📘 আল আযকার > 📄 জামিউদ দাওয়াআত বা সমন্বয়কারী দুআসমূহ

📄 জামিউদ দাওয়াআত বা সমন্বয়কারী দুআসমূহ


অধ্যায়- ২০
জামিউদ দাআওয়াত বা সমন্বয়কারী দুআসমূহ
সর্বাবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ মুস্তাহাব দুআসমূহ
জেনে রাখুন, এই অধ্যায় দ্বারা আমাদের উদ্দেশ্য সর্বাবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ মুস্তাহাব দুআসমূহের আলোচনা করা, বিশেষ কোনো অবস্থা বা সময়ের সাথে বিশিষ্টকরণ ব্যতিরেকে।
জেনে রাখুন, এই অধ্যায় অনেক প্রশস্ত। দশমাংশও আয়ত্তে আনয়ন ও খতিয়ে দেখা অসম্ভব। তবুও আমি গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোর দিকে ইঙ্গিত করব। প্রথমতঃ কুরআনে বর্ণিত দুআসমূহ, যা আল্লাহ পাক আমবিয়া ও সালেহিনদের আলোচনায় উল্লেখ করেছেন। এগুলো অনেক ও প্রসিদ্ধ। দ্বিতীয়তঃ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত যে, তিনি এটা করেছেন অথবা অন্যকে শিখিয়েছেন। এই প্রকারও অগণিত। এর কিয়দংশ পূর্বের অধ্যায়সমূহে অতীত হয়েছে। আমি এখানে বিশুদ্ধ দুআর একাংশ নকল করছি, যা কুরআনে বর্ণিত দুআ ও পূর্বেকার দুআসমূহের সাথে সংযুক্ত করা হবে।
(৯৯৪) হজরত নুমান বিন বশির রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ.
অর্থ: দুআও একটি ইবাদত। – ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি হাসান সহিহ।
(৯৯৫) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত-
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْتَحِبُّ الْجَوَامِعَ مِنَ الدُّعَاءِ، وَيَدَعُ مَا سِوَى ذَلِكَ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমন্বয়কারী দুআসমূহ পড়তে পছন্দ করতেন এবং বাকিগুলো ত্যাগ করতেন。
(৯৯৬) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَيْسَ شَيْءٌ أَكْرَمَ عَلَى اللَّهِ، تَعَالَى مِنَ الدُّعَاءِ.
অর্থ: আল্লাহর কাছে দুআর চেয়ে অধিক সম্মানিত অন্য কোনো বস্তু নেই。
(৯৯৭) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَسْتَجِيْبَ اللهُ لَهُ عِنْدَ الشَّدَائِدِ وَالْكَرْبِ، فَلْيُكْثِرِ الدُّعَاءَ فِي الرخاء.
অর্থ: যে ব্যক্তি বিপদাপদে আল্লাহ-কর্তৃক দুআ কবুল করাকে পছন্দ করে, সে যেন সুখে বেশি বেশি দুআ করে。
(৯৯৮) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত-
كَانَ أَكْثَرُ دُعَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : اللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً، وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً، وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ. وَكَانَ أَنَسُ إِذَا أَرَادَ أَنْ يَدْعُوَ بِدَعْوَةٍ دَعَا بِهَا، فَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَدْعُوَ بِدُعَاءِ دَعَا بِهَا فِيْهِ.
অর্থ: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অধিকাংশ দুআ ছিল-
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.
উচ্চারণ: রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতান, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতান, ওয়া কিনা আজাবান্নার।
অর্থ: হে পরওয়ারদিগার, আমাদেরকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাদেরকে দোযখের আযাব থেকে রক্ষা কর। -ইমাম মুসলিম তার বর্ণনায় অতিরিক্ত এও নকল করেছেন যে, বর্ণনাকারী বলেন- হজরত আনাস রাদি. কোনো দাওয়াতে দুআ করলে এই দুআ করতেন। কোনো দুআ করতে চাইলেও এই দুআ করতেন。
(৯৯৯) হজরত ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুআ করতেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالتَّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنى.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকাল হুদা ওয়াতুকা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে হেদায়াত, তাকওয়া, পবিত্রতা ও প্রাচুর্য কামনা করি。
(১০০০) হজরত তারেক বিন আশয়াম আশজাঈ রাদি. থেকে বর্ণিত-
كَانَ الرَّجُلُ إِذَا أَسْلَمَ عَلَّمَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّلَاةَ، ثُمَّ أَمَرَهُ أَنْ يَدْعُوَ بِهَؤُلَاءِ الْكَلِمَاتِ : اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي، وَعَافِنِي، وَارْزُقْنِي. وفي رواية لمسلم عن طارق : أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَتَاهُ رَجُلٌ، فَقَالَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ، كَيْفَ أَقُولُ حِينَ أَسْأَلُ رَبِّي ؟ قَالَ : قُلِ : اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَعَافِنِي، وَارْزُقْنِي - وَيَجْمَعُ أَصَابِعَهُ إِلَّا الْإِبْهَامَ - فَإِنَّ هَؤُلَاءِ تَجْمَعُ لَكَ دُنْيَاكَ وَآخِرَتَكَ.
অর্থ: কোনো ব্যক্তি মুসলমান হলে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আগে নামাজ শিক্ষা দিতেন, অতঃপর এই দুআ পাঠ করতে নির্দেশ দিতেন-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي وَعَافِنِي وَارْزُقْنِي.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগ ফিরলি ওয়ার হামনি ওয়াহ দিনি ওয়া আফিনি ওয়ারযুকনি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমার প্রতি দয়া করুন। আমাকে পথপ্রদর্শন করুন। আমাকে আরোগ্য দান করুন। আমাকে রিজিক দান করুন। -সহিহ মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় হজরত তারেক থেকে বর্ণিত আছে- নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আল্লাহর কাছে চাইলে কিভাবে চাইব? নবিজি বললেন, তুমি বলবে-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي وَعَافِنِي وَارْزُقْنِي
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগ ফিরলি ওয়ার হামনি ওয়াহ দিনি ওয়া আফিনি ওয়ারযুকনি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমার প্রতি দয়া করুন। আমাকে পথপ্রদর্শন করুন। আমাকে আরোগ্য দান করুন। আমাকে রিজিক দান করুন। -কেননা এই বাক্যগুলো তোমার জন্য ইহকাল-পরকাল একত্রিত করে দিবে。
(১০০১) হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুআ করতেন-
اللَّهُمَّ مُصَرِّفَ الْقُلُوْبِ صَرِّفْ قُلُوْبَنَا عَلَى طَاعَتِكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা মুসাররিফাল কুলুবি সাররিফ কুলুবানা আলা তাআতিক।
অর্থ: হে অন্তর পরিবর্তনকারী আল্লাহ, আমাদের অন্তরসমূহ আপনার আনুগত্যে নিয়োজিত করুন।
(১০০২) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. এর সূত্রে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত-
تَعَوَّذُوْا بِاللَّهِ، مِنْ جَهْدِ الْبَلَاءِ وَدَرَكِ الشَّقَاءِ ، وَسُوءِ الْقَضَاءِ وَشَمَائَةِ الْأَعْدَاءِ.
অর্থ: তোমরা আল্লাহর কাছে বালা-মুসিবতের কঠোরতা, দুর্ভাগ্যে নিঃপতিত হওয়া, নিয়তির অশুভ পরিণাম এবং দুশমনের খুশি হওয়া থেকে পানাহ চাও。
(১০০৩) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُبِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْجُبْنِ وَالْهَرَمِ وَالْبُخْلِ، وَأَعُوْذُبِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَأَعُوْذُبِكَ مِنْ فَتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল আজজি ওয়াল কাসাল, ওয়াল জুবনি ওয়াল হারামি ওয়াল বুখল, ওয়া আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবরি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহয়া ওয়াল মামাত।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি অক্ষমতা ও অলসতা থেকে আপনার আশ্রয় কামনা করি, কাপুরুষতা, বার্ধক্য ও কৃপণতা থেকে। কবররের আজাব থেকে আপনার আশ্রয় কামনা করি এবং আশ্রয় কামনা করি জীবন-মরণের ফিতনা থেকে。
অন্য বর্ণনায় আছে-
وَضَلَعِ الدَّيْنِ، وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ.
অর্থ: ঋণের বোঝা থেকে এবং মানুষের কঠোরতা থেকে。
(১০০৪) হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর আস রাদি. হজরত আবু বকর সিদ্দিক রাদি. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছিলেন-
أَنَّهُ قَالَ لِرَسُوْلِ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : عَلَّمْنِي دُعَاءً أَدْعُوْ بِهِ فِي صَلَاتِي قَالَ : " قُلِ : اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا، وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِي إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ.
অর্থ: আমাকে একটি দুআ শিক্ষা দিন যা নামাজে পাঠ করব। নবিজি বললেন, বলুন-
اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا، وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِي إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতো নাফসি জুলমান কাসিরা, ওয়ালা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আনতা, ফাগফিরলি মাগফিরাতান মিন ইনদিকা ওয়ার হামনি, ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আমার নিজের ওপর অনেক বেশি জুলুম করে ফেলেছি, আর আপনি ছাড়া অন্য কেউ পাপ ক্ষমা করবে না। অতএব, আপনার পক্ষ থেকে আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার ওপর করুণা করুন। নিশ্চয়ই আপনিই বড় ক্ষমাশীল ও পরম দয়াপরবশ。
ইমাম নববি বলেন, কোনো বর্ণনায় (كَبِيرًا) শব্দ এসেছে। নামাজের আজকার অধ্যায়ে আমরা এর কথা উল্লেখ করেছি। অতএব, দুআপ্রার্থীকে উভয়টি একত্র করে বলা উচিত- كَثِيرًا كَبِيرًا (কাসিরান কাবিরা: অনেক বড় ও বেশি জুলুম...) এই দুআ যদিও নামাজে পড়ার বিষয়ে নির্দেশ হয়েছে, এটা অত্যন্ত সুন্দর দামী ও বিশুদ্ধ একটি দুআ। সর্বত্র পাঠ করা মুস্তাহাব। অন্য বর্ণনায় আছে- আমি এই দুআ ঘরেও পাঠ করি。
(১০০৫) হজরত আবু মুসা আশআরি রাদি. এর সূত্রে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি এই দুআ পাঠ করতেন-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي خَطِيئَتِي وَجَهْلِي، وَإِسْرَافِي فِي أَمْرِي، وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي خَطَئِي وَعَمَدِي، وَهَزْلِي وَجِدِّيْ، وَكُلُّ ذَلِكَ عِنْدِي، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَرْتُ، وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ، أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ، وَأَنْتَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগ ফিরলি খাতিআতি ওয়া জাহলি ওয়া ইসরাফি ফি আমরি, ওয়ামা আনতা আলামু বিহি মিন্নি। আল্লাহুম্মাগ ফিরলি জিদ্দি ওয়া হাজলি, ওয়া খাতায়ি ওয়া আমদি ওয়া কুল্লু জালিকা ইনদি। আল্লাহুম্মাগ ফিরলি মা কাদ্দামতো ওয়ামা আখখারতু, ওয়ামা আসরারতু ওয়ামা আলানতু, ওয়ামা আনতা আলামু বিহি মিন্নি। আনতাল মুকাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুওয়াখখিরু, ওয়া আনতা আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার ভ্রান্তি, মূর্খতা, কর্মে বাড়াবাড়ি এবং সেসব বিষয় ক্ষমা করুন যা সম্পর্কে আপনি আমার চেয়ে অধিকতর জ্ঞাত। হে আল্লাহ, আমার ঠাট্টা-তামাশা, ভুল-ইচ্ছা ক্ষমা করুন। এসব কিছু আমার মাঝে বিদ্যমান। হে আল্লাহ, আমার পূর্বের-পরের, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য এবং আপনার জ্ঞাত পাপসমূহ ক্ষমা করে দিন। আপনিই শুরু আপনিই শেষ এবং আপনিই সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান。
(১০০৬) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআয় বলতেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَمِلْتُ، وَشَرِّ مَا لَمْ أَعْمَلْ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন শাররি মা আলিমতো ওয়া শাররি মা লাম আ'মাল।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় কামনা করি এবং যা এখনো করিনি তারও অনিষ্ট থেকে。
(১০০৭) হজরত ইবনে উমর রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এও একটি দুআ ছিল-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ زَوَالِ نِعْمَتِكَ، وَتَحَوُّلِ عَافِيَتِكَ، وَفُجَاءَةِ نِقْمَتِكَ، وَجَمِيعِ سَخَطِكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন যাওয়ালি নি'মাতিকা, ওয়া তাহাওয়ুলি আফিয়াতিকা, ওয়া ফাজআতি নিকমাতিকা, ওয়া জামিয়ি সাখাতিক।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার আশ্রয় কামনা করি আপনার নেয়ামতের অবসান থেকে, আপনার দেয়া সুস্থতার পরিবর্তন থেকে, আকস্মিক আপনার শাস্তি থেকে এবং আপনার সবধরনের ক্রোধ থেকে。
(১০০৮) হজরত জায়েদ বিন আরকাম রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- অর্থ: নবিজি যেমনটা বলতেন আমিও তোমাদেরকে তেমনটা বলব। তিনি বলতেন:-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ، وَالْكَسَلِ، وَالْجُبْنِ، وَالْبُخْلِ، وَالْهَرَمِ، وَعَذَابِ، الْقَبْرِ اللَّهُمَّ آتِ نَفْسِي تَقْوَاهَا، وَزَكَّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَنْ زَكَّاهَا، أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلَاهَا، اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِن عِلْمٍ لا يَنْفَعُ، وَمِنْ قَلْبٍ لَا يَخْشَعُ، وَمِنْ نَفْسٍ لا تَشْبَعُ، وَمِنْ دَعْوَةٍ لَا يُسْتَجَابُ لَهَا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল আজজি ওয়াল কাসালি, ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি ওয়াল হারামি ওয়া আজাবিল কাবর। আল্লাহুম্মা আতি নাফসি তাকওয়াহা ওয়া জাক্কিহা আনতা খাইরু মান জাক্কাহা, আনতা ওয়ালিয়্যুহা ওয়া মাওলাহা। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন ইলমিন লা ইয়ানফা' ওয়া মিন কালবিন লা ইয়াখশা', ওয়া মিন নাফসিন লা তাশবা' ওয়া মিন দাওয়াতিন লা যুসতাজাবু লাহা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, কাপুরুষতা, কৃপণতা ও বার্ধক্য থেকে। কবররের আজাব থেকে আপনার আশ্রয় কামনা করি। হে আল্লাহ, আমার আত্মায় তাকওয়া দান করুন। একে শুদ্ধ করুন, আপনিই পারেন ভালো করে শুদ্ধ করতে। আপনিই এর অভিভাবক ও প্রভু। হে আল্লাহ, আপনার আশ্রয় কামনা করি উপকারহীন ইলম থেকে, কঠোর অন্তর থেকে, অতৃপ্ত আত্মা থেকে এবং অগ্রহণীয় দুআ থেকে。
(১০০৯) হজরত আলি রাদি. থেকে বর্ণিত, আমাকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তুমি বল-
اللَّهُمَّ اهْدِنِي وَسَدَّدْنِي.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাহ দিনি ওয়া সাদ্দিদনি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে পথপ্রদর্শন কর এবং সোজা পথে পরিচালনা কর。
অন্য বর্ণনায় এসেছে:-
اللَّهُمَّ اهْدِنِي وَسَدَّدْنِي. وَفِي رِوَايَةٍ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالسَّدَادَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াস সাদাদ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে পথপ্রদর্শন ও যথার্থতা কামনা করি。
(১০১০) হজরত সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস রাদি. থেকে বর্ণিত-
جَاءَ أَعْرَابِيُّ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ : عَلَّمْنِي كَلَامًا أَقُوْلُهُ. قَالَ : قُلْ : لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ، لَا شَرِيكَ لَهُ، اللَّهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا، سُبْحَانَ اللهِ، رَبِّ الْعَالَمِينَ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ الْعَزِيزِ الْحَكِيمِ. قَالَ : فَهَؤُلَاءِ لِرَبِّي، فَمَا لِي ؟ قَالَ : قُلِ : اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي، وَارْزُقْنِي وَعَافِنِي.
অর্থ: জনৈক বেদুঈন ব্যক্তি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে কোনো বাক্য শিক্ষা দিন যা আমি পাঠ করতে পারি? নবিজি বললেন, বল-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ اللهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا، سُبْحَانَ اللهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ الْعَزِيزِ الْحَكِيمِ.
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহ, আল্লাহু আকবার কাবিরা, ওয়াল হামদুলিল্লাহি কাসিরা, সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আলামিন, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আজিজিল হাকিম।
অর্থ: একমাত্র আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কোনো সত্য মাবুদ নেই, তার কোনো অংশীদার নেই। আল্লাহ তাআলা মহান। সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্যই। বিশ্বজগতের পালকর্তার পবিত্রতা বর্ণনা করি। পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময় আল্লাহ ছাড়া আর কারো কোনো ক্ষমতা ও শক্তি নেই।
বেদুঈন বললেন, এই বাক্যগুলো তো রবের জন্য; আমার জন্য কী? নবিজি বললেন, বল-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي وَعَافِنِي.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগ ফিরলি ওয়ার হামনি ওয়াহ দিনি ওয়ার জুকনি ওয়া আফিনি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমার প্রতি দয়া করুন। আমাকে পথপ্রদর্শন করুন। আমাকে রিজিক দান করুন এবং আমাকে সুস্থতা দান করুন।
(১০১১) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন-
اللَّهُمَّ أَصْلِحْ لِي دِينِي الَّذِي هُوَ عِصْمَةُ أَمْرِي، وَأَصْلِحْ لِي دُنْيَايَ الَّتِي فِيهَا مَعَاشِي، وَأَصْلِحْ لِي آخِرَتِي الَّتِي فِيهَا مَعَادِي، وَاجْعَلِ الْحَيَاةَ زِيَادَةٌ لِي فِي كُلِّ خَيْرٍ، وَاجْعَلِ الْمَوْتَ رَاحَةً لِي مِنْ كُلِّ شَرٌّ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাস লিহলি দীনিয়াল্লাজি হুয়া ইসমাতু আমরি, ওয়াআসলিহলি দুনয়ায়াল্লাতি ফিহা মাআশি, ওয়াআসলিহলি আখিরাতিয়াল্লাতি ফিহা মাআদি, ওয়াজ আলিল হায়াতা জিয়াদাতাল্লি ফি কুল্লি খাইর, ওয়াজ আলিল মাওতা রাহাতাল্লি মিন কুল্লি শার।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার জন্য আমার দীনকে উন্নতি সাধন করুন, যা আমার রক্ষাকবচ, আমার জন্য আমার ইহকাল সংশোধন করুন, যাতে আছে আমার জীবিকা এবং আমার জন্য আমার পরকাল শ্রেয়তর করুন, যা আমার প্রত্যাবর্তনস্থল। প্রত্যেক ভালো কাজকে হায়াত বৃদ্ধির মাধ্যম করুন এবং প্রত্যেক মন্দ কাজ থেকে মৃত্যুকে সঙ্কোচিত করুন。
(১০১২) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন-
أَنَّ اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ، وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ ، وَبِكَ خَاصَمْتُ، اللهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِعِزَّتِكَ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ أَنْ تُضِلَّنِي، أَنْتَ الْحَيُّ الَّذِي لَا يَمُوْتُ، وَالْجِنُّ وَالْإِنْسُ يَمُوْتُوْنَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা আসলামতু ওয়াবিকা আমানতু, ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু, ওয়া ইলাইকা খাসামতো। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিনজ্জাতিকা লা ইলাহা ইল্লা আনতা আন তুজিল্লানি, আনতাল হাইয়ুল্লাজি লা ইয়ামুতু, ওয়াল জিন্নু ওয়াল ইনসু ইয়ামুতুন।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার সমীপে আত্মসমর্পণ করলাম। আপনার প্রতি ঈমান আনয়ন করলাম। আপনার ওপরই ভরসা করলাম। আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তন করলাম। আপনাকেই বিচারক সাব্যস্ত করলাম। হে আল্লাহ, আমি আপনার ইজ্জতের আশ্রয় কামনা করি, আপনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই। এ থেকে যে, আপনি আমাকে ভ্রষ্ট করবেন। আপনি চিরন্তন, আর মানব-দানব মরণশীল。
(১০১৩) হজরত বুরাইদা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন সে বলছে-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ أَنِّي أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْأَحَدُ الصَّمَدُ ، الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ، وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ .
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিআন্নি আশহাদু আন্নাকা আনতাল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা আনতাল আহাদুস সামাদ। আল্লাজি লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম যুলাদ ওয়ালাম ইয়াকুল্লাহু কুফুয়ান আহাদ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কামনা করি, এ হিসাবে যে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া আর কোনো সত্য মাবুদ নেই, আপনি একক ও অমুখাপেক্ষী। যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং না তাকে কেউ জন্ম দিয়েছে। আর তার সমকক্ষ কেউ নেই। -অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি আল্লাহ পাককে এমন নামে ডেকেছ, যা দ্বারা তাকে ডাকলেই দান করেন এবং দুআ করলেই কবুল করেন。
অন্য এক বর্ণনায় আছে- নিশ্চয় সে ইসমে আজম দ্বারা আল্লাহর কাছে চেয়েছে। -ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি হাসান。
(১০১৪) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّهُ كَانَ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسًا وَرَجُلٌ يُصَلِّي، ثُمَّ دَعَا : اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْمَنَّانُ بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ، يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ، يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ . فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : لَقَدْ دَعَا اللَّهَ بِاسْمِهِ الْعَظِيمِ الَّذِي إِذَا دُعِيَ بِهِ أَجَابَ، وَإِذَا سُئِلَ بِهِ أَعْطَى.
অর্থ: তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বসা ছিলেন এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি নামাজ পড়ে দুআ করছিল-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْمَنَّانُ بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ، يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ، يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিআন্না লাকাল হামদা, লা ইলাহা ইল্লা আনতাল মান্নান। বাদিউস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ, ইয়া জালজালালি ওয়াল ইকরাম, ইয়া হাইয়ু ইয়া কাইয়ুম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কামনা করি। এ হিসাবে যে, সমস্ত প্রশংসা আপনারই। আপনার মত অনুগ্রহশীল ছাড়া আর কোনো সত্য ইলাহ নেই। আপনি আসমান-জমিনের সৃষ্টিকারী হে সম্মানিত ও মহামহিম সত্তা। হে শাশ্বত ও চিরন্তন।- নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিশ্চয় সে ইসমে আজম দ্বারা আল্লাহর কাছে চেয়েছে, যা দ্বারা তাকে ডাকলেই দান করেন এবং দুআ করলেই কবুল করেন。
(১০১৫) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বাক্যসমূহ দ্বারা দুআ করতেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ النَّارِ، وَعَذَابِ النَّارِ، وَمِنْ شَرِّ الْغِنَى وَالْفَقْرِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন ফিতনাতিন্নারি ওয়া আজাবিন্নারি, ওয়া মিন শাররিল গিনা ওয়াল ফাকর।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় কামনা করি জাহান্নামের ফিতনা থেকে, জাহান্নামের শাস্তি থেকে এবং সুখ-দুঃখের ফিতনা থেকে। -ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি হাসান সহিহ。
(১০১৬) হজরত কুতবা বিন মালেক রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الْأَخْلَاقِ وَالْأَعْمَالِ وَالْأَهْوَاءِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাকি ওয়াল আমালি ওয়াল আহওয়া।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় কামনা করি অসচ্চরিত্র থেকে, অসৎ আমল থেকে এবং প্রবৃত্তি থেকে। -ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি হাসান。
(১০১৭) হজরত শাকাল বিন হুমায়দ রাদি. থেকে বর্ণিত-
قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ ، عَلَّمْنِي دُعَاءً. قَالَ : قُلِ : اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ سَمْعِي، وَمِنْ شَرِّ بَصَرِي، وَمِنْ شَرِّ لِسَانِي، وَمِنْ شَرِّ قَلْبِي، وَمِنْ شَرِّ مَنِي.
অর্থ: আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে একটি দুআ শিক্ষা দিন। নবিজি বললেন, বল-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ سَمْعِي، وَمِنْ شَرِّ بَصَرِي، وَمِنْ شَرِّ لِسَانِي، وَمِنْ شَرِّ قَلْبِي، وَمِنْ شَرِّ مَنِي.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন শাররি সাময়ি, ওয়া মিন শাররি বাসারি, ওয়া মিন শাররি লিসানি, ওয়া মিন শাররি কালবি, ওয়া মিন শাররি মানিয়্যি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় কামনা করি কানের অনিষ্ট থেকে, চোখের খারাবি থেকে, যবানের অনিষ্ট থেকে, অন্তরের অনিষ্ট থেকে এবং লজ্জাস্থানের অনিষ্ট থেকে। -ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি হাসান।
(১০১৮) হজরত আনাস রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَالْجُنُوْنِ وَالْجُذَامِ، وَمِنْ سَيِّئِ الْأَسْقَامِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাসি ওয়াল জুনুনি ওয়াল জুজামি ওয়া মিন সাইয়িয়িল আসকাম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় কামনা করি শ্বেতরোগ থেকে, উন্মাদনা থেকে, কুষ্ঠরোগ থেকে এবং নিকৃষ্ট প্রভাব বিস্তারকারী রোগ থেকে。
(১০১৯) হজরত আবু ইয়াসার রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুআ করতেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْهَدْمِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ التَّرَدِّيْ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْغَرَقِ وَالْحَرَقِ وَالْهَرَمِ، وَأَعُوْذُ بِكَ أَنْ يَتَخَبَّطَنِي الشَّيْطَانُ عِنْدَ الْمَوْتِ، وَأَعُوْذُ بِكَ أَنْ أَمُوتَ فِي سَبِيلِكَ مُدْبِرًا، وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أَمُوتَ لَدِيعًا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাদামি, ওয়া আউজুবিকা মিনাত্তারাদ্দি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল গারাকি ওয়াল হারাকি ওয়াল হারাম। ওয়া আউজুবিকা আন ইয়াতাখাব্বাতাহুশ শাইতানু ইনদাল মাওতি, ওয়া আউজুবিকা আন আমুতা ফি সাবিলিকা মুদবিরা, ওয়া আউজুবিকা আন আমুতা লাদিগা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় কামনা করি বিধ্বস্ত হওয়া থেকে, গর্তে পড়া থেকে, নিমজ্জিত হওয়া থেকে, অগ্নিকাণ্ড থেকে এবং বার্ধক্য থেকে। মৃত্যুর সময় শয়তানের বিপথগামিতা থেকে, জিহাদ থেকে পলায়নরত ওফাত থেকে এবং সাপের দংশনাহত হয়ে মৃত্যু থেকে আপনার কাছে আশ্রয় কামনা করি。
অন্য বর্ণনায় 'দুশ্চিন্তা থেকে' শব্দও এসেছে。
(১০২০) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْجُوعِ ؛ فَإِنَّهُ بِئْسَ الضَّجِيعُ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخِيَانَةِ ؛ فَإِنَّهَا بِئْسَتِ الْبِطَانَةُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল জুয়ি, ফা ইন্নাহু বি'সাদ্বাজিউ, ওয়া আউজুবিকা মিনাল খিয়ানাতি, ফা ইন্নাহা বি'সাতিল বিতানাহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় কামনা করি ক্ষুধা থেকে, কেননা এটা কতইনা মন্দ শয্যাসঙ্গী। আর খেয়ানত থেকেও আপনার কাছে আশ্রয় কামনা করি। কেননা এটা কতইনা মন্দ চরিত্র。
(১০২১) হজরত আলি রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ مُكَاتَبًا جَاءَهُ فَقَالَ : إِنِّي قَدْ عَجَزْتُ عَنْ مُكَاتَبَتِي، فَأَعِنِّي. قَالَ : أَلَا أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ عَلَّمَنِيْهِنَّ رَسُولُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْ كَانَ عَلَيْكَ مِثْلُ جَبَلِ صِيرٍ دَيْنًا أَذَاهُ اللهُ عَنْكَ ؟ قَالَ : قُلِ : اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ.
অর্থ: জনৈক চুক্তিবদ্ধ দাস তার কাছে এসে বলল, আমি নির্দিষ্ট অঙ্ক পরিশোধ করতে অপারগ হয়ে গেছি, আপনি আমার সাহায্য করেন। তিনি বললেন, আমি কি তোমাকে এমন বাক্যসমূহ শিক্ষা দেব না, যা আমাকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়েছেন? যদি তোমার ঘাড়ে পাহাড় পরিমাণ ঋণ থাকে তবুও আল্লাহ পাক আদায়ের ব্যবস্থা করে দিবেন? তুমি পাঠ করবে-
اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাক ফিনি বিহালালিকা আন হারামিকা ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম-মান সিওয়াক।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার দেয়া হালালের মাধ্যেমে আমাকে হারাম থেকে রক্ষা করুন এবং আপনার নিজ দয়াগুণে আমাকে আপনি ব্যতীত অন্যদের থেকে অমুখাপেক্ষী করে রাখুন। -ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি হাসান。
(১০২২) হজরত ইমরান বিন হুসাইন রাদি. থেকে বর্ণিত আছে যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পিতা হুসাইনকে দুটি বাক্য শিখিয়েছেন, যা দ্বারা তিনি দুআ করতেন-
اللَّهُمَّ أَلْهِمْنِي رُشْدِي، وَأَعِذْنِي مِنْ شَرِّ نَفْسِي.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আলহিমনি রুশদি ওয়া আয়িজনি মিন শাররি নাফসি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে সৎপথে চলার অনুপ্রেরণা দিন এবং আমাকে আমার অন্তরের অনিষ্ট থেকে হেফাজত করুন। ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি হাসান。
(১০২৩) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الشَّقَاقِ وَالنِّفَاقِ وَسُوْءِ الْأَخْلَاقِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাশ শিকাকি ওয়ান্নিফাকি ওয়া সুয়িল আখলাক।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় কামনা করি অনৈক্য থেকে, মুনাফেকি থেকে এবং অসচ্চরিত্র থেকে。
(১০২৪) শহর বিন হাওশাব থেকে বর্ণিত-
قُلْتُ لِأُمِّ سَلَمَةَ : يَا أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ، مَا كَانَ أَكْثَرُ دُعَاءِ رَسُوْلِ اللَّهِ، صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا كَانَ عِنْدَكِ ؟ قَالَتْ : كَانَ أَكْثَرُ دُعَائِهِ : يَا مُقَلَّبَ الْقُلُوْبِ، ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ. قَالَتْ : فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ ، مَا لِأَكْثَرِ دُعَاءَكَ : يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ، ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ ؟
অর্থ: আমি হজরত উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললাম, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার কাছে থাকাকালে কোন দুআটি সবচে বেশি পড়তেন? তিনি বলেন, তার অধিকতর দুআ ছিল এই-
يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ، ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ.
উচ্চারণ: ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুবি সাব্বিত কালবি আলা দীনিক।
অর্থ: হে অন্তর পরিবর্তনকারী সত্তা, আমার অন্তরকে আপনার দীনের ওপর অবিচল রাখুন। -ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি হাসান。
(১০২৫) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন-
اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي جَسَدِي، وَعَافِنِي فِي بَصَرِي، وَاجْعَلْهُ الْوَارِثَ مِنِّي، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ الحَلِيمُ الْكَرِيمُ، سُبْحَانَ اللهِ رَبِّ العَرْشِ الْعَظِيمِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعُلَمِينَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আফিনি ফি জাসাদি, ওয়া আফিনি ফি বাসারি, ওয়াজ আলহুল ওয়ারিসা মিন্নি। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম, সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম, ওয়াল হামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার শরীর ও চোখ বিপদ থেকে রক্ষা করুন। একে আমার উত্তরাধিকারী করুন। ধৈর্যশীল মহানুভব আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো সত্য ইলাহ নেই। আরশের ক্ষমতাবান অধিপতির পবিত্রতা বর্ণনা করছি, আর সমুদয় প্রশংসা বিশ্বজগতের পালনকর্তার。
(১০২৬) হজরত আবু দারদা রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হজরত দাউদ আলাইহিস সালামের একটি দুআ ছিল-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ حُبَّكَ وَحُبَّ مَنْ يُحِبُّكَ وَالْعَمَلَ الَّذِي يُبَلِّغُنِي حُبَّكَ، اللَّهُمَّ اجْعَلْ حُبَّكَ أَحَبَّ إِلَيَّ مِنْ نَفْسِي وَأَهْلِي وَمِنَ الْمَاءِ الْبَارِدِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা হুব্বাকা ওয়া হুব্বা মান যুহিব্বিক, ওয়াল আমালাল্লাজি যুবাল্লিগুনি হুব্বাক। আল্লাহুম্মায আল হুব্বাকা আহাব্বা ইলাইয়া মিন নাফসি ওয়া আহলি ওয়া মিনাল মায়িল বারিদ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার প্রেম কামনা করি এবং যে আপনাকে ভালোবাসে তারও প্রেম এবং ঐ আমল কামনা করি যা আমাকে আপনার প্রেম পর্যন্ত নিয়ে যায়। হে আল্লাহ, আপনার মহব্বত আমার কাছে আমার আত্মা, পরিবার এবং ঠাণ্ডা পানির চেয়ে প্রিয় করে দিন। -ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি হাসান。
(১০২৭) হজরত সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
دَعْوَةُ ذِي النُّوْنِ - إِذْ دَعَاء وَهُوَ فِي بَطْنِ الْحُوْتِ - : لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ ؛ فَإِنَّهُ لَمْ يَدْعُ بِهَا رَجُلٌ مُسْلِمُ فِي شَيْءٍ قَطُّ إِلَّا اسْتَجَابَ اللهُ لَهُ.
অর্থ: হজরত ইউনুস আলাইহিস সালাম মাছের পেটে থাকাবস্থায় এই দুআ করেছিলেন-
لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ.
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাযযালিমিন।
অর্থ: আপনি ছাড়া আর কোনো সত্য ইলাহ নেই, আমি আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করি। নিশ্চয় আমি নিজের ওপর জুলুম করেছি। -কোনো মুসলমান কোনো বিপদে এই দুআ করলে আল্লাহ পাক সাড়া না দিয়ে পারেন না। -ইমাম হাকেম বলেন, এর সনদ সহিহ।
(১০২৮) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ رَجُلًا جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، ، أَيُّ الدُّعَاءِ أَفْضَلُ ؟ قَالَ : سَلْ رَبَّكَ الْعَافِيَةَ وَالْمُعَافَاةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، ثُمَّ أَتَاهُ فِي الْيَوْمِ الثَّانِي، فَقَالَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، أَيُّ الدُّعَاءِ أَفْضَلُ ؟ فَقَالَ لَهُ مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ أَتَاهُ فِي الْيَوْمِ الثَّالِثِ، فَقَالَ لَهُ مِثْلَ ذَلِكَ. قَالَ : فَإِذَا أُعْطِيْتَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا، وَأُعْطِيْتَهَا فِي الْآخِرَةِ ؛ فَقَدْ أَفْلَحْتَ.
অর্থ: এক ব্যক্তি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! কোনো দুআটি শ্রেষ্ঠতম? নবিজি বললেন, তুমি তোমার রবের কাছে ইহকাল-পরকালের সুস্থতা ও আরোগ্য কামনা করবে। পরের দিনও সে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! কোনো দুআটি শ্রেষ্ঠতম? নবিজি একই উত্তর দিলেন। অতঃপর তৃতীয় দিনও এলে একই উত্তর দেন। তারপর বলেন, তুমি যখন ইহকাল-পরকালের সুস্থতা অর্জন করবে তো সফলকাম হয়ে গেলে। -ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি হাসান। -দুআটি এরকম পড়বে -
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফিয়াতা ফিদ্দুনয়া ওয়াল আখিরাহ।
অর্থ: আপনার কাছে ইহকাল-পরকালের সুস্থতা ও আরোগ্য কামনা করি。
(১০২৯) হজরত আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত-
قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ ، عَلَّمْنِي شَيْئًا أَسْأَلُهُ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ. قَالَ : سَلِ اللَّهَ الْعَافِيَةَ، فَمَكَنْتُ أَيَّامًا، ثُمَّ جِئْتُ، فَقُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، عَلَّمْنِي شَيْئًا أَسْأَلُهُ الله، فَقَالَ لِي : يَا عَبَّاسُ يَا عَمَّ رَسُوْلِ اللهِ ، سَلِ اللَّهَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ.
অর্থ: আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে কোনো দুআ শিখিয়ে দিন, যা দ্বারা আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করতে পারি। নবিজি বললেন, আল্লাহর কাছে সুস্থতা কামনা করুন। অতঃপর কিছুদিন পর পুনরায় গিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে কোনো দুআ শিখিয়ে দিন, যা দ্বারা আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করতে পারি। তিনি আমাকে বললেন, হে আব্বাস-রাসুলের চাচা! আপনি রবের কাছে ইহকাল-পরকালের সুস্থতা কামনা করুন। -ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি সহিহ。
(১০৩০) হজরত আবু উমামা রাদি. থেকে বর্ণিত-
دَعَا رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِدُعَاءِ كَثِيرٍ لَمْ نَحْفَظُ مِنْهُ شَيْئًا، قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللهِ ، دَعَوْتَ بِدُعَاءِ كَثِيرٍ لَمْ نَحْفَظُ مِنْهُ شَيْئًا، فَقَالَ : أَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَجْمَعُ ذَلِكَ كُلَّهُ ؟ تَقُوْلُ: اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ مَا سَأَلَكَ مِنْهُ نَبِيُّكَ مُحَمَّدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَنَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا اسْتَعَاذَ مِنْهُ نَبِيُّكَ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَنْتَ الْمُسْتَعَانُ، وَعَلَيْكَ الْبَلَاغُ ، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ .
অর্থ: একবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক দুআ করলেন, কিন্তু আমরা এর কিছুই মুখস্থ রাখতে পারিনি। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি তো অনেক দুআ করলেন, আমরা কিছুই মুখস্থ রাখতে পারিনি। নবিজি বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এগুলোর সমন্বয়কারী দুআর কথা বলব না? তোমরা বলবে-
اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ مَا سَأَلَكَ مِنْهُ نَبِيُّكَ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَنَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا اسْتَعَاذَ مِنْهُ نَبِيُّكَ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَنْتَ الْمُسْتَعَانُ، وَعَلَيْكَ الْبَلَاغُ، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ .
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা মিন খাইরি মা সাআলাকা মিনহু নাবিয়্যুকা মুহাম্মাদুন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা, ওয়া নাউজুবিকা মিন শাররি মাসতাআজা মিনহু নাবিয়্যুকা মুহাম্মাদুন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ওয়া আনতাল মুসতাআন, ওয়া আলাইকাল বালাগ, ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার কাছে যতসব কল্যাণ চেয়েছেন, আমরাও তা চাচ্ছি এবং আপনার নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার কাছে যতসব অকল্যাণ থেকে আশ্রয় চেয়েছেন, আমরাও চাচ্ছি। আর আপনার কাছেই সাহায্য কামনা করা হয় এবং আপনার কাছেই ফরিয়াদ করা হয়। আর আল্লাহ ছাড়া আর কারো কোনো ক্ষমতা ও শক্তি নেই। -ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি হাসান。
(১০৩১) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা এই দুআকে আকড়ে ধরবে-
يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ
উচ্চারণ: ইয়া জালজালালি ওয়াল ইকরাম।
অর্থ: হে সম্মানিত ও মহামহিম সত্তা。
(১০৩২) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআয় বলতেন-
رَبِّ أَعِنِّي وَلَا تُعِنْ عَلَيَّ، وَانْصُرْنِي وَلَا تَنْصُرْ عَلَيَّ، وَامْكُرْ لِي وَلَا تَمْكُرْ عَلَيَّ، وَاهْدِنِي وَيَسِّرْ هُدَايَ إِلَيَّ، وَانْصُرْنِي عَلَى مَنْ بَغَى عَلَيَّ اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي لَكَ شَاكِرًا، لَكَ ذَاكِرًا، لَكَ رَاهِبًا، لَكَ مِطْوَاعًا ، إِلَيْكَ مُخْبِتًا - أَوْ مُنِيبًا - رَبِّ تَقَبَّلْ تَوْبَتِي، وَاغْسِلْ حَوْبَتِي ، وَأَجِبْ دَعْوَتِي، وَثَبِّتْ حُجَّتِي، وَاهْدِ قَلْبِي، وَسَدَّدْ لِسَانِي، وَاسْلُلْ سَخِيْمَةَ قَلْبِي.
উচ্চারণ: রাব্বি আয়িন্নি ওয়ালা তুয়িন আলাইয়া, ওয়ানসুরনি ওয়ালা তানসুর আলাইয়া, ওয়ামকুরলি ওয়ালা তামকুর আলাইয়া। ওয়াহদিনি ওয়া ইয়াসসির হুদায়া ইলাইয়া, ওয়ানসুরনি আলা মান বাগা আলাইয়া। আল্লাহুম্মাজ আলনি লাকা শাকিরা, লাকা জাকিরান, লাকা রাহিবান, লাকা মিতোওয়াআন, ইলাইকা মুখবিতান আও মুনিবান। রাব্বি তাকাব্বাল তাওবাতি, ওয়াগসিল হাওবাতি, ওয়া আজিব দা'ওয়াতি, ওয়া সাব্বিত হুজ্জাতি, ওয়াহদি কালবি, ওয়া সাদ্দিদ লিসানি, ওয়াসলুল সাখিমাতা কালবি।
অর্থ: হে আমার রব, আমাকে সাহায্য করুন, আমাকে সাহয্যহীন ছেড়ে দিয়েন না। আমাকে মদদ করুন, মদদহীন ছেড়ে দিয়েন না। আমাকে কৌশল শিখিয়ে দিন, আমার বিরুদ্ধে কাউকে প্রতারণা করতে দিয়েন না। আমাকে পথপ্রদর্শন করুন এবং আমার পথপ্রদর্শনকে আমার কাছে সহজ করে দিন। আমাকে আমার বিরুদ্ধে জুলুমকারীদের ওপর সাহায্য করুন। হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আপনার কৃতজ্ঞ, আপনাকে স্মরণকারী, আপনার জন্য সৃষ্টিবিমুখ, আপনার অনুগত এবং আপনার জন্য বিনয়ী করুন। হে আল্লাহ, আমার তাওবা কবুল করুন, আমার পাপ মার্জন করুন, আমার দুআ কবুল করুন, আমার যুক্তি প্রমাণিত করুন, অন্তরকে পথপ্রদর্শন করুন, যবানকে সোজা করুন এবং অন্তরের বিদ্বেষ বের করে দিন। -অন্য হাদিসে আছে-
مَنْ سَلَّ سَخِيمَتَهُ فِي طَرِيقِ الْمُسْلِمِينَ فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللَّهِ.
অর্থ: যে ব্যক্তি মুসলমানের রাস্তায় তার অন্তরের বিদ্বেষ প্রকাশ করে, তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ。
(১০৩৩) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন, তুমি বল-
اللَّهُمَّ ، إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنَ الْخَيْرِ كُلِّهِ، عَاجِلِهِ وَآجِلِهِ، مَا عَلِمْتُ مِنْهُ وَمَا لَمْ أَعْلَمْ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الشَّرِّ كُلِّهِ، عَاجِلِهِ وَآجِلِهِ، مَا عَلِمْتُ مِنْهُ وَمَا لَمْ أَعْلَمْ، وَأَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَمَا قَرَّبَ إِلَيْهَا مِنْ قَوْلٍ أَوْ عَمَلٍ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ النَّارِ وَمَا قَرَّبَ إِلَيْهَا مِنْ قَوْلٍ أَوْ عَمَلٍ، وَأَسْأَلُكَ مِنَ الْخَيْرِ مَا سَأَلَكَ عَبْدُكَ وَرَسُوْلُكَ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَسْتَعِيْدُكَ مِمَّا اسْتَعَاذَكَ مِنْهُ عَبْدُكَ وَرَسُوْلُكَ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَسْأَلُكَ مَا قَضَيْتَ لِي مِنْ أَمْرٍ أَنْ تَجْعَلَ عَاقِبَتَهُ رَشَدًا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিনাল খাইরি কুল্লিহি আজিলিহি ওয়া আজিলিহ মা আলিমতো মিনহু ওয়ামা লাম আ'লাম, ওয়া আউজুবিকা মিনাশ শাররি কুল্লিহি আজিলিহ মা আলিমতো মিনহু ওয়ামা লাম আ'লাম। আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন খাইরি মা সাআলাকা বিহি আবদুকা ওয়া নাবিয়্যুক, ওয়া আউজুবিকা মিন শাররি মা আজা বিহি আবদুকা ওয়া নাবিয়্যুক। ওয়া আসআলুকাল জান্নাতা ওয়ামা কাররাবা ইলাইহা মিন কাওলিন আও আমালিন, ওয়া আউজুবিকা মিনান্নারি ওয়ামা কাররাবা ইলাইহা মিন কাওলিন আও আমালিন। ওয়া আসআলুকা খাইরা মা সাআলাকা আবদুকা ওয়া রাসুলুকা মুহাম্মাদুন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ওয়া আউজুবিকা মিন শাররি মাসতাআজাকা মিনহু আবদুকা ওয়া রাসুলুকা মুহাম্মাদুন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ওয়া আসআলুকা মা কাজাইতা লী মিন আমরিন আন তাজআলা আকিবাতাহু রাশাদা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে ত্বরিত-বিলম্বিত সকল মঙ্গল কামনা করি, যা আমি জানি অথবা জানি না। সকল ত্বরিত-বিলম্বিত এবং জানা- অজানা অনিষ্ট থেকে আপনার কাছে আশ্রয় কামনা করি। আপনার কাছে জান্নাত কামনা করি এবং যেসব কথা-কর্ম জান্নাতের নিকটবর্তী করে তাও। আর জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করি এবং যেসব কথা-আমল জাহান্নামের নিকটবর্তী করে তা থেকেও। আপনার বিশেষ বান্দা ও রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার কাছে যেসব কল্যাণ কামনা করেছেন, আমরাও তা করছি। আর সেসব অনিষ্ট থেকে আশ্রয় কামনা করছি, যা থেকে আপনার বিশেষ বান্দা ও রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশ্রয় কামনা করেছেন। আর আমার জন্য ফয়সালাকৃত কল্যাণের পরিণাম উজ্জ্বল করে দিন এ কামনা করি। -ইমাম হাকেম বলেন, হাদিসটির সনদ সহিহ।
(১০৩৪) হজরত ইবনে মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এও একটি দুআ ছিল-
اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ مُوْجِبَاتِ رَحْمَتِكَ، وَعَزَائِمَ مَغْفِرَتِكَ، وَالسَّلَامَةَ مِنْ كُلِّ إِثْمٍ، وَالْغَنِيمَةَ مِنْ كُلِّ بِرٍ، وَالْفَوْزَ بِالْجَنَّةَ وَالنَّجَاةَ مِنَ النَّارِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা মুযিবাতি রাহমাতিক, ওয়া আজায়িমি মাগফিরাতিক, ওয়াস সালামাতা মিন কুল্লি ইসমিন, ওয়াল গানিমাতা মিন কুল্লি বিররিন, ওয়াল ফাউজা বিলজান্নাতি, ওয়ান্নাজাতা মিনান্নার।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমরা আপনার রহমতের হেতুসমূহ, আপনার ক্ষমার সঙ্কল্প, সবধরনের পাপ থেকে মুক্তি, সকল পুণ্যের সুযোগ, জান্নাতের সাফল্য এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করি। -ইমাম হাকেম বলেন, হাদিসটি সহিহ মুসলিমের শর্তমাফিক সহিহ。
(১০৩৫) হজরত জাবির বিন আবদুল্লাহ রাদি, থেকে বর্ণিত-
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: وَاذُنُوْبَاهُ وَاذْنُوْبَاهُ، مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلاثاً، فَقَالَ لَهُ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : قُلِ : اللَّهُمَّ مَغْفِرَتُكَ أَوْسَعُ مِنْ ذُنُوبِي وَرَحْمَتُكَ أَرْجَى عِنْدِي مِنْ عَمَلِي، فَقَالَهَا، ثُمَّ قَالَ: عُدْ، فَعَادَ، ثُمَّ قَالَ: عُدْ، فَعَادَ، فَقَالَ: قُمْ فَقَدْ غُفِرَ لَكَ.
অর্থ: জনৈক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, হায় কি পাপ করলাম! হায় কি পাপ করলাম!! দুইবার অথবা তিনবার বলেছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি বল:-
اللَّهُمَّ مَغْفِرَتُكَ أَوْسَعُ مِنْ ذُنُوبِي وَرَحْمَتُكَ أَرْجِى عِنْدِي مِنْ عَمَلِي.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা মাগফিরাতুকা আউসাউ মিন জুনুবি ওয়া রাহমাতুকা আরজা ইনদি মিন আমালি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার ক্ষমা আমার পাপের চেয়ে প্রশস্ত এবং আপনার দয়া আমার কাছে আমার আমলের চেয়ে অধিক প্রত্যাশিত।- সে বাক্যদ্বয় পড়ল, নবিজি বললেন, পুনরায় পড়। পড়ল। আবারো বললেন, পুনরায় পড়। পড়ল। অতঃপর নবিজি বললেন, দাঁড়াও, নিশ্চয় আল্লাহ পাক তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন。
(১০৩৬) হজরত আবু উমামা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِنَّ لِلَّهِ تَعَالَى مَلَكاً مُوَكَّلاً بِمَنْ يَقُوْلُ : يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ، فَمَنْ قَالَهَا ثَلَاثًا قَالَ لَهُ الْمَلَكُ: إِنَّ أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ قَدْ أَقْبَلَ عَلَيْكَ فَسَلْ.
অর্থ: يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ )ইয়া আরহামার রাহিমিন: হে সর্বোচ্চ দয়ালু( পাঠকারীর জন্য আল্লাহর একজন নির্ধারিত ফেরেশতা আছেন। যে এই বাক্য তিনবার পাঠ করে, ফেরেশতা তাকে বলেন, নিশ্চয় সর্বাধিক দয়াময় আল্লাহ তোমার অভিমুখী হয়েছেন। সুতরাং তার কাছে কামনা কর。

টিকাঃ
১৪৮৪. সুনানে আবু দাউদ: ১৪৭৯, সুনানে তিরমিজি: ৩২৪৭, সুনানে নাসাঈ: ১১৪০০, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৮২৮।
১৪৮৫. সুনানে আবু দাউদ: ১৪৮২, মু. আহমাদ ৬/১৪৭।
১৪৮৬. সুনানে তিরমিজি: ৩৩৭০, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৮২৯।
১৪৮৭. সুনানে তিরমিজি: ৩৩৮২।
১৪৮৮. সহিহ বুখারি: ৪৫২২, সহিহ মুসলিম: ২৬৯০।
১৪৮৯. সহিহ মুসলিম: ২৭২১।
১৪৯০. সহিহ মুসলিম: ২৬৯৭, মুসনাদে আহমাদ ৩/৪৭২।
১৪৯১. সহিহ মুসলিম: ২৬৫৪, মুসনাদে আহমাদ ২/১৬৮।
১৪৯২. দুআটি এভাবে করবে- أَعُوْذُ بِاللَّهِ مِنْ جَهْدِ الْبَلَاءِ، وَدَرْكِ الشَّقَاءِ، وَسُوْءِ الْقَضَاءِ، وَشَمَائَةِ الْأَعْدَاءِ. উচ্চারণ: আউজুবিল্লাহি মিন জাহদিল বালা, ওয়া দারকিশ শাকা ওয়া সুয়িল কাজা ওয়া শামাতাতিল আদা। অর্থ: বালা-মুসিবতের কঠোরতা, দুর্ভাগ্যে নিঃপতিত হওয়া, নিয়তির অশুভ পরিণাম এবং দুশমনের খুশি হওয়া থেকে পানাহ চাই。
১৪৯৩. সহিহ বুখারি: ২৮২৩, সহিহ মুসলিম: ২৭০৬।
১৪৯৪. সহিহ বুখারি: ২৮৯৩।
১৪৯৫. সহিহ বুখারি: ৮৩৪, সহিহ মুসলিম: ২৭০৫।
১৪৯৬. সহিহ মুসলিম: ২৭০৫, মুসনাদে আবু ইয়ালা: ৩২, আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ১৫৯।
১৪৯৭. সহিহ বুখারি: ৬৩৯৮, সহিহ মুসলিম: ২৭১৯।
১৪৯৮. সহিহ মুসলিম: ২৭১৬।
১৪৯৯. সহিহ মুসলিম: ২৭৩৯।
১৫০০. সহিহ মুসলিম: ২৭২২, সুনানে তিরমিজি: ৩৫৬৭, সুনানে নাসাঈ ৮/২৬০, মুসনাদে আহমাদ ৪/৩৭১।
১৫০১. সহিহ মুসলিম: ২৭২৫।
১৫০২. সহিহ মুসলিম: ২৭২০।
১৫০৩. সহিহ বুখারি: ৭৩৮৩, সহিহ মুসলিম: ২৭১৭।
১৫০৪. সুনানে আবু দাউদ: ১৪৯৩, সুনানে তিরমিজি: ৩৪৭৫, সুনানে নাসাঈ: ৭৬১৯, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৭৫৭।
১৫০৫. সুনানে আবু দাউদ: ১৪৯৪, সুনানে তিরমিজি: ৩৪৭৫।
১৫০৬. সুনানে আবু দাউদ: ১৪৯৫, সুনানে নাসাঈ ৩/৫২।
১৫০৭. সুনানে আবু দাউদ: ১৫৪৩, সুনানে তিরমিজিঃ ৩৪৯৫, সুনানে নাসাঈ ৮/২৬২, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৮৩৮।
১৫০৮. সুনানে তিরমিজি: ৩৫৯১।
১৫০৯. সুনানে আবু দাউদ: ১৫৫১, সুনানে তিরমিজি: ৩৪৯২, সুনানে নাসাঈ ৮/২৫৯।
১৫১০. সুনানে আবু দাউদ: ১৫৫৪, সুনানে নাসাঈ ৮/২৭০।
১৫১১. সুনানে আবু দাউদ: ১৫৫২, সুনানে নাসাঈ ৮/২৮২, মু. হাকেম ১/৫৩১।
১৫১২. সুনানে আবু দাউদ: ১৫৫৩।
১৫১৩. সুনানে আবু দাউদ: ১৫৪৭, সুনানে নাসাঈ ৮/২৬৩।
১৫১৪. সুনানে তিরমিজি: ৩৫৬৩।
১৫১৫. সুনানে তিরমিজি: ৩৪৭৯।
১৫১৬. সুনানে আবু দাউদ: ১৫৪৬, সুনানে নাসাঈ ৮/২৬৪।
১৫১৭. সুনানে তিরমিজি: ৩৫২২।
১৫১৮. সুনানে তিরমিজি: ৩৪৮০।
১৫১৯. সুনানে তিরমিজি: ৩৪৯০।
১৫২০. সুনানে তিরমিজি: ৩৫0৫।
১৫২১. সুনানে তিরমিজি: ৩৫১২, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৮৪৮।
১৫২২. সুনানে তিরমিজি: ৩৫১৪।
১৫২৩. সুনানে তিরমিজি: ৩৫২১।
১৫২৪. সুনানে তিরমিজি: ৩৫২৪।
১৫২৫. সুনানে আবু দাউদ: ১৫১০, সুনানে তিরমিজি: ৩৫৫১, সুনানে ইবন মাজাহঃ ৩৮৩০।
১৫২৬. মুসতাদরাকে হাকেম ১/১৮৬।
১৫২৭. মুসনাদে আহমাম ৬/১৪৬, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৮৪৬।
১৫২৮. মুসতাদরাকে হাকেম ১/৫২১।
১৫২৯. মুসতাদরাকে হাকেম ১/৫২৫।
১৫৩০. মুসতাদরাকে হাকেম ১/৫৪৩।
১৫৩১. মুসতাদরাকে হাকেম ১/৫৪৪।

📘 আল আযকার > 📄 দুআর আদব

📄 দুআর আদব


দুআর আদব
জ্ঞাতব্য, ফুকাহায়ে কেরাম, মুহাদ্দিসে কেরাম এবং পূর্বাপর সকল ঘরানার সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামায়ে কেরামের পছন্দনীয় দুআর মাজহাব হল, দুআ করা মুস্তাহাব। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُوْنِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ.
অর্থ: তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমাকে ডাক; আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব。
অপর আয়াতে বলেন-
ادْعُوا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً.
অর্থ: তোমরা বিনিতভাবে ও চুপিসারে নিজেদের প্রতিপালককে ডাক।
এ ব্যাপারে আরো অনেক প্রসিদ্ধ আয়াত রয়েছে। হাদিসের কথা যদি বলি, তবে এ ব্যাপারে অনেক প্রসিদ্ধ ও স্পষ্ট ভাষ্যের হাদিস রয়েছে। আমরা ইতিপূর্বে দুআ সংক্রান্ত অধ্যায়ে যা বর্ণনা করেছি তা আমাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাআলা তাওফিক দান করুন!
আমরা ইমাম আবুল কাসিম কুশাইরির রিসালা থেকে নকল করেছি, তিনি বলেন- লোকেরা এই বিষয়টি নিয়ে মতোবিরোধ করে যে, দুআ করা উত্তম নাকি চুপ থেকে সন্তুষ্ট থাকা উত্তম। কেউ বলেন, দুআ করা উত্তম। তারা পূর্বে বর্ণিত হাদিস )الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ( : দুআও একটি ইবাদত- এর আলোকে এমনটি বলেছেন। তাছাড়া দুআ করার অর্থ হল, আল্লাহ তাআলার প্রতি মুখাপেক্ষিতা প্রকাশ করা। অনেকেই আবার বলেছেন, চুপ থাকা, আল্লাহর হুকুম পালনে জমে থাকা, পূর্ব নির্ধারিত তাকদিরের ওপর সন্তুষ্ট থাকা হল সর্বোত্তম। অনেকেই বলেছেন, মুখে দুআ করবে ঠিক; তবে অন্তরে তাকদিরের ওপর সন্তুষ্ট থাকবে। যাতে করে উভয় বিষয়ের ওপর আমল করা হয়।
কুশাইরি আরো বলেন, সর্বোত্তম হল এমনটি বলা যে, সময় ও অবস্থা বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। কখনও চুপ থাকার চেয়ে দুআ করা উত্তম এবং সেটাই আদব। কখনও দুআ করার চেয়ে চুপ থাকা উত্তম এবং তখন সেটাই আদব। এটা মূলত সময়ের ভিন্নতার প্রেক্ষিতে জানা যায়। যদি কেউ অন্তরে দুআর প্রতি ইঙ্গিত ও টান অনুভব করে, তবে তার জন্য তখন দুআ করাই শ্রেয়। আর যদি দুআর পরিবর্তে চুপ থাকার সায় পায়, তবে চুপ থাকাটাই উত্তম।
তিনি আরো বলেন, তবে শুদ্ধ হল এভাবে বলা যে, যেক্ষেত্রে মুসলমানদের কোনোও অংশবিশেষ থাকে কিংবা আল্লাহ তাআলার কোনোও হকের ব্যাপার থাকে, সেসব ক্ষেত্রে দুআ করা উত্তম। কেননা তখন সেটা ইবাদত হবে। আর যদি তাতে নিজের কোনোও অংশ তথা অন্যকে দেখানো বা এমন কিছু থাকে, তবে তখন চুপ থাকা উত্তম।
তিনি বলেন, দুআ কবুলের একটি শর্ত হল, দুআপ্রার্থীর পানাহার হালাল হওয়া। হজরত ইয়াহিয়া বিন মুআজ রাজি রাদি. বলতেন, আমি গুনাহগার হয়ে কোন মুখে দুআ করব? অন্যদিকে আপনি মহান দাতা হিসাবে দুআ না করে থাকব কিভাবে?
দুআর আরেকটি আদব হল, অন্তরের উপস্থিতি ও একাগ্রতা। অনেকে বলেছেন, দুআর অর্থ হল অসহায়ত্ব প্রকাশ করা। অন্যথায় আল্লাহ তাআলা যা চান তাই করেন।
ইমাম আবু হামেদ গাজালি রহ. তার 'ইহয়াউ উলুমিদ্দিন' গ্রন্থে (১/৩০৪) বলেন, দুআর দশটি আদব রয়েছে:
১. ফজিলতপূর্ণ সময়সমূহের অপেক্ষা করা। যেমন, আরাফার দিন, রমজান মাস, জুমুআর দিন, রাতের শেষ তৃতীয়াংশ, সেহরির সময় ইত্যাদি।
২. ফজিলতপূর্ণ অবস্থাসমূহকে মূল্যবান মনে করা। যেমন, সেজদার অবস্থা, শত্রুবাহিনীর মুখোমুখী হওয়া, বৃষ্টি অবতরণের অবস্থা, নামাজরত ও পরের অবস্থা। আমি যুক্ত করি: দয়াপরবশতার অবস্থাও একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থা।
৩. কিবলামুখী হয়ে দুই হাত তুলে দুআ করা। দুআ শেষে দুই হাত চেহারায় মোছা।
৪. দুআর সময় আওয়াজ উচ্চস্বর ও নিচুস্বরের মাঝামাঝি অবস্থায় রাখা।
৫. দুআয় অন্ত্যমিল রক্ষার খুব চেষ্টা করা। এটাকে দুআয় সীমালঙ্ঘন হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। উত্তম হল, হাদিসে বর্ণিত দুআসমূহে সীমাবদ্ধ থাকা। কেউ যতই সুন্দর দুআই করুক, তাতে সীমালঙ্ঘনের শঙ্কা থাকেই। অনেকে বলেছেন, দীনতা ও অসহায়ত্বের যবান দিয়ে দুআ কর। খুব শুদ্ধ ও দ্রুততার সঙ্গে দুআ করার প্রয়োজন নেই। বলা হয়, উলামায়ে কেরাম ও আবদালগণ দুআয় সাতটি কথার চেয়ে বেশি কথা বলতেন না। আর এর স্বপক্ষে রয়েছে কুরআনের আয়াত, যা আল্লাহ তাআলা সুরা বাকারার শেষে উল্লেখ করেছেন-
رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِنَا رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ ، وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَفِرِينَ.
অর্থ: (১) হে আমাদের পালনকর্তা! যদি আমাদের থেকে ভুল- ভ্রান্তি হয়ে যায়, তাহলে আমাদেরকে পাকড়াও কর না। (২) হে আমাদের পালনকর্তা! আর আমাদের ওপর (বিধি- বিধানের) ভারী দায়িত্ব অর্পণ কর না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর করেছিলেন। (৩) হে আমাদের প্রভু! আর আমাদের ওপর এমন বোঝা আরোপ কর না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। (৪) আমাদের পাপ মোচন কর। (৫) আমাদেরকে ক্ষমা করে দাও। (৬) আর আমাদের প্রতি দয়া কর। (৭) আপনিই আমাদের অভিভাবক। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য কর। (আমিন)
কুরআনের অন্য কোথাও বান্দার দুআর ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা এর চেয়ে বেশি বর্ণনা করেননি।
আমি বলি- ঠিক এমন ধরনের আয়াত সুরা ইবরাহিমে রয়েছে-
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَذَا الْبَلَدَ آمِنًا.
অর্থ: স্মরণ কর ঐ সময়কে যখন ইবরাহিম বললেন, হে আমার প্রতিপালক! এই শহরটিকে আপনি নিরাপদ বানিয়ে দিন।
আমি বলি, জমহুর উলামায়ে কেরাম এ ক্ষেত্রে যা বলেছেন সেটাই সর্বোত্তম। তারা বলেছেন, দুআ কেবল এই সাতটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ রাখার কোনো বিষয় নয়। এর চেয়ে বেশি বিষয়ে দুআ করতে সমস্যা নেই। বরং নিঃশর্তভাবে বেশি বেশি দুআ করাই উত্তম।
৬. দুআয় বিনয়, একাগ্রতা ও খোদাভীরুতার উপস্থিত থাকা। আল্লাহ তাআলা বলেন-
إِنَّهُمْ كَانُوا يُسَارِعُوْنَ فِي الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُوْنَنَا رَغَبًا وَرَهَبًا وَكَانُوْا لَنَا خَاشِعِينَ.
অর্থ: নিশ্চই তারা সৎকাজে গতিশীলতা প্রদর্শন করত এবং আশা ও ভীতির সঙ্গে আমাকে ডাকত। তাদের অন্তর ছিল আমার সামনে বিনিত।
অন্য আয়াতে বলেন-
ادْعُوْا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً.
অর্থ: তোমরা বিনয়তা ও চুপিসারে তোমাদের প্রতিপালককে ডাক।
৭. খুব দৃঢ়তার সঙ্গে আবেদন করা, আল্লাহ তাআলা দুআ কবুল করবেন বলে পূর্ণ বিশ্বাস রাখা এবং সে ব্যাপারে দৃঢ় আশা রাখা। এ ব্যাপারে প্রচুর প্রমাণ রয়েছে। হজরত সুফিয়ান বিন উয়াইনা রহ. বলেন, তোমাদের কাউকে যেন তার নিজ পাপ দুআ করা থেকে বাধা না দেয়। কেননা আল্লাহ তাআলা তার সর্বনিকৃষ্ট সৃষ্টি ইবলিসের দুআও কবুল করেছিলেন। সে যখন বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে কেয়ামত পর্যন্ত অবকাশ দিন। আল্লাহ তাআলা তার দুআ কবুল করে বলেছিলেন-
إِنَّكَ مِنَ الْمُنْظَرِينَ.
অর্থ: নিশ্চই তুমি অবকাশ লাভকারীদের একজন।
৮. দুআয় খুব কাকুতি-মিনতি করা। কমপক্ষে তিনবার বলা। দুআ কবুল হওয়াকে মন্থর মনে না করা।
৯. আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে দুআ শুরু করা। নববি বলেন, এমনিভাবে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও গুণগান পাঠ করে রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ পাঠের মাধ্যমেও দুআ শুরু করা এবং এ দিয়েই দুআ শেষ করা।
১০. দুআ কবুল হওয়ার ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি সবচেয়ে জরুরি ও আসল বিষয়। সেটা হল তাওবা করা, জুলুম করে কারও কিছু আত্মসাৎ করে থাকলে তা ফিরিয়ে দেয়া এবং আল্লাহ তাআলার দিকে ধাবিত হওয়া।
তাকদির অবশ্যম্ভাবী হওয়া সত্ত্বেও দুআর ফায়দা
ইমাম গাজালি রহ. বলেন, যদি কেউ প্রশ্ন করে, আল্লাহ প্রদত্ত তাকদির যেহেতু অবশ্যম্ভাবী। সুতরাং দুআ করে কীইবা লাভ হবে? এর উত্তর হল, দুআর মাধ্যমে বালা-মুসিবত দূর হওয়াটাও তাকদিরের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং দুআ হল মুসিবত দূর করা ও আল্লাহর রহমতো লাভের মাধ্যম। ঢাল যেমন তরবারি প্রতিহত করার মাধ্যম। পানি যেমন মাটি থেকে শস্য উদ্‌গাত হওয়ার কারণ। ঢাল যেমন তীর প্রতিহত করে; ফলে উভয়টি একে অপরের মাধ্যমে প্রতিহত হয়। দুআ ও বালা-মুসিবতের ব্যাপারটিও ঠিক এমন। তাকদিরের ওপর বিশ্বাস করার নাম এ নয় যে, তরবারি ধারণ না করা। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَلْيَأْخُذُوْا حِذْرَهُمْ وَأَسْلِحَتَهُمْ.
অর্থ: তারা যেন (নামাজে) আত্মরক্ষার উপকরণ ও অস্ত্র গ্রহণ করে।
সুতরাং আল্লাহ তাআলা তাকদিরে যেমন অনেক বিষয় রেখে দিয়েছেন, তেমনি সেগুলোর কারণও নির্ধারণ করেছেন।
এতে আমাদের পূর্বোল্লিখিত বিষয়ও থাকতে হবে। অর্থাৎ অন্তরের উপস্থিতি ও অসহায়ত্ব প্রকাশ। এ দুটো বিষয় আল্লাহ তাআলার ইবাদত ও তার মারেফাত লাভের চূড়ান্ত পর্যায়। আল্লাহ তাআলাই সম্মক অবগত।
নিজের সৎকর্মের ওসিলায় আল্লাহর কাছে দুআ করা
(১০৩৭) হজরত ইবনে উমর রাদি. থেকে গুহাবাসীর হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-
انْطَلَقَ ثَلَاثَةُ نَفَرٍ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حَتَّى أَوَاهُمُ الْمَبِيْتُ إِلَى غَارٍ فَدَخَلُوهُ، فَالْحَدَرَتْ صَخْرَةُ مِنَ الْجِبَلِ فَسَدَّتْ عَلَيْهِمُ النَّارُ، فَقَالُوا: إِنَّهُ لَا يُنْجِيْكُمْ مِنْ هَذِهِ الصَّخْرَةِ إِلَّا أَنْ تَدْعُوا اللَّهَ تَعَالَى بِصَالِحٍ أَعْمَالِكُمْ. قالَ رَجُلٌ مِنْهُمْ: اَللَّهُمَّ إِنَّهُ كَانَ لِي أَبَوَانِ شَيْخَانِ كَبِيرَانِ وَكُنْتُ لَا أُغْبِقُ قَبْلَهُمَا أَهْلاً وَلَا مَالاً وَذُكِرَ تَمَامُ الْحَدِيثِ الطَّوِيلِ فِيْهِمْ، وَأَنَّ كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمْ قَالَ فِي صَالِحٍ عَمَلِهِ : اَللَّهُمَّ إِنْ كُنْتُ قَدْ فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَفَرِّجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيْهِ، فَانْفَرِجَ فِي دَعْوَةِ كُلِّ وَاحِدٍ شَيْءٍ مِّنْهَا، وَانْفَرَجَتْ كُلُّهَا عَقْبَ دَعْوَةٍ الثَّالِثِ، فَخَرَجُوا يَمْشُوْنَ.
অর্থ: তোমাদের পূর্বে (বনি ইসরাঈলের যুগে) তিন ব্যক্তি সফরে বের হল। একপর্যায়ে তারা রাত কাটাতে একটি গুহার আশ্রয় নিয়ে তাতে প্রবেশ করল। হঠাৎ করে একটি বড় পাথরখণ্ড পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ে গুহার মুখ বন্ধ করে দিল। তারা তখন বলল, এমন বিপদ থেকে বাঁচার একমাত্র পথ হচ্ছে, তোমরা তোমাদের নেক আমলসমূহকে ওসিলা বানিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ কর। এক ব্যক্তি দুআ করে বলল, হেআল্লাহ! আমার বৃদ্ধ পিতা-মাতা ছিল। আমি তাদের পূর্বে আমার পরিবার ও অধিনস্তদের কাউকে দুধ পান করাতাম না। তারপর তিনি দীর্ঘ হাদিসটি উল্লেখ করেছেন। তিন ব্যক্তির প্রত্যেকেই তাদের নেক আমলকে ওসিলা বানিয়ে আল্লাহর দরবারে এই বলে দুআ করেছে: হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজ কেবল আপনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করে থাকি, তবে আপনি আমাদের থেকে পাথরটি সরিয়ে দিন। তাদের প্রত্যেকের দুআর বদৌলতে পাথরটি একটু একটু করে সরে গেল। তৃতীয়জনের দুআ শেষে পুরো পাথরটি সরে গেল। তখন তারা গুহা থেকে বের হয়ে চলতে লাগল।
আমাদের কাজি হুসাইনসহ আরো অনেকেই সালাতুল ইসতিসকার আলোচনায় একটি বিষয়ে আলোচনা করেছেন। আলোচনার সারকথা হল, যে ব্যক্তিই কোনোও বিপদ অথবা সঙ্কটে পতিত হবে, সে তার নেক আমলের ওসিলায় আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করবে। তারা দলিল হিসাবে উপরে বর্ণিত হাদিসটিই উপস্থাপন করেন। তবে এ ব্যাপারে একটি আপত্তি করে বলা হয়েছে, এই বিষয়ে কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। কেননা এখানে সামান্য হলেও আল্লাহ তাআলার প্রতি নিঃশর্ত মুখাপেক্ষিতা প্রদর্শন তরক করা হচ্ছে। অথচ দুআর মূল কাঙ্ক্ষিত বিষয়ই হল মুখাপেক্ষিতা প্রদর্শন। এই প্রশ্নের তেমন কোনোও গুরুত্ব নেই। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই হাদিস উক্ত তিন ব্যক্তির প্রশংসাকল্পে বর্ণনা করেছেন। আর এই বিষয়টিই রাসুল-কর্তৃক তাদের কাজকে সমর্থন ও সঠিক হিসাবে আখ্যায়িত করার প্রমাণ বহন করে।
দুআর ব্যাপারে পূর্ববর্তীদের অসাধারণ কিছু কাহিনী
দুআ নিয়ে পূর্ববর্তী বুজুর্গদের অনেক কাহিনীই বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে অসাধারণ একটি কাহিনী হল, যা ইমাম আওজায়ি রহ. থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, লোকেরা ইসতিসকার নামাজের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হল। তাদের মাঝে বিলাল বিন সাদ দাঁড়িয়ে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও গুণগান জ্ঞাপন করলেন। এরপর বললেন, হে উপস্থিতবৃন্দ! তোমরা কি তোমাদের গুনাহকে স্বীকার করছ না? তারা বলল, অবশ্যই স্বীকার করছি।
তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আমি আপনাকে বলতে শুনেছি, আপনি বলেছেন-
مَا عَلَى الْمُحْسِنِينَ مِنْ سَبِيلٍ.
অর্থ: সৎকর্মশীলদের ওপর শাস্তির কোনোও বিষয় নেই।
হে আল্লাহ! আমরা আমাদের গুনাহ ও অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছি। সুতরাং আমরা ছাড়া আপনার মাগফেরাত আর কার জন্য হবে? হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমাদের ওপর রহম করুন। আমাদেরকে পানি দান করুন। এই বলে তিনি হাত উঠালেন। লোকেরাও তার সঙ্গে হাত উঠাল। একটু পরই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হল।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতেই কবি বলেন: (আংশিক)
أَنَا الْمُذْنِبُ الْخَطَّاءُ وَالْعَفْوُ وَاسِعٌ ، وَلَوْ لَمْ يَكُنْ ذَنْبُ لَمَا وَقَعَ الْعَفْوُ.
অর্থ: আমি পাপী, আমি গুনাহগার। তবে আপনার ক্ষমা তো ব্যাপক। যদি কোনোও গুনাহই না থাকত, তবে তো ক্ষমার কোনোও বিষয়ই থাকত না।
দুআর সময় দুই হাত উঠানো অতঃপর চেহারায় মোছা
(১০৩৮) হজরত উমর বিন খাত্তাব রাদি. থেকে বর্ণিত-
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا رَفَعَ يَدَيْهِ فِي الدُّعَاءِ لَمْ يَحُطَّهُمَا حَتَّى يَمْسَحَ بِهِمَا وَجْهَهُ .
অর্থ: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআয় যখন হাত উঠাতেন, তখন হাত দ্বারা চেহারা মাসেহ না করে হাত নামাতেন না。
(১০৩৯) সুনানে আবু দাউদে হজরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাদি. এর সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে উভয় হাদিসের সনদই দুর্বল।
দুআর পুনরাবৃত্তি মুস্তাহাব হওয়া
(১০৪০) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُعْجِبُهُ أَنْ يَدْعُوَ ثَلَاثًا وَيَسْتَغْفِرَ ثَلَاثًا.
অর্থ: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার করে দুআ ও ইস্তিগফার করা পছন্দ করতেন。
দু'আয় অন্তরের উপস্থিতি রাখার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধকরণ
দুআর মূল উদ্দেশ্য হল, অন্তরের উপস্থিতি যেমনটি পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে অসংখ্য-অগণিত প্রমাণ রয়েছে এবং এ ব্যাপারে জ্ঞান উল্লেখের চেয়েও স্পষ্ট। তবে আমরা বরকতস্বরূপ কেবল একটি হাদিস উল্লেখ করছি।
(১০৪১) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
ادْعُوا اللَّهَ وَأَنْتُمْ مُوْقِنُوْنَ بِالْإِجَابَةِ، وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ لَا يَسْتَجِيْبُ دُعَاءً مِنْ قَلْبٍ غَافِلٍ لَاهٍ.
অর্থ: তোমরা দুআ কবুলের ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস রেখে আল্লাহর কাছে দুআ কর। জেনে রাখ, আল্লাহ তাআলা কোনোও উদাসীন ও অমনোযোগী অন্তরের দুআ কবুল করেন না। -হাদিসের সনদ দুর্বল。
অনুপস্থিতদের জন্য দুআ করার মর্যাদা
আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَالَّذِينَ جَاءُوا مِنْ بَعْدِهِمْ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيْمَانِ.
অর্থ: তাদের পরবর্তী যারা এসেছে তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে এবং আমাদের ঐ সকল ভাইদেরকে ক্ষমা করুন, যারা ঈমান আনয়নে আমাদের অগ্রবর্তী হয়েছে。
অপর আয়াতে বলেন-
وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ .
অর্থ: আপনি আপনার জন্য ও মুমিন নর-নারীর জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করুন。
আল্লাহ তাআলা ইবরাহিম আ. সম্পর্কে সংবাদ দিয়ে বলেন-
رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ.
অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং মুমিনদেরকে হিসাব কায়েম হওয়ার দিন ক্ষমা করুন。
হজরত নূহ আ. সম্পর্কে সংবাদ দিয়ে বলেন-
رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِمَنْ دَخَلَ بَيْتِيَ مُؤْمِنًا وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ .
অর্থ: হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, মুমিন হয়ে যে আমার ঘরে প্রবেশ করেছে তাকে এবং সকল মুমিন নর-নারীকে ক্ষমা করুন。
(১০৪২) হজরত আবু দারদা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন-
مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يَدْعُوْ لِأَخِيهِ بِظَهْرِ الْغَيْبِ إِلَّا قَالَ الْمَلَكُ : وَلَكَ بِمِثْلٍ. وَفِي رِوَايَةٍ: دَعْوَةُ الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ لِأَخِيهِ بِظَهْرِ الْغَيْبِ مُسْتَجَابَةُ، عِنْدَ رَأْسِهِ مَلَكُ مُوَكَّلُ، كُلَّمَا دَعَا لِأَخِيهِ بِخَيْرٍ قَالَ الْمَلَكُ الْمُوَكَّلُ بِهِ : آمِيْنَ، وَلَكَ بِمِثْلٍ.
অর্থ: যে ব্যক্তি অপর মুসলমান ভাইয়ের অনুপস্থিতে তার জন্য দুআ করে, তখন ফেরেশতা তার সঙ্গে বলেন, তোমার জন্যও অনুরূপ বিষয় হোক। মুসলিম শরিফেই আবু দারদা রাদি. থেকে আরেকটি বর্ণনায় এসেছে- রাসুল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এক মুসলমান-কর্তৃক অপর অনুপস্থিত মুসলমান ভাইয়ের জন্য করা দুআ কবুল করা হয়। তার ওপর অর্পিত একজন ফেরেশতা রয়েছেন, যখনই সে তার ভাইয়ের জন্য কল্যাণের দুআ করে, তার ওপর অর্পিত ফেরেশতা বলেন, আমিন। তোমার জন্যও অনুরূপ বিষয় হোক。
(১০৪৩) হজরত ইবনে উমর রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِنَّ أَسْرَعَ الدُّعَاءِ إِجَابَةً دَعْوَةُ غَائِبٍ لِغَائِبِ.
অর্থ: এক অপরিচিত ব্যক্তির জন্য অন্য অপরিচিত ব্যক্তির দুআ সবচেয়ে দ্রুত কবুল হয়। -ইমাম তিরমিজি রহ. হাদিসটিকে দুর্বল সাব্যস্ত করেছেন。
অনুগ্রহকারীর জন্য দুআ এবং দুআর ধরন
এই অধ্যায়ে অনেক বিষয়ই রয়েছে, ইতিপূর্বে যথাস্থানে যার আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম বিষয় এটি:
(১০৪৪) হজরত উসামা বিন জায়েদ রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
مَنْ صُنِعَ إِلَيْهِ مَعْرُوْفٌ، فَقَالَ لِفَاعِلِهِ : جَزَاكَ اللَّهُ خَيْرًا ، فَقَدْ أَبْلَغَ فِي الثَّنَاءِ.
অর্থ: কারো জন্য কোনো উপকার করা হল এবং সে উপকারকারীকে “জাজাকাল্লাহু খায়রান” (আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন) বলে দুআ দিল, সে যেন (উপকারকারীর) পূর্ণাঙ্গরূপে প্রশংসা করল। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান সহিহ。
সামান্য পূর্বেই (অর্থাৎ জিহ্বা সংবরণ অধ্যায়ে) সহিহ হাদিসে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস বর্ণনা করেছি, তিনি বলেছেন-
وَمَنْ صَنَعَ إِلَيْكُمْ مَعْرُوفًا فَكَافِرُوهُ، فَإِنْ لَمْ تَجِدُوا مَا تُكَافِيُونَه فَادْعُوْا لَهُ حَتَّى تَرَوْا أَنَّكُمْ قَدْ كَافَأْتُمُوهُ.
অর্থ: কেউ যদি তোমাদের কোনোও উপকার করে, তবে তোমরাও তার অনুরূপ উপকার কর। যদি তোমরা অনুরূপ উপকার করার সামর্থ্য না রাখ, তবে তোমরা তার জন্য দুআ করে দাও, যাতে করে তোমাদের মনে হয় যে, তোমরাও তার সঙ্গে অনুরূপ আচরণ করেছ。
বড়দের থেকে দুআ নেয়া, যদিও দুআপ্রার্থী প্রার্থিত ব্যক্তির চেয়ে উত্তম হয়। ফজিলতপূর্ণ স্থানসমূহে দুআ করা
এ বিষয়েও অগণিত হাদিস রয়েছে। এটি একটি সর্বসম্মত বিষয়। তবে এ বিষয়ে সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য দলিল এটি-
(১০৪৫) হজরত উমর বিন খাত্তাব রাদি. থেকে বর্ণিত-
اسْتَأْذَنْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْعُمْرَةِ فَأَذِنَ لِي وَقَالَ : لَا تَنْسَنَا يَا أُخَيَّ مِنْ دُعَائِكَ. فَقَالَ كَلِمَةً مَا يَسُرُّنِي أَنَّ لِي بِهَا الدُّنْيَا وَفِي رِوَايَةٍ : أَشْرِكْنَا يَا أُخَيَّ فِي دُعَائِكَ.
অর্থ: আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উমরার অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাকে অনুমতি দিয়ে বললেন, ভাই আমার! আমাদের জন্য দুআ করতে ভুলবেন না। পরবর্তীতে হজরত উমর রাদি. বলেন, রাসূলের এই একটি শব্দ আমাকে এতেঠটা আনন্দ দিয়েছে যে, এর বিনিময়ে সমগ্র দুনিয়ার সম্পদও আমাকে এতটা আনন্দিত করতে পারত না। অপর এক রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ওহে ভাই আমার! তোমার দুআয় আমাদেরকেও শরিক রাখবেন। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, এই হাদিসটি হাসান সহিহ। হাদিসটি আমরা 'আজকারুল মুসাফির' অধ্যায়ে বর্ণনা করেছি。
নিজের জন্য কিংবা নিজের সন্তান, সেবক, সম্পদ ইত্যাদির জন্য বদদুআ করা নিষেধ
(১০৪৬) হজরত জাবের রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
لَا تَدْعُوْا عَلَى أَنْفُسِكُمْ، وَلَا تَدْعُوْا عَلَى أَوْلَادِكُمْ، وَلَا تَدْعُوْا عَلَى خَدَمِكُمْ، وَلَا تَدْعُوْا عَلَى أَمْوَالِكُمْ، لَا تُوَافِقُوْا مِنَ اللَّهِ، تَبَارَكَ وَتَعَالَى سَاعَةَ نَيْلٍ فِيْهَا عَطَاءُ فَيَسْتَجِيْبَ لَكُمْ .
অর্থ: তোমরা নিজেদেরকে বদদুআ করবে না। সন্তানদেরকে বদদুআ করবে না। খাদেমদের বদদুআ করবে না। সম্পদের ওপরও বদদুআ করবে না। কেননা, হতে পারে সেটা এমন এক সময় যখন (আল্লাহর পক্ষ থেকে) দান করা হয়; ফলে তোমাদের সেই বদদুআ কবুল হয়ে যাবে。
ইমাম মুসলিম রহ. এই হাদিসটি তার 'সহিহ'-এর শেষের দিকে বর্ণনা করেছেন। হাদিসের ভাষ্য হল-
لَا تَدْعُوْا عَلَى أَنْفُسِكُمْ، وَلَا تَدْعُوْا عَلَى أَوْلَادِكُمْ، وَلَا تَدْعُوْا عَلَى أَمْوَالِكُمْ ؛ لَا تُوَافِقُوْا مِنَ اللهِ، سَاعَةً يُسْأَلُ فِيْهَا عَطَاءُ، فَيَسْتَجِيبُ لَكُمْ.
অর্থ: তোমরা নিজেদেরকে বদদুআ করবে না, নিজেদের সন্তানদেরকে বদদুআ করবে না, খাদেমদের বদদুআ করবে না এবং সম্পদের ওপরও বদদুআ করবে না। কেননা, হতে পারে সেটা এমন এক সময় যখন কিছু প্রার্থনা করলে কবুল হয়ে যায়। ফলে তোমাদের এই বদদুআও কবুল হয়ে যাবে。
মুসলমানের দুআ হয়ত তার কাঙ্ক্ষিত বস্তু প্রদানের মাধ্যমে কবুল হয় কিংবা ভিন্ন কিছুর মাধ্যমে মুতরাং দুআ কবুলের ব্যাপারে তাড়াহুড়ো না করা উচিত।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ.
অর্থ: হে নবি, আমার বান্দাগণ যখন আপনার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, তখন (আপনি তাদেরকে বলুন:) আমি এতটা নিকটবর্তী যে, কেউ যখন আমাকে ডাকে আমি তার ডাকে সাড়া দেই。
অন্য আয়াতে বলেন-
ادْعُوْنِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ .
অর্থ: তোমরা আমাকে ডাক; আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব。
(১০৪৭) হজরত উবাদা বিন সামিত রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : مَا عَلَى الْأَرْضِ مُسْلِمُ يَدْعُو اللَّهَ بِدَعْوَةٍ إِلَّا آتَاهُ اللهُ إِيَّاهَا، أَوْ صَرَفَ عَنْهُ مِنَ السُّوْءِ مِثْلَهَا مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيْعَةِ رَحِمٍ، فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ : إِذَنْ نُكْثِرَ، قَالَ : اللَّهُ أَكْثَرُ.
অর্থ: যদি জমিনের বুকে কোনো মুসলমান আল্লাহ তাআলার কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তবে আল্লাহ তাআলা হয়ত তার কাঙ্ক্ষিত বিষয় দান করেন। অথবা এর বিনিময়ে কোনো মন্দ পরিণام থেকে তাকে বাঁচিয়ে রাখেন। যদি সে কোনো গুনাহ অথবা আত্মীয়তা ছিন্নের দুআ না করে থাকে। এক ব্যক্তি বলে ওঠল, তবে তো আমরা বেশি বেশি দুআ করব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাআলাও বেশি বেশি দান করবেন। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান সহিহ।
ইমাম হাকেম আবু আবদুল্লাহ রহ. তার 'আলমুসতাদরাক আলাস সহিহাইন' কিতাবে হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদি. থেকে একই হাদিস বর্ণনা করেছেন। সেই হাদিসে অতিরিক্ত এও আছে- অথবা এই দুআর সওয়াব আল্লাহ তাআলা তার জন্য আখেরাতের জন্য জমিয়ে রাখবেন。
(১০৪৮) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
يُسْتَجَابُ لِأَحَدِكُمْ مَالَمْ يَعْجَلْ فَيَقُوْلَ: قَدْ دَعَوْتُ فَلَمْ يُسْتَجَبْ لِي. وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ.
অর্থ: তোমাদের প্রত্যেকের দুআ কবুল করা হয় যতক্ষণ সে তাড়াহুড়ো না করে এবং না বলে, আমি তো দুআ করেছি; অথচ এখনও কবুল হল না। -ইমাম তিরমিজি রহ. হাদিসটিকে হাসান সহিহ বলেছেন。

টিকাঃ
১৫৩২. সুরা গাফির: ৬০।
১৫৩৩. সুরা আরাফ: ৫৫।
১৫৩৪. সুরা বাকারা: ২৮৬। তরজমা: হেদায়াতুল কুরআন ১ম খণ্ড থেকে।
১৫৩৫. নিসা: ১০২।
১৫৩৬. সহিহ বুখারি: ২২৭২, সহিহ মুসলিম: ২৭৪৩।
১৫৩৭. জামে তিরমিজি: ৩৩৮৬।
১৫৩৮. আবু দাউদ: ১৪৮৫, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৮৬৬, সুনানে বাইহাকি ২/২১২।
১৫৩৯. আবু দাউদ: ১৫২৪, আমাল: ৪৫৭, নাসাঈ, মু. আহমাদ ১/৩৯৪।
১৫৪০. জামে তিরমিজি: ৩৪৭৪, মু. ঘাকেম ১/৪৯৩।
১৫৪১. সুরা হাশর: ১০।
১৫৪২. সুরা মুহাম্মাদ: ১৯।
১৫৪৩. সুরা ইবরাহিম: ৪১।
১৫৪৪. সুরা নুহ: ২৮।
১৫৪৫. সহিহ মুসলিম: ২৭৩২।
১৫৪৬. সহিহ মুসলিম: ২৭৩৩, সুনানে আবু দাউদ: ১৫৩৪।
১৫৪৭. সুনানে আবু দাউদ: ১৫৩৫, সুনানে তিরমিজি: ১৯৮০।
১৫৪৮. সুনানে তিরমিজি: ২০৩৫।
১৫৪৯. সুনানে আবু দাউদ: ১৬৭২।
১৫৫০. সুনানে আবু দাউদ: ১৪৯৮, সুনানে তিরমিজি: ৩৫৬২।
১৫৫১. সুনানে আবু দাউদ: ১৫৩২।
১৫৫২. সহিহ মুসলিম: ৩০০৯।
১৫৫৩. সুরা বাকারা: ১৮৬।
১৫৫৪. সুরা গাফির: ৬০।
১৫৫৫. সুনানে তিরমিজি: ৩৫৮৩।
১৫৫৬. মুসতাদরাকে হাকেম ১/৪৯৩।
১৫৫৭. সহিহ বুখারি: ৬৩৪০, সহিহ মুসলিম: ২৭৩৫, সুনানে তিরমিজি ৫/৪৬৪।

📘 আল আযকার > 📄 তাকদির অবধার্য হওয়া সত্ত্বেও দুআর ফায়দা

📄 তাকদির অবধার্য হওয়া সত্ত্বেও দুআর ফায়দা


তাকদির অবশ্যম্ভাবী হওয়া সত্ত্বেও দুআর ফায়দা
ইমাম গাজালি রহ. বলেন, যদি কেউ প্রশ্ন করে, আল্লাহ প্রদত্ত তাকদির যেহেতু অবশ্যম্ভাবী। সুতরাং দুআ করে কীইবা লাভ হবে? এর উত্তর হল, দুআর মাধ্যমে বালা-মুসিবত দূর হওয়াটাও তাকদিরের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং দুআ হল মুসিবত দূর করা ও আল্লাহর রহমতো লাভের মাধ্যম। ঢাল যেমন তরবারি প্রতিহত করার মাধ্যম। পানি যেমন মাটি থেকে শস্য উদ্‌গাত হওয়ার কারণ। ঢাল যেমন তীর প্রতিহত করে; ফলে উভয়টি একে অপরের মাধ্যমে প্রতিহত হয়। দুআ ও বালা-মুসিবতের ব্যাপারটিও ঠিক এমন। তাকদিরের ওপর বিশ্বাস করার নাম এ নয় যে, তরবারি ধারণ না করা। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَلْيَأْخُذُوْا حِذْرَهُمْ وَأَسْلِحَتَهُمْ.
অর্থ: তারা যেন (নামাজে) আত্মরক্ষার উপকরণ ও অস্ত্র গ্রহণ করে。
সুতরাং আল্লাহ তাআলা তাকদিরে যেমন অনেক বিষয় রেখে দিয়েছেন, তেমনি সেগুলোর কারণও নির্ধারণ করেছেন।
এতে আমাদের পূর্বোল্লিখিত বিষয়ও থাকতে হবে। অর্থাৎ অন্তরের উপস্থিতি ও অসহায়ত্ব প্রকাশ। এ দুটো বিষয় আল্লাহ তাআলার ইবাদত ও তার মারেফাত লাভের চূড়ান্ত পর্যায়। আল্লাহ তাআলাই সম্মক অবগত।

টিকাঃ
১৫৩৫. নিসা: ১০২।

📘 আল আযকার > 📄 নিজের সৎকর্মের ওসিলায় আল্লাহর কাছে দুআ করা

📄 নিজের সৎকর্মের ওসিলায় আল্লাহর কাছে দুআ করা


নিজের সৎকর্মের ওসিলায় আল্লাহর কাছে দুআ করা
(১০৩৭) হজরত ইবনে উমর রাদি. থেকে গুহাবাসীর হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-
انْطَلَقَ ثَلَاثَةُ نَفَرٍ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حَتَّى أَوَاهُمُ الْمَبِيْتُ إِلَى غَارٍ فَدَخَلُوهُ، فَالْحَدَرَتْ صَخْرَةُ مِنَ الْجِبَلِ فَسَدَّتْ عَلَيْهِمُ النَّارُ، فَقَالُوا: إِنَّهُ لَا يُنْجِيْكُمْ مِنْ هَذِهِ الصَّخْرَةِ إِلَّا أَنْ تَدْعُوا اللَّهَ تَعَالَى بِصَالِحٍ أَعْمَالِكُمْ. قالَ رَجُلٌ مِنْهُمْ: اَللَّهُمَّ إِنَّهُ كَانَ لِي أَبَوَانِ شَيْخَانِ كَبِيرَانِ وَكُنْتُ لَا أُغْبِقُ قَبْلَهُمَا أَهْلاً وَلَا مَالاً وَذُكِرَ تَمَامُ الْحَدِيثِ الطَّوِيلِ فِيْهِمْ، وَأَنَّ كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمْ قَالَ فِي صَالِحٍ عَمَلِهِ : اَللَّهُمَّ إِنْ كُنْتُ قَدْ فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَفَرِّجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيْهِ، فَانْفَرِجَ فِي دَعْوَةِ كُلِّ وَاحِدٍ شَيْءٍ مِّنْهَا، وَانْفَرَجَتْ كُلُّهَا عَقْبَ دَعْوَةٍ الثَّالِثِ، فَخَرَجُوا يَمْشُوْنَ.
অর্থ: তোমাদের পূর্বে (বনি ইসরাঈলের যুগে) তিন ব্যক্তি সফরে বের হল। একপর্যায়ে তারা রাত কাটাতে একটি গুহার আশ্রয় নিয়ে তাতে প্রবেশ করল। হঠাৎ করে একটি বড় পাথরখণ্ড পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ে গুহার মুখ বন্ধ করে দিল। তারা তখন বলল, এমন বিপদ থেকে বাঁচার একমাত্র পথ হচ্ছে, তোমরা তোমাদের নেক আমলসমূহকে ওসিলা বানিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ কর। এক ব্যক্তি দুআ করে বলল, হেআল্লাহ! আমার বৃদ্ধ পিতা-মাতা ছিল। আমি তাদের পূর্বে আমার পরিবার ও অধিনস্তদের কাউকে দুধ পান করাতাম না। তারপর তিনি দীর্ঘ হাদিসটি উল্লেখ করেছেন। তিন ব্যক্তির প্রত্যেকেই তাদের নেক আমলকে ওসিলা বানিয়ে আল্লাহর দরবারে এই বলে দুআ করেছে: হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজ কেবল আপনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করে থাকি, তবে আপনি আমাদের থেকে পাথরটি সরিয়ে দিন। তাদের প্রত্যেকের দুআর বদৌলতে পাথরটি একটু একটু করে সরে গেল। তৃতীয়জনের দুআ শেষে পুরো পাথরটি সরে গেল। তখন তারা গুহা থেকে বের হয়ে চলতে লাগল।
আমাদের কাজি হুসাইনসহ আরো অনেকেই সালাতুল ইসতিসকার আলোচনায় একটি বিষয়ে আলোচনা করেছেন। আলোচনার সারকথা হল, যে ব্যক্তিই কোনোও বিপদ অথবা সঙ্কটে পতিত হবে, সে তার নেক আমলের ওসিলায় আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করবে। তারা দলিল হিসাবে উপরে বর্ণিত হাদিসটিই উপস্থাপন করেন। তবে এ ব্যাপারে একটি আপত্তি করে বলা হয়েছে, এই বিষয়ে কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। কেননা এখানে সামান্য হলেও আল্লাহ তাআলার প্রতি নিঃশর্ত মুখাপেক্ষিতা প্রদর্শন তরক করা হচ্ছে। অথচ দুআর মূল কাঙ্ক্ষিত বিষয়ই হল মুখাপেক্ষিতা প্রদর্শন। এই প্রশ্নের তেমন কোনোও গুরুত্ব নেই। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই হাদিস উক্ত তিন ব্যক্তির প্রশংসাকল্পে বর্ণনা করেছেন। আর এই বিষয়টিই রাসুল-কর্তৃক তাদের কাজকে সমর্থন ও সঠিক হিসাবে আখ্যায়িত করার প্রমাণ বহন করে।
দুআর ব্যাপারে পূর্ববর্তীদের অসাধারণ কিছু কাহিনী
দুআ নিয়ে পূর্ববর্তী বুজুর্গদের অনেক কাহিনীই বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে অসাধারণ একটি কাহিনী হল, যা ইমাম আওজায়ি রহ. থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, লোকেরা ইসতিসকার নামাজের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হল। তাদের মাঝে বিলাল বিন সাদ দাঁড়িয়ে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও গুণগান জ্ঞাপন করলেন। এরপর বললেন, হে উপস্থিতবৃন্দ! তোমরা কি তোমাদের গুনাহকে স্বীকার করছ না? তারা বলল, অবশ্যই স্বীকার করছি।
তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আমি আপনাকে বলতে শুনেছি, আপনি বলেছেন-
مَا عَلَى الْمُحْسِنِينَ مِنْ سَبِيلٍ.
অর্থ: সৎকর্মশীলদের ওপর শাস্তির কোনোও বিষয় নেই।
হে আল্লাহ! আমরা আমাদের গুনাহ ও অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছি। সুতরাং আমরা ছাড়া আপনার মাগফেরাত আর কার জন্য হবে? হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমাদের ওপর রহম করুন। আমাদেরকে পানি দান করুন। এই বলে তিনি হাত উঠালেন। লোকেরাও তার সঙ্গে হাত উঠাল। একটু পরই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হল।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতেই কবি বলেন: (আংশিক)
أَنَا الْمُذْنِبُ الْخَطَّاءُ وَالْعَفْوُ وَاسِعٌ ، وَلَوْ لَمْ يَكُنْ ذَنْبُ لَمَا وَقَعَ الْعَفْوُ.
অর্থ: আমি পাপী, আমি গুনাহগার। তবে আপনার ক্ষমা তো ব্যাপক। যদি কোনোও গুনাহই না থাকত, তবে তো ক্ষমার কোনোও বিষয়ই থাকত না।

টিকাঃ
১৫৩৬. সহিহ বুখারি: ২২৭২, সহিহ মুসলিম: ২৭৪৩।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন