📄 খালিদ বিন ওয়ালিদ ﷺ
খালিদ বিন ওয়ালিদ। দি সোর্ড অব আল্লাহ খালিদ। আল্লাহর তলোয়ার খালিদ। তলোয়ারের ধারালো বজ্রে মুশরিকদের কুপোকাত করেছিলেন খালিদ। কে না চিনে খালিদকে! কে না জানে আল্লাহর তলোয়ার আবু সুলাইমান খালিদকে!
রোমের বিরুদ্ধে রণাঙ্গনে অবতীর্ণ হয়েছেন খালিদ বিন ওয়ালিদ রাযি.। তাঁর সৈন্যসংখ্যা বত্রিশ হাজার। ধারণা ছিলো রোমের সৈন্যসংখ্যাও এমনই হবে। কিন্তু না, রোমের সংখ্যা ধারণাতীত। দুই লক্ষ আশি হাজারের সুবিশাল বহর।
যুদ্ধের দিন সকালে সূর্য উঠতেই ঝাঁকেঝাঁকে রণাঙ্গনে বেরিয়ে এলো রোমসৈন্য। সূর্যের বিকিরণে প্রজলন্ত হয়ে উঠলো রোমকদের তরবারি। দলেদলে কৌশলে আক্রমনাত্মক হয়ে দাঁড়ালো রোম ব্যাটেলিয়ন। প্রতিটি ব্যাটেলিয়নে এক হাজার সৈন্যের বিন্যাস। ব্যাটেলিয়নের পর ব্যাটেলিয়ন। রেজিমেন্টের পর রেজিমেন্ট।
এভাবে সমগ্র যুদ্ধক্ষেত্র, পাহাড়-সমতল-নিম্নভূমি সবখানে সৈন্য সমাবেশ করে প্রভুত্বের উত্তাপে বুকের ছাতি ফুলিয়ে আস্ফালন দেখাচ্ছে রোমকরা। খালিদ এখন কী করবে! কার কাছে দিশা খুঁজবে! কার কাছে সাহায্য চাইবে! কোনো জনসঙ্ঘ জাতিগোষ্ঠির কাছে! কোনো কমিটি সংস্থা পরিষদের কাছে! না, খালিদ ঝুঁকেছেন আল্লাহর দিকে। সাহায্য চেয়েছেন আল্লাহর কাছে। খালিদের মনে হলো আল্লাহ-র সে বাণী-
তোমরা তাদের বধ করনি, আল্লাহই তাদের বধ করেছেন। তুমি তখন নিক্ষেপ করনি, আল্লাহই নিক্ষেপ করেছিলেন। এটি বিশ্বাসীদের উত্তম পুরস্কার দান করার জন্য। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। [সূরা আনফাল: ১৭]
সুতরাং আল্লাহই সর্বোত্তম রক্ষণাবেক্ষণকারী। তিনিই সকল দয়ালের সেরা দয়ালু।
যুদ্ধের পূর্বক্ষণ। খালিদের এক সহচর মুসলিম প্রস্তাব দিলেন, কাফেরদের সংখ্যা দৃষ্টির শেষ পর্যন্ত, আমাদের সংখ্যা অতি নগণ্য! আজ আমরা যুদ্ধে অবতীর্ণ না হয়ে পাহাড়ে আশ্রয় গ্রহণ করি।
এই প্রস্তাব শুনে খালিদের বুক চুরচুর করে মুচড়ে উঠলো। দুচোখ ভাসিয়ে অশ্রু গলে পড়লো চিকচিকিয়ে। বুকের রক্তরোদন মুখের রেখায় রেখায় জেগে উঠলো। ধারালো কণ্ঠে প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন খালিদ- 'পাহাড় নয়, আল্লাহর কাছেই আমাদের আশ্রয়'। আল্লাহর ঈমানে, আল্লাহর ভরসায়, আত্মশক্তিতে বলীয়ান হওয়ার উদ্দীপনা জাগালেন সকলের ভেতর। তেজালো কণ্ঠে ঘোষণা দিলেন, “ওরা বেশি, আমরা কম' এভাবে বলোনা। বরং এভাবে বলো, 'আমরা কতো বেশি! ওদের সংখ্যা নগণ্য।' আমার ঘোড়া যতক্ষণ অক্ষত থাকবে, কাফেরদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান কমতে থাকবে।"
খালিদ তলোয়ার উন্মুক্ত করলেন। তাঁর দেখাদেখি সকল মুসলিম উদ্ধত করলেন নিজ নিজ কোষমুক্ত তলোয়ার। দুই বাহিনী মুখোমুখি, লড়াইরত, আক্রমনাত্মক। দিন গড়াচ্ছে। যুদ্ধও চলছে। তিন দিন না যেতেই কাফেররা ভয়ানক বিপাকে পড়ে গেলো। এরপর কীভাবে তারা পরাজিত হলো, নিশ্চিহ্ন হলো, তা শুধু আল্লাহই জানেন। আল্লাহ মুসলমানদের সাহায্য করলেন। কাফেরদের পরাজিত করলেন। কাফেরদের সমূলে কর্তিত করলেন। আল্লাহই সর্বোত্তম রক্ষণাবেক্ষণকারী। তিনিই দয়ালুদিগের সেরা দয়ালু। সকল প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহরই প্রাপ্য।
📄 মোহাম্মদ বিন ওয়াসি আযাদি ﷺ
দুঃসাহসী সেনাপতি কুতাইবা বিন মুসলিম। তিনি একবার কাবুল আক্রমণ করেছিলেন। চারদিক থেকে ঘেরাও করে রেখেছিলেন দিনের পর দিন। উদ্ধত তরবারি হাতে যখন কাবুলকে জনশূন্য করবেন, তখনই আল্লাহর সাহায্য প্রকাশ পেলো। আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত বান্দাকে কে পরাস্ত করতে পারে! [আলে ইমরানের ১৬০ নং আয়াতের আলোকে।]
ঘটনা ছিলো এমন, কাবুলের বিখ্যাত এবং মান্য বুযুর্গ ছিলেন মোহাম্মদ বিন ওয়াসি আযদি। কুতাইবা জয়ের নেশায় বিভোর হয়ে মোহাম্মদ বিন ওয়াসিকে হত্যার জন্য খুঁজলেন। সৈন্য পাঠালেন মোহাম্মদ বিন ওয়াসির খোঁজে। সৈন্যরা তাঁকে খুঁজে পেলো। দেখলো, মোহাম্মদ বিন ওয়াসি সালাত আদায় করছেন। সালাত শেষে হাতের বর্শা মাটিতে পুঁতে টেক লাগিয়ে বসেছেন। মনের সকল মমতা, ভক্তি ও বিশ্বাস বিগলিত করে দুচোখ ভরে কান্না ঝরিয়ে আল্লাহ-র কাছে দোয়া করছেন-
يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ، يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ نَصْرُكَ الَّذِي وَعَدْتَنَا.
হে চিরঞ্জীব অনাদি স্বাধিষ্ঠ বিশ্বধাতা! হে মহিমাময় মহানুভব! তোমার প্রতিশ্রুত সাহায্যের দিকে তাকিয়ে আছি...'
কুতাইবার কানে সংবাদ গেলো, মোহাম্মদ বিন ওয়াসি কাঁদছেন। বুকের টাটকা নোনাজল ঝরিয়ে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হয়েছেন কুতাইবার অনিষ্ট থেকে
বাঁচার ফরিয়াদ নিয়ে। এ খবর শুনে কুতাইবা স্তব্ধ হয়ে গেলেন। আল্লাহর কাছে তার জুলুমের বিচার দেয়া হয়েছে! কুতাইবার স্নায়ুগুলো দুর্বল হয়ে এলো। ভয় আর আতঙ্ক লেপ্টে ধরলো তাকে। চৈতন্য ফিরে এলো কুতাইবার। কেঁদে ফেললেন কুতাইবা। আল্লাহ তাকে রহম করুন। কুতাইবা বলে উঠলেন, 'আল্লাহর কাছে উত্তোলিত মোহাম্মদের দোয়ার অঙ্গুলি আমার কাছে শতসহস্র তরবারি আর অযুতনিযুত তাগড়া সেনার চেয়েও উত্তম!'
আল্লাহ মোহাম্মদ বিন ওয়াসি আযদিকে বাঁচিয়েছেন। আল্লাহই কাবুলবাসীদের সুরক্ষা দান করেছেন। আল্লাহই শ্রেষ্ঠ সুরক্ষাদানকারী। তিনিই সর্বকালের শ্রেষ্ঠ দয়াবান।