📄 আল্লাহর ভালোবাসার পাথেয় আল-কোরআন
আল্লাহ -র ভালোবাসা অর্জিত হবে কিছু বিষয় অর্জনের মাধ্যমে। তন্মধ্যে ফায়েদা ও লাভ বিবেচনায় সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ এবং আল্লাহ-র কাছে সর্বাধিক নৈকট্য ও মর্যাদাকর মাধ্যম হলো কোরআনুল কারীম।
কোরআনুল কারীম অতীব মহান এক কিতাব। রাসূল ﷺ কোরআনুল কারীমের ব্যাপারে আমাদের অসিয়ত করেছেন। আমাদের জীবনযাপনে কুরআনের গুরুত্ব প্রদান করেছেন। কোরআনুল কারীমের তেলাওয়াত এবং গবেষণা ব্যতীত এই উম্মতের কোন সফলতা ও মুক্তি নেই। উম্মত কোরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে, কুরআনের বিকল্প গ্রহণ করলে আল্লাহ এই উম্মতকে ফাসাদে নিপতিত করবেন। হাদিসে এসেছে-
কোন জাতি হিদায়াত পাওয়ার পর পথভ্রষ্ট হয়নি একমাত্র ঝগড়াটে জাতি ব্যতীত। (উক্ত হাদিসটি ইমাম তিরমিযী আহমদ থেকে আবু উমামার মারফু সনদে বর্ণনা করেছেন।) [মুসনাদে আহমাদ: ২১৬৬]
অর্থাৎ, যখন একটি জাতি কোরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, তখন সে জাতি বেঁচে থাকবে দুর্বল নীচ মূল্যবোধ নিয়ে। সে জাতি বেঁচে থাকবে তরল ও ভঙ্গুর আদর্শ এবং অনাদর্শ শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে। তাদের উদ্যোগ-আয়োজনগুলো হবে নিষ্ফল, ব্যর্থ, নিরর্থক। কোন মঙ্গল তাদের কাছে আসবে না। দুনিয়াতেও না, আখেরাতেও না।
যে জাতি কোরআন ছেড়ে অন্য কিছু থেকে তাদের জীবনাদর্শ গ্রহণ করবে, সে জাতি নির্বোধ। সে জাতির জীবন হবে উদ্ভ্রান্ত, অমর্যাদাকর। আমাদের পূর্ববর্তী মহান মনীষাগণ কোরআন-সুন্নাহকে জীবনভর কেমন আলিঙ্গন করে রেখেছিলেন! তাঁরা ছিলেন যুগের যোগ্যতম জাতি। এবাদত, দুনিয়াবিমুখতা এবং আল্লাহ -র নৈকট্যে তাঁরা ছিলেন প্রবাদপ্রতিম। সবচেয়ে মর্যাদাবান ও শ্রেষ্ঠতম।
এর বিপরীতে আমরা যখনই কোরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি (আল্লাহ -র রহমতে গোণা কয়েক ব্যতীত), তখন থেকেই আমাদের অন্তরগুলো মরে গেছে। আমরা হারিয়ে ফেলেছি মহান মনীষাদের সেই নূর, সেই বিকির্ণ আলোকরশ্মি। হারিয়ে ফেলেছি আল্লাহ -র নৈকট্যের সেই জ্যোতি। মহান আল্লাহ রাসূল -কে নির্দেশনা দিলেন, 'আর তুমি কোরআন পড়। [সূরা নামল: ৯২]
আয়াত থেকে বোঝা যায়, মানুষের কাছে কোরআন পড়া রাসূলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। এজন্য রাসূল তাঁর নবুওতের প্রাথমিক জীবনে সাহাবাদের হাদিস সংকলন করতে নিষেধ করেছিলেন, যেন তাঁরা কোরআন রেখে হাদিস নিয়ে বেশি ব্যস্ত হয়ে না যায়!
কোরআন মুসলমানের গর্বের বিষয়। কোন মুসলমান যখন গর্ব করে, সে যেন তার ইসলামি জীবনের কোন বিপদ ও পরীক্ষা নিয়ে গর্ব করে। সে যেন ইসলামের জন্য কোন খেদমত ও পদক্ষেপ নিয়ে গর্ব করে। সে যেন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর উচ্চতা নিয়ে গর্ব করে। সর্বোপরি কোরআন এবং কোরআনি জীবন নিয়ে গর্ব করে।
বংশ ও পরিবার, পদ ও স্থিতি, পেশা ও প্রবৃত্তি গর্ব করার কোন বিষয় নয়। এই গর্ব, দম্ভ ও অহঙ্কার ফেরাউন ও তার দোসরদের দম্ভ-অহঙ্কারের মতো।
সাদ ইবনে হিশাম ইবনে আমের বলেন, “আমি আয়েশা -কে রাসূল -র স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। আয়েশা বললেন, 'তাঁর স্বভাব-চরিত্র ছিলো কোরআন।” তিনি ছিলেন কুরআনের প্রতিবিম্ব। রাসূল -র বৈশিষ্ট্য বর্ণনায় আয়েশা -র এই বাণীটি আল্লাহর বাণীর পর সবচেয়ে সুসংক্ষিপ্ত-সুসমৃদ্ধ বাণী।
-রাসূল যেন কুরআনের প্রতীক ছিলেন! জীবন্ত কুরআনের মতই পৃথিবীতে তিনি বিচরণ করতেন!!
-কেউ যখন কোরআন পড়ে, সে যেন রাসূল -র জীবনই পাঠ করে!!!
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে রাসূলের শানে ঘোষণা করেন- আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী। [কালাম: ০৪]
আল্লাহর রহমতে আপনি তাদের জন্য কোমল-হৃদয় হয়েছেন। পক্ষান্তরে আপনি যদি রূঢ় ও কঠিন-হৃদয় হতেন, তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। [আলে ইমরান: ১৫৯]
আর ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোল, সৎকাজের নির্দেশ দাও, মুর্খ- জাহেলদের থেকে দূরে সরে থাক। [আ'রাফ: ১৯৯]
তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী। মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়। [তাওবাহ: ১২৮]
রাসূল সাহাবাদের কুরআনের আলোকে জীবন যাপনের পদ্ধতি শিখিয়েছেন। সেসব হাদিস পড়লে যে কোন মুসলমানের অন্তর কুরআনের প্রতি অবশ্যই বিগলিত হবে।
আবু উমামা থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল ইরশাদ করেন- তোমরা কোরআন পড়ো। কারণ, কিয়ামাতের দিন এই কোরআন তার ধারক-বাহকদের জন্য শাফায়াতকারীরূপে আবির্ভূত হবে। [মুসলিম : ৮০৪]
কোরআন যদি কারো জন্য শাফায়াত করে, তাহলে সে তার সফলতা। তার পরম সুখ। সে কতো ভাগ্যবান!
উসমান থেকে বর্ণিত, রাসূল ইরশাদ করেন- তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি, যিনি কোরআন শিখেন এবং শিখান। [বুখারী: ৫০২৭]
আল্লাহর শপথ! আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম, সর্বাপেক্ষা মর্যাদাবান, সবচেয়ে সম্মানী সেই ব্যক্তি, যিনি কুরআনের সাথে জীবন কাটান!
কোরআন পৃথিবীর বুকে আল্লাহ-র পক্ষ থেকে অবতীর্ন হওয়া সুন্দরতম বস্তু। পৃথিবীর প্রায় অধিবাসীরা কিবা বস্তুবাদীরা মানুষকে তার পদ-পদবী, সন্তান-সন্ততি বিবেচনায় মর্যাদা দিয়ে থাকে। কিন্তু এসব পদমর্যাদা, সন্তান- সন্ততি আদৌ কোন সৌন্দর্যের বিষয়! কখনই নয়। বরং 'তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি, যিনি কোরআন শিখেন এবং শিখান।'
এজন্যই রাসূল মানুষের ততটুকু কাছে যেতেন, যতটুকু সে কুরআনের নিকটবর্তী হতো। রাসূল মানুষকে ততটুকু সম্মান করতেন, যতটুকু সে কোরআন শিখতো। যতটুকু সে কোরআন তেলাওয়াত করতো।
আনাস বর্ণনা করেন, রাসূল ﷺ একটি সারিয়্যা (যে যুদ্ধদলে রাসূল অংশগ্রহণ করেননি) আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার জন্য পাঠালেন। পাঠানোর সময় তাদের জিজ্ঞেস করলেন, 'তোমাদের মধ্যে কেউ কোরআন শিখেছে?'
সাহাবায়ে কেরাম চুপ রইলেন। রাসূল আবার জিজ্ঞেস করলেন, 'তোমাদের মধ্যে কেউ কোরআন শিখেনি?'
জনৈক সাহাবি বললেন, 'আমি শিখেছি, ইয়া রাসূলাল্লাহ।' রাসূল জিজ্ঞেস করলেন, 'তুমি কুরআনের কী শিখেছ?' সাহাবি বললেন, 'আমি সূরা বাকারা শিখেছি।' রাসূল বললেন, 'ঠিক আছে, তুমিই দলের আমীর।'
এই হলো ইসলামের সনদ। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু এর সনদ। আল্লাহ র নৈকট্যের সনদ। তুমি যখন শুধু সূরা বাকারা শিখলে, সূরা বাকারা তোমার বক্ষে ধারণ করলে, সূরা বাকারা দিয়ে তোমার জীবন সাজালে, তখন তুমিই হলে সৈন্যবাহিনীর আমীর!
জাবির বলেন, রাসূল ﷺ অহুদ যুদ্ধে শহীদদের খবরাখবর নিচ্ছিলেন। তখন তিনি বলছিলেন, 'এদের মধ্যে যে কোরআন বেশি শিখেছে, তাকে আগে দাফন করো!'
কোরআন ছিলো সাহাবায়ে কেরামের নিত্যসঙ্গী। সাহাবাদের রাতবিরাতের সঙ্গী। মোহাজির হোক বা আনসার হোক, কারো ঘরে প্রবেশ করলেই তাকের উপর একটি কোরআন পাওয়া যেতো। আর কুরআনের পাশে ঝুলানো থাকতো তলোয়ার। তলোয়ার দিয়ে জয় হতো দেশ-দেশান্তর, কোরআন দিয়ে জয় হতো মানুষের অন্তর।
আবু মুসা আশ'আরী এর হাদিসে পাওয়া যায়, রাসূল ﷺ এক রাতে আবু মুসার তেলাওয়াত শুনতে পেলেন। আবু মুসার তেলাওয়াত ছিলো অত্যন্ত সুললীত কণ্ঠের। তার কণ্ঠ মানুষের অন্তর ছুঁয়ে তরঙ্গায়িত হতো। যেনো প্রতিটি অন্তরকে সম্বোধন করেই তিনি তেলাওয়াত করতেন।
রাসূল মসজিদে এসে শরীর এলিয়ে একটু বিশ্রামে নিচ্ছেন। মসজিদটি ছিলো ঘরের পাশেই। আবু মুসা তেলাওয়াত করছেন। রাসূল মসজিদ থেকেই আবু মুসার তেলাওয়াত শুনতে পেলেন। সকাল হল। রাসূল আবু মুসাকে বললেন, 'আমাকে দাউদের সুরেলাসুরের একটি দেয়া হয়েছে!'
আবু মুসা বললেন, 'হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আমার তেলাওয়াত শুনেছেন!'
রাসূল বললেন, 'যার হাতে আমার জীবন, তার শপথ! আমি তোমার তেলাওয়াত শুনেছি।'
আবু মুসা বললেন, 'যার হাতে আমার জীবন, তার শপথ! যদি জানতাম আপনি আমার তেলাওয়াত শুনছেন, তাহলে আমি আপনার জন্য তেলাওয়াতকে আরও অলঙ্কৃত করতাম।'
অর্থাৎ, আমি তেলাওয়াতকে আরও বিশুদ্ধ ও সুন্দর করতাম, যেন তা অত্যধিক মনোহর ও চিত্তাকর্ষক হয়। আরও বেশি ভাবালু হয়। আরও বেশি মোহিত করে, তন্ময়ের সৃষ্টি করে।
কোরআন মানেই বিস্ময়াবিভোর কিছু। পুরো কোরআনই বিস্ময়ের। আল্লাহ বলেন-
বলুন, আমার প্রতি ওহী নাযিল করা হয়েছে যে, জিনদের একটি দল কোরআন শ্রবণ করেছে। অতঃপর তারা বলেছে, আমরা বিস্ময়কর কোরআন শ্রবণ করেছি। [আল-জিন: ০১]
যখন আমি একদল জিনকে আপনার প্রতি আকৃষ্ট করেছিলাম, তারা কোরআন পাঠ শুনছিলো। তারা যখন কোরআন পাঠের জায়গায় উপস্থিত হলো, তখন পরস্পর বললো, চুপ থাক। অতঃপর যখন পাঠ সমাপ্ত হলো, তখন তারা তাদের সম্প্রদায়ের কাছে সতর্ককারীরূপে ফিরে গেলো। তারা বললো, হে আমাদের সম্প্রদায়, আমরা এমন এক কিতাব শুনেছি যা মুসার পরে অবতীর্ণ হয়েছে। এ কিতাব পূর্ববর্তী সব কিতাবের সত্যায়ন করে, সত্যধর্ম ও সরলপথের দিকে পরিচালিত করে।
হে আমাদের সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর দিকে আহ্বানকারীর কথা মান্য কর এবং তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। তিনি তোমাদের গোনাহ মার্জনা করবেন এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে তোমাদের রক্ষা করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর দিকে আহ্বানকারীর কথা মানবে না, সে পৃথিবীতে আল্লাহকে অপারগ করতে পারবে না এবং আল্লাহ ব্যতীত তার কোন সাহায্যকারী থাকবে না। এ ধরণের লোকই প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত। [আল-আহকাফ: ২৯-৩২]
এই ঘটনা ঘটেছিলো, যখন রাসূল তায়েফ থেকে ফিরেছিলেন, তখন। তায়েফ থেকে ফিরে এক খেজুর বিথিকায় রাসূল তেলাওয়াত করছিলেন। সেখানে জিনেরা রাসূলের তেলাওয়াত শুনলো এবং সাথেসাথে ঈমান আনলো। মুসলমান হয়ে গেলো। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ-এর পতাকা উড্ডীন করে আপন কওমের কাছে সতর্ককারীরূপে ফিরে গেলো। ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত, রাসূল ইরশাদ করেন- যার ভেতর কুরআনের একটু অংশ নেই, সে বিরাণ ঘরের মতো। [মুসনাদে আহমাদ: ১৯৪৮]
বিরাণ ঘর হলো, যে ঘরে কাক, সাপ, বিচ্ছু ইত্যাদির বাস থাকে। হাদিসের অর্থ হলো, যে অন্তরে কুরআনের আভাস নেই, সে অন্তরে নিফাক, কুবুদ্ধি, কুমন্ত্রণা, সংশয়, অবৈধ প্রেম, উদ্ভ্রান্তি, উন্মত্ততা, নির্লজ্জ গান-বাজনা, কুদৃষ্টি ইত্যাদির বসবাস থাকে।
রাসূল কুরআনের সাথে নৈকট্য ও সম্পর্ক অনুপাতে সাহাবাদের সুসংবাদ প্রদান করতেন।
উবাই ইবনে কাব। তিনি ছিলেন কারীদের সর্দার। রাসূল তাকে বললেন, 'আল্লাহ আমাকে তোমার কাছে এই আয়াত পড়ার আদেশ করেছেন-
উবাই ইবনে কাব সকলের মতো একজন সাহাবি। কিন্তু মহান আল্লাহ সাত আসমান উপর থেকে তার নাম নিয়েছেন! কী এমন সম্মান তার? উবাই আশ্চর্য হয়ে রাসূলকে বললেন, 'আল্লাহ আপনার কাছে আমার নাম নিয়েছেন!'
রাসূল বললেন, 'হ্যাঁ, আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি।' এ কথা শুনে উবাইয়ের দুচোখে আনন্দের অশ্রু প্রবাহিত হলো। রাসূল তার কাছে সূরা বায়্যিনা তেলাওয়াত করলেন। [বুখারি: ৩৮০৯]
রাসূল উবাই ইবনে কাব এর কুরআনের সাথে সম্পর্ক, কোরআন সংরক্ষণের প্রাচুর্য, কুরআনের গভীর বোধ ও জ্ঞান পরীক্ষা করার জন্য তাকে জিজ্ঞেস করলেন, 'হে আবুল মুনযির, কুরআনের সবচেয়ে মাহাত্ম্যময় আয়াত কোনটি?'
উবাই উত্তর করলেন, 'আল্লাহ ও তার রাসূল ভালো জানেন।'
রাসূল পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, 'কুরআনের সবচেয়ে সুমহান আয়াত কোনটি?'
উবাই উত্তর দিলেন- اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ
রাসূল তার বুকে হাত রেখে বললেন, 'আবুল মুনযির, তোমার ইলম বৃদ্ধি পাক।' [মুসলিম : ৮১০]
এই সেই ইলম, যার জন্য প্রতিযোগিতা করা হয়। এই ইলমই হলো মানুষের অর্থবহ ইলম। উপকারী ইলম। রাসূল উবাই ইবনে কাবের ইলম বৃদ্ধির দোয়া করলেন।
উবাই কারীদের সর্দার ছিলেন। এমনকি রাসূল যখন সালাতে কোন আয়াত ভুলে যেতেন এবং কোন একজন সাহাবি তাকে সেই আয়াত স্মরণ করিয়ে দিতেন, রাসূল সালাত শেষে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তা আবার উবাইয়ের কাছে জিজ্ঞেস করতেন। কুরআনের সাথে উবাইয়ের অত্যুচ্চ অবস্থানের কারনেই রাসূল উবাইকে তা জিজ্ঞেস করতেন।
রাসূল কোরআন শুনে খুবই প্রভাবিত হতেন।
ইবনে আবী হাতেম তার তাফসীর গ্রন্থে সূরা গাশিয়াহর আলোচনায় উল্লেখ করেছেন, রাসূল এক মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। মহিলা তখন তেলাওয়াত করছিল- هَلْ أَنكَ حَدِيثُ الْغَاشِيَةِ (আপনার কাছে আচ্ছন্নকারী কেয়ামতের বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি?) [গাশিয়া: ০১]
রাসূল মাথা উঁচিয়ে খেয়াল করে শুনলেন, মহিলা বারবার এই আয়াত তেলাওয়াত করছে। মহিলা কাঁদছে আর তেলাওয়াত করছে। টেরও করতে পারেনি যে, কেউ একজন তার তেলাওয়াত শুনছেন।
রাসূলও তার তেলাওয়াত শুনে কেঁদে ফেললেন আর বলতে লাগলেন, 'হ্যাঁ, আমার কাছে (আচ্ছন্নকারী কেয়ামতের বৃত্তান্ত) পৌঁছেছে। হ্যাঁ, আমার কাছে পৌঁছেছে।'
রাসূল কোরআনময় জীবন কাটিয়েছেন। কোরআনের আয়াতগুলো ধরে ধরে চলেছেন। রাসূলের এই কোরআনময় জীবন থেকে সাহাবায়ে কেরام কোরআনের প্রভাব গ্রহণ করতেন।
ইবনে কাসীর আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া গ্রন্থে ওমর এর জীবনীতে লিখেছেন, ওমর একটি আয়াত পড়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সাহাবায়ে কেরামও সে আয়াতেই উদ্বুদ্ধ হয়ে তার শুশ্রূষা করেছেন।
কোন কোন বর্ণনায় পাওয়া যায়, সে আয়াতগুলো ছিলো- وَقِفُوهُمْ إِنَّهُمْ مَّسْئُولُونَ مَا لَكُمْ لَا تَنَاصَرُونَ . بَلْ هُمُ الْيَوْمَ مُسْتَسْلِمُونَ)
এবং তাদের থামাও, তারা জিজ্ঞাসিত হবে। তোমাদের কী হলো যে তোমরা একে অপরের সাহায্য করছ না? বরং তারা আজকের দিনে আত্মসমর্পনকারী। [আস-সাফফাত: ২৪-২৬]
বান্দা যতক্ষণ কোরআন ভালো না বাসবে, ততক্ষণ আল্লাহ -কে ভালোবাসা তার পক্ষে সম্ভব নয়।
ইবনে মাসউদ বলেন, 'তোমরা কেউ আল্লাহ -কে ভালোবাসার ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে না। জিজ্ঞাসিত হবে কোরআনকে ভালোবাসার ব্যাপারে। কারণ, তুমি যখন কোরআনকে ভালোবাসবে, তখনই আল্লাহ কে ভালোবাসতে পারবে। কুরআনের প্রতি তোমার ভালোবাসা যতটুকু হবে, আল্লাহ -র প্রতিও তোমার ভালোবাসা ততটুকুই হবে।'
এক রাতে উসাইদ বিন হুযাইর সালাতে দাঁড়িয়ে সূরা বাকারা তেলাওয়াত করছিলেন। হঠাৎ তার ঘোড়াটি ভীত হয়ে লাফিয়ে উঠলো এবং ছুটাছুটি শুরু করলো। তিনি সালাত ছেড়ে দিলেন। তার শিশু ছেলেটি তখন ঘোড়ার পাশেই বসে ছিলো। উসাইদ আশঙ্কা করলেন, ঘোড়া হয়তো তার ছেলেকে পদদলিত করছে। এই ভয়ে তিনি সালাত ছেড়ে দিলেন। দেখলেন, একটি ঝুলন্ত ছায়ার নিচে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন!
রাসূলের কাছে তিনি এসে সংবাদ জানালেন। রাসূল ﷺ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, 'তুমি সেই ছায়া দেখেছ।'
উসাইদ বললেন, 'জি, দেখেছি।'
রাসূল ﷺ বললেন, 'আল্লাহর শপথ! নিশ্চয় ফেরেশতারা তোমার তেলাওয়াত শোনার জন্য নেমেছিলো। তুমি যদি ভোর পর্যন্ত তেলাওয়াত করতে, তারাও ভোর পর্যন্ত এখানে অবস্থান করতো এবং লোকেরা তাদের দেখতে পেতো।' [মুসলিম : ৭৯৬]
সাহাবায়ে কেরামের রাত কাটতো কুরআনের সাথে। অথচ আমাদের রাত কাটে কোরআন ছাড়া অন্যকিছুর সাথে। আমাদের রাত্রি জাগরণ হয় অনর্থক কাজে। বেহুদা কথাবার্তায়, বেফায়দা গালগল্পে। এমন আড্ডায় আমাদের রাত কাটে, যা দিয়ে আল্লাহ ﷻ-র সাথে আমাদের নৈকট্য অর্জন হয় না। যা আমাদের দুনিয়াতে কোন কাজে আসে না, আখেরাতেও কোন কাজে আসে না। এভাবে আমরা আল্লাহ ﷻ-র সাথে আমাদের নৈকট্য হারিয়েছি। আল্লাহ ﷻ-র মনোনীত বান্দাদের অবস্থান থেকে আমরা অনেক দূরে সড়ে এসেছি। আমাদের রাতগুলো কাটছে খেল-তামাশায়, আর তাদের রাতগুলো কেটেছিলো কুরআনের সাথে। কবি বলেন-
'নিশুতি!
এই যে প্রেমবাসরের গোপন কথা, অভেদ আলাপ; দীর্ঘ তোমার প্রহরগুলোয় কী এমন আছে মোহময়?' -বলো!
নিশুতি বলে- 'যখন হয়ে আসে ভোর, অবিরল ঝরে কেবল রহমধারা, তখন অঞ্জলি ভরে নিবেদন কর পবিত্র প্রেমের অশ্রুমালা!
-এই তো জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া!' আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন, একদিন খালা মাইমুনার ঘরে আমি রাত কাটিয়েছিলাম। ইশার সালাতের পর রাসূল ﷺ ঘরে এলেন, তখন আমি বিছানার এক পাশে শুয়েছিলাম।
রাসূল ﷺ বললেন, 'এই ছোট্ট ছেলে ঘুমিয়ে গেছে?' ইবনে আব্বাস তখন ঘুমানোর চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু এখনও ঘুমাননি। মাইমুনা উত্তর করলেন, 'হ্যাঁ, সে ঘুমিয়ে গেছে।'
অতঃপর রাসূল ﷺ বিছানার কাছে এলেন। আল্লাহ -র নাম স্মরণ করে দোয়া করলেন এবং ঘুমিয়ে গেলেন।
ইবনে আব্বাস বলেন, 'আমি তখন তাঁর গভীর ঘুমঘোরে নাক ডাকার আওয়ায শুনেছিলাম।'
একটু পর রাসূল ﷺ উঠলেন। চোখ থেকে ঘুম তাড়ালেন। অতঃপর তেলাওয়াত করলেন- নিশ্চয় আসমান ও যমিন সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্য। যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা-গবেষণা করে আসমান ও যমিন সৃষ্টির বিষয়ে, (তারা বলে,) পরওয়ারদিগার! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদের তুমি দোযখের শাস্তি থেকে বাঁচাও। [সূরা আলে ইমরান: ১৯০, ১৯১]
-এভাবে রাসূল দশটি আয়াত পূর্ণ তেলাওয়াত করলেন।
এরপর রাসূল ﷺ ঘর থেকে বের হলেন। ইবনে আব্বাস একটি পাত্র এবং পানি নিয়ে দরজার কাছে রাখলেন।
রাসূল ﷺ যখন ফিরে এলেন এবং দরজার কাছে পানি দেখলেন, বললেন, 'আমার জন্য এই পানি কে রেখেছে?'
ইবনে আব্বাস তখন রাসূলের উচ্চারিত প্রতিটি শব্দ মুখস্থ করে রেখেছিলেন।
এরপর রাসূল ﷺ বললেন-
اللَّهُمَّ فَقِّهْهُ فِي الدِّينِ وَعَلِّمْهُ التَّأْوِيلَ হে আল্লাহ, তাকে দীনের বুঝ দান করো। দীনের ব্যাখ্যা শিখাও। [মুসলিম : ১৪৭৭]
এটাই ছিলো ইবনে আব্বাসের ইলমপূর্ণ জীবনের সূচনা। অতঃপর রাসূল কিবলার দিকে ফিরে দোয়া করলেন-
اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ الْحَقُّ وَوَعْدُكَ حَقٌّ وَقَوْلُكَ حَقٌّ وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ وَالْجَنَّةُ حَقٌّ وَالنَّارُ حَقٌّ وَالسَّاعَةُ حَقٌّ وَالنَّبِيُّونَ حَقٌّ وَمُحَمَّدُ حَقٌّ اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ وَبِكَ خَاصَمْتُ وَإِلَيْكَ حَاكَمْتُ فَاغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ أَوْ لَا إِلَهَ غَيْرُكَ
আল্লাহ, তোমার জন্য সকল প্রশংসা, তুমি আসমান যমিন এবং এতদুভয়ের সবকিছুর তত্ত্বাবধায়ক। তোমার জন্য সকল প্রশংসা, তুমি আসমান যমিন এবং এতদুভয়ের সবকিছুর নূর। তোমার জন্য সকল প্রশংসা, তুমি আসমান যমিন এবং এতদুভয়ের সবকিছুর মালিক। তোমার জন্য সকল প্রশংসা, তুমি সত্য। তোমার ওয়াদা সত্য। তোমার বাণী সত্য। জান্নাত সত্য। দোযখ সত্য। সকল নবী সত্য। মোহাম্মদ সত্য। আল্লাহ, তোমারই জন্য আমি সমর্পিত। তোমাতেই আমি বিশ্বাস রেখেছি। তোমারই উপর ভরসা করেছি। তোমারই কাছে প্রত্যাবর্তন করেছি। তোমারই রাহে লড়াই করেছি। তোমরাই দরবারে বিচার চেয়েছি। তুমি আমাকে ক্ষমা কর। আমার পূর্বাপর ক্ষমা কর। আমার প্রকাশ্য-গোপনীয় সবকিছু ক্ষমা কর। [বুখারি : ১১২০]
অতঃপর রাসূল ﷺ সালাতে দাঁড়ালেন। ইবনে আব্বাসও তার সাথে দীর্ঘ রাত সালাত আদায় করলেন। [মুসলিম: ৭৬৩]
রাসূল ﷺ সালাতে দীর্ঘ কোরআন পড়তেন। সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত তাঁর সাথে কেউ কষ্ট করে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া স্বাভাবিকভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারত না।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেন, 'এক রাতে রাসূল সালাতে দাঁড়ালেন। আমিও তাঁর সাথে দাঁড়ালাম। রাসূল ﷺ কোরআন পড়তে থাকলেন। আমি এক পর্যায়ে ভিন্ন কিছু ভাবলাম।'
ইবনে মাসউদকে জিজ্ঞেস করা হলো, 'আপনি কী ভেবেছেন?'
তিনি বললেন, 'আমি ভাবলাম যে আমি বসে যাবো এবং তাকে ডাক দিবো!' [বুখারি: ১১৩৫]
হোযায়ফা বলেন, 'আমি রাসূল -র সাথে সালাত পড়েছিলাম। রাসূল সূরা বাকারা শুরু করলেন। আমি ভাবলাম, একশ আয়াত শেষে রাসূল রুকু করবেন। কিন্তু তিনি সূরা বাকারা শেষ করলেন সূরা নিসা শুরু করলেন (ইবনে মাসউদের সহীফার ক্রমানুসারে)। রাসূল সূরা নিসা তেলাওয়াত করছেন। আমি ভাবলাম, সূরা নিসা শেষে বুঝি রুকু করবেন। রাসূল সূরা নিসা শেষে আলে ইমরান শুরু করলেন এবং তা তেলাওয়াত করলেন। প্রত্যেক তাসবীহের আয়াতে তাসবীহ পাঠ করলেন। প্রত্যেক রহমতের আয়াতে আল্লাহ -র অনুগ্রহ মাগলেন। প্রত্যেক আযাবের আয়াতে আল্লাহ-র কাছে পানাহ চাইলেন।' [মুসলিম: ৭৭২]
এই ছিলো রাসূল -র সালাত!
সবিশেষ, আল্লাহ -র নৈকট্য অর্জনে বান্দার জন্য প্রথম পাথেয় হলো কোরআন। কুরআনের ছায়ায় বান্দার জীবন যাপন। বান্দার জীবনব্যাপী কুরআনের বোধের উন্মেষ, কুরআনের প্রতিগমন, কুরআনের আমল।
📄 আল্লাহ ﷺ-র ভালোবাসার পাথেয় দুনিয়া বিমুখতা
আল্লাহ -র ভালোবাসা পাওয়ার জন্য দ্বিতীয় পাথেয় হলো দুনিয়াবিমুখ থাকা। দুনিয়া থেকে মুক্ত ও পৃথক থাকা। সাহল ইবনে সাদ রাযি. থেকে বর্ণিত হাদিস এ কথার উপর ইঙ্গিত করে। তিনি বলেন, "এক লোক রাসূল -র কাছে আসলেন। রাসূল -কে বললেন, 'হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে একটি আমল বলে দিন, যা করলে আল্লাহ আমাকে ভালোবাসবেন। মানুষও আমাকে ভালোবাসবে।'
রাসূল বললেন- ازْهَدْ فِي الدُّنْيا يُحِبَّكَ اللهُ ، وَازْهَدْ فِيمَا عِنْدَ النَّاسِ يُحِبَّكَ النَّاسُ
দুনিয়া বিমুখ হও, আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন। মানুষের কাছে অমুখাপেক্ষী হও, মানুষও তোমাকে ভালোবাসবে। [ইবনে মাজাহ : ১৪০২] যেসব আমল মানুষকে আল্লাহ -র নিকটতর করে, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য আমল হলো দুনিয়ার প্রেম অন্তর থেকে দূর করা। যার অন্তর থেকে দুনিয়ার প্রেম দূর হবে এবং অন্তরে আল্লাহর প্রেম বসবে, আল্লাহ তাকে ভালোবাসবেন।
আল্লাহ-র ভালোবাসা তার সমর্পিত বান্দা বা গোলাম হওয়া ব্যতীত পাওয়া যায়না। গোলাম হওয়ার অর্থ হল, আল্লাহ-র কাছে বিনীত ও নম্র হওয়া। আল্লাহ-র কাছে নিজেকে সমর্পন করা।
আল্লাহ রাসূল ﷺ-র ইসরার শুভাগমনের কথা এভাবে বলেছেন- পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রিবেলায় ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত। [সূরা বনী ইসরাঈল: ০১]
রাসূল ﷺ উম্মতের জন্য সতর্ককারী ছিলেন। আল্লাহ তার এই বৈশিষ্ট্য বর্ণনার ক্ষেত্রেও বলেছেন-
আর যখন আল্লাহর বান্দা তাকে ডাকার জন্য দণ্ডায়মান হলো, তখন অনেক জিন তার কাছে ভিড় জমালো। [জিন: ১৯]
রাসূলের উপর কোরআন অবতরণের বর্ণনায়ও আল্লাহ বলেছেন- পরম কল্যাণময় তিনি যিনি তার বান্দার প্রতি ফয়সালার গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন, যাতে সে বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হয়। [ফুরকান: ০১]
আমাদের সালফে সালেহীন, পূর্ববর্তী নেকবান্দারা দুনিয়া বিমুখ থাকতেন। দুনিয়া তাদের হাতে থাকতো, কিন্তু তাদের অন্তরে স্থান পেতো না। এজন্য আল্লাহ-ও তাদের ভালোবাসতেন।
রাসূল ﷺ তাদের এবং আমাদের অর্থ-সম্পদের মোহ থেকে সতর্ক করেছেন। কারণ মানুষ সাধারণত অর্থ-সম্পদের মোহগ্রস্ত হয়ে থাকে। চাদর ও শালের আয়েশী হয়ে থাকে। পদ-পদবীর লোভী হয়ে থাকে।
রাসূল ﷺ ইরশাদ করেন- দীনার দিরহামের গোলাম লাঞ্চিত হোক। শাল ও চাদরের গোলাম লাঞ্ছিত হোক। সে লাঞ্চিত ও অপমানিত। তার পায়ে কাঁটা বিদ্ধ হলে কেউ তা খুলবেনা। [বুখারি : ২৮৮৭]
কিন্তু কেন?
কারণ, সে তার প্রবৃত্তির পূজা করেছে। আল্লাহ বলেন- আপনি কি তার প্রতি লক্ষ করেছেন, যে তার প্রবৃত্তিকে উপাস্য বানিয়েছে? আল্লাহ জেনে শুনে তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন। [জাসিয়া: ২৩]
মোহাম্মদ বিন ওয়াসির একটি ঘটনা বহুল আলোচিত। তিনি কুতাইবা বিন মুসলিমের বাহিনীতে ছিলেন। পুরো বাহিনী ইসলামী রাষ্ট্রে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর পতাকা উড্ডীন করছিলেন।
কুতাইবা বিন মুসলিম মোহাম্মদ বিন ওয়াসিকে নেতা-মন্ত্রীদের সামনে পরীক্ষা করতে চাইলেন। তার হাতে সাওরশৃঙ্গের মতো একটি গনীমতের খাযানা ছিল। তিনি মন্ত্রীদের তা দেখিয়ে বললেন, 'তোমরা কি এমন একজন মানুষ দেখাতে পারবে, যার কাছে আমি এসব অর্পণ করলে সে এসব ফিরিয়ে দিবে!'
মন্ত্রীগণ বললেন, 'এতসব সম্পদ থেকে বিমুখ থাকার মতো কেউ আছেন বলে আমাদের মনে হয় না।'
কুতাইবা বললেন, 'তোমাদের আমি উম্মতে মোহাম্মদী থেকে এমন একজন লোক দেখাবো, যার কাছে স্বর্ণ মাটির মতো। তোমরা মোহাম্মদ বিন ওয়াসিকে উপস্থিত কর।'
মন্ত্রীগণ মোহাম্মদ বিন ওয়াসিকে উপস্থিত করার জন্য তার খোঁজে গেল। তারা মোহাম্মদকে আল্লাহ -র তাসবীহ ও প্রশংসা, এসতেগফাররত অবস্থায় খুঁজে পেলেন।
সকলে মিলে কুতাইবার দরবারে উপস্থিত হলেন। কুতাইবা স্বর্ণগুলো মোহাম্মাদের হাতে দিলেন। মোহাম্মদও তা গ্রহণ করলেন।
চিন্তায় পড়ে গেলেন কুতাইবা। ঘটনা এমন হওয়ার কথা নয়। কুতাইবার ধারনা ছিলো, মোহাম্মদ তা ফিরিয়ে দিবে। সকল নেতা-মন্ত্রীর সামনে কুতাইবার চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল।
মোহাম্মদ স্বর্ণগুলো সাথে নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে এলেন। কুতাইবা কজন সৈন্য নিয়োজিত করলেন মোহাম্মাদের গন্তব্য পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য। কুতাইবা আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন, 'আল্লাহ, আমার ধারনা ভুল প্রমাণিত করো না।'
মোহাম্মদ বিন ওয়াসি স্বর্ণগুলো নিয়ে বাইরে চলে এলেন। বাহিনী থেকে একজন গরীব সৈন্য খুঁজে তাকে সবগুলো স্বর্ণ দিয়ে দিলেন।
মোহাম্মাদের পিছনে নিয়োজিত কুতাইবার সৈন্যরা যখন কুতাইবাকে এই ঘটনা জানালেন, কুতাইবা তার আশপাশের লোকদের বললেন, 'আমি কি তোমাদের বলিনি, উম্মতে মোহাম্মদীর মধ্যে এমন একজন লোক আছেন, যার কাছে স্বর্ণ মাটিতুল্য!'
এই হলো দুনিয়া বিমুখতা।
এই ঘটনাটি মানুষের অন্তর পরিবর্তনে অনেক বেশি প্রভাবক। আমরা যেন এই ঘটনাটি খোতবা, বয়ান, শিক্ষাদানের পাশাপাশি দীক্ষাদানের মজলিসেও এই ঘটনাটি বেশি বেশি আলোচনা করি। আজ অনেক মানুষ এমন পাওয়া যাচ্ছে, যারা দুনিয়ার সেবাদাস। ফলে মানুষ ইলম চর্চা করছে না। দাওয়াতে অংশগ্রহণ করছে না। আল্লাহ -এর যিকির এবং কোরআন তিলাওয়াতের জন্য সময় পাচ্ছে না। সুতরাং আমরা এই ঘটনাটি বেশি বেশি আলোচনা করবো। যেন আমাদের অন্তরগুলো পরিবর্তন হয়, উদাসীনতা থেকে ফিরে আসে।
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর বলেন, "রাসূল ﷺ একদিন আমার উভয় কাঁধে হাত রেখে বললেন-
দুনিয়ার জীবনে তুমি গরীবের মতো থাকো, অথবা পথযাত্রীর মতো থাকো। [বুখারি : ৬৪১৬]
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে সবচেয়ে দুনিয়াবিমুখ ছিলেন। এমনকি এ কারণে তিনি খেলাফতের দায়িত্ব থেকেও মুক্ত ছিলেন। অথচ তিনি ইচ্ছা করলেই এর উপযুক্ত ছিলেন। সকলে তার ব্যাপারে ঐক্যমতে ছিলো। তথাপি তিনি এ দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। তিনি রাসূলের নসিহতের উপর আমল করেছেন।
দুনিয়াবিমুখতা, দুনিয়া থেকে মুক্ত ও পৃথক থাকার অর্থ হলো দুনিয়ার অর্থবহ বিষয়গুলো শুধু গ্রহণ করা। এমনভাবে গ্রহণ করা, যেন সেসব বিষয় আমাকে দুনিয়ার বিষয়ে মাশগুল না করে, বরং সেসব বিষয় আল্লাহ -এর এতায়াতের ক্ষেত্রে আমার জন্য সহায়ক হয়।
অনেকে মনে করেন, দুনিয়া থেকে মুক্ত থাকার অর্থ দুনিয়া সম্পূর্ণরূপে ছেড়ে দেওয়া।
এই ভাবনা সঠিক নয়।
অনেকে বলেন, হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা হলো দুনিয়া থেকে মুক্ত থাকা। এই সংজ্ঞাটি ইমাম আহমদ প্রদত্ত বলে বর্ণনা করা হয়।
কিন্তু এই সংজ্ঞা অনুযায়ী প্রত্যেক মানুষই দুনিয়াবিমুখ হিসেবে পরিগণিত হন। ইবনে তাইমিয়া বলেন, দুনিয়া থেকে মুক্ত থাকার অর্থ হল এমন বিষয়-আশয় থেকে মুক্ত থাকা, যা আখেরাতে কোন উপকারে আসবে না।
দুনিয়ার যা কিছু আখেরাতে উপকারে আসবে, তা থেকে বিরত থাকার নাম দুনিয়াবিমুখতা নয়।
📄 আল্লাহ ﷺ-র ভালোবাসার পাথেয় কিয়ামুল লাইল
আল্লাহ -র ভালোবাসা লাভের তৃতীয় পন্থা হলো কিয়ামুল লাইল। ইবাদাতে রাত্রি জাগরণ। রাত জেগে সালাত আদায় করা। রাতের কোলে আল্লাহ-কে ডাকা। তাহাজ্জুদের মুসল্লায় আল্লাহ -র দরবারে দুই হাত বিগলিত করে তোলা। রাতজাগা মুসল্লায় নিজের অবস্থাগুলো মিনতির সাথে আল্লাহ -র কাছে ব্যক্ত করা।
আল্লাহ তাঁর মনোনীত বান্দাদের গুণাগুণ বর্ণনা করে বলেন- তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে ভয়ে ও আশায়। এবং আমি তাদের যে রিযিক দিয়েছি, তারা তা থেকে ব্যয় করে। [সূরা আস-সাজদা: ১৬]
আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের প্রশংসা করে বলেন- তারা সবাই সমান নয়। আহলে কিতাবদের মধ্যে কিছু লোক এমনও আছে, যারা অবিচলভাবে আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করে এবং রাতের গভীরে তারা সেজদা করে। [সূরা আলে ইমরান: ১১৯]
আয়াতে আল্লাহ তাদের প্রশংসা করেছেন এ জন্য যে, তারা রাতের গভীরে তেলাওয়াত করে। আল্লাহ-কে সেজদা করে।
ফজরের আগে, রাতের অর্ধাংশে বা তৃতীয়াংশের কাছাকাছি যে কোন সময়ে দুই রাকাত সালাত আদায় করলেই কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ অর্জন হবে।
আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল ইরশাদ করেন- মহামহিম আল্লাহ প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেন, 'কে আছে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দিবো। কে আছে আমার কাছে চাইবে, আমি তাকে তা দিবো। কে আছে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করবো। [বুখারি: ১১৪৫]
আল্লাহ নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন, তার মহত্ত্ব অনুযায়ী যেভাবে তা উপযুক্ত হয়, সেভাবেই তিনি অবতরণ করেন। আমরা এর কোন আকৃতি অবস্থা দৃষ্টান্ত কিছুই উপস্থিত করবো না।
রাতের পুণ্যময় এ অংশটি অনেকেরই হাতছাড়া হয়ে যায়। যার থেকে রাতের এ অংশটি ছুটে যায়, সে বঞ্চিত। সে পরিত্যক্ত। অবশ্য কেউ যদি সফরে থাকে, অসুস্থ থাকে, অত্যাবশ্যকীয় কোন কাজে ব্যস্ত থাকে, তাহলে তার কথা ভিন্ন। সে বঞ্চিতদের দলে নয়।
রাসূল আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আসকে উদ্দেশ্য করে বলেন- হে আব্দুল্লাহ, এমন ব্যক্তির মতো হয়ো না, যে রাত জেগে এবাদত করতো, পরে রাত জেগে এবাদত করা ছেড়ে দিয়েছে। [বুখারি: ১১৫২]
ইবনে ওমর বলেন, রাসূলের যুগে কোন সাহাবি স্বপ্ন দেখলে তা রাসূলের কাছে বর্ণনা করতো। আমারও মনে আকাঙ্ক্ষা জাগল, যদি একটি স্বপ্ন দেখি, তাহলে রাসূলের কাছে বর্ণনা করবো।
আমি তখন অবিবাহিত যুবক ছিলাম। আমার কোন পরিবার ছিল না। মসজিদে ঘুমাতাম আমি।
একদিন মসজিদে ঘুমিয়েছিলাম। স্বপ্নে দেখলাম, দুই ব্যক্তি এসে আমার হাত ধরল। তারা আমাকে একটি বাঁধানো কূপের দিকে নিয়ে গেল। আমি কূপে নামলাম। ভয় পেয়ে গেলাম। ফেরেশতা দুজন আমাকে বলল, 'ভয় পেওনা।'
আমি রেশমের একপ্রস্ত কাপড় নিলাম। সেই কাপড় দিয়ে সবুজ বাগানের যে দিকেই ইঙ্গিত করছি, আমাকে সেদিকেই উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
সকালে আমার বোন হাফসাকে আমি স্বপ্নের কথা বললাম। হাফসা রাসূলের পত্নী। সে রাসূলের কাছে স্বপ্নের কথা বর্ণনা করল। রাসূল বললেন- আব্দুল্লাহ কত ভালো লোক! যদি সে রাত জেগে তাহাজ্জুদ আদায় করতো! [বুখারি : ১১২২, ১১৫৭]
নাফে বলেন, এরপর থেকে ইবনে ওমর রাতে অল্পই ঘুমাতেন।
তিনি যখন সফরে যেতেন, রাতভর সালাত আদায় করতেন। এরপর বলতেন, 'হে নাফে, ফজর উদিত হয়েছে কি?' নাফে যদি বলতেন, না, এখনও ফজর উদিত হয়নি, তাহলে ইবনে ওমর আবার সালাত পড়তেন। আর যদি বলতেন, হ্যাঁ, ফজর উদিত হয়েছে, তাহলে ইবনে ওমর বিতর আদায় করতেন। এরপর ফজর আদায় করতেন।
কিয়ামুল লাইলের জন্য সহায়ক কিছু পাথেয়:
১. দিনের বেলা আল্লাহ -র অবাধ্যতা কমিয়ে দেয়া।
জনৈক ব্যক্তি হাসানকে বললেন, 'হে সাঈদের বাবা, আমি যে কিয়ামুল লাইল করতে পারি না!'
হাসান উত্তর দিলেন, 'কাবার প্রভুর কসম! তোমার অবাধ্যতা তোমাকে কয়েদ করে রেখেছে।'
২. একটি পাথেয় হল তাসবীহে ফাতেমী পাঠ করা, যা রাসূল আলী এবং ফাতেমাকে শিখিয়েছিলেন। অর্থাৎ, সুবহানাল্লাহ তেত্রিশবার, আলহামদুলিল্লাহ তেত্রিশবার, আল্লাহু আকবার চৌত্রিশবার পাঠ করা। [বুখারি: ৩১১৩]
৩. আরও একটি পাথেয় হল অযথা রাত না জাগা। আল্লাহ -র রহমতপ্রাপ্ত বান্দাগণ ছাড়া এখনকার মানুষ আল্লাহ-র অসন্তুষ্ট কাজকর্মে রাত জেগে থাকে। আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন।
৪. আরও একটি পাথেয় হল দিনে কাইলুলা করা। দ্বিপ্রাহরিক বিশ্রাম গ্রহণ করা। এতে রাত জেগে তাহাজ্জুদ আদায় এবং আল্লাহ-র সন্তুষ্টি অর্জন করা সহজ হয়।
কিয়ামুল লাইল রাসূল-এর সুন্নত। ইসলামের একটি নিদর্শন। আমরা যেদিন থেকে কিয়ামুল লাইল ছেড়ে দিয়েছি, সেদিন থেকে ঈমানের উন্নতা হারিয়ে ফেলেছি। মন নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের থেকে আল্লাহ-র নৈকট্য হারিয়ে গেছে।
📄 আল্লাহ ﷺ-র ভালোবাসার পাথেয় তাঁর কর্মকুশল নিয়ে চিন্তা করা
আল্লাহ-র ভালোবাসা অর্জনে চতুর্থ করণীয় হল আল্লাহর সৃষ্টিকূলের ভিতর চিন্তা-গবেষণা করা। আল্লাহ বলেন-
নিশ্চয় আসমান ও যমিন সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্য। যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে, এবং চিন্তা-গবেষণা করে আসমান ও যমিন সৃষ্টির বিষয়ে, (তারা বলে) পরওয়ারদেগার, এসব তুমি অনর্থ সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই। আমাদের তুমি দোযখের শাস্তি থেকে বাঁচাও। [সূরা আলে ইমরান: ১৯০, ১৯১]
কবি বলেন-
সবকিছুতেই আছে আল্লাহ-র পরিচয়, তা বুঝায় আল্লাহ-র একত্ব।
কীভাবে খেলাফ করা হয় আল্লাহর! কীভাবে অবিশ্বাসী করে যে অস্বীকার!! হতে হয় বড় আশ্চর্য!!!
প্রতিটি মুহূর্তে, প্রতিটি পলকে, প্রতিটি গাছে, পাহাড় আর ফুলে ফুটে আছে আল্লাহ-র নিদর্শন। কত নিদর্শন আমরা দেখি, কিন্তু আল্লাহ-র তাওফীকপ্রাপ্ত বান্দাগণ ব্যতীত আমরা সেসবে চিন্তা-গবেষণা করিনা। আল্লাহ বলেন-
তারা কি উটের প্রতি লক্ষ করে না, তা কীভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। এবং আকাশের প্রতি লক্ষ করে না, তা কীভাবে সুউচ্চ করা হয়েছে! পাহাড়ের দিকে লক্ষ করে না, তা কীভাবে স্থাপন করা হয়েছে! এবং পৃথিবীর দিকে লক্ষ করে না, তা কীভাবে সমতল বিছানো হয়েছে! [গাশিয়াহ: ১৭-২০]
চিন্তা-গবেষণা মানুষকে ইবাদাতের প্রতি বেশি উদ্দীপনা যোগায়। চিন্তা-গবেষণা নেককারদের একটি এবাদত, তারা আল্লাহ -র সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলীতে চিন্তা-গবেষণা করেন। আল্লাহ -র সৃষ্টিকূলে চিন্তা-গবেষণা করেন। আল্লাহ -র সৃজিত আশ্চার্যাবলী নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করেন। এভাবে তারা ঈমান ও স্থির বিশ্বাসের পথে গমন করেন।
আমরা যদি আমাদের ভ্রমণগুলো, আমাদের ফুর্তিগুলো আল্লাহ -র নিদর্শনাবলীতে চিন্তা-গবেষণার নিয়তে করি, তাহলে একজন মানুষ যখন কোন গাছের পাশ দিয়ে হাঁটবে, গাছ যেন তার সাথে কথা বলবে। বলে উঠবে- লা ইলাহা ইল্লাহু...
চিন্তা-গবেষণা আল্লাহ -র ভালোবাসা প্রাপ্তির অন্যতম একটি পাথেয়। আল্লাহ সকল বস্তু সৃষ্টি করেছেন, যেন আমরা চিন্তা-গবেষণা করি, আমাদের ঈমান বৃদ্ধি করি।
কবির ভাষায়-
ডাক্তার! খোয়া গেলো তোমার হাত বিনাশবনে! কে সে করেছে রুগ্ন তোমায় তার ডাক্তারি বিদ্যা দিয়ে!
ও রুগী, মুক্ত হয়েছো! সুস্থ হয়েছো! কে দিলো সে পরিত্রাণ, যবে হার মেনেছিলো সব চিকিৎসা-জ্ঞান!
মৌমাছি, উড়ছো তুমি উপত্যকায়, বলো, কে করেছে তোমায় মধুর এতো, দিয়েছে এই মধু তোমায়!
অজগর! শ্বাস ছাড়ো! শ্বাসে শ্বাসে বিষ ছাড়ো!! কে বানিয়েছে তোমায় বিষধর! কীভাবে তুমি আছো বেঁচে বিষ রেখে মুখভর! আল্লাহ, প্রশংসা শুধু তোমারই। কোন প্রশংসা তুমি ছাড়া নাই আর কারোরই।