📄 যেসব হাদিসের ওপর ইসলামের ভিত্তি
অধ্যায়- ২২
যেসব হাদিসের ওপর ইসলামের ভিত্তি
(১০৬২) হজরত উমর রাদি. এর হাদিস, যা অতীত হয়েছে-
إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوْ إِلَى امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ.
অর্থ: প্রত্যেক কাজ নিয়তের সাথে সম্পর্কিত। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে। তাই যার হিজরত হবে দুনিয়া লাভের অথবা নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে- সেই উদ্দেশ্যেই হবে তার হিজরতের প্রাপ্য。
(১০৬৩) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُو رَدُّ.
অর্থ: যে ব্যক্তি আমার এ দীনের মধ্যে নতুন কোনো জিনিস সৃষ্টি করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত হবে。
(১০৬৪) হজরত নুমান বিন বাশির রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল-াল-াহু আলাইহি ওয়াসাল-াম কে বলতে শুনেছি-
إِنَّ الْحَلَالَ بَيِّنُ وَإِنَّ الْحَرَامَ بَيِّنُ وَبَيْنَهُمَا مُشْتَبِهَاتٌ لَا يَعْلَمُهُنَّ كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ فَمَنِ اتَّقَى الشُّبُهَاتِ اسْتَبْرَأَ لِدِينِهِ وَعِرْضِهِ وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ وَقَعَ فِي الْحَرَامِ كَالرَّاعِي يَرْعَى حَوْلَ الْحِمَى يُوْشِكُ أَنْ يَرْتَعَ فِيْهِ أَلَا وَإِنَّ لِكُلِّ مَلِكٍ حِنِّى أَلَا وَإِنَّ حِمَى اللهِ، مَحَارِمُهُ أَلاَ وَإِنَّ فِي الْجَسَدِ مُضْغَةً إِذَا صَلَحَتْ صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كُلُّهُ أَلَا وَهِيَ الْقَلْبُ.
অর্থ: নিশ্চয়ই হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট। আর এ উভয়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দেহজনক বিষয়, অনেক লোকই সেগুলো জানে না। যে ব্যক্তি এ সব সন্দেহজনক বিষয় থেকে দূরে থাকে সে তার দীন ও মর্যাদাকে নিরাপদে রাখে। আর যে লোক সন্দেহজনক বিষয়ে পতিত হবে সে হারামের মধ্যে লিপ্ত হয়ে পড়বে। যেমন কোনো রাখাল সংরক্ষিত (সরকারী) চারণভূমির আশ-পাশে পশু চরায়, আশঙ্কা রয়েছে সে পশু তার অভ্যন্তরে গিয়ে ঘাস খাবে। সাবধান! প্রত্যেক বাদশাহরই সংরক্ষিত এলাকা থাকে, সাবধান! আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা হল তার হারামকৃত বিষয়সমূহ। জেনে রেখ, দেহের মধ্যে এক টুকরা গোশত আছে। যখন তা সুস্থ থাকে তখন সমস্ত শরীরই সুস্থ থাকে। যখন তা নষ্ট হয়ে যায় তখন সমস্ত শরীরই নষ্ট হয়ে যায়। স্মরণ রেখ, তা হল কালব তথা হৃদয়।
(১০৬৫) হজরত ইবনে মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত-
حَدَّثَنَا رَسُوْلُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ الصَّادِقُ الْمَصْدُوْقُ قَالَ: إِنَّ أَحَدَكُمْ يُجْمَعُ خَلْقُهُ فِي بَطْنِ أُمِّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا، ثُمَّ يَكُونُ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ يَكُونُ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ يَبْعَثُ اللهُ مَلَكًا، فَيُؤْمَرُ بِأَرْبَعِ كَلِمَاتٍ، وَيُقَالُ لَهُ اكْتُبْ عَمَلَهُ وَرِزْقَهُ وَأَجَلَهُ وَشَقِيٌّ أَوْ سَعِيدُ. ثُمَّ يُنْفَخُ فِيْهِ الرُّوحُ، فَإِنَّ الرَّجُلَ مِنْكُمْ لَيَعْمَلُ حَتَّى مَا يَكُوْنُ বَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجَنَّةِ إِلَّا ذِرَاعٌ، فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ কিতাবুহু, فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ، وَيَعْمَلُ حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ النَّارِ إِلَّا ذِرَاعُ، فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ، فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ.
অর্থ: সত্যবাদীরূপে স্বীকৃত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে হাদিস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, নিশ্চয়ই তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপকরণ নিজ নিজ মাতৃগর্ভে চল্লিশ দিন পর্যন্ত বীর্যরূপে অবস্থান করে, এরপর তা জমাট বাঁধা রক্তে পরিণত হয়। অনুরূপভাবে চল্লিশ দিন অবস্থান করে। এরপর তা গোশতপিণ্ডে পরিণত হয়ে (আগের ন্যায় চল্লিশ দিন) থাকে। এরপর আল্লাহ একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন। তাকে চারটি বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়। তাকে (ফেরেশতাকে) লিপিবদ্ধ করতে বলা হয়, তার আমল, তার রিজিক, তার জীবনকাল এবং সে কি পাপী হবে না পূণ্যবান হবে। এরপর তার মধ্যে আত্মা ফুঁকে দেয়া হয়। কাজেই তোমাদের কোনো ব্যক্তি আমল করতে করতে এমন পর্যায়ে পৌছে যে, তার এবং জাহান্নামের মাঝে মাত্র একহাত ব্যবধান থাকে, এমন সময় তার আমলনামা তার ওপর অগ্রগামী হয়। ফলে সে জান্নাতবাসীর মত আমল করে。
(১০৬৬) হজরত হাসান বিন আলি রাদি. থেকে বর্ণিত-
حَفِظْتُ مِنْ رَسُولِ اللهِ ﷺ دَعْ مَا يَرِيْبُكَ إِلَى مَا لَا يَرِيبُكَ.
অর্থ: আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই শব্দগুলি স্মরণ রেখেছি যে, তুমি ঐ জিনিস পরিত্যাগ কর, যে জিনিস তোমাকে সন্দেহে ফেলে এবং তা গ্রহণ কর যাতে তোমার সন্দেহ নেই। কেননা, সত্য প্রশান্তির কারণ এবং মিথ্যা সন্দেহের কারণ。
(১০৬৭) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
مِنْ حُسْنِ إِسْلَامِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيهِ.
অর্থ: অপ্রয়োজনীয় বিষয় ত্যাগ করাই একজন ব্যক্তির উত্তম ইসলাম。
(১০৬৮) হজরত আনাস রাদি থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لِأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ.
অর্থ: তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করবে, যা নিজের জন্য পছন্দ করে。
(১০৬৯) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إِنَّ اللَّهَ طَيِّبُ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا، وَإِنَّ اللهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِينَ فَقَالَ تَعَالَى: يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا، وَقَالَ تَعَالَى: "يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَتَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ: يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ، وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ، وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ، وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ، فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لَهُ؟
অর্থ: আল্লাহ্ তাআলা পাক-পবিত্র, তাই তিনি কেবল পবিত্র জিনিসই কবুল করে থাকেন। আল্লাহ তাআলা মুমিনদের ঐ কাজই করার হুকুম দিয়েছেন যা করতে রাসুলদেরকে হুকুম দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন- হে রাসুলগণ! পবিত্র বস্তু আহার করুন এবং নেক আমল করুন। আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেছেন- হে মুমিনগণ! আমরা তোমাদের যে পবিত্র জীবিকা দান করেছি তা থেকে আহার কর।- তারপর তিনি (নবিজি) এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন যে ব্যক্তি দীর্ঘ সফরে বের হয় এবং তার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে ও কাপড় ধুলোবালিতে ময়লা হয়ে আছে। অতঃপর সে নিজের দুই হাত আকাশের দিকে তুলে ধরে ও বলে- হে রব! হে রব! অথচ তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, সে হারামভাবে লালিত-পালিত হয়েছে; এ অবস্থায় কেমন করে তার দুআ কবুল হতে পারে?
(১০৭০) মুয়াত্তা মালেকে আছে-
لَا ضَرَرَ وَلَا ضِرَار.
অর্থ: ক্ষতি করা উচিত নয়। ক্ষতির সম্মুখীন হওয়াও উচিত নয়。
(১০৭১) হজরত তামিম দারি রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
الدِّينُ النَّصِيْحَةُ قُلْنَا لِمَنْ؟ قَالَ: لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُوْلِهِ وَلِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ.
অর্থ: সদুপদেশ দেয়াও দীন। আমরা আরজ করলাম, কার জন্য উপদেশ? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তার কিতাবের, তার রাসুলের, মুসলিম শাসক এবং মুসলিম জনগণের。
(১০৭২) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন-
مَا نَهَيْتُكُمْ عَنْهُ فَاجْتَنِبُوهُ وَمَا أَمَرْتُكُمْ بِهِ فَافْعَلُوْا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ فَإِنَّمَا أَهْلَكَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ كَثْرَةُ مَسَائِلِهِمْ وَاخْتِلَافُهُمْ عَلَى أَنْبِيَائِهِمْ.
অর্থ: আমি তোমাদের যা নিষেধ করেছি, তা থেকে বিরত থাক এবং যা আদেশ করেছি, তা থেকে যা সম্ভব তা পালন কর। কারণ, তোমাদের পূর্ববর্তীদের ধ্বংস করেছে তাদের প্রশ্নের আধিক্য এবং নিজ নবিদের সাথে বিরোধ。
(১০৭৩) হজরত সাহাল বিন সাদ সায়িদি রাদি. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হয়ে বলল-
يَا رَسُوْلَ اللهِ، دُلَّنِي عَلَى عَمَلٍ إِذَا أَنَا عَمِلْتُهُ أَحَبَّنِيَ اللَّهُ وَأَحَبَّنِيَ النَّاسُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ازْهَدْ فِي الدُّنْيَا يُحِبَّكَ اللَّهُ وَازْهَدْ فِيْمَا فِي أَيْدِي النَّاسِ يُحِبُّوكَ.
অর্থ: হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলে দিন যা আমি করলে আল্লাহ আমাকে ভালোবাসবেন এবং লোকেরাও আমাকে ভালোবাসবে। নবিজি বললেন, তুমি দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি অবলম্বন কর। তবেই আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন। মানুষের নিকট যা আছে, তুমি তার প্রতি অনাসক্ত হয়ে যাও, তাহলে তারাও তোমাকে ভালোবাসবে。
(১০৭৪) হজরত ইবনে মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لا يَحِلُّ دَمُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ يَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا بِإِحْدَى ثَلَاثِ النَّفْسُ بِالنَّفْسِ وَالطَّيِّبُ الزَّانِي وَالْفَارِقُ مِنْ الدِّينِ التَّارِكُ لِلْجَمَاعَةِ.
অর্থ: কোনো মুসলিম ব্যক্তি যদি সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসুল, তাহলে তিন-তিনটি কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করা বৈধ নয়। (যথা:) জানের বদলে জান, বিবাহিত ব্যভিচারী, আর নিজের দীন ত্যাগকারী মুসলিম জামাআত থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া ব্যক্তি。
(১০৭৫) হজরত ইবনে উমর রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لا إلهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ ، ، وَيُقِيمُوا الصَّلاةَ، وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ، فَإِذَا فَعَلُوْا ذَلِكَ عَصَمُوْا مِنِّي دِمَاءَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ إلا بِحَقِّ الْإِسْلَامِ، وَحِسَابُهُمْ عَلَى اللهِ .
অর্থ: আমি লোকদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার জন্য আদিষ্ট হয়েছি, যতক্ষণ না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্র রাসুল। আর নামাজ কায়েম করে ও জাকাত প্রদান করে। তারা যদি এ কাজগুলো করে, তবে আমার পক্ষ থেকে তারা জান ও মালের ব্যাপারে নিরাপত্তা লাভ করবে। অবশ্য ইসলামের বিধান অনুযায়ী যদি কোনো কারণ থাকে, তাহলে ভিন্ন কথা। তাদের হিসাবের ভার আল্লাহর ওপর ন্যাস্ত。
(১০৭৬) হজরত ইবনে উমর রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
بني الإسْلامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةٍ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللَّهِ، ، وَإِقَامِ الصَّلاةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالْحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ.
অর্থ: ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি: এক. আল্লাহ ছাড়া ইলাহ নেই এবং নিশ্চয় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসুল- এ কথার সাক্ষ্যদান। দুই. নামাজ কায়েম করা। তিন. জাকাত দেয়া। চার. হজ করা। পাঁচ. রমজানের সিয়াম পালন করা。
(১০৭৭) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি.থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لَوْ يُعْطَى النَّاسُ بِدَعْوَاهُمْ لَادَّعَى رِجَالٌ أَمْوَالَ قَوْمٍ وَدِمَاءَهُمْ، لَكِنَّ الْبَيِّنَةَ عَلَى الْمُدَّعِي، وَالْيَمِينَ عَلَى مَنْ أَنْكَرَ.
অর্থ: যদি মানুষকে কেবল তাদের দাবী অনুযায়ী দিয়ে দেয়া হয় তাহলে তারা অন্যের সম্পদ ও জীবন দাবী করে বসবে। তবে নিয়ম হচ্ছে, দাবীদারকে প্রমাণ পেশ করতে হবে, আর যে অস্বীকার করবে তাকে শপথ করতে হবে。
(১০৭৮) হজরত ওয়াবিসা বিন মাবাদ রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলেন। নবিজি বললেন-
جِئْتَ تَسْأَلُ عَنْ الْبِرِّ؟ قُلْتُ: نَعَمْ. فَقَالَ: اسْتَفْتِ قَلْبَكَ، الْبِرُّ مَا اطْمَأَنَّتْ إِلَيْهِ النَّفْسُ، وَاطْمَأَنَّ إِلَيْهِ الْقَلْبُ، وَالْإِثْمُ مَا حَاكَ فِي النَّفْسِ وَتَرَدَّدَ فِي الصَّدْرِ، وَإِنْ أَفْتَاكَ النَّاسُ وَأَفْتَوْكَ.
অর্থ: তুমি কি নেকি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে এসেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। বললেন, নিজের মনকে জিজ্ঞাসা কর; যা সম্পর্কে তোমার আত্মা ও মন আশ্বস্ত থাকে তা হল নেকি। আর গুনাহ হচ্ছে, যা তোমার আত্মাকে অশ্বস্তিতে রাখে ও মনে সংশয় সৃষ্টি করে। যদিও লোক (এর স্বপক্ষে) ফাতাওয়া দিয়ে দেয় তবুও。
-হজরত নাওয়াস বিন সামআন রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
الْبِرُّ حُسْنُ الْخُلُقِ وَالْإِثْمُ مَا حَاكَ فِي صَدْرِكَ وَكَرِهْتَ أَنْ يَطَّلِعَ عَلَيْهِ النَّاسُ.
অর্থ: পূণ্য হচ্ছে সচ্চরিত্র। আর পাপ হচ্ছে যা তোমার (অন্তরে) খটকা সৃষ্টি করে এবং লোকে তা জানুক তা তুমি অপছন্দ কর。
(১০৭৯) হজরত শাদ্দাদ বিন আউস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ الْإِحْسَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ ، فَإِذَا قَتَلْتُمْ فَأَحْسِنُوا الْقِتْلَةَ، وَإِذَا ذَبَحْتُمْ فَأَحْسِنُوا الذِّبْحَةَ، وَلْيُحِدَّ أَحَدُكُمْ شَفْرَتَهُ، وَلْيُرِحْ ذَبِيْحَتَهُ.
অর্থ: নিঃসন্দেহে আল্লাহ সমস্ত জিনিস উত্তম পদ্ধতিতে করার বিধান করে দিয়েছেন। সুতরাং যখন তুমি (কেসাস হিসাবে) হত্যা করবে, তখন উত্তম পদ্ধতিতে হত্যা করবে। যখন তুমি জবেহ করবে উত্তম পদ্ধতিতে জবেহ করবে। তোমাদের প্রত্যেকের আপন ছুরি ধারালো করে নেয়া উচিত এবং জবেহকৃত জন্তুর কষ্ট লাঘব করা উচিত。
(১০৮০) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ، وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا، أَوْ لِيَصْمُتْ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ، وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلَا يُؤْذِ جَارَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ، وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ
অর্থ: যে ব্যাক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে নয়তো নীরব থাকে। যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার মেহমানের সম্মান করে。
(১০৮১) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ رَجُلاً، قَالَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوْصِنِي. قَالَ لَا تَغْضَبْ فَرَدَّدَ مِرَارًا، قَالَ لَا تَغْضَبْ.
অর্থ: এক ব্যক্তি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বলল, আপনি আমাকে ওসিয়ত করুন। তিনি বললেন, তুমি রাগ কর না। লোকটা কয়েকবার তা বললেন নবিজি প্রত্যেক বারই বললেন, রাগ কর না。
(১০৮২) হজরত আবু সালাবা খুশানি রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إِنَّ اللهَ تَعَالَى فَرَضَ فَرَائِضَ فَلَا تُضَيِّعُوهَا ، وَحَدَّ حُدُودًا فَلَا تَعْتَدُوهَا، وَحَرَّمَ أَشْيَاءَ فَلَا تَنْتَهِكُوْهَا، وَسَكَتَ عَنْ أَشْيَاءَ رَحْمَةً لَكُمْ غَيْرَ نِسْيَانٍ فَلَا تَبْحَثُوا عَنْهَا.
অর্থ: নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা ফরজসমূহকে অবশ্য পালনীয় করে দিয়েছেন, সুতরাং এতে অবহেলা কর না। তিনি সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, সুতরাং এতে লঙ্ঘন কর না। কিছু জিনিস হারাম করেছেন, সুতরাং তা অমান্য কর না। কিছু জিনিসের ব্যাপারে নিরবতা অবলম্বন করেছেন, তোমাদের জন্য রহমত হিসাবে; ভুলে গিয়ে নয়। সুতরাং সেসব বিষয়ে অতিরিক্ত অনুসন্ধান কর না。
(১০৮৩) হজরত মুআজ রাদি. থেকে বর্ণিত-
قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ! أَخْبِرْنِي بِعَمَلٍ يُدْخِلُنِي الْجَنَّةَ وَيُبَاعِدْنِي مِنَ النَّارِ، قَالَ: لَقَدْ سَأَلْتَ عَنْ عَظِيمٍ، وَإِنَّهُ لَيَسِيرُ عَلَى مَنْ يَسَّرَهُ اللَّهُ عَلَيْهِ: تَعْبُدُ اللَّهَ لَا تُشْرِكْ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيمُ الصَّلَاةَ، وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ، وَتَصُوْمُ رَمَضَانَ، وَتَحُجُّ الْبَيْتَ، ثُمَّ قَالَ: أَلَا أَدُلُّكَ عَلَى أَبْوَابِ الْخَيْرِ الصَّوْمُ جُنَّةً، وَالصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الْخَطِيئَةَ كَمَا يُطْفِئُ الْمَاءُ النَّارَ، وَصَلَاةُ الرَّجُلِ فِي جَوْفِ اللَّيْلِ، ثُمَّ تَلَا: تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ حَتَّى بَلَغَ يَعْمَلُوْنَ" ثُمَّ قَالَ: أَلَا أُخْبِرُكَ بِرَأْسِ الْأَمْرِ وَعَمُوْدِهِ وَذُرْوَةِ سَنَامِهِ؟ قُلْتُ: بَلَى يَا رَسُوْلَ اللهِ. قَالَ: رَأْسُ الْأَمْرِ الْإِسْلَامُ، وَعَمُوْدُهُ الصَّلَاةُ، وَذُرْوَةُ سَنَامِهِ الْجِهَادُ، ثُمَّ قَالَ: أَلَا أُخْبِرُكَ بِمَلَاكِ ذَلِكَ كُلِهِ؟ فَقُلْتُ: بَلَى يَا رَسُوْلَ الله ! فَأَخَذَ بِلِسَانِهِ وَقَالَ: كُفَّ عَلَيْكَ هَذَا. قُلْتُ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ وَإِنَّا لَمُؤَاخَذُوْنَ بِمَا نَتَكَلَّمُ بِهِ؟ فَقَالَ: ثَكِلَتْكَ أُمُّكَ وَهَلْ يَكُبُّ النَّاسَ عَلَى وُجُوهِهِمْ أَوْ قَالَ عَلَى مَنَاخِرِهِمْ إِلَّا حَصَائِدُ أَلْسِنَتِهِمْ؟!
অর্থ: আমি নিবেদন করি: হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে এমন আমল বলুন যা আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে দিবে।
তিনি বললেন, তুমি এক বৃহৎ বিষয়ে প্রশ্ন করেছ। এটা তার জন্য খুবই সহজ আল্লাহ যার জন্য সহজ করে দেন। তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক কর না, নামাজ প্রতিষ্ঠা কর, জাকাত দাও, রমজানে রোজা রাখ এবং (কাবা) ঘরের হজ কর তারপর বলেন, আমি কি তোমাদের কল্যাণের দরজা দেখাব না? রোজা হচ্ছে ঢাল। সাদকা গুনাহকে নিঃশেষ করে দেয় যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়; আর কোনো ব্যক্তির গভীর রাতের নামাজ|
তারপর তিনি পড়েন-
تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ.
অর্থ: তারা শয্যা পরিত্যাগ করে তাদের রবকে ভয়ে ও আশায় ডাকে এবং আমরা তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। তাদের কর্মের জন্য যে চক্ষু শীতলকারী প্রতিফল রক্ষিত আছে তা তাদের কেউই জানে না。
তিনি আবার বলেন, আমি তোমাদের কর্মের মূল এবং তার স্তম্ভ ও সর্বোচ্চ চূড়া বলব কি? আমি নিবেদন করি: হে আল্লাহর রাসুল! অবশ্যই বলুন|
তিনি বললেন, কর্মের মূল হচ্ছে ইসলাম, তার স্তম্ভ হচ্ছে নামায এবং সর্বোচ্চ চূড়া হচ্ছে জিহাদ। তারপর তিনি বলেন, আমি কি তোমাকে এসব কিছু আয়ত্তে রাখার জিনিস বলব না? আমি নিবেদন করি: হে আল্লাহর রাসুল! অবশ্যই বলুন| তিনি নিজের জিভ ধরে বললেন, এটাকে সংযত কর|
আমি জিজ্ঞেস করি: হে আল্লাহর নবি! আমরা যা বলি তার হিসাব হবে কি? বললেন, তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক, হে মুআজ! জিভের কর্ম ছাড়া আর কিছু এমন আছে কি যা মানুষকে মুখ থুবড়ে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করে?
(১০৮৪) হজরত আবু জর এবং মুআজ রাদি. হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
اتَّقِ اللهَ حَيْثُمَا كُنْتَ، وَأَتْبِعُ السَّيِّئَةَ الْحَسَنَةَ تَمْحُهَا، وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ.
অর্থ: তুমি যেখানে যে অবস্থায় থাক না কেন আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রত্যেক মন্দ কাজের পর ভাল কাজ কর, যা একে মুছে দিবে। আর মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার কর。
(১০৮৫) হজরত ইরবাদ বিন সারিয়া রাদি. হতে বর্ণিত-
وَعَظَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَوْعِظَةً وَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوْبُ، وَذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُوْنُ، فَقُلْنَا : يَا رَسُوْلَ اللهِ كَأَنَّهَا مَوْعِظَةُ مُوَدِعٍ فَأَوْصِنَا، قَالَ: أُوْصِيْكُمْ بِتَقْوَى اللهِ، وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإِنْ تَأَمَّرَ عَلَيْكُمْ عَبْدُ، فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشُ مِنْكُمْ فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرّاشِدِينَ الْمَهْدِيَّيْنَ، عَضُوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِدِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُوْرِ؛ فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বক্তৃতায় আমাদের উপদেশ দান করেন যাতে আমাদের অন্তর ভীত হয়ে পড়ে এবং চোখে পানি এসে যায়। আমরা নিবেদন করি: হে আল্লাহর রাসুল! মনে হচ্ছে বিদায়কালীন উপদেশ; আপনি আমাদেরকে ওসিয়ত করুন। তিনি বললেন, আমি তোমাদের মহান আল্লাহকে ভয় করতে ওসিয়াত করছি। আনুগত্য করতে ওসিয়াত করছি; যদি কোনো গোলামও তোমাদের শাসক হয় তবুও। তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে তারা অনেক মতবিরোধ দেখবে; সুতরাং তোমরা আমার সুন্নাত ও হেদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদিনের পদ্ধতি মেনে চলবে। একে দাঁত দিয়ে (অর্থাৎ খুব শক্তভাবে) ধরে রাখবে। অভিনব বিষয় সম্পর্কে সাবধান থাক, কারণ প্রত্যেক অভিনব বিষয় হচ্ছে বিদআত, প্রত্যেক বিদআত হচ্ছে গোমরাহি। আর প্রত্যেক গোমরাহীর পরিণাম হচ্ছে, জাহান্নামের আগুন। - ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান সহিহ।
(১০৮৬) হজরত আবু মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إِنَّ مِمَّا أَدْرَكَ النَّاسُ مِنْ كَلامِ النُّبُوَّةِ الْأُولَى إِذَا لَمْ تَسْتَحْ فَافْعَلْ مَا شِئْتَ.
অর্থ: পূর্ববর্তী নবিদের যে কথা লোকদের স্মরণ আছে, তা হল- যখন তোমার শরম না থাকবে, তখন তুমি যা ইচ্ছা করতে পারবে。
(১০৮৭) হজরত জাবের রাদি. হতে বর্ণিত-
أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ فَقَالَ: أَرَأَيْتَ إِذَا صَلَّيْتُ الْمَكْتُوبَاتِ، وَصُمْتُ رَمَضَانَ، وَأَحْلَلْتُ الْخَلَالَ، وَحَرَّمْتُ الْحَرَامَ، وَلَمْ أَزِدْ عَلَى ذَلِكَ شَيْئًا أَ أَدْخُلُ الْجَنَّةَ؟ قَالَ: نَعَمْ.
অর্থ: এক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি মনে করেন যদি আমি ফরজ নামাজ আদায় করি, রমজানে রোজা রাখি, হালালকে হালাল বলে ও হারামকে হারাম বলে ঘোষণা করি, আর এর বেশি কিছু না করি, তাহলে কি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব? নবিজি বললেন, হ্যাঁ。
(১০৮৮) হজরত সুফিয়ান বিন আবদুল্লাহ রাদি. হতে বর্ণিত-
قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ قُلْ لِي فِي الْإِسْلَامِ قَوْلًا لَا أَسْأَلُ عَنْهُ أَحَدًا غَيْرَكَ؛ قَالَ: قُلْ: آمَنْتُ بِاللَّهِ ثُمَّ اسْتَقِمْ.
অর্থ: আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে ইসলাম সম্পর্কে এমন কিছু বলে দিন যেন আপনাকে ব্যতীত আর কারো কাছে কিছু জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন না হয়। তিনি বললেন, বল- আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি; তারপর এর ওপর অবিচল থাক。
উলামায়ে কেরাম বলেন, এই হাদিস নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জাওয়ামিউল কালিম এর অন্তর্ভুক্ত। এটি আল্লাহর বাণীর মোতাবেক-
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوْا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا.
অর্থ: যারা বলে আমাদের রব আল্লাহ, তারপর অবিচল থাকে。
সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামাদের মতে আয়াত ও হাদিসের অর্থ হল- যারা ঈমান আনয়ন করে এবং আল্লাহর আনুগত্যকে আবশ্যক করে।
(১০৮৯) হজরত উমর রাদি. থেকে বর্ণিত-
كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا بَارِزًا لِلنَّاسِ فَأَتَاهُ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ، مَا الْإِيْمَانُ قَالَ أَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ، وَمَلائِكَتِهِ وَكِتَابِهِ وَلِقَائِهِ وَرُسُلِهِ وَتُؤْمِنَ بِالْبَعْثِ الآخِرِ. قَالَ يَا رَسُولَ اللهِ، مَا الإِسْلَامُ قَالَ الْإِسْلَامُ أَنْ تَعْبُدَ اللهَ وَلَا تُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَتُقِيمَ الصَّلاَةَ الْمَكْتُوبَةَ وَتُؤَدِّيَ الزَّكَاةَ الْمَفْرُوْضَةَ وَتَصُوْمَ رَمَضَانَ . قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ، مَا الْإِحْسَانُ قَالَ أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ فَإِنَّكَ إِنْ لَا تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ". قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ، مَتَى السَّاعَةُ قَالَ مَا الْمَسْئُوْلُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ وَلَكِنْ سَأُحَدِّثُكَ عَنْ أَشْرَاطِهَا إِذَا وَلَدَتِ الْأَمَةُ رَبَّهَا فَذَاكَ مِنْ أَشْرَاطِهَا وَإِذَا كَانَتِ الْعُرَاةُ الْحُفَاةُ رُءُوسَ النَّاسِ فَذَاكَ مِنْ أَشْرَاطِهَا وَإِذَا تَطَاوَلَ رِعَاءُ الْبَهْمِ فِي الْبُنْيَانِ فَذَاكَ مِنْ أَشْرَاطِهَا فِي خَمْسٍ لَا يَعْلَمُهُنَّ إِلَّا اللهُ". ثُمَّ تَلاَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ( إِنَّ اللهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوْتُ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ). قَالَ ثُمَّ أَدْبَرَ الرَّجُلُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رُدُّوا عَلَى الرَّجُلَ". فَأَخَذُوا لِيَرُدُّوهُ فَلَمْ يَرَوْا شَيْئًا . فَقَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَذَا جِبْرِيلُ جَاءَ لِيُعَلِّمَ النَّاسَ دِينَهُمْ.
অর্থ: একদা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকেদের নিয়ে দবসেছিলেন। এমন সময় একজন লোক এসে তাকে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! ঈমান কি? তিনি বললেন, ঈমান এই যে, তুমি আল্লাহ, তার ফেরেশতাকুল, তার (নাজিলকৃত) কিতাব, (আখেরাত) তার সাথে সাক্ষাৎ ও তার রাসুলগণের প্রতি ঈমান রাখবে এবং পুনরুত্থান দিবসের ওপরও ঈমান আনবে। লোকটি আবার জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! ইসলাম কি? তিনি বললেন, ইসলাম এই যে, তুমি আল্লাহর ইবাদত করতে থাকবে, কিন্তু তার সাথে কাউকে শরিক করবে না, ফরজকৃত নামাজ কায়েম করবে, নির্ধারিত ফরজ জাকাত আদায় করবে এবং রমজানের রোজা পালন করবে। সে আবার জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! ইহসান কি? তিনি বললেন, তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে যেন তাকে দেখছ; যদি তাকে না দেখ তা হলে তিনি তোমাকে দেখছেন (বলে অনুভব করবে।
সে পুনরায় জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! কেয়ামত কখন হবে? তিনি বললেন, এ ব্যাপারে যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে তিনি প্রশ্নকারীর চেয়ে বেশি কিছু জানেন না। তবে আমি তোমাকে কেয়ামতের কিছু নিদর্শন বলে দিচ্ছি- যখন দাসী তার মনিবকে প্রসব করবে এটা নিদর্শনসমূহের একটি। যখন বস্ত্রহীন, জুতাহীন ব্যক্তি জনগণের নেতা হবে, এটাও একটি নিদর্শন। আর মেষ শাবক ও ছাগলের রাখালরা যখন সুউচ্চ দালানকোঠা নিয়ে পরস্পর গর্ব করবে, এটাও তার একটি নিদর্শন। প্রকৃতপক্ষে যে পাঁচটি জিনিসের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ রাখেন, কেয়ামতের জ্ঞান তারই অন্তর্ভুক্ত। অতঃপর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নবর্ণিত আয়াত তিলাওয়াত করেন-
আল্লাহর নিকটই কেয়ামতের জ্ঞান রয়েছে, আর তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং মাতৃগর্ভে কি আছে তা তিনিই জানেন। কোনো প্রাণীই আগামীকাল কী উপার্জন করবে তা জানে না এবং কোন জমিনে সে মৃত্যুবরণ করবে তাও জানে না। বস্তুতঃ আল্লাহই সব জানেন এবং তিনি সর্ববিষয়ে অবগত। -বর্ণনাকারী বলেন, এরপর লোকটি চলে গেল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকটিকে আমার নিকট ফিরিয়ে আন। তারা তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য গেলেন। কিন্তু কাউকে পেলেন না। তারপর নবিজি বললেন, ইনি ছিলেন জিবরিল আলাইহিস সালাম। লোকেদের দীন (দীনের সারমর্ম) শিক্ষা দেয়ার জন্য এসেছিলেন。
(১০৯০) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. বর্ণিত-
كُنْتُ خَلْفَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا، فَقَالَ: يَا غُلَامُ إِنِّي أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ: اِحْفَظِ اللهَ يَحْفَظُكَ، احْفَظِ اللَّهَ تَجِدْهُ تُجَاهَكَ، إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللهَ، وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللهِ، وَاعْلَمْ أَنَّ الْأُمَّةَ لَوِ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَنْفَعُوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَنْفَعُوْكَ إِلَّا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ لَكَ، وَإِنِ اجْتَمَعُوْا عَلَى أَنْ يَضُرُّوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَضُرُّوكَ إِلَّا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَيْكَ؛ رُفِعَتِ الْأَقْلَامُ، وَجَفَّتِ الصُّحُفُ.
وَفِي رِوَايَةِ غَيْرِ التَّرْمِذِي احْفَظْ اللهَ تَجِدْهُ أَمَامَكَ، تَعَرَّفْ إِلَى اللَّهِ فِي الرَّخَاءِ يَعْرِفُكَ فِي الشِّدَّةِ، وَاعْلَمْ أَنَّ مَا أَخْطَأَكَ لَمْ يَكُنْ لِيُصِيبَكَ، وَمَا أَصَابَكَ لَمْ يَكُنْ لِيُخْطِئَكَ، وَاعْلَمْ أَنَّ النَّصْرَ مَعَ الصَّبْرِ، وَأَنَّ الْفَرَجَ مَعَ الْكَرْبِ، وَأَنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا.
অর্থ: একদিন আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে ছিলাম, তিনি আমাকে বললেন: হে যুবক! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শেখাব। আল্লাহকে স্বরণ করবে তো তিনি তোমাকে সংরক্ষণ করবেন, আল্লাহকে স্মরণ করলে তাঁকে তোমার সামনেই পাবে। যখন কিছু চাইবে তো আল্লাহর কাছেই চাইবে; যখন সাহায্য চাইবে তো আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে। জেনে রেখ, সমস্ত মানুষ যদি তোমার কোনো উপকার করতে চায় তবে আল্লাহ তোমার জন্য যা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, তা ব্যতীত আর কোনো উপকার করতে পারবে না। আর যদি সমস্ত মানুষ তোমার কোনো অনিষ্ট করতে চায় তবে আল্লাহ তোমার জন্য যা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তা ব্যতীত আর কোনো অনিষ্ট করতে পারবে না। কলম তুলে নেয়া হয়েছে এবং পৃষ্ঠা শুকিয়ে গেছে。
সুনানে তিরমিজি ছাড়া অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে- আল্লাহকে স্মরণ করবে তো তাঁকে সম্মুখে পাবে, তুমি স্বচ্ছল অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করবে তো তিনি তোমাকে কঠিন অবস্থায় স্মরণ করবেন। মনে রেখ, যা তুমি পেলে না, তা তোমার পাবার ছিল না, আর যা তুমি পেলে তা তুমি না পেয়ে থাকতে না। আরো জেনে রেখ, ধৈর্য্যধারণের ফলে (আল্লাহর) সাহায্য লাভ করা যায়। কষ্টের পর স্বাচ্ছন্দ আসে। কঠিন অবস্থার পর স্বচ্ছলতা আসে。
(১০৯১) আবু জর গিফারি রাদি. হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বরকতময় ও সুমহান রবের নিকট হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন-
يَا عِبَادِي إِنِّي حَرَّمْتُ الظُّلْمَ عَلَى نَفْسِي، وَجَعَلْتُهُ بَيْنَكُمْ مُحَرَّمًا؛ فَلَا تَظَالَمُوْا يَا عِبَادِي كُلُّكُمْ ضَلُّ إِلَّا مَنْ هَدَيْتَهُ، فَاسْتَهْدُوْنِي أَهْدِكُمْ. يَا عِبَادِي كُلُّكُمْ جَائِعٌ إِلَّا مَنْ أَطْعَمْتُهُ، فَاسْتَطْعِمُونِي أُطْعِمْكُمْ. يَا عِبَادِي! كُلُّكُمْ عَارٍ إِلَّا مَنْ كَسَوْتُهُ، فَاسْتَكْسُوْنِي أَكْسُكُمْ. يَا عِبَادِي إِنَّكُمْ تُخْطِئُوْنَ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ، وَأَنَا أَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا؛ فَاسْتَغْفِرُونِي أَغْفِرْ لَكُمْ يَا عِبَادِي إِنَّكُمْ لَنْ تَبْلُغُوْا ضُرِّي فَتَضُرُّوْنِي، وَلَنْ تَبْلُغُوا نَفْعِي فَتَنْفَعُوْنِي. يَا عِبَادِي لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوا عَلَى أَتْقَى قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ مِنْكُمْ، مَا زَادَ ذَلِكَ فِي مُلْكِيْ شَيْئًا. يَا عِبَادِي لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوْا عَلَى أَفْجَرٍ قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ مِنْكُمْ، مَا نَقَصَ ذَلِكَ مِنْ مُلْكِيْ شَيْئًا. يَا عِبَادِي لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ قَامُوا في صَعِيدٍ وَاحِدٍ، فَسَأَلُوْنِي، فَأَعْطَيْتُ كُلَّ وَاحِدٍ مَسْأَلَتُهُ، مَا نَقَصَ ذَلِكَ مِمَّا عِنْدِي إِلَّا كَمَا يَنْقُصُ الْمِخْيَطُ إِذَا أُدْخِلَ الْبَحْرَ يَا عِبَادِي إِنَّمَا هِيَ أَعْمَالُكُمْ أُحْصِيْهَا لَكُمْ، ثُمَّ أُوَفِّيْكُمْ إِيَّاهَا فَمَنْ وَجَدَ خَيْرًا فَلْيَحْمَدِ اللَّهَ، وَمَنْ وَجَدَ غَيْرَ ذَلِكَ فَلَا يَلُوْمَنْ إِلَّا نَفْسَهُ.
অর্থ: হে আমার বান্দাগণ! আমি জুলুমকে আমার জন্য হারাম করে দিয়েছি, আর তা তোমাদের মধ্যেও হারাম করে দিয়েছি। অতএব, তোমরা একে অপরের উপর জুলুম কর না। হে আমার বান্দাগণ! আমি যাকে হেদায়াত দিয়েছি সে ছাড়া তোমরা সকলেই পথভ্রষ্ট। সুতরাং আমার কাছে হেদায়াত চাও, আমি তোমাদের হেদায়াত দান কর। হে আমার বান্দাগণ! আমি যাকে অন্ন দান করেছি, সে ছাড়া তোমরা সকলেই ক্ষুধার্ত। সুতরাং তোমরা আমার নিকট খাদ্য চাও, আমি তোমাদের খাদ্য দান করব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা সবাই বিবস্ত্র, সে ব্যতীত যাকে আমি কাপড় পরিয়েছি। সুতরাং আমার কাছে বস্ত্র চাও, আমি তোমাদেরকে বস্ত্রদান করব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা রাতদিন গুনাহ করছ, আর আমি তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দেই। সুতরাং আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা কখনোই আমার ক্ষতি করার সামর্থ রাখ না যে আমার ক্ষতি করবে। আর তোমরা কখনোই আমার ভালো করার ক্ষমতা রাখ না যে আমার ভালো করবে| হে আমার বান্দাগণ! তোমরা পূর্বাপর সকল মানুষ ও জিন যদি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মুত্তাকি ও পরহেজগার ব্যক্তির হৃদয়ের মত হয়ে যায়, তবে তা আমার রাজত্বে কিছুই বৃদ্ধি করবে না।
আমার বান্দাগণ! তোমাদের পূর্বাপর সকল মানুষ ও জিন যদি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে পাপী ব্যক্তির হৃদয়ের মত হয়ে যায়, তবে তা আমার রাজত্বে কিছুই কমাতে পারবে না। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের পূর্বের ও তোমাদের পরের সকলে, তোমাদের সকল মানব-দানব একই ময়দানে দাঁড়িয়ে আমার কাছে চায় এবং আমি সকলের চাওয়া পূরণ করে দেই, তবে আমার নিকট যা আছে তাতে সমুদ্রে এক সুঁই রাখলে যতটা কম হয় তা ব্যতীত আর কিছু কম হতে পারে না।
আমার বান্দাগণ! আমি তোমাদের আমলকে তোমাদের জন্য গণনা করে রাখি, আমি এর পূর্ণ প্রতিফল দেব। সুতরাং যে ব্যক্তি উত্তম প্রতিফল পাবে তাকে আল্লাহর প্রশংসা করা উচিত, আর যে বিপরীত পাবে তার শুধু নিজেকেই ধিক্কার দেয়া উচিত。
টিকাঃ
১৫৮৩. সহিহ বুখারি: ১, সহিহ মুসলিম: ১৯০৭।
১৫৮৪ সহিহ বুখারি: ২৬৯৭, সহিহ মুসলিম: ১৮১৭, মু. আহমাদ ৬/২৭০, সুনানে আবু দাউদ: ৪৬০৬, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ১৪।
১৫৮৫, সহিহ বুখারি: ৫২, সহিহ মুসলিম: ১৫৯৯, মু. আহমাদ ৪/২৬৭, সুনানে আবু দাউদ: ৩৩২৯, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৯৮৪, সুনানে তিরমিজি: ১২০৫, সুনানে নাসাঈ ৭/২৪১, সুনানে দারিমি: ২৫২৪।
১৫৮৬. সহিহ বুখারি: ৩২০৮, সহিহ মুসলিম: ৩৬৪৩, মু. আহমাদ ১/৩৮২, সুনানে আবু দাউদ: ৪৭০৮, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৭৬, সুনানে তিরমিজি: ২৩৩৮।
১৫৮৭. সুনানে তিরমিজি: ২৫২০, মু. আহমাদ ১/২০০, সুনানে নাসাঈ ৮/৩২৭, সুনানে দারিমি: ২৫৩৫।
১৫৮৮ ৮. ৮৮৮ নম্বর হাদিসের তাখরিজ দেখুন।
১৫৮৯, সহিহ বুখারি: ১৩, সহিহ মুসলিম: ৪৫, সুনানে নাসাঈ ৮/১১৫, মু. আহমাদ ১/১৭৬, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৬৬, সুনানে তিরমিজি: ২৫১৭, সুনানে দারিমি: ২৭৪৩।
১৫৯০, সহিহ মুসলিম: ১০১৫।
১৫৯১, মুয়াত্তা মালেক ২/৭৪৫, সুনানে ইবনে মাজাহ: ২৩৪০।
১৫৯২, ৮৪৯ নং হাদিস দেখুন।
১৫৯৩, সহিহ বুখারি: ৭২৮৮, সহিহ মুসলিম: ১৩৩৭, সুনানে নাসাঈ ৫/১১০।
১৫৯৪. সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪১০২।
১৫৯৫. সহিহ বুখারি: ৬৮৭৮, সহিহ মুসলিম: ১৬৭৬, সুনানে আবু দাউদ: ৪৩৫২, সুনানে তিরমিজি: ১৪০২, সুনানে নাসাঈ ৭/৯০।
১৫৯৬, সহিহ বুখারি: ২৫, সহিহ মুসলিম: ২২।
১৫৯৭, ৯৯৩ নং হাদিসের টীকা দেখুন।
১৫৯৮, সুনানে বাইহাকি ১০/২৫২, সহিহ বুখারি: ৪৫৫২, সহিহ মুসলিম: ১৭১১।
১৫৯৯. মু. আহমাদ ৪/২২৮, সুনানে দারিমি: ২৫৩৬।
১৬০০, সহিহ মুসলিম: ২৫৫৩।
১৬০১. সহিহ মুসলিম: ১৯৫৫, সুনানে আবু দাউদ: ১৯৫৫, সুনানে তিরমিজি: ১৪০৯, সুনানে নাসাঈ ৭/২২৭।
১৬০২. ৮৭৪ নং হাদিসের টীকা দেখুন।
১৬০৩. সহিহ বুখারি: ৬১১৬, সুনানে তিরমিজি: ২০২১।
১৬০৪. সুনানে দারাকুতনি ৪/১৮৪।
১৬০৫ সুরা আসসাজদাহ: ১৬-১৭।
১৬০৬, ৮৮৬ নং হাদিসের টীকা দেখুন।
১৬০৭, সুনানে তিরমিজি: ১৯৮৮, মু. আহমাদ ৫/২২৮।
১৬০৮. সুনানে আবু দাউদ: ৪৬০৭, সুনানে তিরমিজি: ২৬৭১, মু. আহমাদ ২/১২৬, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪২।
১৬০৯ সহিহ বুখারি: ৩৪৮৩, সুনানে আবু দাউদ: ৪৭৯৭।
১৬১০. সহিহ মুসলিম: ১৫।
১৬১১. সহিহ মুসলিম: ৩৮।
১৬১২. সুরা আহকাফ: ১৩।
১৬১৩. সুরা লুকমান: ৩৪।
১৬১৪. সহিহ মুসলিম: ৮। হাদিসটি আবু হুরায়রা রাদি. থেকেও বর্ণিত। কিতাবে হাদিসের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে মাত্র। পাঠকের সুবিধার্থে পুরো হাদিস অর্থসহ সংযোজন করা হল। উবায়দুল্লাহ আসআদ কাসেমি।
১৬১০. সুনানে তিরমিজি: ২৫১৮, হাদিসটি হাসান সহিহ।
১৬১৬. মু. আহমাদ ১/৩০৭।
১৬১৭, সহিহ মুসলিম: ২৫৭৭, সুনানে তিরমিজি: ২৪৯৭। এই শিরোনামের ৩০ হাদিসের তরজমায় ইসলামিক ফাউণ্ডেশন থেকে প্রকাশিত হাদিসের বিভিন্ন বই থেকে সাহায্য নেয়া হয়েছে।