📄 নিজের আত্মা থেকে কঠিন হিসাব গ্রহণ করা
৭. মায়মুন ইবনে মিহরান রাহিমাহুল্লাহ বলেন, একজন ব্যক্তি যেভাবে তার ব্যবসায়ী অংশীদার (পার্টনারের) কাছ থেকে অর্থের কড়াকড়ি হিসাব গ্রহণ করে, সেভাবে তার নিজের নফসের কঠিন হিসাব না নেওয়া পর্যন্ত মুত্তাকি হতে পারবে না।
📄 নিজের আত্মাকে তাচ্ছিল্য করা
৮. মালেক ইবনে দিনার রাহিমাহুল্লাহ বলেন, সেই ব্যক্তির ওপর আল্লাহ রহম করুন, যে ব্যক্তি নিজের নফসকে বলে, তুমি কি নিতান্ত সাধারণ একটা ব্যক্তির প্রাণ নও? সাধারণ ব্যক্তির জীবন নও? এরপর সে তার প্রাণকে তিরস্কার ও তাচ্ছিল্য করে। এরপর তাকে দগ্ধ করে এবং এরপর তার ওপর আল্লাহর কুরআনকে আবশ্যক করে দেয়। এভাবে সে নিজেই তার প্রাণের নিয়ন্ত্রক ও রাহবার হয়। এভাবে নিজেকে তাচ্ছিল্য করার দ্বারাই কেবল একজন ব্যক্তি মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়। পক্ষান্তরে যারা নিজেদের আত্মা ও নফসকে সম্মানিত মনে করে উন্মুক্ত অবস্থায় ছেড়ে দেয়, প্রকারান্তরে সে নিজেকে লাঞ্ছনার আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করে।
📄 মুত্তাকি ব্যক্তি আত্মশাসনের ব্যাপারে কঠোর হন
৯. মায়মুন ইবনে মিহরান রাহিমাহুল্লাহ বলেন, জালেম শাসক যেভাবে তার প্রজাদের থেকে খাজনা ও কর আদায়ের ব্যাপারে কঠোর ও নির্মম হিসাব নেয় এবং অত্যধিক কৃপণ ব্যবসায়ী যেভাবে তার ব্যবসার পার্টনারের কাছ থেকে পাই পাই করে হিসাব নেয়, ঠিক এভাবেই নফস থেকে পাই পাই হিসাব নিতে হয়। কেননা নফসের প্রতি এরূপ কঠোরতা আরোপ ও আত্মশাসন ও আত্মবিচার করা ছাড়া কোনো ব্যক্তি কখনই মুত্তাকি হতে পারে না। এটাই দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত অভিজ্ঞতা।
📄 নিজেকে জান্নাত ও জাহান্নামে কল্পনা করা
১০. ইবরাহিম তাইমি২৪ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আমি আমার প্রাণকে কখনো কখনো জান্নাতের নাজ-নেয়ামতের মধ্যে কল্পনা করি যে, আমার প্রাণ জান্নাতের মধুময় ও সুস্বাদু ফল ভক্ষণ করছে। কখনো সুপেয় পানীয় পান করছে এবং কুমারী হুরদের সঙ্গে আলিঙ্গনাবদ্ধ হচ্ছে। এরপর নফসকে আবার জাহান্নামের মধ্যে কল্পনা করি যে, সে কখনো জাহান্নামের জাক্কুম অর্থাৎ কাঁটাদার বৃক্ষ থেকে ফল খাচ্ছে, জাহান্নামিদের গলিত পূঁজ পান করছে, তার গর্দানে সুদীর্ঘ শিকল পরিধান করানো হয়েছে। এরপর আমি নফসকে সম্বোধন করে বলি, হে নফস! হে আমার প্রাণ! তুমি এই দুটির কোনটি কামনা করো? যদি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর এরূপ বলো যে, আমাকে আবার দুনিয়ায় ফিরিয়ে দেয়া হোক, যাতে সৎকাজ করে আসতে পারি। তখন আমি বলি, তাহলে তুমি তো এখন দুনিয়াতেই আছ! অতএব, এখনই নেك আমল করে নাও। কেননা এটাই তোমার নেك আমলের উপযুক্ত স্থান। কেননা তুমি জাহান্নামে যাওয়ার পর যদি পুনরায় দুনিয়ায় এসে আমল করার বাসনা করো, তবে সেই দুনিয়াতেই তো তুমি এখন অবস্থান করছ। তাই বেশি বেশি করে আমল করে নাও, কারণ পরকালে কোনো প্রার্থনার মূল্য নেই।
টিকাঃ
২৪. তিনি একজন বিখ্যাত তাবেয়ি, মুহাদ্দিস, অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য হাদিস বর্ণনাকারী, দুনিয়াবিমুখ ব্যক্তি ও সুফি। পূর্ণ নাম আবু আসমা ইবরাহিম ইবনে ইয়াজিদ ইবনে শারিক আত-তাইমি কুফি। ইমাম যাহাবি রহ. বলেন, তিনি যুবক বয়স থেকে অত্যন্ত পরহেযগার, দুনিয়াবিমুখ, মুত্তাকি ও ইবাদতগোজার ব্যক্তি হিসেবে গড়ে ওঠেন। তিনি জনগণের হৃদয় স্পর্শকারী ওয়ায়েজ ও বক্তা ছিলেন। তার কথায় গভীর প্রভাব সৃষ্টি হতো শ্রোতাদের মধ্যে। তিনি বলতেন, আমি একটানা ত্রিশদিন কিছু না খেয়ে কাটাতে পারি। মহান এই তাবেয়িকে নিষ্ঠুর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ৯২ হিজরিতে নির্মমভাবে শহিদ করে দেয়। আবু দাউদ বলেন, তিনি যখন নিহত হন, তখন তার বয়স চল্লিশের কোঠায়ও স্পর্শ করেনি।