📘 আল আযকার > 📄 ইস্তিগফার

📄 ইস্তিগফার


ইস্তিগফার অধ্যায়- ২১
এই অধ্যায়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেয়া এবং আমল করার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা জরুরি। এই অধ্যায়টি আমি শেষের দিকে এই শুভকামনায় এনেছি, যেন আল্লাহ তাআলা এই ইস্তিগফারের মাধ্যমে দুনিয়া থেকে আমাদের সমাপ্তি দান করেন। আমি আমার জন্য, আমার প্রিয়জন ও সকল মুসলমানদের জন্য ইস্তিগফার ও যাবতীয় কল্যাণ কামনা করছি। আমিন।।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِبْكَارِ.
অর্থ: নিজ ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং সকাল ও সন্ধ্যায় নিজ প্রতিপালকের প্রশংসার সাথে তাসবিহ পাঠ করতে থাকুন。
অপর আয়াতে বলেন-
وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ .
অর্থ: আপনি আপনার জন্য এবং মুমিন নর-নারীর জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করুন。
অন্য আয়াতে ইরশাদ করেছেন-
وَاسْتَغْفِرِ اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَحِيمًا.
অর্থ: আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা ক্ষমাশীল দয়াময়。
অপর এক আয়াতে বলেন-
لِلَّذِينَ اتَّقَوْا عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهُارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَأَزْوَاجُ مُطَهَّرَةٌ وَرِضْوَانٌ مِنَ اللهِ، وَاللهُ بَصِيرٌ بِالْعِبَادِ الَّذِينَ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ الصَّابِرِينَ وَالصَّادِقِينَ وَالْقَانِتِينَ وَالْمُنْفِقِينَ وَالْمُسْتَغْفِرِينَ بِالْأَسْحَارِ
অর্থ: যারা তাকওয়া অবলম্বনকারী তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে এমন বাগ-বাগিচা, যাতে নহর প্রবাহিত, যেখানে তারা সর্বদা থাকবে এবং তাদের জন্য আছে পবিত্র স্ত্রীগণ এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে সন্তুষ্টি। আল্লাহ সকল বান্দাকে ভালোভাবে দেখছেন। তারা সেই সব লোক যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তোমার প্রতি ঈমান এনেছি। সুতরাং আমাদের পাপরাশি ক্ষমা কর এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা কর। তারা অত্যন্ত ধৈর্যশীল, সত্য বলতে অভ্যস্ত, ইবাদতগুযজার, (আল্লাহ সন্তুষ্টি বিধানের লক্ষ্যে) অর্থ ব্যয়কারী এবং সাহরির সময় ক্ষমা প্রার্থনাকারী。
অন্য আয়াতে বলেন-
وَمَا كَانَ اللهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنْتَ فِيهِمْ وَمَا كَانَ اللَّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ.
অর্থ: আপনি তাদের মাঝে অবস্থান করাকালে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে শাস্তি দিবেন না; আবার তারা ক্ষমা প্রার্থনা করলেও আল্লাহ তাআলা তাদেরকে শাস্তি দিবেন না。
এক আয়াতে আরো ইরশাদ হচ্ছে-
وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوْا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللَّهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ وَمَنْ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلَّا اللَّهُ وَلَمْ يُصِرُّوا عَلَى مَا فَعَلُوْا وَهُمْ يَعْلَمُوْنَ.
অর্থ: তারা সেই সকল লোক, যারা কখনও কোনোও অশ্লীল কাজ করে ফেললে বা (অন্য কোনোভাবে) নিজেদের প্রতি জুলুম করলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার ফলশ্রুতিতে নিজেদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্লাহ ছাড়া কেই-বা আছে, যে গুনাহ ক্ষমা করতে পারে? আর তারা জেনে-শুনে তাদের কৃতকর্মে অবিচল থাকে না。
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন-
وَمَنْ يَّعْمَلْ سُوْءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللَّهَ يَجِدِ اللَّهَ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا.
অর্থ: যে ব্যক্তি কোনো খারাপ কাজ করে অথবা নিজের প্রতি কোনো জুলুম করে ফেলে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তখন আল্লাহ তাআলাকে সে ক্ষমাশীল ও দয়াবানরূপে পায়。
তিনি আরো বলেন-
وَأَنِ اسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوْبُوا إِلَيْهِ.
অর্থ: তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তার কাছে তাওবা কর。
আল্লাহ তাআলা হজরত হুদ আ. এর ঘটনা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন-
وَيَا قَوْمِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ.
অর্থ: হে আমার কওম! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তার কাছে তাওবা কর。
হজরত নুহ আ. এর ঘটনা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন-
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا.
অর্থ: আমি বললাম, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই তিনি বড় ক্ষমাশীল。
ইস্তিগফারের ব্যাপারে আরো অনেক প্রসিদ্ধ আয়াত আছে। সতর্কীকরণের জন্য উল্লিখিত আয়াতগুলোই যথেষ্ট। অন্যদিকে ইস্তিগফার সম্পর্কে হাদিসের সংখ্যা গণনা করে শেষ করা যাবে না। তবে আমি গুটিকয়েক হাদিসের অংশবিশেষের দিকে ইঙ্গিত করব।
(১০৪৯) হজরত আগার মুজানি রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِنَّهُ لَيُغَانُ عَلَى قَلْبِي، وَإِنِّي لَأَسْتَغْفِرُ اللهَ فِي الْيَوْمِ مِائَةَ مَرَّةٍ.
অর্থ: কখনো কখনো আমার অন্তরে অলসতা দেখা দেয়। তাই আমি দৈনিক একশবার আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি。
(১০৫০) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-
وَاللَّهِ، إِنِّي لَأَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ فِي الْيَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِينَ مَرَّةً.
অর্থ: আল্লাহর কসম! আমি দৈনিক সত্তরবারের অধিক আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা ও তাওবা করি。
(১০৫১) হজরত শাদ্দাদ বিন আউস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
سَيِّدُ الْإِسْتِغْفَارِ أَنْ تَقُوْلَ : اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ بِذَنْبِي، فَاغْفِرْ لِي ، فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ. قَالَ : وَمَنْ قَالَهَا مِنَ النَّهَارِ مُوْقِنًا بِهَا، فَمَاتَ مِنْ يَوْمِهِ قَبْلَ أَنْ يُمْسِيَ، فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ، وَمَنْ قَالَهَا مِنَ اللَّيْلِ وَهُوَ مُوْقِنُ بِهَا، فَمَاتَ قَبْلَ أَنْ يُصْبِحَ، فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ.
অর্থ: এটি সায়্যিদুল ইস্তিগফার তথা শ্রেষ্টতম ক্ষমা প্রার্থনার দুআ-
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي؛ فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাকতানি ওয়া আনা আবদুকা, ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া'দিকা মাসতাতা'তু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানা'তু, আবুউ লাকা বিনি'মাতিকা আলাইয়্যা, ওয়া আবুউ বিজাম্বি, ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আনতা।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনিই আমার প্রতিপালক। আপনি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই। আপনিই আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আমি আপনার দাস। আমি আপনার প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের উপর যথাসাধ্য অটল আছি। আমি যা করেছি তার অনিষ্টতা থেকে আপনার আশ্রয় কামনা করছি। আমার উপর আপনার যে নেয়ামতো আছে আমি তা স্বীকার করছি। আমার গুনাহও আমি স্বীকার করে নিচ্ছি। সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। কেননা আপনি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না। যে ব্যক্তি দিনের বেলা দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এই দুআ পড়বে, অতঃপর সে সেই দিন সন্ধ্যা হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে এই দুআটি দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে পড়বে, অতঃপর সে ঐ রাতে ভোর হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে。
(১০৫২) হজরত উমর রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
كُنَّا نَعُدُّ لِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْمَجْلِسِ الْوَاحِدِ مِائَةَ مَرَّةٍ: رَبِّ اغْفِرْ لِي وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ.
অর্থ: আমরা গণনা করতাম যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই মজলিসে বসে এই ইস্তিগফারটি ১০০ বার পাঠ করতেন-
رَبِّ اغْفِرْ لِي وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ.
উচ্চারণ: রাব্বিগ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা ইন্নাকা আনতাত্তাওয়াবুর রাহিম।
অর্থ: হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করুন, আমার তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনিই অতিশয় তাওবা কবুলকারী দয়াবান। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি সহিহ。
(১০৫৩) ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
مَنْ لَزِمَ الْاِسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا، وَمِنْ كُلِّ هَمَّ فَرَجًا، وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ.
অর্থ: যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তিগফার পাঠ করে, আল্লাহ তাআলা তার প্রত্যেক বিপদ থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করেন। সকল দুশ্চিন্তা হতে মুক্ত করেন। এমন উৎস থেকে তাকে রিজিক দেন যা সে কল্পনাও করেনি。
(১০৫৪) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَوْ لَمْ تُذْنِبُوا لَذَهَبَ اللَّهُ بِكُمْ وَلَجَاءَ بِقَوْمٍ يُذْنِبُونَ، فَيَسْتَغْفِرُونَ اللَّهَ، فَيَغْفِرُ لَهُمْ.
অর্থ: ঐ সত্ত্বার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! যদি তোমরা গুনাহ না করতে, তবে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তোমাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে এমন সমপ্রদায়কে বানাতেন, যারা গুনাহ করে ক্ষমা চাইত। ফলে তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিতেন。
(১০৫৫) হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُعْجِبُهُ أَنْ يَدْعُوَ ثَلَاثًا وَيَسْتَغْفِرَ ثَلَاثًا.
অর্থ: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কোনো দুআ তিনবার পাঠ করতে এবং তিনবার ইস্তিগফার করতে পছন্দ করতেন。
(১০৫৬) হজরত আবু বকর রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
مَا أَصَرَّ مَنِ اسْتَغْفَرَ وَإِنْ عَادَ فِي الْيَوْمِ سَبْعِينَ مَرَّةً.
অর্থ: যে ব্যক্তি গুনাহ করার সাথে সাথে ক্ষমা চায়, সে বারবার গুনাহকারী হিসাবে গণ্য হয় না। যদিও সে দৈনিক সত্তরবার ঐ পাপে লিপ্ত হয়。
(১০৫৭) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-
قَالَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى : يَا ابْنَ آدَمَ، إِنَّكَ مَا دَعَوْتَنِي وَرَجَوْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ عَلَى مَا كَانَ فِيْكَ، وَلَا أُبَالِي يَا ابْنَ آدَمَ، لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوبُكَ عَنَانَ السَّمَاءِ ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ وَلَا أُبَالِي يَا ابْنَ آدَمَ، إِنَّكَ لَوْ أَتَيْتَنِي بِقُرَابِ الْأَرْضِ خَطَايَا، ثُمَّ لَقِيتَنِي لَا تُشْرِكُ بِشَيْئًا لَأَتَيْتُكَ بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةً.
অর্থ: আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আদম সন্তান! যতক্ষণ তুমি আমাকে ডাকবে এবং ক্ষমার আশা রাখবে, ততক্ষণ আমি তোমাকে ক্ষমা করব। তোমার অবস্থা যাই হোক না কেন, আমি কোনো পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! যদি তোমার গুনাহ আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়, অতঃপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, তবে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। হে আদম সন্তান! যদি তুমি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে উপস্থিত হও এবং আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করে না থাক, তবে আমি পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়েই তোমার কাছে উপস্থিত হব। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান。
(১০৫৮) আবদুল্লাহ বিন বুসর রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
طُوْلِي لِمَنْ وَجَدَ فِي صَحِيفَتِهِ اسْتِغْفَارًا كَثِيرًا.
অর্থ: ঐ ব্যক্তির জন্য মোবারকবাদ, যে তার আমলনামায় বেশি বেশি ইস্তিগফার দেখতে পাবে。
(১০৫৯) হজরত ইবনে মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَنْ قَالَ : أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ غُفِرَ لَهُ، وَإِنْ كانَ قَدْ فَرَّ مِنَ الزَّحْفِ.
অর্থ: যে ব্যক্তি বলে-
أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ.
উচ্চারণ: আসতাগফিরুল্লাহাল্লাযি লা-ইলাহা ইল্লাহুওয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম ওয়া আতুবু ইলাইহ।
অর্থ: আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, যিনি চিরঞ্জীব, শাশ্বত। আমি তার কাছে তাওবা করছি। তার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে; যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করে থাকে।-ইমাম হাকেম রহ. বলেন, বুখারি ও মুসলিমের শর্তসাপেক্ষে হাদিসটি সহিহ。
আমি বলি, এই অধ্যায়টি অত্যন্ত ব্যাপক। তবে সংক্ষেপে বর্ণনা করলে তা আয়ত্ত করতে সহজ। এ কারণে আমরা এখানেই এই অধ্যায় সমাপ্ত করছি।

টিকাঃ
১৫৫৮. গাফির: ৫৫।
১৫৫৯. সূরা মুহাম্মাদ: ১৯।
১৫৬০. সুরা নিসা: ১০৬।
১৫৬১. সুরা আলে ইমরান: ১৫-১৭।
১৫৬২. সুরা আনফাল: ৩৩।
১৫৬৩. সুরা আলে ইমরান: ১৩৫।
১৫৬৪. সুরা নিসা: ১১০।
১৫৬৫. সুরা হুদ: ৩।
১৫৬৬. সুরা হুদ: ৫২।
১৫৬৭. সুরা নুহ: ১০।
১৫৬৮. সহিহ মুসলিম: ২৭০২, আবু দাউদ: ১৫১৫, মু. আহমাদ ৪/২১১।
১৫৬৯. সহিহ বুখারি: ৬৩০৭, তিরমিজি: ৩২৫৫, মু. আহমাদ ২/২৮২, আমাল: ৪০৫, নাসাঈ।
১৫৭০. সহিহ বুখারি: ৬৩০৬।
১৫৭১. সুনানে আবু দাউদ: ১৫১৬, সুনানে তিরমিজি: ৩৪৩৪, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৮১৪, আমাল: ৪৫৮, নাসাঈ, মু. আহমাদ ২/৮৪।
১৫৭২. সুনানে আবু দাউদ: ১৫১৮, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৮১৯, আমাল: ৪৫৬, নাসাঈ, মু. আহমাদ ১.২৪৮।
১৫৭৩. মুসলিম: ২৭৪৯, সুনানে তিরমিজি: ৩৫৩৩, মু. আহমাদ ৫/৪১৪।
১৫৭৪. সুনানে আবু দাউদ: ১৫২৪।
১৫৭৫. সুনানে আবু দাউদ: ১৫১৪, সুনানে তিরমিজি: ৩৫৫৯।
১৫৭৬. সুনানে তিরমিজি: ৩৫৪০।
১৫৭৭. সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৮১৮।
১৫৭৮. সুনানে আবু দাউদ: ১৫১৭, সুনানে তিরমিজি: ৩৫৭৭।
১৫৭৯. মুসতাদরাকে হাকেম ১/৫১১।

📘 আল আযকার > 📄 অনুতপ্ত হওয়া ছাড়া ইস্তিগফার করা

📄 অনুতপ্ত হওয়া ছাড়া ইস্তিগফার করা


অনুতপ্ত হওয়া ছাড়া বলা যে, 'আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি ও তাওবা করছি'
ইস্তিগফারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি বিষয় হল, যা হজরত রবি বিন খুসাইম রাদি. থেকে যা বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যেন এভাবে না বলে: أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ : আসতাগফিরুল্লাহ ওয়া আতুবু ইলাইহি: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাওবা করছি। -কেননা, এমনটি না করলে সে গুনাগার হবে এবং মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হবে। বরং সে বলবে:-
(اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَتُبْ عَلَى ) আল্লাহুম্মাগফিরলি ওয়াতুব আলাইয়্যা: হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবা কবুল করুন। -তিনি যে বললেন এভাবে বলা উচিত- হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবা কবুল করুন: ঠিক আছে। তবে 'আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি' কথাটাকে অপছন্দনীয় বলা ও একে মিথ্যা সাব্যস্ত করা: সঙ্গত মনে হচ্ছে না। কেননা, 'আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি' অর্থ: আমি আল্লাহর মাগফেরাত কামনা করছি। এতে মিথ্যার কিছু নেই। তাছাড়া তার এই কথার উত্তর ইতিপূর্বে বর্ণিত হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. এর হাদিসেও পাওয়া যায়।
হজরত ফুজাইল রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- গুনাহ পরিত্যাগ করা ছাড়া শুধু ক্ষমা প্রার্থনা করা মিথ্যাবাদীদের তাওবা। ঠিক অনুরূপ বক্তব্য হজরত রাবিআ আদাবিয়্যাহ রাদি. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, আমাদের ইস্তিগফারের জন্যও আরো ইস্তিগফারের প্রয়োজন। এক আরব বেদুঈন সম্পর্কে কথিত আছে, সে কাবার গিলাফ ধরে বলছিল-
اللَّهُمَّ إِنَّ اسْتِغْفَارِي مَعَ إِصْرَارِيْ لَوْمٌ، وَإِنَّ تَرْكِي الاسْتِغْفَارَ مَعَ عِلْمِي بِسَعَةِ عَفْوِكَ لَعَجْزُ، فَكَمْ تَتَحَبَّبُ إِلَيَّ بِالنَّعَمِ مَعَ غِنَاكَ عَنِّي، وَأَتَبَغَضُ إِلَيْكَ بِالمَعَاصِي مَعَ فَقْرِي إِلَيْكَ، يَا مَنْ إِذَا وَعَدَ وَفَى، وَإِذَا تَوَعَدَ تَجَاوَزَ وَعَفَا، أَدْخِلْ عَظِيمَ جُرْمِي فِي عَظِيمٍ عَفْوِكَ يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ.
অর্থ: হে আল্লাহ! বারবার আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ছোটলোকি। তবে আপনার ক্ষমার বিস্তৃতি দেখে ক্ষমা প্রার্থনা ছেড়ে দেয়া অক্ষমতা। আমার প্রতি আপনার অমুখাপেক্ষীতা থাকা সত্ত্বেও কতকাল আপনি ভালোবেসে নেয়ামত দিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে আপনার প্রতি আমি পূর্ণ মুখাপেক্ষী থাকা সত্ত্বেও কতকাল ধরে আপনার নাফরমানি করে যাচ্ছি। হে ঐ সত্তা, যিনি ওয়াদা করলে পূরণ করেন! হে সকল দয়াবানদের দয়াবান! আপনি আমার মহা অপরাধগুলিকে আপনার মহা ক্ষমার মধ্যে শামিল করে নিন।

📘 আল আযকার > 📄 পূর্ণ একদিন চুপ থাকা নিষিদ্ধ

📄 পূর্ণ একদিন চুপ থাকা নিষিদ্ধ


পূর্ণ একদিন চুপ থাকা নিষিদ্ধ
(১০৬০) হজরত আলি রাদি. থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ কথাগুলো মুখস্থ রেখেছি-
لَا يُتْمَ بَعْدَ احْتِلَامٍ، وَلَا صُمَاتَ يَوْمٍ إِلَى اللَّيْلِ.
অর্থ: সাবালক হওয়ার পর আর এতিম থাকে না। পূর্ণ একদিন চুপ থাকতেও নেই।-ইমাম আবু সুলাইমান খাত্তাবি মাআলিমুস সুনানে এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন- জাহেলি যুগে মানুষে চুপ থাকা ইবাদতের অংশ ছিল। তারা দিবারাত্রের ইতিকাফ করত এবং চুপ থাকত; কারো সাথে কথাবার্তা বলত না। অতঃপর ইসলামে এ থেকে নিষেধ করা হয়েছে এবং তাদেরকে জিকির ও উত্তম কথা বলতে আদেশ দেয়া হয়েছে。
(১০৬১) হজরত কায়েস বিন আবু হাজিম রহ. থেকে বর্ণিত-
دَخَلَ أَبُو بَكْرٍ عَلَى امْرَأَةٍ مِنْ أَحْمَسَ يُقَالُ لَهَا : زَيْنَبُ، فَرَآهَا لَا تَكَلَّمُ، فَقَالَ : مَا لَهَا لَا تَكَلَّمُ ؟ قَالُوا : حَجَّتْ مُصْمِتَةً . قَالَ لَهَا : تَكَلَّمِي ؛ فَإِنَّ هَذَا لَا يَحِلُّ، هَذَا مِنْ عَمَلِ الْجَاهِلِيَّةِ. فَتَكَلَّمَتْ.
অর্থ: একবার হজরত আবু বকর রাদি. আহমাস গোত্রের যয়নব নামক মহিলার কাছে গমন করলেন। গিয়ে দেখেন, সে কথাবার্তা বলছে না। লোকদের জিজ্ঞাসা করলেন, সে কথা বলছে না কেন? তারা বলল, সে চুপ থাকার নিয়ত করেছে। তিনি তাকে বললেন, তুমি কথা বল। কেননা, এ ধরনের চুপ থাকা জায়েজ নয়। এটি জাহেলি যুগের প্রথা। অতঃপর সে কথা বলল。

টিকাঃ
১৫৮০. সুনানে আবু দাউদ: ২৮৭৩।
১৫৮১. মাআলিমুস সুনান ৩/২৯৪।
১৫৮২. সহিহ বুখারি: ৩৮৩৪।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন