং আরেকজন দাস যাকে আল্লাহ প্রচুর রিযক দিয়েছেন যা থেকে সে প্রকাশ্য ও গোপনে দান করে; যে দাস উপকার করতে অক্ষম এবং যে দাস গোপনে ও প্রকাশ্যে লোকদের উপকারে সক্ষম; তবে কি উপকারে অক্ষম দাস এবং গোপনে ও প্রকাশ্যে লোকদের জন্য উপকারে সক্ষম দাস এরা উভয়ে কখনো সমান হতে পারে? এবং সকল ধরনের ত্রুটি থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত আল্লাহ তার দাসদের উপর কল্যাণ প্রদানে সক্ষম এবং তিনি ক্রমাগত সেটিই করে যাচ্ছেন। সুতরাং কিভাবে এই অক্ষম দাস (অর্থাৎ, মূর্তি), যে কিনা কিছুই করতে সক্ষম নয়, তাকে আল্লাহ'র সাথে এরূপে তুলনা করা হয় যে আল্লাহ'র পাশাপাশি সেটির ইবাদাত করা হবে? সুতরাং এটি হল এক ব্যক্তির দৃষ্টান্ত, যাকে আল্লাহ ধনসম্পদ প্রদান করেছেন, যা থেকে সে দিন-রাত ব্যয় করে।

দ্বিতীয় দৃষ্টান্তে দুটো ব্যক্তিকে বিবেচনা করা হয়েছে, এদের একজন হল বাকশক্তিহীন। সে না পারে বুঝতে আর না পারে কথা বলতে, এবং সে কিছুই করতে সক্ষম নয় আর প্রকৃতপক্ষে সে তার মনিবের উপর একটি বোঝা; কারন মনিব যে পথে তাকে নির্দেশ করে সে কোন কল্যাণ নিয়ে আসতে পারে না, তাই সে একেবারেই কোন কাজের নয়। অপর ব্যক্তি হলেন একজন ন্যায়পরায়ণ আলিম, যিনি ন্যায়ের আদেশ করেন আর ন্যায়সঙ্গতভাবে কাজ করেন, আর সরল পথের উপর অবস্থান করেন। এই ব্যক্তি সেই ব্যক্তির মতোই, যার উপর আল্লাহ হিকমত প্রদান করেন এবং তিনি তা অনুযায়ী আমল করেন ও তা শিক্ষা দেন। আল্লাহ তাঁর নিজের জন্য এই দৃষ্টান্তটি উপস্থাপন করেছেন, কারন তিনিই হলেন সর্বজ্ঞানী, সর্বাধিক ন্যায়পরায়ণ, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আর তিনি ন্যায়পরায়ণের আদেশ করেন। তিনি তাঁর সৃষ্টিকে সরল পথের উপর ন্যায়পরায়নতার সাথেই প্রতিপালন করছেন, যেমনটি তিনি বলেন,
شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ (۱۸)
"(স্বয়ং) আল্লাহ সাক্ষী দিচ্ছেন যে তিনি ছাড়া আর অন্য কোন ইলাহ নেই, ফেরেশতারা আর জ্ঞানবান লোকেরাও (এই একই সাক্ষ্য দিচ্ছে), একমাত্র আল্লাহই ন্যায় ও ইনসাফ কার্যকর করেন, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা আল ইমরান, ৩ : ১৮)

এবং হুদ (আঃ) বলেছিলেন -
إِنَّ رَبِّي عَلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ (٥٦)
“নিশ্চয়ই আমার রব সরল পথের উপর রয়েছেন।” (সূরা হুদ, ১১ : ৫৬)

এ কারনেই লোকেরা আল- 'আব্বাসের ঘরের প্রশংসা করতোঃ 'আবদুল্লাহ লোকদের শিক্ষাদান করতেন আর তার ভাই তাদেরকে খাবার খাওয়াতেন, তাই লোকেরা এ কারনে তাদের প্রশংসা করতো।

মুত্তাওিয়াহ দেখলেন যে লোকেরা ইবন উমারকে হাজ্জের নিয়মকানুন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে আর ইবন উমার তাদেরকে ফাতওয়া দিলেন, এটি দেখে মুত্তাওিয়াহ বললেন, "আল্লাহ কসম, এটিই হল মর্যাদা” অথবা অনুরূপ কিছু।

📘 অন্তরের ব্যাধি সমূহ ও তার চিকিৎসা > 📄 আস-সিদ্দিক (রাঃ) এবং উমার (রাঃ) এর মধ্যে প্রতিযোগিতা

📄 আস-সিদ্দিক (রাঃ) এবং উমার (রাঃ) এর মধ্যে প্রতিযোগিতা


সাদকা করার ব্যাপারে আবু বকর (রাঃ) এর সাথে 'উমার বিন আল-খাত্তাব (রাঃ) এর প্রতিযোগিতার ব্যাপারটি জানা যায় সাহিহ বুখারিতে বর্ণিত 'উমার বিন আল-খাত্তাব (রাঃ) এর হাদিস থেকে।
তিনি বলেন, “রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সাদকা করার আদেশ দিলেন, তাই আমি আমার অধিকারে থাকা সম্পদগুলো একত্রিত করলাম। আমি নিজেকে বললাম, 'যদি এমন কোন দিন আসে, যেদিন আমি আবু বকরের থেকে অধিকতর উত্তম হতে পারবো, তবে এটিই সেই দিন।' এরপর আমি আমার সম্পদের অর্ধেক সাথে করে নিয়ে গেলাম আর রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, 'তুমি তোমার পরিবারের জন্য কি রেখে এসেছো?' আমি জবাব দিলাম, 'একই পরিমাণ সম্পদ'। এরপর আবু বকর তার অধিকারে থাকা সব সম্পদ নিয়ে আসলেন। রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, 'তোমার পরিবারের জন্য তুমি কি রেখে এসেছো?' তিনি জবাব দিলেন, 'আমি তাদের জন্য আল্লাহ ও তার রসূল (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) কে রেখে এসেছি।' আমি এরপর আবু বকরকে বললাম, 'আমি কখনোই কোন কিছুতে আপনার থেকে অধিকতর উত্তম হতে পারবো না।”
সুতরাং হাদিস থেকে জানা যায় যে, 'উমার (রাঃ) আবু বকর (রাঃ) এর সাথে প্রতিযোগিতা করলেন আর তিনি অনুমোদিত হিংসা (গুতবা) ও করলেন, কিন্তু আবু বকর আস-সিদ্দিক (রাঃ) এর অবস্থা তার তুলনায় উত্তম ছিল।
এভাবেই আবু বকর (রাঃ) অন্যদের অবস্থার প্রতি তার অনাসক্তির কারনে সাধারণত এই ধরনের প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করতেন।

📘 অন্তরের ব্যাধি সমূহ ও তার চিকিৎসা > 📄 মূসা (আঃ) ওমরা প্রদর্শন করেছিলেন

📄 মূসা (আঃ) ওমরা প্রদর্শন করেছিলেন


মুসা (আঃ) এর ক্ষেত্রেও অনুরূপ ঘটনা ঘটেছিলো। মিরাজের হাদিস থেকে জানা যায় যে মুসা (আঃ) প্রতিযোগিতা করেছিলেন আর রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ব্যাপারে হিংসা অনুভব করেছিলেন -
“রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) মিরাজের রাতে তাকে অতিক্রম করে যাওয়ার সময় তিনি কেঁদে উঠলেন। তাকে কাঁদার কারন জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জবাব দিলেন, 'আমি কাঁদছি কারন আমার পর আল্লাহ'র এমন একজন গোলামকে পাঠানো হবে যার উম্মাত আমার উম্মাতের থেকে বেশী পরিমানে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ” ৩৫
সাহিহ-তে ছাড়াও এই হাদিসটি ভিন্ন বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে -
"আমরা একজন ব্যক্তিকে অতিক্রম করলাম, যখন তিনি উচ্চস্বরে বলছিলেন, 'আপনি তাকে অনুগ্রহ দান করেছেন আর তাকে (আমার উপর) সম্মান দিয়েছেন।' সুতরাং আমরা তার কাছে গেলাম আর তাকে আমাদের সালাম দিলাম। তিনি আমাদের সালামের জবাব দিয়ে বললেন, 'হে জিবরাঈল, আপনার সাথে ইনি কে?' তিনি জবাব দিলেন, 'ইনি হলেন আহমাদ।' মুসা (আঃ) বললেন, 'স্বাগতম হে নিরক্ষর নবী, যিনি তার রবের বানী বহন করলেন আর আন্তরিকভাবে তার জাতিকে উপদেশ দিলেন।' এরপর আমরা এগুতে লাগলাম। আমি বললাম, 'হে জিবরাঈল, ইনি কে ছিলেন?' তিনি জবাব দিলেন, 'ইনি ছিলেন মুসা বিন 'ইমরান।' আমি বললাম, 'আর তিনি কার কাছে অনুযোগ করছিলেন?' তিনি জবাব দিলেন, 'তিনি আপনার সম্পর্কে আপনার রবের কাছে অনুযোগ করছিলেন।' আমি বললাম, 'তার রবের প্রতি তিনি তার স্বর উঁচু করলেন?' তিনি জবাব দিলেন, 'নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সত্যবাদিতা সম্পর্কে জানতেন।' ”
সুতরাং উমার (রাঃ) এর ব্যাপারটিও মুসা (আঃ) এর অনুরূপ। আমাদের রসূল (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অবস্থা মুসা (আঃ) এর থেকেও শ্রেষ্ঠত্বর হওয়ার কারনে তাকে (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন অনুমোদিত হিংসা আচ্ছন্ন করেনি।

টিকাঃ
(৩৫) বুখারি ও মুসলিমে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন