📘 অন্তরের ব্যাধি সমূহ ও তার চিকিৎসা > 📄 অন্তরের একটি চিকিৎসা হল সৎ কাজ করা

📄 অন্তরের একটি চিকিৎসা হল সৎ কাজ করা


যাকাহ (পরিশোধন) এর ভাষাগত অর্থ হল পরিশুদ্ধতা বৃদ্ধি পাওয়া। যখন কোন কিছুর পরিশুদ্ধতা বৃদ্ধি পায় তখন বলা হয়, “কোন কিছুর যাকাহ হয়েছে।” অন্তরকে লালনপালন করার প্রয়োজন রয়েছেন যাতে করে এটি পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয় এবং পরিপূর্ণ ও পরিশুদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়; যেমনটি শরীরকে লালনপালনের প্রয়োজন রয়েছে যা এর জন্য কল্যাণকর, কিন্তু এর পাশাপাশি এর ক্ষতি করা থেকে যেকোন কিছুকে প্রতিরোধ করারও প্রয়োজন রয়েছে। সুতরাং শরীর বৃদ্ধি পাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না এটি কল্যাণকর বিষয়াদি লাভ করবে আর এর ক্ষতিকর কিছু থেকে বিরত থাকবে। অনুরূপভাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না অন্তর এর উপকারী বিষয়গুলো অর্জন করবে আর এর ক্ষতিকারক বিষয়গুলোকে দমন করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এটি এমনভাবে পরিশুদ্ধ হবে না যে এটি উন্নতিলাভ করবে আর এর পরিশুদ্ধতার ব্যাপারে পূর্ণতাপ্রাপ্ত হবে; যেমনিভাবে এই দুটো ফ্যাক্টর ছাড়া ফুল বৃদ্ধি পায় না।

সাদাকাহ (দান করা) করার কারনে অন্তর পরিশুদ্ধতা লাভ করে কারন সাদাকাহ পাপসমূহকে প্রশমিত করে, যেমনটা পানি প্রশমিত করে আগুনকে। এর যাকাহ বলতে বুঝায় এর অতিরিক্ত কিছু, যা হল কেবলই পাপ থেকে মুক্তি। মহিমান্বিত আল্লাহ বলেন,

خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ إِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ (۱۰۳)
"তাদের কাছ থেকে সাদাকাহ গ্রহণ করো তাদেরকে পবিত্র করার জন্য আর এটির মাধ্যমে তাদের পরিশুদ্ধ করো।” (সূরা তাওবাহ, ৯ : ১০৩)

যাকাহ (পরিশোধন) এর ভাষাগত অর্থ হল পরিশুদ্ধতা বৃদ্ধি পাওয়া। যখন কোন কিছুর পরিশুদ্ধতা বৃদ্ধি পায় তখন বলা হয়, “কোন কিছুর যাকাহ হয়েছে।” অন্তরকে লালনপালন করার প্রয়োজন রয়েছেন যাতে করে এটি পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয় এবং পরিপূর্ণ ও পরিশুদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়; যেমনটি শরীরকে লালনপালনের প্রয়োজন রয়েছে যা এর জন্য কল্যাণকর, কিন্তু এর পাশাপাশি এর ক্ষতি করা থেকে যেকোন কিছুকে প্রতিরোধ করারও প্রয়োজন রয়েছে। সুতরাং শরীর বৃদ্ধি পাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না এটি কল্যাণকর বিষয়াদি লাভ করবে আর এর ক্ষতিকর কিছু থেকে বিরত থাকবে। অনুরূপভাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না অন্তর এর উপকারী বিষয়গুলো অর্জন করবে আর এর ক্ষতিকারক বিষয়গুলোকে দমন করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এটি এমনভাবে পরিশুদ্ধ হবে না যে এটি উন্নতিলাভ করবে আর এর পরিশুদ্ধতার ব্যাপারে পূর্ণতাপ্রাপ্ত হবে; যেমনিভাবে এই দুটো ফ্যাক্টর ছাড়া ফুল বৃদ্ধি পায় না।

সাদাকাহ (দান করা) করার কারনে অন্তর পরিশুদ্ধতা লাভ করে কারন সাদাকাহ পাপসমূহকে প্রশমিত করে, যেমনটা পানি প্রশমিত করে আগুনকে। এর যাকাহ বলতে বুঝায় এর অতিরিক্ত কিছু, যা হল কেবলই পাপ থেকে মুক্তি। মহিমান্বিত আল্লাহ বলেন,

خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ إِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ (۱۰۳)
"তাদের কাছ থেকে সাদাকাহ গ্রহণ করো তাদেরকে পবিত্র করার জন্য আর এটির মাধ্যমে তাদের পরিশুদ্ধ করো।” (সূরা তাওবাহ, ৯ : ১০৩)

📘 অন্তরের ব্যাধি সমূহ ও তার চিকিৎসা > 📄 অন্তরের একটি চিকিৎসা হল অশালীন কাজ বর্জন করা

📄 অন্তরের একটি চিকিৎসা হল অশালীন কাজ বর্জন করা


একইভাবে, অশালীন কাজ আর পাপ থেকে বিরত থাকা অন্তরকে এর পরিশুদ্ধির দিকে পরিচালিত করে, কারন এগুলো শরীরের কুষ্ঠরোগ বা ফুলের কাঁটার ন্যায় একই স্তরের। সুতরাং উদাহারনস্বরূপ বলা যায়, শরীর থেকে যখন অতিরিক্ত রক্ত কমিয়ে ফেলার মাধ্যমে একে কুষ্ঠরোগমুক্ত করা হয়, তখন শরীরের স্বাভাবিক শক্তি প্রকাশিত হয় আর এটি রোগ থেকে মুক্তি পেয়ে উন্নতিলাভ করে।

অনুরূপভাবে, যখন কেউ পাপ থেকে তাওবা করে তখন অন্তর অপবিত্রতা থেকে মুক্ত হয়, যা দ্বারা এটি পাপগুলোর সাথে সৎ কাজগুলোকে মিশ্রিত করে দেয়। সুতরাং যখন কেউ পাপ থেকে তাওবা করে তখন অন্তরের শক্তি এমনভাবে উত্থিত হয় যে এটি সৎ কাজ করার ব্যাপারে কামনা করে এবং যে বাতিল ও বিকৃত ব্যাপারগুলোতে সে একসময় নিমজ্জিত ছিল তা থেকে মুক্তি লাভ করে।

সুতরাং অন্তরের যাকাহ বলতে এর উন্নতিলাভ আর পরিপূর্ণ হওয়াকে বুঝায়। গৌরবান্বিত আল্লাহ বলেন,

وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ مَا زَكَى مِنكُم مِّنْ أَحَدٍ أَبَدًا وَلَكِنَّ اللَّهَ يُزَكِّي مَن يَشَاءُ
"আল্লাহ'র দয়া ও অনুগ্রহ না থাকলে তোমাদের কেউই কখনো পরিশুদ্ধ হতে পারতে না...।" (সূরা নূর, ২৪: ২১)

فَإِن لَّمْ تَجِدُوا فِيهَا أَحَدًا فَلَا تَدْخُلُوهَا حَتَّى يُؤْذَنَ لَكُمْ ۖ وَإِن قِيلَ لَكُمُ ارْجِعُوا فَارْجِعُوا هُوَ أَزْكَى لَكُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ (۲۸)
"...আর যদি তোমাদেরকে বলা হয়ঃ ফিরে যাও, তবে তোমরা ফিরে যাবে, এটিই তোমাদের জন্য অধিকতর বিশুদ্ধ ..।" (সূরা নূর, ২৪: ২৮)

قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ (۳۰)
"মুমিনদেরকে তাদের দৃষ্টি অবনত করতে আর তাদের গোপন অঙ্গের হিফাযত করতে বল। এটিই তাদের জন্য অধিকতর বিশুদ্ধ...।” (সূরা নূর, ২৪ : ৩০)

قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّى (١٤) وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ فَصَلَّى (١٥)
"নিশ্চয়ই যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে, সে সফলতা অর্জন করলো, এবং তার রবের নাম স্মরণ করলো অতঃপর সালাত আদায় করলো।” (সূরা 'আলা, ৮৭: ১৪-১৫)

قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا (۹) وَقَدْ خَابَ مَن دَسَّاهَا (۱۰)
"নিশ্চয়ই যে এটিকে পরিশুদ্ধ করে সে সফল, আর যে এটিকে কলুষিত করে সে ব্যর্থ।” (সূরা আশ-শামস, ৯১ : ৯-১০)

وَمَا يُدْرِيكَ لَعَلَّهُ يَزَّكَّى (۳)
"তুমি কেমন করে জানবে সে হয়তো নিজেকে পরিশুদ্ধ করতো?” (সূরা 'আবাসা, ৮০: ৩)

فَقُلْ هَل لَّكَ إِلَىٰ أَن تَزَكَّى (۱۸) وَأَهْدِيَكَ إِلَىٰ رَبِّكَ فَتَخْشَىٰ (۱۹)
"আর তাকে বলা হলঃ তুমি কি তোমাকে পরিশুদ্ধ করতে চাও? আর (এটি চাও যে) আমি তোমাকে তোমার রবের পথে পরিচালিত করি যাতে তুমি তাকে ভয় করো?” (সূরা নাযি'আত, ৭৯ : ১৮-১৯)

সুতরাং, যদিও তাযকিয়্যাহ (পরিশুদ্ধি) এর মৌলিক অর্থ হল উন্নতি হওয়া, দয়া এবং ধার্মিকতা বৃদ্ধি হওয়া, এটি কেবলমাত্র মন্দকে অপসারণের মাধ্যমেই অর্জন করা যাবে আর এ কারনেই আত্মার পরিশুদ্ধি উভয় বিষয়ের (সৎ কাজ করা আর পাপ কাজ এড়িয়ে চলা) সমন্বয়ে গঠিত। মহান আল্লাহ বলেন,

وَوَيْلٌ لِّلْمُشْرِكِينَ (٦) الَّذِينَ لَا يُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُم بِالْآخِرَةِ هُمْ كَافِرُونَ (۷)
"দুর্ভোগ মুশরিকদের জন্য, যারা যাকাত প্রদান করে না আর তারা আখিরাতেও অবিশ্বাসী।” (সূরা ফুসসিলাت, ৪১ : ৬-৭)

যাকাত, তাওহীদ আর ঈমান – এগুলো দ্বারা অন্তর পরিশুদ্ধ হয়। কারন, নিঃসন্দেহে তাওহীদ অন্তর্ভুক্ত করে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কতৃত্ব অস্বীকার করাকে এবং অন্তরে আল্লাহ'র কতৃত্বের সত্যতা সমর্থন করাকে, এটি হল "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই) এর বাস্তবতা এবং এটিই হল সেই মূল ভিত্তি যেটি দ্বারা অন্তর পরিশুদ্ধ হয়।

তাযকিয়্যাহ (পরিশুদ্ধি) হল কেবলমাত্র কোন কিছুকে বা বিশ্বাসে বা বিবরণীতে বিশুদ্ধ করার একটি ক্রিয়া। অনুরূপভাবে বলা হয় "আদালতুহু” যখন আপনি ন্যায়সঙ্গত হবেন বা লোকদের বিশ্বাসে ন্যায়পরায়ণ হবেন। মহান আল্লাহ বলেন,

فَلَا تُزَكُّوا أَنفُسَكُمْ
"সুতরাং তোমাদের পরিশুদ্ধতা আছে বলে মনে করো না..." (সূরা নাযম, ৫৩: ৩২)

অর্থাৎ, তোমরা ঘোষণা করো না যে তোমরা পরিশুদ্ধ, আর এটি আল্লাহ'র সেই আয়াতের অনুরূপ নয় যেখানে তিনি বলেন-

قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا (৯)
"নিশ্চয়ই যে এটিকে পরিশুদ্ধ করে সে সফল।” (সূরা আশ-শামস, ৯১ : ৯)

এ কারনে মহান আল্লাহ বলেন,

هُوَ أَعْلَمُ بِمَنِ اتَّقَى (৩২)
"তিনিই সবচেয়ে ভালো জানেন যে কে তার ব্যাপারে তাকওয়া অবলম্বন করে।” (সূরা নাযম, ৫৩: ৩২)

যায়নাব প্রথমে বুররা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বলা হয়ে থাকে যে তিনি নিজেকে পরিশুদ্ধ করলেন, তাই রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে যায়নাব বলে ডাকলেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يُزَكُّونَ أَنفُسَهُم بَلِ اللَّهُ يُزَكِّي مَن يَشَاءُ
"তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করো নি যারা নিজের পরিশুদ্ধতার দাবী করে? বরং আল্লাহ, যাকে ইচ্ছা তিনি পবিত্র করেন...।" (সূরা নিসা', ৪ : ৪৯)

এর অর্থ হল, তিনি যাকে খুশী তাকে পরিশুদ্ধ করেন আর তার পরিশুদ্ধতা পরিচিত করে দেন, যেমনটা একজন সংশোধনকারী কেবল তাদের পরিশুদ্ধতার ব্যাপারে ঘোষণা করেন, যাদের ন্যায়বিচারের প্রতি তিনি সাক্ষ্য বহন করতে পারেন।

একইভাবে, অশালীন কাজ আর পাপ থেকে বিরত থাকা অন্তরকে এর পরিশুদ্ধির দিকে পরিচালিত করে, কারন এগুলো শরীরের কুষ্ঠরোগ বা ফুলের কাঁটার ন্যায় একই স্তরের। সুতরাং উদাহারনস্বরূপ বলা যায়, শরীর থেকে যখন অতিরিক্ত রক্ত কমিয়ে ফেলার মাধ্যমে একে কুষ্ঠরোগমুক্ত করা হয়, তখন শরীরের স্বাভাবিক শক্তি প্রকাশিত হয় আর এটি রোগ থেকে মুক্তি পেয়ে উন্নতিলাভ করে।

অনুরূপভাবে, যখন কেউ পাপ থেকে তাওবা করে তখন অন্তর অপবিত্রতা থেকে মুক্ত হয়, যা দ্বারা এটি পাপগুলোর সাথে সৎ কাজগুলোকে মিশ্রিত করে দেয়। সুতরাং যখন কেউ পাপ থেকে তাওবা করে তখন অন্তরের শক্তি এমনভাবে উত্থিত হয় যে এটি সৎ কাজ করার ব্যাপারে কামনা করে এবং যে বাতিল ও বিকৃত ব্যাপারগুলোতে সে একসময় নিমজ্জিত ছিল তা থেকে মুক্তি লাভ করে।

সুতরাং অন্তরের যাকাহ বলতে এর উন্নতিলাভ আর পরিপূর্ণ হওয়াকে বুঝায়। গৌরবান্বিত আল্লাহ বলেন,

وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ مَا زَكَى مِنكُم مِّنْ أَحَدٍ أَبَدًا وَلَكِنَّ اللَّهَ يُزَكِّي مَن يَشَاءُ
"আল্লাহ'র দয়া ও অনুগ্রহ না থাকলে তোমাদের কেউই কখনো পরিশুদ্ধ হতে পারতে না...।" (সূরা নূর, ২৪: ২১)

فَإِن لَّمْ تَجِدُوا فِيهَا أَحَدًا فَلَا تَدْخُلُوهَا حَتَّى يُؤْذَنَ لَكُمْ ۖ وَإِن قِيلَ لَكُمُ ارْجِعُوا فَارْجِعُوا هُوَ أَزْكَى لَكُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ (۲۸)
"...আর যদি তোমাদেরকে বলা হয়ঃ ফিরে যাও, তবে তোমরা ফিরে যাবে, এটিই তোমাদের জন্য অধিকতর বিশুদ্ধ ..।" (সূরা নূর, ২৪: ২৮)

قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ (۳۰)
"মুমিনদেরকে তাদের দৃষ্টি অবনত করতে আর তাদের গোপন অঙ্গের হিফাযত করতে বল। এটিই তাদের জন্য অধিকতর বিশুদ্ধ...।” (সূরা নূর, ২৪ : ৩০)

قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّى (١٤) وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ فَصَلَّى (١٥)
"নিশ্চয়ই যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে, সে সফলতা অর্জন করলো, এবং তার রবের নাম স্মরণ করলো অতঃপর সালাত আদায় করলো।” (সূরা 'আলা, ৮৭: ১৪-১৫)

قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا (۹) وَقَدْ خَابَ مَن دَسَّاهَا (۱۰)
"নিশ্চয়ই যে এটিকে পরিশুদ্ধ করে সে সফল, আর যে এটিকে কলুষিত করে সে ব্যর্থ।” (সূরা আশ-শামস, ৯১ : ৯-১০)

وَمَا يُدْرِيكَ لَعَلَّهُ يَزَّكَّى (۳)
"তুমি কেমন করে জানবে সে হয়তো নিজেকে পরিশুদ্ধ করতো?” (সূরা 'আবাসা, ৮০: ৩)

فَقُلْ هَل لَّكَ إِلَىٰ أَن تَزَكَّى (۱۸) وَأَهْدِيَكَ إِلَىٰ رَبِّكَ فَتَخْشَىٰ (۱۹)
"আর তাকে বলা হলঃ তুমি কি তোমাকে পরিশুদ্ধ করতে চাও? আর (এটি চাও যে) আমি তোমাকে তোমার রবের পথে পরিচালিত করি যাতে তুমি তাকে ভয় করো?” (সূরা নাযি'আত, ৭৯ : ১৮-১৯)

সুতরাং, যদিও তাযকিয়্যাহ (পরিশুদ্ধি) এর মৌলিক অর্থ হল উন্নতি হওয়া, দয়া এবং ধার্মিকতা বৃদ্ধি হওয়া, এটি কেবলমাত্র মন্দকে অপসারণের মাধ্যমেই অর্জন করা যাবে আর এ কারনেই আত্মার পরিশুদ্ধি উভয় বিষয়ের (সৎ কাজ করা আর পাপ কাজ এড়িয়ে চলা) সমন্বয়ে গঠিত। মহান আল্লাহ বলেন,

وَوَيْلٌ لِّلْمُشْرِكِينَ (٦) الَّذِينَ لَا يُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُم بِالْآخِرَةِ هُمْ كَافِرُونَ (۷)
"দুর্ভোগ মুশরিকদের জন্য, যারা যাকাত প্রদান করে না আর তারা আখিরাতেও অবিশ্বাসী।” (সূরা ফুসসিলাت, ৪১ : ৬-৭)

যাকাত, তাওহীদ আর ঈমান – এগুলো দ্বারা অন্তর পরিশুদ্ধ হয়। কারন, নিঃসন্দেহে তাওহীদ অন্তর্ভুক্ত করে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কতৃত্ব অস্বীকার করাকে এবং অন্তরে আল্লাহ'র কতৃত্বের সত্যতা সমর্থন করাকে, এটি হল "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই) এর বাস্তবতা এবং এটিই হল সেই মূল ভিত্তি যেটি দ্বারা অন্তর পরিশুদ্ধ হয়।

তাযকিয়্যাহ (পরিশুদ্ধি) হল কেবলমাত্র কোন কিছুকে বা বিশ্বাসে বা বিবরণীতে বিশুদ্ধ করার একটি ক্রিয়া। অনুরূপভাবে বলা হয় "আদালতুহু” যখন আপনি ন্যায়সঙ্গত হবেন বা লোকদের বিশ্বাসে ন্যায়পরায়ণ হবেন। মহান আল্লাহ বলেন,

فَلَا تُزَكُّوا أَنفُسَكُمْ
"সুতরাং তোমাদের পরিশুদ্ধতা আছে বলে মনে করো না..." (সূরা নাযম, ৫৩: ৩২)

অর্থাৎ, তোমরা ঘোষণা করো না যে তোমরা পরিশুদ্ধ, আর এটি আল্লাহ'র সেই আয়াতের অনুরূপ নয় যেখানে তিনি বলেন-

قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا (৯)
"নিশ্চয়ই যে এটিকে পরিশুদ্ধ করে সে সফল।” (সূরা আশ-শামস, ৯১ : ৯)

এ কারনে মহান আল্লাহ বলেন,

هُوَ أَعْلَمُ بِمَنِ اتَّقَى (৩২)
"তিনিই সবচেয়ে ভালো জানেন যে কে তার ব্যাপারে তাকওয়া অবলম্বন করে।” (সূরা নাযম, ৫৩: ৩২)

যায়নাব প্রথমে বুররা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বলা হয়ে থাকে যে তিনি নিজেকে পরিশুদ্ধ করলেন, তাই রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে যায়নাব বলে ডাকলেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يُزَكُّونَ أَنفُسَهُم بَلِ اللَّهُ يُزَكِّي مَن يَشَاءُ
"তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করো নি যারা নিজের পরিশুদ্ধতার দাবী করে? বরং আল্লাহ, যাকে ইচ্ছা তিনি পবিত্র করেন...।" (সূরা নিসা', ৪ : ৪৯)

এর অর্থ হল, তিনি যাকে খুশী তাকে পরিশুদ্ধ করেন আর তার পরিশুদ্ধতা পরিচিত করে দেন, যেমনটা একজন সংশোধনকারী কেবল তাদের পরিশুদ্ধতার ব্যাপারে ঘোষণা করেন, যাদের ন্যায়বিচারের প্রতি তিনি সাক্ষ্য বহন করতে পারেন।

📘 অন্তরের ব্যাধি সমূহ ও তার চিকিৎসা > 📄 অন্তরের পরিশুদ্ধতার উপর পাপের প্রভাব

📄 অন্তরের পরিশুদ্ধতার উপর পাপের প্রভাব


'আদল (সুবিচার ও ন্যায়বিচার) হল ই'তিদাল (ভারসাম্য), আর ভারসাম্যেই নির্ভর করে অন্তরের সংশোধন, যেমনটি যুলমে (ভারসাম্যহীনতা/অত্যাচার) রয়েছে অন্তরের বিকৃতি। এ কারনেই একজন ব্যক্তি প্রতিটি পাপ করার করার মাধ্যমে নিজের উপর অত্যাচার (যালিমান লি নাফসিহি) করে। যুলমের বিপরীত হল 'আদল, তাই সেই পাপী ব্যক্তি নিজের প্রতি ন্যায়পরায়ণ থাকেনি বরং সে অন্তরকে অত্যাচার করেছে। অন্তরের সংশোধন নির্ভর করে 'আদল এর উপর আর এর বিকৃত হওয়া নির্ভর করে যুলমের উপর। সুতরাং, আল্লাহ'র গোলাম যখন নিজেকে অত্যাচার করে তখন সে একই সময়ে অত্যাচারী আর অত্যাচারীত। অনুরূপভাবে, যখন সে ন্যায়পরায়ণ, তখন সে একজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি আর সেই ব্যক্তির মত, যার উপর ন্যায়বিচার করা হয়।

ব্যক্তি কোন কাজ সম্পাদন করলে সে তার সেই কাজের ফল পাবে, হোক সেটি তিক্ত বা মধুর। আল্লাহ বলেন,

لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ
"... সে যা অর্জন করেছে (সৎ কাজ) সেটির জন্য তার পুরস্কার রয়েছে, এবং সে যা অর্জন করেছে (পাপ কাজ) সেটির জন্য সে শাস্তিপ্রাপ্ত হবে..." (সূরা বাকারাহ, ২ : ২৮৬)

কাজ শরীরকে প্রভাবিত করার পূর্বেই অন্তরকে প্রভাবিত করে হয় উপকারের মাধ্যমে বা ক্ষতির মাধ্যমে বা সংশোধন করার মাধ্যমে। সৎ ও পবিত্র কাজ আত্মার জন্য ন্যায়বিচার স্থাপন করে, অপরদিকে মন্দ কাজ আত্মাকে অত্যাচার করে। মহান আল্লাহ বলেন,

مَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِنَفْسِهِ وَمَنْ أَسَاء فَعَلَيْهَا وَمَا رَبُّكَ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيدِ (٤٦)
"যে সৎ কাজ করে সে নিজের কল্যাণের জন্যই তা করে এবং যে মন্দ কাজ করে সে তার নিজের বিরুদ্ধেই সেটি করে।” (সূরা ফুসসিলাত, ৪১ : ৪৬)

إِنْ أَحْسَنتُمْ أَحْسَنتُمْ لِأَنفُسِكُمْ وَإِنْ أَسَأْتُمْ فَلَهَا
"যদি তোমরা সৎ কাজ করো তবে সেটি তোমাদের নিজেদের কল্যাণের জন্যই করলে, আর যদি মন্দ কাজ করো তবে সেটি তোমরা নিজেদের বিরুদ্ধেই করলে।” (সূরা আল-ইসরা', ১৭ : ৭)

সালাফদের ১৫ মধ্যে বেশ কিছু ব্যক্তি বলেন, “নিশ্চয়ই সৎ কাজগুলো অন্তরের একটি জ্যোতি, শরীরের জন্য শক্তি বৃদ্ধিকারী, চেহারার জ্যোতি, ব্যাপক রিযকের কারন এবং সৃষ্টির অন্তরগুলোতে ভালোবাসা। নিশ্চয়ই মন্দ কাজগুলো অন্তরে একটি অন্ধকার, চেহারার উপর অন্ধকারময়তা, শরীরের জন্য দুর্বলতা, রিযক কমে যাওয়ার কারন আর সৃষ্টির অন্তরগুলোতে ঘৃণা।”

মহান আল্লাহ বলেন,

كُلُّ امْرِئٍ بِمَا كَسَبَ رَهِينٌ (۲۱)
"প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়ী।” (সূরা তুর, ৫২ : ২১)

كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ رَهِينَةٌ (۳۸)
"প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের দায়ে আবদ্ধ।” (সূরা মুদদাসসির, ৭৪ : ৩৮)

وَذَكِّرْ بِهِ أَن تُبْسَلَ نَفْسٌ بِمَا كَسَبَتْ لَيْسَ لَهَا مِن دُونِ اللَّهِ وَلِيٌّ وَلَا شَفِيعٌ وَإِن تَعْدِلْ كُلَّ عَدْلٍ لَّا يُؤْخَذْ مِنْهَا ۚ أُولَئِكَ الَّذِينَ أُبْسِلُوا بِمَا كَسَبُوا
"কুরআন দিয়ে তাদেরকে উপদেশ দিতে থাকুন, যাতে কোন ব্যক্তি নিজের কৃতকর্মের জন্য ধ্বংস না হয়, আল্লাহ ছাড়া তার কোন বন্ধু, সাহায্যকারী ও সুপারিশকারী থাকবে না, আর এই অবস্থার সম্মুখীন না হয় যে দুনিয়াভর বিনিময় বস্তু দিয়েও মুক্তি পেতে চাইলে সেই বিনিময় গ্রহণ করা হবে না, তারা এমনই লোক যে, নিজেদের কর্মদোষে আটকা পড়ে গেছে।” (সূরা আন'আম, ৬: ৭০)

"তাবসালা” অর্থ হল নিপীড়ন করা, শেকল দিয়ে আটকে রাখা এবং আকৃষ্ট করা।

একইভাবে, শরীর যখন অসুস্থতা থেকে মুক্তি পায় তখন বলা হয়, "তার স্বভাব ও প্রকৃতির ভারসাম্য হয়েছে।” এর কারন হল, ন্যায় ও অন্যায় মিশে যাওয়া থেকে নিরাপদ - এমন পরিপূর্ণ ভারসাম্য অর্জনের কোন উপায় না থাকা সত্ত্বেও অসুস্থতা স্বভাব-প্রকৃতিকে বিকৃত করে দেয়, কিন্তু আদর্শ বা আদর্শের কাছাকাছি ভারসাম্যের জন্য লক্ষ্য রাখতে হবে।

একই অবস্থা অন্তরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এর স্বাস্থ্য আর সংশোধন নির্ভর করে ভারসাম্যের উপর আর এর অসুস্থতা নির্ভর করে পথভ্রষ্টতা, অত্যাচার ও অবান্তরতার উপর। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ভারসাম্য রক্ষা করাটা অসম্ভব - হোক সেটি কাজ বা জ্ঞানের ক্ষেত্রে। কিন্তু আদর্শ বা আদর্শের কাছাকাছি ভারসাম্যের জন্য লক্ষ্য রাখতে হবে। এ কারনেই সালাফি পদ্ধতিকে বলা হয় "আদর্শিক পদ্ধতি”। আল্লাহ বলেন,

وَلَن تَسْتَطِيعُوا أَن تَعْدِلُوا بَيْنَ النِّسَاءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ ۖ فَلَا تَمِيلُوا كُلَّ الْمَيْلِ
"তোমরা কখনো স্ত্রীদের মধ্যে সুবিচার করতে পারবে না যদিও তোমরা কামনা করো..." (সূরা নিসা', ৪ : ১২৯)

وَأَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيزَانَ بِالْقِسْطِ لَا نُكَلِّفُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا
"...আর আদান-প্রদানে পরিমান ও ওজন সঠিকভাবে করবে, আমি কারো উপর তার সাধ্যাতীত ভার (দায়িত্ব-কর্তব্য) অর্পণ করি না...” (সূরা আন'আম, ৬ : ১৫২)

মহিমান্বিত আল্লাহ তার রসূলদেরকে প্রেরণ করেছিলেন আর নাযিল করেছিলেন আসমানি কিতাবসমূহ, যাতে করে মানুষ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। ন্যায়বিচারের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ রূপটি হল আল্লাহ'র সাথে কোন অংশীদার স্থাপন না করে একমাত্র আল্লাহ'র ইবাদাহ করা, এরপর লোকজনের অধিকারের প্রতি উপযুক্ত ন্যায়বিচার করা, এরপর নিজের ব্যাপারে ন্যায়পরায়ণ হওয়া।

টিকাঃ
১৫. যেমনটি বলেছেন ইবনে আব্বাস (রাঃ), যা ইবনুল কায়্যিম আল-জাওাব আল-কাফি তে উল্লেখ করেছেন।

'আদল (সুবিচার ও ন্যায়বিচার) হল ই'তিদাল (ভারসাম্য), আর ভারসাম্যেই নির্ভর করে অন্তরের সংশোধন, যেমনটি যুলমে (ভারসাম্যহীনতা/অত্যাচার) রয়েছে অন্তরের বিকৃতি। এ কারনেই একজন ব্যক্তি প্রতিটি পাপ করার করার মাধ্যমে নিজের উপর অত্যাচার (যালিমান লি নাফসিহি) করে। যুলমের বিপরীত হল 'আদল, তাই সেই পাপী ব্যক্তি নিজের প্রতি ন্যায়পরায়ণ থাকেনি বরং সে অন্তরকে অত্যাচার করেছে। অন্তরের সংশোধন নির্ভর করে 'আদল এর উপর আর এর বিকৃত হওয়া নির্ভর করে যুলমের উপর। সুতরাং, আল্লাহ'র গোলাম যখন নিজেকে অত্যাচার করে তখন সে একই সময়ে অত্যাচারী আর অত্যাচারীত। অনুরূপভাবে, যখন সে ন্যায়পরায়ণ, তখন সে একজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি আর সেই ব্যক্তির মত, যার উপর ন্যায়বিচার করা হয়।

ব্যক্তি কোন কাজ সম্পাদন করলে সে তার সেই কাজের ফল পাবে, হোক সেটি তিক্ত বা মধুর। আল্লাহ বলেন,

لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ
"... সে যা অর্জন করেছে (সৎ কাজ) সেটির জন্য তার পুরস্কার রয়েছে, এবং সে যা অর্জন করেছে (পাপ কাজ) সেটির জন্য সে শাস্তিপ্রাপ্ত হবে..." (সূরা বাকারাহ, ২ : ২৮৬)

কাজ শরীরকে প্রভাবিত করার পূর্বেই অন্তরকে প্রভাবিত করে হয় উপকারের মাধ্যমে বা ক্ষতির মাধ্যমে বা সংশোধন করার মাধ্যমে। সৎ ও পবিত্র কাজ আত্মার জন্য ন্যায়বিচার স্থাপন করে, অপরদিকে মন্দ কাজ আত্মাকে অত্যাচার করে। মহান আল্লাহ বলেন,

مَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِنَفْسِهِ وَمَنْ أَسَاء فَعَلَيْهَا وَمَا رَبُّكَ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيدِ (٤٦)
"যে সৎ কাজ করে সে নিজের কল্যাণের জন্যই তা করে এবং যে মন্দ কাজ করে সে তার নিজের বিরুদ্ধেই সেটি করে।” (সূরা ফুসসিলাত, ৪১ : ৪৬)

إِنْ أَحْسَنتُمْ أَحْسَنتُمْ لِأَنفُسِكُمْ وَإِنْ أَسَأْتُمْ فَلَهَا
"যদি তোমরা সৎ কাজ করো তবে সেটি তোমাদের নিজেদের কল্যাণের জন্যই করলে, আর যদি মন্দ কাজ করো তবে সেটি তোমরা নিজেদের বিরুদ্ধেই করলে।” (সূরা আল-ইসরা', ১৭ : ৭)

সালাফদের ১৫ মধ্যে বেশ কিছু ব্যক্তি বলেন, “নিশ্চয়ই সৎ কাজগুলো অন্তরের একটি জ্যোতি, শরীরের জন্য শক্তি বৃদ্ধিকারী, চেহারার জ্যোতি, ব্যাপক রিযকের কারন এবং সৃষ্টির অন্তরগুলোতে ভালোবাসা। নিশ্চয়ই মন্দ কাজগুলো অন্তরে একটি অন্ধকার, চেহারার উপর অন্ধকারময়তা, শরীরের জন্য দুর্বলতা, রিযক কমে যাওয়ার কারন আর সৃষ্টির অন্তরগুলোতে ঘৃণা।”

মহান আল্লাহ বলেন,

كُلُّ امْرِئٍ بِمَا كَسَبَ رَهِينٌ (۲۱)
"প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়ী।” (সূরা তুর, ৫২ : ২১)

كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ رَهِينَةٌ (۳۸)
"প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের দায়ে আবদ্ধ।” (সূরা মুদদাসসির, ৭৪ : ৩৮)

وَذَكِّرْ بِهِ أَن تُبْسَلَ نَفْسٌ بِمَا كَسَبَتْ لَيْسَ لَهَا مِن دُونِ اللَّهِ وَلِيٌّ وَلَا شَفِيعٌ وَإِن تَعْدِلْ كُلَّ عَدْلٍ لَّا يُؤْخَذْ مِنْهَا ۚ أُولَئِكَ الَّذِينَ أُبْسِلُوا بِمَا كَسَبُوا
"কুরআন দিয়ে তাদেরকে উপদেশ দিতে থাকুন, যাতে কোন ব্যক্তি নিজের কৃতকর্মের জন্য ধ্বংস না হয়, আল্লাহ ছাড়া তার কোন বন্ধু, সাহায্যকারী ও সুপারিশকারী থাকবে না, আর এই অবস্থার সম্মুখীন না হয় যে দুনিয়াভর বিনিময় বস্তু দিয়েও মুক্তি পেতে চাইলে সেই বিনিময় গ্রহণ করা হবে না, তারা এমনই লোক যে, নিজেদের কর্মদোষে আটকা পড়ে গেছে।” (সূরা আন'আম, ৬: ৭০)

"তাবসালা” অর্থ হল নিপীড়ন করা, শেকল দিয়ে আটকে রাখা এবং আকৃষ্ট করা।

একইভাবে, শরীর যখন অসুস্থতা থেকে মুক্তি পায় তখন বলা হয়, "তার স্বভাব ও প্রকৃতির ভারসাম্য হয়েছে।” এর কারন হল, ন্যায় ও অন্যায় মিশে যাওয়া থেকে নিরাপদ - এমন পরিপূর্ণ ভারসাম্য অর্জনের কোন উপায় না থাকা সত্ত্বেও অসুস্থতা স্বভাব-প্রকৃতিকে বিকৃত করে দেয়, কিন্তু আদর্শ বা আদর্শের কাছাকাছি ভারসাম্যের জন্য লক্ষ্য রাখতে হবে।

একই অবস্থা অন্তরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এর স্বাস্থ্য আর সংশোধন নির্ভর করে ভারসাম্যের উপর আর এর অসুস্থতা নির্ভর করে পথভ্রষ্টতা, অত্যাচার ও অবান্তরতার উপর। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ভারসাম্য রক্ষা করাটা অসম্ভব - হোক সেটি কাজ বা জ্ঞানের ক্ষেত্রে। কিন্তু আদর্শ বা আদর্শের কাছাকাছি ভারসাম্যের জন্য লক্ষ্য রাখতে হবে। এ কারনেই সালাফি পদ্ধতিকে বলা হয় "আদর্শিক পদ্ধতি”। আল্লাহ বলেন,

وَلَن تَسْتَطِيعُوا أَن تَعْدِلُوا بَيْنَ النِّسَاءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ ۖ فَلَا تَمِيلُوا كُلَّ الْمَيْلِ
"তোমরা কখনো স্ত্রীদের মধ্যে সুবিচার করতে পারবে না যদিও তোমরা কামনা করো..." (সূরা নিসা', ৪ : ১২৯)

وَأَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيزَانَ بِالْقِسْطِ لَا نُكَلِّفُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا
"...আর আদান-প্রদানে পরিমান ও ওজন সঠিকভাবে করবে, আমি কারো উপর তার সাধ্যাতীত ভার (দায়িত্ব-কর্তব্য) অর্পণ করি না...” (সূরা আন'আম, ৬ : ১৫২)

মহিমান্বিত আল্লাহ তার রসূলদেরকে প্রেরণ করেছিলেন আর নাযিল করেছিলেন আসমানি কিতাবসমূহ, যাতে করে মানুষ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। ন্যায়বিচারের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ রূপটি হল আল্লাহ'র সাথে কোন অংশীদার স্থাপন না করে একমাত্র আল্লাহ'র ইবাদাহ করা, এরপর লোকজনের অধিকারের প্রতি উপযুক্ত ন্যায়বিচার করা, এরপর নিজের ব্যাপারে ন্যায়পরায়ণ হওয়া।

টিকাঃ
১৫. যেমনটি বলেছেন ইবনে আব্বাস (রাঃ), যা ইবনুল কায়্যিম আল-জাওাব আল-কাফি তে উল্লেখ করেছেন।

📘 অন্তরের ব্যাধি সমূহ ও তার চিকিৎসা > 📄 যুলমের ধরনসমূহ

📄 যুলমের ধরনসমূহ


যুলম তিন ধরনের, আর এর সবই অন্তরের অসুস্থতা থেকে হয়ে থাকে। অন্তরের সুস্বাস্থ্য ও পবিত্রতা নির্ভর করে ন্যায়বিচারের উপর। ইমাম আহমাদ বিন হানবাল এক ব্যক্তিকে বললেন, “আপনি সুস্থ হলে কাউকেই ভয় করতেন না”, এর অর্থ হল- মানুষের ব্যাপারে আপনার মধ্যে যে ভয় আছে সেটি আপনার ভিতর থাকা একটি অসুস্থতার কারনেই, যেমন শিরক ও পাপের অসুস্থতা।

অন্তরের সংশোধিত হওয়ার ভিত্তি নির্ভর করে এটির জীবিত ও আলোকিত হওয়ার উপর। মহান আল্লাহ বলেন,
أَوَمَن كَانَ مَيْتًا فَأَحْيَيْنَاهُ وَجَعَلْنَا لَهُ نُورًا يَمْشِي بِهِ فِي النَّاسِ كَمَن مَّثَلُهُ فِي الظُّلُمَاتِ لَيْسَ بِخَارِجٍ مِّنْهَا ۚ
“এমন ব্যক্তি - যে ছিল মৃত, এরপর তাকে আমি জীবন প্রদান করি আর তার জন্য আমি এমন আলোর (ব্যবস্থা) করে দেই যার সাহায্যে সে লোকদের মধ্যে চলাফেরা করতে থাকে; সে কি এমন কোন ব্যক্তির মত হতে পারে যে (ডুবে) আছে অন্ধকারপুঞ্জের মধ্যে, তা থেকে বের হওয়ার পথই পাচ্ছে না?” (সূরা আন'আম, ৬ : ১২২)

এ কারনেই আল্লাহ কুরআনের বিভিন্ন স্থানে অন্তরের জীবন, এর প্রদীপ্তি, মৃত্যু ও অন্ধকারময়তা সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন, যেমন গৌরবান্বিত আল্লাহ বলেন,
لِّيُنذِرَ مَن كَانَ حَيًّا ۙ
“যাতে করে সে জীবিতদেরকে সতর্ক করতে পারে।” (সূরা ইয়াসিন, ৩৬ : ৭০)

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَجِيبُوا لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمْ لِمَا يُحْيِيكُمْ ۖ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يَحُولُ بَيْنَ الْمَرْءِ وَقَلْبِهِ وَأَنَّهُ إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ (٢٤)
“হে ইমানদারগণ, তোমরা আল্লাহ ও তার রসূলের ডাকে সাড়া দাও যখন তিনি তোমাদের এমন কিছুর দিকে ডাকেন যা তোমাদেরকে জীবন দান করবে, জেনে রেখো, আল্লাহ তায়ালা মানুষ ও তার হৃদয়ের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থান করেন; তোমাদের সবাইকে তার কাছেই ফিরে যেতে হবে।” (সূরা আনফাল, ৮ : ২৪)

يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ
"তিনিই মৃত থেকে জীবিতকে বের করে নিয়ে আসেন এবং জীবিত থেকে মৃতকে বের করে নিয়ে আসেন...।" (সূরা রুম, ৩০ : ১৯)

এ উদাহারনগুলো দ্বারা তিনি একজন কাফির থেকে একজন মুসলিমকে আর একজন মুসলিম থেকে একজন কাফিরকে প্রকাশ করে দিলেন।

নির্ভরযোগ্য হাদিসে বলা আছে "যে ঘরে আল্লাহর স্মরণ করা হয় আর যে ঘরে আল্লাহ'র স্মরণ করা হয় না সেগুলো জীবিত ও মৃতের অনুরূপ।” ১৬

আল-বুখারির সাহিহতে বর্ণিত একটি হাদিস হল "তোমরা তোমাদের কিছু কিছু সালাত তোমাদের ঘরে আদায় করবে, তোমাদের ঘরগুলোকে কবর বানাবে না।” ১৭

মহান আল্লাহ বলেন,
وَالَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا صُمٌّ وَبُكْمٌ فِي الظُّلُمَاتِ
"যারা আমার নিদর্শনগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে তারা হল বধির, বোবা ও অন্ধকারে নিমজ্জিত।” (সূরা আন'আম, ৬ : ৩৯)

আল্লাহ "নূরের আয়াত" আর "অন্ধকারের আয়াত" উল্লেখ করেছেন –
اللَّهُ نُورُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ مَثَلُ نُورِهِ كَمِشْكَاةٍ فِيهَا مِصْبَاحٌ الْمِصْبَاحُ فِي زُجَاجَةٍ الزُّجَاجَةُ كَأَنَّهَا كَوْكَبٌ دُرِّيٌّ يُوقَدُ مِن شَجَرَةٍ مُّبَارَكَةٍ زَيْتُونَةٍ لَّا شَرْقِيَّةٍ وَلَا غَرْبِيَّةٍ يَكَادُ زَيْتهَا يُضِيءُ وَلَوْ لَمْ تَمْسَسْهُ نَارٌ نُّورٌ عَلَى نُورٍ يَهْدِي اللَّهُ لِنُورِهِ مَن يَشَاءُ
"আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর জ্যোতি, তার জ্যোতির উপমা যেন একটি দীপাধার, যার মধ্যে আছে একটি প্রদীপ, প্রদীপটি একটি কাঁচের আবরনের মধ্যে স্থাপিত, কাঁচের আবরণটি উজ্জ্বল নক্ষত্র সদৃশ; এটি প্রজ্বলিত করা হয় পূত-পবিত্র যয়তুন বৃক্ষের তেল দিয়ে যা প্রাচ্যের নয়, প্রতীচ্যেরও নয়, আগুন ওকে স্পর্শ না করলেও যেন ওর তেল উজ্জ্বল আলো দিচ্ছে; জ্যোতির উপর জ্যোতি!” (সূরা নূর, ২৪ : ৩৫)

এটি হল আল্লাহ'র বিশ্বাসী বান্দার অন্তরে থাকা ঈমানী নূরের দৃষ্টান্ত। এরপর আল্লাহ বলেন,
وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَعْمَالُهُمْ كَسَرَابٍ بِقِيعَةٍ يَحْسَبُهُ الظَّمْآنُ مَاءً حَتَّىٰ إِذَا جَاءَهُ لَمْ يَجِدْهُ شَيْئًا وَوَجَدَ اللَّهَ عِندَهُ فَوَفَّاهُ حِسَابَهُ وَاللَّهُ سَرِيعُ الْحِسَابِ (۳۹) أَوْ كَظُلُمَاتِ فِي بَحْرٍ لُجِّيٍّ يَغْشَاهُ مَوْجٌ مِّن فَوْقِهِ مَوْجٌ مِّن فَوْقِهِ سَحَابٌ ظُلُمَاتٌ بَعْضُهَا فَوْقَ بَعْضٍ إِذَا أَخْرَجَ يَدَهُ لَمْ يَكَدْ يَرَاهَا وَمَن لَّمْ يَجْعَلِ اللَّهُ لَهُ نُورًا فَمَا لَهُ مِن نُّورٍ (٤٠)
"যারা কুফরি করে তাদের কাজ মরুভূমির মরীচিকা সদৃশ, পিপাসার্ত যাকে পানি মনে করে থাকে, কিন্তু সে ওর নিকট উপস্থিত হলে দেখবে ওটা কিছু নয় এবং সে সেখানে আল্লাহকে পাবে, অতঃপর তিনি তার কর্মফল পূর্ণমাত্রায় দিবেন, আল্লাহ হিসাব গ্রহনে তৎপর। অথবা (তাদের কর্মকাণ্ডের উদাহারন হল) অতল সমুদ্রের অভ্যন্তরস্থ গভীর অন্ধকারের মতো, অতঃপর তাকে একটি বিশাল আকারের ঢেউ এসে ঢেকে (আরো অন্ধকার করে) দিলো, তার উপর আরো একটি ঢেউ (এলো), তার উপর (ছেয়ে গেলো কিছু) ঘন কালো মেঘ; এক অন্ধকারের উপর (এলো) আরেক অন্ধকার; এমনকি সে (এই অবস্থায়) হাত বের করলে তা আদৌ দেখতে পাবে না; বস্তুত আল্লাহ যাকে জ্যোতি দান করেন না তার কোন জ্যোতিই নেই।” (সূরা নূর, ২৪ : ৩৯-৪০)

সুতরাং, ৩৯ নাম্বার আয়াতে বাতিল বিশ্বাস আর এসব বিশ্বাস থেকে উদ্ভুত কাজগুলোর একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করা হয়েছে। ব্যক্তি সেই বাতিল বিশ্বাস থেকে উদ্ভূত কাজগুলোকে উপকারী হিসেবে বিবেচনা করে, কিন্তু সেগুলো বিচার দিবসে যখন তার কাছে এসে উপস্থিত হবে, তখন সে সেগুলোতে কোন উপকারই খুঁজে পাবে না। বরং আল্লাহ তার এই কাজগুলোর পূর্ণ প্রতিদান দিবেন দোযখে।

৪০ নাম্বার আয়াতে ব্যাপক অজ্ঞতা, ঈমানের অভাব ও বিশুদ্ধ ইলমের অভাবের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা হয়েছে। এই বিষয়গুলো যার মধ্যে রয়েছে সে একটির উপর আরেকটি অন্ধকারে রয়েছে, সে কোনকিছুই দেখতে সক্ষম হয় না; কারন নিশ্চয়ই দেখতে পাওয়া তো কেবল ঈমানের আলো আর সঠিক ইলমের দ্বারাই ঘটে। মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَوْا إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِّنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوا فَإِذَا هُم مُّبْصِرُونَ (۲۰۱)
"নিঃসন্দেহে যারা মুত্তাকী, তাদের যদি কখনো শয়তানের পক্ষ থেকে কুমন্ত্রণা স্পর্শ করে তবে তারা (সাথে সাথেই) আত্মসচেতন হয়ে যায় আর এরপর তারা (সঠিকভাবে) দেখতে পায়।” (সূরা আ'রাফ, ৭ : ২০১)

وَلَقَدْ هَمَّتْ بِهِ وَهَمَّ بِهَا لَوْلَا أَن رَّأَى بُرْهَانَ رَبِّهِ
"সে নারী তার প্রতি আসক্ত হয়েছিল আর সেও আসক্ত হয়ে পড়তো যদি না তার রবের নিদর্শন সে দেখতে পেতো...।" (সূরা ইউসুফ, ১২: ২৪)

এর অর্থ হল, তার অন্তর ঈমানের যে প্রমাণ অর্জন করেছে, সেটির কারনে আল্লাহ তাকে সেই আসক্তি থেকে তার মুখ ফিরিয়ে দিয়েছেন আর তার জন্য একটি পূর্ণ সওয়াব লিখে দিয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে কোন পাপ লিখে রাখা হয় নি, যেহেতু তিনি অসৎ কাজ না করে সৎ কাজ করেছিলেন। মহান আল্লাহ বলেন,
الر كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِ رَبِّهِمْ إِلَى صِرَاطِ الْعَزِيزِ الْحَمِيدِ (۱)
"... যাতে আপনি মানবজাতিকে তাদের রবের নির্দেশক্রমে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনতে পারেন...।" (সূরা ইব্রাহীম, ১৪ : ১)

اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَوْلِيَاؤُهُمُ الطَّاغُوتُ يُخْرِجُونَهُم مِّنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ *
"আল্লাহই ইমানদারদের অভিভাবক। তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যান; আর যারা অবিশ্বাস করেছে শয়তান তাদের পৃষ্ঠপোষক, সে তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়...।" (সূরা বাকারাহ, ২ : ২৫৭)

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَآمِنُوا بِرَسُولِهِ يُؤْتِكُمْ كِفْلَيْنِ مِن رَّحْمَتِهِ وَيَجْعَل لَّكُمْ نُورًا تَمْشُونَ بِهِ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ (۲۸)
"হে ইমানদারগণ, তোমরা আল্লাহ'র ব্যাপারে তাকওয়া অবলম্বন করো আর তার প্রেরিত রসূলের উপর ঈমান আনো, এর ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে দ্বিগুণ অনুগ্রহে ভূষিত করবেন, তিনি তোমাদের দিবেন একটি আলো, যার সাহায্যে তোমরা পথ চলতে সক্ষম হবে...।" (সূরা হাদিদ, ৫৭ : ২৮)

এ কারনেই আল্লাহ ঈমানের জন্য দুই ধরনের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন-পানির দৃষ্টান্ত, যেটি দ্বারা জীবন অস্তিত্বমান থাকে আর ফেনা, যা পানির সাথে আগমন করে। আরেকটি দৃষ্টান্ত হল আগুনের, যেটি দ্বারা আলো উদ্ভূত হয়। আল্লাহ বলেন,
أَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَسَالَتْ أَوْدِيَةٌ بِقَدَرِهَا فَاحْتَمَلَ السَّيْلُ زَبَدًا رَّابِيًا وَمِمَّا يُوقِدُونَ عَلَيْهِ فِي النَّارِ ابْتِغَاءَ حِلْيَةٍ أَوْ مَتَاعِ زَبَدٌ مَّثْلُهُ كَذَلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ الْحَقَّ وَالْبَاطِلَ فَأَمَّا الزَّبَدُ فَيَذْهَبُ جُفَاءَ
"তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, এরপর (নদী-নালা ও তার) উপত্যকাসমূহ তাদের নিজ নিজ পরিমাণ অনুযায়ী প্লাবিত হয়, এরপর এ প্লাবন (আবর্জনার) ফেনা বহন করে (উপরে) নিয়ে আসে; (আবার) যারা অলংকার ও যন্ত্রপাতি বানানোর জন্য (ধাতুকে) আগুনে উত্তপ্ত করে, (তখনো) তাদের এক ধরণের আবর্জনা ফেনা (হয়ে) উপরে উঠে আসে; এভাবেই আল্লাহ হক ও বাতিলের উদাহারন দিয়ে থাকেন, অতঃপর (আবর্জনার) ফেনা এমনিই বিফলে চলে যায় এবং (পানি-) যা মানুষের প্রচুর উপকারে আসে তা জমিনেই থেকে যায়..." (সূরা রা'দ, ১৩ : ১৭)

অনুরূপভাবে, আল্লাহ মুনাফিকদের ব্যাপারে দুটো দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন-
مَثَلُهُمْ كَمَثَلِ الَّذِي اسْتَوْقَدَ نَارًا فَلَمَّا أَضَاءَتْ مَا حَوْلَهُ ذَهَبَ اللَّهُ بِنُورِهِمْ وَتَرَكَهُمْ فِي ظُلُمَاتٍ لَّا يُبْصِرُونَ (۱۷) صُمٌّ بُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لَا يَرْجِعُونَ (۱۸) أَوْ كَصَيِّبٍ مِّنَ السَّمَاءِ فِيهِ ظُلُمَاتٌ وَرَعْدٌ وَبَرْقٌ يَجْعَلُونَ أَصَابِعَهُمْ فِي آذَانِهِم مِّنَ الصَّوَاعِقِ حَذَرَ الْمَوْتِ وَاللَّهُ مُحِيطٌ بِالْكَافِرِينَ (۱۹) يَكَادُ الْبَرْقُ يَخْطَفُ

টিকাঃ
(১৬) সাহিহ বুখারি- ৮/২৭৮, হাদিস ৪১৬
(১৭) সাহিহ বুখারি- ১/২৫৪, হাদিস ৪২৪ এবং ২/১৫৬, হাদিস ২৮০

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন