📘 অন্তরের ব্যাধি সমূহ ও তার চিকিৎসা > 📄 অন্তরের পরিশুদ্ধতার উপর পাপের প্রভাব

📄 অন্তরের পরিশুদ্ধতার উপর পাপের প্রভাব


'আদল (সুবিচার ও ন্যায়বিচার) হল ই'তিদাল (ভারসাম্য), আর ভারসাম্যেই নির্ভর করে অন্তরের সংশোধন, যেমনটি যুলমে (ভারসাম্যহীনতা/অত্যাচার) রয়েছে অন্তরের বিকৃতি। এ কারনেই একজন ব্যক্তি প্রতিটি পাপ করার করার মাধ্যমে নিজের উপর অত্যাচার (যালিমান লি নাফসিহি) করে। যুলমের বিপরীত হল 'আদল, তাই সেই পাপী ব্যক্তি নিজের প্রতি ন্যায়পরায়ণ থাকেনি বরং সে অন্তরকে অত্যাচার করেছে। অন্তরের সংশোধন নির্ভর করে 'আদল এর উপর আর এর বিকৃত হওয়া নির্ভর করে যুলমের উপর। সুতরাং, আল্লাহ'র গোলাম যখন নিজেকে অত্যাচার করে তখন সে একই সময়ে অত্যাচারী আর অত্যাচারীত। অনুরূপভাবে, যখন সে ন্যায়পরায়ণ, তখন সে একজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি আর সেই ব্যক্তির মত, যার উপর ন্যায়বিচার করা হয়।

ব্যক্তি কোন কাজ সম্পাদন করলে সে তার সেই কাজের ফল পাবে, হোক সেটি তিক্ত বা মধুর। আল্লাহ বলেন,

لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ
"... সে যা অর্জন করেছে (সৎ কাজ) সেটির জন্য তার পুরস্কার রয়েছে, এবং সে যা অর্জন করেছে (পাপ কাজ) সেটির জন্য সে শাস্তিপ্রাপ্ত হবে..." (সূরা বাকারাহ, ২ : ২৮৬)

কাজ শরীরকে প্রভাবিত করার পূর্বেই অন্তরকে প্রভাবিত করে হয় উপকারের মাধ্যমে বা ক্ষতির মাধ্যমে বা সংশোধন করার মাধ্যমে। সৎ ও পবিত্র কাজ আত্মার জন্য ন্যায়বিচার স্থাপন করে, অপরদিকে মন্দ কাজ আত্মাকে অত্যাচার করে। মহান আল্লাহ বলেন,

مَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِنَفْسِهِ وَمَنْ أَسَاء فَعَلَيْهَا وَمَا رَبُّكَ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيدِ (٤٦)
"যে সৎ কাজ করে সে নিজের কল্যাণের জন্যই তা করে এবং যে মন্দ কাজ করে সে তার নিজের বিরুদ্ধেই সেটি করে।” (সূরা ফুসসিলাত, ৪১ : ৪৬)

إِنْ أَحْسَنتُمْ أَحْسَنتُمْ لِأَنفُسِكُمْ وَإِنْ أَسَأْتُمْ فَلَهَا
"যদি তোমরা সৎ কাজ করো তবে সেটি তোমাদের নিজেদের কল্যাণের জন্যই করলে, আর যদি মন্দ কাজ করো তবে সেটি তোমরা নিজেদের বিরুদ্ধেই করলে।” (সূরা আল-ইসরা', ১৭ : ৭)

সালাফদের ১৫ মধ্যে বেশ কিছু ব্যক্তি বলেন, “নিশ্চয়ই সৎ কাজগুলো অন্তরের একটি জ্যোতি, শরীরের জন্য শক্তি বৃদ্ধিকারী, চেহারার জ্যোতি, ব্যাপক রিযকের কারন এবং সৃষ্টির অন্তরগুলোতে ভালোবাসা। নিশ্চয়ই মন্দ কাজগুলো অন্তরে একটি অন্ধকার, চেহারার উপর অন্ধকারময়তা, শরীরের জন্য দুর্বলতা, রিযক কমে যাওয়ার কারন আর সৃষ্টির অন্তরগুলোতে ঘৃণা।”

মহান আল্লাহ বলেন,

كُلُّ امْرِئٍ بِمَا كَسَبَ رَهِينٌ (۲۱)
"প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়ী।” (সূরা তুর, ৫২ : ২১)

كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ رَهِينَةٌ (۳۸)
"প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের দায়ে আবদ্ধ।” (সূরা মুদদাসসির, ৭৪ : ৩৮)

وَذَكِّرْ بِهِ أَن تُبْسَلَ نَفْسٌ بِمَا كَسَبَتْ لَيْسَ لَهَا مِن دُونِ اللَّهِ وَلِيٌّ وَلَا شَفِيعٌ وَإِن تَعْدِلْ كُلَّ عَدْلٍ لَّا يُؤْخَذْ مِنْهَا ۚ أُولَئِكَ الَّذِينَ أُبْسِلُوا بِمَا كَسَبُوا
"কুরআন দিয়ে তাদেরকে উপদেশ দিতে থাকুন, যাতে কোন ব্যক্তি নিজের কৃতকর্মের জন্য ধ্বংস না হয়, আল্লাহ ছাড়া তার কোন বন্ধু, সাহায্যকারী ও সুপারিশকারী থাকবে না, আর এই অবস্থার সম্মুখীন না হয় যে দুনিয়াভর বিনিময় বস্তু দিয়েও মুক্তি পেতে চাইলে সেই বিনিময় গ্রহণ করা হবে না, তারা এমনই লোক যে, নিজেদের কর্মদোষে আটকা পড়ে গেছে।” (সূরা আন'আম, ৬: ৭০)

"তাবসালা” অর্থ হল নিপীড়ন করা, শেকল দিয়ে আটকে রাখা এবং আকৃষ্ট করা।

একইভাবে, শরীর যখন অসুস্থতা থেকে মুক্তি পায় তখন বলা হয়, "তার স্বভাব ও প্রকৃতির ভারসাম্য হয়েছে।” এর কারন হল, ন্যায় ও অন্যায় মিশে যাওয়া থেকে নিরাপদ - এমন পরিপূর্ণ ভারসাম্য অর্জনের কোন উপায় না থাকা সত্ত্বেও অসুস্থতা স্বভাব-প্রকৃতিকে বিকৃত করে দেয়, কিন্তু আদর্শ বা আদর্শের কাছাকাছি ভারসাম্যের জন্য লক্ষ্য রাখতে হবে।

একই অবস্থা অন্তরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এর স্বাস্থ্য আর সংশোধন নির্ভর করে ভারসাম্যের উপর আর এর অসুস্থতা নির্ভর করে পথভ্রষ্টতা, অত্যাচার ও অবান্তরতার উপর। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ভারসাম্য রক্ষা করাটা অসম্ভব - হোক সেটি কাজ বা জ্ঞানের ক্ষেত্রে। কিন্তু আদর্শ বা আদর্শের কাছাকাছি ভারসাম্যের জন্য লক্ষ্য রাখতে হবে। এ কারনেই সালাফি পদ্ধতিকে বলা হয় "আদর্শিক পদ্ধতি”। আল্লাহ বলেন,

وَلَن تَسْتَطِيعُوا أَن تَعْدِلُوا بَيْنَ النِّسَاءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ ۖ فَلَا تَمِيلُوا كُلَّ الْمَيْلِ
"তোমরা কখনো স্ত্রীদের মধ্যে সুবিচার করতে পারবে না যদিও তোমরা কামনা করো..." (সূরা নিসা', ৪ : ১২৯)

وَأَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيزَانَ بِالْقِسْطِ لَا نُكَلِّفُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا
"...আর আদান-প্রদানে পরিমান ও ওজন সঠিকভাবে করবে, আমি কারো উপর তার সাধ্যাতীত ভার (দায়িত্ব-কর্তব্য) অর্পণ করি না...” (সূরা আন'আম, ৬ : ১৫২)

মহিমান্বিত আল্লাহ তার রসূলদেরকে প্রেরণ করেছিলেন আর নাযিল করেছিলেন আসমানি কিতাবসমূহ, যাতে করে মানুষ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। ন্যায়বিচারের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ রূপটি হল আল্লাহ'র সাথে কোন অংশীদার স্থাপন না করে একমাত্র আল্লাহ'র ইবাদাহ করা, এরপর লোকজনের অধিকারের প্রতি উপযুক্ত ন্যায়বিচার করা, এরপর নিজের ব্যাপারে ন্যায়পরায়ণ হওয়া।

টিকাঃ
১৫. যেমনটি বলেছেন ইবনে আব্বাস (রাঃ), যা ইবনুল কায়্যিম আল-জাওাব আল-কাফি তে উল্লেখ করেছেন।

'আদল (সুবিচার ও ন্যায়বিচার) হল ই'তিদাল (ভারসাম্য), আর ভারসাম্যেই নির্ভর করে অন্তরের সংশোধন, যেমনটি যুলমে (ভারসাম্যহীনতা/অত্যাচার) রয়েছে অন্তরের বিকৃতি। এ কারনেই একজন ব্যক্তি প্রতিটি পাপ করার করার মাধ্যমে নিজের উপর অত্যাচার (যালিমান লি নাফসিহি) করে। যুলমের বিপরীত হল 'আদল, তাই সেই পাপী ব্যক্তি নিজের প্রতি ন্যায়পরায়ণ থাকেনি বরং সে অন্তরকে অত্যাচার করেছে। অন্তরের সংশোধন নির্ভর করে 'আদল এর উপর আর এর বিকৃত হওয়া নির্ভর করে যুলমের উপর। সুতরাং, আল্লাহ'র গোলাম যখন নিজেকে অত্যাচার করে তখন সে একই সময়ে অত্যাচারী আর অত্যাচারীত। অনুরূপভাবে, যখন সে ন্যায়পরায়ণ, তখন সে একজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি আর সেই ব্যক্তির মত, যার উপর ন্যায়বিচার করা হয়।

ব্যক্তি কোন কাজ সম্পাদন করলে সে তার সেই কাজের ফল পাবে, হোক সেটি তিক্ত বা মধুর। আল্লাহ বলেন,

لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ
"... সে যা অর্জন করেছে (সৎ কাজ) সেটির জন্য তার পুরস্কার রয়েছে, এবং সে যা অর্জন করেছে (পাপ কাজ) সেটির জন্য সে শাস্তিপ্রাপ্ত হবে..." (সূরা বাকারাহ, ২ : ২৮৬)

কাজ শরীরকে প্রভাবিত করার পূর্বেই অন্তরকে প্রভাবিত করে হয় উপকারের মাধ্যমে বা ক্ষতির মাধ্যমে বা সংশোধন করার মাধ্যমে। সৎ ও পবিত্র কাজ আত্মার জন্য ন্যায়বিচার স্থাপন করে, অপরদিকে মন্দ কাজ আত্মাকে অত্যাচার করে। মহান আল্লাহ বলেন,

مَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِنَفْسِهِ وَمَنْ أَسَاء فَعَلَيْهَا وَمَا رَبُّكَ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيدِ (٤٦)
"যে সৎ কাজ করে সে নিজের কল্যাণের জন্যই তা করে এবং যে মন্দ কাজ করে সে তার নিজের বিরুদ্ধেই সেটি করে।” (সূরা ফুসসিলাত, ৪১ : ৪৬)

إِنْ أَحْسَنتُمْ أَحْسَنتُمْ لِأَنفُسِكُمْ وَإِنْ أَسَأْتُمْ فَلَهَا
"যদি তোমরা সৎ কাজ করো তবে সেটি তোমাদের নিজেদের কল্যাণের জন্যই করলে, আর যদি মন্দ কাজ করো তবে সেটি তোমরা নিজেদের বিরুদ্ধেই করলে।” (সূরা আল-ইসরা', ১৭ : ৭)

সালাফদের ১৫ মধ্যে বেশ কিছু ব্যক্তি বলেন, “নিশ্চয়ই সৎ কাজগুলো অন্তরের একটি জ্যোতি, শরীরের জন্য শক্তি বৃদ্ধিকারী, চেহারার জ্যোতি, ব্যাপক রিযকের কারন এবং সৃষ্টির অন্তরগুলোতে ভালোবাসা। নিশ্চয়ই মন্দ কাজগুলো অন্তরে একটি অন্ধকার, চেহারার উপর অন্ধকারময়তা, শরীরের জন্য দুর্বলতা, রিযক কমে যাওয়ার কারন আর সৃষ্টির অন্তরগুলোতে ঘৃণা।”

মহান আল্লাহ বলেন,

كُلُّ امْرِئٍ بِمَا كَسَبَ رَهِينٌ (۲۱)
"প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়ী।” (সূরা তুর, ৫২ : ২১)

كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ رَهِينَةٌ (۳۸)
"প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের দায়ে আবদ্ধ।” (সূরা মুদদাসসির, ৭৪ : ৩৮)

وَذَكِّرْ بِهِ أَن تُبْسَلَ نَفْسٌ بِمَا كَسَبَتْ لَيْسَ لَهَا مِن دُونِ اللَّهِ وَلِيٌّ وَلَا شَفِيعٌ وَإِن تَعْدِلْ كُلَّ عَدْلٍ لَّا يُؤْخَذْ مِنْهَا ۚ أُولَئِكَ الَّذِينَ أُبْسِلُوا بِمَا كَسَبُوا
"কুরআন দিয়ে তাদেরকে উপদেশ দিতে থাকুন, যাতে কোন ব্যক্তি নিজের কৃতকর্মের জন্য ধ্বংস না হয়, আল্লাহ ছাড়া তার কোন বন্ধু, সাহায্যকারী ও সুপারিশকারী থাকবে না, আর এই অবস্থার সম্মুখীন না হয় যে দুনিয়াভর বিনিময় বস্তু দিয়েও মুক্তি পেতে চাইলে সেই বিনিময় গ্রহণ করা হবে না, তারা এমনই লোক যে, নিজেদের কর্মদোষে আটকা পড়ে গেছে।” (সূরা আন'আম, ৬: ৭০)

"তাবসালা” অর্থ হল নিপীড়ন করা, শেকল দিয়ে আটকে রাখা এবং আকৃষ্ট করা।

একইভাবে, শরীর যখন অসুস্থতা থেকে মুক্তি পায় তখন বলা হয়, "তার স্বভাব ও প্রকৃতির ভারসাম্য হয়েছে।” এর কারন হল, ন্যায় ও অন্যায় মিশে যাওয়া থেকে নিরাপদ - এমন পরিপূর্ণ ভারসাম্য অর্জনের কোন উপায় না থাকা সত্ত্বেও অসুস্থতা স্বভাব-প্রকৃতিকে বিকৃত করে দেয়, কিন্তু আদর্শ বা আদর্শের কাছাকাছি ভারসাম্যের জন্য লক্ষ্য রাখতে হবে।

একই অবস্থা অন্তরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এর স্বাস্থ্য আর সংশোধন নির্ভর করে ভারসাম্যের উপর আর এর অসুস্থতা নির্ভর করে পথভ্রষ্টতা, অত্যাচার ও অবান্তরতার উপর। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ভারসাম্য রক্ষা করাটা অসম্ভব - হোক সেটি কাজ বা জ্ঞানের ক্ষেত্রে। কিন্তু আদর্শ বা আদর্শের কাছাকাছি ভারসাম্যের জন্য লক্ষ্য রাখতে হবে। এ কারনেই সালাফি পদ্ধতিকে বলা হয় "আদর্শিক পদ্ধতি”। আল্লাহ বলেন,

وَلَن تَسْتَطِيعُوا أَن تَعْدِلُوا بَيْنَ النِّسَاءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ ۖ فَلَا تَمِيلُوا كُلَّ الْمَيْلِ
"তোমরা কখনো স্ত্রীদের মধ্যে সুবিচার করতে পারবে না যদিও তোমরা কামনা করো..." (সূরা নিসা', ৪ : ১২৯)

وَأَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيزَانَ بِالْقِسْطِ لَا نُكَلِّفُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا
"...আর আদান-প্রদানে পরিমান ও ওজন সঠিকভাবে করবে, আমি কারো উপর তার সাধ্যাতীত ভার (দায়িত্ব-কর্তব্য) অর্পণ করি না...” (সূরা আন'আম, ৬ : ১৫২)

মহিমান্বিত আল্লাহ তার রসূলদেরকে প্রেরণ করেছিলেন আর নাযিল করেছিলেন আসমানি কিতাবসমূহ, যাতে করে মানুষ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। ন্যায়বিচারের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ রূপটি হল আল্লাহ'র সাথে কোন অংশীদার স্থাপন না করে একমাত্র আল্লাহ'র ইবাদাহ করা, এরপর লোকজনের অধিকারের প্রতি উপযুক্ত ন্যায়বিচার করা, এরপর নিজের ব্যাপারে ন্যায়পরায়ণ হওয়া।

টিকাঃ
১৫. যেমনটি বলেছেন ইবনে আব্বাস (রাঃ), যা ইবনুল কায়্যিম আল-জাওাব আল-কাফি তে উল্লেখ করেছেন।

📘 অন্তরের ব্যাধি সমূহ ও তার চিকিৎসা > 📄 যুলমের ধরনসমূহ

📄 যুলমের ধরনসমূহ


যুলম তিন ধরনের, আর এর সবই অন্তরের অসুস্থতা থেকে হয়ে থাকে। অন্তরের সুস্বাস্থ্য ও পবিত্রতা নির্ভর করে ন্যায়বিচারের উপর। ইমাম আহমাদ বিন হানবাল এক ব্যক্তিকে বললেন, “আপনি সুস্থ হলে কাউকেই ভয় করতেন না”, এর অর্থ হল- মানুষের ব্যাপারে আপনার মধ্যে যে ভয় আছে সেটি আপনার ভিতর থাকা একটি অসুস্থতার কারনেই, যেমন শিরক ও পাপের অসুস্থতা।

অন্তরের সংশোধিত হওয়ার ভিত্তি নির্ভর করে এটির জীবিত ও আলোকিত হওয়ার উপর। মহান আল্লাহ বলেন,
أَوَمَن كَانَ مَيْتًا فَأَحْيَيْنَاهُ وَجَعَلْنَا لَهُ نُورًا يَمْشِي بِهِ فِي النَّاسِ كَمَن مَّثَلُهُ فِي الظُّلُمَاتِ لَيْسَ بِخَارِجٍ مِّنْهَا ۚ
“এমন ব্যক্তি - যে ছিল মৃত, এরপর তাকে আমি জীবন প্রদান করি আর তার জন্য আমি এমন আলোর (ব্যবস্থা) করে দেই যার সাহায্যে সে লোকদের মধ্যে চলাফেরা করতে থাকে; সে কি এমন কোন ব্যক্তির মত হতে পারে যে (ডুবে) আছে অন্ধকারপুঞ্জের মধ্যে, তা থেকে বের হওয়ার পথই পাচ্ছে না?” (সূরা আন'আম, ৬ : ১২২)

এ কারনেই আল্লাহ কুরআনের বিভিন্ন স্থানে অন্তরের জীবন, এর প্রদীপ্তি, মৃত্যু ও অন্ধকারময়তা সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন, যেমন গৌরবান্বিত আল্লাহ বলেন,
لِّيُنذِرَ مَن كَانَ حَيًّا ۙ
“যাতে করে সে জীবিতদেরকে সতর্ক করতে পারে।” (সূরা ইয়াসিন, ৩৬ : ৭০)

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَجِيبُوا لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمْ لِمَا يُحْيِيكُمْ ۖ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يَحُولُ بَيْنَ الْمَرْءِ وَقَلْبِهِ وَأَنَّهُ إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ (٢٤)
“হে ইমানদারগণ, তোমরা আল্লাহ ও তার রসূলের ডাকে সাড়া দাও যখন তিনি তোমাদের এমন কিছুর দিকে ডাকেন যা তোমাদেরকে জীবন দান করবে, জেনে রেখো, আল্লাহ তায়ালা মানুষ ও তার হৃদয়ের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থান করেন; তোমাদের সবাইকে তার কাছেই ফিরে যেতে হবে।” (সূরা আনফাল, ৮ : ২৪)

يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ
"তিনিই মৃত থেকে জীবিতকে বের করে নিয়ে আসেন এবং জীবিত থেকে মৃতকে বের করে নিয়ে আসেন...।" (সূরা রুম, ৩০ : ১৯)

এ উদাহারনগুলো দ্বারা তিনি একজন কাফির থেকে একজন মুসলিমকে আর একজন মুসলিম থেকে একজন কাফিরকে প্রকাশ করে দিলেন।

নির্ভরযোগ্য হাদিসে বলা আছে "যে ঘরে আল্লাহর স্মরণ করা হয় আর যে ঘরে আল্লাহ'র স্মরণ করা হয় না সেগুলো জীবিত ও মৃতের অনুরূপ।” ১৬

আল-বুখারির সাহিহতে বর্ণিত একটি হাদিস হল "তোমরা তোমাদের কিছু কিছু সালাত তোমাদের ঘরে আদায় করবে, তোমাদের ঘরগুলোকে কবর বানাবে না।” ১৭

মহান আল্লাহ বলেন,
وَالَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا صُمٌّ وَبُكْمٌ فِي الظُّلُمَاتِ
"যারা আমার নিদর্শনগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে তারা হল বধির, বোবা ও অন্ধকারে নিমজ্জিত।” (সূরা আন'আম, ৬ : ৩৯)

আল্লাহ "নূরের আয়াত" আর "অন্ধকারের আয়াত" উল্লেখ করেছেন –
اللَّهُ نُورُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ مَثَلُ نُورِهِ كَمِشْكَاةٍ فِيهَا مِصْبَاحٌ الْمِصْبَاحُ فِي زُجَاجَةٍ الزُّجَاجَةُ كَأَنَّهَا كَوْكَبٌ دُرِّيٌّ يُوقَدُ مِن شَجَرَةٍ مُّبَارَكَةٍ زَيْتُونَةٍ لَّا شَرْقِيَّةٍ وَلَا غَرْبِيَّةٍ يَكَادُ زَيْتهَا يُضِيءُ وَلَوْ لَمْ تَمْسَسْهُ نَارٌ نُّورٌ عَلَى نُورٍ يَهْدِي اللَّهُ لِنُورِهِ مَن يَشَاءُ
"আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর জ্যোতি, তার জ্যোতির উপমা যেন একটি দীপাধার, যার মধ্যে আছে একটি প্রদীপ, প্রদীপটি একটি কাঁচের আবরনের মধ্যে স্থাপিত, কাঁচের আবরণটি উজ্জ্বল নক্ষত্র সদৃশ; এটি প্রজ্বলিত করা হয় পূত-পবিত্র যয়তুন বৃক্ষের তেল দিয়ে যা প্রাচ্যের নয়, প্রতীচ্যেরও নয়, আগুন ওকে স্পর্শ না করলেও যেন ওর তেল উজ্জ্বল আলো দিচ্ছে; জ্যোতির উপর জ্যোতি!” (সূরা নূর, ২৪ : ৩৫)

এটি হল আল্লাহ'র বিশ্বাসী বান্দার অন্তরে থাকা ঈমানী নূরের দৃষ্টান্ত। এরপর আল্লাহ বলেন,
وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَعْمَالُهُمْ كَسَرَابٍ بِقِيعَةٍ يَحْسَبُهُ الظَّمْآنُ مَاءً حَتَّىٰ إِذَا جَاءَهُ لَمْ يَجِدْهُ شَيْئًا وَوَجَدَ اللَّهَ عِندَهُ فَوَفَّاهُ حِسَابَهُ وَاللَّهُ سَرِيعُ الْحِسَابِ (۳۹) أَوْ كَظُلُمَاتِ فِي بَحْرٍ لُجِّيٍّ يَغْشَاهُ مَوْجٌ مِّن فَوْقِهِ مَوْجٌ مِّن فَوْقِهِ سَحَابٌ ظُلُمَاتٌ بَعْضُهَا فَوْقَ بَعْضٍ إِذَا أَخْرَجَ يَدَهُ لَمْ يَكَدْ يَرَاهَا وَمَن لَّمْ يَجْعَلِ اللَّهُ لَهُ نُورًا فَمَا لَهُ مِن نُّورٍ (٤٠)
"যারা কুফরি করে তাদের কাজ মরুভূমির মরীচিকা সদৃশ, পিপাসার্ত যাকে পানি মনে করে থাকে, কিন্তু সে ওর নিকট উপস্থিত হলে দেখবে ওটা কিছু নয় এবং সে সেখানে আল্লাহকে পাবে, অতঃপর তিনি তার কর্মফল পূর্ণমাত্রায় দিবেন, আল্লাহ হিসাব গ্রহনে তৎপর। অথবা (তাদের কর্মকাণ্ডের উদাহারন হল) অতল সমুদ্রের অভ্যন্তরস্থ গভীর অন্ধকারের মতো, অতঃপর তাকে একটি বিশাল আকারের ঢেউ এসে ঢেকে (আরো অন্ধকার করে) দিলো, তার উপর আরো একটি ঢেউ (এলো), তার উপর (ছেয়ে গেলো কিছু) ঘন কালো মেঘ; এক অন্ধকারের উপর (এলো) আরেক অন্ধকার; এমনকি সে (এই অবস্থায়) হাত বের করলে তা আদৌ দেখতে পাবে না; বস্তুত আল্লাহ যাকে জ্যোতি দান করেন না তার কোন জ্যোতিই নেই।” (সূরা নূর, ২৪ : ৩৯-৪০)

সুতরাং, ৩৯ নাম্বার আয়াতে বাতিল বিশ্বাস আর এসব বিশ্বাস থেকে উদ্ভুত কাজগুলোর একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করা হয়েছে। ব্যক্তি সেই বাতিল বিশ্বাস থেকে উদ্ভূত কাজগুলোকে উপকারী হিসেবে বিবেচনা করে, কিন্তু সেগুলো বিচার দিবসে যখন তার কাছে এসে উপস্থিত হবে, তখন সে সেগুলোতে কোন উপকারই খুঁজে পাবে না। বরং আল্লাহ তার এই কাজগুলোর পূর্ণ প্রতিদান দিবেন দোযখে।

৪০ নাম্বার আয়াতে ব্যাপক অজ্ঞতা, ঈমানের অভাব ও বিশুদ্ধ ইলমের অভাবের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা হয়েছে। এই বিষয়গুলো যার মধ্যে রয়েছে সে একটির উপর আরেকটি অন্ধকারে রয়েছে, সে কোনকিছুই দেখতে সক্ষম হয় না; কারন নিশ্চয়ই দেখতে পাওয়া তো কেবল ঈমানের আলো আর সঠিক ইলমের দ্বারাই ঘটে। মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَوْا إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِّنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوا فَإِذَا هُم مُّبْصِرُونَ (۲۰۱)
"নিঃসন্দেহে যারা মুত্তাকী, তাদের যদি কখনো শয়তানের পক্ষ থেকে কুমন্ত্রণা স্পর্শ করে তবে তারা (সাথে সাথেই) আত্মসচেতন হয়ে যায় আর এরপর তারা (সঠিকভাবে) দেখতে পায়।” (সূরা আ'রাফ, ৭ : ২০১)

وَلَقَدْ هَمَّتْ بِهِ وَهَمَّ بِهَا لَوْلَا أَن رَّأَى بُرْهَانَ رَبِّهِ
"সে নারী তার প্রতি আসক্ত হয়েছিল আর সেও আসক্ত হয়ে পড়তো যদি না তার রবের নিদর্শন সে দেখতে পেতো...।" (সূরা ইউসুফ, ১২: ২৪)

এর অর্থ হল, তার অন্তর ঈমানের যে প্রমাণ অর্জন করেছে, সেটির কারনে আল্লাহ তাকে সেই আসক্তি থেকে তার মুখ ফিরিয়ে দিয়েছেন আর তার জন্য একটি পূর্ণ সওয়াব লিখে দিয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে কোন পাপ লিখে রাখা হয় নি, যেহেতু তিনি অসৎ কাজ না করে সৎ কাজ করেছিলেন। মহান আল্লাহ বলেন,
الر كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِ رَبِّهِمْ إِلَى صِرَاطِ الْعَزِيزِ الْحَمِيدِ (۱)
"... যাতে আপনি মানবজাতিকে তাদের রবের নির্দেশক্রমে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনতে পারেন...।" (সূরা ইব্রাহীম, ১৪ : ১)

اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَوْلِيَاؤُهُمُ الطَّاغُوتُ يُخْرِجُونَهُم مِّنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ *
"আল্লাহই ইমানদারদের অভিভাবক। তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যান; আর যারা অবিশ্বাস করেছে শয়তান তাদের পৃষ্ঠপোষক, সে তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়...।" (সূরা বাকারাহ, ২ : ২৫৭)

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَآمِنُوا بِرَسُولِهِ يُؤْتِكُمْ كِفْلَيْنِ مِن رَّحْمَتِهِ وَيَجْعَل لَّكُمْ نُورًا تَمْشُونَ بِهِ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ (۲۸)
"হে ইমানদারগণ, তোমরা আল্লাহ'র ব্যাপারে তাকওয়া অবলম্বন করো আর তার প্রেরিত রসূলের উপর ঈমান আনো, এর ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে দ্বিগুণ অনুগ্রহে ভূষিত করবেন, তিনি তোমাদের দিবেন একটি আলো, যার সাহায্যে তোমরা পথ চলতে সক্ষম হবে...।" (সূরা হাদিদ, ৫৭ : ২৮)

এ কারনেই আল্লাহ ঈমানের জন্য দুই ধরনের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন-পানির দৃষ্টান্ত, যেটি দ্বারা জীবন অস্তিত্বমান থাকে আর ফেনা, যা পানির সাথে আগমন করে। আরেকটি দৃষ্টান্ত হল আগুনের, যেটি দ্বারা আলো উদ্ভূত হয়। আল্লাহ বলেন,
أَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَسَالَتْ أَوْدِيَةٌ بِقَدَرِهَا فَاحْتَمَلَ السَّيْلُ زَبَدًا رَّابِيًا وَمِمَّا يُوقِدُونَ عَلَيْهِ فِي النَّارِ ابْتِغَاءَ حِلْيَةٍ أَوْ مَتَاعِ زَبَدٌ مَّثْلُهُ كَذَلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ الْحَقَّ وَالْبَاطِلَ فَأَمَّا الزَّبَدُ فَيَذْهَبُ جُفَاءَ
"তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, এরপর (নদী-নালা ও তার) উপত্যকাসমূহ তাদের নিজ নিজ পরিমাণ অনুযায়ী প্লাবিত হয়, এরপর এ প্লাবন (আবর্জনার) ফেনা বহন করে (উপরে) নিয়ে আসে; (আবার) যারা অলংকার ও যন্ত্রপাতি বানানোর জন্য (ধাতুকে) আগুনে উত্তপ্ত করে, (তখনো) তাদের এক ধরণের আবর্জনা ফেনা (হয়ে) উপরে উঠে আসে; এভাবেই আল্লাহ হক ও বাতিলের উদাহারন দিয়ে থাকেন, অতঃপর (আবর্জনার) ফেনা এমনিই বিফলে চলে যায় এবং (পানি-) যা মানুষের প্রচুর উপকারে আসে তা জমিনেই থেকে যায়..." (সূরা রা'দ, ১৩ : ১৭)

অনুরূপভাবে, আল্লাহ মুনাফিকদের ব্যাপারে দুটো দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন-
مَثَلُهُمْ كَمَثَلِ الَّذِي اسْتَوْقَدَ نَارًا فَلَمَّا أَضَاءَتْ مَا حَوْلَهُ ذَهَبَ اللَّهُ بِنُورِهِمْ وَتَرَكَهُمْ فِي ظُلُمَاتٍ لَّا يُبْصِرُونَ (۱۷) صُمٌّ بُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لَا يَرْجِعُونَ (۱۸) أَوْ كَصَيِّبٍ مِّنَ السَّمَاءِ فِيهِ ظُلُمَاتٌ وَرَعْدٌ وَبَرْقٌ يَجْعَلُونَ أَصَابِعَهُمْ فِي آذَانِهِم مِّنَ الصَّوَاعِقِ حَذَرَ الْمَوْتِ وَاللَّهُ مُحِيطٌ بِالْكَافِرِينَ (۱۹) يَكَادُ الْبَرْقُ يَخْطَفُ

টিকাঃ
(১৬) সাহিহ বুখারি- ৮/২৭৮, হাদিস ৪১৬
(১৭) সাহিহ বুখারি- ১/২৫৪, হাদিস ৪২৪ এবং ২/১৫৬, হাদিস ২৮০

📘 অন্তরের ব্যাধি সমূহ ও তার চিকিৎসা > 📄 অন্তরের জীবন

📄 অন্তরের জীবন


একটি দুয়া'র বর্ণনায় আছে, “কুরআনকে আমাদের অন্তরের প্রতিপালনকারী (রাবি') আর আমাদের বুকের জ্যোতি করে দিন।” ১৮

রাবি'- এর অর্থ হল বৃষ্টি, যা আকাশ থেকে নেমে আসে আর উদ্ভিদকে পরিপুষ্ট করে। যে ঋতুতে প্রথম বৃষ্টি পড়ে, আরবেরা তাকে আর-রাবি' বলে, কারন বৃষ্টি পড়ার কারনে উৎপাদনের উন্নতি ঘটে। অনারবেরা শীত পরবর্তী ঋতুকে আর-রাবি' বলে, কারন এই ঋতুতে ফল উৎপাদনকারী উদ্ভিদগুলোতে ফুল ও পাতা প্রতীয়মান হয়।

টিকাঃ
(১৮) এটি একটি সুদীর্ঘ দুয়া'র অংশ, যা বর্ণনা করেছেন আহমাদ-৩৭৩২, আবু ইয়া'লা-১/১৫৬, আত-তাবারানি'র আল-কাবাইর-৩/৭৪/১ এবং আরও অনেকে। এটি সাহিহ হাদিস। দেখুন আস-সাহিহাহ এর ১৯৯ নাম্বার হাদিস। আহমাদে হাদিসটির বর্ণনাটিতে একলিঙ্গ ব্যবহার করা হয়েছে, বহুলিঙ্গ নয়। [অনুবাদকের টীকা]

📘 অন্তরের ব্যাধি সমূহ ও তার চিকিৎসা > 📄 মৃত অন্তরের অবস্থা

📄 মৃত অন্তরের অবস্থা


জীবিত ও আলোকিত অন্তর তার ভিতরে থাকা আলোর কারনে দেখতে, শুনতে ও অনুধাবন করতে পারে; কিন্তু মৃত অন্তর দেখতে, শুনতে বা অনুধাবন করতে পারে না। মহিমান্বিত আল্লাহ বলেন,
وَمَثَلُ الَّذِينَ كَفَرُوا كَمَثَلِ الَّذِي يَنْعِقُ بِمَا لَا يَسْمَعُ إِلَّا دُعَاءً وَنِدَاءً صُمٌّ بُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لَا يََعْقِلُونَ (۱۷۱)
"আর যারা অবিশ্বাস করেছে তাদের দৃষ্টান্ত ওদের ন্যায়, যেমন কেউ আহবান করলে শুধু চিৎকার ও ধ্বনি ব্যতীত আর কিছুই শুনে না; (মূলত) এরা বধির, বোবা, অন্ধ, (এ কারনে হিদায়াহ'র কথাও) এরা বুঝে না।” (সূরা বাকারাহ, ২ : ১৭১)

وَمِنْهُم مَّن يَسْتَمِعُونَ إِلَيْكَ أَفَأَنتَ تُسْمِعُ الصُّمَّ وَلَوْ كَانُوا لَا يَعْقِلُونَ (٤٢) وَمِنْهُم مَّن يَنظُرُ إِلَيْكَ أَفَأَنتَ تَهْدِي الْعُمْيَ وَلَوْ كَانُوا لَا يُبْصِرُونَ (٤٣)
"এদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে, যারা তোমার দিকে কান পেতে রাখে; তুমি কি বধিরকে (আল্লাহ'র কালাম) শোনাবে, যদিও তারা এর কিছুই বুঝতে না পারে? এবং ওদের মধ্যে কেউ কেউ আছে যারা তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে, কিন্তু তুমি কি অন্ধকে পথ দেখাবে, যদিও তারা নিজেরা এর কিছুই দেখতে না পায়?” (সূরা ইউনুস, ১০ : ৪২-৪৩)

وَمِنْهُم مَّن يَسْتَمِعُ إِلَيْكَ وَجَعَلْنَا عَلَى قُلُوبِهِمْ أَكِنَّةً أَن يَفْقَهُوهُ وَفِي آذَانِهِمْ وَقْرًا وَإِن يَرَوْا كُلَّ آيَةٍ لَا يُؤْمِنُوا بِهَا حَتَّى إِذَا جَاءُوكَ يُجَادِلُونَكَ يَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا إِنْ هَذَا إِلَّا أَسَاطِيرُ الْأَوَّلِينَ (٢٥)
"তাদের মধ্যে এমন কিছু লোকও আছে যে (বাহ্যিক দৃষ্টিতে মনে হয়) তোমার কথা কান দিয়ে শুনছে, (কিন্তু আসলে) আমি তাদের অন্তরের উপর পর্দা দিয়ে রেখেছি, যার কারনে তারা কিছুই অনুধাবন করতে পারে না, আমি তাদের কানে বধিরতা অর্পণ করেছি; (মূলত) তারা যদি (আল্লাহ'র) সব নিদর্শন দেখেও নেয়, তবু তারা তার প্রতি ঈমান আনবে না, এমনকি তারা যখন তোমার সামনে আসবে তখন তোমার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হবে, (কুরআনের আয়াত সম্পর্কে) কাফিররা বলবে, 'এটি তো প্রাচীনকালের লোকদের কিসসা কাহিনী ছাড়া আর কিছুই না।'” (সূরা আন'আম, ৬: ২৫)

সুতরাং আল্লাহ আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন যে তাদের অন্তর অনুধাবন করতে পারে না, তাদের কান শ্রবণ করতে পারে না, আর তারা যা দেখে তাতে বিশ্বাসও করে না, যেমনটি আল্লাহ আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন এই আয়াতের মাধ্যমে -
وَقَالُوا قُلُوبُنَا فِي أَكِنَّةٍ مِّمَّا تَدْعُونَا إِلَيْهِ وَفِي آذَانِنَا وَقْرٌ وَمِن بَيْنِنَا وَبَيْنِكَ حِجَابٌ
"তারা বলেঃ তুমি যে বিষয়ের দিকে আমাদের আহবান করছো, সেটির জন্য আমাদের অন্তরগুলো আবরণে আচ্ছাদিত হয়ে আছে, আমাদের কানেও রয়েছে বধিরতা, আমাদের আর তোমার মাঝে একটি দেয়াল (দাঁড়িয়ে) আছে...।" (সূরা ফুসসিলাত, ৪১ : ৫)

সুতরাং তারা নিজেরাই তাদের অন্তর, কান ও চোখের উপর থাকা অন্তরায়ের উল্লেখ করেছে। তাদের শরীর জীবিত, যা দেখতে ও শুনতে পায়, কিন্তু এটি তো মৃত অন্তরবিশিষ্ট একটি শরীরের জীবন মাত্র - ঠিক একটি পশুর মতো, কারন পশুরাও দেখতে ও শুনতে পারে, খেতে ও পান করতে পারে আর বিয়েও করে। এ কারনে আল্লাহ বলেন,
وَمَثَلُ الَّذِينَ كَفَرُوا كَمَثَلِ الَّذِي يَنْعِقُ بِمَا لَا يَسْمَعُ إِلَّا دُعَاءً وَنِدَاءً صُمٌّ بُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لَا يَعْقِلُونَ (۱۷۱)
"আর যারা অবিশ্বাস করেছে তাদের দৃষ্টান্ত ওদের ন্যায়, যেমন কেউ আহবান করলে শুধু চিৎকার ও ধ্বনি ব্যতীত আর কিছুই শুনে না; (মূলত) এরা বধির, বোবা, অন্ধ, (এ কারনে হিদায়াহ'র কথাও) এরা বুঝে না।” (সূরা বাকারাহ, ২ : ১৭১)

তাদেরকে তুলনা করা হল গবাদি পশুর সাথে, যার প্রতি পশুপালক ডাক দেয় এবং তারা চিৎকার ছাড়া আর কিছুই শুনতে পায় না (অর্থাৎ, তারা বুঝতে পারে না যে কি বলা হল), যেমনটি বলা হয়েছে এই আয়াতে -
أَمْ تَحْسَبُ أَنَّ أَكْثَرَهُمْ يَسْمَعُونَ أَوْ يَعْقِلُونَ إِنْ هُمْ إِلَّا كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ سَبِيلًا (٤٤)
"তুমি কি সত্যিই মনে করো যে তাদের অধিকাংশ লোক শুনে বা বুঝে? ওরা হল পশুর মত, এমনকি ওরা অধিকতর বিভ্রান্ত।” (সূরা ফুরকান, ২৫: ৪৪)

وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ لَهُمْ قُلُوبٌ لَّا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لَّا يَسْمَعُونَ بِهَا أُولَئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ أُولَئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ (۱۷۹)
“এবং প্রকৃতপক্ষে আমি বহু জীন ও মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি, তাদের অন্তর রয়েছে কিন্তু তা দিয়ে তারা উপলব্ধি করে না, তাদের চোখ রয়েছে কিন্তু তা দিয়ে তারা দেখে না, তাদের কান রয়েছে কিন্তু তা দিয়ে তারা শুনে না, তারা হল পশুর মত, বরং সেটি থেকেও অধিকতর বিভ্রান্ত।” (সূরা আ'রাফ, ৭: ১৭৯)

একদল মুফাসসির এই আয়াতগুলো উল্লেখ করে তাদের সাথে সাদৃশ্যযুক্ত আয়াত যেমন –
وَإِذَا مَسَّ الْإِنسَانَ الضُّرُّ دَعَانَا لِجَنبِهِ أَوْ قَاعِدًا أَوْ قَائِمًا فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُ ضُرَّهُ مَرَّ كَأَن لَّمْ يَدْعُنَا إِلَى ضُرٍّ مَّسَّهُ
"আর যখন মানুষকে কোন কষ্ট স্পর্শ করে তখন আমাকে ডাকতে থাকে শুয়ে, বসে আর দাঁড়িয়ে; এরপর যখন আমি সেই কস্ট ওর থেকে দূর করে দেই তখন সে নিজের পূর্ব অবস্থায় ফিরে আসে, যে কষ্ট তাকে স্পর্শ করেছিল তা মোচন করার জন্য সে যেন আমাকে কখনোই ডাকেনি!" (সূরা ইউনুস, ১০: ১২)

এসব আয়াত ও এর অনুরূপ আয়াত, যেখানে মানুষের অপরাধ আর তাদের নিন্দা সম্পর্কে উল্লেখ করা আছে, মুফাসসিররা সে সম্পর্কে বলেন, "এই আয়াতগুলো কাফিরদের ব্যাপারে নির্দেশ করে, আর এখানে 'মানুষ' অর্থ হল 'কাফিররা'।”

তাই কোন ব্যক্তি যদি এই ব্যাখ্যা শোনার পর এটি চিন্তা করে, যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে ইসলাম প্রকাশ করে সে এই নিন্দা ও ভীতিপ্রদর্শনের অন্তর্ভুক্ত নয়; বরং তার চিন্তাভাবনা এই আয়াতগুলোকে আরবদের মধ্যে প্রকাশ্যে শিরক প্রকাশকারীদের সাথে সংযুক্ত করে অথবা তার জানামতে তুর্কি ও ভারতের প্রকাশ্যে কুফর প্রদর্শনকারী ইয়াহুদি, খ্রিস্টান আর মুশরিকদের সাথে সংযুক্ত করে, তবে সে ব্যক্তি এই আয়াতগুলো থেকে উপকৃত হবে না যা আল্লাহ নাযিল করেছেন তার গোলামদেরকে পথপ্রদর্শনের জন্য। সুতরাং এর জবাবে বলা যায় -

প্রথমতঃ যারা প্রকাশ্যে ইসলাম প্রকাশ করে তাদের মধ্যে মুমিন- মুসলিম আর মুনাফিক রয়েছে। আর মুনাফিকেরা সব সময়ই সংখ্যায় অনেক ছিল। তাদের অবস্থান হবে দোযখের সর্বনিম্ন স্তরে।

দ্বিতীয়তঃ ব্যক্তির মধ্যে ঈমান থাকার সাথে সাথে নিফাক আর কুফরও থাকতে পারে, যেমনটি জানা যায় আল-বুখারি ও মুসলিম কর্তৃক বর্ণিত রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এই হাদিস থেকে -

"যার মধ্যে চারটি স্বভাব থাকে সে খাঁটি মুনাফিক। যার মধ্যে এর কোন একটি স্বভাব থাকবে তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকির একটা স্বভাব থেকে যায় - আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে, কথা বললে মিথ্যা কথা বলে, চুক্তি করলে তা ভঙ্গ করে এবং বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীল গালি দেয়।” ১৯

সুতরাং রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের জানিয়ে দিলেন যে যার মধ্যে এর কোন একটি অংশ থাকবে তার মধ্যে মুনাফিকির একটা অংশ থাকবে।

আর আল-বুখারির সাহিহ তে প্রতিষ্ঠিত এক হাদিস থেকে জানা যায় যে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) আবু যার (রাঃ) কে বললেন, "... তোমার মধ্যে এখনও জাহিলী যুগের স্বভাব রয়েছে।” ২০

আবু যার (রাঃ) ছিলেন লোকদের মধ্যে ঈমানের দিক দিয়ে সবচেয়ে সত্যনিষ্ঠ।

নির্ভরযোগ্য হাদিসে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "জাহিলিয়‍্যাহ (ইসলাম- পূর্ব অজ্ঞতা)'র চারটি বৈশিষ্ট্য আমার উম্মতের মধ্যে থাকবে - বংশধরদের ব্যাপারে অহংকার করা, বংশের বদনাম করা, মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করা, নক্ষত্রের কাছ থেকে বৃষ্টি চাওয়া।” ২১

“রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, 'প্রকৃতপক্ষেই তোমাদের পূর্বে যারা এসেছে তোমরা ক্রমান্বয়ে তাদের পথ অনুসরণ করবে এমনভাবে যে যদি তারা কোন সরীসৃপের গর্তে প্রবেশ করে তবে তোমরাও সেটি করবে।' সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, 'তারা কি ইয়াহুদি ও খ্রিস্টান?' রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, 'তারা ছাড়া আর কারা?'” ২২

“রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, 'পূর্বের জাতিরা যেগুলোর প্রতি আসক্ত ছিল/যেগুলো গ্রহণ করেছিলো, আমার উম্মতও এক হাত এক হাত করে আর এক বিঘত এক বিঘত করে সেগুলোর প্রতি আসক্ত হবে/সেগুলো গ্রহণ করবে।' সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, 'তারা কি পার্সিয়ান আর রোমান?' রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) জবাব দিলেন, 'তবে লোকদের মধ্যে আর কারা হতে পারে?'” ২৩

ইবনে আবি মুলাইকাহ বলেন, "আমি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ত্রিশ জন সাহাবীর সাথে সাক্ষাৎ করেছি, তারা সবাই নিজেদের সম্পর্কে নিফাকের ব্যাপারে ভয় করতেন।” ২৪

আলী (রাঃ) বা হুজাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি বলেন, "অন্তর চার ধরনের (১) বিশুদ্ধ অন্তর - যা আলোকদানি দ্বারা আলোকিত, এটি মুমিনের অন্তর; (২) আবৃত অন্তর এটি কাফিরদের অন্তর; (৩) বিপর্যস্ত অন্তর - এটি মুনাফিকের অন্তর; (৪) এবং দুটো ব্যাপারেই আকর্ষণ রয়েছে এমন অন্তর যে সময়ে ঈমানের আহবান আর নিফাকের আহবান করা হয়, (তখন) এ লোকগুলো তাদের সৎ কাজগুলোকে পাপ কাজের সাথে মিশ্রিত করে দেয়।”

সুতরাং, জানা ও বুঝা গেলো যে, আল্লাহ ঈমান সম্পর্কে - হয় সেটি ঈমানের শাখার প্রশংসা করে বা কুফরির শাখার নিন্দা করে, যা কিছুই বলেছেন, তার সবগুলো থেকেই প্রত্যেক আল্লাহ'র গোলাম উপকৃত হবে।

উল্লেখিত অবস্থা আর তাদের অবস্থা একই, যারা আল্লাহ'র এই আয়াত।

اهدنا الصراط المستقيم (৬)
"আমাদেরকে হিদায়াত দিন (পরিচালিত করুন) সহজ সরল পথে।” (সূরা ফাতিহা, ১: ৬)

এই আয়াত সম্পর্কে তারা বলে, "আল্লাহ তো মুসলিমদেরকে ইতিমধ্যেই হিদায়াত দিয়েছেন, তাহলে হিদায়াত চাওয়ার উপকারিতা কি?"

তখন তাদের মধ্যে থেকে কিছু ব্যক্তি এই বলে জবাব দেয় যে এর অর্থ হল "আমাদেরকে হিদায়াতের উপর দৃঢ় রাখুন" যেমনটা আরবেরা ঘুমন্ত ব্যক্তিকে বলতো, "আমি তোমার কাছে আসার আগ পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকো।" তাদের মধ্য থেকে অন্যরা বলে যে এর অর্থ হল "আমাদের অন্তরকে হিদায়াতের উপর দৃঢ় রাখুন" এবং এটি যে, দৃঢ়তার জন্য প্রার্থনা করা বাদ পড়ে গেছে। আবার তাদের মধ্যে অন্যান্যরা বলে যে এর অর্থ হল, "আমার হিদায়াত বৃদ্ধি করে দিন।”

এই প্রশ্ন উদিত হওয়ার সত্যিকারের কারন হল, যেটির প্রতি আল্লাহ'র গোলাম হিদায়াত প্রার্থনা করে, অর্থাৎ 'সিরাতুল মুস্তাকিম' (সহজ সরল পথ) - সেটির ব্যাপারে তাদের গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করার অনুপস্থিতি। কারন এই আয়াতের অর্থ হল, আল্লাহ'র যা কিছু করতে আদেশ করেছেন তা পালন করা আর যা কিছু থেকে নিষেধ করেছেন তা বর্জন করার মাধ্যমে তার আদেশ-নিষেধ অনুযায়ী আমল করতে পারার জন্য তার কাছে হিদায়াত চাওয়া।

টিকাঃ
(১৯) সাহিহ বুখারি- ১/৩২, হাদিস ৩৩; সাহিহ মুসলিম ১/৪০, হাদিস ১১১
(২০) মা'রুর থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি বলেনঃ আমি একবার রাবাবা নামক স্থানে আবু যারের সাথে সাক্ষাৎ করলাম। তখন তার পরনে ছিল এক জোড়া কাপড় (লুঙ্গি ও চাদর) আর তার চাকরের পরনেও ছিল ঠিক একই ধরনের এক জোড়া কাপড়। আমি তাকে এর (সমতার) কারন জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, "একবার আমি এক ব্যক্তিকে গালি দিয়েছিলাম আর আমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছিলাম। তখন রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, 'আবু যার, তুমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছো? তুমি এমন ব্যক্তি যার মধ্যে এখনো জাহিলী যুগের স্বভাব রয়েছে। জেনে রেখো, তোমাদের দাসেরা তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। তাই যার ভাই তার অধীনে থাকবে, তাকে যেন সে নিজে যা খায় তাকেও তা-ই খাওয়ায় আর নিজে যা পরে তাকেও তা-ই পরায়। তাদের উপর এমন কাজ চাপিয়ে দিও না যা তাদের জন্য খুব বেশী কষ্টকর। যদি এমন কষ্টকর কাজ করতে চাও, তাহলে তোমরাও তাদের সে কাজে সাহায্য করবে।” (সাহিহ বুখারি ১/২৯, হাদিস ২৯) [অনুবাদকের টীকা]
(২১) সাহিহ মুসলিম ২/৪৪৪, হাদিস ২০৩৩
(২২) সাহিহ বুখারি - ৯/৩১৪, হাদিস ৪২২; সাহিহ মুসলিম ৪/১৪০২, হাদিস ৬৪৪৮, আহমাদ - ২/৪৫০
(২৩) ইবন তাইমিয়‍্যাহ'র ইকতিদা সিরাতুল মুস্তাকিম
(২৪) আল-বুখারি ও মুসলিম কর্তৃক বর্ণিত

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন