📄 পাপের যদি দুর্গন্ধ থাকত!
৩৭. মুহাম্মাদ ইবনে ওয়াসি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, যদি পাপের দুর্গন্ধ থাকত, তবে কোনো ব্যক্তি আমার কাছেই বসতে ও ঘেঁষতে পারত না।
📄 তোমার মায়ের মূল্য মাত্র দুইশ দিরহাম!
৩৮. মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ জাররাদ বলেন, মুহাম্মাদ ইবনে ওয়াসি রাহিমাহুল্লাহ একদিন তার ছেলেকে দেখলেন, সে সবার সামনে তার দুই হাত ওপরে তুলে আছে। তখন তিনি তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, তুমি নিজেকে বড়ো মনে করো না। আফসোস, তুমি কি জানো, তুমি কে? তোমার মাকে আমি দুইশ দিরহামে ক্রয় করেছিলাম। আর তোমার পিতা? তোমার পিতা তো কোটি কোটি মানুষের মধ্যে সামান্য মর্যাদাও রাখে না। সুতরাং তোমার অহংকার প্রদর্শনের কী আছে?
৩৯. আবু জাফর রাহিমাহুল্লাহ বলেন, বসরা নগরীর জনৈক ব্যক্তি স্বপ্ন দেখল, যেন একজন ঘোষক আসমান থেকে এ কথার ঘোষণা করছে যে, বসরার সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি হলেন মুহাম্মাদ ইবনে ওয়াসি।
📄 ইবনে উমর রাযি.-এর নিজের নগ্নতা প্রকাশ
৪০. আবু ওয়াজ্জা রাহিমাহুল্লাহ বলেন, একবার জনৈক ব্যক্তি ইবনে উমর রাযি.-কে বললেন, আল্লাহ তাআলা যতদিন আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবেন, ততদিন আমরা কল্যাণের মধ্যেই নিমজ্জিত থাকব। জবাবে তিনি নিজের নগণ্যতা প্রকাশ করে বললেন, তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক, মনে হয় একজন ইরাকি বাসিন্দা? তুমি কি জানো, তোমার ভাতিজাই তার জন্য দরজা বন্ধ করে দিয়েছে?
ব্যাখ্যা: ইবনে উমর রাযি. নিজেকে নগণ্য মনে করে বললেন, তুমি তো আমাকে এত বড়ো মনে করো, অথচ তোমার এলাকার গভর্নর আমার জন্য ইরাকে প্রবেশের দরজা বন্ধ করে রেখেছেন। তিনি আমাকে শত্রু মনে করেন। তাহলে আমি এমন ব্যক্তি হলাম কী করে, যার কল্যাণে দুনিয়ার মানুষ কল্যাণে নিমজ্জিত থাকবে?
📄 মুচির ঘরে দরবেশের আগমন
৪১. জিলদ ইবনে আইয়ুব রাহিমাহুল্লাহ বলেন, বনি ইসরাইলে জনৈক দরবেশ ছিলেন। তিনি প্রতি মুহূর্তে তার ইবাদতখানায় ইবাদতে মশগুল থাকতেন। এভাবে প্রায় ষাট বছর ইবাদত-বন্দেগিতে কাটিয়ে দিলেন তিনি। একদিন তিনি স্বপ্নে দেখলেন, কে যেন তাকে বলছেন, অমুক মুচি তোমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ।
ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর একবার স্বপ্নের কথা মনে হলো, কিন্তু পরে ভুলে গেলেন। পরের রাতে যখন ঘুমালেন তখন আগের মতোই স্বপ্ন দেখলেন। ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর স্বপ্নের কথা মনে করলেন বটে, কিন্তু আবার ভুলে গেলেন। এভাবে তাকে কয়েকবার স্বপ্নটি দেখানো হলো।
কয়েকবার স্বপ্ন দেখার পর তিনি আর স্থির থাকতে পারলেন না, ঘটনা উদ্ঘাটনের জন্য ইবাদতখানা থেকে বের হয়ে এলেন এবং সেই মুচির সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। মুচি এই বিখ্যাত দরবেশকে দেখে কাজ বন্ধ করে দিল এবং বিস্মিত হয়ে বলল, হুজুর, আপনি এখানে! কোন প্রয়োজনে আপনি ইবাদতখানা ছেড়ে এখানে এসেছেন?
দরবেশ বললেন, তুমি আমাকে ইবাদতখানা থেকে নামিয়ে এনেছ! তুমি আমাকে তোমার আমল সম্পর্কে অবহিত করো।
দরবেশের আদেশ শুনে মুচি থতমত খেয়ে গেল। নিজের আমলের কথা প্রকাশ করতে সংকোচবোধ করতে লাগল সে। কিন্তু দরবেশের আদেশের কারণে প্রকাশ না করেও উপায় ছিল না। তাই সে বলল, হুজুর! আমল তো তেমন কিছু নয়। তবে সারা দিন কষ্ট করে যা উপার্জন করি, আল্লাহ তাআলা আমাকে যা দান করেন, তার অর্ধেক সদকা করি আর বাকি অর্ধেক পরিবার- পরিজনের ভরণপোষণের জন্য ব্যয় করি। আর আমি দিনের বেলায় রোজা রাখি।
মুচির আমলের সংবাদ জেনে দরবেশ সেখান থেকে চলে গেলেন এবং নিজের ইবাদতখানায় আবার ইবাদতে লিপ্ত হলেন।
দরবেশকে আবারও স্বপ্ন দেখানো হলো এবং তাকে বলা হলো, তুমি মুচিকে জিজ্ঞাসা করো, তার চেহারা হলুদবর্ণ হয়েছে কেন?
আদেশ পেয়ে দরবেশ আবার হুজরাখানা থেকে নিচে নেমে এলেন এবং গিয়ে মুচিকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলেন।
জবাবে মুচি জানাল, আমার সামনে যে মুসলিম ব্যক্তিই হাজির হয়, তাকে আমার কাছে জান্নাতি মনে হয়, আর একমাত্র নিজেকে জাহান্নামি মনে হয়। আর আমি এটাও বিশ্বাস করি যে, মুসলিম ব্যক্তিকে সম্মানিত করা হয় তার নিজের নফসকে সর্বদা দোষী মনে করার কারণে।
আল্লাহর কাছে সাধারণ একজন মুচির মর্যাদা ও সম্মানের বিষয়টি দেখে দরবেশ হতবাক হয়ে গেলেন। তিনি বুঝতে পারলেন, শত বছরের ইবাদতের চেয়ে নিজেকে তুচ্ছ মনে করা এবং বিনয় প্রকাশ করা আল্লাহ তাআলার কাছে অনেক মূল্যবান এবং সহস্র আমলের চেয়ে শ্রেয়।