📄 দুআর আদব
দুআর আদব
জ্ঞাতব্য, ফুকাহায়ে কেরাম, মুহাদ্দিসে কেরাম এবং পূর্বাপর সকল ঘরানার সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামায়ে কেরামের পছন্দনীয় দুআর মাজহাব হল, দুআ করা মুস্তাহাব। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُوْنِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ.
অর্থ: তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমাকে ডাক; আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব。
অপর আয়াতে বলেন-
ادْعُوا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً.
অর্থ: তোমরা বিনিতভাবে ও চুপিসারে নিজেদের প্রতিপালককে ডাক।
এ ব্যাপারে আরো অনেক প্রসিদ্ধ আয়াত রয়েছে। হাদিসের কথা যদি বলি, তবে এ ব্যাপারে অনেক প্রসিদ্ধ ও স্পষ্ট ভাষ্যের হাদিস রয়েছে। আমরা ইতিপূর্বে দুআ সংক্রান্ত অধ্যায়ে যা বর্ণনা করেছি তা আমাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাআলা তাওফিক দান করুন!
আমরা ইমাম আবুল কাসিম কুশাইরির রিসালা থেকে নকল করেছি, তিনি বলেন- লোকেরা এই বিষয়টি নিয়ে মতোবিরোধ করে যে, দুআ করা উত্তম নাকি চুপ থেকে সন্তুষ্ট থাকা উত্তম। কেউ বলেন, দুআ করা উত্তম। তারা পূর্বে বর্ণিত হাদিস )الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ( : দুআও একটি ইবাদত- এর আলোকে এমনটি বলেছেন। তাছাড়া দুআ করার অর্থ হল, আল্লাহ তাআলার প্রতি মুখাপেক্ষিতা প্রকাশ করা। অনেকেই আবার বলেছেন, চুপ থাকা, আল্লাহর হুকুম পালনে জমে থাকা, পূর্ব নির্ধারিত তাকদিরের ওপর সন্তুষ্ট থাকা হল সর্বোত্তম। অনেকেই বলেছেন, মুখে দুআ করবে ঠিক; তবে অন্তরে তাকদিরের ওপর সন্তুষ্ট থাকবে। যাতে করে উভয় বিষয়ের ওপর আমল করা হয়।
কুশাইরি আরো বলেন, সর্বোত্তম হল এমনটি বলা যে, সময় ও অবস্থা বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। কখনও চুপ থাকার চেয়ে দুআ করা উত্তম এবং সেটাই আদব। কখনও দুআ করার চেয়ে চুপ থাকা উত্তম এবং তখন সেটাই আদব। এটা মূলত সময়ের ভিন্নতার প্রেক্ষিতে জানা যায়। যদি কেউ অন্তরে দুআর প্রতি ইঙ্গিত ও টান অনুভব করে, তবে তার জন্য তখন দুআ করাই শ্রেয়। আর যদি দুআর পরিবর্তে চুপ থাকার সায় পায়, তবে চুপ থাকাটাই উত্তম।
তিনি আরো বলেন, তবে শুদ্ধ হল এভাবে বলা যে, যেক্ষেত্রে মুসলমানদের কোনোও অংশবিশেষ থাকে কিংবা আল্লাহ তাআলার কোনোও হকের ব্যাপার থাকে, সেসব ক্ষেত্রে দুআ করা উত্তম। কেননা তখন সেটা ইবাদত হবে। আর যদি তাতে নিজের কোনোও অংশ তথা অন্যকে দেখানো বা এমন কিছু থাকে, তবে তখন চুপ থাকা উত্তম।
তিনি বলেন, দুআ কবুলের একটি শর্ত হল, দুআপ্রার্থীর পানাহার হালাল হওয়া। হজরত ইয়াহিয়া বিন মুআজ রাজি রাদি. বলতেন, আমি গুনাহগার হয়ে কোন মুখে দুআ করব? অন্যদিকে আপনি মহান দাতা হিসাবে দুআ না করে থাকব কিভাবে?
দুআর আরেকটি আদব হল, অন্তরের উপস্থিতি ও একাগ্রতা। অনেকে বলেছেন, দুআর অর্থ হল অসহায়ত্ব প্রকাশ করা। অন্যথায় আল্লাহ তাআলা যা চান তাই করেন।
ইমাম আবু হামেদ গাজালি রহ. তার 'ইহয়াউ উলুমিদ্দিন' গ্রন্থে (১/৩০৪) বলেন, দুআর দশটি আদব রয়েছে:
১. ফজিলতপূর্ণ সময়সমূহের অপেক্ষা করা। যেমন, আরাফার দিন, রমজান মাস, জুমুআর দিন, রাতের শেষ তৃতীয়াংশ, সেহরির সময় ইত্যাদি।
২. ফজিলতপূর্ণ অবস্থাসমূহকে মূল্যবান মনে করা। যেমন, সেজদার অবস্থা, শত্রুবাহিনীর মুখোমুখী হওয়া, বৃষ্টি অবতরণের অবস্থা, নামাজরত ও পরের অবস্থা। আমি যুক্ত করি: দয়াপরবশতার অবস্থাও একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থা।
৩. কিবলামুখী হয়ে দুই হাত তুলে দুআ করা। দুআ শেষে দুই হাত চেহারায় মোছা।
৪. দুআর সময় আওয়াজ উচ্চস্বর ও নিচুস্বরের মাঝামাঝি অবস্থায় রাখা।
৫. দুআয় অন্ত্যমিল রক্ষার খুব চেষ্টা করা। এটাকে দুআয় সীমালঙ্ঘন হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। উত্তম হল, হাদিসে বর্ণিত দুআসমূহে সীমাবদ্ধ থাকা। কেউ যতই সুন্দর দুআই করুক, তাতে সীমালঙ্ঘনের শঙ্কা থাকেই। অনেকে বলেছেন, দীনতা ও অসহায়ত্বের যবান দিয়ে দুআ কর। খুব শুদ্ধ ও দ্রুততার সঙ্গে দুআ করার প্রয়োজন নেই। বলা হয়, উলামায়ে কেরাম ও আবদালগণ দুআয় সাতটি কথার চেয়ে বেশি কথা বলতেন না। আর এর স্বপক্ষে রয়েছে কুরআনের আয়াত, যা আল্লাহ তাআলা সুরা বাকারার শেষে উল্লেখ করেছেন-
رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِنَا رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ ، وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَفِرِينَ.
অর্থ: (১) হে আমাদের পালনকর্তা! যদি আমাদের থেকে ভুল- ভ্রান্তি হয়ে যায়, তাহলে আমাদেরকে পাকড়াও কর না। (২) হে আমাদের পালনকর্তা! আর আমাদের ওপর (বিধি- বিধানের) ভারী দায়িত্ব অর্পণ কর না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর করেছিলেন। (৩) হে আমাদের প্রভু! আর আমাদের ওপর এমন বোঝা আরোপ কর না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। (৪) আমাদের পাপ মোচন কর। (৫) আমাদেরকে ক্ষমা করে দাও। (৬) আর আমাদের প্রতি দয়া কর। (৭) আপনিই আমাদের অভিভাবক। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য কর। (আমিন)
কুরআনের অন্য কোথাও বান্দার দুআর ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা এর চেয়ে বেশি বর্ণনা করেননি।
আমি বলি- ঠিক এমন ধরনের আয়াত সুরা ইবরাহিমে রয়েছে-
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَذَا الْبَلَدَ آمِنًا.
অর্থ: স্মরণ কর ঐ সময়কে যখন ইবরাহিম বললেন, হে আমার প্রতিপালক! এই শহরটিকে আপনি নিরাপদ বানিয়ে দিন।
আমি বলি, জমহুর উলামায়ে কেরাম এ ক্ষেত্রে যা বলেছেন সেটাই সর্বোত্তম। তারা বলেছেন, দুআ কেবল এই সাতটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ রাখার কোনো বিষয় নয়। এর চেয়ে বেশি বিষয়ে দুআ করতে সমস্যা নেই। বরং নিঃশর্তভাবে বেশি বেশি দুআ করাই উত্তম।
৬. দুআয় বিনয়, একাগ্রতা ও খোদাভীরুতার উপস্থিত থাকা। আল্লাহ তাআলা বলেন-
إِنَّهُمْ كَانُوا يُسَارِعُوْنَ فِي الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُوْنَنَا رَغَبًا وَرَهَبًا وَكَانُوْا لَنَا خَاشِعِينَ.
অর্থ: নিশ্চই তারা সৎকাজে গতিশীলতা প্রদর্শন করত এবং আশা ও ভীতির সঙ্গে আমাকে ডাকত। তাদের অন্তর ছিল আমার সামনে বিনিত।
অন্য আয়াতে বলেন-
ادْعُوْا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً.
অর্থ: তোমরা বিনয়তা ও চুপিসারে তোমাদের প্রতিপালককে ডাক।
৭. খুব দৃঢ়তার সঙ্গে আবেদন করা, আল্লাহ তাআলা দুআ কবুল করবেন বলে পূর্ণ বিশ্বাস রাখা এবং সে ব্যাপারে দৃঢ় আশা রাখা। এ ব্যাপারে প্রচুর প্রমাণ রয়েছে। হজরত সুফিয়ান বিন উয়াইনা রহ. বলেন, তোমাদের কাউকে যেন তার নিজ পাপ দুআ করা থেকে বাধা না দেয়। কেননা আল্লাহ তাআলা তার সর্বনিকৃষ্ট সৃষ্টি ইবলিসের দুআও কবুল করেছিলেন। সে যখন বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে কেয়ামত পর্যন্ত অবকাশ দিন। আল্লাহ তাআলা তার দুআ কবুল করে বলেছিলেন-
إِنَّكَ مِنَ الْمُنْظَرِينَ.
অর্থ: নিশ্চই তুমি অবকাশ লাভকারীদের একজন।
৮. দুআয় খুব কাকুতি-মিনতি করা। কমপক্ষে তিনবার বলা। দুআ কবুল হওয়াকে মন্থর মনে না করা।
৯. আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে দুআ শুরু করা। নববি বলেন, এমনিভাবে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও গুণগান পাঠ করে রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ পাঠের মাধ্যমেও দুআ শুরু করা এবং এ দিয়েই দুআ শেষ করা।
১০. দুআ কবুল হওয়ার ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি সবচেয়ে জরুরি ও আসল বিষয়। সেটা হল তাওবা করা, জুলুম করে কারও কিছু আত্মসাৎ করে থাকলে তা ফিরিয়ে দেয়া এবং আল্লাহ তাআলার দিকে ধাবিত হওয়া।
তাকদির অবশ্যম্ভাবী হওয়া সত্ত্বেও দুআর ফায়দা
ইমাম গাজালি রহ. বলেন, যদি কেউ প্রশ্ন করে, আল্লাহ প্রদত্ত তাকদির যেহেতু অবশ্যম্ভাবী। সুতরাং দুআ করে কীইবা লাভ হবে? এর উত্তর হল, দুআর মাধ্যমে বালা-মুসিবত দূর হওয়াটাও তাকদিরের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং দুআ হল মুসিবত দূর করা ও আল্লাহর রহমতো লাভের মাধ্যম। ঢাল যেমন তরবারি প্রতিহত করার মাধ্যম। পানি যেমন মাটি থেকে শস্য উদ্গাত হওয়ার কারণ। ঢাল যেমন তীর প্রতিহত করে; ফলে উভয়টি একে অপরের মাধ্যমে প্রতিহত হয়। দুআ ও বালা-মুসিবতের ব্যাপারটিও ঠিক এমন। তাকদিরের ওপর বিশ্বাস করার নাম এ নয় যে, তরবারি ধারণ না করা। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَلْيَأْخُذُوْا حِذْرَهُمْ وَأَسْلِحَتَهُمْ.
অর্থ: তারা যেন (নামাজে) আত্মরক্ষার উপকরণ ও অস্ত্র গ্রহণ করে।
সুতরাং আল্লাহ তাআলা তাকদিরে যেমন অনেক বিষয় রেখে দিয়েছেন, তেমনি সেগুলোর কারণও নির্ধারণ করেছেন।
এতে আমাদের পূর্বোল্লিখিত বিষয়ও থাকতে হবে। অর্থাৎ অন্তরের উপস্থিতি ও অসহায়ত্ব প্রকাশ। এ দুটো বিষয় আল্লাহ তাআলার ইবাদত ও তার মারেফাত লাভের চূড়ান্ত পর্যায়। আল্লাহ তাআলাই সম্মক অবগত।
নিজের সৎকর্মের ওসিলায় আল্লাহর কাছে দুআ করা
(১০৩৭) হজরত ইবনে উমর রাদি. থেকে গুহাবাসীর হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-
انْطَلَقَ ثَلَاثَةُ نَفَرٍ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حَتَّى أَوَاهُمُ الْمَبِيْتُ إِلَى غَارٍ فَدَخَلُوهُ، فَالْحَدَرَتْ صَخْرَةُ مِنَ الْجِبَلِ فَسَدَّتْ عَلَيْهِمُ النَّارُ، فَقَالُوا: إِنَّهُ لَا يُنْجِيْكُمْ مِنْ هَذِهِ الصَّخْرَةِ إِلَّا أَنْ تَدْعُوا اللَّهَ تَعَالَى بِصَالِحٍ أَعْمَالِكُمْ. قالَ رَجُلٌ مِنْهُمْ: اَللَّهُمَّ إِنَّهُ كَانَ لِي أَبَوَانِ شَيْخَانِ كَبِيرَانِ وَكُنْتُ لَا أُغْبِقُ قَبْلَهُمَا أَهْلاً وَلَا مَالاً وَذُكِرَ تَمَامُ الْحَدِيثِ الطَّوِيلِ فِيْهِمْ، وَأَنَّ كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمْ قَالَ فِي صَالِحٍ عَمَلِهِ : اَللَّهُمَّ إِنْ كُنْتُ قَدْ فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَفَرِّجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيْهِ، فَانْفَرِجَ فِي دَعْوَةِ كُلِّ وَاحِدٍ شَيْءٍ مِّنْهَا، وَانْفَرَجَتْ كُلُّهَا عَقْبَ دَعْوَةٍ الثَّالِثِ، فَخَرَجُوا يَمْشُوْنَ.
অর্থ: তোমাদের পূর্বে (বনি ইসরাঈলের যুগে) তিন ব্যক্তি সফরে বের হল। একপর্যায়ে তারা রাত কাটাতে একটি গুহার আশ্রয় নিয়ে তাতে প্রবেশ করল। হঠাৎ করে একটি বড় পাথরখণ্ড পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ে গুহার মুখ বন্ধ করে দিল। তারা তখন বলল, এমন বিপদ থেকে বাঁচার একমাত্র পথ হচ্ছে, তোমরা তোমাদের নেক আমলসমূহকে ওসিলা বানিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ কর। এক ব্যক্তি দুআ করে বলল, হেআল্লাহ! আমার বৃদ্ধ পিতা-মাতা ছিল। আমি তাদের পূর্বে আমার পরিবার ও অধিনস্তদের কাউকে দুধ পান করাতাম না। তারপর তিনি দীর্ঘ হাদিসটি উল্লেখ করেছেন। তিন ব্যক্তির প্রত্যেকেই তাদের নেক আমলকে ওসিলা বানিয়ে আল্লাহর দরবারে এই বলে দুআ করেছে: হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজ কেবল আপনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করে থাকি, তবে আপনি আমাদের থেকে পাথরটি সরিয়ে দিন। তাদের প্রত্যেকের দুআর বদৌলতে পাথরটি একটু একটু করে সরে গেল। তৃতীয়জনের দুআ শেষে পুরো পাথরটি সরে গেল। তখন তারা গুহা থেকে বের হয়ে চলতে লাগল।
আমাদের কাজি হুসাইনসহ আরো অনেকেই সালাতুল ইসতিসকার আলোচনায় একটি বিষয়ে আলোচনা করেছেন। আলোচনার সারকথা হল, যে ব্যক্তিই কোনোও বিপদ অথবা সঙ্কটে পতিত হবে, সে তার নেক আমলের ওসিলায় আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করবে। তারা দলিল হিসাবে উপরে বর্ণিত হাদিসটিই উপস্থাপন করেন। তবে এ ব্যাপারে একটি আপত্তি করে বলা হয়েছে, এই বিষয়ে কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। কেননা এখানে সামান্য হলেও আল্লাহ তাআলার প্রতি নিঃশর্ত মুখাপেক্ষিতা প্রদর্শন তরক করা হচ্ছে। অথচ দুআর মূল কাঙ্ক্ষিত বিষয়ই হল মুখাপেক্ষিতা প্রদর্শন। এই প্রশ্নের তেমন কোনোও গুরুত্ব নেই। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই হাদিস উক্ত তিন ব্যক্তির প্রশংসাকল্পে বর্ণনা করেছেন। আর এই বিষয়টিই রাসুল-কর্তৃক তাদের কাজকে সমর্থন ও সঠিক হিসাবে আখ্যায়িত করার প্রমাণ বহন করে।
দুআর ব্যাপারে পূর্ববর্তীদের অসাধারণ কিছু কাহিনী
দুআ নিয়ে পূর্ববর্তী বুজুর্গদের অনেক কাহিনীই বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে অসাধারণ একটি কাহিনী হল, যা ইমাম আওজায়ি রহ. থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, লোকেরা ইসতিসকার নামাজের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হল। তাদের মাঝে বিলাল বিন সাদ দাঁড়িয়ে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও গুণগান জ্ঞাপন করলেন। এরপর বললেন, হে উপস্থিতবৃন্দ! তোমরা কি তোমাদের গুনাহকে স্বীকার করছ না? তারা বলল, অবশ্যই স্বীকার করছি।
তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আমি আপনাকে বলতে শুনেছি, আপনি বলেছেন-
مَا عَلَى الْمُحْسِنِينَ مِنْ سَبِيلٍ.
অর্থ: সৎকর্মশীলদের ওপর শাস্তির কোনোও বিষয় নেই।
হে আল্লাহ! আমরা আমাদের গুনাহ ও অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছি। সুতরাং আমরা ছাড়া আপনার মাগফেরাত আর কার জন্য হবে? হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমাদের ওপর রহম করুন। আমাদেরকে পানি দান করুন। এই বলে তিনি হাত উঠালেন। লোকেরাও তার সঙ্গে হাত উঠাল। একটু পরই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হল।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতেই কবি বলেন: (আংশিক)
أَنَا الْمُذْنِبُ الْخَطَّاءُ وَالْعَفْوُ وَاسِعٌ ، وَلَوْ لَمْ يَكُنْ ذَنْبُ لَمَا وَقَعَ الْعَفْوُ.
অর্থ: আমি পাপী, আমি গুনাহগার। তবে আপনার ক্ষমা তো ব্যাপক। যদি কোনোও গুনাহই না থাকত, তবে তো ক্ষমার কোনোও বিষয়ই থাকত না।
দুআর সময় দুই হাত উঠানো অতঃপর চেহারায় মোছা
(১০৩৮) হজরত উমর বিন খাত্তাব রাদি. থেকে বর্ণিত-
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا رَفَعَ يَدَيْهِ فِي الدُّعَاءِ لَمْ يَحُطَّهُمَا حَتَّى يَمْسَحَ بِهِمَا وَجْهَهُ .
অর্থ: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআয় যখন হাত উঠাতেন, তখন হাত দ্বারা চেহারা মাসেহ না করে হাত নামাতেন না。
(১০৩৯) সুনানে আবু দাউদে হজরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাদি. এর সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে উভয় হাদিসের সনদই দুর্বল।
দুআর পুনরাবৃত্তি মুস্তাহাব হওয়া
(১০৪০) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُعْجِبُهُ أَنْ يَدْعُوَ ثَلَاثًا وَيَسْتَغْفِرَ ثَلَاثًا.
অর্থ: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার করে দুআ ও ইস্তিগফার করা পছন্দ করতেন。
দু'আয় অন্তরের উপস্থিতি রাখার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধকরণ
দুআর মূল উদ্দেশ্য হল, অন্তরের উপস্থিতি যেমনটি পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে অসংখ্য-অগণিত প্রমাণ রয়েছে এবং এ ব্যাপারে জ্ঞান উল্লেখের চেয়েও স্পষ্ট। তবে আমরা বরকতস্বরূপ কেবল একটি হাদিস উল্লেখ করছি।
(১০৪১) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
ادْعُوا اللَّهَ وَأَنْتُمْ مُوْقِنُوْنَ بِالْإِجَابَةِ، وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ لَا يَسْتَجِيْبُ دُعَاءً مِنْ قَلْبٍ غَافِلٍ لَاهٍ.
অর্থ: তোমরা দুআ কবুলের ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস রেখে আল্লাহর কাছে দুআ কর। জেনে রাখ, আল্লাহ তাআলা কোনোও উদাসীন ও অমনোযোগী অন্তরের দুআ কবুল করেন না। -হাদিসের সনদ দুর্বল。
অনুপস্থিতদের জন্য দুআ করার মর্যাদা
আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَالَّذِينَ جَاءُوا مِنْ بَعْدِهِمْ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيْمَانِ.
অর্থ: তাদের পরবর্তী যারা এসেছে তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে এবং আমাদের ঐ সকল ভাইদেরকে ক্ষমা করুন, যারা ঈমান আনয়নে আমাদের অগ্রবর্তী হয়েছে。
অপর আয়াতে বলেন-
وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ .
অর্থ: আপনি আপনার জন্য ও মুমিন নর-নারীর জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করুন。
আল্লাহ তাআলা ইবরাহিম আ. সম্পর্কে সংবাদ দিয়ে বলেন-
رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ.
অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং মুমিনদেরকে হিসাব কায়েম হওয়ার দিন ক্ষমা করুন。
হজরত নূহ আ. সম্পর্কে সংবাদ দিয়ে বলেন-
رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِمَنْ دَخَلَ بَيْتِيَ مُؤْمِنًا وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ .
অর্থ: হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, মুমিন হয়ে যে আমার ঘরে প্রবেশ করেছে তাকে এবং সকল মুমিন নর-নারীকে ক্ষমা করুন。
(১০৪২) হজরত আবু দারদা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন-
مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يَدْعُوْ لِأَخِيهِ بِظَهْرِ الْغَيْبِ إِلَّا قَالَ الْمَلَكُ : وَلَكَ بِمِثْلٍ. وَفِي رِوَايَةٍ: دَعْوَةُ الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ لِأَخِيهِ بِظَهْرِ الْغَيْبِ مُسْتَجَابَةُ، عِنْدَ رَأْسِهِ مَلَكُ مُوَكَّلُ، كُلَّمَا دَعَا لِأَخِيهِ بِخَيْرٍ قَالَ الْمَلَكُ الْمُوَكَّلُ بِهِ : آمِيْنَ، وَلَكَ بِمِثْلٍ.
অর্থ: যে ব্যক্তি অপর মুসলমান ভাইয়ের অনুপস্থিতে তার জন্য দুআ করে, তখন ফেরেশতা তার সঙ্গে বলেন, তোমার জন্যও অনুরূপ বিষয় হোক। মুসলিম শরিফেই আবু দারদা রাদি. থেকে আরেকটি বর্ণনায় এসেছে- রাসুল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এক মুসলমান-কর্তৃক অপর অনুপস্থিত মুসলমান ভাইয়ের জন্য করা দুআ কবুল করা হয়। তার ওপর অর্পিত একজন ফেরেশতা রয়েছেন, যখনই সে তার ভাইয়ের জন্য কল্যাণের দুআ করে, তার ওপর অর্পিত ফেরেশতা বলেন, আমিন। তোমার জন্যও অনুরূপ বিষয় হোক。
(১০৪৩) হজরত ইবনে উমর রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِنَّ أَسْرَعَ الدُّعَاءِ إِجَابَةً دَعْوَةُ غَائِبٍ لِغَائِبِ.
অর্থ: এক অপরিচিত ব্যক্তির জন্য অন্য অপরিচিত ব্যক্তির দুআ সবচেয়ে দ্রুত কবুল হয়। -ইমাম তিরমিজি রহ. হাদিসটিকে দুর্বল সাব্যস্ত করেছেন。
অনুগ্রহকারীর জন্য দুআ এবং দুআর ধরন
এই অধ্যায়ে অনেক বিষয়ই রয়েছে, ইতিপূর্বে যথাস্থানে যার আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম বিষয় এটি:
(১০৪৪) হজরত উসামা বিন জায়েদ রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
مَنْ صُنِعَ إِلَيْهِ مَعْرُوْفٌ، فَقَالَ لِفَاعِلِهِ : جَزَاكَ اللَّهُ خَيْرًا ، فَقَدْ أَبْلَغَ فِي الثَّنَاءِ.
অর্থ: কারো জন্য কোনো উপকার করা হল এবং সে উপকারকারীকে “জাজাকাল্লাহু খায়রান” (আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন) বলে দুআ দিল, সে যেন (উপকারকারীর) পূর্ণাঙ্গরূপে প্রশংসা করল। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান সহিহ。
সামান্য পূর্বেই (অর্থাৎ জিহ্বা সংবরণ অধ্যায়ে) সহিহ হাদিসে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস বর্ণনা করেছি, তিনি বলেছেন-
وَمَنْ صَنَعَ إِلَيْكُمْ مَعْرُوفًا فَكَافِرُوهُ، فَإِنْ لَمْ تَجِدُوا مَا تُكَافِيُونَه فَادْعُوْا لَهُ حَتَّى تَرَوْا أَنَّكُمْ قَدْ كَافَأْتُمُوهُ.
অর্থ: কেউ যদি তোমাদের কোনোও উপকার করে, তবে তোমরাও তার অনুরূপ উপকার কর। যদি তোমরা অনুরূপ উপকার করার সামর্থ্য না রাখ, তবে তোমরা তার জন্য দুআ করে দাও, যাতে করে তোমাদের মনে হয় যে, তোমরাও তার সঙ্গে অনুরূপ আচরণ করেছ。
বড়দের থেকে দুআ নেয়া, যদিও দুআপ্রার্থী প্রার্থিত ব্যক্তির চেয়ে উত্তম হয়। ফজিলতপূর্ণ স্থানসমূহে দুআ করা
এ বিষয়েও অগণিত হাদিস রয়েছে। এটি একটি সর্বসম্মত বিষয়। তবে এ বিষয়ে সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য দলিল এটি-
(১০৪৫) হজরত উমর বিন খাত্তাব রাদি. থেকে বর্ণিত-
اسْتَأْذَنْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْعُمْرَةِ فَأَذِنَ لِي وَقَالَ : لَا تَنْسَنَا يَا أُخَيَّ مِنْ دُعَائِكَ. فَقَالَ كَلِمَةً مَا يَسُرُّنِي أَنَّ لِي بِهَا الدُّنْيَا وَفِي رِوَايَةٍ : أَشْرِكْنَا يَا أُخَيَّ فِي دُعَائِكَ.
অর্থ: আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উমরার অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাকে অনুমতি দিয়ে বললেন, ভাই আমার! আমাদের জন্য দুআ করতে ভুলবেন না। পরবর্তীতে হজরত উমর রাদি. বলেন, রাসূলের এই একটি শব্দ আমাকে এতেঠটা আনন্দ দিয়েছে যে, এর বিনিময়ে সমগ্র দুনিয়ার সম্পদও আমাকে এতটা আনন্দিত করতে পারত না। অপর এক রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ওহে ভাই আমার! তোমার দুআয় আমাদেরকেও শরিক রাখবেন। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, এই হাদিসটি হাসান সহিহ। হাদিসটি আমরা 'আজকারুল মুসাফির' অধ্যায়ে বর্ণনা করেছি。
নিজের জন্য কিংবা নিজের সন্তান, সেবক, সম্পদ ইত্যাদির জন্য বদদুআ করা নিষেধ
(১০৪৬) হজরত জাবের রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
لَا تَدْعُوْا عَلَى أَنْفُسِكُمْ، وَلَا تَدْعُوْا عَلَى أَوْلَادِكُمْ، وَلَا تَدْعُوْا عَلَى خَدَمِكُمْ، وَلَا تَدْعُوْا عَلَى أَمْوَالِكُمْ، لَا تُوَافِقُوْا مِنَ اللَّهِ، تَبَارَكَ وَتَعَالَى سَاعَةَ نَيْلٍ فِيْهَا عَطَاءُ فَيَسْتَجِيْبَ لَكُمْ .
অর্থ: তোমরা নিজেদেরকে বদদুআ করবে না। সন্তানদেরকে বদদুআ করবে না। খাদেমদের বদদুআ করবে না। সম্পদের ওপরও বদদুআ করবে না। কেননা, হতে পারে সেটা এমন এক সময় যখন (আল্লাহর পক্ষ থেকে) দান করা হয়; ফলে তোমাদের সেই বদদুআ কবুল হয়ে যাবে。
ইমাম মুসলিম রহ. এই হাদিসটি তার 'সহিহ'-এর শেষের দিকে বর্ণনা করেছেন। হাদিসের ভাষ্য হল-
لَا تَدْعُوْا عَلَى أَنْفُسِكُمْ، وَلَا تَدْعُوْا عَلَى أَوْلَادِكُمْ، وَلَا تَدْعُوْا عَلَى أَمْوَالِكُمْ ؛ لَا تُوَافِقُوْا مِنَ اللهِ، سَاعَةً يُسْأَلُ فِيْهَا عَطَاءُ، فَيَسْتَجِيبُ لَكُمْ.
অর্থ: তোমরা নিজেদেরকে বদদুআ করবে না, নিজেদের সন্তানদেরকে বদদুআ করবে না, খাদেমদের বদদুআ করবে না এবং সম্পদের ওপরও বদদুআ করবে না। কেননা, হতে পারে সেটা এমন এক সময় যখন কিছু প্রার্থনা করলে কবুল হয়ে যায়। ফলে তোমাদের এই বদদুআও কবুল হয়ে যাবে。
মুসলমানের দুআ হয়ত তার কাঙ্ক্ষিত বস্তু প্রদানের মাধ্যমে কবুল হয় কিংবা ভিন্ন কিছুর মাধ্যমে মুতরাং দুআ কবুলের ব্যাপারে তাড়াহুড়ো না করা উচিত।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ.
অর্থ: হে নবি, আমার বান্দাগণ যখন আপনার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, তখন (আপনি তাদেরকে বলুন:) আমি এতটা নিকটবর্তী যে, কেউ যখন আমাকে ডাকে আমি তার ডাকে সাড়া দেই。
অন্য আয়াতে বলেন-
ادْعُوْنِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ .
অর্থ: তোমরা আমাকে ডাক; আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব。
(১০৪৭) হজরত উবাদা বিন সামিত রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : مَا عَلَى الْأَرْضِ مُسْلِمُ يَدْعُو اللَّهَ بِدَعْوَةٍ إِلَّا آتَاهُ اللهُ إِيَّاهَا، أَوْ صَرَفَ عَنْهُ مِنَ السُّوْءِ مِثْلَهَا مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيْعَةِ رَحِمٍ، فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ : إِذَنْ نُكْثِرَ، قَالَ : اللَّهُ أَكْثَرُ.
অর্থ: যদি জমিনের বুকে কোনো মুসলমান আল্লাহ তাআলার কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তবে আল্লাহ তাআলা হয়ত তার কাঙ্ক্ষিত বিষয় দান করেন। অথবা এর বিনিময়ে কোনো মন্দ পরিণام থেকে তাকে বাঁচিয়ে রাখেন। যদি সে কোনো গুনাহ অথবা আত্মীয়তা ছিন্নের দুআ না করে থাকে। এক ব্যক্তি বলে ওঠল, তবে তো আমরা বেশি বেশি দুআ করব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাআলাও বেশি বেশি দান করবেন। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান সহিহ।
ইমাম হাকেম আবু আবদুল্লাহ রহ. তার 'আলমুসতাদরাক আলাস সহিহাইন' কিতাবে হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদি. থেকে একই হাদিস বর্ণনা করেছেন। সেই হাদিসে অতিরিক্ত এও আছে- অথবা এই দুআর সওয়াব আল্লাহ তাআলা তার জন্য আখেরাতের জন্য জমিয়ে রাখবেন。
(১০৪৮) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
يُسْتَجَابُ لِأَحَدِكُمْ مَالَمْ يَعْجَلْ فَيَقُوْلَ: قَدْ دَعَوْتُ فَلَمْ يُسْتَجَبْ لِي. وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ.
অর্থ: তোমাদের প্রত্যেকের দুআ কবুল করা হয় যতক্ষণ সে তাড়াহুড়ো না করে এবং না বলে, আমি তো দুআ করেছি; অথচ এখনও কবুল হল না। -ইমাম তিরমিজি রহ. হাদিসটিকে হাসান সহিহ বলেছেন。
টিকাঃ
১৫৩২. সুরা গাফির: ৬০।
১৫৩৩. সুরা আরাফ: ৫৫।
১৫৩৪. সুরা বাকারা: ২৮৬। তরজমা: হেদায়াতুল কুরআন ১ম খণ্ড থেকে।
১৫৩৫. নিসা: ১০২।
১৫৩৬. সহিহ বুখারি: ২২৭২, সহিহ মুসলিম: ২৭৪৩।
১৫৩৭. জামে তিরমিজি: ৩৩৮৬।
১৫৩৮. আবু দাউদ: ১৪৮৫, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৮৬৬, সুনানে বাইহাকি ২/২১২।
১৫৩৯. আবু দাউদ: ১৫২৪, আমাল: ৪৫৭, নাসাঈ, মু. আহমাদ ১/৩৯৪।
১৫৪০. জামে তিরমিজি: ৩৪৭৪, মু. ঘাকেম ১/৪৯৩।
১৫৪১. সুরা হাশর: ১০।
১৫৪২. সুরা মুহাম্মাদ: ১৯।
১৫৪৩. সুরা ইবরাহিম: ৪১।
১৫৪৪. সুরা নুহ: ২৮।
১৫৪৫. সহিহ মুসলিম: ২৭৩২।
১৫৪৬. সহিহ মুসলিম: ২৭৩৩, সুনানে আবু দাউদ: ১৫৩৪।
১৫৪৭. সুনানে আবু দাউদ: ১৫৩৫, সুনানে তিরমিজি: ১৯৮০।
১৫৪৮. সুনানে তিরমিজি: ২০৩৫।
১৫৪৯. সুনানে আবু দাউদ: ১৬৭২।
১৫৫০. সুনানে আবু দাউদ: ১৪৯৮, সুনানে তিরমিজি: ৩৫৬২।
১৫৫১. সুনানে আবু দাউদ: ১৫৩২।
১৫৫২. সহিহ মুসলিম: ৩০০৯।
১৫৫৩. সুরা বাকারা: ১৮৬।
১৫৫৪. সুরা গাফির: ৬০।
১৫৫৫. সুনানে তিরমিজি: ৩৫৮৩।
১৫৫৬. মুসতাদরাকে হাকেম ১/৪৯৩।
১৫৫৭. সহিহ বুখারি: ৬৩৪০, সহিহ মুসলিম: ২৭৩৫, সুনানে তিরমিজি ৫/৪৬৪।
📄 তাকদির অবধার্য হওয়া সত্ত্বেও দুআর ফায়দা
তাকদির অবশ্যম্ভাবী হওয়া সত্ত্বেও দুআর ফায়দা
ইমাম গাজালি রহ. বলেন, যদি কেউ প্রশ্ন করে, আল্লাহ প্রদত্ত তাকদির যেহেতু অবশ্যম্ভাবী। সুতরাং দুআ করে কীইবা লাভ হবে? এর উত্তর হল, দুআর মাধ্যমে বালা-মুসিবত দূর হওয়াটাও তাকদিরের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং দুআ হল মুসিবত দূর করা ও আল্লাহর রহমতো লাভের মাধ্যম। ঢাল যেমন তরবারি প্রতিহত করার মাধ্যম। পানি যেমন মাটি থেকে শস্য উদ্গাত হওয়ার কারণ। ঢাল যেমন তীর প্রতিহত করে; ফলে উভয়টি একে অপরের মাধ্যমে প্রতিহত হয়। দুআ ও বালা-মুসিবতের ব্যাপারটিও ঠিক এমন। তাকদিরের ওপর বিশ্বাস করার নাম এ নয় যে, তরবারি ধারণ না করা। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَلْيَأْخُذُوْا حِذْرَهُمْ وَأَسْلِحَتَهُمْ.
অর্থ: তারা যেন (নামাজে) আত্মরক্ষার উপকরণ ও অস্ত্র গ্রহণ করে。
সুতরাং আল্লাহ তাআলা তাকদিরে যেমন অনেক বিষয় রেখে দিয়েছেন, তেমনি সেগুলোর কারণও নির্ধারণ করেছেন।
এতে আমাদের পূর্বোল্লিখিত বিষয়ও থাকতে হবে। অর্থাৎ অন্তরের উপস্থিতি ও অসহায়ত্ব প্রকাশ। এ দুটো বিষয় আল্লাহ তাআলার ইবাদত ও তার মারেফাত লাভের চূড়ান্ত পর্যায়। আল্লাহ তাআলাই সম্মক অবগত।
টিকাঃ
১৫৩৫. নিসা: ১০২।
📄 নিজের সৎকর্মের ওসিলায় আল্লাহর কাছে দুআ করা
নিজের সৎকর্মের ওসিলায় আল্লাহর কাছে দুআ করা
(১০৩৭) হজরত ইবনে উমর রাদি. থেকে গুহাবাসীর হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-
انْطَلَقَ ثَلَاثَةُ نَفَرٍ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حَتَّى أَوَاهُمُ الْمَبِيْتُ إِلَى غَارٍ فَدَخَلُوهُ، فَالْحَدَرَتْ صَخْرَةُ مِنَ الْجِبَلِ فَسَدَّتْ عَلَيْهِمُ النَّارُ، فَقَالُوا: إِنَّهُ لَا يُنْجِيْكُمْ مِنْ هَذِهِ الصَّخْرَةِ إِلَّا أَنْ تَدْعُوا اللَّهَ تَعَالَى بِصَالِحٍ أَعْمَالِكُمْ. قالَ رَجُلٌ مِنْهُمْ: اَللَّهُمَّ إِنَّهُ كَانَ لِي أَبَوَانِ شَيْخَانِ كَبِيرَانِ وَكُنْتُ لَا أُغْبِقُ قَبْلَهُمَا أَهْلاً وَلَا مَالاً وَذُكِرَ تَمَامُ الْحَدِيثِ الطَّوِيلِ فِيْهِمْ، وَأَنَّ كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمْ قَالَ فِي صَالِحٍ عَمَلِهِ : اَللَّهُمَّ إِنْ كُنْتُ قَدْ فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَفَرِّجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيْهِ، فَانْفَرِجَ فِي دَعْوَةِ كُلِّ وَاحِدٍ شَيْءٍ مِّنْهَا، وَانْفَرَجَتْ كُلُّهَا عَقْبَ دَعْوَةٍ الثَّالِثِ، فَخَرَجُوا يَمْشُوْنَ.
অর্থ: তোমাদের পূর্বে (বনি ইসরাঈলের যুগে) তিন ব্যক্তি সফরে বের হল। একপর্যায়ে তারা রাত কাটাতে একটি গুহার আশ্রয় নিয়ে তাতে প্রবেশ করল। হঠাৎ করে একটি বড় পাথরখণ্ড পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ে গুহার মুখ বন্ধ করে দিল। তারা তখন বলল, এমন বিপদ থেকে বাঁচার একমাত্র পথ হচ্ছে, তোমরা তোমাদের নেক আমলসমূহকে ওসিলা বানিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ কর। এক ব্যক্তি দুআ করে বলল, হেআল্লাহ! আমার বৃদ্ধ পিতা-মাতা ছিল। আমি তাদের পূর্বে আমার পরিবার ও অধিনস্তদের কাউকে দুধ পান করাতাম না। তারপর তিনি দীর্ঘ হাদিসটি উল্লেখ করেছেন। তিন ব্যক্তির প্রত্যেকেই তাদের নেক আমলকে ওসিলা বানিয়ে আল্লাহর দরবারে এই বলে দুআ করেছে: হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজ কেবল আপনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করে থাকি, তবে আপনি আমাদের থেকে পাথরটি সরিয়ে দিন। তাদের প্রত্যেকের দুআর বদৌলতে পাথরটি একটু একটু করে সরে গেল। তৃতীয়জনের দুআ শেষে পুরো পাথরটি সরে গেল। তখন তারা গুহা থেকে বের হয়ে চলতে লাগল।
আমাদের কাজি হুসাইনসহ আরো অনেকেই সালাতুল ইসতিসকার আলোচনায় একটি বিষয়ে আলোচনা করেছেন। আলোচনার সারকথা হল, যে ব্যক্তিই কোনোও বিপদ অথবা সঙ্কটে পতিত হবে, সে তার নেক আমলের ওসিলায় আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করবে। তারা দলিল হিসাবে উপরে বর্ণিত হাদিসটিই উপস্থাপন করেন। তবে এ ব্যাপারে একটি আপত্তি করে বলা হয়েছে, এই বিষয়ে কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। কেননা এখানে সামান্য হলেও আল্লাহ তাআলার প্রতি নিঃশর্ত মুখাপেক্ষিতা প্রদর্শন তরক করা হচ্ছে। অথচ দুআর মূল কাঙ্ক্ষিত বিষয়ই হল মুখাপেক্ষিতা প্রদর্শন। এই প্রশ্নের তেমন কোনোও গুরুত্ব নেই। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই হাদিস উক্ত তিন ব্যক্তির প্রশংসাকল্পে বর্ণনা করেছেন। আর এই বিষয়টিই রাসুল-কর্তৃক তাদের কাজকে সমর্থন ও সঠিক হিসাবে আখ্যায়িত করার প্রমাণ বহন করে।
দুআর ব্যাপারে পূর্ববর্তীদের অসাধারণ কিছু কাহিনী
দুআ নিয়ে পূর্ববর্তী বুজুর্গদের অনেক কাহিনীই বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে অসাধারণ একটি কাহিনী হল, যা ইমাম আওজায়ি রহ. থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, লোকেরা ইসতিসকার নামাজের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হল। তাদের মাঝে বিলাল বিন সাদ দাঁড়িয়ে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও গুণগান জ্ঞাপন করলেন। এরপর বললেন, হে উপস্থিতবৃন্দ! তোমরা কি তোমাদের গুনাহকে স্বীকার করছ না? তারা বলল, অবশ্যই স্বীকার করছি।
তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আমি আপনাকে বলতে শুনেছি, আপনি বলেছেন-
مَا عَلَى الْمُحْسِنِينَ مِنْ سَبِيلٍ.
অর্থ: সৎকর্মশীলদের ওপর শাস্তির কোনোও বিষয় নেই।
হে আল্লাহ! আমরা আমাদের গুনাহ ও অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছি। সুতরাং আমরা ছাড়া আপনার মাগফেরাত আর কার জন্য হবে? হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমাদের ওপর রহম করুন। আমাদেরকে পানি দান করুন। এই বলে তিনি হাত উঠালেন। লোকেরাও তার সঙ্গে হাত উঠাল। একটু পরই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হল।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতেই কবি বলেন: (আংশিক)
أَنَا الْمُذْنِبُ الْخَطَّاءُ وَالْعَفْوُ وَاسِعٌ ، وَلَوْ لَمْ يَكُنْ ذَنْبُ لَمَا وَقَعَ الْعَفْوُ.
অর্থ: আমি পাপী, আমি গুনাহগার। তবে আপনার ক্ষমা তো ব্যাপক। যদি কোনোও গুনাহই না থাকত, তবে তো ক্ষমার কোনোও বিষয়ই থাকত না।
টিকাঃ
১৫৩৬. সহিহ বুখারি: ২২৭২, সহিহ মুসলিম: ২৭৪৩।
📄 দুআর সময় দুই হাত উঠানো
দুআর সময় দুই হাত উঠানো অতঃপর চেহারায় মোছা
(১০৩৮) হজরত উমর বিন খাত্তাব রাদি. থেকে বর্ণিত-
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا رَفَعَ يَدَيْهِ فِي الدُّعَاءِ لَمْ يَحُطَّهُمَا حَتَّى يَمْسَحَ بِهِمَا وَجْهَهُ .
অর্থ: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআয় যখন হাত উঠাতেন, তখন হাত দ্বারা চেহারা মাসেহ না করে হাত নামাতেন না。
(১০৩৯) সুনানে আবু দাউদে হজরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাদি. এর সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে উভয় হাদিসের সনদই দুর্বল।
দুআর পুনরাবৃত্তি মুস্তাহাব হওয়া
(১০৪০) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُعْجِبُهُ أَنْ يَدْعُوَ ثَلَاثًا وَيَسْتَغْفِرَ ثَلَاثًا.
অর্থ: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার করে দুআ ও ইস্তিগফার করা পছন্দ করতেন。
দু'আয় অন্তরের উপস্থিতি রাখার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধকরণ
দুআর মূল উদ্দেশ্য হল, অন্তরের উপস্থিতি যেমনটি পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে অসংখ্য-অগণিত প্রমাণ রয়েছে এবং এ ব্যাপারে জ্ঞান উল্লেখের চেয়েও স্পষ্ট। তবে আমরা বরকতস্বরূপ কেবল একটি হাদিস উল্লেখ করছি।
(১০৪১) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
ادْعُوا اللَّهَ وَأَنْتُمْ مُوْقِنُوْنَ بِالْإِجَابَةِ، وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ لَا يَسْتَجِيْبُ دُعَاءً مِنْ قَلْبٍ غَافِلٍ لَاهٍ.
অর্থ: তোমরা দুআ কবুলের ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস রেখে আল্লাহর কাছে দুআ কর। জেনে রাখ, আল্লাহ তাআলা কোনোও উদাসীন ও অমনোযোগী অন্তরের দুআ কবুল করেন না। -হাদিসের সনদ দুর্বল。
টিকাঃ
১৫৩৭. জামে তিরমিজি: ৩৩৮৬।
১৫৩৮. আবু দাউদ: ১৪৮৫, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৮৬৬, সুনানে বাইহাকি ২/২১২।
১৫৩৯. আবু দাউদ: ১৫২৪, আমাল: ৪৫৭, নাসাঈ, মু. আহমাদ ১/৩৯৪।
১৫৪০. জামে তিরমিজি: ৩৪৭৪, মু. ঘাকেম ১/৪৯৩।