📘 অন্তরের ব্যাধি সমূহ ও তার চিকিৎসা > 📄 অন্তরের জীবন - এর বাস্তবতা

📄 অন্তরের জীবন - এর বাস্তবতা


জেনে রাখুন যে, অন্তর এবং এটি ছাড়া আর অন্য কিছুর জীবন নিছকই সংবেদনশক্তি, নড়াচড়া করা আর সংকল্প করার কোন একটি, অথবা অনুমান ও সংকল্প করার মতো নিছকই জ্ঞান ও সক্ষমতার কোন একটি, অথবা নিছকই জ্ঞান ও সক্ষমতার কোন একটি নয়; যেটি গ্রহণ করেছেন আবু আল-হুসাইন আল- বাসরি'র মতো আল্লাহ ও তার ক্ষমতা সম্পর্কিত জ্ঞানের একদল অন্বেষণকারী। তারা বলেছেন, "একজন ব্যক্তি যতক্ষণ পর্যন্ত জ্ঞান রাখেন আর সক্ষম, কেবলমাত্র তিনিই জীবিত বলে বিবেচিত হবেন।”

এটি জীবনের অবস্থা নয়। বরং জীবন হল একটি গুণ, যা বর্ণিত বিষয়গুলোতে স্বাধীনভাবে উপস্থিত থাকে, আর এটি হল জ্ঞানের উপস্থিতি, সংকল্প আর পছন্দের ফলে কাজ করার একটি শর্ত। জীবন এগুলোর আবশ্যকীয় ফলাফলও। সুতরাং প্রত্যেক জীবন্ত কিছুর রয়েছে উপলব্ধি, সংকল্প; এবং যেসব কিছুর জ্ঞান ও সংকল্প রয়েছে আর পছন্দের ফলে কাজ করে, সেগুলো জীবিত।

(আরবিতে) “জীবন” শব্দটি থেকে নামবাচক শব্দ “লজ্জা” এর উৎপত্তি হয়েছে। তাই যদি অন্তর জীবিত থাকে, তাহলে এর মালিকও জীবিত থাকবে। অন্তর লজ্জা ধারণ করে, যা একে মন্দ আর ঘৃণ্য ও নিন্দিত কাজ থেকে বাধা দেয়, কারন এ ধরনের কাজ থেকে অন্তরের নিরাপত্তা নির্ভর করে অন্তরের লজ্জাশীলতার উপর।

এ কারনে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “লজ্জাশীলতা ঈমানের অঙ্গ।” ২৫

“লজ্জাশীলতা আর স্বল্প কথা বলা ঈমানের শাখাসমূহের মধ্যে দুটো শাখা, আর অশ্লীলতা ও বেশী কথা বলা নিফাকের শাখাসমূহের মধ্যে দুটো শাখা।” ২৬

এ কারনেই জীবিত সত্তা ঘৃণ্য ও নিন্দিত কাজ দ্বারা পরিস্কারভাবেই প্রভাবিত হয় আর তার একটি সংকল্প রয়েছে, যা তাকে বিরত রাখে সেগুলো সম্পাদন করা থেকে; এটি হল লজ্জাবিহীন ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিপরীত, কারন লজ্জাবিহীন ব্যক্তি (অর্থাৎ, তার অন্তর) জীবিত নয়, কাজেই তার লজ্জাশীলতা নেই, এ কারনে ঈমান নেই যা তাকে পাপ কাজ থেকে বাধা দিবে।

সুতরাং, অন্তর যদি জীবিত থাকে আর ব্যক্তি তার শরীর থেকে এর বিচ্ছেদের মাধ্যমে মারা যায়, তাহলে আত্মার মৃত্যু নির্ভর করবে ব্যক্তির শরীর থেকে এর বিচ্ছেদের উপর, কেবলমাত্র এটি থেকে প্রান ত্যাগে মারা যাওয়ার উপর এর মৃত্যু নির্ভর করবে না। এ কারনে গৌরবান্বিত আল্লাহ বলেন,
وَلَا تَقُولُوا لِمَن يُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتٌ بَلْ أَحْيَاءً
"আর যারা আল্লাহ'র পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত বলো না বরং তারা জীবিত...।" (সূরা বাকারাহ, ২: ১৫৪)

وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ (١٦٩)
"আর যারা আল্লাহ'র পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত মনে করো না বরং তারা জীবিত...।" (সূরা আল 'ইমরান, ৩ : ১৬৯)

তারা মৃত্যুবরণ করা সত্ত্বেও, যেটি আল্লাহ'র বাণীতে উল্লেখ রয়েছে -
كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ "প্রত্যেক আত্মাই মৃত্যুর স্বাদ পাবে...।" (সূরা আল 'ইমরান, ৩: ১৮৫)

إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُم مَّيِّتُونَ (۳۰) "নিশ্চয়ই তুমিও মারা যাবে আর তারাও মারা যাবে...।" (সূরা আয-যুমার, ৩৯ : ৩০)

وَهُوَ الَّذِي أَحْيَاكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيكُمْ إِنَّ الْإِنسَانَ لَكَفُورٌ (٦٦) "এবং তিনি তোমাদেরকে জীবন দান করেছেন, অতঃপর তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন, পুনরায় তোমাদেরকে জীবন দান করবেন...।" (সূরা হাজ্জ, ২২: ৬৬)

কাজেই ছোট মৃত্যু বড় মৃত্যুর অনুরূপ নয়। ছোট মৃত্যু হল শরীর থেকে আত্মার বিচ্ছেদ, আর বড় মৃত্যু হল শরীর ও আত্মা উভয় থেকেই পুরোপুরিভাবে প্রাণের বিচ্ছেদ। ব্যাপারটি এ কথার মতোই যে, ঘুম হল মৃত্যুর ভাই। আল্লাহ বলেন,
لَّهُ يَتَوَفَّى الْأَنفُسَ حِينَ مَوْتِهَا وَالَّتِي لَمْ تَمُتْ فِي مَنَامِهَا فَيُمْسِكُ الَّتِي قَضَىٰ عَلَيْهَا الْمَوْتَ وَيُرْسِلُ الْأُخْرَىٰ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى
“তাদের মৃত্যুর সময় আল্লাহ (তাদের) আত্মা হরণ করেন আর যাদের মৃত্যু আসেনি (তাদের আত্মাও হরণ করেন তাদের) ঘুমের সময়। অতঃপর যার জন্য মৃত্যুর সিদ্ধান্ত করেন তার আত্মা তিনি রেখে দেন আর অবশিষ্টগুলো ফিরিয়ে দেন একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য।” (সূরা যুমার, ৩৯ : ৪২)

রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুম থেকে জেগে উঠে বলতেন, “সকল প্রশংসা আল্লাহ'র, যিনি আমাদের মৃত্যু ঘটানোর পর আমাদেরকে জীবন দান করেন এবং তার প্রতিই আমাদের পুনরুত্থান ঘটবে।” ২৭

আরেকটি হাদিসে বর্ণিত আছে যে তিনি বলতেন, "সকল প্রশংসা আল্লাহ'র, যিনি আমার শারীরিক অবস্থা ফিরিয়ে দিয়েছেন আর আমার আত্মা ফিরিয়ে দিয়েছেন এবং তাকে স্মরণ করার জন্য আমাকে অনুমতি দিয়েছেন।” ২৮

যখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমানোর জন্য শুতেন তখন বলতেন, “হে আল্লাহ, নিশ্চয়ই আপনি আমার আত্মা সৃষ্টি করেছেন, আর আপনি এর প্রাণ নিবেন, এর মৃত্যু ও জীবন তো আপনারই অধিকারভুক্ত। আপনি যদি আমার আত্মাকে জীবিত রাখেন তবে একে রক্ষা করুন, আর যদি এর প্রাণ নেন তবে একে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি আমাকে সুস্বাস্থ্য দান করার জন্য." ২৯

রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন, “হে আল্লাহ, আপনার নাম নিয়ে মারা যাই আর (আপনার নাম নিয়েই) জীবিত হই।” ৩০

টিকাঃ
(২৫) সাহিহ বুখারি- ৮/৮৯, হাদিস ১৩৯; সাহিহ মুসলিম ১/২৭, হাদিস ৫৭
(২৬) তিরমিযি কতৃক বর্ণিত, এছাড়াও এটি আল-বাগাওি তার শারহ আস-সুন্নাহ ১২/৩৬৬ তে বর্ণনা করেছেন, হাকিম একে সাহিহ এবং আল- 'ইরাকি একে হাসান বলেছেন।
(২৭) সাহিহ বুখারি - ৮/২১৭; সাহিহ মুসলিম ৪/১৪২২, হাদিস ৬৫৪৯; সুনান আবু দাউদ ৩/১৪০২, হাদিস ৫০৩১
(২৮) তিরমিযি- ৩৪০১; হাদিসটি সাহিহ, দেখুনঃ শাইখ 'আলী হাসানের মুহাযযাব 'আমাল আল-ইয়াওম ওয়া লাইলা পৃষ্ঠা ৩৩ (অনুবাদকের টীকা]
(২৯) সাহিহ মুসলিম - ৪/১৪২২, হাদিস ৬৫৫০
(৩০) সাহিহ বুখারি - ৮/২১৭, হাদিস ৩২৪; সাহিহ মুসলিম ৪/১৪২২, হাদিস ৬৫৪৯

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন