📄 কুরআন চিরদিন সংরক্ষিত থাকবে
আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই আমি কুরআন নাযিল করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। (সূরা হিজরঃ ৯)
আল্লাহর বাণী কুরআন কে সংরক্ষণের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা গ্রহণ করেছেন। কিয়ামত পর্যন্ত এর মধ্যে বিন্দু-বিসর্গ পরিবর্তন-পরিবর্ধন না হয়ে তা সংরক্ষিত থাকবে। আল্লাহ তাঁর এ ওয়াদা পূরণ করেছেন যে, প্রত্যেক যুগে লক্ষ লক্ষ মানুষ ছিলেন এবং রয়েছেন, যারা কুরআনকে এমনিভাবে হিফয করেছেন যে, এর প্রতিটি যের-যবর পর্যন্ত অবিকল রয়েছে। নাযিলের সময় থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর অতিবাহিত হয়েছে। এ দীর্ঘ সময়ে এ কিতাবের মধ্যে সামান্যতম কোন পরিবর্তন বা বিকৃতি ঘটেনি।
আল্লাহ তায়ালা কুরআনকে বিশ্বে রাখার জন্য সহজপাঠ্য করে দিয়েছেন। এটি একমাত্র কুরআনকেই বিশেষ বৈশিষ্ট্য। কুরআনের মত এত বিশাল গ্রন্থ মুখস্থ করা পৃথিবীর ছোট বড় আর কোন গ্রন্থকেই এভাবে মুখস্থ করে রাখা যেতে পারে না। এমন কি বাইবেল, তালমুদ, বেদ, ত্রিপিটক ইত্যাদি কোন ধর্মগ্রন্থও এভাবে মুখস্থ রাখা সম্ভব নয়। সারা দুনিয়ায় এ সব গ্রন্থের একজন হাফিজও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
বিশ্বের সমস্ত কুরআনও যদি কোন কারণে ধ্বংস হয়ে যায় তা হলেও কুরআনের হাফেজদের মাধ্যমে অতি সহজেই পুনরায় লিখে নেয়া সম্ভব। এ অদ্ভুত সংরক্ষণের ব্যবস্থা আল কুরআনের বিশেষত্ব।
আল্লাহর সত্তা সর্বযুগে বিদ্যমান থাকবে। তাতে কোন সৃষ্টির হস্তক্ষেপ করার সাধ্য নেই। কুরআন আল্লাহর বাণী কেউ এতে কোন হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। যদিও যুগে যুগে কুরআনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে এবং কোন ধর্মগ্রন্থের বেলায় তা হয়নি। কারণ কুরআন শুধুমাত্র একটি ধর্মগ্রন্থ নয়, এটি একটি চিরস্থায়ী মুজিজা (Miracle) বা অলৌকিক বস্তু।
ভাষা বিজ্ঞানীদের মতে কোন ভাষা ৫০০ বছরের বেশি অধিকতর টিকে থাকে না। কিন্তু কুরআনের ভাষা হবার কারণে আরবী ভাষা এর ব্যতিক্রম। প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে কুরআনের আরবী ভাষা এখনো অবিকল রয়েছে ও ধারাবাহিকভাবে মানুষের বোধগম্য রয়েছে এবং ভবিষ্যতে থাকবে। অথচ বেদের মূল ভাষা সংস্কৃত, বাইবেলের ভাষা সুরিয়ানী এবং তাওরাতে ভাষা হিব্রু এখন মৃত ভাষা (Dead Language)। মূল ভাষার অস্তিত্ব না থাকায় অন্য ভাষায় অনূদিত হতে হতে ঐ সব ধর্মগ্রন্থ বিকৃত ও পরিবর্তিত হয়ে গেছে। কুরআনকে অবিকৃত রাখার জন্য আল্লাহ তায়ালা কুরআনের মূল ভাষা আরবীতেই স্থায়ী ও অবিকৃত রেখেছেন। কুরআন পৃথিবীর সবচে’ প্রাচীন গ্রন্থ যা তার মূল ভাষায় পাঠ করা হয় এবং কুরআনেই সর্বযুগে সর্বাধিক পঠিত, সর্বাধিক মুখস্তকৃত এবং সর্বাধিক অনুদিত গ্রন্থ।
প্রথম যুগের হাতে লেখা কুরআনের কপি এখনো ইস্তাম্বুলে এবং তাসখন্দের যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এগুলোর সাথে বর্তমান কুরআনের কোন পার্থক্য নেই। ফ্রান্সের বিখ্যাত মনীষী ডঃ মরিস বুকাইলী নিজে এটা পরীক্ষা করে দেখেছেন বলে তাঁর ‘বাইবেল কুরআন বিজ্ঞান' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
বিগত দেড় হাজার বছর ধরে বহুবার আল কুরআনের এই ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমাণিত হয়ে রয়েছে।
📄 ইহুদীরা চিরদিন লাঞ্ছিত ও অপমানিত থাকবে
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আল্লাহর প্রদত্ত ও মানব প্রদত্ত আশ্রয় ব্যতীত তারা (ইহুদীরা) যেখানে যাবে সেখানেই তারা জন্য লাঞ্ছনা ও অপমাননা পুঞ্জিভূত হয়ে থাকবে। আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হয়েছে এবং হীনগ্রস্থ হয়েছে। এ জন্য যে, তারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করত এবং অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করত। তারা ছিল অবাধ্য ও সীমালঙ্ঘনকারী” (সূরা ইমরানঃ ১১২)
ইহুদীরা উপরোক্ত দু’অবস্থা ব্যতীত সর্বত্র ও সব সময় লাঞ্ছিত ও অপমানিত থাকবে। (১) আল্লাহ প্রদত্ত আশ্রয়ের মাধ্যমে আশ্রয় পেতে পারে। (২) অন্যদের আশ্রিত হয়ে বা শান্তি চুক্তির মাধ্যমে নিজেদেরকে অপমাননা থেকে মুক্ত রাখতে পারবে।
ইহুদী জাতি এক প্রাচীন ও ধূর্ত জাতি। অপরাধ প্রবণতা এদের মজ্জাগত। এরা নিজেদেরকে হযরত মূসা (আঃ) এর অনুসারী বলে দাবী করে এবং তাঁকেই শেষ নবী মনে করে।
এক সময় (খৃষ্টপূর্ব ১৮ শতকের পরে) আল্লাহ তায়ালা এদেরকে পৃথিবীতে সবচেয়ে আসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন। পৃথিবীর শাসন কর্তৃত্ব দিয়েছিলেন। অনেক নবী রাসূল এদের মধ্যে জন্মগ্রহণ করে এদেরকে সম্মানিত করেছিলেন। সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে এরা অনেক উৎকর্ষ সাধন করেছিল। মিশরের অত্যাচারী ফেরাউনের অত্যাচার থেকে আল্লাহ এদেরকে মুক্তি দিয়েছিলেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে বিনা পরিশ্রমে আল্লাহর পক্ষ থেকে মান্না ও সালওয়া নামক সুস্বাদু খাদ্য লাভ করেছিল। এত কিছুর পরেও এই ইহুদী জাতিতে অপরাধ প্রবণতা ও অবাধ্যতা এতদূর পৌঁছেছিল যে, অনেক নবী- রাসূলকে তারা হত্যা করেছিল। কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “মানুষের মধ্যে ইহুদী ও মুশরিকরাই মুসলমানদের প্রতি সবচে’ বেশি বিদ্বেষ পোষণকারী।” (সূরা মায়িদা, আয়াতঃ ৮২)
নানা রকম অপরাধ করার কারণে আল্লাহ তায়ালা ইহুদী জাতিকে সম্মানজনক আসন থেকে নামিয়ে অভিশপ্ত জাতিতে পরিণত করেছেন। নেয়াযত থেকে বঞ্চিত করে চিরদিনের জন্য লাঞ্ছিত ও অপমানিত করে রেখেছেন। শনিবার বিধান লংঘনের অপরাধে এদের কিছু সংখ্যককে আল্লাহ তায়ালা চেহারা বিকৃত করে দিয়ে যুগ-যুগান্তরের বানরের আকারে রূপান্তরিত করেছিল। কুরআনে বলা হয়েছে, যুগে যুগে অনেক শাসকের হাতে ইহুদী নির্যাতানের ঘটনা ঘটেছিল।” কুরআনের উক্ত আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, ইহুদী নিধন এদের ভাগ্যে প্রতিষ্ঠা কখনও সম্ভব হবে না। অথচ দেখা যায় ইসরাইল নামে তাদের একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উত্তর সুস্পষ্ট-কেননা একে রাষ্ট্র বলাকে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আমেরিকান ও রাজনৈতিক একটি ঘটনা। এ রাষ্ট্র নিজেস্ব সম্পদ ও শক্তির উপর নির্ভর করে একমাসও টিকে থাকতে পারতো কিনা সন্দেহ। পাশ্চাত্যের খ্রিস্টানশক্তি মুসলিম বিশ্বকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে ইসরাইল নাম দিয়ে একটি সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করেছে। তাদের পৃষ্ঠপষ্ঠ ও আশ্রিত হয়ে নিছক কিছুএকদরবারে নিজেদেরকে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। তাই অত্যন্ত লাঞ্ছনা ও অপমানের ভেতর দিয়েই।
আমরা এখানে সংক্ষিপ্ত গ্রন্থখানি কুরআন ও বাইবেলের আলোকে এবং তথ্য থেকে বনী ইসরাইল বা ইহুদী জাতির ইতিহাস ঐতিহ্য, উত্থান, পতন ও তাদের ভবিষ্যৎ পরিণতি সম্পর্কে আলোচনা করতে চেষ্টা করব। এ আলোচনা থেকে ইহুদিদের সম্পর্কে আল কুরআনের ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতা আরও সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হবে।
উৎপত্তি ও নামকরণ
মানব জাতির আদি পিতা মানুষ আদম (আঃ) এর অধঃস্তন ২০ তম পুরুষ ইবরাহীম (আঃ) ছিলেন মানব সভ্যতার অগ্রদূত। শুধু টেস্টামেন্টের (তওরাত) প্রায় মতে তার জন্ম হয়েছিল কেলনিয়ার (বর্তমান ইরাক) অন্তর্গত ‘উড়’ নগরীতে। তার জ্যেষ্ঠ পুত্র ইসমাইল (আঃ) এর বংশে মুহাম্মদ(সঃ) এর জন্ম হয়। ইবরাহীম (আঃ) এর দ্বিতীয় পুত্রের নাম ইসহাক (আঃ)। ইসহাক (আঃ) এর জীর নাম রেবেকা। এই ইসহাক-রেবেকার দাম্পত্যে দুই সন্তানের একজন হলেন ইয়াকুব (Jacob)। ইসহাক (আঃ) এর অপর নাম বা খেতাব ‘ইসরাইল’। এজন্য তাঁর বংশধরদেরকে বলা হয় বনী ইসরাইল। ইয়াকুব (আঃ) এর বারো জন পুত্র সন্তানের মধ্যে ছিল ইয়াহুদা নামে এক পুত্র যে ছিল সকলের শ্রদ্ধার পাত্র। এজন্য ইয়াহুদার নামানুসারে বনী ইসরাইলদেরকে ইয়াহুদী নামেও সম্বোধন করা হয়। আসলে বনী ইসরাইল ও ইয়াহুদী একই জাতির দুটি নাম। ইয়াকুব (আঃ) এর বার পুত্রের এক পুত্র ইউসুফ (আঃ) নবুওয়াত লাভ করেন এবং একই সাথে মিশরের রাজত্ব লাভ করেন। ইসরাইলীদের মধ্যে যুগে যুগে বহু নবীর আবির্ভাব ঘটে। তারা অন্য। আল কুরআনে বর্ণিত দৃষ্টান্তমূলক কাহিনী সমূহের অধিকাংশ কাহিনী বনী ইসরাইল জাতিকে কেন্দ্র করে বর্ণিত হয়েছে।
হযরত মূসা (আঃ) এর উপর অবতীর্ণ গ্রন্থ তওরাত (Torah) এবং দাউদ (David) এর উপর অবতীর্ণ যাবুর এই দুই গ্রন্থকে একত্রে প্রাচীন বাইবেল (Old Testament) বলা হয় এবং শুধু টেস্টামেন্টের অনুসারীদেরকে ইহুদী বলা হয়। বনী ইসরাইল (ইয়াহুদী) পুরোজাতিরা নবী মূসা (আঃ) হতে সোলাইমান (আঃ) এর যামানা পর্যন্ত তওরাত ও যাবুর কিতাবের মূল ও পবিত্রতা যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও অনুসরণ করে আসছিল। এর জন্য এ জাতির মানমর্যাদা ছিল তদানীন্তন জাতিসমূহের মধ্যে সকলের উর্ধ্বে। তৎকালীন বিশ্বের সম্মানিত জাতি হিসেবে সুদক্ষ জীবন যাপনের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদেরকে বহু নিয়মিত দান করেন। সে নিয়ামতের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্যঃ ১. তওরাতের বিধানসমূহ, ২. বারটি গোত্রের জন্য এক শিলা খণ্ড থেকে বারটি প্রসবণ, ৩. tīh প্রান্তরে, মান্না ও সালওয়া নামক সুস্বাদু খাদ্য দান এবং ৪. ছায়া দিতে মেঘের ব্যবস্থা। আল্লাহ তাদের বসবাসের জন্য সিনাই উপত্যকাকে বিশেষভাবে নাম উল্লেখকরকরা করেন।
আল্লাহ সে সম্পর্কে বলতে গিয়ে যে আয়াত নাযিল করেছেন বনী ইসরাইলদেরকে বলেন, “হে বনী ইসরাইল, তোমরা আমার প্রদত্ত নিয়ামের চুক্তি স্মরণ কর। আর তোমরা আমাকে দেওয়া সেই কৃত চুক্তি ভঙ্গ ক'র না। কেননা, যতদিন তোমরা চুক্তিবদ্ধ কাজ করবে ততদিন আমি তোমাদেরকে সর্বপ্রকার নিয়ামত দিতে থাকব। আর আমাকে ভয় কর।” (সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৪০-৪১)।
স্বরণ কর সে সময়ের কথা যখন আল্লাহ তোমাদের মধ্যে নবী পাঠিয়ে তোমাদেরকে শাসক বানিয়েছেন। (সূরা আল-মায়িদা, আয়াতঃ ২০)।
বনী ইসরাইলদের প্রতি আল্লাহ তায়ালার অন্যতম নেয়ামত হল বাদশাহ ফেরাউনের দাসত্ব ও অত্যাচার থেকে মক্কার মুক্তি। হযরত মূসা (আঃ) বনী ইসরাইলদেরকে নিয়ে মিশর ত্যাগ করে ফিলিস্তিনে হিজরত করার জন্য আল্লাহ কর্তৃক আদিষ্ট হন। ইতোমধ্যে ফেরাউন তাঁদের পিছু ধাওয়া করতে এসে দলবলসহ লোহিত সাগরে ডুবে মারা যায়। মূসা (আঃ) তাঁর কাফেলা নিয়ে নিরাপদে সাগর পাড়ি দিয়ে সিনাই মরু অঞ্চলে পৌঁছান। সেখানে তারা ৪০ বছর অবস্থান করেন। জীবন ধারণের জন্য মৌলিক পানির অভাব ছিল মরুভূমির মধ্যে তাদের সবচে বড় সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য আল্লাহ তায়ালা তাদের গোত্রের জন্য বারটি প্রস্রবণ সৃষ্টি করেন।
এই সিনাই অঞ্চলে অবস্থিত তুর পাহাড়ের পাদদেশে মূসা (আঃ) তওরাতের বিধানসমূহ প্রাপ্ত হন এবং তার তাওরাতের অনুসারে জীবন যাপনের জন্য নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত জীবন যাপনের জন্য মান্না ও সালওয়া নামক সুস্বাদু নিয়ামত হিসেবে প্রাপ্ত হন। তাওরাতের বিধানসমূহ অনুসারে চলার কারণে বনী ইসরাইল জাতি সম্মানের শীর্ষে অবস্থান করতে সক্ষম হয়। এর মৃত্যুর পর তাদের তাওরাতের মূল ঘটনা (আঃ) এর নেতৃত্বে জর্ডান নদীর পূর্ব ও পশ্চিম তীরের কিয়দাংশ দখল করে সেখানে বসতি স্থাপন করে। খ্রিস্টপূর্ব ১০২০ অব্দের দিকে তারা বাদশাহ তালুতের নেতৃত্বে অত্যাচারী জালুতকে পরাজিত ও নিহত করে ফিলিস্তিন ভূখন্ডে প্রথমবারের মত ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে এবং খ্রিস্টপূর্ব ৯২০ অব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ দিন যাবৎ তারা সুখী, সমৃদ্ধ ও পবিত্র জীবন যাপন করে। খ্রিস্টপূর্ব ৯২০ অব্দে হযরত সোলায়মান (আঃ) এর রাজত্বের শেষ ছিল বনী ইসরাইলদের স্বর্ণযুগ।
ইহুদীর জাতির অধঃপতন
নবী সুলাইমান (আঃ) এর ইন্তেকালের পর থেকে ইহুদীদের অধঃপতনের সূচনা হয়। এ সময়ে তাদের মধ্যে অনেকগুলো ফিতনা অবস্থিত ইসরাইল রাষ্ট্রটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে উত্তর ও দক্ষিণের নাম হয় জুড়ী রাষ্ট্র।
তওরাতের সংকল্প ও অনুসরণের কারণে ইহুদী পুরোজাতিগণ সমাজে সম্মান ও নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত ছিল। পরবর্তীকালে তাদের ঈমান সমাজে দুর্বল যদিও শুরু হয়। ইহুদী পুরোহিতরা তাদের দ্বীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সংযোজন ও বিয়োজনের মাধ্যমে তাওরাতের পরিবর্তন ও বিকৃতি ঘটাতে শুরু করে। ফলে শুরু হয় তাদের অধঃপতন। নবী সুলাইমান (আঃ) এর পরবর্তী যে সব নবী ও ওলীগণ পুরোজাতিদের দুর্ব্যবহার প্রতিবাদ করতেন, প্রভাবশালি পুরোজাতিদের নির্দেশে ঐ সকল নবী ও আলেমদেরকে নির্বিচারে হত্যা করা হত- যাদের সংখ্যা দুই শতেরও বেশি ছিল।
আসলে ইহুদীরা বড় দুইটি নিকৃষ্ট গুণকে লালিত হয়। এর একটি হল মূর্খতার এবং অপরটি অহংকারকে অগ্রাধিকার পূর্ব বলে আখ্যায়িত করা। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা তওবার ৩০ নং আয়াতে বলেন, “এবং ইহুদীরা বলে ওযায়ের (ইযরা) আল্লাহর পুত্র এবং খ্রিস্টানরা বলে, মসীহ (ঈসা) আল্লাহর পুত্র।”
ওযায়ের ছিলেন ইহুদীদের মধ্যে তওরাত কিতাবের একজন আলেম ও হাফেজ। খৃষ্টপূর্ব ৭২২ অব্দে আসিরিয়দের হাতে পবিত্র জেরুজালেম নগরী ধ্বংস হওয়ার সময় তিনি নগরীর ধ্বংসস্তূপ দেখে বলেছিলেন, “আল্লাহ একে মরণের পর (ধ্বংসের পর) কিরূপে पुनर्जीवित করবেন?” এই উক্তির পর আল্লাহ তায়ালা ওযায়েরের মৃত্যু ঘটান এবং মৃত অবস্থায় একশত বছর থাকার পর আল্লাহ জীবিত করেন। আল্লাহ ওযায়েরকে জিজ্ঞাসা করেন, “মৃত অবস্থায় কতদিন ছিলে? জবাবে তিনি বলেন, একদিন বা একদিনের কিছু অংশ। তখন আল্লাহ বলেন, যত অবস্থায় সে একশত বছর ছিলে।” (আল কুরআন, সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৫৯)। পবিত্র জেরুজালেম নগরী ধ্বংসের সময় তওরাতও ধ্বংস হয়ে যায়। একশ বছর পর জীবিত হয়ে ওযায়ের জেরুজালেম নগরীকে পূর্বে অবস্থায় দেখতে পেয়ে এবং সম্পূর্ণ তওরাত কিতাব মুখস্থ পড়ে শোনান। এর ফলে ইসরাইলীরা ওযায়েরকে আল্লাহর পুত্র বলে আখ্যায়িত করে।
উপরোক্ত দুটি প্রধান শিরক এবং তওরাত কিতাব বিকৃতি সাধনের জন্য আল্লাহ তায়ালার ঘৃণা-প্রতিহিংসার কারণে ইহুদীরা অভিশপ্ত জাতিতে পরিণত হয়। এর ফলশ্রুতিতে বেবিলনের রাজা নেবুকাদনেজার (বখত নাসার) খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৬ অব্দে ইহুদীদের ফিলিস্তিন দখল করে নির্বিচারে ধ্বংসলীলা ও গণহত্যা চালায়। এ ঘটনার ইঙ্গিত পবিত্র কুরআনে রয়েছে। প্রায় পাঁচ ষাট হাজার ইহুদীকে নিজ মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করে এবং লাঞ্ছিত ও উদ্বাস্তু জীবন যাপন করতে থাকে। এদের বেশ কিছু সংখ্যক লোক ইউরোপের ইটালী, পোল্যান্ড, ও জার্মানিতে আশ্রয় নেয়। নাৎসী নেতা হিটলার অথবা অঙ্কলে ও পারস্যদেশে মদীনায় গিয়ে বসতি স্থাপন করে। তাদের অভিশপ্ত চরিত্রের কারণে যে লোক যেখানে আশ্রয় নিয়ে সেখানে বেশিদিন টিকতে পারতো না। বিশ্ববিখ্যাত কবি ও নাট্যকার সেক্সপিয়র তাঁর Merchant of Venice নাটকের শাইলক চরিত্রের মাধ্যমে ইহুদীদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলেছেন।
ইহুদীদের চরিত্র ও ভবিষ্যৎ জীবন সম্বন্ধে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ৬১ নং আয়াতে বলেন, “এবং তাদের অপকর্মের প্রতিফল স্বরূপ আল্লাহ কর্তৃক অভিশপ্ত জাতিতে পরিণত হল, যেহেতু তারা আল্লাহর আদেশ অমান্য করে, নবী রাসূলদের হত্যা করে চরমভাবে সীমা লংঘন করেছে।” তাদের এই লাঞ্ছনা-গঞ্জনা আর কোনদিন শেষ হবে না এবং কোন স্থায়ী মাতৃভূমি পাবে না বলে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে।
“অবশ্যই আল্লাহ পয়দা ইহুদীদের উপর এমন লোক পাঠাবে থাকেন যারা তাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তি দান করতে থাকবে। আর আমি তাদেরকে বিভক্ত, বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছি দেশয় রেখিতে সেঁপেচে (সূরা আ’রাফ, আয়াতঃ ১৬৭-১৬৮)।
তারা চিরদিন উদ্বাস্তু হিসাবেই থাকবে তবে শেষকালে তাদের ধ্বংসের প্রাক্কালে এক জায়গায় একত্রিত হওয়ার ঈঙ্গিত উল্লেখ আছে। কুরআন ও হাদীসের ভাষ্য মতে হযরত ঈসা (আঃ) এর পৃথিবীতে পুনর্জীবন প্রাপ্তির জন্য ইহুদী জাতির অস্তিত্ব চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এ বিশ্ব সংঘটিত কিছু সংখ্যক ঈসা (আঃ) এর আহবানে অনুসরণ করে মুসলিম হয়ে যাবে এবং অবশিষ্টাংশ ধ্বংস করে দেয়া হবে।
প্রায় আড়াই হাজার বছর উদ্বাস্তু ও লাঞ্ছিত জীবন যাপনের পর এই শতাব্দীতে এসে এক একত্রিত হওয়া (১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে) ইহুদী জাতির চূড়ান্ত ধ্বংসের আলামত বা পূর্বাভাস।
বনী ইসরাইল বা ইহুদীদের পতনের কারণ
একটি সার্বজনীন জিজ্ঞাসা এই যে, আল্লাহর নেয়ামত প্রাপ্ত বনী ইসরাইল জাতি কেন নেয়ামত ও নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হল? কুরআন ও হাদীসে এর কারণসমূহ বর্ণিত রয়েছে যা মুসলিম উম্মাহর জন্যও জ্ঞান আবশ্যক। এর বহুবিধ কারণের মধ্যে দুটি কারণ প্রধান। প্রথমঃ এরা जातिगतভাবে আত্মخواهী, অহংকারী, ধর্মদ্ধ ও প্রতিহিংসা উপকারী।
তারা নিজেদের সম্পর্কে মারাত্মক ভুল ধারণায় নিমগ্ন ছিল। সম্মানিত নবীদের বংশধর এবং পূণ্যবান লোকদের সঙ্গে তাদের নিকটতম সম্পর্ক থাকার জন্য আল্লাহর প্রেরিত জাতি গর্ববোধ করত। নিজেদেরকে অন্যান্যের চেয়ে অনেক সম্ভ্রান্ত ও সম্মানিত মনে করত। তাই তারা বিশ্বাস করত যে, অপরাধ করলে তাদের শাস্তি ভোগ করতে হবে না। দ্বিতীয়তঃ তাদের মধ্যে সবাই এই ধারণা পোষন করত যে, যেহেতু তারা বনী ইসরাইল সেহেতু দোযখের আগুন তাদের স্পর্শ করবে না। একদিন কোন কারণে যদি কাউকে দোযখের শাস্তি পেতেই হয় তবে তা কয়েকদিনের জন্য মাত্র। (আল কুরআন)।
এ জন্য তারা কোন অন্যায় অপরাধ করতে দ্বিধা করত না। ফলে তারা নিয়ামত থেকে বঞ্চিত ও নিজ মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে দেশ দেশে যাযাবর জীবনকারীদের মত ঘুরে বেড়ায়। এর প্রায় আড়াই হাজার বছর পর চলতি শতাব্দীতে খ্রিস্টান শক্তির সহায়তায় মুসলিম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র দখল করে ইসরাইল নামে একটি রাষ্ট্র গঠন করে যা জন্ম থেকেই বুকের উপর একটি অশান্তির বিষফোঁড়া হয়ে রয়েছে।
ইহুদীদের পথভ্রষ্টতার প্রত্যাখ্যান
ইহুদীরা নিজেদেরকে মূসা (আঃ) এর উম্মত (followers) বলে দাবী করে। শেষ নবী মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং পূর্বের নবী ঈসা (আঃ) কে তারা অস্বীকার করে। যদিও পূর্ব যুগের সকল নবী তাঁদের উম্মতদেরকে শেষ নবীর আগমনের কথা বলতেন এবং ঐ কিতাবসমূহে তার উল্লেখ ছিল। তওরাত ও ইঞ্জিলেও মুহাম্মদ (সা) এর আগমনের কথা তাঁর নাম-ধামসহ উল্লেখ ছিল। হযরত মূসা (আঃ) এর ইন্তেকালের পর হযরত দাউদ (সাঃ) ও সুলাইমান (আঃ) এর রাজত্বকালে বনী ইসরাইলগণ প্রতিশ্রুত ভূম ফিলিস্তিনে একত্রে এবং সুখ ও সমৃদ্ধ জীবন যাপন করে। এরপর তাদের মধ্যে জাতিগত বর্ষিত ও অপরাধ প্রবণতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। কোন নবী বা ধর্ম প্রচারকের উপদেশ তাদের কাছে অসহ্য ছিল। তাই তারা নবীদেরকে পর্যন্ত হত্যা করতে দ্বিধা করত না। এই নাজুক পরিস্থিতিতে আল্লাহ তায়ালা তাদের মধ্যে নবী প্রতি তাঁর প্রতি ঈমান আনার জন্য হযরত ঈসা (আঃ) কে প্রেরণ করেন যাতে পুনরায় মরে গিয়ে মানুষ सृজন করেন তওবা বা অলৌকিক শক্তি দান করেন এবং প্রচলিত ধর্মগ্রন্থ থেকে সেই সাথে তওরাত কিতাবের সংস্করণ সংরক্ষণ করে ঈপ্সিত ছিল (Bible) কিতাব দান করেন। কিন্তু তওরাত কিতাবের প্রতি লোক ঈমান আনবে। তওরাত তারা তাঁকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র আঁটে। আল্লাহর কুদরতে তারা ঈসা (আঃ) সম্বন্ধে তাদেরকে যুক্তি করে বিশ্ব করেন ঈসা (আঃ) আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় চতুর্থ আসমানে গমন করেন এবং পরবর্তীতে পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছেন।
নবী হযরত ঈসা (আঃ) এর অন্তর্ধানের পর বনী ইসরাইলদের অধিকাংশ লোক প্রাচীন বাইবেল (Old testament) বা তওরাতের অনুসারীই থেকে যায়, ধ্রুবতর অথবা যথা নিয়ম ইঞ্জিল (Bible) এর অনুসারী হয়। উল্লেখ্য তওরাতের অনুসারীদেরকে ইহুদী ও বাইবেল বা ইঞ্জিলের অনুসারীদেরকে নাসারা বা খ্রিস্টান বলা হয়। এই উভয় দলই তওরাত ও ইঞ্জিলের শিক্ষাকে বিকৃত করে ধর্মের নামে গোমরাহ রাজত্ব কায়েম করে।
অবশেষে এই গোমরাহ ও জুলুমের নাগপাশ থেকে বিশ্ব মানবতাকে উদ্ধার করার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শেষ নবী মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করেন। পূর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাবের সারসংক্ষেপ হিসেবে কুরআন নাযিল করেন যা মানব জাতির প্রতি আল্লাহ তায়ালার সর্বশেষ ও চিরস্থায়ী গাইড বুক।
ইহুদীরা তাদের ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত শেষ নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর আগমনের প্রতীক্ষায় থাকত। তারা মনে করত শেষ নবীর আগমনে তাদের হাজার বছরের দুঃখ-দুর্দশা, লাঞ্ছনা-গঞ্জেনার অবসান হবে।
কিন্তু তারা যখন দেখল, শেষ নবী তাদের বংশ জন ছাড়া অন্য বংশে জন্মগ্রহণ করেছেন তখন তারা তাঁকে মেনে নেয়া প্রত্যাখ্যান করে। ঈসা (আঃ) কে হওয়ার জন্য ইহুদীরা নানা রকম ষড়যন্ত্র করে। তাঁর বিরুদ্ধে বহু যুদ্ধ করে। এমনকি বিশ্ব মিলিয়ে তাঁকে হত্যার চেষ্টা করে কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় তাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। অবশ্য ইহুদীদের মধ্যে থেকে কিছু সংখ্যক সত্য সন্ধানী লোক ইসলাম গ্রহণ করেন।
ইহুদীর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ
প্রায় আড়াই হাজার বছর ধরে উদ্বাস্তু জীবন যাপনের পর বর্তমান শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে তারা একজোট হয়ে একটি রাষ্ট্র গঠন করেছে। বিশ্বের বৃহৎ শক্তিবর্গের সহায়তায় তারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে জবর দখল করে ইসরাইল নামক একটি আশ্রিত রাষ্ট্র গঠন করে। গোটা বিশ্বে ইহুদীদের সংখ্যা এক কোটি বিশ লাখের মত। এই অল্প সংখ্যক লোকের একটি মাত্র দেশ ইসরাইল। অন্যের আশ্রয় ছাড়া একদিনও এদের টিকে থাকার শক্তি নেই। অথচ এই রাষ্ট্রটিকে দেখেই বর্তমান বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতার মিল করার কারণ। হতে পারে এদের কারণেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হবে। বলাই বাহুল্য তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হলে তা হবে মারাত্মক এবং বর্তমান বিশ্ব সভ্যতার ধ্বংসও হয়ে যেতে পারে।
ফিলিস্তিন মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদী এই তিন প্রধান ঐশী ধর্মাবলম্বীর নিকটেই পবিত্র স্থান। ফিলিস্তিন ভূখন্ডটি এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা এই তিন মহাদেশের সংযোগস্থলে অবস্থিত। ফলে এর ভৌগলিক গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাচীন কালে নবী ও রাসূলগণ ফিলিস্তিনে ভূখণ্ডে এসে ধর্ম প্রচার করতেন।
পবিত্র জেরুজালেম নগরী ফিলিস্তিনে অবস্থিত। এই নগরে অবস্থিত পবিত্র রাসূল মাকদাস বা মসজিদুল আকসা। এ নগরটি ইহুদী বা বনী ইসরাইলদের নিকট পবিত্র হবার কারণ হল হযরত সোলাইমান (আঃ) কর্তৃক নির্মিত বায়তুল মাকদাস তাদের নিকট পবিত্র মসজিদ। এই নগরে আরো অবস্থিত হযরত হযরত ঈসা (আঃ) এর জন্ম। খ্রিস্টানদের নিকটও এই নগর অতি সম্মানিত। মুসলমানদের নিকট এ নগর পবিত্র হওয়ার কারণ হল কাবার পূর্বে পবিত্র মসজিদুল আকসা ছিল মুসলমানদের কেবলা। মিরাজের রাত্রে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এই মসজিদে এসে সকল নবীর সঙ্গে একত্রে নামাজ পড়েন। সুতরাং ইহুদী, খ্রিস্টান ও মুসলিম তিনটি ঐশী ধর্মাবলম্বীর কাছেই জেরুজালেম একটি গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র স্থান।
ইহদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর আমি তাদেরকে (ইহুদীদেরকে) বিভক্ত ও বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছি দেশয় বিভিন্ন প্রান্তে” (সূরা আ’রাফ, আয়াতঃ১৬৮)।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত ইহুদীরা ফিলিস্তিনে তাদের হত ভূমি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী ইয়াহুদী ইজম্ বা আন্দোলন শুরু করে তাকে ইহুদী জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বা Zionism বলে। অস্ট্রিয়ায় বসবাসরত থিওডর হারজল এ আন্দোলনের আহ্বায়ক ও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত মাস্ সুহরাযলালের রাসেল শহরে প্রথমবারে মত ইহুদী সম্মেলন ডেকে আন্দোলনের কর্মসূচী প্রণয়ন করেন।
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় হিটলার বই ইহুদীর হত্যা করে। ফলে ইহুদীরা দলে দলে আমেরিকা মহাদেশে আশ্রয় নেয়। তারা ১৯৪২ সনে নিউইয়র্ক শহরে এক সম্মেলন ডেকে ফিলিস্তিনে একটি ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানায়। এরপর ১৯৪৭ সনের ১৫ই মে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ এ ম্যান্ডেট ইহুদী ফিলিস্তিনী মুসলমানদেরকে বিতাড়িত করে সেখানে জোরপূর্বক ইহুদী রাষ্ট্র ঘোষণা করে। বৃটেনের যুদ্ধাহ্বায় ইহুদীরা বিভিন্ন দেশ থেকে ফিলিস্তিনে অনুপ্রবেশ করতে থাকে। এদিকে ইহুদী অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম বাংলার প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ফলে মুসলিম ও ইহুদীদের মধ্যে ব্যাপক দাঙ্গা হাঙ্গামা চলতে থাকে।
বৃটিশ সরকার ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগ্রাম এত গোলযোগ হওয়ার ফলে ব্রিটিশ জাতিসহ জাতিসংঘের জরুরি অধিবেশন ঢাকায় আহ্বান জানায়। পরবর্তীতে জাতিসংঘ ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কেইক বার্নাডকে কে (Count Folke Barnadatte) সালিশ নিযুক্ত করে। জাতিসংঘের নির্দেশ ফিলিস্তিনে সালিস হিসেবে নিযুক্ত হয়ে তিনি তার প্রতিবেদন পেশ করেন। এই প্রতিবেদন ইহুদীদের মনঃপূত না হওয়ায় তারা জাতিসংঘের সালিশকে ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ই জুলাই জেরুজালেমে হত্যা করে।
১৯৪৮ সালে ইসরাইল নামক ইহুদী রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার পর আরব দেশগুলোর সাথে তাদের তিনটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ইহুদী ফিলিস্তিন ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দেশ মিশর, সিরিয়া, জর্ডান ও লেবাননের কিছু অংশ দখল করে। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে প্রথম যুদ্ধে আরবরা জয়ী হলেও পরবর্তী ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে ২১শে মে অনুষ্ঠিত দেয়াল ও ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে তৈরি এই ইসরাইল যুদ্ধে ইসরাইলের বিজয়ের মূলে ছিল দেশীয় পারমাণবিক অস্ত্র। যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ইসরাইলে ১০ টি পারমাণবিক বোমা প্রস্তুত করে রেখেছিল। প্রতিটি বোমার ক্ষমতা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে নিক্ষিপ্ত বোমার সমান। পরিকল্পনা ছিল যুদ্ধের গতি অনুসারে এগুলো গেলে ইসরাইলে পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করব। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে ৬ ই অক্টোবর মিশর ও সিরিয়া একযোগে ইসরাইলে হামলা চালায়। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা প্রতিপক্ষী ভেঙ্গে পড়ে। ৮ই অক্টোবর ইসরাইলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মিসেস গোল্ডেমেয়ার ও তার মন্ত্রীসভা পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তদানিন্তন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারকে এ সিদ্ধান্ত জানানো হলে তার বিমান যোগে দ্রুত ইসরাইলে ব্যাপক সামরিক সাহায্য প্রেরণ করে। যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। মার্কিন সামরিক সাহায্যের প্রাধান্য দিয়ে গিয়ে তদানীন্তন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বলেন, ইসরাইল পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। এ থেকে বিরত রাখার জন্য তাকে সামরিক সাহায্য দেয়া হয়।
ইয়াহেব ইসরাইল যদি পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করতো তাহলে সিরিয়া ও মিশরে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকির ভাগ বরণ করতে হতো। লক্ষ কোটি মুসলমানের প্রাণ হানি ঘটত।
ক্ষুদ্র জনসংখ্যায় ক্ষুদ্র দেশ ইসরাইল। আয়তনে বাংলাদেশের চেয়ে ছোট হলেও পারমাণবিক শক্তি হিসেবে ভারতে ও পাকিস্তানের অগ্রগামী। ষাটের দশকেই দেশটি পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হয়। ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠালগ্নে থেকেই তারা বুঝতে পেরেছিল যে, চারদিকে আরব শক্তি পরিবেষ্টিত অবস্থায় পারমাণবিক বোমাই হচ্ছে রাষ্ট্র হিসেবে তাদের টিকে থাকার গ্যারান্টী। এজন্য শুরু থেকেই তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টায় রত হয়। ইহুদীরা তথ্য-চুরির অধিকারী। বিভিন্ন দেশ থেকে বহু মেধাবী বিজ্ঞানী ইহুদীকে দেশে বসতি স্থাপন করে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন আলবার্ট ডেভিড বার্ম্যান, যিনি ইসরাইলের পারমাণবিক বোমার জনক। নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত বিজ্ঞানীদের মধ্যে বহু সংখ্যক ইহুদী বিজ্ঞানী রয়েছে। এ সংখ্যা অন্য যে কোন জাতির তুলনায় অনেক বেশি।
ইসরাইল পারমাণবিক বোমার জোরে আরবরা বিরুদ্ধে অন্তত দুটি যুদ্ধে জয়লাভ করেছে। মুসলিম দেশ ইরাকের পারমাণবিক স্থাপনা উড়িয়ে দিয়েছে। নারী শিশুসহ মুসলমানদেরকে রক্তে প্রতিদিন আবৃত্তি করে রেখেছে। দম্ভ ভরে ঘোষণা দিয়ে ফিলিস্তিন মুসলিম নেতাদেরকে হত্যা করছে। সম্প্রতি শীর্ষ হামাস নেতা আব্দুল আজিজ রানতিসি সহ প্রতিজ্ঞা প্রতিষ্ঠা নেতা শেখ আহমদ ইয়াসিনকে বোমা মেরে হত্যা করেছে। ফিলিস্তিন মুসলমানদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়ে বসতি থেকে উৎখাত করছে। আর তাদের সমস্ত উপকরণ গোপন দিকে তথাকথিত গণতন্ত্র ও মানবাধিকার দেবতা আমেরিকা, ফ্রান্স, নরওয়ে প্রভৃতি দেশ। এদের আর্শিবাদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যা কিনা বিশ্বের সেই শুভ হওয়া হওয়ার জন্যেই যুদ্ধ দেশ ইসরাইল পারমাণবিক শক্তির অধিকারী। যা কিনা কুরআনের উপরোক্ত আয়াতে বর্ণিত ভবিষ্যদ্বাণীর সুস্পষ্ট প্রমাণ।
সেই সাথে আমরা এই ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি যে দিন পৃথিবীর বুক থেকে অশান্তির দুষ্টক্ষত ইহুদী জাতি চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তাদের দেশের পুরস্কৃতও। মানবতা কল্যাণ ও মুক্তি জন্য মুসলমানের বিজয় অনিবার্য। ইতিহাস সাক্ষী একমাত্র মুসলমানের রাজত্ব ও স্বর্ণযুগেই দিকে দিকে শান্তিরাস প্রবাহিত হয়েছে, অন্যারে রাজত্বে নয়। বর্তমান পারমাণবিক আমেরিকা ও পূর্ব যুগের পরাশক্তি রোম, পারস্য, ফেরাউন, চেঙ্গিস খান, বাবর নাম, নম্রুদ গৌয়ী মানব জাতিকে শুধু বর্বরতা, অশান্তি, অত্যাচার আর পাশবিকতাই উপহার দিয়েছে। সে যুগের ফেরাউনের পাশবিক নির্যাতন আর এ যুগের ইরাকে আবু গায়িব কারাগারে কিংবা গুয়ান্তানামো বে এর পাশবিক নির্যাতন যে সভ্যতার জ্বলন্ত প্রমাণ। মুসলমানের শাসনামলে এমন অত্যাচারের প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। নিজেরা অন্তত থেকে মুসলমানরা বশীকরণ দ্বারা দিয়েছে। হযরত উমর (রাঃ) এর শাসনামলে ইউরোপের দেশগুলো যখন থেকে আরব জয় করে চলেছে, তখন বিভিন্ন দেশের অধিবাসীরা মুসলমানকে শান্তি ও মুক্তির দূত হিসেবে বরণ করে নিয়েছে। তদানীন্তন বিশ্বের সর্বাহইতে ক্ষমতার ব্যক্তি হযরত উমর (রাঃ) এর গায়ে তখন ১২ টি তালিযুক্ত পোশাক। ইতিহাস সাক্ষী! হযরত উমর (রাঃ) এর নির্দেশে যখন মিশরের গভর্ণর আবু উবাইদাহ্ তার লোকবল নিয়ে মিশর ছেড়ে আসেন তখন মিশরবাসীরা ক্রন্দনরতা এবং তারা তাদের তালিকা ধরে ধরে ফিরিয়ে দেন। কী বিরাট মহানুভবতা! একি মানুষ না ফেরেশতার কাজ! তৎকালীন মিশরবাসী অমুসলিমরা অবস্থিত নয়ন মুসলমানের বিদায় দেয়। মানবতার সেই সুদিম আবার ফিরে আসবে। মুসলমানের আবার বিজয় রথে বিজয় হবে। তবে এজন্য যুদ্ধত হিসেবে জাতিতে হবে। তাদের তেমন শক্তি অর্জন করতে হবে। তাদেরকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। তখেই মুসলমান জাতি আবার তাদের হারানো গৌরব ফিরে পাবে। কড়া নাজবুল ইসলামের ভাষায়ঃ
দিকে দিকে পুনঃজাগিয়া উঠিছে
দ্বীন ইসলাম লাল মশাল
ওর বেপথব তুইও ওঠ জেগে
তুইও তোর প্রাণ প্রদীপ জাল।
সুতরাং কুরআনে বর্ণিত এই ভবিষ্যদ্বাণী হাজার হাজার বছর ধরে সত্য হয়ে রয়েছে, এতে সন্দেহ নেই।
📄 পঞ্চম পর্যায়ে পুনরায় বিশ্বে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে
এই ভবিষ্যদ্বাণী সম্বলিত আরও হাদীস মুসলিম, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ প্রভৃতি হাদীস গ্রন্থে রয়েছে। তার একটি উদ্ধৃতি এখানে দেওয়া হলঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের দ্বীনের সূচনা নবুওয়াত ও রাহমাত থেকে। আল্লাহ যতদিন চাইবেন একে অক্ষুণ্ণ রাখবেন। তারপর নবুয়াতের অনুসারে খেলাফত চলবে যতদিন তিনি চাইবেন। আল্লাহর ইচ্ছায় এটারও অবসান হবে। তারপর শুরু হবে রাজতন্ত্র। তারপর তা থাকবে যতদিন আল্লাহ চাইবেন। যেদিন আল্লাহ চাইবেন ততদিন তা চলবে। তারপর আল্লাহ তায়ালা তার অবসান ঘটাবেন। অতঃপর নবুয়াতের পদ্ধতির নেই খেলাফত ও প্রতিষ্ঠিত হবে-যা মানুষের মধ্যে ন্যায় যত অনুযায়ী শাসন করবে এবং জমীনে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে। এ শাসন ব্যবস্থা আসমানবাসীও খুশি হবে এবং দুনিয়াবাসীও। আসমান প্রাণ খুলে তার বরকত সমূহ বর্ষণ করতে থাকবে এবং জমীন তার গর্ভস্থ সবকিছু বাইরে নিক্ষেপ করবে। (সিরাতে সরওয়ারে আলম)
উক্ত হাদীসে মিল্লাতের (মুসলিম জাতির) পাঁচটি পর্যায়ের কথা বলা হয়েছে। এর তিনটি পর্যায় ইতিমধ্যেই অতীত হয়েছে। প্রথম পর্যায় রাসূলুল্লাহ (সা) এর নেতৃত্বে নবুয়াতের ভিত্তিতে খেলাফত পরিচালিত হয়েছে ১০ বছর- অর্থাৎ ৬২২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। রাসূলুল্লাহ (সা) এর ইন্তিকালের পর ইসলামী খেলাফতের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয় খুলাফায়ে রাশেদার নেতৃত্বে। তাঁরা নবুয়াতের অনুসারে পরিপূর্ণ ইসলামী খেলাফত পরিচালনা করেন ৩০ বছর। এর পর তৃতীয় পর্যায়-এ শুরু হয় রাজতন্ত্র। বর্তমানে চতুর্থ পর্যায় বা অত্যাচারী শাসকদের যুগ চলছে। অবশেষে পঞ্চম পর্যায়ে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার যে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে তা অবশ্যই সত্য হবে। আমরা তা দেখার অপেক্ষায় আছি।
📄 মুসলমানগণ অমুসলিমদের কাছে পরাজিত ও লাঞ্ছিত হবে
খাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “অদূর ভবিষ্যতে অন্য জাতির লোকেরা তোমাদের উপর বিজয়ী হবে, যেমন ক্ষুধার্ত লোকেরা সববেতভাবে বড় পাত্রের দিকে এগিয়ে আসে”। তখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, আমাদের সংখ্যা কি তখন কম হবে? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, “না, বরং সে সময় তোমরা সংখ্যায় অনেক হবে। কিন্তু তোমাদের অবস্থা হবে সমুদ্রের ফেনার মত, আল্লাহ তখন তোমাদের শত্রুদের ভেতর থেকে তোমাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি দূর করে দিবেন এবং তোমাদের অন্তরে দুর্বলতা সৃষ্টি করে দিবেন।” তখন জনৈক সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ), দুর্বলতার সৃষ্টি কেন হবে?” তিনি বললেন, “দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা এবং মৃত্যু ভয় করার জন্য।” (আবু দাউদ- ৪২৪৭, কিতাবুল মালাহিন; বায়হাকী)
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি খাওবান (রাঃ) কে লক্ষ্য করে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, “কে খাওবান! যখন অন্য জাতির লোকেরা তোমাদেরকে আক্রমণ করার জন্য একে অপরকে আহ্বান করবে, যেমন করে লোকেরা একেই পাত্রের কাছে আমার জন্য ও সেখান থেকে খাওয়ার জন্য একে অপরকে আহ্বান করে, তখন তুমি কি করবে ?” খাওবান বলেন, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক। এটা কি এমন যে, আমরা সংখ্যায় কম হব? নবী (সাঃ) বললেন, “না, সেদিন তোমরা সংখ্যায় হবে অনেক, কিন্তু আল্লাহ সে সময় তোমাদের অন্তরে দুর্বলতা সৃষ্টি করে দিবেন”। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! সে দুর্বলতাটি কি? তিনি বললেন, “এই দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা এবং যুদ্ধ করতে অপছন্দ করা।” (আহমাদ-২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩৮৯)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা যখন বেচাকেনা করবে, গাভীর লেজ ধরে থাকবে, চাষাবাদে লেগে যাবে এবং জিহাদ পরিত্যাগ করবে, আল্লাহ তখন তোমাদের উপর অপমান চাপিয়ে দিবেন এবং তা তোমাদের থেকে তাড়াতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা নিজেদের দিকে প্রত্যাবর্তন করো”। (আহমাদ; আবু দাউদ; হাকেম)
মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সময়ে (সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমদিকে) এই ভবিষ্যদ্বাণী রাজত্ব করেছিলেন সে সময়ে বিষয়টি ছিল কল্পনাतीत। মুসলিম জাতি তখন উদীয়মান শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। ইসলাম ও মুসলিম জাতি তখন অগ্রগামী। মিথ্যা ও অন্ধকারের পাহাড় ভেদ করে সত্যের আলোর জয়গান। সারা সমাজ, সভ্যতা বিভক্তিতে আর মিথ্যা তো বিতাড়িত হবেই।
ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগে মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পারস্যবিচারের ধ্বংস থেকে নির্যাতিত মানবতাকে মুক্ত করে আনলেন। শুধু দুই পারসিককে বিতাড়িত করে ক্ষান্ত হননি। পূর্বেই ঘোষণা দেন লাইন, “কেসরা ধ্বংস হবে এর পর আর কোন কেসরার জন্ম হবে না।” সপ্তদশ শতাব্দী থেকে কেসরার পতনের ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইতিহাসে এক নবযুগ তৈরি হয়। সৌন্দর্য-বীর্যে, জ্ঞানে বিজ্ঞানে, সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে মুসলিমরা গোটা বিশ্বের নেতৃত্বে আসনে অধিষ্ঠিত ছিল। মুসলিম জাতির মত এরূপ নিরঙ্কুশ ক্ষমতা, প্রতিষ্ঠা ও কর্তৃত্ব আর কোন জাতি কখনো অর্জন করতে পারেনি। ইতিহাস সাক্ষী, এ কৃতিত্ব একমাত্র মুসলিম জাতির।
১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে স্পেনে খ্রিস্টান শক্তির কাছে মুসলমানদের পরাজয় বরণ করে। আর তখন থেকেই শুরু হয় এই ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হওয়ার পালা-যা ছিল মুসলিম জাতির জন্য চরম বেদনাদায়ক। এ অবস্থা চলতে থাকবে যদ্দিন মুসলিম জাতি বিশ্বের বুকে পুনরায় বিজয়ী হবার পূর্ব পর্যন্ত। মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যা বলেছেন তা কখনও ভ্রান্তি হবে না, শান্তি হবেও না কখনো।
মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী এখন মুসলিম জাতিকে চরম লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের নিষ্পেষিত হতে হচ্ছে। শত শত বছর ধরে মুসলিম জাতি অমুসলিমদের হাতে কত যে নির্যাতিত হয়েছে তা বর্ণনাতীত। কেবল বিগত দুই দশকে অমুসলিমদের হাতে বহু সংখ্যক মুসলিম নারী পুরুষ নির্যাতিত ও নিহত হয়েছে তার শত শত প্রমাণ বিদ্যমান। অসহায় মুসলিমও কখনো কখনো মুসলিমদেরকে নিয়ে নির্যাতিত হয়নি। বিগত কয়েক দশকে বিশ্ব ব্যাপী মুসলিম নির্যাতনের কিছু বর্ণনা এখানে দেওয়া হলঃ
১৯৯২-৯৫ পর্যন্ত বসনিয়ায় খ্রিস্টানদের দ্বারা দুই লক্ষাধিক মুসলিম নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। আট লক্ষাধিক মুসলিমকে পুরোপুরি বা আংশিক পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়। লক্ষাধিক মুসলিম বালিকা ও নারীকে পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণ করা হয়। প্রায় ৩০০ মসজিদ ধ্বংস করা হয়। বিশ্বের প্রায় ১৫০ কোটি মুসলমান তখন ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন' পাঠ ছাড়া আর কি করতে পেরেছে? ভারতের গুজরাটে, আহমেদাবাদে নিরপেক্ষ সূত্র মতে এ পর্যন্ত দুই লক্ষাধিক মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছে। যাদের বেশির ভাগকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। ধ্বংস করা হয়েছে ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদ সহ ১৮০ টি মসজিদ এবং ২৪০ টির মতো দরগাহ।
মধ্যপ্রাচ্যের ফিলিস্তিনে মুসলমানদেরকে উপর ইহুদী অপশক্তির অকথ্য নির্যাতন অর্ধশতাব্দীর অধিক কাল ধরে বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করছে।
‘News week’ লিখেছে, চেচনিয়াতে ১৯৮৪ সালে রুশ নেতা স্টালিন ৫ লক্ষেরও বেশি চেচেন মুসলিম নাগরিককে সাইবেরিয়ায় নির্বাসিত করে। তাদের ধারাবাহিক জ্বালিয়ে দেয়।
গত দশকে রাশিয়ান বাহিনী প্রায় ১ লক্ষ চেচেন মুসলিমকে হত্যা করে। ১ লক্ষ লোক নির্বাসিত করে এবং দেশটির এক এক তৃতীয়াংশকে পরিতেসিত ও উর্বরভূমিতে পরিণত করা হয়। (News Week, 11 Nov.02, Page-13)
আফগানিস্তান ইরাক, চীন, ফিলিপাইন, কাশ্মীর সহ বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই আজ উগ্র খ্রিস্টান মুসলিমদেরকে পুরোপুরি ধ্বংস করার প্রাণ। মুসলমানদের মান সম্মান, সহায় সম্পদ সবই আজ নগ্ন হিংস্রতার শিকার। তাদের আর্তনাদ আর হাহাকারে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত। যে পবিত্র ভূমিতে আমাদের প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রথম ইসলামের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন সেই পুণ্যভূমি মক্কা মদীনায় আজ নাপাক শক্তির অশুভ পদচারণ।
ইসলাম ও মুসলমানদের উপর অমুসলিম জাতির বিজয় ও কর্তৃত্বের কারণ কি? উল্লেখিত তিনটি হাদীসে মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কারণ বলে দিয়েছেন। হাদীসগুলো আমাদের গুরুত্ব দিয়ে পাঠ করা উচিত। ভেবে দেখা দরকার এখন কি মুসলমানদের উপর সেই অভিশাপ চলছে না যার ভবিষ্যদ্বাণী আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে আমাদের নবীজী (সাঃ) করে গিয়েছিলেন?
যে মুসলিম জাতি অর্ধেক হেলার হেলান সব জাতিকে একদা উঁচুতে বসতে হতো সেই শানকে জাতি আজ অন্যান্য জাতির খেলার পুতুলে পরিণত হয়েছে। সাহাবীদের যুগে তাদের ভাগ্যে কোন চিত্ত কল্পনাতীত ছিল। কারণে মুসলিমের কিছু সংখ্যক সাহাবী যেভাবে প্রতিরোধি গঠনে বিশ্ব জয় করে চলেছেন সে সময়ে তাঁরা কিভাবে মুসলিম জাতির এ করুণ অবস্থার কথা কল্পনা করতে পারেন। তাই তারা নবীজীকে জিজ্ঞাসা করলেন, “মুসলমানদের এ অবস্থা তাদের বংশের হবে কবে?”
এ জিজ্ঞাসার জবাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রকৃত কারণ উপরোক্ত হাদীস তিনটিতে বর্ণনা করেছেন এবং এর পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ লাভের উপায়ও বলে দিয়েছেন।
বর্তমান বিশ্বে মুসলমানদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, উপরোক্ত হাদীসগুলোতে বর্ণিত অবস্থার সাথে বর্তমানের মুসলিমদের অবস্থার হুবহু মিল যাচ্ছে। এবং একটা মিল এর সাথে কখনো কখনো বলা হয় না। বর্তমানে মুসলমানদের স্বভাব-চরিত্র এবং সামগ্রিক দুরবস্থা ঠিক উল্লিখিত হাদীসগুলোর আলোকে বিশ্লেষণ করা দরকার।
অমুসলিম সমর বিশেষজ্ঞরা পর্যন্ত মুসলমানদের পরাজয়ের পেছনে কারণ বর্ণনায় নিজেদের অজ্ঞাতে নয়। এর কথাই প্রতিধ্বনি করেছেন Lawrence D. Higgins নামক একজন মার্কিন বিশেষজ্ঞ তার Military decline of Ottoman Empire শিরোণামে লিখেছেন “ Under the first ten Sultans, the Ottoman Turkeys had been an aggressive military power, open to technological innovation and improvement... the elite of the Ottoman army dominated the battlefield. Turkish general were the equal of the best Austrian, Spanish and French Commanders. The Sultan himself commanded his armies in the field. By 1650 Turkish Weapons were outmoded. Within the ... corps, corruption and nepotism were rife. Instead of seeking battle, the janissaries sought comfort, wealth and political influence. Not only did they occasionally make and unmake sultans, they also blocked all attempts to reform and modernize the army. At the very -time the Austrian and Russian military strength increased, Turkish military strength declined ... ” ( - Brassey's Encyclopedia of military History and Biography, (Edited by- Frankin D. Margiotta, 1994, P#752)
বস্তুত দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা, যুদ্ধের প্রতি অনীহা এবং মৃত্যু ভয় আমাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে করলে অলস ও কাপুরুষ, আর আধ্যাত্মিকভাবে আমাদেরকে করেছে অসুস্থ। বিভিন্ন ধরনের যেমন পুষ্টিকর ও উন্নত খাবারের প্রতি অনীহা, তেমনিই আমাদের অন্তরে ইবাদতের কষ্ট সহ্য করা বা ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য ত্যাগ স্বীকার করা এবং কিতাল (শস্ত্র সংগ্রাম) করার মত সুউচ্চ মর্যাদা দানকারী, প্রভাব-প্রতিপত্তি দানকারী, শক্তিশালী আমলের প্রতিও রয়েছে সীমাহীন অনীহা। আজ অসুস্থ হবার কারণে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে গিয়েছি যার কারণে আজ আমরা অন্যায়, অবিচার ও জুলুম-নির্যাতনের প্রতিরোধ করা তো দূরের কথা প্রতিবাদের ভাষাও ভুলে গেছি। আমাদের অন্তরে এখনো যতটুকু ধর্মভাব আছে তার ফলতোহীন চেষ্টা তিনি টিকেই আছে। আমাদের ঈমানের আজ এমনই দুরবস্থা যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কথা যা বিশ্বাস করা কুফরি, যার সত্যতার সন্দেহ প্রকাশ করা কুফরি- তাতেও ঠিকমত ভরসা করতে পারি না।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ৮২ হাজার সদস্যের বাহিনী কখনও সংখ্যালঘুদের কারণে পরাজিত হবে না।” (তিরমিজি, আবু দাউদ; আহমাদ)
আমরা ভুলে গেছি, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশ, “তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করবে যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ করে। এবং জেনে রাখ, আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন”। (আত-তওবাঃ ৩৬)
এখন মুশরিকী বলতে কী বুঝি? সাধারণভাবে পূজা পাঠ আমাদের রোজগারের অর্থ বাকি থাকে। কিন্তু তার শাস্ত্রগত হুবহু আমার অনেককেই নেই। মুশরিকী বলতে সে সকল লোকদেরকেই বুঝায় যারা আল্লাহর ভয় এবং তাঁর সন্তুষ্টির আশায় তাঁর যাবতীয় আদেশ ও নিষেধ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রদর্শিত পথ ও পদ্ধতি অনুসারে মেনে চলেন। এ হিসেবে, আয়াতে নির্দেশ হলো, ‘সর্বাত্মক ভাবে যুদ্ধ করা’- আল্লাহর এ নির্দেশটি যদি আমরা পালন না করি, তাহলে আমরা মুশরিকী হতে পারব কি? আর মুশরিকী না হলে উল্লিখিত আয়াত অনুসারে আল্লাহ কি আমাদের সাথে থাকবেন?
মুসলমান যে আল্লাহ তা'আলার প্রিয় এ কথা খুব সত্য। সেই সাথে একথাও সত্য যে, আল্লাহ তা'আলা তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকে কখনো লাঞ্ছিত ও অপমানিত করেন না। তাহলে আমরা মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও আজ নানা ভাবে লাঞ্ছিত ও অপমানিত কেন হচ্ছি? তাহলে নিশ্চয়ই আমাদের মুসলমান হবার দাবীতে কোথাও আজ গলদ আছে। আমাদের নাম সরকার দপ্তরে মুসলমান হিসেবে লিখিত আছে, কিন্তু সেই সরকার দপ্তরের সার্টিফিকেট অনুসারে আল্লাহর দপ্তরেও বর্ণিত হয় না। আল্লাহ তা'আলার নিজস্ব দপ্তর রয়েছে- তা আমাদের সরকারি দপ্তর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দপ্তরে আমাদের নাম তার অনুগত বান্দাদের তালিকায় লিখিত আছে না কি অবাধ্য বান্দাদের তালিকায় লিখিত আছে- তা একবার আমাদের খোঁজ করা দরকার।
আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবী (সাঃ) এর মারফত আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন পথের দিশা, নির্দিষ্টকরেছেন হওয়ার উপায় ও নিয়ম-কানুন। জানিয়ে দিয়েছেন আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের প্রধান-প্রভাব-প্রতিপত্তি লাভ করার পথ ও পদ্ধতি। যে কাজ মানুষকে দুনিয়া ও আখিরাতে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করে, আল্লাহ তায়ালা নবী (সাঃ) মারফত তার সবই আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর দেখানো পথ ছেড়ে দিয়ে চলছি অথচ আশা করছি যে মুসলমান হবার উপায়-উপকরণ ও নিয়ম-কানুন জেনে নিয়ে তা আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে সবচে চর্চা এবং বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছি? আখিরাতের প্রধান-প্রতিপত্তি ও সাফল্য লাভ করার পথ ও পদ্ধতিকে কি অনুসরণ করছি? যে সব কাজ মানুষকে দুনিয়া ও আখিরাতে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করে সে সব কাজ কি আমরা ত্যাগ করেছি? দুনিয়া ও আখিরাতে অপমানিত ও অপদস্থ হয়ে কি ফল ভোগ করছি- পরকালেও কি আমরা সে রকম অপমানিত ও অপদস্থ হব না? আমাদের এই বর্তমান মুসলমানিত্ব আমাদেরকে রক্ষা করতে পারবে কি?
আমাদের অন্তরের উপর চিন্তা করা উচিত যে, আমরা কেন আজ আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হচ্ছি? কেন আজ চারিদিক হতে আমাদের উপর এ বিপদ-আপদ এসে পড়ছে? কেন আজ আল্লাহর বান্দা হিসেবে আমরা যাদেরকে মনে করি, তারা সকল ক্ষেত্রে আমাদের উপর বিজয়ী?
মিরদাস আসলামী (রাঃ) বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “নেককার লোকেরা ক্রমান্বয়ে মৃত্যুবরণ করবেন। আর বাকী লোকেরা যব অথবা খেজুরের আবর্জনা অনুযায়ী অংশ হিসেবে বেঁচে থাকবে। আল্লাহ তায়ালা এদের প্রতি ভ্রুক্ষেপও করবেন না।” (বুখারী, কিতাবুল রেমাম)
প্রিয় নবী (সাঃ) দুষ্টকর্মীদেরকে যবের ভূষি ও খেজুরের আহারের অনুপযোগী অংশের সাথে তুলনা করে অপদার্থ বলে ঘোষণা করেছেন এবং জানিয়ে দিলেন যে, এ অপদার্থের কি হলো, তারা কোথায় ধ্বংস হলো, কার কাছে পরাজিত-নির্যাতিত হলো ইত্যাদি বিষয়ে আল্লাহ তায়ালার কোন পরোয়া নেই- আমরা কি বর্তমানে এ অবস্থার মুখোমুখি নই?