📘 অন্তরের ব্যাধি সমূহ ও তার চিকিৎসা > 📄 মৃত অন্তরের অবস্থা

📄 মৃত অন্তরের অবস্থা


জীবিত ও আলোকিত অন্তর তার ভিতরে থাকা আলোর কারনে দেখতে, শুনতে ও অনুধাবন করতে পারে; কিন্তু মৃত অন্তর দেখতে, শুনতে বা অনুধাবন করতে পারে না। মহিমান্বিত আল্লাহ বলেন,
وَمَثَلُ الَّذِينَ كَفَرُوا كَمَثَلِ الَّذِي يَنْعِقُ بِمَا لَا يَسْمَعُ إِلَّا دُعَاءً وَنِدَاءً صُمٌّ بُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لَا يََعْقِلُونَ (۱۷۱)
"আর যারা অবিশ্বাস করেছে তাদের দৃষ্টান্ত ওদের ন্যায়, যেমন কেউ আহবান করলে শুধু চিৎকার ও ধ্বনি ব্যতীত আর কিছুই শুনে না; (মূলত) এরা বধির, বোবা, অন্ধ, (এ কারনে হিদায়াহ'র কথাও) এরা বুঝে না।” (সূরা বাকারাহ, ২ : ১৭১)

وَمِنْهُم مَّن يَسْتَمِعُونَ إِلَيْكَ أَفَأَنتَ تُسْمِعُ الصُّمَّ وَلَوْ كَانُوا لَا يَعْقِلُونَ (٤٢) وَمِنْهُم مَّن يَنظُرُ إِلَيْكَ أَفَأَنتَ تَهْدِي الْعُمْيَ وَلَوْ كَانُوا لَا يُبْصِرُونَ (٤٣)
"এদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে, যারা তোমার দিকে কান পেতে রাখে; তুমি কি বধিরকে (আল্লাহ'র কালাম) শোনাবে, যদিও তারা এর কিছুই বুঝতে না পারে? এবং ওদের মধ্যে কেউ কেউ আছে যারা তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে, কিন্তু তুমি কি অন্ধকে পথ দেখাবে, যদিও তারা নিজেরা এর কিছুই দেখতে না পায়?” (সূরা ইউনুস, ১০ : ৪২-৪৩)

وَمِنْهُم مَّن يَسْتَمِعُ إِلَيْكَ وَجَعَلْنَا عَلَى قُلُوبِهِمْ أَكِنَّةً أَن يَفْقَهُوهُ وَفِي آذَانِهِمْ وَقْرًا وَإِن يَرَوْا كُلَّ آيَةٍ لَا يُؤْمِنُوا بِهَا حَتَّى إِذَا جَاءُوكَ يُجَادِلُونَكَ يَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا إِنْ هَذَا إِلَّا أَسَاطِيرُ الْأَوَّلِينَ (٢٥)
"তাদের মধ্যে এমন কিছু লোকও আছে যে (বাহ্যিক দৃষ্টিতে মনে হয়) তোমার কথা কান দিয়ে শুনছে, (কিন্তু আসলে) আমি তাদের অন্তরের উপর পর্দা দিয়ে রেখেছি, যার কারনে তারা কিছুই অনুধাবন করতে পারে না, আমি তাদের কানে বধিরতা অর্পণ করেছি; (মূলত) তারা যদি (আল্লাহ'র) সব নিদর্শন দেখেও নেয়, তবু তারা তার প্রতি ঈমান আনবে না, এমনকি তারা যখন তোমার সামনে আসবে তখন তোমার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হবে, (কুরআনের আয়াত সম্পর্কে) কাফিররা বলবে, 'এটি তো প্রাচীনকালের লোকদের কিসসা কাহিনী ছাড়া আর কিছুই না।'” (সূরা আন'আম, ৬: ২৫)

সুতরাং আল্লাহ আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন যে তাদের অন্তর অনুধাবন করতে পারে না, তাদের কান শ্রবণ করতে পারে না, আর তারা যা দেখে তাতে বিশ্বাসও করে না, যেমনটি আল্লাহ আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন এই আয়াতের মাধ্যমে -
وَقَالُوا قُلُوبُنَا فِي أَكِنَّةٍ مِّمَّا تَدْعُونَا إِلَيْهِ وَفِي آذَانِنَا وَقْرٌ وَمِن بَيْنِنَا وَبَيْنِكَ حِجَابٌ
"তারা বলেঃ তুমি যে বিষয়ের দিকে আমাদের আহবান করছো, সেটির জন্য আমাদের অন্তরগুলো আবরণে আচ্ছাদিত হয়ে আছে, আমাদের কানেও রয়েছে বধিরতা, আমাদের আর তোমার মাঝে একটি দেয়াল (দাঁড়িয়ে) আছে...।" (সূরা ফুসসিলাত, ৪১ : ৫)

সুতরাং তারা নিজেরাই তাদের অন্তর, কান ও চোখের উপর থাকা অন্তরায়ের উল্লেখ করেছে। তাদের শরীর জীবিত, যা দেখতে ও শুনতে পায়, কিন্তু এটি তো মৃত অন্তরবিশিষ্ট একটি শরীরের জীবন মাত্র - ঠিক একটি পশুর মতো, কারন পশুরাও দেখতে ও শুনতে পারে, খেতে ও পান করতে পারে আর বিয়েও করে। এ কারনে আল্লাহ বলেন,
وَمَثَلُ الَّذِينَ كَفَرُوا كَمَثَلِ الَّذِي يَنْعِقُ بِمَا لَا يَسْمَعُ إِلَّا دُعَاءً وَنِدَاءً صُمٌّ بُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لَا يَعْقِلُونَ (۱۷۱)
"আর যারা অবিশ্বাস করেছে তাদের দৃষ্টান্ত ওদের ন্যায়, যেমন কেউ আহবান করলে শুধু চিৎকার ও ধ্বনি ব্যতীত আর কিছুই শুনে না; (মূলত) এরা বধির, বোবা, অন্ধ, (এ কারনে হিদায়াহ'র কথাও) এরা বুঝে না।” (সূরা বাকারাহ, ২ : ১৭১)

তাদেরকে তুলনা করা হল গবাদি পশুর সাথে, যার প্রতি পশুপালক ডাক দেয় এবং তারা চিৎকার ছাড়া আর কিছুই শুনতে পায় না (অর্থাৎ, তারা বুঝতে পারে না যে কি বলা হল), যেমনটি বলা হয়েছে এই আয়াতে -
أَمْ تَحْسَبُ أَنَّ أَكْثَرَهُمْ يَسْمَعُونَ أَوْ يَعْقِلُونَ إِنْ هُمْ إِلَّا كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ سَبِيلًا (٤٤)
"তুমি কি সত্যিই মনে করো যে তাদের অধিকাংশ লোক শুনে বা বুঝে? ওরা হল পশুর মত, এমনকি ওরা অধিকতর বিভ্রান্ত।” (সূরা ফুরকান, ২৫: ৪৪)

وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ لَهُمْ قُلُوبٌ لَّا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لَّا يَسْمَعُونَ بِهَا أُولَئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ أُولَئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ (۱۷۹)
“এবং প্রকৃতপক্ষে আমি বহু জীন ও মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি, তাদের অন্তর রয়েছে কিন্তু তা দিয়ে তারা উপলব্ধি করে না, তাদের চোখ রয়েছে কিন্তু তা দিয়ে তারা দেখে না, তাদের কান রয়েছে কিন্তু তা দিয়ে তারা শুনে না, তারা হল পশুর মত, বরং সেটি থেকেও অধিকতর বিভ্রান্ত।” (সূরা আ'রাফ, ৭: ১৭৯)

একদল মুফাসসির এই আয়াতগুলো উল্লেখ করে তাদের সাথে সাদৃশ্যযুক্ত আয়াত যেমন –
وَإِذَا مَسَّ الْإِنسَانَ الضُّرُّ دَعَانَا لِجَنبِهِ أَوْ قَاعِدًا أَوْ قَائِمًا فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُ ضُرَّهُ مَرَّ كَأَن لَّمْ يَدْعُنَا إِلَى ضُرٍّ مَّسَّهُ
"আর যখন মানুষকে কোন কষ্ট স্পর্শ করে তখন আমাকে ডাকতে থাকে শুয়ে, বসে আর দাঁড়িয়ে; এরপর যখন আমি সেই কস্ট ওর থেকে দূর করে দেই তখন সে নিজের পূর্ব অবস্থায় ফিরে আসে, যে কষ্ট তাকে স্পর্শ করেছিল তা মোচন করার জন্য সে যেন আমাকে কখনোই ডাকেনি!" (সূরা ইউনুস, ১০: ১২)

এসব আয়াত ও এর অনুরূপ আয়াত, যেখানে মানুষের অপরাধ আর তাদের নিন্দা সম্পর্কে উল্লেখ করা আছে, মুফাসসিররা সে সম্পর্কে বলেন, "এই আয়াতগুলো কাফিরদের ব্যাপারে নির্দেশ করে, আর এখানে 'মানুষ' অর্থ হল 'কাফিররা'।”

তাই কোন ব্যক্তি যদি এই ব্যাখ্যা শোনার পর এটি চিন্তা করে, যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে ইসলাম প্রকাশ করে সে এই নিন্দা ও ভীতিপ্রদর্শনের অন্তর্ভুক্ত নয়; বরং তার চিন্তাভাবনা এই আয়াতগুলোকে আরবদের মধ্যে প্রকাশ্যে শিরক প্রকাশকারীদের সাথে সংযুক্ত করে অথবা তার জানামতে তুর্কি ও ভারতের প্রকাশ্যে কুফর প্রদর্শনকারী ইয়াহুদি, খ্রিস্টান আর মুশরিকদের সাথে সংযুক্ত করে, তবে সে ব্যক্তি এই আয়াতগুলো থেকে উপকৃত হবে না যা আল্লাহ নাযিল করেছেন তার গোলামদেরকে পথপ্রদর্শনের জন্য। সুতরাং এর জবাবে বলা যায় -

প্রথমতঃ যারা প্রকাশ্যে ইসলাম প্রকাশ করে তাদের মধ্যে মুমিন- মুসলিম আর মুনাফিক রয়েছে। আর মুনাফিকেরা সব সময়ই সংখ্যায় অনেক ছিল। তাদের অবস্থান হবে দোযখের সর্বনিম্ন স্তরে।

দ্বিতীয়তঃ ব্যক্তির মধ্যে ঈমান থাকার সাথে সাথে নিফাক আর কুফরও থাকতে পারে, যেমনটি জানা যায় আল-বুখারি ও মুসলিম কর্তৃক বর্ণিত রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এই হাদিস থেকে -

"যার মধ্যে চারটি স্বভাব থাকে সে খাঁটি মুনাফিক। যার মধ্যে এর কোন একটি স্বভাব থাকবে তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকির একটা স্বভাব থেকে যায় - আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে, কথা বললে মিথ্যা কথা বলে, চুক্তি করলে তা ভঙ্গ করে এবং বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীল গালি দেয়।” ১৯

সুতরাং রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের জানিয়ে দিলেন যে যার মধ্যে এর কোন একটি অংশ থাকবে তার মধ্যে মুনাফিকির একটা অংশ থাকবে।

আর আল-বুখারির সাহিহ তে প্রতিষ্ঠিত এক হাদিস থেকে জানা যায় যে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) আবু যার (রাঃ) কে বললেন, "... তোমার মধ্যে এখনও জাহিলী যুগের স্বভাব রয়েছে।” ২০

আবু যার (রাঃ) ছিলেন লোকদের মধ্যে ঈমানের দিক দিয়ে সবচেয়ে সত্যনিষ্ঠ।

নির্ভরযোগ্য হাদিসে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "জাহিলিয়‍্যাহ (ইসলাম- পূর্ব অজ্ঞতা)'র চারটি বৈশিষ্ট্য আমার উম্মতের মধ্যে থাকবে - বংশধরদের ব্যাপারে অহংকার করা, বংশের বদনাম করা, মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করা, নক্ষত্রের কাছ থেকে বৃষ্টি চাওয়া।” ২১

“রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, 'প্রকৃতপক্ষেই তোমাদের পূর্বে যারা এসেছে তোমরা ক্রমান্বয়ে তাদের পথ অনুসরণ করবে এমনভাবে যে যদি তারা কোন সরীসৃপের গর্তে প্রবেশ করে তবে তোমরাও সেটি করবে।' সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, 'তারা কি ইয়াহুদি ও খ্রিস্টান?' রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, 'তারা ছাড়া আর কারা?'” ২২

“রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, 'পূর্বের জাতিরা যেগুলোর প্রতি আসক্ত ছিল/যেগুলো গ্রহণ করেছিলো, আমার উম্মতও এক হাত এক হাত করে আর এক বিঘত এক বিঘত করে সেগুলোর প্রতি আসক্ত হবে/সেগুলো গ্রহণ করবে।' সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, 'তারা কি পার্সিয়ান আর রোমান?' রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) জবাব দিলেন, 'তবে লোকদের মধ্যে আর কারা হতে পারে?'” ২৩

ইবনে আবি মুলাইকাহ বলেন, "আমি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ত্রিশ জন সাহাবীর সাথে সাক্ষাৎ করেছি, তারা সবাই নিজেদের সম্পর্কে নিফাকের ব্যাপারে ভয় করতেন।” ২৪

আলী (রাঃ) বা হুজাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি বলেন, "অন্তর চার ধরনের (১) বিশুদ্ধ অন্তর - যা আলোকদানি দ্বারা আলোকিত, এটি মুমিনের অন্তর; (২) আবৃত অন্তর এটি কাফিরদের অন্তর; (৩) বিপর্যস্ত অন্তর - এটি মুনাফিকের অন্তর; (৪) এবং দুটো ব্যাপারেই আকর্ষণ রয়েছে এমন অন্তর যে সময়ে ঈমানের আহবান আর নিফাকের আহবান করা হয়, (তখন) এ লোকগুলো তাদের সৎ কাজগুলোকে পাপ কাজের সাথে মিশ্রিত করে দেয়।”

সুতরাং, জানা ও বুঝা গেলো যে, আল্লাহ ঈমান সম্পর্কে - হয় সেটি ঈমানের শাখার প্রশংসা করে বা কুফরির শাখার নিন্দা করে, যা কিছুই বলেছেন, তার সবগুলো থেকেই প্রত্যেক আল্লাহ'র গোলাম উপকৃত হবে।

উল্লেখিত অবস্থা আর তাদের অবস্থা একই, যারা আল্লাহ'র এই আয়াত।

اهدنا الصراط المستقيم (৬)
"আমাদেরকে হিদায়াত দিন (পরিচালিত করুন) সহজ সরল পথে।” (সূরা ফাতিহা, ১: ৬)

এই আয়াত সম্পর্কে তারা বলে, "আল্লাহ তো মুসলিমদেরকে ইতিমধ্যেই হিদায়াত দিয়েছেন, তাহলে হিদায়াত চাওয়ার উপকারিতা কি?"

তখন তাদের মধ্যে থেকে কিছু ব্যক্তি এই বলে জবাব দেয় যে এর অর্থ হল "আমাদেরকে হিদায়াতের উপর দৃঢ় রাখুন" যেমনটা আরবেরা ঘুমন্ত ব্যক্তিকে বলতো, "আমি তোমার কাছে আসার আগ পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকো।" তাদের মধ্য থেকে অন্যরা বলে যে এর অর্থ হল "আমাদের অন্তরকে হিদায়াতের উপর দৃঢ় রাখুন" এবং এটি যে, দৃঢ়তার জন্য প্রার্থনা করা বাদ পড়ে গেছে। আবার তাদের মধ্যে অন্যান্যরা বলে যে এর অর্থ হল, "আমার হিদায়াত বৃদ্ধি করে দিন।”

এই প্রশ্ন উদিত হওয়ার সত্যিকারের কারন হল, যেটির প্রতি আল্লাহ'র গোলাম হিদায়াত প্রার্থনা করে, অর্থাৎ 'সিরাতুল মুস্তাকিম' (সহজ সরল পথ) - সেটির ব্যাপারে তাদের গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করার অনুপস্থিতি। কারন এই আয়াতের অর্থ হল, আল্লাহ'র যা কিছু করতে আদেশ করেছেন তা পালন করা আর যা কিছু থেকে নিষেধ করেছেন তা বর্জন করার মাধ্যমে তার আদেশ-নিষেধ অনুযায়ী আমল করতে পারার জন্য তার কাছে হিদায়াত চাওয়া।

টিকাঃ
(১৯) সাহিহ বুখারি- ১/৩২, হাদিস ৩৩; সাহিহ মুসলিম ১/৪০, হাদিস ১১১
(২০) মা'রুর থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি বলেনঃ আমি একবার রাবাবা নামক স্থানে আবু যারের সাথে সাক্ষাৎ করলাম। তখন তার পরনে ছিল এক জোড়া কাপড় (লুঙ্গি ও চাদর) আর তার চাকরের পরনেও ছিল ঠিক একই ধরনের এক জোড়া কাপড়। আমি তাকে এর (সমতার) কারন জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, "একবার আমি এক ব্যক্তিকে গালি দিয়েছিলাম আর আমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছিলাম। তখন রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, 'আবু যার, তুমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছো? তুমি এমন ব্যক্তি যার মধ্যে এখনো জাহিলী যুগের স্বভাব রয়েছে। জেনে রেখো, তোমাদের দাসেরা তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। তাই যার ভাই তার অধীনে থাকবে, তাকে যেন সে নিজে যা খায় তাকেও তা-ই খাওয়ায় আর নিজে যা পরে তাকেও তা-ই পরায়। তাদের উপর এমন কাজ চাপিয়ে দিও না যা তাদের জন্য খুব বেশী কষ্টকর। যদি এমন কষ্টকর কাজ করতে চাও, তাহলে তোমরাও তাদের সে কাজে সাহায্য করবে।” (সাহিহ বুখারি ১/২৯, হাদিস ২৯) [অনুবাদকের টীকা]
(২১) সাহিহ মুসলিম ২/৪৪৪, হাদিস ২০৩৩
(২২) সাহিহ বুখারি - ৯/৩১৪, হাদিস ৪২২; সাহিহ মুসলিম ৪/১৪০২, হাদিস ৬৪৪৮, আহমাদ - ২/৪৫০
(২৩) ইবন তাইমিয়‍্যাহ'র ইকতিদা সিরাতুল মুস্তাকিম
(২৪) আল-বুখারি ও মুসলিম কর্তৃক বর্ণিত

📘 অন্তরের ব্যাধি সমূহ ও তার চিকিৎসা > 📄 কল্যাণকর জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা

📄 কল্যাণকর জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা


এর কারন হল, যদিও ব্যক্তি সাধারণভাবে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আল্লাহ'র রসূল হিসেবে আর কুরআনকে সত্য হিসেবে বিশ্বাস করে, কিন্তু তার সাধারনভাবে উপকারী আর ক্ষতিকর জ্ঞান সম্পর্কে জানা প্রয়োজন রয়েছে। যে ক্ষেত্রগুলোতে তার কোন জ্ঞান নেই আর বিষয়বস্তুসমূহের চমৎকার দৃষ্টিকোণে তাকে যা করতে আদেশ দেওয়া হয়েছে আর যা করতে নিষেধ করা হয়েছে, তার সে সম্পর্কিত জ্ঞানের প্রয়োজন রয়েছে। (শুধু তাই নয়, এটি ছাড়াও আমরা এটি আবিস্কার করেছি যে,) ব্যক্তির যেটি সম্পর্কে জ্ঞান আছে সে তার অধিকাংশই চর্চা করে না! ধরা যাক, ব্যক্তির কাছে কুরআন ও সুন্নাহতে থাকা সব আদেশ ও নিষেধ পৌঁছে গেছে, কুরআন ও সুন্নাহ যে বিধানগুলো বহন করে সেগুলো সাধারণ ও সার্বজনীন, যেটির কারনে প্রতিটি স্বতন্ত্র ব্যক্তিকে উল্লেখ করা সম্ভব নয়; কাজেই ব্যক্তিকে এভাবে সহজ সরল পথের (সিরাতুল মুস্তাকিম) দিকে হিদায়াত প্রার্থনা করার জন্য আদেশ করা হয়েছে।

সহজ সরল পথ (সিরাতুল মুস্তাকিম) এর দিকে হিদায়াত পাওয়া এই ব্যাপারগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করেঃ রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) যেটি সহকারে এসেছেন তা সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান রাখা, যা তার (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) সাধারণ নির্দেশের অধীনে আসে তা সম্পর্কে জ্ঞান রাখা এবং জ্ঞান অনুযায়ী আমল করার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন থাকা; কারন ব্যক্তি যদি তার জ্ঞান অনুযায়ী আমল না করে তবে নিঃসন্দেহে শুধুমাত্র জ্ঞান থাকাই তার হিদায়াত অর্জনের কারন হবে না। এ কারনেই আল্লাহ হুদাইবিয়্যাহ'র সন্ধির পর তার রসূল (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলেন,
إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُّبِينًا (۱) لِّيَغْفِرَ لَكَ اللَّهُ مَا تَقَدَّمَ مِن ذَنبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ وَيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكَ وَيَهْدِيَكَ صِرَاطًا مُّسْتَقِيمًا (۲)
"নিশ্চয়ই আমি তোমাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়। যেন আল্লাহ তোমার অতীত ও ভবিষ্যৎ ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করেন এবং তোমার প্রতি তার অনুগ্রহ পূর্ণ করেন আর সহজ সরল পথে তোমাকে পরিচালিত করেন।” (সূরা ফাতহ, ৪৮ : ১-২)

মুসা (আঃ) ও হারুন (আঃ) সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
وَآتَيْنَاهُمَا الْكِتَابَ الْمُسْتَبِينَ (۱۱৭) وَهَدَيْنَاهُمَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ (۱۱۸)
"আমি উভয়কে দিয়েছিলাম বিশদ কিতাব (তাওরাত)। এবং আমি তাদের উভয়কে পরিচালিত করেছিলাম সহজ সরল পথে।” (সূরা সাফফাত, ৩৭: ১১৭-১১৮)

মুসলিমরা সেসব বিষয়ে পৃথক হয়েছে, যা আল্লাহ মূলগ্রন্থের বিষয়গুলো থেকে আকাঙ্খা করেছেন জ্ঞানের বিষয়গুলো, ঈমান ও আমল; যদিও তারা সবাই একমত যে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্য আর কুরআনও সত্য। যদি তারা সকলেই সিরাতুল মুস্তাকিমের দিকে পুরোপুরি হিদায়াত অর্জন করতো তবে তারা কখনোই পৃথক হতো না। অধিকন্তু, আল্লাহ যা আদেশ করেছেন তা সম্পর্কে জ্ঞান রাখে এমন অধিকাংশই আল্লাহকে অমান্য করেছে আর তার পথ অনুসরণ করেনি। তারা যদি এসব বিষয়ে সিরাতুল মুস্তাকিমের দিকে হিদায়াত পেতো তবে তারা অবশ্যই তাদেরকে যা করতে আদেশ করা হয়েছে তা সম্পাদন করতো আর যা থেকে নিষেধ করা হয়েছে তা বর্জন করতো। আর এই উম্মাহ'র মধ্যে থেকে আল্লাহ তাদেরকেই হিদায়াত দিয়েছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা আল্লাহ'র মুত্তাকী বন্ধু হতে পেরেছিলেন; এরপর এর সবচেয়ে বড় কারন হল তারা আল্লাহ'র কাছে এই দুয়া করতেন -
اهدنا الصراط المستقيم (৬) "আমাদেরকে হিদায়াত দিন (পরিচালিত করুন) সহজ সরল পথে।” (সূরা ফাতিহা, ১:৬)

সিরাতুল মুস্তাকিমের দিকে হিদায়াতপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য তাদের প্রতিনিয়তই আল্লাহ'র সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে- এই জ্ঞানটি অন্তরে রেখে তারা প্রত্যেক সালাতে এই দুয়াটি পাঠ করতেন। সুতরাং, প্রতিনিয়তই আল্লাহ্'র সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে এর সত্যতা স্বীকার করে বার বার এই দুয়াটি করার কারনে তারা আল্লাহ'র মুত্তাকী বন্ধুতে পরিণত হোন।

সাহল বিন 'আবদুল্লাহ আত- তুস্তরি বলেন, "আল্লাহ ও তার গোলামের মধ্যে প্রয়োজন অপেক্ষা তার কাছাকাছি কোন গমনপথ নেই।”

অতীতে হিদায়াতপ্রাপ্ত হওয়া ব্যক্তির ভবিষ্যতেও হিদায়াতের প্রয়োজন রয়েছে এটি তাদের সেই বক্তব্যের প্রকৃত অর্থ, যারা বলেন যে এর অর্থ হল "আমাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করুন আর হিদায়াত দিন সিরাতুল মুস্তাকিমের উপর দৃঢ় হওয়ার জন্য”। সেসব ব্যক্তিদের মত, যারা বলে যে এর অর্থ হল "আমাদের হিদায়াত বৃদ্ধি করে দিন”, এটি পূর্বে যা বলা হয়েছে সেটিই অন্তর্ভুক্ত করে।

কিন্তু বর্ণিত সবই নির্দেশ করে সিরাতুল মুস্তাকিমের দিকে হিদায়াতকে, যা ভবিষ্যতে আল্লাহ প্রদান করবেন। নিঃসন্দেহে ভবিষ্যতে কি আমল করা হবে তা জ্ঞানের উপর নির্ভর করে, যা কিনা বর্তমানে অর্জিত হয় নি। ব্যক্তি হিদায়াতপ্রাপ্ত হিসেবে বিবেচিত হবে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত সে ভবিষ্যতে তার জ্ঞান অনুযায়ী আমল করে; তবে এটিও সম্ভব যে তার জ্ঞান ভবিষ্যতে তার অন্তরে থাকবে না বরং তার অন্তর থেকে তা দূর হয়ে যেতে পারে; আর যদি সেই জ্ঞান তার অন্তরে থাকে তবে এ সম্ভাবনাও আছে যে সে ভবিষ্যতে তার উপর আমল করবে না।

কাজেই মানবজাতির সকলের জন্যই আল্লাহ'র কাছে এই দুয়া করাটা অত্যন্ত জরুরী, এ কারনেই আল্লাহ এটিকে প্রত্যেক সালাতে গোলামদের জন্য ফরয করে দিয়েছেন আর এই দুয়াটি তাদের জন্য যেমনটা প্রয়োজনীয়, অন্য কোন দুয়া এটির মতো প্রয়োজনীয় নয়। যখন সিরাতুল মুস্তাকিমের দিকে হিদায়াত অর্জিত হয় তখন আল্লাহ'র সাহায্য, রিযক আর আত্মার কাঙ্খিত সকল সুখ আল্লাহ'র পক্ষ থেকে পাওয়া যায়। আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।

📘 অন্তরের ব্যাধি সমূহ ও তার চিকিৎসা > 📄 অন্তরের জীবন - এর বাস্তবতা

📄 অন্তরের জীবন - এর বাস্তবতা


জেনে রাখুন যে, অন্তর এবং এটি ছাড়া আর অন্য কিছুর জীবন নিছকই সংবেদনশক্তি, নড়াচড়া করা আর সংকল্প করার কোন একটি, অথবা অনুমান ও সংকল্প করার মতো নিছকই জ্ঞান ও সক্ষমতার কোন একটি, অথবা নিছকই জ্ঞান ও সক্ষমতার কোন একটি নয়; যেটি গ্রহণ করেছেন আবু আল-হুসাইন আল- বাসরি'র মতো আল্লাহ ও তার ক্ষমতা সম্পর্কিত জ্ঞানের একদল অন্বেষণকারী। তারা বলেছেন, "একজন ব্যক্তি যতক্ষণ পর্যন্ত জ্ঞান রাখেন আর সক্ষম, কেবলমাত্র তিনিই জীবিত বলে বিবেচিত হবেন।”

এটি জীবনের অবস্থা নয়। বরং জীবন হল একটি গুণ, যা বর্ণিত বিষয়গুলোতে স্বাধীনভাবে উপস্থিত থাকে, আর এটি হল জ্ঞানের উপস্থিতি, সংকল্প আর পছন্দের ফলে কাজ করার একটি শর্ত। জীবন এগুলোর আবশ্যকীয় ফলাফলও। সুতরাং প্রত্যেক জীবন্ত কিছুর রয়েছে উপলব্ধি, সংকল্প; এবং যেসব কিছুর জ্ঞান ও সংকল্প রয়েছে আর পছন্দের ফলে কাজ করে, সেগুলো জীবিত।

(আরবিতে) “জীবন” শব্দটি থেকে নামবাচক শব্দ “লজ্জা” এর উৎপত্তি হয়েছে। তাই যদি অন্তর জীবিত থাকে, তাহলে এর মালিকও জীবিত থাকবে। অন্তর লজ্জা ধারণ করে, যা একে মন্দ আর ঘৃণ্য ও নিন্দিত কাজ থেকে বাধা দেয়, কারন এ ধরনের কাজ থেকে অন্তরের নিরাপত্তা নির্ভর করে অন্তরের লজ্জাশীলতার উপর।

এ কারনে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “লজ্জাশীলতা ঈমানের অঙ্গ।” ২৫

“লজ্জাশীলতা আর স্বল্প কথা বলা ঈমানের শাখাসমূহের মধ্যে দুটো শাখা, আর অশ্লীলতা ও বেশী কথা বলা নিফাকের শাখাসমূহের মধ্যে দুটো শাখা।” ২৬

এ কারনেই জীবিত সত্তা ঘৃণ্য ও নিন্দিত কাজ দ্বারা পরিস্কারভাবেই প্রভাবিত হয় আর তার একটি সংকল্প রয়েছে, যা তাকে বিরত রাখে সেগুলো সম্পাদন করা থেকে; এটি হল লজ্জাবিহীন ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিপরীত, কারন লজ্জাবিহীন ব্যক্তি (অর্থাৎ, তার অন্তর) জীবিত নয়, কাজেই তার লজ্জাশীলতা নেই, এ কারনে ঈমান নেই যা তাকে পাপ কাজ থেকে বাধা দিবে।

সুতরাং, অন্তর যদি জীবিত থাকে আর ব্যক্তি তার শরীর থেকে এর বিচ্ছেদের মাধ্যমে মারা যায়, তাহলে আত্মার মৃত্যু নির্ভর করবে ব্যক্তির শরীর থেকে এর বিচ্ছেদের উপর, কেবলমাত্র এটি থেকে প্রান ত্যাগে মারা যাওয়ার উপর এর মৃত্যু নির্ভর করবে না। এ কারনে গৌরবান্বিত আল্লাহ বলেন,
وَلَا تَقُولُوا لِمَن يُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتٌ بَلْ أَحْيَاءً
"আর যারা আল্লাহ'র পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত বলো না বরং তারা জীবিত...।" (সূরা বাকারাহ, ২: ১৫৪)

وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ (١٦٩)
"আর যারা আল্লাহ'র পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত মনে করো না বরং তারা জীবিত...।" (সূরা আল 'ইমরান, ৩ : ১৬৯)

তারা মৃত্যুবরণ করা সত্ত্বেও, যেটি আল্লাহ'র বাণীতে উল্লেখ রয়েছে -
كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ "প্রত্যেক আত্মাই মৃত্যুর স্বাদ পাবে...।" (সূরা আল 'ইমরান, ৩: ১৮৫)

إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُم مَّيِّتُونَ (۳۰) "নিশ্চয়ই তুমিও মারা যাবে আর তারাও মারা যাবে...।" (সূরা আয-যুমার, ৩৯ : ৩০)

وَهُوَ الَّذِي أَحْيَاكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيكُمْ إِنَّ الْإِنسَانَ لَكَفُورٌ (٦٦) "এবং তিনি তোমাদেরকে জীবন দান করেছেন, অতঃপর তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন, পুনরায় তোমাদেরকে জীবন দান করবেন...।" (সূরা হাজ্জ, ২২: ৬৬)

কাজেই ছোট মৃত্যু বড় মৃত্যুর অনুরূপ নয়। ছোট মৃত্যু হল শরীর থেকে আত্মার বিচ্ছেদ, আর বড় মৃত্যু হল শরীর ও আত্মা উভয় থেকেই পুরোপুরিভাবে প্রাণের বিচ্ছেদ। ব্যাপারটি এ কথার মতোই যে, ঘুম হল মৃত্যুর ভাই। আল্লাহ বলেন,
لَّهُ يَتَوَفَّى الْأَنفُسَ حِينَ مَوْتِهَا وَالَّتِي لَمْ تَمُتْ فِي مَنَامِهَا فَيُمْسِكُ الَّتِي قَضَىٰ عَلَيْهَا الْمَوْتَ وَيُرْسِلُ الْأُخْرَىٰ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى
“তাদের মৃত্যুর সময় আল্লাহ (তাদের) আত্মা হরণ করেন আর যাদের মৃত্যু আসেনি (তাদের আত্মাও হরণ করেন তাদের) ঘুমের সময়। অতঃপর যার জন্য মৃত্যুর সিদ্ধান্ত করেন তার আত্মা তিনি রেখে দেন আর অবশিষ্টগুলো ফিরিয়ে দেন একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য।” (সূরা যুমার, ৩৯ : ৪২)

রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুম থেকে জেগে উঠে বলতেন, “সকল প্রশংসা আল্লাহ'র, যিনি আমাদের মৃত্যু ঘটানোর পর আমাদেরকে জীবন দান করেন এবং তার প্রতিই আমাদের পুনরুত্থান ঘটবে।” ২৭

আরেকটি হাদিসে বর্ণিত আছে যে তিনি বলতেন, "সকল প্রশংসা আল্লাহ'র, যিনি আমার শারীরিক অবস্থা ফিরিয়ে দিয়েছেন আর আমার আত্মা ফিরিয়ে দিয়েছেন এবং তাকে স্মরণ করার জন্য আমাকে অনুমতি দিয়েছেন।” ২৮

যখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমানোর জন্য শুতেন তখন বলতেন, “হে আল্লাহ, নিশ্চয়ই আপনি আমার আত্মা সৃষ্টি করেছেন, আর আপনি এর প্রাণ নিবেন, এর মৃত্যু ও জীবন তো আপনারই অধিকারভুক্ত। আপনি যদি আমার আত্মাকে জীবিত রাখেন তবে একে রক্ষা করুন, আর যদি এর প্রাণ নেন তবে একে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি আমাকে সুস্বাস্থ্য দান করার জন্য." ২৯

রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন, “হে আল্লাহ, আপনার নাম নিয়ে মারা যাই আর (আপনার নাম নিয়েই) জীবিত হই।” ৩০

টিকাঃ
(২৫) সাহিহ বুখারি- ৮/৮৯, হাদিস ১৩৯; সাহিহ মুসলিম ১/২৭, হাদিস ৫৭
(২৬) তিরমিযি কতৃক বর্ণিত, এছাড়াও এটি আল-বাগাওি তার শারহ আস-সুন্নাহ ১২/৩৬৬ তে বর্ণনা করেছেন, হাকিম একে সাহিহ এবং আল- 'ইরাকি একে হাসান বলেছেন।
(২৭) সাহিহ বুখারি - ৮/২১৭; সাহিহ মুসলিম ৪/১৪২২, হাদিস ৬৫৪৯; সুনান আবু দাউদ ৩/১৪০২, হাদিস ৫০৩১
(২৮) তিরমিযি- ৩৪০১; হাদিসটি সাহিহ, দেখুনঃ শাইখ 'আলী হাসানের মুহাযযাব 'আমাল আল-ইয়াওম ওয়া লাইলা পৃষ্ঠা ৩৩ (অনুবাদকের টীকা]
(২৯) সাহিহ মুসলিম - ৪/১৪২২, হাদিস ৬৫৫০
(৩০) সাহিহ বুখারি - ৮/২১৭, হাদিস ৩২৪; সাহিহ মুসলিম ৪/১৪২২, হাদিস ৬৫৪৯

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন