📄 আল কুরআনের প্রমাণ
আল কুরআনের প্রমাণ
আল্লাহ তা'আলার ঊর্ধ্বাবস্থান আল কুরআন দ্বারা বিভিন্নভাবে প্রমাণিত। কখনো 'উলু' (ঊর্ধ্বতা), কখনো 'ফাওকিইয়া' (ওপরে থাকা), কখনো ইস্তিওয়া 'আলাল আরশ (আরশের ওপরে ওঠা), কখনো 'আকাশে থাকা' ইত্যাদি শব্দের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। যেমন নিম্নোক্ত আয়াতসমূহে:
﴿ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ ﴾ [البقرة: ٢٥٥]
আর তিনি সুউচ্চ, মহান। (আল বাকারা: ২: ২৫৫)
﴿ وَهُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِهِ ﴾ [الانعام: ١৮]
আর তিনিই তাঁর বান্দাদের উপর ক্ষমতাবান। (আল আনআম: ৬: ১৮)
﴿ الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى ﴾ [طه: ٥]
পরম করুণাময় আরশের ওপর উঠেছেন। (তাহা: ২০: ৫)
﴿ أَمِنتُم مَّن فِي السَّمَاءِ أَن يَخْسِفَ بِكُمُ الْأَرْضَ فَإِذَا هِيَ تَمُورُ ﴾ [الملك: ١৬]
যিনি আসমানে আছেন, তিনি তোমাদেরসহ জমিন ধ্বসিয়ে দেওয়া থেকে কি তোমরা নিরাপদ হয়ে গেছ? (আল মুলক: ৩৭: ১৬)
আবার কখনো আল্লাহর পানে বিভিন্ন বিষয়ের ঊর্ধ্বগমন, ওপরের দিকে ওঠা এবং আল্লাহর দিকে উঠিয়ে নেওয়া এ জাতীয় শব্দ দ্বারা আল কুরআন আল্লাহ তা'আলার ঊর্ধ্বাবস্থানকে নির্দেশ করেছে। যেমন নিম্নোক্ত উদাহরণসমূহে:
إِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ ) [فاطর: ১০]
তাঁরই পানে উত্থিত হয় ভাল কথা। (ফাতির: ৩৫: ১০)
تَعْرُجُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ﴾ [আল-মাআরিজ: ৪]
ফেরেশতাগণ ও রূহ এমন এক দিনে আল্লাহর পানে ঊর্ধ্বগামী হয়। (আল মাআরিজ: ৭০: ৪)
إِذْ قَالَ اللهُ يَعِيسَى إِنِّي مُتَوَفِّيكَ وَرَافِعُكَ إِلَى [আল ইমরান: ৫৫]
স্মরণ কর, যখন আল্লাহ বললেন, 'হে ঈসা, নিশ্চয় আমি তোমাকে পরিগ্রহণ করব, তোমাকে আমার দিকে উঠিয়ে নেব।' (আলে ইমরান: ৩: ৫৫)
আবার কখনো বা আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে কোনো কিছু 'অবতরণ করা' ও তৎসংলগ্ন শব্দ দিয়ে আল কুরআন আল্লাহ তা'আলার ঊর্ধ্বাস্থানকে প্রমাণিত করেছে, যেমন নিম্নোক্ত আয়াতদ্বয়ে:
قُلْ نَزَّلَهُ رُوحُ الْقُدُسِ مِن رَّبِّكَ ﴾ [আন-নাহল: ১০২]
বল, রুহুল কুদুস (জীবরীল) একে (কুরআনকে) তোমার রবের পক্ষ হতে যথাযথভাবে নাযিল করেছেন। (সূরা আন-নাহল: ১৬: ১০২)
يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الْأَرْضِ ثُمَّ يَعْرُجُ إِلَيْهِ ﴾ [السجدة: ٥]
তিনি আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত সকল কার্য পরিচালনা করেন। তারপর তা তাঁরই দিকে উত্থিত হয়। (আস-সাজদাহ: ৩২: ৫)
📄 সুন্নাতের প্রমাণ
সুন্নতের প্রমাণ
আল্লাহ তা'আলার সুউচ্চ অবস্থান কথা, কর্ম ও অনুমোদন এ তিন প্রকার সুন্নত দ্বারাই প্রমাণিত এবং তা বহু হাদীসে নানাভাবে এসেছে এবং সবগুলো মিলে মুতাওয়াতিরের পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে। নিম্নে এ জাতীয় কিছু হাদীস উল্লেখ করা হলো:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদারত অবস্থায় বলেছেন:
سبحان ربي الأعلى
(পবিত্র মহান আমার রব, যিনি সর্বোচ্চ)। ২০
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদীসে বলেছেন:
"إن الله لما قضى الخلق كتب عنده فوق عرشه إن رحمتي سبقت غضبي"
আল্লাহ তা'আলা যখন সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি তাঁর কাছে আরশের ওপর লিখলেন, নিশ্চয় আমার রহমত আমার রাগ থেকে অগ্রগামী হয়েছে। ২৪
অন্য এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
"ألا تأمنوني وأنا أمين من في السماء"
তোমরা কি বিশ্বাস করবে না; অথচ আমি হলাম যিনি আকাশে আছেন তাঁর বিশ্বাসের পাত্র। ২৫
হাদীস দ্বারা আরো প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার দিন মিম্বারে থাকা অবস্থায় দু'হাত উত্তোলন করেছেন এবং বলেছেন, 'হে আল্লাহ! আপনি আমাদের উদ্ধার করুন! 26'
আর তিনি আরাফার দিন খুতবা প্রদানকালে আকাশের দিকে হাত উত্তোলন করেছেন যখন মানুষেরা বলেছে, 'আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি পৌঁছে দিয়েছেন, দায়িত্ব আদায় করেছেন এবং নসীহত করেছেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, اللهم اشهد (হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন)।27
একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক কৃতদাসীকে লক্ষ্য করে বললেন, 'আল্লাহ কোথায়?' উত্তরে সে বলল যে, 'আসমানে'। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কথা মেনে নিলেন এবং তার মনিবকে বললেন, 'তাকে আযাদ করে দাও, নিশ্চয় সে মুমিনা'। 28
টিকাঃ
২০ - মুসলিম হাদীস নং ৭৭২
২৪ - বুখারী, হাদীস নং ৭৪২২; মুসলিম, হাদীস নং ২৭৫১।
২৫ - বুখারী, হাদীস নং ৪৩৫১
২৬ - বুখারী, হাদীস নং ১০১৪; মুসলিম, হাদীস নং ৮৯৭।
২৭ - মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮।
২৮ - মুসলিম, হাদীস নং ৫৩৭।
📄 যুক্তিনির্ভর প্রমাণ
যুক্তিনির্ভর প্রমাণ
আল্লাহ তা'আলা সকল পূর্ণাঙ্গ গুণাবলিতে গুণান্বিত এবং সকল অপূর্ণাঙ্গ গুণাবলি হতে পবিত্র, মানুষের আকল বুদ্ধি এ বিষয়টিকে আবশ্যক মনে করে। আর ঊর্ধ্বাবস্থান হলো আল্লাহ তা'আলার পূর্ণাঙ্গ গুণাবলির একটি। আর নিম্নাবস্থান হলো একটি অপূর্ণাঙ্গ গুণ। অতএব ঊর্ধ্বাবস্থানের গুণে গুনান্বিত থাকা এবং এর বিপরীতটা থেকে পবিত্র থাকা আল্লাহ তা'আলার জন্য একটি আবশ্যক বিষয়।
📄 ফিতরতের প্রমাণ
ফিতরতের প্রমাণ
ফিতরত বা সুস্থ মানবপ্রকৃতি আল্লাহ তা'আলার ঊর্ধ্বাবস্থানকে অত্যন্ত প্রাকৃতিকভাবেই নির্দেশ করে। এমন কোনো প্রার্থনাকারী বা ভীতু-আতঙ্কগ্রস্ত ব্যক্তি নেই যে শাণিত আগ্রহ নিয়ে আল্লাহর পানে ছুটে যায় অথচ ডানে বামে না তাকিয়ে কেবল ঊর্ধ্বপানে অনুভূতি ব্যক্ত করার আগ্রহ অন্তরে জাগ্রত হয় না।
আপনি মুসল্লীদের জিজ্ঞাসা করে দেখুন তারা যখন سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَىٰ (পবিত্র মহান আমার রব, যিনি সর্বোচ্চ) এ কথা বলে তখন তাদের অন্তর কোন দিকে ধাবিত হয়?