📄 কিয়ামুল্লাইলের ফযীলত
রাসূল ইরশাদ করেন-
তোমরা কিয়ামুল্লাইলের গুরুত্ব দাও। কিয়ামুল্লাইল গোনাহ ও ভুলত্রুটির মার্জনা। তোমাদের পূর্ববর্তীদের ঐতিহ্য। শারীরিক রোগ-বিরোগের উপশম। [তিরমিযি: ৩৫৪৯]
জ্ঞানী ও বুদ্ধিমানদের অভিমত, যে ব্যক্তি নিয়মিত কিয়ামুল্লাইল আদায় করে, আল্লাহ তাকে শারীরিক সুস্থতা, সক্ষমতা এবং দৃঢ়তা দান করেন।
ইবনুল কাইয়িম বলেন, 'কিয়ামুল্লাইলের উসিলায় ইবনে তাইমিয়া শারীরিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী ছিলেন। ভরাট কণ্ঠে কথা বলতেন। জিহাদের ময়দানে ছিলেন যুদ্ধাংদেহী। উঠাবসা, চলাফেরায় ছিলেন অভিজাত।'
📄 কিয়ামুল্লাইল কত রাকাত
কিয়ামুল্লাইলের সর্বোচ্চ কোন রাকাতসংখ্যা নেই। ওলামায়ে কেরামের এমনই অভিমত। পূর্ববর্তী ওলামায়ে কেরামের থেকে রাতের দীর্ঘ সময় কিয়ামুল্লাইলে কাটানোর অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে।
ইমাম যাহাবি সিয়ারু আলামিন নুবালা গ্রন্থে যাইনুল আবিদিন আলি ইবনে হুসাইন এর জীবনীতে উল্লেখ করেন, তিনি এক রাতে এক হাজার রাকাত পর্যন্ত কিয়ামুল্লাইল আদায় করতেন।
আতা ইবনে আবি রাবাহ রাতে সালাতে দাঁড়াতেন। যতক্ষণ সালাত থেকে ঢলে না পড়তেন, ততক্ষণ তিনি সালাতেই থাকতেন।
উল্লেখ্য, আমাদের জন্য যতটুকু সহজ হয়, ততটুকুই আমরা আদায় করবো। আল্লাহ আমাদের জন্য সবকিছু সহজ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে-
আপনাকে ক্লেশ দেয়ার জন্য আমি আপনার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ করিনি। [সূরা ত্বাহা : ০২]
আমি আপনার জন্য সহজ শরীয়ত সহজতর করে দিবো। [সূরা আ'লা: ০৮]
আল্লাহ কাউকে সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না। [সূরা বাকারা: ২৮৬]
তিনি তোমাদের পছন্দ করেছেন এবং ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন সঙ্কীর্ণতা রাখেননি। [সূরা হাজ্জ : ৭৮]
এবং তাদের উপর থেকে সে বোঝা নামিয়ে দেন এবং বন্দিত্ব অপসারণ করেন, যা তাদের উপর বিদ্যমান ছিল। [সূরা আরাফ : ১৫৭]
মধ্যপন্থায় নিয়মিত এবাদত করা আমাদের দায়িত্ব। অল্প ক'রাকাত হলেও নিয়মিত কিয়ামুল্লাইল আদায় করবো। একরাতে একশ রাকাত আদায় করে পুরো বছর আর কিয়ামুল্লাইল আদায় না করার চেয়ে নিয়মিত অল্প ক'রাকাত আদায় করা ঢের উত্তম।
রাসূল ইরশাদ করেন-
আল্লাহর কাছে এমন আমল সবচেয়ে প্রিয়, যা অল্প হলেও নিয়মিত হয়। [বুখারি : ১৯৭০]
📄 কিয়ামুল্লাইল সর্বনিম্ন কত রাকাত
এশার সালাতের সাথে সাথে সালাতুল বিতির আদায়কারী যদি শেষ রাতে কিয়ামুল্লাইল আদায় করতে চায়, তবে তিনি দুই রাকাত আদায় করলেই কিয়ামুল্লাইল হিসেবে গণ্য হবে। যে ব্যক্তি এই আমল নিয়মিত করবে, সে সৌভাগ্যবান। সে আল্লাহ ﷻ-এর কাছে পছন্দের ব্যক্তি।
📄 কিয়ামুল্লাইলে সহযোগী আমল
কিয়ামুল্লাইল আদায়ে সহযোগী আমল অনেক রয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হল-
এক. ঘুমানোর সময় তেত্রিশ বার সুবহানাল্লাহ, তেত্রিশ বার আলহামদুলিল্লাহ, চৌত্রিশ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করা।
ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূল ﷺ-এর কাছে একজন মহিলা খাদেম চেয়েছিলেন। রাসূল ﷺ তাকে বললেন- আমি তোমাদের একজন খাদেমের তুলনায় আরও উত্তম কিছু দিবো! যখন তোমরা ঘুমুতে যাবে, তেত্রিশ বার সুবহানাল্লাহ, তেত্রিশ বার আলহামদুলিল্লাহ, চৌত্রিশ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করবে। [বুখারি : ৩১১৩]
দুই. দিনে একটু বিশ্রাম গ্রহণ করা। সম্ভব হলে যোহরের আগে, না হয় মধ্যাহ্নভোজের পরে।
তিন. গোনাহ পাপাচার কমিয়ে দেয়া। গোনাহ পাপাচার মানুষের মধ্যে এবাদতের ক্ষেত্রে অলসতা তৈরি করে। কিয়ামুল্লাইলের আগ্রহ ও উদ্যম নষ্ট করে।
হাসান বসরি বলেন, 'হে আবু সাঈদ! আমরা কিয়ামুল্লাইল করতে পারি না।' আবু সাঈদ উত্তর দিলেন, 'আল্লাহর কসম! তোমাদের গোনাহ তোমাদেরকে কয়েদি করে রেখেছে।'
চার.
দ্রুত ঘুমিয়ে পড়া এবং রাত্রি জাগরণ পরিহার করা। রাত্রি জাগরণে বিশেষ কোন লাভ নেই। বরং তা ক্ষতিকর বটে।
ওলামায়ে কেরام বলেন, যে ব্যক্তি রাত্রি জাগরণের ফলে ফজরের সালাত আদায় করতে পারল না, তাহলে কোরআন তেলাওয়াত করে রাত্রি জাগরণ করলেও সে একটি হারাম কাজে লিপ্ত হয়েছে বলে বিবেচিত হবে। কারণ, কোরআন তেলাওয়াত নফল এবং ফজরের সালাত আদায় করা ফরয।
বিষয়টি যদি এমনই হয়, তাহলে যে ব্যক্তি কথাবার্তা গল্পগুজবে রাত কাটাল এবং ফজরের সালাত আদায় করতে পারল না, তার ব্যাপারে আমরা কী বলতে পারি!