📘 আল্লাহকে মানুন নিরাপদ থাকুন > 📄 সবরের তিন স্তর

📄 সবরের তিন স্তর


ইসলামে সবর ও ধৈর্যের তিনটি স্তর রয়েছে-
এক. আল্লাহর আনুগত্যে ধৈর্যধারণ।
দুই. অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার ধৈর্যধারণ।
তিন. তাকদির ও বিপদাপদে ধৈর্যধারণ।
আল্লাহ -এর আনুগত্য প্রকাশে ধৈর্যের প্রয়োজন হয়। বিনীত ও সুস্থিরভাবে পরিপূর্ণ আনুগত্যের জন্য মনকে ধৈর্যের পথে টানতে হয়। এটি হল সর্বোত্তম ধৈর্য। আল্লাহ -এর আনুগত্যে ধৈর্য।
মন মানুষকে মন্দের আহ্বান করে। খামখেয়ালির পথে তাড়িয়ে নেয়। তখন ধৈর্যধারণ করতে হয়। এই হল গোনাহ ও অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার ধৈর্য।
আল্লাহ মানুষের নিয়তি নির্ধারণ করে রেখেছেন। অদৃষ্টে যা রেখেছেন, তা আমার মর্যাদা বাড়াতে পারে। ভুলত্রুটি কমাতে পারে। তাই নিয়তির উপর বিরক্ত না হওয়া চাই। এ ক্ষেত্রেও ধৈর্যের পরিচয় দিতে হয়, তাকদীরের উপর ধৈর্য।
আল্লাহ -র নেককার বান্দারা নানা ধরণের বিপদের সম্মুখীন হতেন। তখন তারা ধৈর্যধারণ করতেন। তাদের সেসব ঘটনাপঞ্জি থেকে সবর ও একিনের স্বরূপ নিরুপণ করা যায়।

📘 আল্লাহকে মানুন নিরাপদ থাকুন > 📄 সবরের পরিচয়

📄 সবরের পরিচয়


সবরের সংজ্ঞায় ও স্বরূপ নির্ণয়ে বহুধা মতামত রয়েছে।
কেউ আমার শরীর কেটে ফেললেও তা আল্লাহর ফয়সালা এবং নিয়তির লেখা হিসেবে কর্তনকালে তৃপ্তির সাথে হাস্যোজ্জ্বল থাকার নাম সবর।
আল্লাহ আমার জন্য যা পছন্দ করেছেন, তা আমার পছন্দ হওয়া এবং আল্লাহ যা বেশি পছন্দ করেছেন, তা আমার বেশি পছন্দনীয় থাকার নাম সবর-
হিংসুটেরা যাই বলে তাই হয় যদি গো গোপনভেদ, কষ্ট তবে তুষ্টি তোমার কান্না-হাসির কী ভেদাভেদ!
স্বাভাবিক প্রাপ্তি অর্জন না হয়ে যা অর্জন হয়েছে, তাই শ্রেষ্ঠ প্রতিদান হিসেবে মেনে নেয়ার নাম সবর।
সবরের সংজ্ঞা যাই হোক, আল্লাহ সবরকারীদের ব্যাপারে বলেন-
যারা সবরকারী, তারাই পুরস্কার পায় অগুণতি। [সূরা যুমার : ১০]
হে ঈমানদাররা! ধৈর্য ধারণ কর এবং মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবলম্বন কর। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা তোমাদের উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ হতে পার। [সূরা আলে ইমরান : ২০০]
আল্লাহ বান্দাকে পরীক্ষা করেন। এটি আল্লাহ -র কর্মপদ্ধতি।
চারটি উদ্দেশ্যে আল্লাহ বান্দার পরীক্ষা নিয়ে থাকেন-
এক.
মর্যাদাদান। আল্লাহ পরীক্ষা দ্বারা দুনিয়ায়-আখেরাতে বান্দার মর্যাদা উঁচু করেন। পরীক্ষিত বান্দারা আল্লাহ -র কাছে বেশি মর্যাদাশীল। তারা জীবনের প্রথম ধাপেই পরীক্ষার সম্মুখীন হন। যদি সবর করেন, আল্লাহ তাদের মর্যাদা উঁচু করে দেন। চিরকাল তাদের সুনাম অক্ষুণ্ণ থাকে।
দুই.
প্রতিপালন। আল্লাহ পরীক্ষা দ্বারা বান্দার অন্তর প্রতিপালন করেন। আল্লাহর প্রতি নিষ্ঠ ও সত্য-সমর্পিত হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ বান্দা থেকে এই পরীক্ষা নিয়ে থাকেন।
তিন.
দাসত্ব নিশ্চিতকরণ। আল্লাহ বান্দাদের সতত-বান্দারূপে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। দাবি-দাওয়া, যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে নিজেকে আল্লাহ প্রকৃত বান্দারূপে প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। অনেকেই নিজেকে আল্লাহ -র সমর্পিত বান্দা হিসেবে ঘোষণা করেন। কিন্তু কোন পরীক্ষার সম্মুখীন হলে প্রকৃত পরিচয় ফুটে ওঠে। তখন আল্লাহর লিখন থেকে পার্শ্ব ফিরিয়ে পলায়ন করতে চায়। দুনিয়ায়-আখেরাতে এ এক সুস্পষ্ট ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই নয়।
আল্লাহ -র দাস হিসেবে, প্রকৃত বান্দারূপে প্রতিষ্ঠিত হতে পারা পরীক্ষার মহোত্তর লাভ। পরীক্ষা বঞ্চনার জন্য নয়, প্রকৃত বান্দারূপে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য। পরীক্ষার সম্মুখীন হলে অবশ্যই ধৈর্যধারণ করা চাই। যিনি আমার ভাগ্যে বিপদ ও পরীক্ষা লিখেছেন, তিনিই আমার জন্য অসংখ্য নেয়ামতের ব্যবস্থা রেখেছেন।
চার.
সাওয়াব ও প্রতিদানপ্রাপ্তি। পরীক্ষায় ধৈর্যধারণ করলে আল্লাহ-র কাছে উত্তম বিনিময় ও সাওয়াব গচ্ছিত থাকে। দুনিয়ার সবার কাছে গচ্ছিত সম্পদ বিনষ্ট হলেও আল্লাহ-র কাছে বিনষ্ট হওয়া কোনই সম্ভাবনা নেই। বিপদে ধৈর্যধারণ করলে, আল্লাহর সাথে উত্তম আচরণ করলে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, লাভবান হয়। আল্লাহর বিধানে, পরীক্ষায় ধৈর্যের সাথে সমর্পিত হলে কেউ পরাস্ত হয় না, বিজীয় হয়।
আল্লাহ -র রজ্জু আঁকড়ে ধরো।
পৃথিবীর সকল সাহায্যক্ষেত্র বিশ্বাসভঙ্গ করলেও আল্লাহ আছেন বিশ্বাসের স্তম্ভ, আল্লাহ আছেন সদা-সর্বত্র।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন