📄 সালাফের নিফাকভীতি - ঈমান ও নিফাকের পার্থক্য
উমর ইবনু আবদুল আজিজ রাহিমাহুল্লাহুর একজন ভাই ছিলেন। যিনি খুব নেককার ছিলেন। তিনি খিলাফতের আসনে বসে ভাইকে ডেকে বললেন—
> সালেম, আমি আশংকা করছি যে, আমি রক্ষা পাব না।
তাঁর ভাই বললেন—
> আপনি আশংকা করে থাকলে তো ভালো কথা। তবে আপনার ব্যাপারে আমার ভয় ছিল—আপনি এই আশংকাটিই করবেন না। ৩৭
এটি এমন এক আশংকা—যা সকল অলসতার লক্ষণ ও উদাসীনতার প্রস্তুতিকে নস্যাৎ করে দেয়। তৈরি করে দেয় একজন মানুষের মধ্যে সৎকর্ম করার এবং যে-কোনো পদস্খলনের ব্যাপারে দ্রুত উপলব্ধি সৃষ্টি হওয়ার যোগ্যতা।
উমর ইবনুল খাত্তাব রাজিয়াল্লাহু আনহু নিজের ওপর নিফাকির আশংকা করতেন। অথচ তিনি নিজ কানেই নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুখ থেকে সুসংবাদ শুনেছেন— উমর জান্নাতি।৩৮
কেননা, এটিই মুমিনের বৈশিষ্ট্য। তার ভেতর থাকবে এমন ভয়-যা তাকে আমলে উৎসাহ জোগায়। ভেতরে শঙ্কা জাগায়; এমন শঙ্কা-যা অলসতা দূর করে তাকে চাঙ্গা থাকতে সহযোগিতা করে।
ঈমান ও নিফাকের পার্থক্য
সুতরাং যে ব্যক্তি নিফাকের শঙ্কায় থাকে সে নিফাক লালনকারীদের থেকে পালিয়ে বেড়ায় এবং কথার আগেই কাজের মাধ্যমে তাদের থেকে মুক্ত হয়ে যায়। শাকিক আল-বালখি ঈমান ও নিফাকির মাঝে এভাবে পার্থক্যরেখা স্পষ্ট করেছেন-
মুমিনের উপমা হলো সেই ব্যক্তির মতো, যে একটি খেজুর গাছ রোপন করে কাঁটা গাছ বহন করার শংকায় থাকে। আর মুনাফিকের উপমা হলো সেই ব্যক্তির মতো, যে কাঁটা গাছ রোপন করে খেজুর কেটে আনার আশায় থাকে। ৩৯
আপনার জন্য এতটুকু জানাই যথেষ্ট যে, যারা সালাতের ব্যাপারে শিথিলতা করে এবং সালাতে মনোযোগী হয় না তাদের ব্যাপারে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করে আমাদের নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তারা কিয়ামতের দিন কারুন, ফিরাউন, হামান ও উবাই ইবনু খালফের সাথে একত্র হবে। সুতরাং, ফরজ আদায়ে বিলম্ব করা এবং মনোযোগী না হওয়া বান্দাকে কাফেরদের শীর্ষ নেতাদের দলে ভিড়িয়ে দেবে। তাদের সাথে তাকেও একই শিকলে বেঁধে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে। এতে বুদ্ধিমানদের জন্য স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে, 'যে ব্যক্তি কাজে কর্মে কোনো দলসদৃশ হয়, সে তো তাদের মতোই প্রতিদান পাবে।' তাহলে আমাদের অন্তরগুলো দীর্ঘ অবসাদ ও উদাসীনতার তিক্ত পরিণতির সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও আমাদের শঙ্কা কীভাবে দূর হয়ে যেতে পারে? একেই কিছু বুজুর্গ বলেছেন সাদৃশ্যনীতি। যার মূল কথা হলো-
(প্রত্যেকে তার অনুরূপ ব্যক্তির নিয়মই গ্রহণ করে থাকে। অনুরূপ দুজনের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ প্রয়োগে তারতম্য করা অসম্ভব। যেভাবে পরস্পরবিরোধী দুজনের ক্ষেত্রে আইনপ্রয়োগে অনুরূপ করা অসম্ভব।) ৪০
টিকাঃ
৩৭ হিলয়াতুল আউলিয়া: ৫/৩২৯, আবু নুআয়িম আল-ইস্পাহানি, দারুল কুতুবিল আরবি; নসিহতের বাকি অংশ— আল্লাহ তাআলা তাঁর এক বান্দাকে একটি বাড়িতে থাকতে দিয়েছেন; সে মাত্র একটি ভুল করায় সেই বাড়ি থেকে তাকে বেরও করে দিয়েছেন। অথচ আমরা, অগণিত গুনাহ করেও সেই বাড়িতে জায়গা পাওয়ার আশা করি!
৩৮ হাদিসের মান: সহিহ, সায়িদ ইবনু জায়িদ রা.-এর সূত্রে মুসনাদে আহমাদ-এ বর্ণিত হয়েছে; সহিহুল জামি: ৫০
৩৯ সিফাতুস সফওয়া: ২/৩৩৯, ইবনুল জাওজি, দারুল হাদিস, কায়রো
📄 প্রশ্ন হও শক্তিতেজন - পরিবর্তনের কার্যকর নীতি
আমরা যদি ফজরের সালাতে অবহেলা করি তবে আমরা বিছানার আরামের দিক থেকে মুনাফিকদের কাতারে চলে যাব। সুতরাং, প্রতিদান প্রদানেও কঠিন শাস্তি ও কড়া হিসাব গ্রহণের মাধ্যমে প্রকৃত মুনাফিকদের পরিপূর্ণ অনুসরণ করা হবে। তবে যদি তাওবা কবুলকারী পরম দয়ালু প্রভু আমাদের প্রতি রহম করেন তা ভিন্ন কথা।
আমরা যদি ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করি, অথবা মিথ্যা কথা বলি তবে আমরা নিফাকির এক তৃতীয়াংশকে আবশ্যক করে নিলাম।
আমরা যদি লৌকিকতার নিয়তে দান করি অথবা দান করে কষ্ট ও খোঁটা দিই তবে আমরা মুনাফিকি চক্রের অনুসারী হয়ে গেলাম।
তাই যেদিন বিশ্বজগতের মালিক সকল দলকে একত্র করবেন সেদিন আমরা সেই মুনাফিকি চক্রের কাতারে থাকাটা কী অসম্ভব কিছু?
প্রসন্ন হও শঙ্কিতজন
অবনতির শঙ্কা আপনার মন থেকে অলসতা তাড়িয়ে দেবে। তখন আপনি জেগে উঠবেন নিদ্রার চাদর ফেলে। অলসতা তাড়িয়ে দেবে আপনার মেধা থেকে। তখন আপনি জ্বলে উঠবেন আপন প্রতিভায়। অলসতাকে তাড়িয়ে দেবে আপনার দেহ থেকে। তখন আপনি হয়ে উঠবেন উদ্যমী। নিম্নমুখি স্খলন থেকে হয়ে উঠবেন উচ্চমনোবলের অধিকারী।
আমাদের কি আগ্রহ আছে নিফাকমুক্ত উদ্যানে গিয়ে আশ্রয় নেওয়ার? আগ্রহ আছে এসকল পাপাচারের পঙ্কিল জলাশয়ে পতিত হওয়া থেকে আত্মরক্ষা করার? যদি আগ্রহ থাকে, তবেই তো আমরা অর্জন করতে পারব উচ্চমনোবল—জান্নাত।
পরিবর্তনের কার্যকর নীতি
নিজেকে যে জ্বালাতে পারে, সে-ই সৃষ্টি করে আলোড়ন, সেই হয় গতিশীল।
দর্শন : অতএব, আগুনের প্রতি আপনার নিকটবর্তিতাই আপনাকে মূল আগুন থেকে অনেক অনেক দূরে নিয়ে যাবে। অন্তর যার দগ্ধ হবে শঙ্কাগ্নিতে, সে-ই ছড়াবে আলো; সে-ই স্থায়ী লাঞ্ছনাগ্নির পোশাক পরা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে। আর নিজেকে যে গতিশীল করতে পারবে না, সে তো বেছেই নিল লাঞ্ছনার জীবন, তার জীবন তো জীবিত কিছু নয়, অনুভূতিশূন্য এক মৃত আত্মার বসতবাড়ি।
এই শঙ্কাই হচ্ছে এক মহৌষধ, যা দিয়ে অলসেরা আরোগ্যলাভ করতে পারে এবং দুর্বলেরা শক্তি সঞ্চয় করতে পারে। যেমন ইবনুল জাওজি রাহিমাহুল্লাহু তিব্বর-রুহানি নামক গ্রন্থে বলেন—
ভয় এমন এক চাবুক, যা দিয়ে অলসদের তাড়িয়ে নেওয়া যায়।৪১
টিকাঃ
৪০ মাজাল্লাতুত তারবিয়াতিল ইসলামিয়া :২৬, কিতাবুল মানতেক থেকে চয়িত
৪১ আত-তিব্বর রুহানি :৪৯; ইবনুল জাওজি, মাকতাবাতুস সাকাফাতিত দ্বীনিয়া, কায়রো