📄 দ্বাদশ উদাহরণ
দ্বাদশতম উদাহরণ
হাদীসে কুদসীতে এসেছে:
«من تقرب مني شبرا تقربت منه ذراعا، ومن تقرب مني ذراعا تقربت منه باعاً، ومن أتاني يمشي أتيته هرولة».
যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ আমার নিকটবর্তী হলো, আমি এক হাত পরিমাণ তার নিকটবর্তী হলাম। আর যে ব্যক্তি এক হাত পরিমাণ আমার নিকটবর্তী হলো আমি এক গজ পরিমাণ তার নিকটবর্তী হলাম। আর যে ব্যক্তি আমার কাছে হেঁটে এল, আমি তার কাছে দৌড়ে যাই।
হাদীসটি সহীহ। ইমাম মুসলিম হাদীসটি যিকির ও দো'আ অধ্যায়ে আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেও অনুরূপ একটি হাদীস তিনি উল্লেখ করেছেন। ইমাম বুখারী কিতাবুত্ তাওহীদ, অনুচ্ছেদ পনেরতে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে অনুরূপ একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন।৩০
[জওয়াব:]
এই হাদীসটি আল্লাহ তা'আলার ওই সকল কর্মকে বুঝাচ্ছে যা তিনি সম্পাদন করতে ইচ্ছা করেন। সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা'আলা যা ইচ্ছা তাই করেন। এ বিষয়টি কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। যেমন আল্লাহ তা'আলার নিম্নোক্ত বাণীসমূহে:
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ ﴾ [البقرة: ١٨٦]
আর যখন আমার বান্দাগণ তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, আমি তো নিশ্চয় নিকটবর্তী। আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে ডাকে। (সূরা আল বাকারা: ২: ১৮৬)
وَجَاءَ رَبُّكَ وَالْمَلَكُ صَفًّا صَفًّا ﴾ [الفجر: ٢٢]
আর তোমার রব ও ফেরেশতাগণ উপস্থিত হবেন সারিবদ্ধভাবে। (সূরা আল ফাজর: ৮৯: ২২)
هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا أَن تَأْتِيَهُمُ الْمَلَائِكَةُ أَوْ يَأْتِيَ رَبُّكَ أَوْ يَأْتِيَ بَعْضُ عَابَاتِ رَبِّكَ ﴾ [الأنعام: ١٥٨]
তারা কি এরই অপেক্ষা করছে যে, তাদের নিকট ফেরেশতাগণ হাজির হবে, কিংবা তোমার রব উপস্থিত হবে অথবা প্রকাশ পাবে তোমার রবের আয়াতসমূহের কিছু? (সূরা আল আনআম: ৬: ১৫৮)
الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى ) [طه: ٥]
দয়াময় (আল্লাহ) আরশে সমাসীন। (সূরা তাহা: ২০: ৫)
অনুরূপভাবে হাদীসে এসেছে:
«ينزل ربنا كل ليلة إلى السماء الدنيا حين يبقى ثلث الليل الآخر»
আমাদের রব প্রতি রাতেই নিম্নাকাশে নেমে আসেন, যখন রাতের শেষ তৃতীয় প্রহর অবশিষ্ট থাকে। ৩৪
অন্য এক হাদীসে এসেছে:
«ما تصدق أحد بصدقة من طيب ولا يقبل الله إلا الطيب - إلا أخذها الرحمن بيمينه»
যখন কোনো ব্যক্তি হালাল সম্পদ থেকে কিছু দান করে- আর আল্লাহ হালাল ব্যতীত গ্রহণ করেন না- তখন দয়াময় তা তাঁর ডান হাত দিয়ে গ্রহণ করেন।
এ জাতীয় আরো অন্যান্য আয়াত ও হাদীস যা ইচ্ছাকৃত কর্মসমূহ আল্লাহর সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়াকে নির্দেশ করে। অতএব হাদীসে যে উল্লিখিত হয়েছে, 'আমি তার নিকটবর্তী হই', 'আমি তার দিকে দৌড়ে আসি' তা এই পর্যায়ের।
সালাফগণ তথা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত উল্লিখিত ধরনের বাণীসমূহকে আল্লাহ তা'আলার শানের জন্য উপযোগীভাবে বাহ্যিক ও প্রকৃত অর্থেই নিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে তারা কোনো 'তাকঈফ' তথা ধরন-ধারণ নির্ধারণ এবং 'তামছীল' তথা উদাহরণ নির্ধারণের আশ্রয়ে যান না।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ, আল্লাহর নিম্নাকাশে নেমে আসা বিষয়ক হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন (দ্র. মাজমুউল ফাতাওয়া: খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৪৬৬): আল্লাহ তা'আলার নিকটবর্তী হওয়া এবং কিছু বান্দার কাছে আসা- যারা আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছাকৃত কর্ম, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলার আগমণ, তাঁর অবতরণ ও আরশের ওপরে আরোহনকে সাব্যস্ত করে - তারা উল্লিখিত হাদীসে নিকটবর্তী হওয়ার যে কথা আছে সেটাকেও সাব্যস্ত করেন।'
অতএব এ কথা বলতে বাধা কি যে, আল্লাহ তা'আলা তাঁর বান্দার নিকটবর্তী হন, তিনি যেভাবে চান সেভাবে, তাঁর ঊর্ধ্বাবস্থান সত্ত্বেও?
কোনো ধরন-ধারণ নির্ধারণ না করে, অথবা কোনো উদাহরণ না দিয়ে এ কথা বলতে বাধা কি যে আল্লাহ তা'আলা যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে আসবেন?
এটা তো আল্লাহ তা'আলার কামাল ও পূর্ণাঙ্গতারই একটি বিষয় যে তিনি তাঁর শান মোতাবেক যা ইচ্ছা তাই করবেন।
কেউ কেউ বলেছেন যে, এ হাদীসে আল্লাহ তা'আলার যে কথাটি এসেছে যে, 'আমি তাঁর নিকট দৌড়ে যাই', এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য অর্জনের জন্য কাজ করে যায় এবং শরীর ও অন্তর উভয়টা নিয়ে আল্লাহর পানে ধাবিত হয়, তাকে আল্লাহ তা'আলা অতিদ্রুত গ্রহণ করে নেন। আর আল্লাহ তা'আলা আমলকারীকে যে প্রতিদান দেন তা আমলকারীর আমলের চেয়েও অধিক পরিপূর্ণ। তারা তাদের এ বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন যে, আল্লাহ তা'আলা হাদীসে কুদসীতে বলেছেন, 'যে আমার কাছে হেঁটে আসে'। আর এটা জ্ঞাত বিষয় যে, আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য অর্জনকারী, আল্লাহ তা'আলার কাছে পৌঁছতে আগ্রহী ব্যক্তি কেবলমাত্র হাঁটার মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য অর্জন করে না, বরং কখনো হাঁটার মাধ্যমে, যেমন সালাতের উদ্দেশে মসজিদের দিকে হেঁটে যাওয়া, হজ পালনের উদ্দেশে হেঁটে যাওয়া, আল্লাহর পথে জিহাদের উদ্দেশে হেঁটে যাওয়া ইত্যাদি। আবার কখনো রুকু-সিজদা ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য অর্জন করে থাকে, যেমন হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: 'নিশ্চয় বান্দা আল্লাহ তা'আলার অতি নিকটবর্তী থাকে তখন যখন সে সিজদারত থাকে।'৩৬ বরং বান্দা বিছানায় শুয়ে থেকেও আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:
﴿الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ ﴾ [ال عمران: ۱۹۱]
যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও কাত হয়ে। (সূরা আলে ইমরান: ৩: ১৯১)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইমরান ইবনে হুসাইনকে বলেছেন:
صل قائما، فإن لم تستطع فقاعداً، فإن لم تستطع فعلى جنب
তুমি দাঁড়িয়ে সালাত পড়, যদি না পার তাহলে বসে, আর যদি না পার তাহরে কাত হয়ে। ৩৭
উক্ত ব্যাখ্যার প্রবক্তাগণ বলেন: যদি বিষয়টি এ রকমই হয়, তাহলে হাদীসটির উদ্দেশ্য হবে আল্লাহ তা'আলা বান্দার আমলের যে বিনিময় দেন তা বর্ণনা করা। আর যে ব্যক্তি একনিষ্ঠ হয়ে আল্লাহর প্রতি ধাবিত হবে, সে যদি ধীরগামীও হয় তবুও আল্লাহ তা'আলা তাকে তার আমলের চেয়েও উত্তম ও পূর্ণাঙ্গ প্রতিদান দেবেন। আর এটাই হলো হাদীসটির বাহ্যিক অর্থ যার অনন্য বক্তব্য থেকে শরঈ ইঙ্গিত অনুযায়ী বুঝা যাচ্ছে।
যদি অনন্য বক্তব্য থেকে শরঈ ইঙ্গিত অনুযায়ী এ অর্থ বুঝা যায় তবে তা বাহ্যিক অর্থ থেকে দূরে যাওয়া হবে না, আহলে তা'তীলদের তাবিলের মতোও তাবিল করা হবে না, অতএব তা আহলে সুন্নতের বিরুদ্ধে দলিল হিসেবে দাঁড়াবে না।
উল্লিখিত অভিমত ব্যক্তকারী যা বললেন, তা ফেলে দেওয়ার মতো না। তবে প্রথম কথাটি অধিক পরিষ্কার, ত্রুটিমুক্ত এবং সালাফদের মাযহাবের অধিক উপযোগী।
শরঈ ইঙ্গিতের যে কথাটি বলা হয়েছে, অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য অর্জন শুধু হাঁটার সঙ্গেই বিশিষ্ট নয়, বরং বলা হবে যে হাদীসটি একটি উদাহরণতুল্য। কোনটি ইবাদত এবং কোনটি ইবাদত নয়, তা নির্দিষ্ট করার জন্য হাদীসটি উল্লিখিত হয়নি। অতএব হাদীসটির অর্থ হবে: যে ব্যক্তি আমার কাছে এমন ইবাদতের ক্ষেত্রে হেঁটে আসল যাতে হাঁটার প্রয়োজন পড়ে, যেমন জামাতের সঙ্গে সালাত আদায়ের জন্য মসজিদের যাওয়ার প্রয়োজনে হাঁটতে হয়, অথবা এমন ইবাদত যা মূলত হেঁটেই সম্পন্ন করতে হয়, যেমন তাওয়াফ এবং সাঈ।
আল্লাহ তা'আলাই সর্বোত্তম জ্ঞানী。
টিকাঃ
৩৩ - বুখারী, হাদীস নং ৭৪০৫; মুসলিম হাদীস নং ২৬৭৫
৩৪ - এ হাদীসটির সূত্র পূর্বে গিয়েছে
- বুখারী, যাকাত অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: হালাল উপার্জন থেকে সদাকা করা, হাদীস নং ১৪১০; মুসলিম, যাকাত অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: হালাল উপার্জনের সদাকা কবুল হওয়া, হাদীস নং ১০১৪
৩৬ - মুসলিম, সালাত অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: রুকু ও সিজদায় যা বলা হবে, হাদীস নং ৪৮২
৩৭ - বুখারী, জুমআ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: যদি বসে নামাজ পড়তে না পাড়ে তবে কাত হয়ে, হাদীস নং ১১১৭
📄 ত্রয়োদশ উদাহরণ
ত্রয়োদশ উদাহরণ
আল্লাহ তা'আলা বলেন:
﴿ أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا خَلَقْنَا لَهُم مِّمَّا عَمِلَتْ أَيْدِينَا أَنْعَامًا فَهُمْ لَهَا مَالِكُونَ ﴾ [يس: ٧١]
তারা কি দেখেনি, আমার হাতের কৃত বস্তুসমূহের মধ্যে আমি তাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছি। (সূরা ইয়াসীন: ৩৬: ৭১)
আমরা এ আয়াতের উত্তর দেব প্রথমে জিজ্ঞাসা করে যে, এ আয়াতের প্রকাশ্য ও প্রকৃত অর্থ কি? প্রকাশ্য ও প্রকৃত অর্থ নির্ধারিত হওয়ার পরেই তো এটা বলা শুদ্ধ হতে পারে যে তা প্রকাশ্য ও প্রকৃত অর্থ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এটা কি বলা হবে যে এ আয়াতের বাহ্যিক ও প্রকৃত অর্থ এই যে, আল্লাহ তা'আলা চতুষ্পদ জন্তু তাঁর নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন ঠিক সেভাবে যেভাবে তিনি আদম আ. কে সৃষ্টি করেছেন?
না কি বলা হবে যে, এ আয়াতের বাহ্যিক অর্থ এই যে, আল্লাহ তা'আলা চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন ঠিক সেভাবে যেভাবে তিনি অন্যান্য সৃষ্টিবস্তুকে সৃষ্টি করেছেন, অর্থাৎ তিনি তার হাত দিয়ে তা সরাসরি সৃষ্টি করেননি, বরং হাতকে এখানে কর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে এটা বুঝানোর জন্য যে হাতের যিনি মালিক তিনিই তা সৃষ্টি করেছেন। আর এটা আরবী ভাষায় একটি স্বীকৃত একটি বিষয়।
প্রথম কথাটি আয়াতের বাহ্যিক ও প্রকৃত অর্থ হতে পারে না দু' কারণে:
প্রথমত: আরবী ভাষার দাবি অনুযায়ী প্রথম কথাটি আয়াতের শব্দমালার দাবি হতে পারে না। আপনি যদি নিম্নবর্ণিত কয়েকটি আয়াত অনুধাবন করে দেখেন তবে বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট হয়ে যাবে:
আল্লাহ তা'আলা বলেন:
﴿وَمَا أَصَابَكُم مِّن مُّصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُوا عَن كَثِيرٍ ﴾ [الشورا: ٣٠]
আর তোমাদের প্রতি যে মুসীবত আপতিত হয়, তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। আর অনেক কিছুই তিনি ক্ষমা করে দেন। (আশশুরা: ৪২: ৩০)
﴿ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ ﴾ [الروم: ٤١]
মানুষের হাতের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে ফাসাদ প্রকাশ পায়। যার ফলে আল্লাহ তাদের কতিপয় কৃতকর্মের স্বাদ তাদেরকে আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সূরা আররুম: ৩০: ৪১)
﴿ذَلِكَ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيكُمْ﴾ [آل عمران: ١٨٢]
এ হল তোমাদের হাত যা আগাম পেশ করেছে। (সূরা আলে ইমরান: ৩: ১৮-২)
এসব আয়াতে মানুষের হাত যা উপার্জন করেছে বা হাত যা আগাম পেশ করেছে দ্বারা স্বয়ং মানুষ যা উপার্জন করেছে বা আগাম পেশ করেছে বুঝানো হয়েছে। হোক তা হাত দ্বারা অথবা অন্যভাবে। এর বিপরীতে যদি বলা হয় যে, এ কাজটি আমি আমার দু'হাত ব্যবহার করে করেছি, তাহলে এর অর্থ হবে কেবল ওই কাজ যা হাত ব্যবহার করে করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা'আলার নিম্নোক্ত বাণীতে:
﴿فَوَيْلٌ لِلَّذِينَ يَكْتُبُونَ الْكِتَابَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هَذَا مِنْ عِندِ اللَّهِ﴾ [البقرة: [٧٩
সুতরাং ধ্বংস তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব লিখে। তারপর বলে, 'এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে', যাতে তা তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করতে পারে। (সূরা আল বাকারা: ২: ৭৯)
এখানে 'নিজ হাতে কিতাব লিখে' দ্বারা সরাসরি হাত ব্যবহার করে কিতাব লিখাকে বুঝানো হয়েছে।
দ্বিতীয়ত: এখানে যদি উদ্দেশ্য এটাই হত যে, আল্লাহ তা'আলা সরাসরি তাঁর হাত দ্বারাই চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন, তাহলে বাক্যটি এমন হতো: (خَلَقْنَا لَهُم بِأَيْدِينَا أَنْعَامًا) (অর্থাৎ আমি তাদের জন্য সৃষ্টি করেছি আমার হাত দ্বারা চতুষ্পদ জন্তু) যেমন আল্লাহ তা'আলা আদম আ. এর ব্যাপারে বলেছেন:
قَالَ يَإِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَن تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَى [ص: ٧٥]
আল্লাহ বললেন, 'হে ইবলীস, আমার দু'হাতে আমি যাকে সৃষ্টি করেছি তার প্রতি সিজদাবনত হতে কিসে তোমাকে বাধা দিল? (সূরা সাদ: ৩৮: ৭৫)
কারণ আল কুরআন অস্পষ্ট নয় বরং সুষ্পষ্ট বর্ণনা নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে:
وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَنَا لِكُلِّ شَيْءٍ [النحل: ٨٩]
আর আমি তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছি প্রতিটি বিষয়ের স্পষ্ট বর্ণনাস্বরূপ। (সূরা আন্-নাহল: ১৬: ৮৯)
অতএব এ আলোচনার দ্বারা প্রথম কথাটির বাতুলতা প্রকাশিত হয়ে গেল, দ্বিতীয় কথাটি যে সঠিক তা প্রমাণিত হয়ে যায়। আর তা হলো: আলোচ্য আয়াতের বাহ্যিক অর্থ হলো, আল্লাহ তা'আলা চতুষ্পদ জন্তুকে ঠিক সেভাবেই সৃষ্টি করেছেন যেভাবে তিনি সৃষ্টি করেছেন অন্য মাখলুকাতকে। অর্থাৎ তিনি তাঁর হাত দিয়ে সরাসরি সৃষ্টি করেননি। তবে কর্মকে হাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা কর্মকে সত্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার মতোই। অতএব আল্লাহ তা'আলার বাণী, 'আমার হাতের কৃত বস্তুসমূহের মধ্যে আমি তাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছি' এর অর্থ 'আমার সৃষ্ট বস্তুসমূহের মধ্যে আমি তাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছি'। আরবী ভাষার ব্যবহাররীতি এটাই দাবি করে। তবে যদি আরবী ভাষায় ৬ (হাত) শব্দের পূর্বে অব্যয় থাকে তবে সে সময় সরাসরি হাতই অর্থ হয়ে থাকে। এই পার্থক্যকে জেনে রাখুন। কারণ, এ সাদৃশ্যময় বিষয়সমূহের মধ্যে থাকা পার্থক্য জানা উত্তম ইলমের মধ্যে শামিল। এর দ্বারা অনেক প্রশ্ন সমাধান হয়ে যায়。
📄 চতুর্দশ উদাহরণ
চতুর্দশ উদাহরণ
আল্লাহ তা'আলার বাণী:
إِنَّ الَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُونَ اللَّهَ يَدُ اللَّهِ فَوْقَ أَيْدِيهِمْ ﴾ [الفتح: ١০]
আর যারা তোমার কাছে বাই'আত গ্রহণ করে, তারা শুধু আল্লাহরই কাছে বাই'আত গ্রহণ করে; আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর। (সূরা আল ফাতহ: ৪৮: ১০)
উত্তর:
এর উত্তরে বলা হবে যে, এ আয়াতটি দুটি বাক্য শামিল করে আছে। প্রথম বাক্যটি হলো:
إِنَّ الَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُونَ اللَّهَ ﴾ [الفتح: ১০]
আর যারা তোমার কাছে বাই'আত গ্রহণ করে, তারা শুধু আল্লাহরই কাছে বাই'আত গ্রহণ করে। (সূরা আল ফাতহ:৪৮: ১০)
সালাফ অর্থাৎ আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত আয়াতটিকে বাহ্যিক ও প্রকৃত অর্থেই নিয়েছেন। অর্থাৎ সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছেই সরাসরি বাই'আত গ্রহন করেছিলেন। এ কথাটি নিম্নোক্ত আয়াতেও স্পষ্ট:
﴿لَقَدْ رَضِيَ اللَّهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ ﴾ [الفتح: ١৮]
অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন, যখন তারা গাছের নিচে আপনার হাতে বাই'আত গ্রহণ করেছিল। (সূরা আল ফাতহ: ৪৮: ১৮)
আর-
﴿إِنَّمَا يُبَايِعُونَ اللَّهَ ﴾ [الفتح: ১০]
তারা শুধু আল্লাহরই কাছে বাই'আত গ্রহণ করে। (সূরা আল ফাতহ: ৪৮: ১৮)
আল্লাহ তা'আলার এ কথা থেকে কেউ এটা বুঝে না যে, সাহাবীগণ সরাসরি আল্লাহর কাছেই বাই'আত গ্রহণ করেছিলেন। কেউ এটা বলবে না যে সরাসরি আল্লাহর কাছে বাই'আত গ্রহণ করাই এ আয়াতের বাহ্যিক ও প্রকাশ্য অর্থ, কেননা এরূপ হলে তা আয়াতের প্রথমাংশ ও বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে যাবে। কেননা আল্লাহ তা'আলা আয়াতের প্রথম অংশে এটা স্পষ্ট করেছেন যে, সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতেই সরাসরি বাই'আত গ্রহণ করেছিলেন।
রাসূলের কাছে বাই'আত গ্রহণ করাকে আল্লাহ তা'আলা তাঁর কাছেই বাই'আত গ্রহণ করা এ জন্যে বলেছেন যে, রাসূল হলেন আল্লাহ তা'আলারই রাসূল যার হাতে সাহাবীগণ আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য বাই'আত গ্রহণ করেছিলেন। আর রাসূলকে যিনি পাঠিয়েছেন তাঁর পথে জিহাদ করার উদ্দেশে রাসূলের কাছে বাই'আত গ্রহণ করা প্রকারান্তরে তাঁর কাছেই বাই'আত গ্রহণ করা। কেননা তিনি তো তাঁর পক্ষ থেকে বাণী পৌঁছে দেওয়ার জন্যই রাসূল। অনুরূপভাবে রাসূলের আনুগত্য করা যিনি রাসূলকে পাঠিয়েছেন তারই আনুগত্য করা। কারণ আল্লাহ তা'আলা বলেন:
﴿ مَّن يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهُ ﴾ [النساء: ٨٠]
যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। (সূরা আন্-নিসা: ৪: ৮০)
আর রাসূলের কাছে সাহাবীগণের বাই'আতকে আল্লাহর কাছে বাই'আত বলার মধ্যে নিহিত আছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্মানিত করা, তাঁকে সমর্থন করা, কৃত বাই'আতকে জোরদার করা, বাই'য়াতের আযমতকে বাড়িয়ে দেওয়া এবং বাই'আতকারীদের শানকে বাড়িয়ে দেওয়া। এ বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পষ্ট এবং কারও কাছেই গোপন নয়।
দ্বিতীয় বাক্য:
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ يَدُ اللَّهِ فَوْقَ أَيْدِيهِمْ﴾ [الفتح: ١٠]
আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর। (সূরা আল ফাতহ: ৪৮: ১০)
এ বাক্যটিও বাহ্যিক ও প্রকৃত অর্থেই; কেননা আল্লাহ তা'আলার হাত বাই'আতকারীদের হাতের উপর; হাত হলো আল্লাহ তা'আলার একটি সিফাত আর আল্লাহ হলেন আরশের ওপর। অতএব তাঁর হাত বাই'আতকারীদের হাতের ওপরে। এটাই হলো উক্ত বাক্যের বাহ্যিক ও প্রকৃত অর্থ। আর এতে আছে এ কথার তাগিদ যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বাই'আত করা আল্লাহর কাছেই বাই'আত করা। এর দ্বারা এটা আবশ্যক হয় না যে আল্লাহ তা'আলার হাত তাদের হাতের সঙ্গে লেগে থাকবে। যদি বলা হয় যে 'আকাশ আমাদের ওপরে' তাহলে এটা বুঝা যাবে না যে আকাশ আমাদের মাথার সঙ্গে লেগে আছে, আকাশ আমাদের থেকে দূরে ও বিচ্ছিন্ন থাকা সত্ত্বেও উক্ত বাক্যটি বলা শুদ্ধ।
অনুরূপভাবে, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে বাই'আত করেছিলেন, আল্লাহর হাত তাদের হাতের ওপরে যদিও আল্লাহ তা'আলা মাখলুক থেকে আলাদা এবং তাদের থেকে ঊর্ধ্বে।
'আল্লাহর হাত তাদের হাতের ওপরে।' এখানে 'আল্লাহর হাত'-কে নবীর হাত বলে বুঝার কোনো সম্ভাবনা নেই। এটা দাবি করার কোনো সুযোগও নেই যে এটাই হলো শব্দের বাহ্যিক অর্থ; কেননা আল্লাহ তা'আলা এখানে 'হাত'-কে তাঁর নিজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে উল্লেখ করেছেন এবং তিনি বলেছেন যে তাঁর হাত তাদের হাতের ওপরে। আর বাই'আত করার সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাত সাহাবীগণের হাতের ওপরে ছিল না, কেননা বাই'আত করার সময় তিনি তাঁর হাত প্রসারিত করে ধরতেন আর সাহাবীগণ, যেভাবে মুসাফাহা করা হয় সেভাবে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতকে ধরতেন। অতএব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাত তাদের হাতের সঙ্গে থাকত, তাদের হাতের ওপরে থাকত না。
📄 পঞ্চদশ উদাহরণ
পঞ্চদশ উদাহরণ
হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তা'আলা বলেন:
"يا ابن آدم، مرضت فلم تعدني"
হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম কিন্তু তুমি আমাকে দেখতে আসনি। -আল হাদীস。
হাদীসটি 'সদাচার, সম্পর্ক রক্ষা ও শিষ্টাচার' অধ্যায়ের আওতাধীন রোগী দেখার ফজীলত অধ্যায়ে ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
(আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের দিন বলবেন: হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে দেখতে আসনি। সে বলবে: হে আমার রব, আমি কীভাবে আপনাকে দেখতে যাব, আপনি তো রাব্বুল আলামীন? তিনি বলবেন: তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, কিন্তু তুমি তো তাকে দেখতে যাওনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তুমি তাকে দেখতে যেতে তবে আমাকে তার কাছেই পেতে? হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি আমাকে খাবার দাওনি। সে বলবে, হে আমার রব, আমি আপনাকে কীভাবে খাওয়াব, আপনি তো সৃষ্টিকুলের রব? তিনি বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে খাবার দাওনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে খাবার দিতে তবে তা আমার কাছে পেতে? হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে পানি পান করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে পানি পান করতে দাওনি। সে বলল: হে আমার রব, আমি আপনাকে কীভাবে পানি পান করাব, আপনি তো রাব্বুল আলামীন? তিনি বলবেন: আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি পান করতে চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে পানি পান করাওনি, তুমি যদি তাকে পানি পান করাতে তবে তা আমার কাছে পেতে?)
উত্তর:
এর উত্তর হলো, সালাফগণ নিজেদের খেয়ালখুশি মোতাবেক হাদীসটির অর্থে বিকৃতি সাধন না করেই হাদীসটিকে গ্রহণ করেছেন। সালাফগণ এ হাদীসটির ঠিক সে ব্যাখ্যাই দিয়েছেন যে ব্যাখ্যা হাদীসটির যিনি বক্তা তিনি দিয়েছেন। অতএব, 'আমি অসুস্থ হয়েছিলাম', 'তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম', আমি তোমার কাছে পানি পান করতে চেয়েছিলাম', এ কথাগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ তা'আলা নিজেই দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, 'তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল', 'যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল', 'আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি পান করতে চেয়েছিল'। অর্থাৎ বিষয়টি খুবই স্পষ্ট যে, এখানে উদ্দেশ্য হলো- আল্লাহ তা'আলার বান্দাদের মধ্যে কোনো বান্দার অসুস্থ হয়ে পড়া, আল্লাহ তা'আলার বান্দাদের মধ্যে কোনো বান্দার খাবার চাওয়া, আল্লাহ তা'আলার বান্দাদের মধ্যে কোনো বান্দার পানি পান করতে চাওয়া। আর এ ব্যাখ্যা যিনি দিয়েছেন তিনি খোদ ওই সত্তা যিনি এ কথাগুলো বলেছেন এবং আল্লাহ তা'আলা তাঁর উদ্দেশ্য সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত। অতএব আমরা যদি এখানে অসুস্থ হওয়া, খাবার চাওয়া, পানি পান করতে চাওয়া- যা আল্লাহর দিকে নিসবত করে উল্লেখ করা হয়েছে- তার ব্যাখ্যায় যদি বলি যে, এখানে মূলত, বান্দার অসুস্থতা, খাবার চাওয়া ও পানি পান করতে চাওয়াকে বুঝানো হয়েছে, তবে এতে বাণীর যে বাহ্যিক অর্থ তা থেকে সরে যাওয়া হবে না; কারণ যিনি এ বাণীগুলো বলেছেন, তিনি নিজে এসবের ব্যাখ্যা এভাবেই দিয়েছেন। যেমন নাকি তিনি শুরুতেই কথাগুলো এভাবেই বলেছেন। হ্যাঁ, আল্লাহ তা'আলা নিজের দিকে সম্পৃক্ত করে বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন মানুষকে আগ্রাহান্বিত ও উৎসাহিত করার উদ্দেশে। যেমন আল্লাহ তা'আলা এক আয়াতে বলেন:
﴿مَن ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللَّهَ ﴾ [البقرة: ٢٤٥]
কে আছে, যে আল্লাহকে ঋণ দেবে? (সূরা আল বাকারা: ২: ২৪৫)
অতএব উক্ত হাদীসটি তাবিলপন্থীদের বিরুদ্ধে একটি বড় প্রমাণ; কেননা তাবিলপন্থীরা আল্লাহ তা'আলার সিফাত সংবলিত বক্তব্যগুলোকে, কুরআন- সুন্নাহর কোনো প্রমাণ ব্যতীতই, বাহ্যিক অর্থ থেকে সরিয়ে নেয়। তারা কিছু অমূলক যুক্তি দাঁড় করিয়ে তাহরীফ তথা অর্থবিকৃতির আশ্রয় নেয়। কেননা সেসব বক্তব্যের উদ্দেশ্য বাহ্যিকভাবে যা বুঝা যায় তা না হয়ে যদি অন্যকোনো উদ্দেশ্য হতো- অর্থাৎ তারা যেভাবে দাবি করে সেভাবে হতো- তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা অথবা তাঁর রাসূল তা বর্ণনা করতেন। যদি সেসব বক্তব্যের বাহ্যিক অর্থ আল্লাহর ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ হতো- যেমন তারা ধারণা করেছে-তবে নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা এবং তার রাসূল তা বর্ণনা করতেন যেভাবে উক্ত হাদীসে বর্ণনা করেছেন। যদি এসব বক্তব্যের বাহ্যিক অর্থ আল্লাহর জন্য উপযোগীভাবে নেওয়া আল্লাহর ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ হতো, তাহলে বলতে হবে যে, কুরআন ও সুন্নাহয় আল্লাহ তা'আলা এমন সব অগণিত গুণে নিজেকে গুনান্বিত করেছেন যা তাঁর ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ। আর এটি কখনো সম্ভব হতে পারে না।
উল্লিখিত উদাহরণগুলোর মাধ্যমেই আমার বক্তব্য শেষ করতে চাই এ আশায় যে তা অন্যান্য ক্ষেত্রে পথনির্দেশিকার কাজ করবে। অন্যথায়, এক্ষেত্রে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের নীতি সুস্পষ্ট। অর্থাৎ সিফাত-বিষয়ক আয়াত ও হাদীসসমূহকে তার বাহ্যিক অর্থেই বহন করা, কোনো বিকৃতিসাধন, বাতিলকরণ, ধরনধারণ নির্ণয়করণ এবং উদাহরণ নির্ণয়করণ ব্যতীতই।
সিফাত-বিষয়ক বক্তব্য সংক্রান্ত নীতিমালাসমূহে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সকল প্রশংসা আল্লাহ তা'আলার জন্য যিনি সৃষ্টিকুলের রব。
টিকাঃ
38 - মুসলিম, হাদীস নং ২৫৬৯।