📄 আল্লাহকে মানুন নিরাপদ থাকুন
বিন্দু থেকে সিন্ধু হয়। একটি পুরনো প্রবাদ। তবে এর বাস্তবতা অন্তহীন। হাজার মাইলের যাত্রা শুরু হয় একটি পদক্ষেপের মাধ্যমেই। কোটি টাকার গণনার শুরুতেও আমরা পাই এক সংখ্যাকে।
আমাদের জীবনে এমন হাজারও কাজ আছে, যেগুলো দেখতে খুব ছোট; তবে সেগুলো সাফল্যের বুনিয়াদ। হেলা অবহেলায় সেগুলোর ওপর আমাদের নজর পড়ে না। ফলে নিজের অজান্তে মাশুল গুণতে হয় যাপিত জীবনে।
ডক্টর আয়েয আল করনী এমনই কিছু কাজের তালিকা তৈরি করেছেন এই পুস্তিকায়। সঙ্গে দিয়েছেন কিছু পরামর্শ। অত্যন্ত সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষায়। দলিল-প্রমাণ দিয়ে। ফলে পুস্তিকাটি খুব সুখপাঠ্য হয়েছে। তিনি সেই পুস্তিকার নাম রেখেছেন 'ইহফাযিল্লাহ ইয়াহ ফাযকা'। আমরা অনুবাদের নাম দিলাম 'আল্লাহকে মানুন নিরাপদ থাকুন'।
একাধারে পড়ে ফেলার মত একটি মজার পুস্তিকা। আশা করি, আমাদের জীবনের গতিবিধি নির্ধারণে এটি বিরাট ভূমিকা পালন করবে।
আল্লাহ আমাদের এই প্রয়াস কবুল করুন এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে উত্তম বিনিময় দান করুন। আমীন
বিনীত মুহাম্মাদ আবদুল আলীম মহাপরিচালক হুদহুদ প্রকাশন, বাংলাবাজার, ঢাকা ৫ রবীউল আখার, ১৪৪০ হি. (১২/১২/১৮ ইং)
📄 লেখকের ভূমিকা
রাসুল আমাদের জীবন-সাফল্যের জন্য একটি সুসমৃদ্ধ নির্দেশনা দিয়েছেন- 'ইহফাযিল্লাহ, ইয়াহফাযকা'। 'তুমি আল্লাহর বিধান রক্ষা কর, আল্লাহ তোমার জীবনে সুরক্ষা দিবেন'।
কেয়ামত পর্যন্ত রাসুল-র এই বাণী সত্য, সুপ্রতিষ্ঠিত। জীবনের পরতে পরতে পরিলক্ষিত, বাস্তবায়িত। মুসলমানের অন্তরে অন্তরে প্রোথিত, অনুরণিত। এ যেন ঈমানদারের নির্বিঘ্ন জীবন বাঁচার অনাদি আশা, অপার প্রেরণা।
আল্লাহ -কে যে ভয় করবে, পরিশেষে সে প্রশংসিত হবে। সবল-দুর্বল সকলের অনিষ্ট থেকে সুরক্ষা পাবে। বিপদে আপদে যে আল্লাহ-কে ভুলে যাবে, সে যেন মনে রাখে, আল্লাহ ছাড়া অন্যসব সাহায্যকারী ব্যর্থ, অক্ষম। সুতরাং আল্লাহ -র রজ্জু আঁকড়ে ধরো, পৃথিবীর সকল সাহায্যক্ষেত্র বিশ্বাসভঙ্গ করলেও আল্লাহ আছেন বিশ্বাসের স্তম্ভ, আল্লাহ আছেন সদা-সর্বত্র।
রাসুল ইবনে আব্বাস -কে নসিহত করেছিলেন-
তুমি আল্লাহর বিধান রক্ষা করো, আল্লাহ তোমাকে সুরক্ষা দিবেন। তুমি আল্লাহর বিধান প্রতিপালন করো, আল্লাহকে তোমার কাছেই পাবে। তোমার কোন সাহায্যের কথা শুধু আল্লাহকেই বলো। কোন কিছুর প্রয়োজন হলে আল্লাহর কাছেই হাত তোলো। শোনো, পৃথিবীর সকল মানুষ তোমার সাহায্যের জন্য প্রস্তুত হলেও আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া তারা তোমার কোন সাহায্য করতে পারবেনা। পৃথিবীর সকল মানুষ তোমার ক্ষতি করার জন্য প্রস্তুত হলেও আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া তারা তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। মানুষের ভাগ্য সুস্থির, লিপিবদ্ধ। [তিরমিযি]
মুসনাদে আহমদে নসিহতপূর্ণ এই হাদিসে আরো কিছু বৃদ্ধি রয়েছে। বর্ণিত হয়েছে-
নিশ্চয় ধৈর্যের সাথেই রয়েছে সাহায্য। বিপদের মাঝেই রয়েছে লাঘব ও উপশম। কষ্টের পরেই রয়েছে সারল্য ও সহজ পথ। [মুসনাদে আহমদ]
রাসুল ﷺ এই নসিহত করেছেন অনাগতকালের সকলের জন্য। বুযুর্গগণ বলেন, তোমার সন্তানকে, ভাই-বন্ধুকে এই নসিহত অবশ্যই করো- 'ইহফাযিল্লাহ, ইয়াফাযকা'। 'তুমি আল্লাহর বিধান রক্ষা করো, আল্লাহ তোমার জীবনে সুরক্ষা দিবেন'।
ওলামায়ে কেরাম বলেন, 'এই হাদিসের অর্থ নিয়ে যতই গবেষণা করা হয়, এর সুসমৃদ্ধ অর্থ দেখে ততই আশ্চর্য, পরমাশ্চর্য হতে হয়'।
সুলাইমান ইবনে দাউদ বলেন, 'মানুষ যেসব বিষয় থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে, আমরাও সেসব বিষয় থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি। মানুষ যেসব বিষয় থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেনা, সেসব বিষয় থেকেও আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি। কিন্তু গোচরে-অগোচরে আল্লাহ-র হেফাযতের চেয়ে উত্তম কিছু খুঁজে পাইনা'।
বক্ষমান বইটি সবার জন্য। যেমন পুরুষের জন্য, তেমনই নারীর জন্য। রাজা- বাদশাহ, আমলা-মন্ত্রী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং শাসকের জন্য, শাসিতের জন্য। ডাক্তার, অফিসার, প্রকৌশলী, ব্যবসায়ী, কৃষক, মুনি-মূষী -সকল শ্রেণী- পেশার লোকদের জন্য। বইটির মাধ্যমে সকলের কাছে একটি বার্তা-
আসমানি ফয়সালা ছেড়ে দাও আসমানে।
তাকদিরি ফয়সালা ভেস্তে দিওনা তোমার ভঙ্গুর বেক্ষণে!
ওগো আল্লাহ আমার আশার আধার, লক্ষ-কোটি কৃপা তোমার, আমায় রক্ষা করেছো।
অত্যাচারির নিনাদ ভারি, ধ্বংস হবো সমূল ছাড়ি; তুমি রক্ষা করেছো।
তুমি আমায় রক্ষা করে জালিমমনে ভয়ের ভয়াল আঁধার দিয়েছো।
📄 তারাই যথার্থ সফলকাম
কল প্রশংসা আল্লাহ -র জন্য। আমরা আল্লাহ -র কাছে ক্ষমা চাই। তারই কাছে হেদায়াত চাই। তারই কাছে আশ্রয় চাই আমাদের নফসের ধোঁকা থেকে। আশ্রয় চাই আমাদের খারাপ সকল আমল থেকে, আমলসমূহের বিচ্যুতি থেকে। আল্লাহ যাকে হেদায়াত দেন, তাকে ভ্রষ্টকারী কেউ নেই। আল্লাহ যাকে পথহারা করেন, তাকে হেদায়াত দানকারী কেউ নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, মোহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। মোহাম্মাদের উপর বর্ষিত হোক অগুণতি দুরূদ ও সালাম।
মহান আল্লাহ বলেন- আলিফ লাম মীম। এ সেই কিতাব, যাতে কোনই সন্দেহ নেই, পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য। যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি তাদেরকে যে রুযি দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে। এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের উপর যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের উপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। আর আখেরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে। তারাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথপ্রাপ্ত, আর তারাই যথার্থ সফলকাম। [বাকারা: ০১-০৫]
📄 সূরা বাকারার ফযীলত
ইমাম কুরতুবী বলেন, এই সূরায় একশটি আদেশ, একশটি নিষেধ এবং আরো একশ বার্তা রয়েছে।
যে ঘরে সূরা বাকারা তেলাওয়াত হয়, সে ঘর থেকে শয়তান বিতাড়িত হয়। রাসূল ইরশাদ করেন-
তোমরা কোরআনের দুই কুসুমাংশ তেলাওয়াত করো- সূরা বাকারা এবং সূরা আলে ইমরান। সূরা দু'টি কেয়ামতের দিন মেঘের দু'টুকরো ছায়া হয়ে অথবা সারিবদ্ধ কোন পাখির ঝাঁকের মতো আত্মপ্রকাশ করে তার তেলাওয়াতকারীকে ছায়া দান করবে। [মুসলিম : ৮০৪]
আনাস বলেন, কোন সাহাবি যদি সূরা বাকারা মুখস্থ করতো, সে অন্যদের চেয়ে অগ্রজ, দলপতি ও ইমাম হওয়ার যোগ্যতা রাখতো।
রাসূল ﷺ একটি সারিয়্যা (যে যুদ্ধদলে রাসূল অংশগ্রহণ করেননি) আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার জন্য পাঠালেন। পাঠানোর সময় তাদের আমির নির্ধারণ করার জন্য জিজ্ঞেস করলেন, 'তোমাদের মধ্যে কোরআন বেশি শিখেছে কে?' জনৈক সাহাবি বললেন, 'আমি সূরা বাকার শিখেছি।' রাসূল বললেন, 'তুমি সূরা বাকারা শিখেছ?' সাহাবি বললেন, 'জী, আল্লাহর রাসূল!' রাসূল বললেন, 'ঠিক আছে, তুমিই দলের আমির।' [মুস্তাদরাকে হাকিম : ১৬২২]
রাসূল ইরশাদ করেন- তোমরা তোমাদের ঘরগুলো কবরে পরিণত করোনা। যে ঘরে সূরা বাকারা তেলাওয়াত হয়, সে ঘরে শয়তান প্রবেশ করেনা। (তিরমিযী গ্রন্থে হাসান সনদে বর্ণিত) [মুসলিম : ৭৮০]
এক নেককার বান্দা তার ঘরে জিনের উপদ্রব পেয়েছিল। ওলামায়ে কেরام তাকে সূরা বাকারা তেলাওয়াত করতে বললেন। তিনি যখন সূরা বাকারা তেলাওয়াত করলেন, আল্লাহ-র হুকুমে তার ঘর থেকে জিন তাড়িত হল।