📘 আল্লাহকে মানুন নিরাপদ থাকুন > 📄 ইবরাহিম -র দোয়া কবুল

📄 ইবরাহিম -র দোয়া কবুল


হাসবুনাল্লাহি ওয়ানিয়মাল ওয়াকীল। আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক। [সূরা আলে ইমরান: ১৭৩]
ইবরাহিম আলাইহিস সালাম -কে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হলে তিনি শূন্যে ভাসমান থেকেই এই দোয়া পাঠ করেছিলেন। দোয়ার প্রভাবে আগুন শান্ত ও শীতল হয়ে গিয়েছিল।

📘 আল্লাহকে মানুন নিরাপদ থাকুন > 📄 রাসূল ﷺ-র দোয়া কবুল

📄 রাসূল ﷺ-র দোয়া কবুল


এক.
রাসূল ﷺ -ও হাসবুনাল্লাহি ওয়ানিয়মাল ওয়াকীল -দোয়াটি পড়েছিলেন। কোরআনে এর বিবরণ এসেছে-
যাদেরকে লোকেরা বলেছে যে, 'তোমাদের সাথে মোকাবেলা করার জন্য লোকেরা সমাবেশ করেছে বহু সাজ-সরঞ্জাম; তাদের ভয় কর।' তখন তাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ়তর হয়ে যায় এবং তারা বলে আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট; কতই না চমৎকার কামিয়াবীদানকারী! 'অতঃপর ফিরে এল মুসলমানরা আল্লাহর অনুগ্রহ নিয়ে, তাদের কিছুই অনিষ্ট হল না। তারপর তারা আল্লাহর ইচ্ছার অনুগত হল। বস্তুত আল্লাহর অনুগ্রহ অতি বিরাট। [সূরা আলে ইমরান: ১৭৩, ১৭৪]
কেউ যদি ঝগড়া বাধাতে চায়, ষড়যন্ত্র আঁটে, ফাঁদ পাতে, বাঁকা চোখে তেড়ে আসে, -তা অবগত হওয়ার সাথে সাথে এই দোয়া পড়া উচিৎ- 'হাসবুনাল্লাহি ওয়ানিয়মাল ওয়াকীল।' 'আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক।'
অনুরূপ কারো চক্রান্তের কথা অবগত হলে, জালেমের আক্রমন, কুপরিকল্পনা, কোন মন্দ লোকের বিরুদ্ধ অবস্থানের কথা অবগত হলে এই দোয়া পড়া উচিৎ- 'হাসবুনাল্লাহি ওয়ানিয়মাল ওয়াকীল।' 'আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক।'
উক্ত দোয়া পড়াই এটাই উপযুক্ত সময়। ইনশাআল্লাহ, কোন বিপদ আর ছুঁতে পারবে না।
দুই.
বদর প্রান্তরের ঘটনা। বলতে গেলে মুসলিম বাহিনী রিক্তহস্তই ছিল। রাসূল দীর্ঘ দোয়া করলেন। তার দুই কাঁধ থেকে চাদর পড়ে গেল। আলি বলেন, 'বদরে রাতে রাসূল ছাড়া আমি কাউকে সজাগ দেখিনি। রাসূল গাছের নিচে বসে ভোর হওয়া পর্যন্ত দোয়া করেছেন।'
আবু বকর রাসূলকে বললেন, 'আল্লাহর রাসূল, আপনার প্রভুর কাছে এই মোনাজাত যথেষ্ট!'
রাসূল তখনও কাকুতি মিনতি করেই চললেন। আল্লাহ তার দোয়া কবুল করলেন। বদর প্রান্তরে মুসলমানদের সাহায্য করলেন। ইতিহাসে এমন বিরল ঘটনা দ্বিতীয়টি শোনা যায় না।
দুই.
তুফাইল ইবনে আমর রাসূলের কাছে এলেন। বললেন, 'দাওস গোত্রের যিনা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা আমারও অবাধ্য হয়েছে। তাদের ধ্বংসের জন্য দোয়া করুন।'
রাসূল হাত তুললেন। তুফাইল বললেন, 'দাওস গোত্র ধ্বংস হোক।'
রাসূল বললেন- 'আল্লাহ, আপনি দাওস গোত্রকে হেদায়াত করুন। তাদের ইসলামে নিয়ে আসুন। আল্লাহ, আপনি দাওস গোত্রকে হেদায়াত করুন। তাদের ইসলামে নিয়ে আসুন। আল্লাহ, আপনি দাওস গোত্রকে হেদায়াত করুন। তাদের ইসলামে নিয়ে আসুন। [বুখারি : ২৯৩৭]
রাসূলের দোয়ায় আল্লাহ তাদের হেদায়াত দিলেন। ইসলামে ফিরিয়ে আনলেন।
তিন.
আবু হোরায়রা রাসূলের কাছে এসে বললেন, 'হে আল্লাহর রাসূল, আমার মা-কে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলাম। তিনি আমাকে বকাঝকা করেছেন। আমাকে শুনিয়ে আপনাকেও গালমন্দ করেছেন। তার জন্য দোয়া করুন।'
রাসূল দোয়া করলেন- 'আল্লাহ, আবু হোরায়রার মা-কে হেদায়াত দান করুন।'
আবু হোরায়রা বলেন- আমি রাসূলের কাছ থেকে বাড়িতে ফিরলাম। মা তখন গোসল করছিলেন। দরজার পিছনে তার গোসলের চড়চড় আওয়ায শুনলাম। তিনি কাপড় পরে বেরিয়ে আসলেন এবং বললেন, 'আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। মোহাম্মদ আল্লাহর রাসূল। [মুসলিম: ২৪৯১]
চার.
আবু লাহাবের এক ছেলে রাসূল -কে গালি দিল। কোন এক বর্ণনা মতে রাসূলের মুখে থুথু নিক্ষেপ করেছিল।
রাসূল আল্লাহর কাছে নালিশ করলেন। বললেন, 'আল্লাহ, তার উপর তোমার পক্ষ থেকে একটি কুকুর লেলিয়ে দাও।' [হাকিম : ৪০৩১]
রাসূলের এই নালিশের পর আবু লাহাবের ছেলে ব্যবসার উদ্দেশ্যে শামে রওয়ানা হল। পথিমধ্যে তারা যেখানেই রাত যাপন করত, আবু লাহাবের ছেলে সবার মাঝখানে ঘুমুত।
শামের কাছাকাছি পৌঁছে কাফেলা এক জায়গায় রাত কাটাল। আবু লাহাবের ছেলে ঘুমুল সবার মাঝখানে। রাতের তখন মাঝামাঝি, কুকুরসদৃশ একটি সিংহ ঢুকে পড়ল কাফেলার ভিতর। সকলে জেগে উঠল। সিংহটি সবার মুখের কাছে গিয়ে শুঁকে শুঁকে দেখছে। কাঙ্ক্ষিত শিকার মিলছে না। সিংহ তার নির্দিষ্ট শিকার খুঁজে চলছে। আল্লাহ ﷻ তাকে নির্দিষ্ট শিকারের জন্যই পাঠিয়েছেন। খুঁজতে খুঁজতে আবু লাহাবের ছেলের কাছে গিয়ে থামল এবং তাকে এক লোকমায় গিলে নিল!
পাঁচ.
এক লোক এসে রাসূল ﷺ-কে গালমন্দ করল। রাসূল আল্লাহ ﷻ-র কাছে দোয়া করলেন- ‘আল্লাহ, আমার পক্ষে তুমিই তার জন্য যেভাবে ইচ্ছা যথেষ্ট হয়ে যাও।’
যে রাসূল ﷺ-কে গালি দিবে, তার ভাগ্যে চূড়ান্ত লাঞ্চনা ছাড়া আর কী থাকতে পারে! সে ভরা মজলিসে রাসূলকে গালি দিয়েছে, আল্লাহ ﷻ তাকে চূড়ান্তভাবে লাঞ্চিত করবেন।
লোকটি ছাগলের দুধ দোহন করতে গেল। ঠিক তখনই ছাগলটির নাড়ি ফেঁটে বেরিয়ে এল এক গাদা আবর্জনা। আর এতেই সে ছাগলের পায়ের কাছে মৃত্যুবরণ করল।
ছয়.
আমের ইবনে তুফাইল এবং আরবাদ ইবনে কায়স রাসূলকে হত্যার পরিকল্পনা নিল। আমের আরবাদকে বলল, 'আমি মোহাম্মদকে তোমার ব্যাপারে অমনোযোগী করে রাখবো। যখনই অমনোযোগী করবো, অমনি তাকে মেরে ফেলবে।'
দুজন রাসূলের কাছে আসল। আমের রাসূলের সাথে কথা শুরু করল। আরবাদ রাসূলকে আঘাত করার সুযোগ খুঁজতে লাগল। কিন্তু তারা যতটা সহজ ভেবেছে, আসলেই কি অতটা সহজ! রাসূল ﷺ মানুষের হত্যার হাত থেকে নিরাপদ।
রাসূল অহির মাধ্যমে তাদের হত্যাপরিকল্পনা জানতে পারলেন। আল্লাহ ﷻ-র কাছে দোয়া করলেন- ‘আল্লাহ, আমার পক্ষে তুমিই তার জন্য যেভাবে ইচ্ছা যথেষ্ট হয়ে যাও।’
আমের ইবনে তুফাইলের বুকে উটের প্লেগ দেখা দিল। আমের যতই চিকিৎসা করল, অবস্থার আরও অবনতি হল। এক পর্যায়ে তার পেটেও উষ্ট্রপ্লেগ ছড়িয়ে গেল। সে তখন বলতে লাগল, 'তোমরা আমাকে ঘোড়ায় উঠিয়ে দাও। আমি উষ্ট্রপ্লেগে বনি সালুলের এক মহিলার ঘরে মৃত্যুবরণ করবো।'
এসব বলে সে আর্তনাদ করতে থাকল এবং বনি সালুলের এক মহিলার ঘরেই মৃত্যু বরণ করল।
আরবাদ ইবনে কায়স উট এবং কিছু আসবাবপত্র নিয়ে বাজারে রওয়ানা হল। বাজারের কাছাকাছি যেতেই এক বজ্রাঘাতে সব খুয়ে মারা গেল। [মাজমাউদ যাওয়াইদ : ১১০১৯]
কবি এ জাতীয় মানুষকে নিন্দার ভাষায় বলেন- আমেরের মাকে নিয়ে গেল গাধা না ফিরল আমেরর মা, না ফিরল গাধা!

📘 আল্লাহকে মানুন নিরাপদ থাকুন > 📄 বুযুর্গদের দোয়া কবুল

📄 বুযুর্গদের দোয়া কবুল


আল্লাহওয়ালা বুযুর্গদেরও দোয়া কবুল হওয়ার অনেক ঘটনা আছে। সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি রাসূলের কাছে বললেন, 'আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, যেন আমার দোয়া কবুল করা হয়।' রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-
يَا سَعْدُ أَطِبْ مَطْعَمَكَ تَكُنْ مُسْتَجَابَ الدَّعْوَةِ.
সাদ, তোমার রিযিক হালাল রেখ। তোমার দোয়া কবول হবে। [মাজমাউদ যাওয়াইদ : ১৮১০১]
দোয়া কবুল হওয়ার জন্য রিযিক হালাল হওয়া আবশ্যক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এলোকেশী ধুলোমলিন এক দীর্ঘ পথের মুসাফিরের কথা উল্লেখ করে বলেন- সে আকাশের দিকে দুহাত তুলে দোয়া করছে- 'হে আল্লাহ! হে আল্লাহ!' অথচ তার রিযিক হারাম। পোষাক হারাম। ভরণপোষণও হারাম। কীভাবে তার দোয়া কবুল হবে! [মুসলিম: ১০১৫]
জনৈক ব্যক্তি সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাসের উপর অপবাদ দিয়ে বলল, 'সাদ ন্যায়বিচার করে না। প্রজাদের সাথে ইনসাফ রাখে না। যুদ্ধে বেরোয় না।'
সাদ আল্লাহর কাছে বললেন, 'সে যদি মিথ্যুক হয়, তবে আল্লাহ তার বয়স দীর্ঘ করুন। তাকে ফেতনার সম্মুখীন করুন।'
আল্লাহ সেই লোকের বয়স দীর্ঘ করলেন। বার্ধক্যে তার চোখে পর্দা পড়ে গেল। সে ফেতনারও সম্মুখীন হল। কুফার রাস্তাঘাটে সে মেয়েদের সামনে গিয়ে দাঁড়াত। আর বলত, 'আমি ফেতনায় নিপতীত এক বৃদ্ধ। সাদের বদদোয়া লেগেছে আমার উপর!'
জনৈক ব্যক্তি সাদ এর সামনে আলি -কে গালমন্দ করল। সাদ রাযি. বললেন, 'আমার ভাইকে গালমন্দ করো না।'
অতঃপর সাদ বললেন, 'আল্লাহ, আমাদের পক্ষে তুমিই তার জন্য যেভাবে ইচ্ছা যথেষ্ট হয়ে যাও।'
ঘটনাক্রমে কুফা থেকে একটা উট আসল। লোকজন ছিল উটের পিছনে। ঐ ব্যক্তি এসে উটটাকে প্রহার করল। উটটা তাকে মেরে ফেলল।
সাহাবায়ে কেরাম একটি যুদ্ধে রওয়ানা হলেন। তাদের দলনেতা ছিলেন আলা হাযরামি। চলতে চলতে বাহিনী পথ ভুলে গেল।
তাদের সাথে পানি শেষ হয়ে গেল। আশপাশেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। বাহিনীর লোকেরা বলল, 'আমাদের দলনেতা! আল্লাহর কাছে বলুন।'
আলা ইবনে হাযরামি আল্লাহর দিকে ঝুঁকলেন। আল্লাহকে ডাকলেন কায়মনোবাক্যে। ছোট্ট একটু দোয়া করলেন- 'ইয়া হাকীমু, ইয়া আযীমু, ইয়া আলীমু, ইয়া হাকীমু, ইয়া আলীমু, ইয়া আযীমু, আগিছনা। আমাদের সাহায্য করুন।'
বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর কসম! তার দোয়া শেষ হতেই একখণ্ড মেঘ উড়ে এল। মাথার উপর আকাশ ছেয়ে নিল। মুষলধারে বৃষ্টি ঝরাল। সাহাবায়ে কেরাম তৃপ্তিভরে পানি পান করলেন। অজু করলেন। তারপর মেঘখণ্ডটি উড়ে গেল!
আলা ইবনে হাযরামি নদির পাড়ে এসে আল্লাহর কাছে বললেন, 'আমাদের জন্য সমুদ্র জমাট করে দাও।'
আল্লাহ সমুদ্র জমাট করে দিলেন। আলা ইবনে হাযরামি দলবলসহ হেঁটে গেলেন।
সমুদ্রপথে বাহিনীর একটি ব্যাগ হারিয়ে গেল। তারা সমুদ্রপথে থাকতেই এক লোক ব্যাগটি নিয়ে এল। ব্যাগে এক ফোঁটা পানিও লাগেনি। আলা ইবনে হাযরামি ঐ লোকের কাছ থেকে ব্যাগটি বুঝে নিলেন।
উম্মে আইমান। মক্কা থেকে মদিনার পথে আল্লাহ ও রাসূলের জন্য হিজরতে বের হলেন। পথিমধ্যে পিপাষার্ত হয়ে পড়লেন। পানি খোঁজ করে পেলেন না। মৃত্যুর উপক্রম হলেন।
উম্মে আইমান আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। আসমান থেকে একটি বালতি নেমে আসল। তিনি পান করলেন। পরিতৃপ্ত হলেন। বালতিটি আসমানে উঠে গেল। এরপর তিনি চল্লিশ বছর বেঁচে ছিলেন। কখনই পিপাসাকাতর হননি!
বারা ইবনে মালেক। রাসূল তার ব্যাপারে বলেন-
অনেক লোক এমনও আছে, যার মাথার চুল এলোমেলো। ধুলাবালি জড়িত। দুখানা পুরাতন কাপড় পরিহিত। যার প্রতি ভ্রূক্ষেপ করা হয় না। যদি সে আল্লাহর উপর ভরসা রেখে কোন বিষয়ে শপথ করে, আল্লাহ তার কসমকে পূরণ করেন। এসকল লোকের মধ্য হতে বারা ইবনে মালেক হলেন অন্যতম। [তিরমিযি: ৩৮৫৪]
বারা ইবনে মালেক আল্লাহর কাছে দোয়া করলেই তা কবুল হত।
একবার তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হলেন। বাহিনীর লোকেরা তাকে বলল, 'আল্লাহর দোহাই দিয়ে আপনাকে বলছি! আল্লাহর কাছে শপথ করে দোয়া করুন, যেন আল্লাহ আজ আমাদের সাহায্য করেন।'
বারা ইবনে মালেক বললেন, 'আমাকে একটু সময় দাও।'
এ কথা বলে তিনি গোসল করলেন। কাফনের কাপড় পরে তলোয়ার হাতে আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন, 'আল্লাহ, তোমার কসম দিচ্ছি! তুমি আমাকে প্রথম শহিদ বানাও। মুসলমানদের সাহায্য কর।'
যুদ্ধক্ষেত্রে বারা ইবনে মালেক প্রথম শহিদ হলেন। রাহিমাহুল্লাহ। মুসলমানরাও আল্লাহর সাহায্যে বিজয়ী হল।

📘 আল্লাহকে মানুন নিরাপদ থাকুন > 📄 আল্লাহওয়ালাদের কাছে দোয়া প্রার্থনা

📄 আল্লাহওয়ালাদের কাছে দোয়া প্রার্থনা


আমরা সাধারণত একে অপরের কাছে দোয়া প্রার্থনা করি। দোয়ায় বিভিন্নজনের উসিলা ধরে থাকি। অপরকে বলি, 'ভাই, দোয়ার সময় আমাকে স্মরণ রাখবেন। ভুলবেন না যেন।' 'আপনার উসিলায় আল্লাহ যদি এটা করেন...'
আমরা কি যে কারও কাছে এভাবে দোয়া প্রার্থনা করতে পারি!
হ্যাঁ, যে কারও কাছে এভাবে দোয়া প্রার্থনা করা যাবে। তবে দুটি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে।
এক. যার কাছে দোয়া চাইবো, তিনি জীবিত থাকবেন। উপস্থিত থাকবেন।
দুই. তিনি নেককার সৎ মানুষ হবেন।
জীবিত কারও উসিলায় দোয়া প্রার্থনা করা যাবে। মৃত কারও কাছে দোয়া প্রার্থনা করা যাবে না। কারও কবরের কাছে গিয়ে এ প্রার্থনা করা যাবে না- 'আল্লাহর কাছে আমি আপনার উসিলা ধরছি।'
এভাবে বললে শিরক হবে। দুনিয়া-আখেরাত নিষ্ফল হবে। কেয়ামতের দিন আল্লাহ-র কাছে কিছুই পাওয়া যাবে না। আল্লাহ বলেন-
আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে, যদি আল্লাহর শরিক স্থির করেন তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হবেন। [সূরা যুমার: ৬৫]
জীবিত ব্যক্তি উপস্থিতও থাকতে হবে। অনুপস্থিত কারও উসিলায় দোয়া প্রার্থনা করা যাবে না। যেমন কোন ব্যক্তি রিয়াদ বা জেদ্দায় রইল, আমি এখানে তার উসিলা ধরে দোয়া করলাম- 'আল্লাহ, ঐ ব্যক্তির উসিলায় তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও।'
এটা জায়েয হবে না। যার উসিলা ধরা হবে, তিনি উপস্থিত থাকবেন।
যার কাছে দোয়া চাইবো, যার উসিলায় দোয়া চাইবো, তিনি নেককার মানুষ হবেন। কোন পাপাচারীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করা যাবে না। সাম্যবাদী-কমিউনিস্ট, ধর্মত্যাগী-অবিশ্বাসী-নাস্তিকের কাছে দোয়া চাওয়া যাবে না। তাকে এ কথা বলা যাবে না- ‘ভাই, দোয়ার সময় আমাকে ভুলবেন না যেন।’
সে আল্লাহর কাছে কিসের দোয়া করবে! আল্লাহর কাছে তার কিছুই তো নেই! আল্লাহ বলেন-
নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছে এবং এগুলো থেকে অহঙ্কার করেছে, তাদের জন্য আকাশের দ্বার উন্মুক্ত করা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যে পর্যন্ত না সুচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করে। আমি এমনিভাবে পাপীদের শাস্তি প্রদান করি। [সূরা আরাফ: ৪০]
আল্লাহ-র কাছে তার কোন হক নেই। কোন দাবি নেই। অংশ নেই। গ্রহণযোগ্যতা নেই। সাফল্য, সন্তুষ্টি, বিনিময়, কিছুই নেই। তার জন্য আছে আল্লাহ-র গযব, লানত, দূরত্ব ও ধ্বংস।
দোয়া চাইতে হবে নেককার আল্লাহওয়ালাদের কাছে। ওমর রাসূল-র কাছে বললেন, ‘আল্লাহর রাসূল, আমি ওমরার নিয়ত করেছি।’
রাসূল বললেন- يَا أَخِي لَا تَنْسَنَا مِنْ دُعَائِكَ
ভাই, তোমার দোয়ায় আমাদের ভুলো না। [আহমাদ: ১৯৬]
ইবনে তাইমিয়া বলেন, কেউ যখন কারও কাছে দোয়া প্রার্থনা করে, প্রার্থনাকারী মূলত দোয়াকারীর কল্যাণকামী হয়ে থাকে। দোয়াকারী যখন আল্লাহর কাছে প্রার্থনাকারীর জন্য দোয়া করে, তখন দোয়াকারীকে বলা হয়, ‘তোমার জন্যেও অনুরূপ!’

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন