📄 সফর থেকে ফিরে তাহাজ্জুদ পড়তে না পারার অনুশোচনা
৫৬. তালক ইবনে মুআবিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আমাদের একজন পরিচিত ব্যক্তির নাম ছিল হিন্দ ইবনে আওফ। তিনি কোনো এক সফর থেকে গভীর রাতে ঘরে ফিরে এলেন। স্বামীকে ক্লান্ত-শ্রান্ত মনে করে স্ত্রী দ্রুত বিছানা পেতে দিলেন। সেই সময়টা ছিল তার তাহাজ্জুদের সময়। অন্যান্য সাধারণ সময়ে তিনি রাতের এই প্রহরে তাহাজ্জুদ আদায় করতেন। কিন্তু সেই রাতে সফরের ক্লান্তি থাকায় তাহাজ্জুদ আদায় করতে পারলেন না। সে রাতে তাহাজ্জুদ ছুটে যাওয়ায় নিজের আত্মাকে ভীষণ ভর্ৎসনা ও তিরস্কার করলেন এবং এর কাফফারা হিসেবে তিনি কসম করলেন, আর কোনোদিন তিনি বিছানায় ঘুমাবেন না!
📄 নিজের সংশোধনের জন্য উত্তপ্ত বালুতে গড়াগড়ি
৫৭. তালহা রাহিমাহুল্লাহ বলেন, একদিন এক সাহাবি দেহ থেকে কাপড় খুলে ফেললেন এবং উত্তপ্ত বালুর মধ্যে গড়াগড়ি দিতে লাগলেন। আর নিজেকে ভর্ৎসনা করে বলতে লাগলেন, হে খারাপ আত্মা! এই উত্তপ্ত বালুর তাপের স্বাদ গ্রহণ করো। আর মনে রেখো, জাহান্নামের তাপ এর চেয়ে কোটি গুণ বেশি কষ্টদায়ক। তুমি তো রাতের বেলা মৃত প্রাণীর মতো ঘুমাও আর দিনের বেলায় বেকার সময় অতিবাহিত করো! তিনি এ রকম করতেই থাকলেন। এমনকি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এই অবস্থায় দেখে ফেললেন। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, আমার আত্মা আমার ওপর প্রবল হয়েছে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি যা করেছ তার কি বিকল্প ছিল না? যাইহোক, আল্লাহ তাআলা তোমার জন্য আসমানের সব ক'টি দরজা খুলে দিয়েছেন এবং তিনি ফেরেশতাদের মাঝে তোমাকে নিয়ে গর্ব করেছেন।
এরপর নবীজি সাহাবাগণকে বললেন, তোমরা তোমাদের এই ভাই থেকে পাথেয় সংগ্রহ করো। তখন সাহাবাগণ একেকজন বললেন, হে ব্যক্তি! আমার জন্য দুআ করো। আরেকজনও অনুরূপ বলল, আমার জন্য দুআ করো। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি নির্দিষ্ট কারও জন্য নয়, বরং সকলের জন্য ব্যাপকভাবে দুআ করো।
নবীজির আদেশে তখন তিনি দুআ করলেন, হে আল্লাহ! তাকওয়াকে তাদের সকলের পাথেয় বানিয়ে দিন, তাদের সকলের চিন্তাকে হেদায়াতের ওপর একত্রিত করে দিন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন দুআয় বললেন, হে আল্লাহ! আপনি তাকে সঠিক পথ দেখান, হে আল্লাহ! জান্নাতকে সকলের ঠিকানা বানিয়ে দিন।
📄 পৃথিবীতে নিজের চেয়ে বড়ো কোনো শত্রু নেই!
৫৮. হুযায়ফা ইবনে কাতাদা রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, একজন বুজুর্গকে জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনার মনে কোনো কিছুর বাসনা জাগলে, প্রবৃত্তি কোনো কিছুর আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করলে তখন কী করেন? বুজুর্গ জবাবে বললেন, পৃথিবীর বুকে আমার আত্মার চেয়ে আমার বড়ো কোনো শত্রুই নেই। আর কে আছে এমন, যে শত্রুর আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে? সুতরাং আমার সবচেয়ে বড়ো শত্রুর বাসনা পূরণ করতে যাব কেন? আমি বরং আমার আত্মাকে নিজের সবচেয়ে বড়ো শত্রু মনে করে তাকে তার যাবতীয় বাসনার বস্তু থেকে বঞ্চিত রাখি।
📄 পরকালে শাস্তির আগেই নিজেকে শাস্তি প্রদান
৫৯. আবু জাফর কিন্দি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, দাউদ তাঈ রাহিমাহুল্লাহ যখন ইন্তেকাল করলেন তখন ইবনুস সাম্মাক রাহিমাহুল্লাহ তার মাটির ঘরে এলেন এবং বললেন, হে দাউদ! তুমি অন্য কর্তৃক বন্দি হওয়ার আগেই নিজেকে বন্দি করে নিয়েছ। তুমি আজাবে ধৃত হওয়ার আগেই নিজের নফসকে আজাবে ধৃত করেছ। সুতরাং আজ এর সুফল ভোগ করো। আজ তুমি দেখতে পাবে তাঁকে, যাঁর জন্য তুমি দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে আমল করেছিলে।