📄 আল্লাহ ﷺ-র ভালোবাসার পাথেয় দুনিয়া বিমুখতা
আল্লাহ -র ভালোবাসা পাওয়ার জন্য দ্বিতীয় পাথেয় হলো দুনিয়াবিমুখ থাকা। দুনিয়া থেকে মুক্ত ও পৃথক থাকা। সাহল ইবনে সাদ রাযি. থেকে বর্ণিত হাদিস এ কথার উপর ইঙ্গিত করে। তিনি বলেন, "এক লোক রাসূল -র কাছে আসলেন। রাসূল -কে বললেন, 'হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে একটি আমল বলে দিন, যা করলে আল্লাহ আমাকে ভালোবাসবেন। মানুষও আমাকে ভালোবাসবে।'
রাসূল বললেন- ازْهَدْ فِي الدُّنْيا يُحِبَّكَ اللهُ ، وَازْهَدْ فِيمَا عِنْدَ النَّاسِ يُحِبَّكَ النَّاسُ
দুনিয়া বিমুখ হও, আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন। মানুষের কাছে অমুখাপেক্ষী হও, মানুষও তোমাকে ভালোবাসবে। [ইবনে মাজাহ : ১৪০২] যেসব আমল মানুষকে আল্লাহ -র নিকটতর করে, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য আমল হলো দুনিয়ার প্রেম অন্তর থেকে দূর করা। যার অন্তর থেকে দুনিয়ার প্রেম দূর হবে এবং অন্তরে আল্লাহর প্রেম বসবে, আল্লাহ তাকে ভালোবাসবেন।
আল্লাহ-র ভালোবাসা তার সমর্পিত বান্দা বা গোলাম হওয়া ব্যতীত পাওয়া যায়না। গোলাম হওয়ার অর্থ হল, আল্লাহ-র কাছে বিনীত ও নম্র হওয়া। আল্লাহ-র কাছে নিজেকে সমর্পন করা।
আল্লাহ রাসূল ﷺ-র ইসরার শুভাগমনের কথা এভাবে বলেছেন- পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রিবেলায় ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত। [সূরা বনী ইসরাঈল: ০১]
রাসূল ﷺ উম্মতের জন্য সতর্ককারী ছিলেন। আল্লাহ তার এই বৈশিষ্ট্য বর্ণনার ক্ষেত্রেও বলেছেন-
আর যখন আল্লাহর বান্দা তাকে ডাকার জন্য দণ্ডায়মান হলো, তখন অনেক জিন তার কাছে ভিড় জমালো। [জিন: ১৯]
রাসূলের উপর কোরআন অবতরণের বর্ণনায়ও আল্লাহ বলেছেন- পরম কল্যাণময় তিনি যিনি তার বান্দার প্রতি ফয়সালার গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন, যাতে সে বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হয়। [ফুরকান: ০১]
আমাদের সালফে সালেহীন, পূর্ববর্তী নেকবান্দারা দুনিয়া বিমুখ থাকতেন। দুনিয়া তাদের হাতে থাকতো, কিন্তু তাদের অন্তরে স্থান পেতো না। এজন্য আল্লাহ-ও তাদের ভালোবাসতেন।
রাসূল ﷺ তাদের এবং আমাদের অর্থ-সম্পদের মোহ থেকে সতর্ক করেছেন। কারণ মানুষ সাধারণত অর্থ-সম্পদের মোহগ্রস্ত হয়ে থাকে। চাদর ও শালের আয়েশী হয়ে থাকে। পদ-পদবীর লোভী হয়ে থাকে।
রাসূল ﷺ ইরশাদ করেন- দীনার দিরহামের গোলাম লাঞ্চিত হোক। শাল ও চাদরের গোলাম লাঞ্ছিত হোক। সে লাঞ্চিত ও অপমানিত। তার পায়ে কাঁটা বিদ্ধ হলে কেউ তা খুলবেনা। [বুখারি : ২৮৮৭]
কিন্তু কেন?
কারণ, সে তার প্রবৃত্তির পূজা করেছে। আল্লাহ বলেন- আপনি কি তার প্রতি লক্ষ করেছেন, যে তার প্রবৃত্তিকে উপাস্য বানিয়েছে? আল্লাহ জেনে শুনে তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন। [জাসিয়া: ২৩]
মোহাম্মদ বিন ওয়াসির একটি ঘটনা বহুল আলোচিত। তিনি কুতাইবা বিন মুসলিমের বাহিনীতে ছিলেন। পুরো বাহিনী ইসলামী রাষ্ট্রে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর পতাকা উড্ডীন করছিলেন।
কুতাইবা বিন মুসলিম মোহাম্মদ বিন ওয়াসিকে নেতা-মন্ত্রীদের সামনে পরীক্ষা করতে চাইলেন। তার হাতে সাওরশৃঙ্গের মতো একটি গনীমতের খাযানা ছিল। তিনি মন্ত্রীদের তা দেখিয়ে বললেন, 'তোমরা কি এমন একজন মানুষ দেখাতে পারবে, যার কাছে আমি এসব অর্পণ করলে সে এসব ফিরিয়ে দিবে!'
মন্ত্রীগণ বললেন, 'এতসব সম্পদ থেকে বিমুখ থাকার মতো কেউ আছেন বলে আমাদের মনে হয় না।'
কুতাইবা বললেন, 'তোমাদের আমি উম্মতে মোহাম্মদী থেকে এমন একজন লোক দেখাবো, যার কাছে স্বর্ণ মাটির মতো। তোমরা মোহাম্মদ বিন ওয়াসিকে উপস্থিত কর।'
মন্ত্রীগণ মোহাম্মদ বিন ওয়াসিকে উপস্থিত করার জন্য তার খোঁজে গেল। তারা মোহাম্মদকে আল্লাহ -র তাসবীহ ও প্রশংসা, এসতেগফাররত অবস্থায় খুঁজে পেলেন।
সকলে মিলে কুতাইবার দরবারে উপস্থিত হলেন। কুতাইবা স্বর্ণগুলো মোহাম্মাদের হাতে দিলেন। মোহাম্মদও তা গ্রহণ করলেন।
চিন্তায় পড়ে গেলেন কুতাইবা। ঘটনা এমন হওয়ার কথা নয়। কুতাইবার ধারনা ছিলো, মোহাম্মদ তা ফিরিয়ে দিবে। সকল নেতা-মন্ত্রীর সামনে কুতাইবার চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল।
মোহাম্মদ স্বর্ণগুলো সাথে নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে এলেন। কুতাইবা কজন সৈন্য নিয়োজিত করলেন মোহাম্মাদের গন্তব্য পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য। কুতাইবা আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন, 'আল্লাহ, আমার ধারনা ভুল প্রমাণিত করো না।'
মোহাম্মদ বিন ওয়াসি স্বর্ণগুলো নিয়ে বাইরে চলে এলেন। বাহিনী থেকে একজন গরীব সৈন্য খুঁজে তাকে সবগুলো স্বর্ণ দিয়ে দিলেন।
মোহাম্মাদের পিছনে নিয়োজিত কুতাইবার সৈন্যরা যখন কুতাইবাকে এই ঘটনা জানালেন, কুতাইবা তার আশপাশের লোকদের বললেন, 'আমি কি তোমাদের বলিনি, উম্মতে মোহাম্মদীর মধ্যে এমন একজন লোক আছেন, যার কাছে স্বর্ণ মাটিতুল্য!'
এই হলো দুনিয়া বিমুখতা।
এই ঘটনাটি মানুষের অন্তর পরিবর্তনে অনেক বেশি প্রভাবক। আমরা যেন এই ঘটনাটি খোতবা, বয়ান, শিক্ষাদানের পাশাপাশি দীক্ষাদানের মজলিসেও এই ঘটনাটি বেশি বেশি আলোচনা করি। আজ অনেক মানুষ এমন পাওয়া যাচ্ছে, যারা দুনিয়ার সেবাদাস। ফলে মানুষ ইলম চর্চা করছে না। দাওয়াতে অংশগ্রহণ করছে না। আল্লাহ -এর যিকির এবং কোরআন তিলাওয়াতের জন্য সময় পাচ্ছে না। সুতরাং আমরা এই ঘটনাটি বেশি বেশি আলোচনা করবো। যেন আমাদের অন্তরগুলো পরিবর্তন হয়, উদাসীনতা থেকে ফিরে আসে।
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর বলেন, "রাসূল ﷺ একদিন আমার উভয় কাঁধে হাত রেখে বললেন-
দুনিয়ার জীবনে তুমি গরীবের মতো থাকো, অথবা পথযাত্রীর মতো থাকো। [বুখারি : ৬৪১৬]
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে সবচেয়ে দুনিয়াবিমুখ ছিলেন। এমনকি এ কারণে তিনি খেলাফতের দায়িত্ব থেকেও মুক্ত ছিলেন। অথচ তিনি ইচ্ছা করলেই এর উপযুক্ত ছিলেন। সকলে তার ব্যাপারে ঐক্যমতে ছিলো। তথাপি তিনি এ দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। তিনি রাসূলের নসিহতের উপর আমল করেছেন।
দুনিয়াবিমুখতা, দুনিয়া থেকে মুক্ত ও পৃথক থাকার অর্থ হলো দুনিয়ার অর্থবহ বিষয়গুলো শুধু গ্রহণ করা। এমনভাবে গ্রহণ করা, যেন সেসব বিষয় আমাকে দুনিয়ার বিষয়ে মাশগুল না করে, বরং সেসব বিষয় আল্লাহ -এর এতায়াতের ক্ষেত্রে আমার জন্য সহায়ক হয়।
অনেকে মনে করেন, দুনিয়া থেকে মুক্ত থাকার অর্থ দুনিয়া সম্পূর্ণরূপে ছেড়ে দেওয়া।
এই ভাবনা সঠিক নয়।
অনেকে বলেন, হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা হলো দুনিয়া থেকে মুক্ত থাকা। এই সংজ্ঞাটি ইমাম আহমদ প্রদত্ত বলে বর্ণনা করা হয়।
কিন্তু এই সংজ্ঞা অনুযায়ী প্রত্যেক মানুষই দুনিয়াবিমুখ হিসেবে পরিগণিত হন। ইবনে তাইমিয়া বলেন, দুনিয়া থেকে মুক্ত থাকার অর্থ হল এমন বিষয়-আশয় থেকে মুক্ত থাকা, যা আখেরাতে কোন উপকারে আসবে না।
দুনিয়ার যা কিছু আখেরাতে উপকারে আসবে, তা থেকে বিরত থাকার নাম দুনিয়াবিমুখতা নয়।
📄 আল্লাহ ﷺ-র ভালোবাসার পাথেয় কিয়ামুল লাইল
আল্লাহ -র ভালোবাসা লাভের তৃতীয় পন্থা হলো কিয়ামুল লাইল। ইবাদাতে রাত্রি জাগরণ। রাত জেগে সালাত আদায় করা। রাতের কোলে আল্লাহ-কে ডাকা। তাহাজ্জুদের মুসল্লায় আল্লাহ -র দরবারে দুই হাত বিগলিত করে তোলা। রাতজাগা মুসল্লায় নিজের অবস্থাগুলো মিনতির সাথে আল্লাহ -র কাছে ব্যক্ত করা।
আল্লাহ তাঁর মনোনীত বান্দাদের গুণাগুণ বর্ণনা করে বলেন- তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে ভয়ে ও আশায়। এবং আমি তাদের যে রিযিক দিয়েছি, তারা তা থেকে ব্যয় করে। [সূরা আস-সাজদা: ১৬]
আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের প্রশংসা করে বলেন- তারা সবাই সমান নয়। আহলে কিতাবদের মধ্যে কিছু লোক এমনও আছে, যারা অবিচলভাবে আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করে এবং রাতের গভীরে তারা সেজদা করে। [সূরা আলে ইমরান: ১১৯]
আয়াতে আল্লাহ তাদের প্রশংসা করেছেন এ জন্য যে, তারা রাতের গভীরে তেলাওয়াত করে। আল্লাহ-কে সেজদা করে।
ফজরের আগে, রাতের অর্ধাংশে বা তৃতীয়াংশের কাছাকাছি যে কোন সময়ে দুই রাকাত সালাত আদায় করলেই কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ অর্জন হবে।
আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল ইরশাদ করেন- মহামহিম আল্লাহ প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেন, 'কে আছে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দিবো। কে আছে আমার কাছে চাইবে, আমি তাকে তা দিবো। কে আছে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করবো। [বুখারি: ১১৪৫]
আল্লাহ নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন, তার মহত্ত্ব অনুযায়ী যেভাবে তা উপযুক্ত হয়, সেভাবেই তিনি অবতরণ করেন। আমরা এর কোন আকৃতি অবস্থা দৃষ্টান্ত কিছুই উপস্থিত করবো না।
রাতের পুণ্যময় এ অংশটি অনেকেরই হাতছাড়া হয়ে যায়। যার থেকে রাতের এ অংশটি ছুটে যায়, সে বঞ্চিত। সে পরিত্যক্ত। অবশ্য কেউ যদি সফরে থাকে, অসুস্থ থাকে, অত্যাবশ্যকীয় কোন কাজে ব্যস্ত থাকে, তাহলে তার কথা ভিন্ন। সে বঞ্চিতদের দলে নয়।
রাসূল আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আসকে উদ্দেশ্য করে বলেন- হে আব্দুল্লাহ, এমন ব্যক্তির মতো হয়ো না, যে রাত জেগে এবাদত করতো, পরে রাত জেগে এবাদত করা ছেড়ে দিয়েছে। [বুখারি: ১১৫২]
ইবনে ওমর বলেন, রাসূলের যুগে কোন সাহাবি স্বপ্ন দেখলে তা রাসূলের কাছে বর্ণনা করতো। আমারও মনে আকাঙ্ক্ষা জাগল, যদি একটি স্বপ্ন দেখি, তাহলে রাসূলের কাছে বর্ণনা করবো।
আমি তখন অবিবাহিত যুবক ছিলাম। আমার কোন পরিবার ছিল না। মসজিদে ঘুমাতাম আমি।
একদিন মসজিদে ঘুমিয়েছিলাম। স্বপ্নে দেখলাম, দুই ব্যক্তি এসে আমার হাত ধরল। তারা আমাকে একটি বাঁধানো কূপের দিকে নিয়ে গেল। আমি কূপে নামলাম। ভয় পেয়ে গেলাম। ফেরেশতা দুজন আমাকে বলল, 'ভয় পেওনা।'
আমি রেশমের একপ্রস্ত কাপড় নিলাম। সেই কাপড় দিয়ে সবুজ বাগানের যে দিকেই ইঙ্গিত করছি, আমাকে সেদিকেই উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
সকালে আমার বোন হাফসাকে আমি স্বপ্নের কথা বললাম। হাফসা রাসূলের পত্নী। সে রাসূলের কাছে স্বপ্নের কথা বর্ণনা করল। রাসূল বললেন- আব্দুল্লাহ কত ভালো লোক! যদি সে রাত জেগে তাহাজ্জুদ আদায় করতো! [বুখারি : ১১২২, ১১৫৭]
নাফে বলেন, এরপর থেকে ইবনে ওমর রাতে অল্পই ঘুমাতেন।
তিনি যখন সফরে যেতেন, রাতভর সালাত আদায় করতেন। এরপর বলতেন, 'হে নাফে, ফজর উদিত হয়েছে কি?' নাফে যদি বলতেন, না, এখনও ফজর উদিত হয়নি, তাহলে ইবনে ওমর আবার সালাত পড়তেন। আর যদি বলতেন, হ্যাঁ, ফজর উদিত হয়েছে, তাহলে ইবনে ওমর বিতর আদায় করতেন। এরপর ফজর আদায় করতেন।
কিয়ামুল লাইলের জন্য সহায়ক কিছু পাথেয়:
১. দিনের বেলা আল্লাহ -র অবাধ্যতা কমিয়ে দেয়া।
জনৈক ব্যক্তি হাসানকে বললেন, 'হে সাঈদের বাবা, আমি যে কিয়ামুল লাইল করতে পারি না!'
হাসান উত্তর দিলেন, 'কাবার প্রভুর কসম! তোমার অবাধ্যতা তোমাকে কয়েদ করে রেখেছে।'
২. একটি পাথেয় হল তাসবীহে ফাতেমী পাঠ করা, যা রাসূল আলী এবং ফাতেমাকে শিখিয়েছিলেন। অর্থাৎ, সুবহানাল্লাহ তেত্রিশবার, আলহামদুলিল্লাহ তেত্রিশবার, আল্লাহু আকবার চৌত্রিশবার পাঠ করা। [বুখারি: ৩১১৩]
৩. আরও একটি পাথেয় হল অযথা রাত না জাগা। আল্লাহ -র রহমতপ্রাপ্ত বান্দাগণ ছাড়া এখনকার মানুষ আল্লাহ-র অসন্তুষ্ট কাজকর্মে রাত জেগে থাকে। আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন।
৪. আরও একটি পাথেয় হল দিনে কাইলুলা করা। দ্বিপ্রাহরিক বিশ্রাম গ্রহণ করা। এতে রাত জেগে তাহাজ্জুদ আদায় এবং আল্লাহ-র সন্তুষ্টি অর্জন করা সহজ হয়।
কিয়ামুল লাইল রাসূল-এর সুন্নত। ইসলামের একটি নিদর্শন। আমরা যেদিন থেকে কিয়ামুল লাইল ছেড়ে দিয়েছি, সেদিন থেকে ঈমানের উন্নতা হারিয়ে ফেলেছি। মন নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের থেকে আল্লাহ-র নৈকট্য হারিয়ে গেছে।
📄 আল্লাহ ﷺ-র ভালোবাসার পাথেয় তাঁর কর্মকুশল নিয়ে চিন্তা করা
আল্লাহ-র ভালোবাসা অর্জনে চতুর্থ করণীয় হল আল্লাহর সৃষ্টিকূলের ভিতর চিন্তা-গবেষণা করা। আল্লাহ বলেন-
নিশ্চয় আসমান ও যমিন সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্য। যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে, এবং চিন্তা-গবেষণা করে আসমান ও যমিন সৃষ্টির বিষয়ে, (তারা বলে) পরওয়ারদেগার, এসব তুমি অনর্থ সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই। আমাদের তুমি দোযখের শাস্তি থেকে বাঁচাও। [সূরা আলে ইমরান: ১৯০, ১৯১]
কবি বলেন-
সবকিছুতেই আছে আল্লাহ-র পরিচয়, তা বুঝায় আল্লাহ-র একত্ব।
কীভাবে খেলাফ করা হয় আল্লাহর! কীভাবে অবিশ্বাসী করে যে অস্বীকার!! হতে হয় বড় আশ্চর্য!!!
প্রতিটি মুহূর্তে, প্রতিটি পলকে, প্রতিটি গাছে, পাহাড় আর ফুলে ফুটে আছে আল্লাহ-র নিদর্শন। কত নিদর্শন আমরা দেখি, কিন্তু আল্লাহ-র তাওফীকপ্রাপ্ত বান্দাগণ ব্যতীত আমরা সেসবে চিন্তা-গবেষণা করিনা। আল্লাহ বলেন-
তারা কি উটের প্রতি লক্ষ করে না, তা কীভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। এবং আকাশের প্রতি লক্ষ করে না, তা কীভাবে সুউচ্চ করা হয়েছে! পাহাড়ের দিকে লক্ষ করে না, তা কীভাবে স্থাপন করা হয়েছে! এবং পৃথিবীর দিকে লক্ষ করে না, তা কীভাবে সমতল বিছানো হয়েছে! [গাশিয়াহ: ১৭-২০]
চিন্তা-গবেষণা মানুষকে ইবাদাতের প্রতি বেশি উদ্দীপনা যোগায়। চিন্তা-গবেষণা নেককারদের একটি এবাদত, তারা আল্লাহ -র সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলীতে চিন্তা-গবেষণা করেন। আল্লাহ -র সৃষ্টিকূলে চিন্তা-গবেষণা করেন। আল্লাহ -র সৃজিত আশ্চার্যাবলী নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করেন। এভাবে তারা ঈমান ও স্থির বিশ্বাসের পথে গমন করেন।
আমরা যদি আমাদের ভ্রমণগুলো, আমাদের ফুর্তিগুলো আল্লাহ -র নিদর্শনাবলীতে চিন্তা-গবেষণার নিয়তে করি, তাহলে একজন মানুষ যখন কোন গাছের পাশ দিয়ে হাঁটবে, গাছ যেন তার সাথে কথা বলবে। বলে উঠবে- লা ইলাহা ইল্লাহু...
চিন্তা-গবেষণা আল্লাহ -র ভালোবাসা প্রাপ্তির অন্যতম একটি পাথেয়। আল্লাহ সকল বস্তু সৃষ্টি করেছেন, যেন আমরা চিন্তা-গবেষণা করি, আমাদের ঈমান বৃদ্ধি করি।
কবির ভাষায়-
ডাক্তার! খোয়া গেলো তোমার হাত বিনাশবনে! কে সে করেছে রুগ্ন তোমায় তার ডাক্তারি বিদ্যা দিয়ে!
ও রুগী, মুক্ত হয়েছো! সুস্থ হয়েছো! কে দিলো সে পরিত্রাণ, যবে হার মেনেছিলো সব চিকিৎসা-জ্ঞান!
মৌমাছি, উড়ছো তুমি উপত্যকায়, বলো, কে করেছে তোমায় মধুর এতো, দিয়েছে এই মধু তোমায়!
অজগর! শ্বাস ছাড়ো! শ্বাসে শ্বাসে বিষ ছাড়ো!! কে বানিয়েছে তোমায় বিষধর! কীভাবে তুমি আছো বেঁচে বিষ রেখে মুখভর! আল্লাহ, প্রশংসা শুধু তোমারই। কোন প্রশংসা তুমি ছাড়া নাই আর কারোরই।