📘 আল্লাহ তাআলার নান্দনিক নাম ও গুণসমগ্র > 📄 নবম ও দশম উদাহরণ

📄 নবম ও দশম উদাহরণ


নবম ও দশম উদাহরণ আল্লাহ তা'আলার বাণী:
﴿تَجْرِي بِأَعْيُنِنَا ﴾ [القمر: ١٤]
যা আমার চাক্ষুস তত্ত্বাবধানে চলত। (সূরা আল কামার: ৫৪: ১৪)
এবং মূসা আ. কে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ তা'আলার বাণী: (وَلِتُصْنَعَ عَلَى عَيْنِي ) [طه: ٣٩]
যাতে তুমি আমার চোখের সামনে প্রতিপালিত হও'। (তাহা: ৩৯)
জওয়াব:
উল্লিখিতি দু'আয়াতের অর্থও বাহ্যিক ও প্রকৃত অর্থ। তবে এখানে বাহ্যিক ও প্রকৃত অর্থ বলতে কি বুঝানো হয়েছে?
এখানে কি এটা বুঝানো হয়েছে যে, নূহ আ. এর কিশতি আল্লাহর চোখে চলত? কারণ بِأَعْيُنِنَا এর আক্ষরিক অর্থ 'আমার চোখে'? অথবা দ্বিতীয় আয়াত অনুযায়ী মূসা আ. কি আল্লাহর চোখের ওপর প্রতিপালিত হয়েছেন? কেননা عَلَى عَيْنِي এর আক্ষরিক অর্থ 'আমার চোখের ওপর'?
নাকি বলা হবে যে, এখানে বাহ্যিক অর্থ হলো- নূহ আ. কিশতি এভাবে চলত যে আল্লাহর চক্ষু তাকে তত্ত্বাবধান করত, অনুরূপভাবে মূসা আ. এর প্রতিপালনও আল্লাহর চোখের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়েছে।
প্রথম কথাটি যে বাতিল এ ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
কারণ:
এক. আরবী ভাষার ব্যবহারগত দাবি উক্ত কথার পক্ষে নয়। আর পবিত্র কুরআন আরবী ভাষায় নাযিল হয়েছে; এরশাদ হয়েছে:
﴿إِنَّا أَنزَلْنَاهُ قُرْءَانًا عَرَبِيًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ ﴾ [ইউসুফ: ২]
নিশ্চয় আমি একে আরবী কুরআনরূপে নাযিল করেছি যাতে তোমরা বুঝতে পার। (ইউসুফ: ১২: ২)
অন্য এক আয়াতে এসেছে:
﴿نَزَلَ بِهِ الرُّوحُ الْأَمِينُ عَلَى قَلْبِكَ لِتَكُونَ مِنَ الْمُنذِرِينَ * بِلِسَانٍ عَرَبِي مُّبِينٍ ﴾ [الشعراء: ١٩৩, ١৯৫]
“বিশ্বস্ত আত্মা” এটা নিয়ে অবতরণ করেছে। তোমার হৃদয়ে, যাতে তুমি সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত হও। সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়। (আশ-শু'আরা: ২৬: ১৯৩ - ১৯৫)
অতএব আরবী ভাষায় যদি কেউ বলে فلان يسير بعيني যার আক্ষরিক অর্থ হলো (অমুক ব্যক্তি আমার চোখে চলছে); কিন্তু কেউ কি উক্ত বাক্যটিকে এ অর্থে বুঝবে? বরং বাক্যটির প্রকৃত ও বাহ্যিক অর্থ হলো (অমুক ব্যক্তি আমার চোখের সামনে বা তত্তাবধানে চলছে)। অনুরূপভাবে যদি কেউ বলে فلان تخرج على عيني যার আক্ষরিক অর্থ হলো (অমুক ব্যক্তি আমার চোখের ওপর পড়া লেখা সম্পন্ন করেছে), কিন্তু কেউ কি এ অর্থে বাক্যটিকে বুঝবে? বরং বাক্যটি থেকে যে বাহ্যিক ও প্রকৃত অর্থ বুঝে থাকে তা হলো, (অমুক ব্যক্তি আমার চোখের সামনেই পড়ালেখা সম্পন্ন করেছে।) যদি কেউ উল্লিখিত দু'বাক্যের আক্ষরিক অর্থকে বাহ্যিক ও প্রকৃত অর্থ বলতে চায় তবে জ্ঞানী ব্যক্তিদের কথা দূরে থাক মুর্খ ব্যক্তিরাও তাকে নিয়ে হাসবে।
দুই. উল্লিখিত দু'আয়াতের বাহ্যিক ও প্রকৃত অর্থ নির্ধারণে প্রথমোক্ত কথাটি আল্লাহর জন্য কোনোক্রমেই সঙ্গতিপূর্ণ হতে পারে না। আল্লাহ তা'আলা সম্পর্কে যে ব্যক্তির ইলম রয়েছে এবং যে ব্যক্তি তাঁকে যথার্থরূপে কদর করে, তাঁর পক্ষে এ ধরনের অর্থ নির্ধারণ করা কখোনই সম্ভব নয়; কেননা আল্লাহ তা'আলা আরশের ওপরে আছেন এবং তিনি তাঁর সৃষ্টিকুল থেকে আলাদা। তিনি মাখলুখের মাঝে সত্তাসহ অবস্থান করেন না। তিনি কোনো মাখলুকের অভ্যন্তরেও অবস্থান করেন না এবং আল্লাহর মধ্যেও তাঁর কোনো মাখলুক অবস্থান করে না। আল্লাহ তা'আলা এসব থেকে পবিত্র ও ঊর্ধ্বে।
শব্দগত এবং অর্থগতভাবে উল্লিখিত দু'আয়াতের বাহ্যিক ও প্রকৃত অর্থ নির্ধারণের ব্যাপারে প্রথম কথাটি স্পষ্টরূপে বাতিল বলে সাব্যস্ত হওয়ার পর দ্বিতীয় কথাটিই বাহ্যিক ও প্রকৃত অর্থ বলে সাব্যস্ত হয়ে যায়; অর্থাৎ নূহ আ. এর কিশতি এভাবে চলেছে যে আল্লাহর চক্ষু তাকে তত্ত্বাবধান করেছে। অনুরূপভাবে মূসা আ. এভাবে প্রতিপালিত হয়েছেন যে, আল্লাহর চক্ষু তাকে তত্ত্বাবধান করেছে। সালাফদের কেউ কেউ 'আমার দৃষ্টির সামনে' বলে যে অর্থ করেছেন তাও এ বিষয়টিকে বুঝাচ্ছে; কারণ আল্লাহ তা'আলার যদি কাউকে তাঁর চক্ষু দ্বারা তত্ত্বাবধান করেন, তাহলে এ তত্ত্বাবধানের দাবি হলো যে তিনি তাকে দেখছেন। আর বিশুদ্ধ অর্থের দাবি হিসেবে যে অর্থ আসে তা ওই অর্থেরই অংশ। একটি শব্দ থেকে অর্থ উদ্ধারের সুবিদিত যে নিয়ম রয়েছে তার নিরিখেই এ জাতীয় অর্থ বিশুদ্ধ বলে পরিগণিত। আর আমরা জানি যে একটি শব্দ তিনভাবে তার অর্থনির্দেশ করে। 'মুতাবাকাহ' তথা হুবহু অর্থনির্দেশ, 'তাদাম্মুন' তথা শামিলগতভাবে অর্থনির্দেশ এবং 'ইলতিযাম' তথা দাবিগতভাবে অর্থনির্দেশ。

টিকাঃ
৩১ এখানে 'বিশ্বস্ত আত্মা' দ্বারা জিব্রীল (আঃ) কে বুঝানো হয়েছে।

📘 আল্লাহ তাআলার নান্দনিক নাম ও গুণসমগ্র > 📄 একাদশ উদাহরণ

📄 একাদশ উদাহরণ


একাদশ উদাহরণ
হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:
"وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقَرَّبُ إِلَيَّ بِالنَّوَافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ، فَإِذَا أَحْبَبْتُهُ كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ، وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ، وَيَدَهُ الَّتِي يَبْطِشُ بِهَا، وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشِي بِهَا، وَلَئِنْ سَأَلَنِي لَأُعْطِيَنَّهُ، وَلَئِنِ اسْتَعَاذَنِي لَأُعِيْذَنَّهُ"
(আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নিকটতা অর্জন করতে থাকে এ পর্যন্ত যে আমি তাকে ভালোবেসে ফেলি। আর আমি যখন তাকে ভালোবেসে ফেলি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে। আমি তার চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে। আমি তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে পাকড়াও করে। আমি তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে হাঁটে। সে যদি আমার কাছে চায় তবে আমি তাকে অবশ্যই দিই। সে যদি আমার আশ্রয় প্রার্থনা করে তবে নিশ্চয় আমি তাকে আশ্রয় দিই।)
উত্তর
এ হাদীসটি সহীহ বুখারীতে কিতাবুর রিকাক এর আওতাধীন ৩৮ নং অনুচ্ছেদে উল্লিখিত হয়েছে।৩২
আহলে সুন্নত ওয়াল জামা'আত হাদীসটিকে বাহ্যিক অর্থেই নিয়েছেন, কিন্তু এ হাদীসটির বাহ্যিক অর্থ কী?
হাদীসটির বাহ্যিক অর্থ কি এটা যে, আল্লাহ তা'আলা একজন ওলীর কান, চোখ, হাত ও পা হয়ে যান?
নাকি হাদীসটির বাহ্যিক অর্থ এটা যে, আল্লাহ তা'আলা একজন ওলীর কান, চোখ, হাত ও পাকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন। যাতে তার অনুভূতি ও আমল আল্লাহ কেন্দ্রিক হয়ে যায়।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, প্রথম কথাটি হাদীসটির বাহ্যিক অর্থ হতে পারে না। এটা বরং হাদীসটির দাবিগত অর্থও হতে পারে না। আর তা দু'কারণে:
প্রথম কারণ
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, 'আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নিকটতা অর্জন করতে থাকে এ পর্যন্ত যে আমি তাকে ভালোবেসে ফেলি।' তিনি আরো বলেছেন যে, 'সে যদি আমার কাছে চায় তবে আমি তাকে অবশ্যই দিই। সে যদি আমার আশ্রয় প্রার্থনা করে তবে নিশ্চয় আমি তাকে আশ্রয় দিই।' এখানে বান্দা ও মাবুদ, নিকটতা অর্জনকরী ও যার নিকটতা অর্জন করা হচ্ছে, যিনি ভালোবাসেন এবং যাকে ভালোবাসা হচ্ছে, প্রার্থনাকারী ও প্রার্থনার পাত্র, দাতা ও গ্রহীতা, আশ্রয় প্রার্থী ও আশ্রয়দাতার মধ্যে পার্থক্যটা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত। অর্থাৎ হাদীসের অনুপম বক্তব্য ভিন-ভিন্ন দুই সত্তাকে বুঝাচ্ছে, যাদের একজন অন্যজন থেকে আলাদা। অতঃপর একজন অপর জনের গুণ অথবা অপর জনের অংশসমূহের মধ্যে কোনো অংশে পরিণত হতে পারে না।
দ্বিতীয় কারণ
ওলীর কান, চোখ, হাত ও পা- এগুলো হলো ক্ষণস্থায়ী সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য বা অংশ। আর এটা কোনো জ্ঞানী ব্যক্তি ধারণা করতে পারে না যে, যিনি অনাদি-অনন্ত, তিনি একটি সৃষ্টিজীবের কান, চোখ, হাত ও পায়ে পরিণত হয়ে যাবেন, এ জাতীয় অর্থ তো কল্পনা করতেও মনে ঘৃণার উদ্রেক করে। তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়ার জন্যও এ জাতীয় কথা জিহ্বা দিয়ে উচ্চারণ করা মুশকিল। অতএব কি করে বলা শুদ্ধ হতে পারে যে এটাই হলো হাদীসের বাহ্যিক অর্থ এবং এ বাহ্যিক অর্থ থেকে সরে আসা হয়েছে? আপনি পবিত্র-মহান হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা আপনার, আপনার গুণ বর্ণনা করে শেষ করতে পারব না, আপনি যেভাবে নিজেকে গুণান্বিত করেছেন আপনি ঠিক সে রকমই।
প্রথম কথাটি বাতিল ও নিষিদ্ধ বলে প্রমাণিত হওয়ার পর দ্বিতীয় কথাটিই শুদ্ধ হিসেবে থেকে যায়। আর তা হলো, আল্লাহ তা'আলা ওলীর কান, চোখ ও আমলকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন। এমনভাবে যে, তার কান- চোখ দিয়ে অনুভব করা, হাত-পা দিয়ে কাজ করা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য হয়ে যায়, সে সাহায্য চাইলে কেবল আল্লাহর কাছেই চায়, ইত্তিবা ও বিধিবিধান পালন শুধু আল্লাহর জন্যই হয়ে যায়। অতএব পরিপূর্ণ ইখলাস, আল্লাহর সাহায্য চাওয়া এবং শরীয়ত ও বিধান পালন এসবগুলোই তার মধ্যে পূর্ণাঙ্গরূপে একত্র হয়। আর এটাই হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ তাওফীক। সালাফগণ উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা এভাবেই দিয়েছেন। এ ব্যাখ্যাটি হাদীসের শব্দমালার যে বাহ্যিক অর্থ রয়েছে তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। হাদীসটির কন্টেক্সট থেকে যে প্রকৃত অর্থ বুঝা যায় তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ ব্যাখ্যা কোনো তাবিল-নির্ভর ব্যাখ্যা নয়। এ ব্যাখ্যায় বাহ্যিক অর্থ থেকে দূরে চলে যাওয়াও হয়নি। এ জন্য আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা ও শুকরিয়া。

টিকাঃ
৩২ - বুখারী, হাদীস নং (৬৫০২)

📘 আল্লাহ তাআলার নান্দনিক নাম ও গুণসমগ্র > 📄 দ্বাদশ উদাহরণ

📄 দ্বাদশ উদাহরণ


দ্বাদশতম উদাহরণ
হাদীসে কুদসীতে এসেছে:
«من تقرب مني شبرا تقربت منه ذراعا، ومن تقرب مني ذراعا تقربت منه باعاً، ومن أتاني يمشي أتيته هرولة».
যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ আমার নিকটবর্তী হলো, আমি এক হাত পরিমাণ তার নিকটবর্তী হলাম। আর যে ব্যক্তি এক হাত পরিমাণ আমার নিকটবর্তী হলো আমি এক গজ পরিমাণ তার নিকটবর্তী হলাম। আর যে ব্যক্তি আমার কাছে হেঁটে এল, আমি তার কাছে দৌড়ে যাই।
হাদীসটি সহীহ। ইমাম মুসলিম হাদীসটি যিকির ও দো'আ অধ্যায়ে আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেও অনুরূপ একটি হাদীস তিনি উল্লেখ করেছেন। ইমাম বুখারী কিতাবুত্ তাওহীদ, অনুচ্ছেদ পনেরতে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে অনুরূপ একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন।৩০
[জওয়াব:]
এই হাদীসটি আল্লাহ তা'আলার ওই সকল কর্মকে বুঝাচ্ছে যা তিনি সম্পাদন করতে ইচ্ছা করেন। সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা'আলা যা ইচ্ছা তাই করেন। এ বিষয়টি কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। যেমন আল্লাহ তা'আলার নিম্নোক্ত বাণীসমূহে:
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ ﴾ [البقرة: ١٨٦]
আর যখন আমার বান্দাগণ তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, আমি তো নিশ্চয় নিকটবর্তী। আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে ডাকে। (সূরা আল বাকারা: ২: ১৮৬)
وَجَاءَ رَبُّكَ وَالْمَلَكُ صَفًّا صَفًّا ﴾ [الفجر: ٢٢]
আর তোমার রব ও ফেরেশতাগণ উপস্থিত হবেন সারিবদ্ধভাবে। (সূরা আল ফাজর: ৮৯: ২২)
هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا أَن تَأْتِيَهُمُ الْمَلَائِكَةُ أَوْ يَأْتِيَ رَبُّكَ أَوْ يَأْتِيَ بَعْضُ عَابَاتِ رَبِّكَ ﴾ [الأنعام: ١٥٨]
তারা কি এরই অপেক্ষা করছে যে, তাদের নিকট ফেরেশতাগণ হাজির হবে, কিংবা তোমার রব উপস্থিত হবে অথবা প্রকাশ পাবে তোমার রবের আয়াতসমূহের কিছু? (সূরা আল আনআম: ৬: ১৫৮)
الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى ) [طه: ٥]
দয়াময় (আল্লাহ) আরশে সমাসীন। (সূরা তাহা: ২০: ৫)
অনুরূপভাবে হাদীসে এসেছে:
«ينزل ربنا كل ليلة إلى السماء الدنيا حين يبقى ثلث الليل الآخر»
আমাদের রব প্রতি রাতেই নিম্নাকাশে নেমে আসেন, যখন রাতের শেষ তৃতীয় প্রহর অবশিষ্ট থাকে। ৩৪
অন্য এক হাদীসে এসেছে:
«ما تصدق أحد بصدقة من طيب ولا يقبل الله إلا الطيب - إلا أخذها الرحمن بيمينه»
যখন কোনো ব্যক্তি হালাল সম্পদ থেকে কিছু দান করে- আর আল্লাহ হালাল ব্যতীত গ্রহণ করেন না- তখন দয়াময় তা তাঁর ডান হাত দিয়ে গ্রহণ করেন।
এ জাতীয় আরো অন্যান্য আয়াত ও হাদীস যা ইচ্ছাকৃত কর্মসমূহ আল্লাহর সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়াকে নির্দেশ করে। অতএব হাদীসে যে উল্লিখিত হয়েছে, 'আমি তার নিকটবর্তী হই', 'আমি তার দিকে দৌড়ে আসি' তা এই পর্যায়ের।
সালাফগণ তথা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত উল্লিখিত ধরনের বাণীসমূহকে আল্লাহ তা'আলার শানের জন্য উপযোগীভাবে বাহ্যিক ও প্রকৃত অর্থেই নিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে তারা কোনো 'তাকঈফ' তথা ধরন-ধারণ নির্ধারণ এবং 'তামছীল' তথা উদাহরণ নির্ধারণের আশ্রয়ে যান না।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ, আল্লাহর নিম্নাকাশে নেমে আসা বিষয়ক হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন (দ্র. মাজমুউল ফাতাওয়া: খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৪৬৬): আল্লাহ তা'আলার নিকটবর্তী হওয়া এবং কিছু বান্দার কাছে আসা- যারা আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছাকৃত কর্ম, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলার আগমণ, তাঁর অবতরণ ও আরশের ওপরে আরোহনকে সাব্যস্ত করে - তারা উল্লিখিত হাদীসে নিকটবর্তী হওয়ার যে কথা আছে সেটাকেও সাব্যস্ত করেন।'
অতএব এ কথা বলতে বাধা কি যে, আল্লাহ তা'আলা তাঁর বান্দার নিকটবর্তী হন, তিনি যেভাবে চান সেভাবে, তাঁর ঊর্ধ্বাবস্থান সত্ত্বেও?
কোনো ধরন-ধারণ নির্ধারণ না করে, অথবা কোনো উদাহরণ না দিয়ে এ কথা বলতে বাধা কি যে আল্লাহ তা'আলা যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে আসবেন?
এটা তো আল্লাহ তা'আলার কামাল ও পূর্ণাঙ্গতারই একটি বিষয় যে তিনি তাঁর শান মোতাবেক যা ইচ্ছা তাই করবেন।
কেউ কেউ বলেছেন যে, এ হাদীসে আল্লাহ তা'আলার যে কথাটি এসেছে যে, 'আমি তাঁর নিকট দৌড়ে যাই', এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য অর্জনের জন্য কাজ করে যায় এবং শরীর ও অন্তর উভয়টা নিয়ে আল্লাহর পানে ধাবিত হয়, তাকে আল্লাহ তা'আলা অতিদ্রুত গ্রহণ করে নেন। আর আল্লাহ তা'আলা আমলকারীকে যে প্রতিদান দেন তা আমলকারীর আমলের চেয়েও অধিক পরিপূর্ণ। তারা তাদের এ বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন যে, আল্লাহ তা'আলা হাদীসে কুদসীতে বলেছেন, 'যে আমার কাছে হেঁটে আসে'। আর এটা জ্ঞাত বিষয় যে, আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য অর্জনকারী, আল্লাহ তা'আলার কাছে পৌঁছতে আগ্রহী ব্যক্তি কেবলমাত্র হাঁটার মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য অর্জন করে না, বরং কখনো হাঁটার মাধ্যমে, যেমন সালাতের উদ্দেশে মসজিদের দিকে হেঁটে যাওয়া, হজ পালনের উদ্দেশে হেঁটে যাওয়া, আল্লাহর পথে জিহাদের উদ্দেশে হেঁটে যাওয়া ইত্যাদি। আবার কখনো রুকু-সিজদা ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য অর্জন করে থাকে, যেমন হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: 'নিশ্চয় বান্দা আল্লাহ তা'আলার অতি নিকটবর্তী থাকে তখন যখন সে সিজদারত থাকে।'৩৬ বরং বান্দা বিছানায় শুয়ে থেকেও আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:
﴿الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ ﴾ [ال عمران: ۱۹۱]
যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও কাত হয়ে। (সূরা আলে ইমরান: ৩: ১৯১)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইমরান ইবনে হুসাইনকে বলেছেন:
صل قائما، فإن لم تستطع فقاعداً، فإن لم تستطع فعلى جنب
তুমি দাঁড়িয়ে সালাত পড়, যদি না পার তাহলে বসে, আর যদি না পার তাহরে কাত হয়ে। ৩৭
উক্ত ব্যাখ্যার প্রবক্তাগণ বলেন: যদি বিষয়টি এ রকমই হয়, তাহলে হাদীসটির উদ্দেশ্য হবে আল্লাহ তা'আলা বান্দার আমলের যে বিনিময় দেন তা বর্ণনা করা। আর যে ব্যক্তি একনিষ্ঠ হয়ে আল্লাহর প্রতি ধাবিত হবে, সে যদি ধীরগামীও হয় তবুও আল্লাহ তা'আলা তাকে তার আমলের চেয়েও উত্তম ও পূর্ণাঙ্গ প্রতিদান দেবেন। আর এটাই হলো হাদীসটির বাহ্যিক অর্থ যার অনন্য বক্তব্য থেকে শরঈ ইঙ্গিত অনুযায়ী বুঝা যাচ্ছে।
যদি অনন্য বক্তব্য থেকে শরঈ ইঙ্গিত অনুযায়ী এ অর্থ বুঝা যায় তবে তা বাহ্যিক অর্থ থেকে দূরে যাওয়া হবে না, আহলে তা'তীলদের তাবিলের মতোও তাবিল করা হবে না, অতএব তা আহলে সুন্নতের বিরুদ্ধে দলিল হিসেবে দাঁড়াবে না।
উল্লিখিত অভিমত ব্যক্তকারী যা বললেন, তা ফেলে দেওয়ার মতো না। তবে প্রথম কথাটি অধিক পরিষ্কার, ত্রুটিমুক্ত এবং সালাফদের মাযহাবের অধিক উপযোগী।
শরঈ ইঙ্গিতের যে কথাটি বলা হয়েছে, অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য অর্জন শুধু হাঁটার সঙ্গেই বিশিষ্ট নয়, বরং বলা হবে যে হাদীসটি একটি উদাহরণতুল্য। কোনটি ইবাদত এবং কোনটি ইবাদত নয়, তা নির্দিষ্ট করার জন্য হাদীসটি উল্লিখিত হয়নি। অতএব হাদীসটির অর্থ হবে: যে ব্যক্তি আমার কাছে এমন ইবাদতের ক্ষেত্রে হেঁটে আসল যাতে হাঁটার প্রয়োজন পড়ে, যেমন জামাতের সঙ্গে সালাত আদায়ের জন্য মসজিদের যাওয়ার প্রয়োজনে হাঁটতে হয়, অথবা এমন ইবাদত যা মূলত হেঁটেই সম্পন্ন করতে হয়, যেমন তাওয়াফ এবং সাঈ।
আল্লাহ তা'আলাই সর্বোত্তম জ্ঞানী。

টিকাঃ
৩৩ - বুখারী, হাদীস নং ৭৪০৫; মুসলিম হাদীস নং ২৬৭৫
৩৪ - এ হাদীসটির সূত্র পূর্বে গিয়েছে
- বুখারী, যাকাত অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: হালাল উপার্জন থেকে সদাকা করা, হাদীস নং ১৪১০; মুসলিম, যাকাত অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: হালাল উপার্জনের সদাকা কবুল হওয়া, হাদীস নং ১০১৪
৩৬ - মুসলিম, সালাত অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: রুকু ও সিজদায় যা বলা হবে, হাদীস নং ৪৮২
৩৭ - বুখারী, জুমআ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: যদি বসে নামাজ পড়তে না পাড়ে তবে কাত হয়ে, হাদীস নং ১১১৭

📘 আল্লাহ তাআলার নান্দনিক নাম ও গুণসমগ্র > 📄 ত্রয়োদশ উদাহরণ

📄 ত্রয়োদশ উদাহরণ


ত্রয়োদশ উদাহরণ
আল্লাহ তা'আলা বলেন:
﴿ أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا خَلَقْنَا لَهُم مِّمَّا عَمِلَتْ أَيْدِينَا أَنْعَامًا فَهُمْ لَهَا مَالِكُونَ ﴾ [يس: ٧١]
তারা কি দেখেনি, আমার হাতের কৃত বস্তুসমূহের মধ্যে আমি তাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছি। (সূরা ইয়াসীন: ৩৬: ৭১)
আমরা এ আয়াতের উত্তর দেব প্রথমে জিজ্ঞাসা করে যে, এ আয়াতের প্রকাশ্য ও প্রকৃত অর্থ কি? প্রকাশ্য ও প্রকৃত অর্থ নির্ধারিত হওয়ার পরেই তো এটা বলা শুদ্ধ হতে পারে যে তা প্রকাশ্য ও প্রকৃত অর্থ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এটা কি বলা হবে যে এ আয়াতের বাহ্যিক ও প্রকৃত অর্থ এই যে, আল্লাহ তা'আলা চতুষ্পদ জন্তু তাঁর নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন ঠিক সেভাবে যেভাবে তিনি আদম আ. কে সৃষ্টি করেছেন?
না কি বলা হবে যে, এ আয়াতের বাহ্যিক অর্থ এই যে, আল্লাহ তা'আলা চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন ঠিক সেভাবে যেভাবে তিনি অন্যান্য সৃষ্টিবস্তুকে সৃষ্টি করেছেন, অর্থাৎ তিনি তার হাত দিয়ে তা সরাসরি সৃষ্টি করেননি, বরং হাতকে এখানে কর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে এটা বুঝানোর জন্য যে হাতের যিনি মালিক তিনিই তা সৃষ্টি করেছেন। আর এটা আরবী ভাষায় একটি স্বীকৃত একটি বিষয়।
প্রথম কথাটি আয়াতের বাহ্যিক ও প্রকৃত অর্থ হতে পারে না দু' কারণে:
প্রথমত: আরবী ভাষার দাবি অনুযায়ী প্রথম কথাটি আয়াতের শব্দমালার দাবি হতে পারে না। আপনি যদি নিম্নবর্ণিত কয়েকটি আয়াত অনুধাবন করে দেখেন তবে বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট হয়ে যাবে:
আল্লাহ তা'আলা বলেন:
﴿وَمَا أَصَابَكُم مِّن مُّصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُوا عَن كَثِيرٍ ﴾ [الشورا: ٣٠]
আর তোমাদের প্রতি যে মুসীবত আপতিত হয়, তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। আর অনেক কিছুই তিনি ক্ষমা করে দেন। (আশশুরা: ৪২: ৩০)
﴿ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ ﴾ [الروم: ٤١]
মানুষের হাতের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে ফাসাদ প্রকাশ পায়। যার ফলে আল্লাহ তাদের কতিপয় কৃতকর্মের স্বাদ তাদেরকে আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সূরা আররুম: ৩০: ৪১)
﴿ذَلِكَ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيكُمْ﴾ [آل عمران: ١٨٢]
এ হল তোমাদের হাত যা আগাম পেশ করেছে। (সূরা আলে ইমরান: ৩: ১৮-২)
এসব আয়াতে মানুষের হাত যা উপার্জন করেছে বা হাত যা আগাম পেশ করেছে দ্বারা স্বয়ং মানুষ যা উপার্জন করেছে বা আগাম পেশ করেছে বুঝানো হয়েছে। হোক তা হাত দ্বারা অথবা অন্যভাবে। এর বিপরীতে যদি বলা হয় যে, এ কাজটি আমি আমার দু'হাত ব্যবহার করে করেছি, তাহলে এর অর্থ হবে কেবল ওই কাজ যা হাত ব্যবহার করে করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা'আলার নিম্নোক্ত বাণীতে:
﴿فَوَيْلٌ لِلَّذِينَ يَكْتُبُونَ الْكِتَابَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هَذَا مِنْ عِندِ اللَّهِ﴾ [البقرة: [٧٩
সুতরাং ধ্বংস তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব লিখে। তারপর বলে, 'এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে', যাতে তা তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করতে পারে। (সূরা আল বাকারা: ২: ৭৯)
এখানে 'নিজ হাতে কিতাব লিখে' দ্বারা সরাসরি হাত ব্যবহার করে কিতাব লিখাকে বুঝানো হয়েছে।
দ্বিতীয়ত: এখানে যদি উদ্দেশ্য এটাই হত যে, আল্লাহ তা'আলা সরাসরি তাঁর হাত দ্বারাই চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন, তাহলে বাক্যটি এমন হতো: (خَلَقْنَا لَهُم بِأَيْدِينَا أَنْعَامًا) (অর্থাৎ আমি তাদের জন্য সৃষ্টি করেছি আমার হাত দ্বারা চতুষ্পদ জন্তু) যেমন আল্লাহ তা'আলা আদম আ. এর ব্যাপারে বলেছেন:
قَالَ يَإِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَن تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَى [ص: ٧٥]
আল্লাহ বললেন, 'হে ইবলীস, আমার দু'হাতে আমি যাকে সৃষ্টি করেছি তার প্রতি সিজদাবনত হতে কিসে তোমাকে বাধা দিল? (সূরা সাদ: ৩৮: ৭৫)
কারণ আল কুরআন অস্পষ্ট নয় বরং সুষ্পষ্ট বর্ণনা নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে:
وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَنَا لِكُلِّ شَيْءٍ [النحل: ٨٩]
আর আমি তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছি প্রতিটি বিষয়ের স্পষ্ট বর্ণনাস্বরূপ। (সূরা আন্-নাহল: ১৬: ৮৯)
অতএব এ আলোচনার দ্বারা প্রথম কথাটির বাতুলতা প্রকাশিত হয়ে গেল, দ্বিতীয় কথাটি যে সঠিক তা প্রমাণিত হয়ে যায়। আর তা হলো: আলোচ্য আয়াতের বাহ্যিক অর্থ হলো, আল্লাহ তা'আলা চতুষ্পদ জন্তুকে ঠিক সেভাবেই সৃষ্টি করেছেন যেভাবে তিনি সৃষ্টি করেছেন অন্য মাখলুকাতকে। অর্থাৎ তিনি তাঁর হাত দিয়ে সরাসরি সৃষ্টি করেননি। তবে কর্মকে হাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা কর্মকে সত্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার মতোই। অতএব আল্লাহ তা'আলার বাণী, 'আমার হাতের কৃত বস্তুসমূহের মধ্যে আমি তাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছি' এর অর্থ 'আমার সৃষ্ট বস্তুসমূহের মধ্যে আমি তাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছি'। আরবী ভাষার ব্যবহাররীতি এটাই দাবি করে। তবে যদি আরবী ভাষায় ৬ (হাত) শব্দের পূর্বে অব্যয় থাকে তবে সে সময় সরাসরি হাতই অর্থ হয়ে থাকে। এই পার্থক্যকে জেনে রাখুন। কারণ, এ সাদৃশ্যময় বিষয়সমূহের মধ্যে থাকা পার্থক্য জানা উত্তম ইলমের মধ্যে শামিল। এর দ্বারা অনেক প্রশ্ন সমাধান হয়ে যায়。

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন