📄 মন্দপ্রবণ আত্মা
প্রশান্ত আত্মার বিপরীত ও বিরোধী আত্মা হ'ল মন্দপ্রবণ মন। আরবীতে বলা হয় 'নাফসুল আম্মারা'। মন্দপ্রবণ আত্মা মানুষকে খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করতে হুকুম করে এবং ভুল ও বাতিল পথে চলতে উৎসাহিত করে। সে সকল মন্দের আশ্রয়কেন্দ্র। সবাইকে সে বিশ্রী ও ঘৃণ্য কাজের দিকে টানে। আল্লাহ তা'আলা বলেন, إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوْءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّي 'নিশ্চয়ই মানুষের মন মন্দপ্রবণ। কেবল ঐ ব্যক্তি ছাড়া যার প্রতি আমার প্রভু দয়া করেন' (ইউসুফ ১২/৫৩)। আল্লাহ 'আম্মারাহ' বলেছেন, 'আমেরাহ' বলেননি। কেননা 'আম্মারাহ'-এর মধ্যে অতিশয়তার অর্থ রয়েছে। এজন্যই এ ধরনের মন মন্দের বেশী বেশী হুকুম দেয়।
নফস বা মন সহজাতভাবেই অত্যাচারী ও অজ্ঞ-মূর্খ (যালিম ও জাহিল)। ফলে মানুষের মন সদাই অন্যের ও নিজের উপর অত্যাচার করতে চায় এবং নিজের ভাল-মন্দ বিবেচনায় না নিয়ে মূর্খের মত কাজ করে। তবে আল্লাহ যাকে দয়া করে তার খপ্পর থেকে রক্ষা করেন তার কথা আলাদা। আল্লাহ বলেন, وَاللَّهُ أَخْرَجَكُمْ مِنْ بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ لَا تَعْلَمُونَ شَيْئًا 'আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের গর্ভ থেকে বের করে এনেছেন এমন অবস্থায় যে তোমরা কিছুই জানতে না' (নাহল ১৬/৭৮)। إِنَّ الْإِنْسَانَ لَظَلُومٌ كَفَّارٌ 'নিশ্চয় মানুষ অতিবড় যালেম ও অকৃতজ্ঞ' (ইবরাহীম ১৪/৩৪)।
হ্যাঁ, জন্মকালে তার মধ্যে হক বা সত্য গ্রহণ করার যোগ্যতা তৈরি করে দেওয়া হয়। তাই তার সামনে হক বা সত্য তুলে ধরা হলে বাইরের কোন খারাপ প্রভাবে প্রভাবিত না হ'লে সে তা গ্রহণ করে। আল্লাহ বলেন, فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا فِطْرَتَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا 'তুমি একনিষ্ঠভাবে ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ। আল্লাহ্র ধর্ম, যার উপরে তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন' (রুম ৩০/৩০)। কিন্তু নফস বা মনকে আল্লাহ্র দ্বীন শিক্ষা দেওয়া না হ'লে সে জাহিল-মূর্খই থেকে যায়, তার মধ্যে কুপ্রবৃত্তি গিজগিজ করে। ফলে শিক্ষা-দীক্ষা ও প্রশিক্ষণ না পেলে মন মানুষকে অবাধ্যতার দিকে ডাকে এবং মন্দ কাজে ঠেলে দেয়। সুতরাং আদল-ইনছাফ ও বিদ্যা-বুদ্ধি মানুষের মনের অর্জিত বিষয়, এগুলো সহজাত নয়।
📄 মন্দপ্রবণ আত্মার অত্যাচারী হওয়ার কারণ
মন হয়তো কোন জিনিস সম্পর্কে জানে না, কিংবা তাতে তার প্রয়োজন রয়েছে তাই সে তা ছলেবলে যে কোন অসদুপায়ে হাছিল করতে তার মালিককে সদাই প্ররোচিত করে। যেন তার তা না হলে চলবেই না। হ্যাঁ আল্লাহ্র রহমতই কেবল মনকে এহেন দুর্দশা থেকে রক্ষা করতে পারে। এজন্যই বান্দা বুঝতে পারে যে, সে সদাই আল্লাহ্র মুখাপেক্ষী। তার মনের অনিষ্ট ও ক্ষতি থেকে কেবল আল্লাহই তাকে বাঁচাতে পারেন। অতএব আল্লাহ্র প্রয়োজন মানুষের নিকট সকল প্রয়োজনের ঊর্ধ্বে; এমনকি তার খাদ্য-পানীয় ও শ্বাস-প্রশ্বাসের চাইতেও বেশী।
📄 ভর্ৎসনাকারী আত্মা
ভাল-মন্দের মিশেলে যে মন গড়ে ওঠে তাই ভর্ৎসনাকারী মন। এ ধরনের মন ভাল কাজ কেন ছেড়ে দেওয়া হ'ল, মন্দ কাজ কেনই বা করা হ'ল তা বলে তার মালিককে ভর্ৎর্সনা বা তিরস্কার করে। আরবীতে বলা হয় 'নাফসে লাওয়ামা'। 'লাওম' মূল থেকে 'লাওয়ামা' শব্দ গঠিত। বাংলায় প্রচলিত 'মালামত' শব্দের মূলও লাওম। মালামত অর্থ ভৎর্সনা বা তিরস্কার।
হাসান বছরী (রহঃ) বলেন, إن المؤمن، والله، ما تراه إلا يلوم نفسه على كل حالاته؛ يستقصرها فى كل ما يفعل فيندم ويلوم نفسه، وإن الفاجر ليمضى قدما لا يعاتب نفسه 'আল্লাহ্র কসম! তুমি মুমিনকে সর্বাবস্থায় নিজের মনকে তিরস্কার করতে দেখতে পাবে। তার সব কাজেই সে কিছু না কিছু ত্রুটি খুঁজে পায়। তাই কেন এ ত্রুটি হ'ল তা ভেবে সে লজ্জিত ও অনুশোচিত হয় এবং মনকে সেজন্য তিরস্কার করে। পক্ষান্তরে পাপাচারী দুষ্কৃতিকারী অসংকোচে অন্যায়-অপকর্ম করে, তা নিয়ে মনকে সে কদাচিৎই ভর্ৎসনা করে'।
টিকাঃ
১২. ইগাছাতুল লাহফান ১/৭৭।