📄 মিথ্যা সাক্ষ্যদান, খোটা দেয়া ও অভিশম্পাত করা
মিথ্যা সাক্ষ্যপ্রদান অত্যন্ত হারাম কাজ
আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَاجْتَنِبُوا قَوْلَ الزُّوْرِ.
অর্থ: তোমরা মিথ্যা সাক্ষ্যপ্রদান থেকে বিরত থাক。
আরো বলেন-
وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا.
অর্থ: যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তার পিছনে তুমি পড় না। নিশ্চয় কান, চোখ এবং অন্তর সবগুলো (নিজ কৃতকর্ম সম্পর্কে) জিজ্ঞাসিত হবে。
(৯১৪) হজরত আবু বাকরা নুফাই বিন হারিস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার এ কথাটি বলেছেন-
أَلَا أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ ، قَالُوا : بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: الْإِشْرَاكُ بِاللَّهِ، ، وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ وَجَلَسَ وَكَانَ مُتَّكِنًا فَقَالَ: أَلَا وَقَوْلُ الزُّوْرِ. قَالَ : فَمَا زَالَ يُكَرِّرُهَا حَتَّى قُلْنَا: لَيْتَهُ سَكَتَ.
অর্থ: আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহ সম্বন্ধে অবহিত করব না? আমরা বললাম, অবশ্যই ইয়া রাসুলুল্লাহ! বললেন, আল্লাহর সাথে শরিক করা এবং মা-বাবার অবাধ্যতা করা। তিনি হেলান দিয়ে বসে ছিলেন, উঠে বললেন, সাবধান! মিথ্যা কথা ও মিথ্যা সাক্ষ্যপ্রদান থেকে বেঁচে থাকবে। এ কথা এতবার বলছিলেন যে, এক পর্যায়ে আমরা মনে মনে বলেছিলাম, তিনি চুপ করেন না কেন?
ইমাম নববি রহ. বলেন, এ অধ্যায়ে অনেক হাদিস আছে, যা উল্লেখ করেছি তাই যথেষ্ট। এ ব্যাপারে উম্মাহর ঐক্য সংঘটিত হয়েছে।
দান বা অনুগ্রহ করে খোটা দেয়া নিষেধ
আল্লাহ তাআলা বলেন-
يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُبْطِلُوا صَدَقْتِكُمْ بِالْمَنِ وَالْأَذَى كَالَّذِي يُنْفِقُ مَالَهُ رِئَاءَ النَّاسِ.
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-খয়রাতকে বরবাদ কর না। - মুফাসসিরিনে কেরাম বলেন, অর্থাৎ এর সওয়াব বিনষ্ট কর না।
(৯১৫) হজরত আবু জর রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ، وَلَا يُزَكِّيهِمْ، وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ. قَالَ : فَقَرَأَهَا رَسُولُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلَاثَ مِرَارًا. قَالَ أَبُو ذَرٍّ: خَابُوا وَخَسِرُوا مَنْ هُمْ يَا رَسُوْلَ اللهِ ؟ قَالَ: الْمُسْبِلُ ، وَالْمَنَّانُ، وَالْمُنَفِّقُ سِلْعَتَهُ بِالْحَلِفِ الْكَاذِبِ.
অর্থ: আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না এবং তাকে পবিত্রও করবেন না। বরং তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। বর্ণনাকারী বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা তিনবার বলেছেন। আবু জর রাদি. বললেন, তাহলে তো তারা ক্ষতিগ্রস্ত ও ব্যর্থ; কিন্তু তারা কারা ইয়া রাসুলুল্লাহ! রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে লোক পায়ের গোছার নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরিধান করে। যে ব্যক্তি দান করে খোটা দেয়। যে মিথ্যা শপথ দ্বারা পণ্য বিক্রয় করে。
অভিসম্পাত করা নিষেধ
(৯১৬) হজরত সাবেত বিন দাহহাক রাদি. (তিনি বায়আতে রিদওয়ানের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَعْنُ الْمُؤْمِنِ كَقَتْلِهِ.
অর্থ: মুমিনকে অভিসম্পাত করা তাকে হত্যার সমতুল্য。
(৯১৭) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَا يَنْبَغِي لِصِدِّيْقٍ أَنْ يَكُوْنَ لَعَانًا.
অর্থ: সিদ্দিকের পক্ষে কাউকে লানত করা উচিত না。
(৯১৮) হজরত আবু দারদা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَا يَكُونُ اللَّعَانُونَ شُفَعَاءَ وَلَا شُهَدَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
অর্থ: অভিসম্পাতকারীরা কেয়ামতের দিন কোনো সুপারিশকারী বা সাক্ষী হবে না。
(৯১৯) হজরত সামুরা বিন জুনদুব রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَا تَلَاعَنُوْا بِلَعْنَةِ اللهِ، ، وَلَا بِغَضَبِهِ، وَلَا بِالنَّارِ.
অর্থ: তোমরা একে অপরের জন্য আল্লাহর লানত, ক্রোধ এবং জাহান্নামের বদদুআ কর না। -তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান সহিহ。
(৯২০) হজরত ইবনে মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالطَّعَانِ، وَلَا اللَّعَانِ، وَلَا الْفَاحِشِ، وَلَا الْبَدِيءِ.
অর্থ: মুমিন কখনো দোষারোপকারী ও নিন্দাকারী হতে পারে না। অভিসম্পাতকারী হতে পারে না। অশ্লীল কাজ করতে পারে না। কটুভাষীও হতে পারে না। -তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান。
(৯২১) হজরত আবু দারদা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا لَعَنَ شَيْئًا صَعِدَتِ اللَّعْنَةُ إِلَى السَّمَاءِ فَتُغْلَقُ أَبْوَابُ السَّمَاءِ دُونَهَا، ثُمَّ تَهْبِطُ إِلَى الْأَرْضِ فَتُغْلَقُ أَبْوَابُهَا دُوْنَهَا، ثُمَّ تَأْخُذُ يَمِينًا وَشِمَالًا، فَإِذَا لَمْ تَجِدْ مَسَانًا رَجَعَتْ إِلَى الَّذِي لُعِنَ، فَإِنْ كَانَ لِذَلِكَ أَهْلًا وَإِلَّا رَجَعَتْ إِلَى قَائِلِهَا.
অর্থ: বান্দা যখন কোনো বস্তুকে অভিশাপ দেয়, তখন ঐ অভিশাপ আকাশের দিকে অগ্রসর হয়। অতঃপর সেই অভিশাপের আকাশে ওঠার পথ বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর ঐ অভিশাপ দুনিয়ার দিকে অগ্রসর হয়, তখন ঐ অভিশাপের দুনিয়াতে ফেরার পথ বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর সেটা ডানে-বামে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। অবশেষে অন্য কোনো পথ না পেয়ে যাকে অভিশাপ দেয়া হয়েছে তার দিকেই ফিরে আসে। যদি সে তার যোগ্য হয় তো তার উপর পতিত হয়, অন্যথায় অভিশাপকারীর দিকেই ফিরে আসে。
(৯২২) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ لَعَنَ شَيْئًا لَيْسَ لَهُ بِأَهْلِ رَجَعَتِ اللَّعْنَةُ عَلَيْهِ.
অর্থ: যে ব্যক্তি এমন কোনো বস্তুকে অভিসম্পাত করল যা এর যোগ্য নয়, ঐ অভিশাপ তার দিকেই ফিরে আসে。
(৯২৩) হজরত ইমরান বিন হুসাইন থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
بَيْنَمَا رَسُوْلُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَعْضِ أَسْفَارِهِ، وَامْرَأَةٌ مِنَ الْأَنْصَارِ عَلَى نَاقَةٍ، فَضَجِرَتْ، فَلَعَنَتْهَا، فَسَمِعَ ذَلِكَ رَسُوْلُ اللَّهِ، صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: خُذُوا مَا عَلَيْهَا وَدَعُوهَا؛ فَإِنَّهَا مَلْعُونَةٌ. قَالَ عِمْرَانُ: فَكَأَنِّي أَرَاهَا الْآنَ تَمْشِي فِي النَّاسِ مَا يَعْرِضُ لَهَا أَحَدٌ.
অর্থ: একবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফরে ছিলেন, সে সময় এক আনসারি মহিলা উষ্ট্রীর পিঠে আরোহী ছিলেন। তিনি তার আচরণে বিরক্ত হয়ে তাকে অভিসম্পাত করলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটা শুনে বললেন, এর উপর যা আছে তা নিয়ে নাও এবং একে ছেড়ে দাও। কারণ, এটা তো অভিশপ্ত হয়ে গেছে। ইমরান বলেন, আমি যেন সেই উষ্ট্রীকে এখনো দেখতে পাচ্ছি যে, মানুষের মাঝে ঘুরছে, কিন্তু কেউ তার দিকে ভ্রুক্ষেপও করছে না。
ফায়দা: হজরত ইমরানের বাবা হুসাইনের ইসলাম গ্রহণ ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্য নিয়ে উলামায়ে কেরামের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। সহিহ মত হল, তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্যও পেয়েছেন। তাই আমি রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছি।
(৯২৪) হজরত আবু বারজা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
بَيْنَمَا جَارِيَةٌ عَلَى نَاقَةٍ عَلَيْهَا بَعْضُ مَتَاعِ الْقَوْمِ إِذْ بَصُرَتْ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَتَضَايَقَ بِهِمُ الْجَبَلُ ، فَقَالَتْ: حَلِ ، اللَّهُمَّ الْعَنْهَا. قَالَ : فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا تُصَاحِبْنَا نَاقَةُ عَلَيْهَا لَعْنَةٌ. وَفِي رِوَايَةٍ: لَا تُصَاحِبْنَا رَاحِلَةُ عَلَيْهَا لَعْنَةُ مِنَ اللهِ .
অর্থ: একবার এক মেয়ে উষ্ট্রীর উপর আরোহী ছিল। উষ্ট্রীর উপর তার সম্প্রদায়ের কিছু মাল-সামানাও ছিল। হঠাৎ সে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখতে পেল, আর পাহাড়ের কারণে রাস্তা সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তখন সে আরবিতে উট তাড়ানোর একটা শব্দ উচ্চারণ করল, পরে বলল, হে আল্লাহ! আপনি এর উপর লানত করুন। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা শুনে বললেন, আমাদের সাথে এমন উষ্ট্রী যেন না থাকে, যার উপর অভিশাপ রয়েছে। অন্য এক বর্ণনায় আছে, আমাদের সাথে এমন বাহন থাকবে না যার উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে অভিশাপ রয়েছে।
অনির্দিষ্ট ও অপ্রসিদ্ধ পাপীষ্ঠকে লানত করা বৈধ
একাধিক সহিহ প্রসিদ্ধ হাদিসে প্রমাণিত যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَعَنَ اللهُ الْوَاصِلَةَ وَالْمُسْتَوْصِلَةَ.
অর্থ: আল্লাহ ঐ সব নারীদের উপর লানত করুক, যারা নিজেরা পরচুলা লাগায় এবং অন্যকে লাগিয়ে দেয়...।
আরো বলেছেন-
لَعَنَ اللهُ آكِلَ الرِّبَا.
অর্থ: আল্লাহ পাক সুদখোরের ওপর লানত করুক...।
আরো বলেছেন-
لَعَنَ اللهُ المُصَوِّرِينَ.
অর্থ: আল্লাহ চিত্রাঙ্কনকারীদের (রহমত থেকে) বিতাড়িত করুক。
আরো বলেন-
لَعَنَ اللَّهُ مَنْ غَيَّرَ مَنَارَ الْأَرْضِ.
অর্থ: আল্লাহ পাক ঐ ব্যক্তিকে অভিশাপ দিক, যে অন্যায়ভাবে জমির (সীমানার) চিহ্ন পরিবর্তন করে。
আরো বলেছেন-
لَعَنَ اللهُ السَّارِقَ يَسْرِقُ البَيْضَةَ.
অর্থ: আল্লাহ এমন চোরের উপর লানত করুক, যে ডিম চুরি করে।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لَعَنَ اللهُ مَنْ لَعَنَ وَالِدَيْهِ، وَلَعَنَ اللَّهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ الله.
অর্থ: যে ব্যক্তি নিজের মা-বাবার ওপর অভিসম্পাত করে, আল্লাহ তার প্রতি অভিশম্পাত করুক। যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে যবেহ করে, তার ওপর আল্লাহ লানত করুক。
আরো বলেছেন-
مَنْ أَحْدَثَ فِينَا حَدَثاً، أَوْ آوَى مُحْدِثاً، فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللَّهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ.
অর্থ: যে ব্যক্তি মদিনায় কোনো বিদআত সৃষ্টি করবে অথবা কোনো বিদআতিকে আশ্রয় দিবে, তার ওপর আল্লাহ, ফেরেশতা এবং সমগ্র মানবজাতির অভিশাপ。
তিনি আরো বলেন-
اللَّهُمَّ الْعَنْ رِعْلاً وَذَكْوَانَ وَعُصَيَّةً عَصَتِ اللَّهَ وَرَسُوْلَهُ.
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি রিয়িল, জাকওয়ান ও উসাইয়াহ গোত্রগুলোর ওপর লানত করুন। তারা আল্লাহ ও রাসুলের অবাধ্যতা করেছে। এরা হল আরবের তিনটি গোত্র।
আরো বলেন-
لَعَنَ اللهُ الْيَهُودَ حُرِّمَتْ عَلَيْهِمُ الشُّحُوْمُ فَجَمَلُوْهَا فَبَاعُوْهَا.
অর্থ: আল্লাহ তাআলা ইহুদিদের ওপর লানত করুক: তাদের ওপর চর্বি হারাম করা হয়েছিল, কিন্তু তারা সেটা বিক্রি করা শুরু করেছিল。
তিনি আরো বলেছেন-
لَعَنَ اللهُ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ.
অর্থ: আল্লাহ পাক ইহুদি-খ্রীস্টানের ওপর অভিসম্পাত করুক। কারণ, তারা নিজেদের নবিদের কবরকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে。
তিনি আরো বলেছেন-
لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ، وَالْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ.
অর্থ: পুরুষদের মধ্য থেকে মহিলাদের সাদৃশ্য গ্রহণকারী ও মহিলাদের মধ্য থেকে পুরুষদের সাদৃশ্য গ্রহণকারিণীদের ওপর লানত।
এ সমস্ত হাদিসের কিছু تو সহিহ বুখারি ও মুসলিমের উভয়টাতে আছে, কিছু যে কোনো একটিতে। সংক্ষিপ্ততার স্বার্থে সবগুলো সনদসহ উল্লেখ না করে শুধু ইঙ্গিত দিলাম।
(৯২৫) হজরত জাবের রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ عَلَيْهِ حِمَارُ قَدْ وُسِمَ فِي وَجْهِهِ، فَقَالَ: لَعَنَ اللهُ الَّذِي وَسَمَهُ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখলেন এক গাধাকে তার চেহারায় দাগ দেয়া হয়েছে। বললেন, আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির ওপর লানত করুক যে এর চেহারায় দাগ দিয়েছে。
(৯২৬) সহিহ বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত আছে-
أَنَّ ابْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا مَرَّ بِفِتْيَانٍ مِنْ قُرَيْشٍ قَدْ نَصَبُوْا طَيْرًا وَهُمْ يَرْمُوْنَهُ، فَقَالَ ابْنُ عُمَرَ: لَعَنَ اللهُ مَنْ فَعَلَ هَذَا؛ إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَعَنَ مَنِ اتَّخَذَ شَيْئًا فِيْهِ الرُّوْحُ غَرَضًا.
অর্থ: হজরত ইবনে উমর রাদি. কিছু কুরাইশি যুবকদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যারা একটি পাখিকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে তীরন্দাজি করছিল। তিনি বললেন, যে এ কাজ করে তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঐ ব্যক্তির ওপর আল্লাহ তাআলার অভিশাপ, যে কোনো প্রাণীকে তীরন্দাজির লক্ষ্যবস্তু বানায়。
বৈধ-অবৈধ অভিশাপ
গুনাহ থেকে পবিত্র মুসলিমকে অভিশাপ দেয়া মুসলিমদের ঐক্যমতে হারাম। খারাপ গুণাবলী সম্পন্ন ব্যক্তিদের লানত করা বৈধ আছে। যেমন এভাবে বলা- আল্লাহ পাক অত্যাচারীদের ওপর লানত বর্ষণ করুক, কাফেরদের ওপর আল্লাহর লানত বর্ষণ হোক, ইহুদি-খ্রীস্টানের ওপর আল্লাহর লানত, ফাসেকদের ওপর আল্লাহ লানত বর্ষণ করুক। ছবি অঙ্কনকারীদের ওপর আল্লাহর লানত বর্ষণ হোক। এ ধরনের অন্যান্য শব্দ বলা, যা পূর্বের পরিচ্ছেদে অতীত হয়েছে।
কোনো গুনাহে লিপ্ত নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে লানত করাও হাদিসের বাহ্যিক অর্থ অনুযায়ী হারাম নয়। যেমন এভাবে বলা- ইহুদি, খ্রীস্টান অথবা ঐ অত্যাচারী, ব্যভিচারী, ছবি অঙ্কনকারী, চোর কিংবা সুদখোরের ওপর আল্লাহ লানত বর্ষণ করুক। কিন্তু ইমাম গাজালি রহ. এও হারাম হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। তবে যাদের ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত জানি যে, তারা কুফরের ওপর মারা গেছে। যেমন- আবু লাহাব, আবু জাহেল, ফেরাউন, হামান। এ জাতীয় লোকদের ওপর অভিশাপ দেয়া যাবে। ইমাম গাজালি নির্দিষ্ট গুনাহগারকে লানত করাকে বৈধ বলেন না এ জন্য যে, লানত হল আল্লাহর রহমত থেকে বিতাড়ন করা। অথচ এই কাফের বা ফাসেকের শেষ পরিণতি কী হবে তা আমরা জানি না। আরো বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদের নির্দিষ্ট নাম নিয়ে লানত করেছেন, সেটা জায়েজ ছিল। কারণ, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মৃত্যু কুফরের ওপর হবে বলে জানতেন। তিনি আরো বলেন, মানুষের প্রতি বদদুআ করা এমনকি জালেমের জন্যও বদদুআ করা লানতের কাছাকাছি। যেমন- কোনো ব্যক্তি দুআ করল, আল্লাহ তার শরীর সুস্থ না করুক, তাকে নিরাপত্তা না দিক। অথবা এ জাতীয় কিছু। এ সবই নিন্দনীয়। এমনিভাবে সকল প্রাণী ও জড় পদার্থকে লানত করাও নিন্দনীয়。
অনুপযুক্ত ব্যক্তিকে অভিসম্পাত করলে প্রতিকার কীভাবে
জনৈক আলেম থেকে আবু জাফর বর্ণনা করেন- যখন কেউ এমন কোনো বস্তুকে লানত করে ফেলে যে এর উপযুক্ত নয়, সে যেন তাড়াতাড়ি এ কথা বলে, তবে সে যদি উপযুক্ত না হয় (তাহলে তার ওপর লানত নয়)
সৎকাজের আদেশ প্রদান ও অসৎকাজে নিষেধ করার সময় যা বলা যাবে
সৎকাজের আদেশকারী ও অসৎকাজ থেকে নিষেধকারী এবং প্রত্যেক শিষ্টাচার শিক্ষাদানকারীর জন্য জায়েজ আছে যে, সে আদেশ-নিষেধ করতে গিয়ে তার সম্বোধিত ব্যক্তিকে বলতে পারবে- তোমার ধ্বংস হোক বা হে দুর্বল অবস্থার অধিকারী অথবা হে বেপরোয়া! কিংবা হে নিজের ওপর জুলুমকারী ইত্যাদি। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন তার কথাটা মিথ্যা না হয় এবং তাতে স্পষ্ট বা ইশারা ইঙ্গিতে কোনো অপবাদের শব্দ না থাকে, যদিও সেক্ষেত্রে সত্যবাদীই হয়। পূর্বোক্ত বিষয়গুলো জায়েজ হয়েছে কেবল আদব শিক্ষাদান বা ধমকিপ্রদানের উদ্দেশ্যে, যাতে কথাটা অন্তরে বদ্ধমূল হয়।
(৯২৭) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى رَجُلًا يَسُوقُ بَدَنَةً ، فَقَالَ: ارْكَبُهَا. فَقَالَ: إِنَّهَا بَدَنَةٌ. فَقَالَ : ارْكَبُهَا. قَالَ: إِنَّهَا بَدَنَةٌ. قَالَ: ارْكَبُهَا، وَيْلَكَ.
অর্থ: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার এক ব্যক্তিকে দেখলেন সে কুরবানির উট হাকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এতে আরোহন কর। সে বলল, এটা তো কুরবানির উট। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার বললেন, তুমি আরোহন কর। সে আবারো বলল, এটা তো কুরবানির উট। তৃতীয়বার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধমকি দিয়ে বললেন, তোমার ধ্বংস হোক, তুমি এতে আরোহন কর。
টিকাঃ
১৩২৫. হজ্জ: ৩০।
১৩২৬. ইসরা: ৩৬
১৩২৭. সহিহ বুখারি: ২৬৫৪, সহিহ মুসলিম: ৮৭।
১৩২৮. বাকারা: ২৬৪।
১৩২৯. সহিহ মুসলিম: ১০৬, সুনানে নাসাঈ ৫/৮৬, মু. আহমাদ ২/৪৮০।
১৩৩০. সহিহ বুখারি: ৬১০৫, সহিহ মুসলিম: ১১০, সুনানে আবু দাউদ: ৩২৫৭, সুনানে তিরমিজি: ২৬৩৮, সুনানে নাসাঈ ৭/৫।
১৩৩১. সহিহ মুসলিম: ২৫৯৭, সুনানে আবু দাউদ: ৪৯০৭, মু. আহমাদ ৬/৪৪৮।
১৩৩২. সহিহ মুসলিম: ২৫৯৮, সুনানে আবু দাউদ: ৪৯০৭, মু. আহমাদ ৬/৪৪৮।
১৩৩৩. সুনানে আবু দাউদ: ৪৯০৬, সুনানে তিরমিজি: ১৯৭৭, মু. আহমাদ ৫/১৫।
১৩৩৪. সুনানে তিরমিজি: ১৯৭৮, মু. আহমাদ ১/৪০৫, ইবনে হিব্বান: ৪৮, আদাব: ৩১২, মু. হাকেম ১/১২।
১৩৩৫. সুনানে আবু দাউদ: ৪৯০৫, মু. আহমাদ ১/৪৪৮।
১৩৩৬. সুনানে আবু দাউদ: ৪৯০৮, সুনানে তিরমিজি: ১৯৭৯, ইবনে হিব্বান: ১৯৮৮।
১৩৩৭. সহিহ মুসলিম: ২৫৯৫, আবু দাউদ: ২৫৬১, মু. আহমাদ ৪/৪২৯, সুনানে দারিমি: ২৬৮০।
১৩৩৮. সহিহ বুখারি: ৫৯৩৭, সহিহ মুসলিম: ২১২৪।
১৩৩৯. সহিহ মুসলিম: ১৫৯৭, সুনানে আবু দাউদ: ৩৩৩৩, সুনানে ইবনে মাজাহ: ২২৭৭।
১৩৪০. সহিহ বুখারি: ৫৩৪৭।
১৩৪১. সহিহ মুসলিম: ১৭৭৮।
১৩৪২. সহিহ বুখারি: ৬৬৮৩, সহিহ মুসলিম: ১৬৮৭।
১৩৪৩. সহিহ মুসলিম: ১৯৭৮, সহিহ ইবনে হিব্বান: ৬৬০৪।
১৩৪৪. সহিহ বুখারি: ১৭৮০, সহিহ মুসলিম: ১৩৬৬।
১৩৪৫. সহিহ মুসলিম: ৬৭৫।
১৩৪৬. সহিহ বুখারি: ৩৪৬০, সহিহ মুসলিম: ১৫৮২।
১৩৪৭. সহিহ বুখারি: ১৩৩০, সহিহ মুসলিম: ৫২৯।
১৩৪৮. সহিহ মুসলিম: ২১১৭।
১৩৪৯. সহিহ বুখারি: ৫৫১৫, সহিহ মুসলিম: ১৯৭৮, মুসনাদে আহমাদ ২/৮২।
১৩৫০. অভিসম্পাতের সম্বন্ধ মানুষের দিকে হলে বদদুআ অভিষ্ট। আল্লাহর দিকে হলে রহমত (জান্নাত) থেকে বিতাড়ন করা অভিষ্ট। -উ.
১৩৫১. ইহয়াউ উলুমিদ্দিন ৩/১২৩-১২৬।
১৩৫২. সহিহ বুখারি: ৬১৫৯, সহিহ মুসলিম: ১৩২৩, সুনানে তিরমিজি: ৯১১, সুনানে নাসাঈ ৫/১৭৬, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩১০৪।
মিথ্যা সাক্ষ্যপ্রদান অত্যন্ত হারাম কাজ
আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَاجْتَنِبُوا قَوْلَ الزُّوْرِ.
অর্থ: তোমরা মিথ্যা সাক্ষ্যপ্রদান থেকে বিরত থাক。
আরো বলেন-
وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا.
অর্থ: যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তার পিছনে তুমি পড় না। নিশ্চয় কান, চোখ এবং অন্তর সবগুলো (নিজ কৃতকর্ম সম্পর্কে) জিজ্ঞাসিত হবে。
(৯১৪) হজরত আবু বাকরা নুফাই বিন হারিস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার এ কথাটি বলেছেন-
أَلَا أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ ، قَالُوا : بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: الْإِشْرَاكُ بِاللَّهِ، ، وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ وَجَلَسَ وَكَانَ مُتَّكِنًا فَقَالَ: أَلَا وَقَوْلُ الزُّوْرِ. قَالَ : فَمَا زَالَ يُكَرِّرُهَا حَتَّى قُلْنَا: لَيْتَهُ سَكَتَ.
অর্থ: আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহ সম্বন্ধে অবহিত করব না? আমরা বললাম, অবশ্যই ইয়া রাসুলুল্লাহ! বললেন, আল্লাহর সাথে শরিক করা এবং মা-বাবার অবাধ্যতা করা। তিনি হেলান দিয়ে বসে ছিলেন, উঠে বললেন, সাবধান! মিথ্যা কথা ও মিথ্যা সাক্ষ্যপ্রদান থেকে বেঁচে থাকবে। এ কথা এতবার বলছিলেন যে, এক পর্যায়ে আমরা মনে মনে বলেছিলাম, তিনি চুপ করেন না কেন?
ইমাম নববি রহ. বলেন, এ অধ্যায়ে অনেক হাদিস আছে, যা উল্লেখ করেছি তাই যথেষ্ট। এ ব্যাপারে উম্মাহর ঐক্য সংঘটিত হয়েছে।
দান বা অনুগ্রহ করে খোটা দেয়া নিষেধ
আল্লাহ তাআলা বলেন-
يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُبْطِلُوا صَدَقْتِكُمْ بِالْمَنِ وَالْأَذَى كَالَّذِي يُنْفِقُ مَالَهُ رِئَاءَ النَّاسِ.
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-খয়রাতকে বরবাদ কর না। - মুফাসসিরিনে কেরাম বলেন, অর্থাৎ এর সওয়াব বিনষ্ট কর না।
(৯১৫) হজরত আবু জর রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ، وَلَا يُزَكِّيهِمْ، وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ. قَالَ : فَقَرَأَهَا رَسُولُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلَاثَ مِرَارًا. قَالَ أَبُو ذَرٍّ: خَابُوا وَخَسِرُوا مَنْ هُمْ يَا رَسُوْلَ اللهِ ؟ قَالَ: الْمُسْبِلُ ، وَالْمَنَّانُ، وَالْمُنَفِّقُ سِلْعَتَهُ بِالْحَلِفِ الْكَاذِبِ.
অর্থ: আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না এবং তাকে পবিত্রও করবেন না। বরং তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। বর্ণনাকারী বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা তিনবার বলেছেন। আবু জর রাদি. বললেন, তাহলে তো তারা ক্ষতিগ্রস্ত ও ব্যর্থ; কিন্তু তারা কারা ইয়া রাসুলুল্লাহ! রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে লোক পায়ের গোছার নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরিধান করে। যে ব্যক্তি দান করে খোটা দেয়। যে মিথ্যা শপথ দ্বারা পণ্য বিক্রয় করে。
অভিসম্পাত করা নিষেধ
(৯১৬) হজরত সাবেত বিন দাহহাক রাদি. (তিনি বায়আতে রিদওয়ানের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَعْنُ الْمُؤْمِنِ كَقَتْلِهِ.
অর্থ: মুমিনকে অভিসম্পাত করা তাকে হত্যার সমতুল্য。
(৯১৭) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَا يَنْبَغِي لِصِدِّيْقٍ أَنْ يَكُوْنَ لَعَانًا.
অর্থ: সিদ্দিকের পক্ষে কাউকে লানত করা উচিত না。
(৯১৮) হজরত আবু দারদা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَا يَكُونُ اللَّعَانُونَ شُفَعَاءَ وَلَا شُهَدَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
অর্থ: অভিসম্পাতকারীরা কেয়ামতের দিন কোনো সুপারিশকারী বা সাক্ষী হবে না。
(৯১৯) হজরত সামুরা বিন জুনদুব রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَا تَلَاعَنُوْا بِلَعْنَةِ اللهِ، ، وَلَا بِغَضَبِهِ، وَلَا بِالنَّارِ.
অর্থ: তোমরা একে অপরের জন্য আল্লাহর লানত, ক্রোধ এবং জাহান্নামের বদদুআ কর না। -তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান সহিহ。
(৯২০) হজরত ইবনে মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالطَّعَانِ، وَلَا اللَّعَانِ، وَلَا الْفَاحِشِ، وَلَا الْبَدِيءِ.
অর্থ: মুমিন কখনো দোষারোপকারী ও নিন্দাকারী হতে পারে না। অভিসম্পাতকারী হতে পারে না। অশ্লীল কাজ করতে পারে না। কটুভাষীও হতে পারে না। -তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান。
(৯২১) হজরত আবু দারদা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا لَعَنَ شَيْئًا صَعِدَتِ اللَّعْنَةُ إِلَى السَّمَاءِ فَتُغْلَقُ أَبْوَابُ السَّمَاءِ دُونَهَا، ثُمَّ تَهْبِطُ إِلَى الْأَرْضِ فَتُغْلَقُ أَبْوَابُهَا دُوْنَهَا، ثُمَّ تَأْخُذُ يَمِينًا وَشِمَالًا، فَإِذَا لَمْ تَجِدْ مَسَانًا رَجَعَتْ إِلَى الَّذِي لُعِنَ، فَإِنْ كَانَ لِذَلِكَ أَهْلًا وَإِلَّا رَجَعَتْ إِلَى قَائِلِهَا.
অর্থ: বান্দা যখন কোনো বস্তুকে অভিশাপ দেয়, তখন ঐ অভিশাপ আকাশের দিকে অগ্রসর হয়। অতঃপর সেই অভিশাপের আকাশে ওঠার পথ বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর ঐ অভিশাপ দুনিয়ার দিকে অগ্রসর হয়, তখন ঐ অভিশাপের দুনিয়াতে ফেরার পথ বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর সেটা ডানে-বামে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। অবশেষে অন্য কোনো পথ না পেয়ে যাকে অভিশাপ দেয়া হয়েছে তার দিকেই ফিরে আসে। যদি সে তার যোগ্য হয় তো তার উপর পতিত হয়, অন্যথায় অভিশাপকারীর দিকেই ফিরে আসে。
(৯২২) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ لَعَنَ شَيْئًا لَيْسَ لَهُ بِأَهْلِ رَجَعَتِ اللَّعْنَةُ عَلَيْهِ.
অর্থ: যে ব্যক্তি এমন কোনো বস্তুকে অভিসম্পাত করল যা এর যোগ্য নয়, ঐ অভিশাপ তার দিকেই ফিরে আসে。
(৯২৩) হজরত ইমরান বিন হুসাইন থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
بَيْنَمَا رَسُوْلُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَعْضِ أَسْفَارِهِ، وَامْرَأَةٌ مِنَ الْأَنْصَارِ عَلَى نَاقَةٍ، فَضَجِرَتْ، فَلَعَنَتْهَا، فَسَمِعَ ذَلِكَ رَسُوْلُ اللَّهِ، صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: خُذُوا مَا عَلَيْهَا وَدَعُوهَا؛ فَإِنَّهَا مَلْعُونَةٌ. قَالَ عِمْرَانُ: فَكَأَنِّي أَرَاهَا الْآنَ تَمْشِي فِي النَّاسِ مَا يَعْرِضُ لَهَا أَحَدٌ.
অর্থ: একবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফরে ছিলেন, সে সময় এক আনসারি মহিলা উষ্ট্রীর পিঠে আরোহী ছিলেন। তিনি তার আচরণে বিরক্ত হয়ে তাকে অভিসম্পাত করলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটা শুনে বললেন, এর উপর যা আছে তা নিয়ে নাও এবং একে ছেড়ে দাও। কারণ, এটা তো অভিশপ্ত হয়ে গেছে। ইমরান বলেন, আমি যেন সেই উষ্ট্রীকে এখনো দেখতে পাচ্ছি যে, মানুষের মাঝে ঘুরছে, কিন্তু কেউ তার দিকে ভ্রুক্ষেপও করছে না。
ফায়দা: হজরত ইমরানের বাবা হুসাইনের ইসলাম গ্রহণ ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্য নিয়ে উলামায়ে কেরামের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। সহিহ মত হল, তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্যও পেয়েছেন। তাই আমি রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছি।
(৯২৪) হজরত আবু বারজা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
بَيْنَمَا جَارِيَةٌ عَلَى نَاقَةٍ عَلَيْهَا بَعْضُ مَتَاعِ الْقَوْمِ إِذْ بَصُرَتْ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَتَضَايَقَ بِهِمُ الْجَبَلُ ، فَقَالَتْ: حَلِ ، اللَّهُمَّ الْعَنْهَا. قَالَ : فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا تُصَاحِبْنَا نَاقَةُ عَلَيْهَا لَعْنَةٌ. وَفِي رِوَايَةٍ: لَا تُصَاحِبْنَا رَاحِلَةُ عَلَيْهَا لَعْنَةُ مِنَ اللهِ .
অর্থ: একবার এক মেয়ে উষ্ট্রীর উপর আরোহী ছিল। উষ্ট্রীর উপর তার সম্প্রদায়ের কিছু মাল-সামানাও ছিল। হঠাৎ সে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখতে পেল, আর পাহাড়ের কারণে রাস্তা সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তখন সে আরবিতে উট তাড়ানোর একটা শব্দ উচ্চারণ করল, পরে বলল, হে আল্লাহ! আপনি এর উপর লানত করুন। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা শুনে বললেন, আমাদের সাথে এমন উষ্ট্রী যেন না থাকে, যার উপর অভিশাপ রয়েছে। অন্য এক বর্ণনায় আছে, আমাদের সাথে এমন বাহন থাকবে না যার উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে অভিশাপ রয়েছে।
অনির্দিষ্ট ও অপ্রসিদ্ধ পাপীষ্ঠকে লানত করা বৈধ
একাধিক সহিহ প্রসিদ্ধ হাদিসে প্রমাণিত যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَعَنَ اللهُ الْوَاصِلَةَ وَالْمُسْتَوْصِلَةَ.
অর্থ: আল্লাহ ঐ সব নারীদের উপর লানত করুক, যারা নিজেরা পরচুলা লাগায় এবং অন্যকে লাগিয়ে দেয়...।
আরো বলেছেন-
لَعَنَ اللهُ آكِلَ الرِّبَا.
অর্থ: আল্লাহ পাক সুদখোরের ওপর লানত করুক...।
আরো বলেছেন-
لَعَنَ اللهُ المُصَوِّرِينَ.
অর্থ: আল্লাহ চিত্রাঙ্কনকারীদের (রহমত থেকে) বিতাড়িত করুক。
আরো বলেন-
لَعَنَ اللَّهُ مَنْ غَيَّرَ مَنَارَ الْأَرْضِ.
অর্থ: আল্লাহ পাক ঐ ব্যক্তিকে অভিশাপ দিক, যে অন্যায়ভাবে জমির (সীমানার) চিহ্ন পরিবর্তন করে。
আরো বলেছেন-
لَعَنَ اللهُ السَّارِقَ يَسْرِقُ البَيْضَةَ.
অর্থ: আল্লাহ এমন চোরের উপর লানত করুক, যে ডিম চুরি করে।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لَعَنَ اللهُ مَنْ لَعَنَ وَالِدَيْهِ، وَلَعَنَ اللَّهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ الله.
অর্থ: যে ব্যক্তি নিজের মা-বাবার ওপর অভিসম্পাত করে, আল্লাহ তার প্রতি অভিশম্পাত করুক। যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে যবেহ করে, তার ওপর আল্লাহ লানত করুক。
আরো বলেছেন-
مَنْ أَحْدَثَ فِينَا حَدَثاً، أَوْ آوَى مُحْدِثاً، فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللَّهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ.
অর্থ: যে ব্যক্তি মদিনায় কোনো বিদআত সৃষ্টি করবে অথবা কোনো বিদআতিকে আশ্রয় দিবে, তার ওপর আল্লাহ, ফেরেশতা এবং সমগ্র মানবজাতির অভিশাপ。
তিনি আরো বলেন-
اللَّهُمَّ الْعَنْ رِعْلاً وَذَكْوَانَ وَعُصَيَّةً عَصَتِ اللَّهَ وَرَسُوْلَهُ.
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি রিয়িল, জাকওয়ান ও উসাইয়াহ গোত্রগুলোর ওপর লানত করুন। তারা আল্লাহ ও রাসুলের অবাধ্যতা করেছে। এরা হল আরবের তিনটি গোত্র।
আরো বলেন-
لَعَنَ اللهُ الْيَهُودَ حُرِّمَتْ عَلَيْهِمُ الشُّحُوْمُ فَجَمَلُوْهَا فَبَاعُوْهَا.
অর্থ: আল্লাহ তাআলা ইহুদিদের ওপর লানত করুক: তাদের ওপর চর্বি হারাম করা হয়েছিল, কিন্তু তারা সেটা বিক্রি করা শুরু করেছিল。
তিনি আরো বলেছেন-
لَعَنَ اللهُ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ.
অর্থ: আল্লাহ পাক ইহুদি-খ্রীস্টানের ওপর অভিসম্পাত করুক। কারণ, তারা নিজেদের নবিদের কবরকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে。
তিনি আরো বলেছেন-
لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ، وَالْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ.
অর্থ: পুরুষদের মধ্য থেকে মহিলাদের সাদৃশ্য গ্রহণকারী ও মহিলাদের মধ্য থেকে পুরুষদের সাদৃশ্য গ্রহণকারিণীদের ওপর লানত।
এ সমস্ত হাদিসের কিছু تو সহিহ বুখারি ও মুসলিমের উভয়টাতে আছে, কিছু যে কোনো একটিতে। সংক্ষিপ্ততার স্বার্থে সবগুলো সনদসহ উল্লেখ না করে শুধু ইঙ্গিত দিলাম।
(৯২৫) হজরত জাবের রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ عَلَيْهِ حِمَارُ قَدْ وُسِمَ فِي وَجْهِهِ، فَقَالَ: لَعَنَ اللهُ الَّذِي وَسَمَهُ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখলেন এক গাধাকে তার চেহারায় দাগ দেয়া হয়েছে। বললেন, আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির ওপর লানত করুক যে এর চেহারায় দাগ দিয়েছে。
(৯২৬) সহিহ বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত আছে-
أَنَّ ابْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا مَرَّ بِفِتْيَانٍ مِنْ قُرَيْشٍ قَدْ نَصَبُوْا طَيْرًا وَهُمْ يَرْمُوْنَهُ، فَقَالَ ابْنُ عُمَرَ: لَعَنَ اللهُ مَنْ فَعَلَ هَذَا؛ إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَعَنَ مَنِ اتَّخَذَ شَيْئًا فِيْهِ الرُّوْحُ غَرَضًا.
অর্থ: হজরত ইবনে উমর রাদি. কিছু কুরাইশি যুবকদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যারা একটি পাখিকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে তীরন্দাজি করছিল। তিনি বললেন, যে এ কাজ করে তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঐ ব্যক্তির ওপর আল্লাহ তাআলার অভিশাপ, যে কোনো প্রাণীকে তীরন্দাজির লক্ষ্যবস্তু বানায়。
বৈধ-অবৈধ অভিশাপ
গুনাহ থেকে পবিত্র মুসলিমকে অভিশাপ দেয়া মুসলিমদের ঐক্যমতে হারাম। খারাপ গুণাবলী সম্পন্ন ব্যক্তিদের লানত করা বৈধ আছে। যেমন এভাবে বলা- আল্লাহ পাক অত্যাচারীদের ওপর লানত বর্ষণ করুক, কাফেরদের ওপর আল্লাহর লানত বর্ষণ হোক, ইহুদি-খ্রীস্টানের ওপর আল্লাহর লানত, ফাসেকদের ওপর আল্লাহ লানত বর্ষণ করুক। ছবি অঙ্কনকারীদের ওপর আল্লাহর লানত বর্ষণ হোক। এ ধরনের অন্যান্য শব্দ বলা, যা পূর্বের পরিচ্ছেদে অতীত হয়েছে।
কোনো গুনাহে লিপ্ত নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে লানত করাও হাদিসের বাহ্যিক অর্থ অনুযায়ী হারাম নয়। যেমন এভাবে বলা- ইহুদি, খ্রীস্টান অথবা ঐ অত্যাচারী, ব্যভিচারী, ছবি অঙ্কনকারী, চোর কিংবা সুদখোরের ওপর আল্লাহ লানত বর্ষণ করুক। কিন্তু ইমাম গাজালি রহ. এও হারাম হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। তবে যাদের ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত জানি যে, তারা কুফরের ওপর মারা গেছে। যেমন- আবু লাহাব, আবু জাহেল, ফেরাউন, হামান। এ জাতীয় লোকদের ওপর অভিশাপ দেয়া যাবে। ইমাম গাজালি নির্দিষ্ট গুনাহগারকে লানত করাকে বৈধ বলেন না এ জন্য যে, লানত হল আল্লাহর রহমত থেকে বিতাড়ন করা। অথচ এই কাফের বা ফাসেকের শেষ পরিণতি কী হবে তা আমরা জানি না। আরো বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদের নির্দিষ্ট নাম নিয়ে লানত করেছেন, সেটা জায়েজ ছিল। কারণ, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মৃত্যু কুফরের ওপর হবে বলে জানতেন। তিনি আরো বলেন, মানুষের প্রতি বদদুআ করা এমনকি জালেমের জন্যও বদদুআ করা লানতের কাছাকাছি। যেমন- কোনো ব্যক্তি দুআ করল, আল্লাহ তার শরীর সুস্থ না করুক, তাকে নিরাপত্তা না দিক। অথবা এ জাতীয় কিছু। এ সবই নিন্দনীয়। এমনিভাবে সকল প্রাণী ও জড় পদার্থকে লানত করাও নিন্দনীয়。
অনুপযুক্ত ব্যক্তিকে অভিসম্পাত করলে প্রতিকার কীভাবে
জনৈক আলেম থেকে আবু জাফর বর্ণনা করেন- যখন কেউ এমন কোনো বস্তুকে লানত করে ফেলে যে এর উপযুক্ত নয়, সে যেন তাড়াতাড়ি এ কথা বলে, তবে সে যদি উপযুক্ত না হয় (তাহলে তার ওপর লানত নয়)
সৎকাজের আদেশ প্রদান ও অসৎকাজে নিষেধ করার সময় যা বলা যাবে
সৎকাজের আদেশকারী ও অসৎকাজ থেকে নিষেধকারী এবং প্রত্যেক শিষ্টাচার শিক্ষাদানকারীর জন্য জায়েজ আছে যে, সে আদেশ-নিষেধ করতে গিয়ে তার সম্বোধিত ব্যক্তিকে বলতে পারবে- তোমার ধ্বংস হোক বা হে দুর্বল অবস্থার অধিকারী অথবা হে বেপরোয়া! কিংবা হে নিজের ওপর জুলুমকারী ইত্যাদি। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন তার কথাটা মিথ্যা না হয় এবং তাতে স্পষ্ট বা ইশারা ইঙ্গিতে কোনো অপবাদের শব্দ না থাকে, যদিও সেক্ষেত্রে সত্যবাদীই হয়। পূর্বোক্ত বিষয়গুলো জায়েজ হয়েছে কেবল আদব শিক্ষাদান বা ধমকিপ্রদানের উদ্দেশ্যে, যাতে কথাটা অন্তরে বদ্ধমূল হয়।
(৯২৭) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى رَجُلًا يَسُوقُ بَدَنَةً ، فَقَالَ: ارْكَبُهَا. فَقَالَ: إِنَّهَا بَدَنَةٌ. فَقَالَ : ارْكَبُهَا. قَالَ: إِنَّهَا بَدَنَةٌ. قَالَ: ارْكَبُهَا، وَيْلَكَ.
অর্থ: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার এক ব্যক্তিকে দেখলেন সে কুরবানির উট হাকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এতে আরোহন কর। সে বলল, এটা তো কুরবানির উট। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার বললেন, তুমি আরোহন কর। সে আবারো বলল, এটা তো কুরবানির উট। তৃতীয়বার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধমকি দিয়ে বললেন, তোমার ধ্বংস হোক, তুমি এতে আরোহন কর。
টিকাঃ
১৩২৫. হজ্জ: ৩০।
১৩২৬. ইসরা: ৩৬
১৩২৭. সহিহ বুখারি: ২৬৫৪, সহিহ মুসলিম: ৮৭।
১৩২৮. বাকারা: ২৬৪।
১৩২৯. সহিহ মুসলিম: ১০৬, সুনানে নাসাঈ ৫/৮৬, মু. আহমাদ ২/৪৮০।
১৩৩০. সহিহ বুখারি: ৬১০৫, সহিহ মুসলিম: ১১০, সুনানে আবু দাউদ: ৩২৫৭, সুনানে তিরমিজি: ২৬৩৮, সুনানে নাসাঈ ৭/৫।
১৩৩১. সহিহ মুসলিম: ২৫৯৭, সুনানে আবু দাউদ: ৪৯০৭, মু. আহমাদ ৬/৪৪৮।
১৩৩২. সহিহ মুসলিম: ২৫৯৮, সুনানে আবু দাউদ: ৪৯০৭, মু. আহমাদ ৬/৪৪৮।
১৩৩৩. সুনানে আবু দাউদ: ৪৯০৬, সুনানে তিরমিজি: ১৯৭৭, মু. আহমাদ ৫/১৫।
১৩৩৪. সুনানে তিরমিজি: ১৯৭৮, মু. আহমাদ ১/৪০৫, ইবনে হিব্বান: ৪৮, আদাব: ৩১২, মু. হাকেম ১/১২।
১৩৩৫. সুনানে আবু দাউদ: ৪৯০৫, মু. আহমাদ ১/৪৪৮।
১৩৩৬. সুনানে আবু দাউদ: ৪৯০৮, সুনানে তিরমিজি: ১৯৭৯, ইবনে হিব্বান: ১৯৮৮।
১৩৩৭. সহিহ মুসলিম: ২৫৯৫, আবু দাউদ: ২৫৬১, মু. আহমাদ ৪/৪২৯, সুনানে দারিমি: ২৬৮০।
১৩৩৮. সহিহ বুখারি: ৫৯৩৭, সহিহ মুসলিম: ২১২৪।
১৩৩৯. সহিহ মুসলিম: ১৫৯৭, সুনানে আবু দাউদ: ৩৩৩৩, সুনানে ইবনে মাজাহ: ২২৭৭।
১৩৪০. সহিহ বুখারি: ৫৩৪৭।
১৩৪১. সহিহ মুসলিম: ১৭৭৮।
১৩৪২. সহিহ বুখারি: ৬৬৮৩, সহিহ মুসলিম: ১৬৮৭।
১৩৪৩. সহিহ মুসলিম: ১৯৭৮, সহিহ ইবনে হিব্বান: ৬৬০৪।
১৩৪৪. সহিহ বুখারি: ১৭৮০, সহিহ মুসলিম: ১৩৬৬।
১৩৪৫. সহিহ মুসলিম: ৬৭৫।
১৩৪৬. সহিহ বুখারি: ৩৪৬০, সহিহ মুসলিম: ১৫৮২।
১৩৪৭. সহিহ বুখারি: ১৩৩০, সহিহ মুসলিম: ৫২৯।
১৩৪৮. সহিহ মুসলিম: ২১১৭।
১৩৪৯. সহিহ বুখারি: ৫৫১৫, সহিহ মুসলিম: ১৯৭৮, মুসনাদে আহমাদ ২/৮২।
১৩৫০. অভিসম্পাতের সম্বন্ধ মানুষের দিকে হলে বদদুআ অভিষ্ট। আল্লাহর দিকে হলে রহমত (জান্নাত) থেকে বিতাড়ন করা অভিষ্ট। -উ.
১৩৫১. ইহয়াউ উলুমিদ্দিন ৩/১২৩-১২৬।
১৩৫২. সহিহ বুখারি: ৬১৫৯, সহিহ মুসলিম: ১৩২৩, সুনানে তিরমিজি: ৯১১, সুনানে নাসাঈ ৫/১৭৬, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩১০৪।
📄 অহংকার ও মুসলমানদের তুচ্ছ করা হারাম
অহঙ্কার করা নিষেধ
আল্লাহ পাক বলেন-
فَلَا تُزَكُّوا أَنْفُسَكُمْ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنِ اتَّقَى.
অর্থ: তোমরা আত্মপ্রশংসা কর না। পরহেজগার কে তিনিই ভালো জানেন。
(৯১০) হজরত ইয়াজ বিন হিমার রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِنَّ اللَّهَ أَوْحَى إِلَيَّ أَنْ تَوَاضَعُوْا، حَتَّى لَا يَبْغِيَ أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ، وَلَا يَفْخَرَ أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ.
অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা আমার নিকট এ মর্মে ওহি পাঠিয়েছেন যে, তোমরা বিনয়ী হও। একজন অপরজনের উপর চড়াও হয়ো না। একজন আরেকজনের ওপর গর্ব কর না。
কোনো মুসলিমের কষ্টে আনন্দিত হওয়া নিষেধ
(৯১১) হজরত ওয়াসিলা বিন আসকা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لَا تُظْهِرِ الشَّمَاتَةَ لِأَخِيكَ، فَيَرْحَمَهُ اللهُ وَيَبْتَلِيَكَ.
অর্থ: তুমি তোমার ভাইয়ের কষ্টে খুশি হয়ো না। হতে পারে আল্লাহ তাআলা তার প্রতি রহম করবেন এবং তোমাকে ঐ কষ্টে নিপতিত করবেন। -তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান。
মুসলমানদের তুচ্ছ করা ও তাদের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা হারাম
আল্লাহ তাআলা বলেন-
الَّذِينَ يَلْمِرُوْنَ الْمُطَوَّعِينَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ فِي الصَّدَقْتِ وَالَّذِينَ لَا يَجِدُوْنَ إِلَّا جُهْدَهُمْ فَيَسْخَرُوْنَ مِنْهُمْ * سَخِرَ اللَّهُ مِنْهُمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ.
অর্থ: মুমিনদের মধ্য থেকে যারা স্বতস্ফূর্ত সদকা করে এবং যারা নিজেদের শ্রম ছাড়া কিছুই পায় না, তাদেরকে যারা দোষারোপ করে ও বিদ্রূপ করে; আল্লাহ তাদের নিয়ে পরিহাস করেন। তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি。
আরো বলেন-
يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرُ قَوْمٌ مِنْ قَوْمٍ عَلَى أَنْ يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاءُ مِنْ نِسَاءٍ عَلَى أَنْ يَكُنَّ خَيْرًا مِنْهُنَّ وَلَا تَلْمِزُوا أَنْفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ.
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! কোনো পুরুষ যেন অন্য কোনো পুরুষকে নিয়ে উপহাস না করে। হতে পারে যার উপহাস করা হচ্ছে, সে উপহাসকারী হতে উত্তম। কোনো মহিলা যেন অন্য মহিলাকে নিয়ে উপহাস না করে, হতে পারে যে মহিলার উপহাস করা হচ্ছে, সে উপহাসকারিণীর চেয়ে উত্তম। তোমরা একে অপরকে দোষারোপ কর না, পরস্পরের নাম বিকৃতি কর না。
আরো বলেন-
وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ.
অর্থ: প্রত্যেক পরনিন্দাকারী ও দোষচর্চাকারীর জন্য বড়ই দুর্ভোগ!
এ অধ্যায়ে বর্ণিত সহিহ হাদিসের সংখ্যা অগণিত। এটা হারাম হওয়ার ব্যাপারে উম্মাহর ঐক্যমতও রয়েছে। আল্লাহ তাআলাই সর্বজ্ঞাত।
(৯৭২) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَا تَحَاسَدُوا، وَلَا تَنَاجَشُوْا، وَلَا تَبَاغَضُوا ، وَلَا تَدَابَرُوْا، وَلَا يَبِعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْعِ بَعْضٍ، وَكُونُوا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا، الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ ؛ لَا يَظْلِمُهُ، وَلَا يَخْذُلُهُ ، وَلَا يَحْقِرُهُ، التَّقْوَى هَاهُنَا - وَيُشِيرُ إِلَى صَدْرِهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ - بِحَسْبِ امْرِئٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ، كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ ؛ dَمُهُ، وَمَالُهُ، وَعِرْضُهُ.
অর্থ: তোমরা পরস্পরে হিংসা কর না। পরস্পর ধোঁকাবাজি কর না। পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ কর না। একে অপরের পিছনে (ক্ষতি করার জন্য) লেগে থাক না। তোমরা একে অপরের উপর চড়াও হয়ো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসাবে একে অপরের ভ্রাতৃবন্ধনে আবদ্ধ থাক। মুসলমান মুসলমানের ভাই, সে তার ওপর অত্যাচার করতে পারে না, তাকে তুচ্ছ করতে পারে না। তাকওয়া তথা খোদাভীতির স্থান এখানে, এই বলে তিনবার বুকের দিকে ইশারা করলেন। কোনো ব্যক্তি খারাপ হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ করল। প্রত্যেক মুসলমানের জান-মাল, ইজ্জত-আবরু অপর মুসলমানের জন্য হারাম。
ইমাম নববি রহ. বলেন, চিন্তাশীলদের জন্য এই হাদিস অনেক উপকারী।
(৯১৩) ইবনে মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ. قَالَ رَجُلٌ: إِنَّ الرَّجُلَ يُحِبُّ أَنْ يَكُوْنَ ثَوْبُهُ حَسَنًا وَنَعْلُهُ حَسَنَةً. قَالَ: إِنَّ اللَّهَ جَمِيلٌ يُحِبُّ الْجَمَالَ، الْكِبْرُ بَطَرُ الْحَقِّ، وَغَمْطُ النَّاسِ.
অর্থ: যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহঙ্কার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এক ব্যক্তি বলল, মানুষ তো চায় তার কাপড়টা, তার জুতাটা সুন্দর হোক (এটাও কি অহঙ্কার হবে?) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (এটা অহঙ্কার না। কারণ) আল্লাহ পাক নিজেই সুন্দর, সুন্দরকে ভালোবাসেন। প্রকৃতপক্ষে অহঙ্কার হচ্ছে, দম্ভভরে হক অস্বীকার করা এবং মানুষকে হেয়জ্ঞান করা。
টিকাঃ
১৩১৫. ইসরা: ৩৬
১৩১৬. সহিহ মুসলিম: ৬৭, সুনানে তিরমিজি: ১০০১, মু. আহমাদ ২/৩৭৭।
১৩১৭. নাজম: ৩২।
১৩১৮. সহিহ মুসলিম: ২৮৬৫, সুনানে আবু দাউদ: ৪৮৯৫, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪১৭৯।
১৩১৯. সুনানে তিরমিজি: ২৫০৮।
১৩২০. তাওবা: ৭৯।
১৩২১. হুজুরাত: ১১।
১৩২২. হুমাজাহ: ১।
১৩২৩. সহিহ মুসলিম: ২৫৬৪।
১৩২৪. সহিহ মুসলিম: ৯১।
অহঙ্কার করা নিষেধ
আল্লাহ পাক বলেন-
فَلَا تُزَكُّوا أَنْفُسَكُمْ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنِ اتَّقَى.
অর্থ: তোমরা আত্মপ্রশংসা কর না। পরহেজগার কে তিনিই ভালো জানেন。
(৯১০) হজরত ইয়াজ বিন হিমার রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِنَّ اللَّهَ أَوْحَى إِلَيَّ أَنْ تَوَاضَعُوْا، حَتَّى لَا يَبْغِيَ أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ، وَلَا يَفْخَرَ أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ.
অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা আমার নিকট এ মর্মে ওহি পাঠিয়েছেন যে, তোমরা বিনয়ী হও। একজন অপরজনের উপর চড়াও হয়ো না। একজন আরেকজনের ওপর গর্ব কর না。
কোনো মুসলিমের কষ্টে আনন্দিত হওয়া নিষেধ
(৯১১) হজরত ওয়াসিলা বিন আসকা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لَا تُظْهِرِ الشَّمَاتَةَ لِأَخِيكَ، فَيَرْحَمَهُ اللهُ وَيَبْتَلِيَكَ.
অর্থ: তুমি তোমার ভাইয়ের কষ্টে খুশি হয়ো না। হতে পারে আল্লাহ তাআলা তার প্রতি রহম করবেন এবং তোমাকে ঐ কষ্টে নিপতিত করবেন। -তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান。
মুসলমানদের তুচ্ছ করা ও তাদের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা হারাম
আল্লাহ তাআলা বলেন-
الَّذِينَ يَلْمِرُوْنَ الْمُطَوَّعِينَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ فِي الصَّدَقْتِ وَالَّذِينَ لَا يَجِدُوْنَ إِلَّا جُهْدَهُمْ فَيَسْخَرُوْنَ مِنْهُمْ * سَخِرَ اللَّهُ مِنْهُمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ.
অর্থ: মুমিনদের মধ্য থেকে যারা স্বতস্ফূর্ত সদকা করে এবং যারা নিজেদের শ্রম ছাড়া কিছুই পায় না, তাদেরকে যারা দোষারোপ করে ও বিদ্রূপ করে; আল্লাহ তাদের নিয়ে পরিহাস করেন। তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি。
আরো বলেন-
يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرُ قَوْمٌ مِنْ قَوْمٍ عَلَى أَنْ يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاءُ مِنْ نِسَاءٍ عَلَى أَنْ يَكُنَّ خَيْرًا مِنْهُنَّ وَلَا تَلْمِزُوا أَنْفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ.
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! কোনো পুরুষ যেন অন্য কোনো পুরুষকে নিয়ে উপহাস না করে। হতে পারে যার উপহাস করা হচ্ছে, সে উপহাসকারী হতে উত্তম। কোনো মহিলা যেন অন্য মহিলাকে নিয়ে উপহাস না করে, হতে পারে যে মহিলার উপহাস করা হচ্ছে, সে উপহাসকারিণীর চেয়ে উত্তম। তোমরা একে অপরকে দোষারোপ কর না, পরস্পরের নাম বিকৃতি কর না。
আরো বলেন-
وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ.
অর্থ: প্রত্যেক পরনিন্দাকারী ও দোষচর্চাকারীর জন্য বড়ই দুর্ভোগ!
এ অধ্যায়ে বর্ণিত সহিহ হাদিসের সংখ্যা অগণিত। এটা হারাম হওয়ার ব্যাপারে উম্মাহর ঐক্যমতও রয়েছে। আল্লাহ তাআলাই সর্বজ্ঞাত।
(৯৭২) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَا تَحَاسَدُوا، وَلَا تَنَاجَشُوْا، وَلَا تَبَاغَضُوا ، وَلَا تَدَابَرُوْا، وَلَا يَبِعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْعِ بَعْضٍ، وَكُونُوا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا، الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ ؛ لَا يَظْلِمُهُ، وَلَا يَخْذُلُهُ ، وَلَا يَحْقِرُهُ، التَّقْوَى هَاهُنَا - وَيُشِيرُ إِلَى صَدْرِهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ - بِحَسْبِ امْرِئٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ، كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ ؛ dَمُهُ، وَمَالُهُ، وَعِرْضُهُ.
অর্থ: তোমরা পরস্পরে হিংসা কর না। পরস্পর ধোঁকাবাজি কর না। পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ কর না। একে অপরের পিছনে (ক্ষতি করার জন্য) লেগে থাক না। তোমরা একে অপরের উপর চড়াও হয়ো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসাবে একে অপরের ভ্রাতৃবন্ধনে আবদ্ধ থাক। মুসলমান মুসলমানের ভাই, সে তার ওপর অত্যাচার করতে পারে না, তাকে তুচ্ছ করতে পারে না। তাকওয়া তথা খোদাভীতির স্থান এখানে, এই বলে তিনবার বুকের দিকে ইশারা করলেন। কোনো ব্যক্তি খারাপ হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ করল। প্রত্যেক মুসলমানের জান-মাল, ইজ্জত-আবরু অপর মুসলমানের জন্য হারাম。
ইমাম নববি রহ. বলেন, চিন্তাশীলদের জন্য এই হাদিস অনেক উপকারী।
(৯১৩) ইবনে মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ. قَالَ رَجُلٌ: إِنَّ الرَّجُلَ يُحِبُّ أَنْ يَكُوْنَ ثَوْبُهُ حَسَنًا وَنَعْلُهُ حَسَنَةً. قَالَ: إِنَّ اللَّهَ جَمِيلٌ يُحِبُّ الْجَمَالَ، الْكِبْرُ بَطَرُ الْحَقِّ، وَغَمْطُ النَّاسِ.
অর্থ: যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহঙ্কার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এক ব্যক্তি বলল, মানুষ তো চায় তার কাপড়টা, তার জুতাটা সুন্দর হোক (এটাও কি অহঙ্কার হবে?) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (এটা অহঙ্কার না। কারণ) আল্লাহ পাক নিজেই সুন্দর, সুন্দরকে ভালোবাসেন। প্রকৃতপক্ষে অহঙ্কার হচ্ছে, দম্ভভরে হক অস্বীকার করা এবং মানুষকে হেয়জ্ঞান করা。
টিকাঃ
১৩১৫. ইসরা: ৩৬
১৩১৬. সহিহ মুসলিম: ৬৭, সুনানে তিরমিজি: ১০০১, মু. আহমাদ ২/৩৭৭।
১৩১৭. নাজম: ৩২।
১৩১৮. সহিহ মুসলিম: ২৮৬৫, সুনানে আবু দাউদ: ৪৮৯৫, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪১৭৯।
১৩১৯. সুনানে তিরমিজি: ২৫০৮।
১৩২০. তাওবা: ৭৯।
১৩২১. হুজুরাত: ১১।
১৩২২. হুমাজাহ: ১।
১৩২৩. সহিহ মুসলিম: ২৫৬৪।
১৩২৪. সহিহ মুসলিম: ৯১।
📄 অপছন্দনীয় ও নিষিদ্ধ শব্দাবলীর ব্যবহার
(৯২৮) হজরত ابو সাঈদ খুদরি রাদি. থেকে বর্ণিত-
بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَقْسِمُ قَسْمًا، أَتَاهُ ذُو الْخُوَيْصِرَةِ - وَهُوَ رَجُلٌ مِنْ بَنِي تَمِيمٍ - فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ ، اعْدِلْ فَقَالَ: وَيْلَكَ، وَمَنْ يَعْدِلُ إِذَا لَمْ أَعْدِلْ؟
অর্থ: আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ছিলাম। তিনি কিছু গনীমতের মাল বণ্টন করছিলেন। বনি তামিমের জুল খুওয়াইসিরা নামক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি ইনসাফ করুন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা শুনে বললেন, তোমার জন্য দুর্ভোগ! আমি যদি ইনসাফ না করি তো করবে কে?
(৯২৯) হজরত আদি বিন হাতিম রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ رَجُلًا خَطَبَ عِنْدَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: مَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُوْلَهُ فَقَدْ رَشَدَ، وَمَنْ يَعْصِهِمَا فَقَدْ غَوَى فَقَالَ رَسُولُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: بِئْسَ الْخَطِيبُ أَنْتَ، قُلْ: وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ
অর্থ: এক ব্যক্তি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপস্থিতিতে খুতবা দিতে গিয়ে বলল-
مَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ رَشَدَ، وَمَنْ يَعْصِهِمَا فَقَدْ غَوَى.
অর্থ: যে আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করল সে হেদায়াত লাভ করল। আর যে তাদের অবাধ্যতা করল সে পথভ্রষ্ট হল। -রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কত খারাপ বক্তা! তুমি বল-
وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُوْلَهُ.
অর্থ: যে আল্লাহ ও তার রাসুলের অবাধ্যতা করল....。
(৯৩০) হজরত জাবের বিন আবদুল্লাহ রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ عَبْدًا لِحَاطِبٍ جَاءَ رَسُولَ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَشْكُوْ حَاطِبًا، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، لَيَدْخُلَنَّ حَاطِبُ النَّارَ . فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : كَذَبْتَ لَا يَدْخُلُهَا ؛ فَإِنَّهُ شَهِدَ بَدْرًا، وَالْحُدَيْبِيَةَ.
অর্থ: হজরত হাতিব রাদি. এর একটি গোলাম রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে হাতিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করল। সে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! নিশ্চয়ই হাতিব জাহান্নামে প্রবেশ করবে। এ কথা শুনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি মিথ্যা বলছ। সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, কেননা সে বদর ও হুদায়বিয়ায় শরিক ছিল。
(৯৩১) হজরত আবু বকর রাদি. নিজ ছেলে আবদুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন- يَا غُنْثَرُ (আরে বোকা!) যখন দেখলেন ছেলে মেহমানদের রাতের খাবার খাওয়ায়নি। ইতিপূর্বে কিতাবুল আসমাতে হাদিসটি গত হয়েছে。
(৯৩২) হজরত জাবের রাদি. একবার এক কাপড়ে নামাজ পড়লেন, অথচ তার কাছে আরো কাপড় ছিল। কেউ বলল, আপনি এমন করলেন কেন? উত্তরে বললেন-
فَعَلْتُهُ لِيَرَانِي الْجُهَالُ مِثْلُكُمْ، وَفِي رِوَايَةٍ: لِيَرَانِي أَحْمَقُ مِثْلَكَ.
অর্থ: যেন তোমাদের মতো জাহেলরা আমাকে দেখতে পায়। অন্য বর্ণনায় আছে, যেন তোমার মতো বোকা আমাকে দেখে。
দরিদ্র, দুর্বল, এতিম, ভিক্ষুক প্রমুখ অসহায়দের তিরস্কার করা নিষেধ; বরং তাদের সাথে নরম কথা বলা এবং নম্র আচরণ করা আবশ্যক।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
فَأَمَّا الْيَتِيمَ فَلَا تَقْهَرْ وَأَمَّا السَّائِلَ فَلَا تَنْهَرْ.
অর্থ: সুতরাং আপনি এতিমকে তিরস্কার করবেন না এবং ভিক্ষুককে তাড়িয়ে দিবেন না。
আরো বলেন-
وَلَا تَطْرُدِ الَّذِينَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدُوةِ وَ الْعَشِيِّ يُرِيدُوْنَ وَجْهَهُ مَا عَلَيْكَ مِنْ حِسَابِهِمْ مِّنْ شَيْءٍ وَمَا مِنْ حِسَابِكَ عَلَيْهِمْ مِّنْ شَيْءٍ فَتَطْرُدَهُمْ فَتَكُوْنَ مِنَ الظَّلِمِينَ.
অর্থ: যারা স্বীয় রবের সন্তুষ্টি কামনায় তাকে সকাল-সন্ধ্যা ডাকে, তাদেরকে বিতাড়িত করে দিও না। তাদের কোনো কর্মের হিসাব আপনার দিতে হবে না। আপনার কোনো কর্মের হিসাব তাদের দিতে হবে না, যার কারণে আপনি তাদের বিতাড়িত করবেন। যদি করেন তো আপনি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবেন。
আরো বলেন-
وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدُوةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ وَ لَا تَعْدُ عَيْنَكَ عَنْهُمْ.
অর্থ: আপনি নিজেকে ঐ সব লোকদের সাথে আটকে রাখবেন, যারা সকাল-বিকাল নিজ রবের সন্তুষ্টির জন্য তাকে ডাকতে থাকে। আপনি তাদের থেকে দৃষ্টি সরাবেন না।
আরো বলেন-
وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِينَ.
অর্থ: আপনি মুমিনদের জন্য নিজেকে নিবেদিত রাখুন。
(৯৩৩) হজরত আয়েজ বিন আমর রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ أَبَا سُفْيَانَ أَتَى عَلَى سَلْمَانَ، وَصُهَيْبٍ، وَبِلَالٍ فِي نَفَرٍ، فَقَالُوا: وَاللَّهِ، مَا أَخَذَتْ سُيُوفُ اللهِ، مِنْ عُنُقِ عَدُوٌّ اللهِ، مَأْخَذَهَا. قَالَ: فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: أَتَقُوْلُوْنَ هَذَا لِشَيْخِ قُرَيْشٍ وَسَيِّدِهِمْ ؟ فَأَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرَهُ، فَقَالَ: يَا أَبَا بَكْرٍ، لَعَلَّكَ أَغْضَبْتَهُمْ، لَئِنْ كُنْتَ أَغْضَبْتَهُمْ لَقَدْ أَغْضَبْتَ رَبَّكَ. فَأَتَاهُمْ أَبُو بَكْرٍ، فَقَالَ: يَا إِخْوَتَاهُ، أَغْضَبْتُكُمْ ؟ قَالُوا: لَا ، يَغْفِرُ اللَّهُ لَكَ يَا أَخِي.
অর্থ: আবু সুফিয়ান একবার কিছু লোকদের সাথে সালমান ফারসি, সুহাইব ও বিলাল রাদি. এর কাছে উপস্থিত হলেন। তারা বললেন, আল্লাহর তরবারিসমূহ তার শত্রুদের ঘাড়ে ঠিক সময়ে লক্ষ্যস্থানে পৌঁছায়নি। আবু বকর রাদি. বললেন, তোমরা কি কুরাইশের একজন বয়োবৃদ্ধ নেতাকে এমন কথা বলছ? এরপর তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে সেটা জানালেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবু বকর! হয়ত তুমি তাদেরকে অসন্তুষ্ট করেছ। যদি তুমি সত্যিই তাদের অসন্তুষ্ট করে থাক, তাহলে তুমি তোমার রবকে অসন্তুষ্ট করলে। এ কথা শুনে তিনি তাদের কাছে এসে বললেন, হে আমার ভাইয়েরা! আমি কি তোমাদের অসন্তুষ্ট করেছি? তারা বললেন, না。
অপছন্দনীয় শব্দাবলীর ব্যবহার
(৯৩৪) হজরত সাহল বিন হুনাইফ ও আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَا يَقُوْلَنَّ أَحَدُكُمْ: خَبُثَتْ نَفْسِيْ. وَلَكِنْ لِيَقُلْ : لَقِسَتْ نَفْسِي.
অর্থ: তোমাদের কেউ যেন না বলে আমার আত্মা খবিস হয়ে গেছে। তবে এভাবে বলতে পারবে- আমার অন্তর কলুষিত হয়ে গেছে。
(৯৩৫) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত, তিনি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন-
لَا يَقُوْلَنَّ أَحَدُكُمْ : جَاشَتْ نَفْسِي، وَلَكِنْ لِيَقُلْ : لَقِسَتْ نَفْسِي.
অর্থ: তোমাদের কেউ যেন না বলে, আমার অন্তর বিনষ্ট হয়ে গেছে। তবে এভাবে বলতে পারবে যে, আমার অন্তর কলুষিত হয়ে গেছে。
(৯৩৬) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
يَقُوْلُوْنَ : الْكَرْمُ إِنَّمَا الْكَرْمُ قَلْبُ الْمُؤْمِنِ. وَفِي رِوَايَةِ الْمُسْلِمِ: لَا تُسَمُّوا الْعِنَبَ الْكَرْمَ ؛ فَإِنَّ الْكَرْمَ الرَّجُلُ الْمُسْلِمُ وَفِي رِوَايَةٍ: فَإِنَّ الْكَرْمُ قَلْبُ الْمُؤْمِنِ.
অর্থ: লোকেরা (আঙ্গুরকে) কারম (كَرْمٌ) বলে, অথচ প্রকৃতপক্ষে কারম হল, মুমিনের অন্তর। সহিহ মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে- তোমরা আঙ্গুরকে কারম নামে অভিহিত কর না। কেননা, কারম মূলত মুসলিমের (অন্তর)। অপর বর্ণনায় আছে- কারম কেবল মুমিনের অন্তর。
(৯৩৭) হজরত ওয়ায়েল বিন হুজর রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন-
لَا تَقُوْلُوْا : الْكَرْمُ ، وَلَكِنْ قُوْلُوْا: الْحَبْلَةُ يَعْنِي الْعِنَبَ.
অর্থ: তোমরা (আঙ্গুরকে) কারম বল না, বরং হাবালা অর্থাৎ ইনাব বল。
ফায়দা: এই হাদিসে আঙ্গুরকে কারম নামে অভিহিত করা থেকে নিষেধ করা উদ্দেশ্য। মূর্খতার যুগে লোকেরা আঙ্গুরকে কারম নাম দিত। আজও কিছু লোক সেটাকে কারম নাম দেয়। অথচ নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই নামে অভিহিত করতে নিষেধ করেছেন। ইমাম খাত্তাবিসহ প্রমুখ উলামায়ে কেরাম বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশঙ্কা করেছিলেন, আঙ্গুরকে কারম নামে ডাকলে হয়ত সেই সুন্দর নামই তাদেরকে আঙ্গুর থেকে বানানো মদ পানে উদ্বুদ্ধ করবে। তাই সে নামটিই দূর করে দিতে চেয়েছেন। আল্লাহই সর্বজ্ঞাত。
মানুষ ধ্বংস হয়ে গেছে বলা নিষেধ
(৯৩৮) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِذَا قَالَ الرَّجُلُ : هَلَكَ النَّاسُ فَهُوَ أَهْلَكُهُمْ
অর্থ: যখন কোনো ব্যক্তি বলে যে, সব মানুষ ধ্বংস হয়ে গেছে, মূলত সে নিজেই বড় ধ্বংসের শিকার。
ইমাম খাত্তাবি বলেন, সে সবসময় মানুষের দোষ ধরতে এবং তাদের খারাপ অভ্যাসগুলোর আলোচনা করতে থাকে। বলে, মানুষ সবাই নষ্ট হয়ে গেছে, ধ্বংস হয়ে গেছে। এমনটা করলে প্রকৃতপক্ষে সে সবচেয়ে বেশি ধ্বংসের শিকার। অর্থাৎ তাদের দোষ ধরে যে গুনাহ কামাই করেছে, তাতেই তার অবস্থাই সবার চেয়ে খারাপ হয়ে গেছে। আবার অনেক সময় এটা আত্মম্ভরিতা ও এই ধারণার জন্ম দেয় যে, সে নিজে সবার চেয়ে মর্যাদাবান ও উত্তম। ফলে সে ধ্বংস হয়。
(৯৩৯) ইমাম মালেক বলেন-
إِذَا قَالَ ذَلِكَ تَحَزُّنًا لِمَا يَرَى فِي النَّاسِ - يَعْنِي فِي أَمْرِ دِيْنِهِمْ - فَلَا أَرَى بِهِ بَأْسًا، وَإِذَا قَالَ ذَلِكَ عُجْبًا بِنَفْسِهِ وَتَصَاغُرًا لِلنَّاسِ، فَهُوَ الْمَكْرُوْهُ الَّذِي نُهِيَ عَنْهُ.
অর্থ: মানুষের ধর্মীয় অবস্থা দেখে দুঃখে এমনটা বললে কোনো সমস্যা নেই। আর নিজেকে বড় এবং অন্যদের তুচ্ছজ্ঞান করে বললে এটা অপছন্দনীয়, যা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। সনদসহ এই ব্যাখ্যাটাই সর্বাধিক সহিহ। এটাই এই হাদিসের ব্যাখ্যাগুলোর মধ্যে সুন্দর ও সংক্ষিপ্ত। বিশেষ করে যখন এটা হবে ইমাম মালেক রহ. থেকে বর্ণিত।
আল্লাহর অভিপ্রায়ের সাথে অন্যের অভিপ্রায় সংযুক্ত করতে ثُمَّ (মুম্মা) অব্যয় ব্যবহার হবে, وَاوْ )ওয়াও) অব্যয় নয়。
(৯৪০) হজরত হুজায়ফা রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لَا تَقُوْلُوْا : مَا شَاءَ اللهُ وَشَاءَ فُلَانٌ، وَلَكِنْ قُوْلُوا: مَا شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ شَاءَ فُلَانٌ.
অর্থ: তোমরা এভাবে বলবে না যে, আল্লাহ তাআলা এবং অমুক যা ইচ্ছা করেন; বরং এভাবে বলবে- আল্লাহ পাক যা অভিপ্রায় করেন, এরপর অমুক যা অভিপ্রায় করেন。
ইমাম খাত্তাবিসহ অন্যরা বলেন, এটা হচ্ছে শিষ্টাচার শিক্ষাদান। সেটা এভাবে যে, ওয়াও )واو( অব্যয় একত্রিকরণ ও অংশীদারিত্বের জন্য ব্যবহার হয়। আর সুম্মা (۳) ধারাবাহিকতা ও বিলম্বের সাথে পূর্বাপর মিলানোর জন্য। তাই নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ পাকের ইচ্ছার কথাটা অন্যের ইচ্ছার আগে আনয়নের পরামর্শ দিয়েছেন। ইবরাহিম নাখায়ি রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি কাউকে এভাবে বলতে পছন্দ করতেন না যে, আমি আল্লাহ এবং তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। তবে এভাবে বলা বৈধ- আমি আগে আল্লাহর কাছে আশ্রয় কামনা করি পরে আপনার কাছে। উলামায়ে কেরাম বলেন, এভাবে বলা যায় যে, যদি আল্লাহ তাআলা এরপর অমুক না থাকতেন, তাহলে আমি এমনটা করে ফেলতাম। তবে এভাবে বলা যাবে না- যদি আল্লাহ এবং অমুক না থাকতেন।
অমুক তারকার কারণে বৃষ্টি হয়েছে বলা মাকরুহ
অমুক তারকার কারণে বৃষ্টি লাভ করেছি- বলা মাকরুহ। যদি এই বিশ্বাসে বলে যে, ঐ তারকাই এখানে মূলকর্তা, তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে। আর যদি এই বিশ্বাসে বলে যে, আল্লাহ পাকই মূল কর্তা, তবে তারকা বৃষ্টি বর্ষণের আলামত মাত্র, তাহলে সে কাফের হবে না। কিন্তু সে মাকরুহ কাজ করল এমন এক শব্দ উচ্চারণের কারণে, যেটা জাহেলি যুগের লোকেরা ব্যবহার করত। তাছাড়া শব্দটি কুফর ও ঈমানের মাঝে যৌথ। আমি ইতিপূর্বে এই পরিচ্ছেদের সাথে সম্পৃক্ত সহিহ হাদিস “বৃষ্টি বর্ষণের সময় যা বলবে” অধ্যায়ে উল্লেখ করেছি।
“এমনটা করলে আমি ইহুদি, খ্রীষ্টান বা ইসলাম থেকে মুক্ত” বলা হারাম
যদি আমি এমনটা করি তাহলে আমি ইহুদি, খ্রীস্টান বা ইসলাম থেকে মুক্ত হয়ে যাব; এমনটা বলা হারাম। যদি বাস্তবেই সে ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাওয়াকে ঐ কাজের সাথে সম্পৃক্ত করে থাকে তাহলে সাথে সাথে কাফের হয়ে যাবে। তার ওপর মুরতাদের হুকুম জারী হবে। যদি এমন উদ্দেশ্য না থাকে, তাহলে কাফের হবে না। কিন্তু সে হারাম কাজে লিপ্ত হল। সুতরাং তার ওপর তাওবা করা ওয়াজিব। আর তাওবা বলা হয় তৎক্ষণাৎ গুনাহ থেকে বিরত থাকা, কৃতকর্মের ওপর লজ্জিত হওয়া এবং ভবিষ্যতে কখনো না করার দৃঢ় ইচ্ছা করা। আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করবে এবং বলবে- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।
কোনো মুসলিমকে 'হে কাফের' বলে সম্বোধন করা হারাম
অপর মুসলমান ভাইকে "হে কাফের” বলে খেতাব করা মারাত্মক হারাম。
(৯৪১) হজরত ইবনে উমর রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِذَا قَالَ الرَّجُلُ لِأَخِيهِ: يَا كَافِرُ ، فَقَدْ بَاءَ بِهَا أَحَدُهُمَا، فَإِنْ كَانَ كَمَا قَالَ، وَإِلَّا رَجَعَتْ عَلَيْهِ.
অর্থ: যখন কোনো ব্যক্তি তার ভাইকে হে কাফের বলে, বস্তুতঃ কথাটি তাদের দুজনের যে কোনো একজনের উপর পতিত হবে। যাকে বলা হয়েছে সে যদি এর উপযুক্ত হয় তাহলে তার ওপর, অন্যথায় বক্তার দিকে ফিরে আসবে。
(৯৪২) হজরত আবু জর রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন-
مَنْ دَعَا رَجُلًا بِالْكُفْرِ، أَوْ قَالَ: عَدُوَّ اللهِ ، وَلَيْسَ كَذَلِكَ إِلَّا حَارَ عَلَيْهِ.
অর্থ: যে ব্যক্তি অপর কাউকে কুফরি কোনো সম্বোধনে ডাকে অথবা আল্লাহর শত্রু বলে। কিন্তু বাস্তবে সে এরকম নয়, তবে সে কথা বক্তার দিকেই প্রত্যাবর্তন করবে。
অপর মুসলমানের বিরুদ্ধে ঈমান ছিনিয়ে নেয়ার বদদুআ করা গুনাহ
যদি এক মুসলমান অপর মুসলমানের বিরুদ্ধে বদদুআ করে বলে- হে আল্লাহ! আপনি তার ঈমান ছিনিয়ে নিন। এর দ্বারা সে গুনাহগার হবে। এটুকু বদদুআর দ্বারাই সে কি কাফের হয়ে যাবে? এ ক্ষেত্রে আমাদের ইমামদের দুটি মতো পাওয়া যায়, যা আমাদের ইমাম কাজি হুসাইন তার 'ফাতাওয়া' কিতাবে নকল করেছেন। তবে দুই মতের মাঝে কাফের হবে না মতটি বিশুদ্ধ। এর স্বপক্ষে দলিল হিসাবে হজরত মুসা আলাইহিস সালামের ব্যাপারে আল্লাহর এই বাণী পেশ করা হয়-
رَبَّنَا اطْمِسُ عَلَى أَمْوَالِهِمْ وَاشْدُدْ عَلَى قُلُوبِهِمْ فَلَا يُؤْمِنُوا حَتَّى يَرَوُا الْعَذَابَ الْأَلِيمَ .
অর্থ: হে আমাদের রব! তাদের মাল ধ্বংস করে দাও, তাদের অন্তর কঠিন করে দাও, যাতে তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি না দেখা পর্যন্ত ঈমান আনতে না পারে। তবে এই যুক্তিপ্রদর্শনে আপত্তি আছে। যদিও আমরা বলে থাকি- পূর্ববর্তীদের শরিয়ত (বিধান) আমাদেরও শরিয়ত।
কাফের-কর্তৃক কুফরি বাক্য বলতে বাধ্য করলে করণীয়
যদি কাফেররা কোনো মুসলমানকে কুফরি বাক্য বলতে বাধ্য করে এবং সে তা মুখে বলে ফেলে, কিন্তু অন্তর ঈমানের ব্যাপারে আশ্বস্ত থাকে, তাহলে কুরআনের আয়াত ও উম্মাহর ঐক্যমতে সে কাফের হবে না। নিজেকে বাঁচাতে কুফরি শব্দ উচ্চারণ করা নিহত হওয়া থেকে উত্তম কিনা? এ ব্যাপারে আমাদের ইমামদের পাঁচটি মতামত রয়েছে:
এক. সহিহ মত হচ্ছে, কুফরি শব্দ উচ্চারণ না করে হত্যার ওপর ধৈর্যধারণ করা অধিক উত্তম। এর পক্ষে একাধিক সহিহ হাদিস ও সাহাবায়ে কেরামের আমল প্রসিদ্ধ।
দুই. সবচেয়ে উত্তম হল, নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য কুফরি শব্দ উচ্চারণ করা।
তিন. যদি তার বেঁচে থাকাতে মুসলমানদের কল্যাণ হয় এভাবে যে, হয়ত সে শত্রুদের ওপর জয়ী হবে বা শরিয়তের হুকুম-আহকাম বর্ণনার কাজ আঞ্জাম দিবে, তাহলে কুফরি বাক্য উচ্চারণ করা উত্তম। অন্যথায় হত্যার ওপর ধৈর্যধারণ করা উত্তম।
চার. যদি সে আলেম বা অনুসরণীয় কেউ হয়, তাহলে ধৈর্য ধরা উত্তম, যাতে সাধারণ মানুষ তার কুফরি শব্দ শুনে বিভ্রান্ত না হয়।
পাঁচ. তার জন্য কুফরি শব্দ উচ্চারণ করা ওয়াজিব। কারণ, আল্লাহ তাআলা বলেছেন- তোমরা নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঢেলে দিয়ো না।- এটি অত্যন্ত দুর্বল একটি মত。
মুসলমান-কর্তৃক কাফেরকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করা
যদি মুসলমান কোনো কাফেরকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করে এবং সেও মুখে শাহাদাতাইন পড়ে নেয়। আর সে হারবি হয় তাহলে তার ইসলাম গ্রহণযোগ্য হবে। কেননা, এটা হচ্ছে সত্য গ্রহণে বাধ্যকরণ। যদি জিম্মি হয় তাহলে সে মুসলমান হবে না। কেননা, আমরা তাদের থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছি, সুতরাং তাদেরকে বাধ্য করা হবে অন্যায়। এ ব্যাপারে দুর্বল একটি মত আছে যে, সে মুসলমান হয়ে যাবে। কেননা, সে তাকে সত্য গ্রহণে আদেশ দিয়েছে।
যদি কাফের বাধ্যকরণ ছাড়াই শাহাদাতাইন পাঠ করে
যখন কোনো কাফের বাধ্যকরণ ছাড়াই শাহাদাতাইন পাঠ করে, যদি সেটা কোনো কিছু বর্ণনা করতে গিয়ে হয়, যেমন বলল- আমি জায়েদকে لا إلهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللَّهِ (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ) বলতে শুনেছি, তাহলে তাকে মুসলমান বলা হবে না। যদি সে কোনো মুসলমানের দাওয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে বলে অর্থাৎ কোনো মুসলমান তাকে বলল, তুমি বল- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। এরই প্রেক্ষিতে সে বলল, তাহলে মুসলমান হয়ে যাবে। যদি সে স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে বলে, কারো দাবী পূরণে বা কোনো কিছু বর্ণনা করতে গিয়ে নয়; তাহলে আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামায় কেরামের বিশুদ্ধ ও প্রসিদ্ধ মত অনুসারে সে মুসলমান হয়ে যাবে। কেউ বলেন, হবে না। কারণ সম্ভাবনা আছে যে, কিছু বর্ণনা করতে গিয়ে সে কালিমা পড়েছে।
মুসলমানদের দায়িত্বশীলকে যে উপাধী দেয়া হবে
মুসলমানদের দায়িত্বশীলকে আল্লাহর খলিফা না বলা উচিত, বরং তাকে খলিফা বা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খলিফা অথবা আমিরুল মুমিনিন বলা যেতে পারে। আবু মুহাম্মদ বাগাবির কিতাব "শরহুস সুন্নাহ"তে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন- مسلمانوں দায়িত্বশীলকে আমিরুল মুমিনিন বা খলিফা বলা যেতে পারে। যদিও তার জীবনাদর্শ ন্যায়বিচারক ইমামদের বিপরীত হয়। কেননা, সে مسلمانوں বিভিন্ন দায়িত্ব আঞ্জাম দিচ্ছে এবং মুসলমানরাও তার আনুগত্য করছে। বাগাবি আরো বলেন, খলিফা নামকরণ এজন্য যে সে তার পূর্ববর্তীদের প্রতিনিধি ও স্থলাভিষিক্ত। আরো বলেন, হজরত আদম এবং হজরত দাউদ আলাইহিমাস সালামদ্বয়ের পরে অন্য কাউকে আল্লাহর খলিফা বলা যাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন-
إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً.
অর্থ: নিশ্চয় আমি দুনিয়াতে আমার প্রতিনিধি বানাব。
আরো বলেন-
يُدَاوُدُ إِنَّا جَعَلْتُكَ خَلِيفَةً فِي الْأَرْضِ.
অর্থ: হে দাউদ! আমি তোমাকে দুনিয়াতে আমার খলিফা বানিয়েছি。
হজরত আবু মুলাইকা থেকে বর্ণিত- এক ব্যক্তি হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহুকে সম্বোধন করে বলল, হে খলিফাতুল্লাহ! জবাবে তিনি বললেন, আমি তো মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খলিফা। আমি এতেই সন্তুষ্ট। এক লোক হজরত উমর বিন আবদুল আজিজ রাহিমাহুল্লাকে সম্বোধন করে বলল, হে খলিফাতুল্লাহ! তিনি বললেন, তোমার জন্য, দুর্ভোগ! তুমি অনেক দূরবর্তী একটি সম্বোধন করেছ। নিশ্চয় আমার মা আমার নাম রেখেছেন উমর। যদি এই নামে ডাকলে মেনে নেব। এরপর বড় হলে ডাকনাম রাখা হল আবু হাফস। এই নামেও ডাকলে মেনে নেব। অতঃপর তোমরা নিজেদের নেতৃত্ব আমার কাছে দিয়ে নাম দিয়েছ আমিরুল মুমিনিন। এই নামে ডাকলেও চলবে।
শাফেয়ি ফকিহ কাজি ইমাম আবুল হাসান মাওয়ারদি বাসরি রহ. তার 'আহকামুস সুলতানিয়াহ' নামক কিতাবে (পৃ. ৫০) উল্লেখ করেছেন- ইমামকে খলিফা নামকরণের কারণ হচ্ছে, তিনি উম্মতের মাঝে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি বলেন, সরাসরি খলিফাও বলা যায়, আবার খলিফাতুর রাসুলও বলা যায়। তিনি আরো বলেন, খলিফাতুল্লাহ বলা বৈধ হওয়া নিয়ে উলামায়ে কেরাম মতানৈক্য করেছেন। কেউ একে বৈধ বলেছেন এই যুক্তিতে যে, তিনি আল্লাহর হকগুলো বান্দার ওপর বাস্তবায়ন করেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ পাকের বাণীও আছে-
هُوَ الَّذِي جَعَلَكُمْ خَلَئِفَ فِي الْأَرْضِ.
অর্থ: তিনিই ঐ সত্ত্বা যিনি দুনিয়ায় তোমাদেরকে স্থলাভিষিক্ত বানিয়েছেন。
অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম একে অবৈধ বলেছেন এবং বক্তাকে গুনাহগার সাব্যস্ত করেছেন। মাওয়ারদির বক্তব্য শেষ হল।
ইমাম নববি রহ. বলেন, সর্বপ্রথম হজরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আমিরুল মুমিনিন নামে নামকরণ করা হয়। এ বিষয়ে উলামায়ে কেরামের কোনো মতানৈক্য নেই। মুসায়লামার ব্যাপারে কিছু মূর্খদের বক্তব্য স্পষ্ট ভুল ও নিকৃষ্ট মূর্খতা, যা উলমায়ে কেরামের ঐক্যমতের বিপরীত। কিতাবাদিতে খুব গুরুত্বের সাথে এই বিষয়ের ওপর ঐক্যমত বর্ণনা করা হয়েছে যে, সর্বপ্রথম যাকে আমিরুল মুমিনিন নামে নামকরণ করা হয়েছে, তিনি হলেন উমর বিন খাত্তাব রাদি.।
হাফেজ ইমাম আবু আমর বিন আবদুল বার রহ. তার "ইসতিআব” কিতাবে (২/৪৫৭) উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সর্বপ্রথম আমিরুল মুমিনিন বলার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি কারণও উল্লেখ করেছেন। আর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আল্লাহর রাসুলের খলিফা বলা হত।
বাদশা বা অন্য কাউকে শাহানশাহ বলা হারাম
বাদশা বা অন্য কাউকে শাহানশাহ বলে ডাকা মারাত্মক পর্যায়ের হারাম। কেননা এর অর্থ দাঁড়ায়: সকল বাদশাদের বাদশা, অথচ একমাত্র আল্লাহ পাকই হলেন এই গুণে গুণান্বিত।
(৯৪৩) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إِنَّ أَخْنَعَ اسْمِ عِنْدَ اللَّهِ، رَجُلٌ تَسَمَّى مَلِكَ الْأَمْلَاكِ.
অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট নাম হল, কাউকে শাহানশাহ নামে অভিহিত করা।
হজরত সুফিয়ান বিন উয়াইনা বলেন, মালিকুল আমলাক (বাদশাদের বাদশা) শাহানশার মতই。
মাইয়েদ শব্দের প্রয়োগ
সাইয়েদ বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে, যার অবস্থান তার সম্প্রদায়ের সবার উপরে, যার মর্যাদা সবচেয়ে উঁচু। দায়িত্বশীল ও জ্ঞানী ব্যক্তিকেও বলা যায়। এমন সহনশীল যাকে তার ক্রোধ কাবু করতে পারে না, তাকেও সাইয়েদ বলা যায়। এছাড়া সাইয়েদ শব্দ সম্মানিত, মালিক এবং স্বামীর জন্য ব্যবহার হয়। বহু হাদিসে মর্যাদাবান ব্যক্তির জন্য ব্যবহার হয়েছে।
(৯৪৪) হজরত আবু বাকরা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার হাসান বিন আলিকে নিয়ে মিম্বরে উঠে বললেন-
إِنَّ ابْنِي هَذَا سَيِّدُ، وَلَعَلَّ اللَّهَ أَنْ يُصْلِحَ بِهِ بَيْنَ فِئَتَيْنِ مِنَ الْمُسْلِمِينَ.
অর্থ: আমার এই ছেলে সাইয়েদ। অচিরেই আল্লাহ পাক তার মাধ্যমে মুসলমানদের দুই বিবদমান মুসলিম দলের মধ্যে সন্ধি স্থাপন করাবেন。
(৯৪৫) হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদি. থেকে বর্ণিত, হজরত সাদ বিন মুআজের আগমনকালে (বনু কুরায়দার ব্যাপারে ফয়সালার জন্য) আনসারিদের উদ্দেশ্যে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন-
قُومُوا إِلَى خَيْرِكُمْ أَوْ سَيِّدِكُمْ.
অর্থ: তোমরা তোমাদের সাইয়েদকে অথবা তোমাদের সর্বোত্তম ব্যক্তিকে এগিয়ে নিয়ে এসো。
(৯৪৬) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ سَعْدَ بْنَ عُبَادَةَ قَالَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، الرَّجُلُ يَجِدُ مَعَ امْرَأَتِهِ رَجُلًا، أَيَقْتُلُهُ ؟ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا . قَالَ سَعْدُ: بَلَى وَالَّذِي أَكْرَمَكَ بالحق. قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : اسْمَعُوْا إِلَى مَا يَقُوْلُ سَيِّدُكُمْ.
অর্থ: সাদ বিন উবাদা রাদি. বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! যদি কেউ স্বীয় স্ত্রীর সাথে অন্য কাউকে (আপত্তিকর অবস্থায়) দেখে তাহলে তাকে কি হত্যা করে ফেলবে? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দেখ, তোমাদের সাইয়েদ কী বলে।
নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে বর্ণিত হাদিসসমূহ:
(৯৪৭) হজরত বুরায়দা রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَا تَقُوْلُوْا لِلْمُنَافِقِ: سَيِّدُ ، فَإِنَّهُ إِنْ يَكُ سَيِّدًا فَقَدْ أَسْخَطْتُمْ رَبَّكُمْ عَزَّ وَجَلَّ.
অর্থ: কোনো মুনাফিককে সাইয়েদ বল না। কেননা, সে যদ্যি সত্যিই সাইয়েদ হয়, তো তোমরা স্বীয় রবকে অসন্তুষ্ট করলে!
ফায়দা: এই হাদিসগুলোর মাঝে সমন্বয় এভাবে হবে যে, যদি সাইয়েদ উপাধীর ব্যক্তি ইলম অথবা অন্য কোনো দিক থেকে মর্যাদাবান ও উত্তম হয়, তাহলে তাকে সাইয়েদ ও ইয়া সাইয়েদি বা এ জাতীয় কিছু বলে সম্বোধনে কোনো সমস্যা নেই। যদি ফাসেক বা দীনের ব্যাপারে অভিযুক্ত হয় বা এ ধরনের কোনো দোষে দোষী হয়, তাহলে তাকে সাইয়েদ বলা মাকরুহ। ইমাম আবু সুলাইমান খাত্তাবি রহ. মাআলিমুস সুনানে (৫/৩৯০) এমনই বলেছেন।
গোলাম মালিককে এবং মালিক গোলামকে যেভাবে সম্বোধন করবে
অধীনস্থ ব্যক্তির জন্য তার মালিককে রাব্বি (আমার পালনকর্তা) বলে সম্বোধন করা মাকরুহ। বরং সে বলবে, সাইয়েদি অথবা চাইলে সে আমার মনিবও বলতে পারে। মালিকের জন্যও অধীনস্থদেরকে আমার গোলাম/বাঁদী বলে সম্বোধন করা মাকরুহ। তবে এ ক্ষেত্রে আমার বালক/বালিকা অথবা আমার গোলাম শব্দ ব্যবহার করতে পারবে।
(৯৪৮) হজরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لَا يَقُلْ أَحَدُكُمْ أَطْعِمْ رَبَّكَ، وَضَى رَبَّكَ، اسْقِ رَبَّكَ، وَلْيَقُلْ: سَيِّدِي، مَوْلَايَ، وَلَا يَقُلْ أَحَدُكُمْ: عَبْدِي، أَمَتِي، وَلْيَقُلْ: فَتَايَ وَفَتَاتِي وَغُلَامِي. وَفِي رِوَايَةِ الْمُسْلِمِ : وَلَا يَقُلْ أَحَدُكُمْ: رَبِّي وَلْيَقُلْ: سَيِّدِي، مَوْلَايَ. وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ: لَا يَقُوْلَنَّ أَحَدُكُمْ : عَبْدِي وَأَمَتِي فَكُلُّكُمْ عَبِيدُ، وَلَا يَقُلِ الْعَبْدُ: رَبِّي وَلَكِنْ لِيَقُلْ: سَيِّدِي. وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ: لَا يَقُولَنَّ أَحَدُكُمْ: عَبْدِي وَأَمَتِي كُلُّكُمْ عَبِيدُ اللهِ ، وَكُلُّ نِسَائِكُمْ إِمَاءُ اللهِ ، وَلَكِنْ لِيَقُلْ : غُلَامِي وَجَارِيَتِي، وَفَتَايَ وَفَتَاتِي.
অর্থ: তোমাদের কেউ যেন না বলে (মালিককে বুঝাতে গিয়ে) তোমার রবকে খাওয়াও, অজু করাও, পান করাও। বরং যেন বলে, আমার সাইয়েদ, আমার মনিব। তোমাদের কেউ যেন নিজের দাস বুঝাতে গিয়ে না বলে, আমার বান্দা/বান্দী। তবে আমার বালক/বালিকা বা আমার গোলাম বলতে পারবে। সহিহ মুসলিমের অপর রেওয়ায়েতে আছে- তোমাদের কোনো গোলাম যেন (মনিবকে) আমার রাব না বলে। বরং যেন আমার সাইয়েদ বা মনিব বলে।
সহিহ মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে- কোনো মনিব যেন (গোলামকে) আমার বান্দা/বান্দী না বলে। কেননা, তোমরা সকলেই আল্লাহর বান্দা। গোলামও যেন মনিবকে রব না বলে। বরং তাকে সাইয়েদ বলা উচিত। সহিহ মুসলিমের আরেক বর্ণনায় আছে- কোনো মনিব যেন (নিজ গোলামকে) আমার বান্দা/বান্দী বলে সম্বোধন না করে। তোমরা সকল পুরুষই আল্লাহর বান্দা, তোমাদের সকল মহিলাই আল্লাহর বান্দী। তবে (গোলাম/বাদীর ক্ষেত্রে) আমার দাস/আমার দাসী অথবা আমার চাকর/আমার চাকরণী ব্যবহার করা যেতে পারে।
ফায়দা: الرَّبُّ শব্দে আলিফ লাম থাকলে তা কেবল আল্লাহর জন্যই ব্যবহৃত হয়। অন্য কিছুর দিকে সম্পৃক্ত করলে অন্যদের ক্ষেত্রেও বলা যায়। যেমন বলা হয়- রাব্বুল মাল, রাব্বুদ দার ইত্যাদি। সহিহ হাদিসে হারানো উটের ব্যাপারে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উক্তি আছে-
دَعْهَا حَتَّى يَلْقَاهَا رَبُّهَا.
অর্থ: তাকে ছেড়ে দাও, যেন তার রব (মালিক) তাকে পেয়ে যায়。
সহিহ হাদিসে আছে-
حَتَّى يُهِمَّ رَبِّ الْمَالِ مَنْ يَقْبَلُ صَدَقَتَهُ.
অর্থ: এমনকি রাব্বুল মালকে (সম্পদের মালিক) উদ্বিগ্ন করে দিবে যে, কে গ্রহণ করবে তার সাদকা。
সহিহ বর্ণনায় হজরত উমর রাদি. এর বক্তব্য আছে-
رَبِّ الصُّرَيْمَةِ وَالْغُنَيْمَةِ.
অর্থ: মুষ্টিমেয় উট ও মুষ্টিমেয় মেষের রব (মালিক)।
হাদিসে এ ধরনের অনেক দৃষ্টান্ত আছে, যেগুলো প্রসিদ্ধ।
শরিয়তের ধারক-বাহকদের ক্ষেত্রে رَبُّ (রব) শব্দের এরকম ব্যবহার অনেক প্রসিদ্ধ। উলামায়ে কেরাম বলেন, গোলামের জন্য নিজের মনিবকে আমার রব বলা এজন্য মাকরুহ যে, তার এই শব্দে প্রভুত্বের ক্ষেত্রে আল্লাহ পাকের অংশীদারিত্ব হয়ে যায়। আর
دَعْهَا حَتَّى يَلْقَاهَا رَبُّهُ
অর্থ: ছেড়ে দাও, যেন তার রব (মালিক) তাকে পেয়ে যায়।
رَبُّ الصُّرَيْمَةِ وَالْغُنَيْمَةِ
অর্থ: মুষ্টিমেয় উট ও মুষ্টিমেয় মেষের রব।
এগুলোসহ সমার্থক হাদিসসমূহে রব শব্দ ভারার্পিতদের জন্য ব্যবহার হয়েছে। এগুলো ঘর ও সম্পদের মতই। রাব্বুল মাল (সম্পদের মালিক) বা রাব্বুদ দার (ঘরে মালিক) বলা নিঃসন্দেহে জায়েজ।
নবি ইউসুফ আলাইহিস সালামের উক্তির-
اذْكُرْنِي عِنْدَ رَبِّكَ.
অর্থ: তোমার রবের কাছে আমার কথা আলোচনা করবে。
দুটি উত্তর: এক. তিনি তাকে তার পরিচিত শব্দে সম্বোধন করেছেন। প্রয়োজনে এমন ব্যবহার জায়েজ আছে। যেমনটা মুসা আলাইহিস সালাম সামেরিকে বলেছিলেন-
وَانْظُرُ إِلَى الْهَكَ.
অর্থ: তুমি তোমার উপাস্যের দিকে তাকাও。
অর্থাৎ তুমি যে গোবৎসকে উপাস্য বানিয়েছিলে।
দুই. এটা আমাদের পূর্ববর্তীদের শরিয়ত। আর যখন পূর্ববর্তীদের শরিয়তের বিপরীত আমাদের শারয়ত অবতীর্ণ হয়, তখন সেটা আর আমাদের শরিয়ত থাকে না। এ ব্যাপারে কোনো ভিন্নমত নেই। উসুলবিদদের মতানৈক্য তো তখন, যখন পূর্ববর্তীদের শরিয়তের পক্ষে-বিপক্ষে আমাদের কোনো শরিয়ত অবতীর্ণ না হয়, এমতাবস্থায় সেটা আমাদের শরিয়ত বলে গণ্য হবে কিনা?
অপরকে “আমার গোলাম” বলে সম্বোধন করা
আবু জাফর নাহহাস তার "সানাতুল কিতাব” (পৃ. ১৬৯) এ বলেন- কোনো মাখলুককে আমার মাওলা (গোলাম) বলে ডাকা উচিত নয় এ ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের মতানৈক্য আছে বলে জানা নেই।
ইমাম নববি রহ. বলেন, পূর্ববর্তী পরিচ্ছেদে আমার মাওলা শব্দ ব্যবহারের বৈধতা বর্ণনা করেছি। উভয় কথায় কোনো বৈপরীত্য নেই। কেননা, তিনি মাওলা শব্দে আলিফ লাম থাকা অবস্থার কথা বলেছেন। তিনি আরো বলেছেন, ফাসেক ছাড়া অন্যদেরকে সাইয়েদ বলা যাবে। কিন্তু আলিফ লামসহ সাইয়েদ শব্দ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য ব্যবহার করা যাবে না। তবে অধিকতর স্পষ্ট মত হচ্ছে, পূর্বের শর্তসাপেক্ষ সাইয়েদ ও মাওলা শব্দদ্বয় আলিফ লামসহ আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য ব্যবহারে কোনো সমস্যা নেই।
বাতাসকে গালি দেয়া নিষেধ
ইতিপূর্বে বাতাসকে গালি দেয়া নিষেধ সংক্রান্ত দুটি হাদিস অতীত হয়েছে। সেগুলো "বাতাস প্রবাহিত হলে যা বলবে" অধ্যায়ে বর্ণনা করে এসেছি。
জ্বরকে গালি দেয়া মাকরুহ
(৯৪৯) হজরত জাবের রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ رَسُولَ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ عَلَى أُمِّ السَّائِبِ - أَوْ أُمِّ الْمُسَيَّبِ - فَقَالَ: مَا لَكِ يَا أُمَّ السَّائِبِ - أَوْ يَا أُمَّ الْمُسَيَّبِ - تُرَفْزِفِيْنَ ؟ قَالَتِ : الْحُتَّى، لَا بَارَكَ اللهُ فِيهَا. فَقَالَ: لَا تَسُمِّي الحُمَّى؛ فَإِنَّهَا تُذْهِبُ خَطَايَا بَنِي آدَمَ، كَمَا يُذْهِبُ الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ.
অর্থ: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার উম্মে সায়িব বা উম্মে মুসাইয়েবের ঘরে প্রবেশ করেন। বললেন, হে উম্মে সায়িব অথবা (বলেছেন) হে উম্মে মুসাইয়েব, তোমার কি হয়েছে? কাঁপছ কেন? বললেন, জ্বর হয়েছে। আল্লাহ তাতে বরকত না দিক। এ কথা শুনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জ্বরকে গালি দিও না। কেননা, জ্বর মানুষের গুনাহকে এমনভাবে দূর করে যেমন দূর করে হাপর লোহার মরীচিকা。
মোরগকে গালি দেয়া নিষেধ
(৯৫০) হজরত জায়েদ বিন খালেদ জুহানি রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَا تَسُبُّوا الدِّيْكَ ؛ فَإِنَّهُ يُوْقِظُ لِلصَّلَاةِ.
অর্থ: তোমরা মোরগকে গালি দিও না। কেননা, মোরগ নামাজের জন্য জাগ্রত করে。
মূর্খযুগের আর্তনাদ ও তাদের শব্দাবলী ব্যবহার করা নিষেধ
(৯৫১) হজরত ইবনে মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَيْسَ مِنَّا مَنْ ضَرَبَ الْخُدُودَ، وَشَقَّ الْجُيُوبَ، وَدَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ.
অর্থ: যারা শোকে চেহারায় আঘাত করে, জামার বক্ষ ছিন্ন করে এবং জাহিলি সম্বোধনে ডাকে তারা আমার দলভুক্ত নয়。
মুহাররমকে সফর নামকরণ মাকরুহ
মুহাররম মাসকে সফর নামকরণ মাকরুহ, কেননা এটা জাহেলি যুগের অভ্যাস।
কাফের অবস্থায় মৃত ব্যক্তির জন্য মাগফিরাতের দুআ করা হারাম
যে ব্যক্তি কাফের অবস্থায় মারা যাবে তার জন্য মাগফিরাতের দুআ করা হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেন-
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَنْ يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوا أُولِي قُرْبِي مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحُبُ الْجَحِيمِ.
অর্থ: কাফের-মুশরিকদের জাহান্নামি হওয়াটা স্পষ্ট হওয়ার পরও নবি এবং মুমিনদের পক্ষে বৈধ নয় যে, তারা তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করবেন।
এই অর্থে হাদিসও আছে। এ ব্যাপারে मुसलमानों ঐক্য রয়েছে।
মুসলমানকে শরয়ি কারণ ছাড়া গালি দেয়া হারাম
অপর মুসলমানকে শরয়ি কোনো কারণ ছাড়া গালি দেয়া হারাম।
(৯৫২) হজরত ইবনে মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন-
سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقُ.
অর্থ: মুসলমানকে গালি দেয়া গুনাহ。
হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
الْمُسْتَبَّانِ مَا قَالَا فَعَلَى الْبَادِي، مَا لَمْ يَعْتَدِ الْمَظْلُوْمُ.
অর্থ: পরস্পর গালিগালাজকারীদের গুনাহ প্রথম ব্যক্তির ওপরই বর্তাবে যতক্ষণ মাজলুম সীমালঙ্ঘন করবে না। -তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান সহিহ。
ঝগড়া-বিবাদে ব্যবহৃত নিন্দিত শব্দাবলী
হে গাধা, হে ছাগ, হে কুকুর ইত্যাদি এগুলো ঝগড়া-বিবাদে সাধারণত ব্যবহৃত নিন্দিত শব্দগুলোর মধ্য থেকে। এগুলো দুই কারণে খারাপ: এক. এগুলো মিথ্যা। দুই. অপরকে কষ্ট দেয়া। তবে হে জালেম ইত্যাদি বলা যাবে। কারণ, ঝগড়ার প্রয়োজনে এটুকু ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা হবে। এছাড়া অধিকন্তু এটা সত্য হয়। অধিকাংশ মানুষ নিজের ওপর বা অন্যের ওপর অত্যাচারী।
আমার সাথে আল্লাহ ছাড়া কোনো সৃষ্টি নেই বলা মাকরুহ
আবু জাফর নাহহাস বলেন, আমার সাথে আল্লাহ ছাড়া কোনো সৃষ্টি নেই এমনটি বলা কিছু উলামায়ে কেরামের দৃষ্টিতে অপছন্দ।
ইমাম নববি রহ. বলেন, অপছন্দের কারণ এই যে, এদিক বিবেচনায় শব্দের কদর্যতা যে, ইসতিসনার (ব্যতয়) ক্ষেত্রে মূল হল, মুত্তাসিল (পূর্বের সাথে সংযুক্ত) হওয়া। কিন্তু এখানে এটা অসম্ভব। এখানে ইসতিসনা মুনকাতি (পূর্ব থেকে বিচ্ছিন্ন)। উপরিউক্ত পাঠের উহ্য দাঁড়ায় এরকম- (আমার সাথে কোনো মানুষ নেই) কিন্তু আমার সাথে আল্লাহ আছেন। এটা কুরআনের আয়াত থেকে গৃহীত-
وَهُوَ مَعَكُمْ - তিনি তোমাদের সাথেই আছেন。
উপরিউক্ত কথার পরিবর্তে এরকম বলা উচিত যে, আমার সাথে আল্লাহ ছাড়া কেউ নেই।
আবু জাফর আরো বলেন, اِجْلِسْ عَلَى اسْمِ اللهِ (আল্লাহর নামে বস) বলা মাকরুহ, বরং বলতে হবে- اِجْلِسْ بِاسْمِ اللهِ (আল্লাহর নামে বস)।
আবু জাফর নাহহাস রহ. জনৈক সালাফ থেকে বর্ণনা করেন- রোজাদারের জন্য এ কথা বলা মাকরুহ যে, আমার মুখে থাকা এই মোহরের কসম। এটা মাকরুহ হওয়ার দলিল হল, মোহর তো কেবল কাফেরদের মুখে মারা হয়। এই যুক্তিপ্রদর্শনে আপত্তি আছে। এর প্রকৃত দলিল হচ্ছে, এটা আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর নামে কসম। আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর নামে কসম করা নিষেধ হওয়ার কথা একটু পরেই আসবে ইনশাআল্লাহ। সুতরাং এই দলিলের ভিত্তিতে উপরিউক্ত কথা বলা মাকরুহ। এছাড়াও সে প্রয়োজন ছাড়া রোজার কথা প্রকাশ করছে। আল্লাহ পাক সর্বাধিক জ্ঞাত।
“আল্লাহ তোমার জন্য তোমার চক্ষু শীতল করুক”, “তুমি সকালে আনন্দিত হও” বাক্যদ্বয় পরিহারযোগ্য
(৯৫৩) ইমরান বিন হুসাইন রাদি. থেকে বর্ণিত-
كُنَّا نَقُوْلُ فِي الْجَاهِلِيَّةِ : أَنْعَمَ اللهُ بِكَ عَيْنًا، وَأَنْعِمْ صَبَاحًا. فَلَمَّا كَانَ الْإِسْلَامُ نُهِينَا عَنْ ذَلِكَ. قَالَ عَبْدُ الرَّزَّاقِ : قَالَ مَعْمَرُ : يُكْرَهُ أَنْ يَقُوْلَ الرَّجُلُ : أَنْعَمَ اللهُ بِكَ عَيْنًا. وَلَا بَأْسَ أَنْ يَقُوْلَ : أَنْعَمَ اللَّهُ عَيْنَكَ.
অর্থ: আমরা জাহিলি যুগে বলতাম, আল্লাহ তোমার চক্ষু শীতল করুক। তুমি সকালে আনন্দিত হও। অতঃপর ইসলাম এসে আমাদের এ থেকে নিষেধ করে। আবদুর রাজ্জাক বলেন, এ কথা বলা মাকরুহ যে, আল্লাহ তোমার জন্য তোমার চক্ষু শীতল করুক। তবে আল্লাহ তোমার চক্ষু শীতল করুক বলাতে কোনো সমস্যা নেই。
তৃতীয় ব্যক্তির সামনে দুই ব্যক্তির সংগোপনে বলা নিষেধ
(৯৫৪) হজরত ইবনে মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِذَا كُنْتُمْ ثَلَاثَةً، فَلَا يَتَنَاجَى اثْنَانِ دُوْنَ الْآخَرِ حَتَّى تَخْتَلِطُوْا بِالنَّاسِ مِنْ أَجْلِ أَنْ يُحْزِنَهُ.
অর্থ: তিনজন একসাথে হলে দুজন তৃতীয়জনকে বাদ দিয়ে কানে কানে কথা বলবে না, যতক্ষণ না তোমরা লোকদের সাথে মিলিত হও। কারণ, এতে তৃতীয় ব্যক্তি কষ্ট পায়。
(৯৫৫) হজরত ইবনে উমর রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إِذَا كَانُوْا ثَلَاثَةٌ، فَلَا يَتَنَاجَى اثْنَانِ دُوْنَ الثَّالِثِ.
অর্থ: তিন ব্যক্তির উপস্থিতিতে দুজন কানাঘুষা করবে না। -সুনানে আবু দাউদের বর্ণনায় অতিরিক্ত এসেছে- বর্ণনাকারী আবু সালেহ ইবনে উমরকে জিজ্ঞাসা করেন, যদি চারজন থাকে? বললেন, এতে কোনো সমস্যা নেই。
মহিলার জন্য স্বামী বা অন্যের কাছে বেগানা মহিলার শারীরিক সৌন্দর্য বর্ণনা করা নিষেধ, তবে তাকে বিয়ে করার প্রতি আগ্রহী করা ইত্যাদি শরয়ি প্রয়োজনে হলে ভিন্ন কথা。
(৯৫৬) হজরত ইবনে মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَا تُبَاشِرِ الْمَرْأَةُ الْمَرْأَةَ، فَتَصِفَهَا لِزَوْجِهَا كَأَنَّهُ يَنْظُرُ إِلَيْهَا.
অর্থ: কোনো মহিলা যেন অন্য মহিলার সংস্পর্শে না থাকে। অতঃপর আপন স্বামীর কাছে সেটা এমনভাবে বর্ণনা করবে যেন স্বামী ঐ মহিলাকে সরাসরি দেখছে。
বিবাহিতকে দাম্পত্যজীবন সুখময় ও সন্তানময় হোক বলা অপছন্দনীয়
বিবাহিত ব্যক্তিকে দাম্পত্যজীবন সুখময় ও সন্তানময় হোক বলা অপছন্দনীয়, বরং বলতে হবে- আল্লাহ তোমার জন্য বরকত দিক এবং তোমার ওপর বরকত নাজিল করুক। যেমনটা বিবাহ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছি।
রাগান্বিত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে "আল্লাহকে স্মরণ কর” ইত্যাদি বলা মাকরুহ
বিশিষ্ট ফকিহ আদিব আবু বকর মুহাম্মাদ বিন ইয়াহিয়া থেকে ইমাম নাহহাস রহ. বর্ণনা করেন- রাগান্বিত ব্যক্তিকে এরকম বলা অপছন্দনীয় যে, আল্লাহকে স্মরণ কর। এই আশঙ্কায় যে, হয়ত রাগ তাকে কুফরির দিকে নিয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, এমনিভাবে তাকে এও বলা যাবে না যে, তুমি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ শরিফ পাঠ কর। একই আশঙ্কার কারণে।
শপথের পরিবর্তে 'আল্লাহ জানেন যে, বিষয়টা এমন নয়' অথবা 'বিষয়টা এমনই' বাক্য বর্জনীয়
আল্লাহর নামে কসম করাকে অপছন্দ করতঃ বা আল্লাহ পাকের প্রতি সম্মানপ্রদর্শন করতঃ কিংবা কসম থেকে বাঁচতে গিয়ে- “আল্লাহ জানেন যে, বিষয়টা এমন নয়" অথবা "বিষয়টা এমনই" ইত্যাদি বলা নিন্দিত। এ ধরনের বাক্যে আশঙ্কা রয়েছে। যদি বক্তা নিশ্চিত থাকে যে, মূল বিষয়টা সে যেমন বলেছে তেমনই, তাহলে কোনো সমস্যা নেই। আর যদি সে নিজেই নিজের কথা নিয়ে সন্দিহান হয় তবে এটি অতি নিকৃষ্ট বাক্য। কেননা, সে আল্লাহর ওপর মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে। কারণ, সে বলছে, আল্লাহ তাআলা এমন এক বিষয় জানেন, যেটার ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত করে জানে না যে, বাস্তব না অবাস্তব। এতে আরো একটি মারাত্মক সূক্ষ্ম দিকও আছে সেটা হল, সে আল্লাহর ইলম নামক গুণে অনৈতিক হস্তক্ষেপ করেছে। আল্লাহ তাআলা বাস্তবতার বিপরীত বিষয় জানেন বলে। এটা বাস্তব হলে সে কাফের হয়ে যাবে। সবার উচিত এ ধরনের কথা থেকে বিরত থাকা।
“চাইলে আমাকে ক্ষমা করে দিন” বলা মাকরুহ
দুআতে এরকম বলা মাকরুহ যে, হে আল্লাহ! আপনি চাইলে বা ইচ্ছা করলে আমাকে মাফ করে দিন; বরং দৃঢ়তার সাথে আল্লাহর কাছে চাইতে হবে。
(৯৫৭) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَا يَقُوْلَنَّ أَحَدُكُمُ : اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ، اللَّهُمَّ ارْحَمْنِي إِنْ شِئْتَ لِيَعْزِمِ الْمَسْأَلَةَ ؛ فَإِنَّهُ لَا مُكْرِهَ لَهُ. وَفِي رِوَايَةِ الْمُسْلِمِ: وَلَكِنْ لِيَعْزِمِ الْمَسْأَلَةَ، وَلْيُعَظْمِ الرَّغْبَةَ ؛ فَإِنَّ اللَّهَ لَا يَتَعَاظَمُهُ شَيْءٌ أَعْطَاهُ.
অর্থ: তোমাদের কেউ যেন এরকম না বলে- হে আল্লাহ! আপনি চাইলে আমাকে মাফ করে দিন। আপনি চাইলে আমার উপর রহম করুন। বরং দৃঢ়তার সাথে প্রার্থনা করা উচিত। কেননা, আল্লাহকে বাধ্যকারী কেউ নেই। -সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় আছে- বরং সে যেন দৃঢ়তা ও বড় আগ্রহের সাথে দুআ করে। কেননা, দেয়ার মত কোনো জিনিসই আল্লাহর কাছে বড় নয়。
(৯৫৮) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِذَا دَعَا أَحَدُكُمْ فَلْيَعْزِمِ الْمَسْأَلَةَ، وَلَا يَقُوْلَنَّ : اللَّهُمَّ إِنْ شِئْتَ فَأَعْطِنِي. فَإِنَّهُ لَا مُسْتَكْرِهَ لَهُ.
অর্থ: দুআয় তোমাদেরকে দৃঢ়তার সাথে চাওয়া উচিত। এরকম বলবে না- হে আল্লাহ! আপনি চাইলে আমাকে দান করুন। কেননা, তাকে কোনো বাধ্যকারী নেই。
আল্লাহর নাম বা গুণাবলী ছাড়া অন্য নামে শপথ করা মাকরুহ
আল্লাহর নাম বা সিফাত ছাড়া অন্য কিছুর নামে কসম খাওয়া মাকরুহ। এ ক্ষেত্রে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, কাবা, ফেরেশতা, আমানত, জীবন, রুহ ইত্যাদি সবই সমান। আমানতের নামে শপথ করা অধিকতর অপছন্দনীয় বিষয়।
(৯৫৯) হজরত ইবনে উমর রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন-
إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَنْهَاكُمْ أَنْ تَحْلِفُوْا بِآبَائِكُمْ، فَمَنْ كَانَ حَالِفًا فَلْيَحْلِفْ بِاللَّهِ، أَوْ لِيَصْمُتْ. وَفِي رِوَايَةٍ : فَمَنْ كَانَ حَالِفًا فَلَا يَحْلِفَ إِلَّا بِاللَّهِ، أَوْ ليسكت.
অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে স্বীয় পিতার নামে কসম করতে নিষেধ করেছেন। কেউ শপথ করতে চাইলে যেন আল্লাহর নামে শপথ করে, অন্যথায় যেন চুপ করে থাকে।
অপর এক সহিহ বর্ণনায় আছে- সুতরাং যাকে শপথ করতেই হয় সে যেন আল্লাহর নামে শপথ করে, অন্যথায় যেন চুপ থাকে। - আমানতের দোহাই দিয়ে কসম খাওয়ার নিষেধাজ্ঞায় অনেক ধমকি বর্ণিত হয়েছে।
(৯৬০) হজরত বুরায়দা রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ حَلَفَ بِالْأَمَانَةِ فَلَيْسَ مِنَّا.
অর্থ: যে ব্যক্তি আমানতের দোহাই দিয়ে শপথ করে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত না。
ক্রয়-বিক্রয়ে অধিকহারে শপথ করা মাকরুহ যদিও সত্য হয়
(৯৬১) হজরত আবু কাতাদা রাদি. থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-
إِيَّاكُمْ وَكَثْرَةَ الْحَلِفِ فِي الْبَيْعِ؛ فَإِنَّهُ يُنَفِّقُ، ثُمَّ يَمْحَقُ.
অর্থ: তোমরা ব্যবসায় অধিকহারে শপথ করা থেকে বেঁচে থাক। কেননা এটা দ্বারা সাময়িক যদিও সম্পদ বৃদ্ধি পায়, কিন্তু পরে নিঃশেষ হয়ে যায়。
বৃষ্টির সময় আসমানে সৃষ্ট রেখাকে কাওমে কুজাহ বলা মাকরুহ
(৯৬২) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَا تَقُوْلُوا قَوْسَ قُزَحَ، فَإِنَّ قُزَحَ شَيْطَانٌ، وَلَكِنْ قُوْلُوْا قَوْسَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ، فَهُوَ أَمَانُ لِأَهْلِ الْأَرْضِ.
অর্থ: তোমরা কাওসে কুজাহ বল না, কেননা কুজাহ হচ্ছে শয়তান। তবে আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লার কাওস বলতে পার। এটা দুনিয়াবাসীর জন্য নিরাপত্তা。
নিজের পাপ সম্পর্কে অন্যকে অবিহিত করা মাকরুহ
মানুষ কোনো গুনাহ বা খারাপ কাজে লিপ্ত হলে সেটা অন্যদের জানানো মাকরুহ। বরং চুপিসারে আল্লাহ তাআলার কাছে তাওবা করা উচিত। তৎক্ষণাৎ গুনাহ থেকে ফিরে আসা, কৃতকর্মের ওপর লজ্জিত হওয়া এবং ভবিষ্যতে এমন কাজের পুনরাবৃত্তি না করার দৃঢ় সঙ্কল্প করা চাই। এই তিন বস্তুই তাওবার রোকন। অতএব, এগুলোর সমষ্টি ছাড়া তাওবা সহিহ হবে না। তবে যদি গুনাহের বিষয়ে নিজের শায়খ বা এজাতীয় কাউকে জানায়, যাকে জানানোর দ্বারা আশা করা যায় যে, তিনি তাকে সে গুনাহ থেকে নিষ্কৃতির উপায় বলে দিবেন বা তাকে কিভাবে এ থেকে নিরাপদ থাকা যায় শিখিয়ে দিবেন। অথবা তাকে সে গুনাহে লিপ্ত হওয়ার মূল কারণটা বলে দিবেন কিংবা তার জন্য দুআ করবেন; এতে কোনো সমস্যা নেই। বরং এটা উত্তমও বটে। মাকরুহ তখনই হবে, যখন এ সবের কোনো একটা থাকবে না।
(৯৬৩) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-
كُلُّ أُمَّتِي مُعَافَى إِلَّا الْمُجَاهِرِينَ، وَإِنَّ مِنَ الْمَجَانَةِ أَنْ يَعْمَلَ الرَّجُلُ بِاللَّيْلِ عَمَلًا، ثُمَّ يُصْبِحَ وَقَدْ سَتَرَهُ اللهُ، فَيَقُولَ: يَا فُلَانُ، عَمِلْتُ الْبَارِحَةَ كَذَا وَكَذَا. وَقَدْ بَاتَ يَسْتُرُهُ رَبُّهُ، وَيُصْبِحُ يَكْشِفُ سِتْرَ اللَّهِ، عَنْهُ.
অর্থ: আমার প্রত্যেক উম্মত ক্ষমাপ্রাপ্ত, তবে যে গুনাহকে প্রকাশ করে (তাকে মাফ করা হবে না)। প্রকাশ করার একটা পদ্ধতি হচ্ছে, কোনো ব্যক্তি রাতে কোনো খারাপ কাজ করল, আল্লাহ তার সেই গুনাহ গোপন রাখলেন। কিন্তু সকাল হলে সে বলল, হে অমুক! গতরাতে আমি এই এই পাপ কাজ করেছি। অথচ রাতে তার রব দোষটি গোপন রেখেছিলেন, আর সে সকালে আল্লাহর গোপনকৃত দোষটি প্রকাশ করে দিল。
কারো গোলাম, স্ত্রী, ছেলে, দাস কিংবা অধীনস্থ কাউকে তার বিরুদ্ধে ফুঁসলানো হারাম।
প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য কারো গোলাম বা স্ত্রী বা ছেলে অথবা দাস কিংবা এরকম অধীনস্থ কাউকে এমন কথা বলা হারাম, যা দ্বারা তাকে ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফুঁসলানো হয়। তবে সৎকাজের আদেশ বা অসৎ কাজ থেকে নিষেধ হলে ভিন্ন কথা। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَتَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوى " وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ.
অর্থ: তোমরা পুণ্য ও তাকওয়ার কাজে পরস্পর সহযোগিতা কর, তবে গুনাহ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে নয়。
আরো বলেন-
مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ.
অর্থ: সে যাই বলে তা সদা প্রস্তুত একজন প্রহরী সংরক্ষণ করে নেন。
(৯৬৪) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ خَبَّبَ زَوْجَةَ امْرِئٍ أَوْ مَمْلُوْكَهُ فَلَيْسَ مِنَّا.
অর্থ: যে ব্যক্তি কারো স্ত্রী বা গোলামকে ফুঁসলায়, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত না。
আল্লাহর আনুগত্যে বের করা সম্পদের ক্ষেত্রে যা বলবে
আল্লাহর আনুগত্যে বের করা সম্পদের ক্ষেত্রে "ব্যয় করেছি” বা এ জাতীয় শব্দ বলা উচিত। সুতরাং এভাবে বলবে, আমি আমার হজে এক হাজার টাকা খরচ করেছি, যুদ্ধে দুই হাজার টাকা খরচ করেছি। এমনিভাবে মেহমানদারীতে ব্যয় করেছি, ছেলেদের খত্নায় ব্যয় করেছি, আমার বিয়েতে খরচ করেছি বা এ জাতীয় কোনো শব্দ। এমন শব্দ বলবে না, যা অধিকাংশ সাধারণ মানুষ বলে থাকে যে, মেহমানদারীতে আমি লোকসানগ্রস্ত হয়ে গেছি। হজে এত টাকা লোকসান হয়েছে। সফরে এত টাকা নষ্ট হয়েছে। মোটকথা, আনুগত্যে ব্যয়ের ক্ষেত্রে খরচ করেছি এবং এ জাতীয় কিছু বলবে। গুনাহ ও অপছন্দনীয় কাজে ব্যয় করলে লোকসানগ্রস্ত হয়েছি, ঋণ হয়ে গেছি বা বিনষ্ট করেছি ইত্যাদি বলবে। আনুগত্যের ক্ষেত্রে এগুলো ব্যবহার করা যাবে না।
ইমামের বলার পরে ইয়াকা না'বুদু বলা নিষিদ্ধ
নামাজে ইমামের إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ বলার পরে অধিকাংশ লোক إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ বলে থাকে, যা নিষিদ্ধ। এটা পরিত্যাগ করা এবং এ থেকে বিরত থাকা উচিত। আমাদের উলামায়ে কেরামের মধ্য থেকে "বয়ান” কিতাবের লেখক বলেন, এমনটা করলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে, তবে তিলাওয়াতের নিয়তে পড়লে ভিন্ন কথা। যদিও এই মতে আপত্তি আছে। ত েপ্রকাশ থাকে যে, এই মতের সাথে কেউ একমত হননি। অতএব, এটা বলা থেকে বিরত থাকা উচিত, কেননা যদিও নামাজ নষ্ট হয় না, তবুও এ স্থানে বলা মাকরুহ। আল্লাহ সর্বজ্ঞাত।
শুল্ককে সরকারের সম্পদ বলা নিষেধ
যেসব বিষয়ে কঠিনভাবে নিষেধ করা হয়েছে এবং বেঁচে থাকতে বলা হয়েছে, তন্মধ্যে এও একটি, যা ক্রয়-বিক্রয় ইত্যাদিতে আরোপিত ট্যাক্সের ব্যাপারে সাধারণ মানুষ বলে থাকে- এটা বাদশার সম্পদ, তোমার ওপর বাদশার হক আছে। অথবা এমন কিছু বলা যাতে ট্যাক্সকে সরকারের হক বা সম্পদ অভিহিত করা হয়। এটা অত্যন্ত খারাপ ও ঘৃণ্য নব আবিষ্কৃত বিষয়। এমনকি কিছু উলামায়ে কেরাম তো বলেই ফেলেছেন, যে ট্যাক্সকে সরকারের সম্পদ নাম দিবে, সে কাফের হয়ে যাবে! ইসলাম ধর্ম থেকে বেরিয়ে যাবে। তবে বিশুদ্ধ মত হল, কাফের হবে না। তবে যদি সে একে জুলুম জানা সত্ত্বেও সরকারের পাওনা মনে করে। অতএব, একে ট্যাক্স বা আয়কর ইত্যাদি বলাটাই সঠিক। আল্লাহ তাআলাই তাওফিকদাতা।
আল্লাহর ওয়াস্তে জান্নাত ছাড়া অন্য কিছু চাওয়া মাকরুহ
(৯৬৫) হজরত জাবের রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَا يُسْأَلُ بِوَجْهِ اللَّهِ، إِلَّا الْجَنَّةُ.
অর্থ: আল্লাহর দোহাই দিয়ে জান্নাত ছাড়া অন্য কিছু চাওয়া যাবে না।
আল্লাহর ওয়াস্তে প্রার্থনাকারী ও সুপারিশকারীকে তাড়িয়ে দেয়া মাকরুহ
(৯৬৬) হজরত ইবনে উমর রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنِ اسْتَعَاذَ بِاللهِ، فَأَعِيذُوهُ، وَمَنْ سَأَلَ بِاللهِ، فَأَعْطُوْهُ، وَمَنْ دَعَاكُمْ فَأَجِيبُوْهُ، وَمَنْ صَنَعَ إِلَيْكُمْ مَعْرُوْفًا فَكَافِئُوهُ، فَإِنْ لَمْ تَجِدُوا مَا تُكَافِئُوْنَهُ فَادْعُوْا لَهُ حَتَّى تَرَوْا أَنَّكُمْ قَدْ كَافَأْتُمُوهُ.
অর্থ: যে ব্যক্তি আল্লাহর নামে আশ্রয় চায়, তাকে আশ্রয় দাও। যে আল্লাহর ওয়াস্তে কিছু চায়, তাকে দান কর। যে তোমাদেরকে দাওয়াত করে, সাড়া দাও। যে তোমার কোনো উপকার করে, তাকে প্রতিদান দাও। যদি তাকে প্রতিদান দেয়ার মত কিছু না পাও, তাহলে তার জন্য এই পরিমাণ দুআ কর, যেন তোমার মনে হয় তার প্রতিদান দেয়া হয়ে গেছে。
“আল্লাহ তোমার জীবন দীর্ঘায়িত করুক” বলা মাকরুহ
“আল্লাহ তোমার জীবন দীর্ঘায়িত করুক” বলা প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী মাকরুহ। আবু জাফর নাহহাস ‘সানাতুল কিতাব’ বইয়ে (পৃ. ১৬৮-১৬৯) বলেন, কিছু উলামায়ে কেরাম একে মাকরুহ বলেছেন। আবার কেউ বৈধ বলেছেন। ইসমাঈল বিন ইসহাক বলেন, সর্বপ্রথম জিন্দিকরাই নামের শুরুতে এ কথা লিখতে শুরু করেছে। হাম্মাদ বিন সালামা রহ. থেকে বর্ণিত- मुसलमानों চিঠির ভাষা ছিল; অমুক থেকে অমুকের প্রতি। হামদ ও সালাতের পর, তোমার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি ঐ আল্লাহর প্রশংসা করি, যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তার কাছে প্রার্থনা করি, যেন তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার পরিবারের ওপর রহমত বর্ষণ করেন। অতঃপর জিন্দিকরা এ ধরনের চিঠির প্রচলন শুরু করে, যার শুরুতে- আল্লাহ তোমার জীবন দীর্ঘায়িত করুক।
“আমার মা-বাবা তোমার ওপর উৎসর্গিত হোক” বলা যাবে
বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী একজন আরেকজনকে “আমার মা-বাবা তোমার ওপর উৎসর্গিত হোক” বা “আল্লাহ আমাকে আপনার ওপর উৎসর্গ করুক” বলতে পারবে। এটি মাকরুহ নয়। সহিহ বুখারি এবং সহিহ মুসলিমসহ অন্যান্য কিতাবে এর বৈধতার পক্ষে একাধিক প্রসিদ্ধ হাদিস এসেছে। এ ক্ষেত্রে বাবা-মা মুসলমান হওয়া না হওয়া সমান। যদিও কিছু উলামায়ে কেরাম মা-বাবা মুসলমান হলে এমনটা অপছন্দ করেন। নাহহাস বলেন, “আল্লাহ আমাকে আপনার ওপর উৎসর্গ করুক” বলা হজরত মালিক বিন আনাস রহ. অপছন্দ করতেন। তবে মালেকি কিছু আলেম একে বৈধ বলেছেন। কাজি ইয়াজ বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামায়ে কেরামের মতে এমনটা বলা বৈধ, উৎসর্গিত ব্যক্তি মুসলমান হোক বা কাফের।
ফায়দা: এর বৈধতার পক্ষে অগণিত সহিহ হাদিস এসেছে। শরহে সহিহ মুসলিমে এর কিছু বর্ণনা করেছি।
خُصُوْمَةً و جِدَالٌ مِرَاء
নিন্দিত শব্দাবলীর মধ্যে রয়েছে ঝগড়া, বিবাদ ও কলহ। ইমাম আবু হামেদ গাজালি রহ. বলেন, مِرَاءُ বলা হয়- ত্রুটি প্রকাশ করার লক্ষ্যে অন্য কারো কথায় দোষ ধরা। এখানে তার উদ্দেশ্য থাকে কেবল বক্তাকে তুচ্ছ করা এবং তার ওপর নিজের বিশেষত্ব প্রমাণ করা। جِدَالٌ : মতামত প্রকাশ ও তা প্রতিষ্ঠার সাথে সম্পৃক্ত। আর خُصُوْمَةُ : কথা কাটাকাটিতে লিপ্ত হওয়া, যাতে নিজের সম্পদ অর্জন হয় বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য হাসিল হয়। এটা কখনো ব্যক্তি নিজেই শুরু করে, কখনো অন্যের কথার মাঝখানে দখল দেয়। مِرَاءُ কেবল অন্যের কথায় অনভিপ্রেত অনুপ্রবেশের মাধ্যমেই হয়। গাজালির বক্তব্য সমাপ্ত হল।
জ্ঞাতব্য, جِدَالٌ কখনো সত্যের জন্য হয়, আবার কখনো বাতিলের জন্য। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَلَا تُجَادِلُوا أَهْلَ الْكِتَبِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ.
অর্থ: তোমরা আহলে কিতাবদের সাথে কেবল সুন্দর পদ্ধতিতেই তর্ক- বিতর্কে লিপ্ত হও。
আরো বলেন-
وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ.
অর্থ: তুমি তাদের সাথে উত্তম পদ্ধতিতে তর্ক কর。
অন্যত্র বলেন-
مَا يُجَادِلُ فِي ايْتِ اللَّهِ إِلَّا الَّذِينَ كَفَرُوا.
অর্থ: আল্লাহর আয়াত নিয়ে কেবল কাফেররাই তর্কে লিপ্ত হয়。
যদি সত্য জানা ও প্রতিষ্ঠার জন্য তর্ক হয়, সেটা প্রশংসনীয়। যদি হককে দমন করার জন্য বা ইলম ছাড়া তর্ক হয়, তাহলে সেটা নিন্দনীয়। বৈধতা ও অবৈধতার দলিলগুলো এভাবেই ব্যাখ্যা করতে হবে।
জনৈক আলেম বলেন, দীন ধ্বংসকারী, মনুষ্যত্ব ক্ষয়কারী, জীবনের স্বাদ বিনষ্টকারী এবং মনোযোগ ব্যস্তকারী হিসাবে ঝগড়ার চেয়ে বড় আর কিছু আমি দেখিনি ন। যদি কেউ আপত্তি করে এটা বলে যে, নিজের অধিকার আদায়ের জন্য তর্ক-বিতর্ক করা জরুরি। এর উত্তর সেটাই, যেটা ইমাম গাজালি রহ. দিয়েছেন। তা হল, যে অন্যায়ভাবে বা না জেনে তর্ক করে তার তর্ক-বিতর্ক নিন্দনীয়। যেমন- কাজির সামনে নির্ধারিত উকিল। কেননা, সে মামলার ওকালতি করে সত্য কোন দিকে সেটা না জেনেই। ফলে সে নিন্দনীয় তর্কে জড়ায়। মাত্রারিক্ত অধিকার চাওয়াও নিন্দনীয়। সে অপর পক্ষকে কষ্ট দেয়া ও তার ওপর বিজয়ী হওয়ার জন্য মিথ্যা বলে ও অনর্থক ঝগড়া করে। ঐ ব্যক্তির তর্ক-বিবাদও নিন্দনীয় হবে যে কষ্টদায়ক কথাবার্তাও বলে, অথচ অধিকার আদায়ে এগুলোর কোনো প্রয়োজন ছিল না। এমনিভাবে যে ব্যক্তি কেবল বিদ্বেষবশতঃ অপর পক্ষকে দমন-পীড়নের জন্যই এর প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়, এটাও নিন্দনীয়। পক্ষান্তরে যদি মাজলুম শরিয়তের বাতলানো পন্থায় বিতর্ক, সীমালঙ্ঘন ও বাড়াবাড়ি ব্যতিরেকে এবং জেদপ্রকাশ ও কষ্টপ্রদানের নিয়ত ছাড়া নিজের যুক্তি শক্তিশালী করে, তাহলে এটি হারাম নয়। কিন্তু অন্য পন্থায় কাজ হয়ে গেলে এটা না করাই উত্তম। কেননা, তর্ক-বিতর্কে যবানকে মধ্যপন্থায় রাখা মুশকিল। বিতর্ক মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলে এবং প্ররোচিত করে। আর মানুষ ক্রুদ্ধ হলে পরস্পর বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়। এমনকি তারা একে অপরের দোষ বলে আনন্দ লাভ করে। অপরের সুখে ব্যথিত হয়। অপরের সম্মানহানি করে। যারাই বিতর্ক করে তারা এ সকল আপদের মুখামুখী হয়। সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম ক্ষতি হচ্ছে, অন্তরকে এর সাথে নিয়োজিত রাখা। এমনকি নামাজে হলেও অন্তর কিন্তু তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে থাকে। অতএব, তার অবস্থা স্থিতিশীল থাকে না। খারাবির মূলেই খুসুমাহ, এমনিভাবে জিদাল ও মিরা। অতএব, অতি প্রয়োজন ছাড়া বিতর্কের সূচনা করা উচিত না। এমনটা করলে যবান ও অন্তর বিতর্কের আপদ থেকে মুক্ত থাকবে।
(৯৬৭) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
كَفَى بِكَ إِثْمًا أَنْ لَا تَزَالَ مُخَاصِمًا.
অর্থ: সর্বদা তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত থাকাটাই তুমি গুনাহগার হওয়ার জন্য যথেষ্ট。
হজরত আলি রাদি. থেকে বর্ণিত-
إِنَّ لِلْخُصُوْمَاتِ قُحَمًا.
অর্থ: নিশ্চয় তর্ক-বিবাদে ধ্বংস রয়েছে。
অযাচিত ভঙ্গি মাকরুহ
অযাচিত ভঙ্গি, কৃত্রিম ছন্দ ও বাগ্মিতা, বাগ্মিতার ভানকারীদের ন্যায় অপ্রয়োজনীয় ভূমিকা এবং কথায় চাকচিক্য সৃষ্টি করা; সবই অপছন্দনীয়। এমনি সাধারণ লোকদের সম্বোধন করতে গিয়ে কৃত্রিম ছন্দ মিলানো, সূক্ষ্ম ইরাব এবং চিন্তা করে অপরিচিত শব্দ ব্যবহার করা নিন্দনীয়। সম্বোধনে এমন শব্দ নিয়ে আসা উচিত, যা শ্রোতা সহজেই স্পষ্ট বুঝতে পারে; তার জন্য কঠিন না হয়।
(৯৬৮) হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِنَّ اللَّهَ يُبْغِضُ الْبَلِيغَ مِنَ الرِّجَالِ، الَّذِي يَتَخَلَّلُ بِلِسَانِهِ كَمَا تَتَخَلَّلُ الْبَقَرَةُ.
অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ঐ বাগ্মী সাহিত্যিককে অপছন্দ করেন, যে গরুর মতো চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলে। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান。
(৯৬৯) হজরত ইবনে মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
هَلَكَ الْمُتَنَطَّعُوْنَ. قَالَهَا ثَلَاثًا.
অর্থ: বাড়াবাড়িকারীরা ধ্বংস হোক। তিনি কথাটি তিনবার বলেছেন。
(৯৭০) হজরত জাবের রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إِنَّ مِنْ أَحَبِّكُمْ إِلَيَّ، وَأَقْرَبِكُمْ مِنِّي مَجْلِسًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَحَاسِنَكُمْ أَخْلَاقًا، وَإِنَّ أَبْغَضَكُمْ إِلَيَّ، وَأَبْعَدَكُمْ مِنِّي مَجْلِسًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الثَّرْثَارُونَ، وَالْمُتَشَدَّقُونَ، وَالْمُتَفَيْهِقُوْنَ. قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَدْ عَلِمْنَا الثَّرْثَارُوْنَ، وَالْمُتَشَدَّقُوْنَ، فَمَا الْمُتَفَيْهِقُونَ ؟ قَالَ: الْمُتَكَبِّرُوْنَ.
অর্থ: কেয়ামতের দিন আমার নিকট তোমাদের ঐ ব্যক্তিই সবচেয়ে প্রিয় ও সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে, যার চরিত্র সবার থেকে সুন্দর হবে। আর আমার কাছে সর্বাধিক ঘৃণিত ও সবচেয়ে দূরবর্তী থাকবে বাচাল, বাকপটু এবং অহঙ্কারী ব্যক্তি। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, সারসারুন ও মুতাশাদ্দিকুনের অর্থ তো আমরা জানি। কিন্তু মুতাফাইহিকুন কী জিনিস? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অহঙ্কারী। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান。
তবে বয়ান ও ওয়াজের সময় বাড়াবাড়ি ছাড়া এমন সুন্দর শব্দাবলীর ব্যবহার নিন্দনীয় নয়। কেননা এ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহর ইবাদতের দিকে মানুষের অন্তর আকৃষ্ট করা। আর এ ক্ষেত্রে সুন্দর ভাষার ভালো প্রভাব আছে।
ইশার নামাজের পর বৈধ কথাবার্তাও মাকরুহ
ইশার নামাজ আদায়ের পর অন্য সময়ে মুবাহ এমন কথাবার্তাও মাকরুহ। আমি মুবাহ দ্বারা উদ্দেশ্য নিয়েছি- যেটি করা এবং না করা বরাবর। অন্য সময়ে হারাম বা মাকরুহ কথাবার্তা তো আরো কঠিন হারাম ও মাকরুহ। তবে ভালো বিষয়ে আলোচনা করা যেমন- ইলমি আলোচনা, নেককারদের ঘটনা ও উত্তম চরিত্রের ঘটনাবলী এবং মেহমানদের সাথে গল্প করা মাকরুহ নয়। বরং সেটা মুস্তাহাব। এ সংক্রান্ত অনেক সহিহ হাদিস বর্ণিত আছে। এমনিভাবে ওজর বা সাময়িক বিষয়ে কথাবার্তা বলাতে সমস্যা নেই। যা উল্লেখ করলাম, সে সম্পর্কে বহু প্রসিদ্ধ হাদিস বিদ্যমান। সংক্ষেপে কিছু এখানে উল্লেখ করছি। তাছাড়া আরো অনেকগুলোর দিকে আমি ইঙ্গিত করছি।
(৯৭১) হজরত আবু বারজা রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَكْرَهُ النَّوْمَ قَبْلَ الْعِشَاءِ، وَالْحَدِيثَ بَعْدَهَا.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার পূর্বে ঘুমাতে এবং পরে কথাবার্তা বলতে অপছন্দ করতেন。
পূর্বে যেসব কারণে ইশার পরে কথাবার্তা বলা বৈধ বলেছি, এর স্বপক্ষে অনেক হাদিস রয়েছে। কিছু নিম্নরূপ:
(৯৭২) হজরত ইবনে উমর রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى الْعِشَاءِ فِي آخِرِ حَيَاتِهِ، فَلَمَّا سَلَّمَ قَامَ فَقَالَ: أَرَأَيْتَكُمْ لَيْلَتَكُمْ هَذِهِ ؟ فَإِنَّ عَلَى رَأْسِ مِائَةِ سَنَةٍ مِنْهَا لَا يَبْقَى مِمَّنْ هُوَ عَلَى ظَهْرِ الْأَرْضِ أَحَدٌ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ জীবনে একদিন ইশার নামাজ পড়লেন। সালাম ফিরিয়ে বললেন, তোমরা কি এই রাত সম্পর্কে জান? নিশ্চয় বর্তমানে যারা দুনিয়াতে আছেন একশ বছরের মাথায় তাদের কেউ আর অবশিষ্ট থাকবেন না。
(৯৭৩) হজরত আবু মুসা আশআরি রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَعْتَمَ بِالصَّلَاةِ حَتَّى ابْهَارَ اللَّيْلُ، ثُمَّ خَرَجَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَصَلَّى بِهِمْ فَلَمَّا قَضَى صَلَاتَهُ، قَالَ لِمَنْ حَضَرَهُ: عَلَى رِسْلِكُمْ ، أُعْلِمُكُمْ وَأَبْشِرُوا أَنَّ مِنْ نِعْمَةِ اللَّهِ، عَلَيْكُمْ أَنَّهُ لَيْسَ مِنَ النَّاسِ أَحَدٌ يُصَلِّي هَذِهِ السَّاعَةَ غَيْرُكُمْ. أَوْ قَالَ: مَا صَلَّى هَذِهِ السَّاعَةَ أَحَدٌ غَيْرُكُمْ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার ইশার নামাজ পড়াতে দেরী করলেন, এমনকি রাত গভীর হয়ে গেল। অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে নামাজ পড়ালেন। নামাজ শেষ করে উপস্থিত লোকদের উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমরা সবাই বসে থাক। আমি কিছু কথা বলব। তোমরা আল্লাহ পাকের এই নেয়ামতের সুসংবাদ গ্রহণ কর যে, তোমরা ছাড়া এই মুহূর্তে আর কেউ নামাজ পড়েনি。
(৯৭৪) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّهُمُ انْتَظِرُوا النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) فَجَاءَهُمْ قَرِيباً مِنْ شَطْرِ اللَّيْلِ، فَصَلَّى بِهِمْ: يَعْنِي الْعِشَاءَ، قَالَ: ثُمَّ خَطَبَنَا فَقَالَ: أَلَا إِنَّ النَّاسَ قَدْ صَلَّوْا ثُمَّ رَقَدُوْا، وَإِنَّكُمْ لَنْ تَزَالُوْا فِي صَلَاةٍ مَا انْتَظَرْتُمُ الصَّلَاةَ.
অর্থ: লোকেরা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অপেক্ষা করছিল। অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায় অর্ধরাতে আসলেন। এসে তাদেরকে নিয়ে নামাজ পড়ালেন। এরপর খুতবা দিতে গিয়ে বললেন, শোনো! অন্যান্য লোকেরা তো নামাজ পড়ে শুয়ে পড়েছে। (আর তোমরা অপেক্ষা করছিলে) যতক্ষণ তোমরা অপেক্ষা করছিলে, ততক্ষণ যেন নামাজেই ছিলে。
হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. কর্তৃক আপন খালা মাইমুনার ঘরে রাত্রিযাপন সম্পর্কিত হাদিস আছে-
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى الْعِشَاءَ، ثُمَّ دَخَلَ فَحَدَّثَ أَهْلَهُ، وَقَوْلُهُ: نَامَ الغُلَيمُ؟
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার নামাজ পড়ে এসে নিজ স্ত্রীর সাথে কথাবার্তা বলেছেন। কথাবার্তার এক পর্যায়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বালকটি ঘুমিয়ে পড়েছে?
এ ব্যাপারে হজরত আবদুর রহমান বিন আবু বকর রাদি. এর মেহমান ও তাঁর থেকে এ সংক্রান্ত হাদিস রয়েছে। এমনকি তিনি ইশার নামাজ পড়ে এসে তাদের সাথে, নিজ-সন্তানের সাথে বিভিন্ন কথাবার্তা বললেন। এ ধরনের ঘটনা অসংখ্য-অগণিত। যতটুকু উল্লেখ করেছি ততটুকুই যথেষ্ট। সব প্রশংসা আল্লাহ পাকের।
ইশাকে আতামা, মাগরিবকে ইশা এবং ফজরকে গাদাত বলা মাকরুহ
ইশাকে আতামা নাম দেয়া মাকরুহ। এ সংক্রান্ত অনেক সহিহ হাদিসের বিদ্যমান। মাগরিবকে ইশা নামকরণও মাকরুহ。
(৯৭৫) হজরত আবদুল্লাহ বিন মুগাফফাল মুজানি রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَا تَغْلِبَنَّكُمُ الْأَعْرَابُ عَلَى إِسْمِ صَلَاتِكُمُ الْمَغْرِبِ قَالَ: وَتَقُوْلُ الْأَعْرَابُ: هِيَ الْعِشَاءُ.
অর্থ: মাগরিবের নামকরণে যেন গ্রাম্য লোকেরা তোমাদের ওপর জয়ী না হয়। বর্ণনাকারী বলেন, তৎকালীন আরব বেদুঈনরা মাগরিবকে ইশা বলত। -ইশাকে আতামা নামকরণে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন- এক হাদিসে আছে:
لَوْ يَعْلَمُوْنَ مَا فِي الْعَتَمَةِ وَالصُّبْحِ لَأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا.
অর্থ: যদি লোকেরা জানত, আতামা ও ফজরের নামাজে কি পরিমাণ সওয়াব ও কল্যাণ নিহিত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এই দুই নামাজে আসত。
এসব হাদিসের উত্তর দুইভাবে দেয়া যায়- এক. এই হাদিসগুলোতে আতামা বলা হয়েছে এটা বুঝানোর জন্য যে, আতামা নামকরণের নিষেধাজ্ঞা হারাম হওয়ার কারণে নয়, বরং মাকরুহে তানজিহি হওয়ার কারণে। দুই. এই হাদিসগুলোর সম্বোধিত ব্যক্তি এমন ছিল, যাদের সামনে ইশা বললে ভুল বুঝার আশঙ্কা ছিল।
বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী ফজরের নামাজকে গাদাত নামকরণে কোনো অপছন্দনীয়তা নেই। ফজরকে গাদাত (غَدَاةٌ) নামকরণে অনেক সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। আমাদের একদল উলামা একে মাকরুহ বলেছেন; তাদের কথা ধর্তব্য নয়।
মাগরিব ও ইশাকে একসাথে 'ইশাআইন' বলাতে কোনো সমস্যা নেই। ইশাকে “ইশায়ে আখিরা” বললেও কোনো সমস্যা হবে না। আসমায়ি রহ. এর বক্তব্য- ইশাকে ইশায়ে আখিরা বলা যাবে না: স্পষ্ট ভুল।
সহিহ মুসলিমে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
أَيُّمَا امْرَأَةٍ أَصَابَتْ بَخُورًا فَلَا تَشْهَدْ مَعَنَا الْعِشَاءَ الْآخِرَةَ.
অর্থ: যে মহিলা সুগন্ধি লাগাবে সে যেন ইশায়ে আখিরা তথা ইশার নামাজের জামাতে হাজির না হয়。
বিষয়টি অগণিত সাহাবায়ে কেরাম থেকেও সহিহ বুখারি ও মুসলিম ইত্যাদিতে বর্ণিত হয়েছে। আমি প্রমাণ সহকারে এসব 'তাহজিবুল আসমায়ি ওয়াল্লুগাত' বইয়ে উল্লেখ করেছি।
ক্ষতি ও কষ্টের আশঙ্কা হলে কারো গোপন বিষয় প্রকাশ করা হারাম
নিষেধকৃত বস্তুগুলোর একটি হল, ক্ষতি ও কষ্টের কারণ হলে অন্যের গোপন কথা প্রকাশ করা। এ ব্যাপারে অনেক হাদিস রয়েছে。
(৯৭৬) হজরত জাবের রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِذَا حَدَّثَ الرَّجُلُ بِالْحَدِيْثِ ثُمَّ الْتَفَتَ فَهِيَ أَمَانَةُ.
অর্থ: কেউ (কারো কাছে) কিছু বলে তার দিকে তাকালে কথাগুলো আমানত হয়ে যায়। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান。
বিনা প্রয়োজনে স্ত্রীকে মারার কারণ জিজ্ঞাসা করা যাবে না
বিনা প্রয়োজনে কোনো পুরুষকে এ কথা জিজ্ঞাসা করা যাবে না যে, স্ত্রীকে মারলেন কেন? কিতাবের শুরুতে যবান সংযত রাখার আলোচনায় অযৌক্তিক কথা থেকে বেঁচে থাকা-সংক্রান্ত অনেক সহিহ হাদিস বর্ণনা করেছি। এই সহিহ হাদিসও বর্ণনা করেছি-
مِنْ حُسْنِ إِسْلَامِ المَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيْهِ.
অর্থ: মুসলমানের উৎকৃষ্টতা হল, অনর্থক বিষয় পরিত্যাগ করা。
(৯৭৭) হজরত উমর বিন খাত্তাব রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন-
لَا يُسْأَلُ الرَّجُلُ فِيْمَا ضَرَبَ امْرَأَتَهُ.
অর্থ: কোনো ব্যক্তিকে এটা জিজ্ঞাসা করা যাবে না যে, কেন সে স্ত্রীকে মারল!
কবিতা ও কবিতার দর্শনের বিবরণ
কবিতার ব্যাপারে এসেছে:
হজরত আয়েশা রাদি. থেকে হাসান সনদে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কবিতার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে বললেন- কবিতার ভালো দিক ভালো এবং খারাপ দিক খারাপ।
উলামায়ে কেরাম বলেন, এর অর্থ: পদ্যের হুকুম গদ্যের মতই, তবে শুধু কবিতা নিয়ে পড়ে থাকা ও তাতেই সীমাবদ্ধ থাকা নিন্দনীয়।
অনেক সহিহ হাদিস থেকে প্রমাণিত যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ভালো) কবিতা শুনেছেন এবং কাফেরদের নিয়ে ব্যাঙ্গ-কবিতা গাইতে হাসসান বিন সাবেতকে আদেশ দিয়েছেন।
এটাও প্রমাণিত যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِنَّ مِنَ الشِّعْرِ لَحِكْمَةً.
অর্থ: নিশ্চয় কিছু কবিতায় দর্শন নিহিত。
আরো প্রমাণিত আছে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَأَنْ يَمْتَلِئَ جَوْفُ أَحَدِكُمْ قَيْحًا، خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَمْتَلِئَ شِعْرًا.
অর্থ: কবিতা দিয়ে পেট ভরা থাকার চেয়ে বমি দিয়ে পেট ভর্তি থাকা উত্তম।
এ সব হাদিসের মর্মার্থ পূর্ববর্তী ব্যাখ্যানুযায়ী।
যেসব শব্দ উল্লেখে লজ্জাবোধ হয় সেগুলোর ক্ষেত্রে ইঙ্গিতপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করা
নিষিদ্ধ বিষয়গুলোর একটি হল, অশ্লীল কথা ও বকবক করা। এ বিষয়ে সহিহ হাদিস অসংখ্য ও প্রসিদ্ধ। অশ্লীল কথার ব্যাখ্যা হল, খারাপ বিষয় স্পষ্ট কথায় ব্যক্ত করা যদিও বিষয়টা সঠিক হয় এবং বক্তা সত্যবাদী হয়। এটা বেশিরভাগ হয়ে থাকে সহবাস বা এ জাতীয় শব্দের ক্ষেত্রে। এসব ক্ষেত্রে ইঙ্গিতপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করা এবং এমন সুন্দর বাক্যে সেটা ব্যক্ত করা দরকার, যা দ্বারা উদ্দেশ্যটা বুঝে আসে। কুরআন ও হাদিসে বিভিন্ন জায়গায় খারাপ বিষয়কে এরকম সুন্দর শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। (কয়েকটি উদাহরণ নিম্নরূপ:)
আল্লাহ তাআলা বলেন-
أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَى نِسَائِكُمْ.
অর্থ: তোমাদের কল্যাণার্থে রোজার রাতে স্ত্রীদের সাথে কামের আচরণ হালাল করা হয়েছে。
আরো বলেন-
وَكَيْفَ تَأْخُذُوْنَهُ وَقَدْ أَفْضَى بَعْضُكُمْ إِلَى بَعْضٍ.
অর্থ: তোমরা একে গ্রহণ করবে কীভাবে অথচ তোমরা একে অপরের সাথে মিলিত হয়েছ (সহবাস অথবা নিভৃত স্থানে একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে)
অন্যত্র ইরশাদ করেন-
وَإِنْ طَلَّقْتُمُوْهُنَّ مِنْ قَبْلِ أَنْ تَمَسُّوْهُنَّ.
অর্থ: যদি তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিয়ে দাও。
এ সম্পর্কে আয়াত ও হাদিসের অভাব নেই।
উলামায়ে কেরাম বলেন, সহবাস বা এ জাতীয় অন্যান্য লজ্জাস্কর বিষয়ের ক্ষেত্রে ইঙ্গিতপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করা উচিত, যা দ্বারা বিষয়টা বুঝে আসে। সুতরাং নারী সহবাসকে ইফজা, দুখুল, মুআশারা, বিকা বা এ জাতীয় ইঙ্গিতপূর্ণ শব্দে ব্যক্ত করবে। সরাসরি সহবাসের শব্দ ব্যবহার করতে যাবে না। এমনিভাবে পায়খানা-প্রস্রাবের ক্ষেত্রে প্রয়োজন পূরণে যাচ্ছি, বাথরুমে যাচ্ছি বা এ জাতীয় ইঙ্গিতপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করবে। স্পষ্টাকারে প্রস্রাব- পায়খানার শব্দ বলবে না। এমনিভাবে বিভিন্ন দোষের কথা এমন সুন্দর বাক্যে প্রকাশ করবে, যা দ্বারা উদ্দেশ্য ঠিকই বুঝে আসে।
জ্ঞাতব্য, এ সবই হচ্ছে তখন, যখন স্পষ্টাকারে খারাপ বিষয়টা বলার প্রয়োজন নেই। তবে কাউকে বুঝানো বা শিক্ষা দেয়ার প্রয়োজন হলে এবং সম্বোধিত ব্যক্তি রূপক অর্থকেই মূল মনে করার আশঙ্কা থাকলে বা স্পষ্ট শব্দ বললে উল্টো বুঝার সম্ভাবনা থাকলে স্পষ্ট শব্দেই ব্যক্ত করা যাবে। যাতে প্রকৃত বিষয়টা বুঝানো যায়। বিভিন্ন হাদিসে এসব বিষয় স্পষ্টাকারে বলার ব্যাখ্যা এটাই। কারণ, কেবল আদব রক্ষার তুলনায় শ্রোতাদের মূল বিষয়টা বুঝিয়ে দেয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
(৯৭৮) হজরত ইবনে মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالطَّعَانِ، وَلَا اللَّعَانِ، وَلَا الْفَاحِشِ، وَلَا الْبَذِيءِ.
অর্থ: মুমিন কখনো কটাক্ষকারী ও দোষারোপকারী হতে পারে না। লানতকারী হতে পারে না। অশ্লীল বাক্য ব্যবহারকারী হতে পারে না। বাচাল হতে পারে না। -ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি হাসান。
(৯৭৯) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَا كَانَ الْفُحْشُ فِي شَيْءٍ إِلَّا شَانَهُ، وَمَا كَانَ الْحَيَاءُ فِي شَيْءٍ إِلَّا زَانَهُ.
অর্থ: নির্লজ্জতা ও অশ্লীলতা কোনো জিনিসের কেবল কদর্যতাই বৃদ্ধি করে। আর লজ্জাশীলতা কোনো জিনিসের সৌন্দর্যতাই বৃদ্ধি করে। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান。
মা-বাবা ও সম্মানী লোকদের ধমক দেয়া হারাম
মা-বাবা এবং তাদের মত সম্মানীদেরকে ধমক দেয়া মারাত্মক পর্যায়ের হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَهُمَا فَلَا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا.
অর্থ: আপনার প্রভু নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা তাকে ছাড়া আর কারো উপাসনা করবে না এবং মা-বাবার সাথে সদাচারণ করবে। যদি তোমার জীবদ্দশায় তাদের কোনো একজন বা উভয়জন বৃদ্ধ হয়ে যান, তখন তাদেরকে উফ বলবে না এবং তাদেরকে ধমক দিবে না। তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বল, তাদের জন্য দয়াপরবশ হয়ে বিনয়াবত হবে। (তাদের জন্য দুআ করতে গিয়ে এভাবে) বলবে- হে প্রভু! আপনি তাদের ওপর দয়া করুন যেমনিভাবে তারা বাল্যকালে আমাকে (দয়া করে) লালন-পালন করেছেন。
(৯৮০) হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مِنَ الْكَبَائِرِ شَتْمُ الرَّجُلِ وَالِدَيْهِ. قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ، ، وَهَلْ يَشْتِمُ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ؟ قَالَ : نَعَمْ ، يَسُبُّ أَبَا الرَّجُلِ ، فَيَسُبُّ أَبَاهُ، وَيَسُبُّ أُمَّهُ، فَيَسُبُّ أُمَّهُ.
অর্থ: মা-বাবাকে গালি দেয়া কাবিরা গুনাহ। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! মানুষ কি নিজের মা-বাবাকে গালি দিতে পারে? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, (সেটা এভাবে যে,) কোনো ব্যক্তি কারো বাবাকে গালি দিল, গালি খাওয়া ব্যক্তিও গালিদাতার বাবাকে গালি দিল। এমনিভাবে কেউ আরেকজনের মাকে গালি দিল, গালি খাওয়া ব্যক্তিও তার মাকে গালি দিল。
(৯৮১) হজরত ইবনে উমর রাদি. থেকে বর্ণিত-
كانت تَحْتِي امْرَأَةٌ، وَكُنْتُ أُحِبُّهَا، وَكَانَ عُمَرُ يَكْرَهُهَا، فَقَالَ لِي : طَلِّقْهَا. فَأَبَيْتُ، فَأَتَى عُمَرُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : طَلِّقْهَا.
অর্থ: আমার অধীনে একজন স্ত্রী ছিল, আমি তাকে প্রচণ্ড ভালোবাসতাম। কিন্তু উমর রাদি. একে অপছন্দ করতেন। তিনি আমাকে বললেন, তাকে তালাক দিয়ে দাও, আমি সেটা মানলাম না। তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে গিয়ে নালিশ করলেন। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তাকে তালাক দিয়ে দাও। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান সহিহ。
টিকাঃ
১৩৫৩. সহিহ বুখারি: ৩৬১০, সহিহ মুসলিম: ১০৬৪/১৪৮।
১৩৫৪. সহিহ মুসলিম: ৮৭০।
১৩৫৫. সহিহ মুসলিম: ২১৯৫, সুনানে তিরমিজি: ৩৮৬৩।
১৩৫৬. সহিহ বুখারি: ৬০২, সহিহ মুসলিম: ২০৫৭।
১৩৫৭. সহিহ বুখারি: ৩৭০, সহিহ মুসলিম: ৭৬৬, মু. আহমাদ ৩/৩২৮।
১৩৫৮. সুরা দোহা: ৯-১০।
১৩৫৯. সুরা আনআম: ৫২।
১৩৬০. সুরা হিজর: ৮৮।
১৩৬১. সহিহ মুসলিম: ২৫০৪।
১৩৬২. সহিহ বুখারি: ৬১৭৯-৬১৮০, সহিহ মুসলিম: ২২৫০-২২৫১, সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৭৮, মু. আহমাদ ৬/৬৬, আমাল: ১০৪৯।
১৩৬৩. সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৭৯।
১৩৬৪. সহিহ বুখারি: ৬১৮৩, সহিহ মুসলিম ২২৪৬-২২৪৭, সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৭৪, মু. আহমাদ ২/২৩৯।
১৩৬৫. সহিহ মুসলিম ২২৪৭, সুনানে দারিমি: ২১২০।
১৩৬৬. মাআলিমুস সুনান ৫/২৫৬।
১৩৬৭. সহিহ মুসলিম: ২৬২৩।
১৩৬৮. মাআলিমুস সুনান ৫/২৬০।
১৩৬৯. সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৮৩।
১৩৭০. সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৮০, মু. আহমাদ ৫/৩৮৪।
১৩৭১. মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক ১১/২৭।
১৩৭২. সহিহ বুখারি: ৬১০৪, সহিহ মুসলিম: ৬০।
১৩৭৩. সহিহ বুখারি: ৬০৪৫, সহিহ মুসলিম: ৬১।
১৩৭৪. ইউনুস: ৮৮।
১৩৭৫. বাকারা: ১৯৫।
১৩৭৬. বাকারা: ৩০।
১৩৭৭. সোয়াদ: ২৬।
১৩৭৮. ফাতির: ৩৯।
১৩৭৯. সহিহ বুখারি: ৬২০৬, সহিহ মুসলিম: ২১৪৩।
১৩৮০. সহিহ বুখারি: ৬২০৬।
১৩৮১. সহিহ বুখারি: ৩৬২৯, সুনানে আবু দাউদ: ৪৬৬২, সুনানে নাসাঈ: ২৫১।
১৩৮২. সহিহ বুখারি: ৪১২১, সহিহ মুসলিম: ১৭৬৮।
১৩৮৩. সহিহ মুসলিম: ১৪৯৮।
১৩৮৪. সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৭৭, আদাব: ৭৬০।
১৩৮৫. সহিহ বুখারি: ২৫৫২, সহিহ মুসলিম ২২৪৯, সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৭৫।
১৩৮৬. সহিহ মুসলিম ২২৪৯/১৪।
১৩৮৭. সহিহ বুখারি: ৯১, সহিহ মুসলিম ১৭২২/৫।
১৩৮৮. সহিহ বুখারি: ১৪১২, সহিহ মুসলিম ১৫৭/৬১।
১৩৮৯. সহিহ বুখারি: ৩৫৫৯।
১৩৯০. ইউসুফ: ৪২।
১৩৯১. তাহা: ৯৭।
১৩৯২. হাদিস নম্বর: ৫২০, ৫২২।
১৩৯৩. সহিহ মুসলিম: ২৫৭৫।
১৩৯৪. সুনানে আবু দাউদ: ৫১০১।
১৩৯৫. সহিহ বুখারি: ১২৯৪, সহিহ মুসলিম ১০৩।
১৩৯৬. তাওবা: ১১৭।
১৩৯৭. সহিহ বুখারি: ৪৮, সহিহ মুসলিম: ৬৪।
১৩৯৮. সহিহ মুসলিম: ২৫৮৭, সুনানে আবু দাউদ: ৪৮৯৪, সুনানে তিরমিজি: ১৯৮১
১৩৯৯. হাদিদ: ৪।
১৪০০. সুনানে আবু দাউদ: ৫২২৭।
১৪০১. সহিহ বুখারি: ৬২৯০, সহিহ মুসলিম: ২১৮৪, সুনানে আবু দাউদ: ৪৮৫১, সুনানে তিরমিজি: ২৮২৭।
১৪০২. সহিহ বুখারি: ৬২৮৮, সহিহ মুসলিম: ২১৮৩।
১৪০৩. সুনানে আবু দাউদ: ৪৮৫২।
১৪০৪. সহিহ বুখারি: ৫২৪০, সুনানে আবু দাউদ: ২১৫০, সুনানে তিরমিজি: ২৭৯৩।
১৪০৫. সহিহ বুখারি: ৬৩৩৯, সুনানে তিরমিজি: ৩৪৯২, সুনানে আবু দাউদ: ১৪৮৩, মু. আহমাদ ২/২৪৩, আমাল: ৫৮২, নাসাঈ।
১৪০৬. সহিহ মুসলিম: ২৬৭৯।
১৪০৭. সহিহ বুখারি: ৬৩৩৮, সহিহ মুসলিম: ২৬৭৯, মু. আহমাদ ৩/১০১, আমাল; ৫৮৪, নাসাঈ।
১৪০৮. সহিহ বুখারি: ৬৬৪৬, সহিহ মুসলিম ১৬৪৬, সুনানে তিরমিজি: ১৫৩৪, সুনানে আবু দাউদ: ৩২৪৯, সুনানে নাসাঈ ৭/৪, সুনানে ইবনে মাজাহ: ২০৯৪, মু. আহমাদ ২/১১, সুনানে দারিমি: ২৩৪৬।
১৪০৯. সহিহ ইবনে হিব্বান: ৪৩৫৯।
১৪১০. সুনানে আবু দাউদ: ৩২৫৩, মু. আহমাদ ৫/৩৫২, সহিহ ইবনে হিব্বান: ১৩১৮, মু. হাকেম ৪/২৯৮।
১৪১১. সহিহ মুসলিম: ১৬০৭।
১৪১২. হিলয়াতুল আউলিয়া ২/৩০৯। কুজাহ: শয়তানের নাম, অর্থ: সজ্জিতকরণ। শয়তান মানুষের সামনে পাপকাজকে সজ্জিত করে উপস্থাপন করে। এটি বানোয়াট।
১৪১৩. সহিহ বুখারি: ৬০৬৯, সহিহ মুসলিম: ২৯৯০।
১৪১৪. মায়িদা: ২।
১৪১৫. কাফ: ১৮।
১৪১৬. সুনানে আবু দাউদ: ৫১৭০, সুনানে নাসাঈ: ৯১৭১।
১৪১৭. সুনানে আবু দাউদ: ১৬৭১।
১৪১৮. সুনানে আবু দাউদ: ১৬৭২, সুনানে নাসাঈ ৫/৮২, মু. আহমাদ ২/৬৮, আদাব: ২১৬।
১৪১৯. দেখুন: শরহে সহিহ মুসলিম ১৫/১৮৪।
১৪২০. ইহয়াউ উলুমিদ্দিন ৩/১১৮।
১৪২১. আনকাবুত: ৪৬।
১৪২২. নাহল: ১২৫।
১৪২৩. গাফির: ৪।
১৪২৪. সুনানে তিরমিজি: ১৯৯৪।
১৪২৫. সুনানে বাইহাকি ৬/৮১।
১৪২৬. সুনানে আবু দাউদ: ৫০০৫, সুনানে তিরমিজি: ২৮৫৩।
১৪২৭. সহিহ মুসলিম: ২৬৭০, মু. আহমাদ ১/৩৮৬, সুনানে আবু দাউদ: ৪৬০৮।
১৪২৮. সুনানে তিরমিজি: ২০১৯।
১৪২৯. সহিহ বুখারি: ৫৪৭, সহিহ মুসলিম ৬৪৭, সুনানে আবু দাউদ: ৩৯৮, সুনানে তিরমিজি: ২৬৮, মুসনাদে আহমাদ ৪/২৪০।
১৪৩০. সহিহ বুখারি: ১১৬, সহিহ মুসলিম: ২৫৩৭, সুনানে আবু দাউদ: ৪৩৪৮, সুনানে তিরমিজি: ২2৫২, মুসনাদে আহমাদ ২/৮৮।
১৪৩১. সহিহ বুখারি: ৫৬৭, সহিহ মুসলিম: ৬৪১।
১৪৩২. সহিহ বুখারি: ৬০০।
১৪৩৩. সহিহ বুখারি: ১১৭।
১৪৩৪. প্রথম হাদিস: সহিহ বুখারি: ১১৭, মুসলিম ৭৬৩। দ্বিতীয় হাদিস: সহিহ বুখারি: ৬০২, সহিহ মুসলিম: ২০৫৭।
১৪৩৫. সহিহ বুখারি: ৫৬৩।
১৪৩৬. সহিহ বুখারি: ৬৫৩, সহিহ মুসলিম: ৪৩৭।
১৪৩৭. সহিহ মুসলিম: ৪৪৪, সুনানে আবু দাউদ: ৪১৭৫, সুনানে নাসাঈ ৮/১৫৪।
১৪৩৮. সুনানে আবু দাউদ: ৪৮৬৮, সুনানে তিরমিজি: ১৯৬০, মু. আহমাদ ৩/৩২৪।
১৪৩৯. সুনানে তিরমিজি: ২৩১৭, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৯৭২।
১৪৪০. সুনানে আবু দাউদ: ২১৪৭, সুনানে নাসাঈ: ৯১২৩, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৯৮৬, মুসনাদে আহমাদ ১/২০।
১৪৪১. মুসনাদে আবু ইয়ালা: ৪৭৬০।
১৪৪২. সহিহ বুখারি: ৩২১৩, সহিহ মুসলিম: ২৪৮৬।
১৪৪৩. সহিহ বুখারি: ৬১৪৫, সুনানে আবু দাউদ: ৫০১০।
১৪৪৪. সহিহ বুখারি: ৬১৫৫, সহিহ মুসলিম: ২২৫৭।
১৪৪৫. বাকারা: ১৮৭।
১৪৪৬. নিসা: ২১।
১৪৪৭. বাকারা: ২৩৭। আয়াতগুলোর তরজমা অধমের অনূদিত তাফসিরে হেদায়াতুল কুরআন থেকে নেওয়া।- অনুবাদক
১৪৪৮. সুনানে তিরমিজি: ১৯৭৭।
১৪৪৯. সুনানে তিরমিজি: ১৯৭৫, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪১৮৫, মুসনাদে আহমাদ ৩/১৬৫, ইবনে হিব্বান: ১৯১৫।
১৪৫০. ইসরা: ২৩-২৪।
১৪৫১. সহিহ বুখারি: ৫৯৭৩, সহিহ মুসলিম: ৯০, সুনানে তিরমিজি: ১৯০৩, সুনানে আবু দাউদ: ৪১৫১, মু. আহমাদ ২/১৬৪।
১৪৫২. সুনানে আবু দাউদ: ৫১৩৮, সুনানে তিরমিজি: ১১৮৯।
📄 মিথ্যার নিষিদ্ধতা ও যেক্ষেত্রে বৈধ
মিথ্যার নিষিদ্ধতা ও মিথ্যার ধরন
সামগ্রিকভাবে মিথ্যা হারাম হওয়ার ওপর কুরআন-হাদিসে একাধিক দলিল বিদ্যমান। এটা সবচেয়ে নিকৃষ্ট গুনাহ ও সর্বাধিক খারাপ দোষ। কুরআন-সুন্নাহর দলিলের সাথে সাথে মিথ্যা হারাম হওয়ার ওপর উম্মতের ইজমাও সংঘটিত হয়েছে। সেগুলো আলাদা আলাদা বয়ান করার জরুরত নেই। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হল, হারামের হুকুম থেকে যে মিথ্যাকে বাদ দেয়া হয়েছে সেটা বর্ণনা করা এবং এর সূক্ষ্ম বিষয়গুলো সম্পর্কে অবিহিত করা। মিথ্যার প্রতি ঘৃণার জন্য সর্বসম্মতিক্রমে সহিহ এই হাদিসটাই যথেষ্ট:
(৯৮২) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلَاثُ : إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ، وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ.
অর্থ: মুনাফিকের আলামত তিনটি: এক. কথা বললে মিথ্যা বলে। দুই. ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে। তিন. তার কাছে আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে。
(৯৮৩) হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
أَرْبَعُ مَنْ كُنَّ فِيْهِ كَانَ مُنَافِقًا خَالِصًا، وَمَنْ كَانَتْ فِيْهِ خَصْلَةٌ مِنْهُنَّ كَانَتْ فِيْهِ خَصْلَةٌ مِنَ النِّفَاقِ حَتَّى يَدَعَهَا : إِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ، وَإِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا عَاهَدَ غَدَرَ، وَإِذَا خَاصَمَ فَجَرَ.
অর্থ: চারটি অভ্যাস যার মধ্যে থাকবে সে খাঁটি মুনাফিক। আর যার মাঝে চারটির যে কোনো একটি অভ্যাস থাকবে, তার মাঝে নিফাকের একটি অভ্যাস থাকবে যতক্ষণ না সে তা পরিত্যাগ করবে: এক. যখন তার কাছে আমানত রাখা হয়, সে খেয়ানত করে। দুই. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে। তিন. ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে। চার, ঝগড়ার সময় গালিগালাজ করে。
যেসব মিথ্যা হারাম নয়
(৯৮৪) হজরত উম্মে কুলসুম রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন-
لَيْسَ الْكَذَّابُ الَّذِي يُصْلِحُ بَيْنَ النَّاسِ، فَيَنْمِي خَيْرًا أَوْ يَقُوْلُ خَيْرًا. زَادَ مُسْلِمٌ: قَالَتْ أَمْ كُلْثُومٍ: وَلَمْ أَسْمَعْ يُرَخَّصُ فِي شَيْءٍ مِمَّا يَقُوْلُ النَّاسُ كَذِبُ إِلَّا فِي ثَلَاثٍ : الْحَرْبُ، وَالْإِصْلَاحُ بَيْنَ النَّاسِ، وَحَدِيثُ الرَّجُلِ امْرَأَتَهُ وَحَدِيْثُ الْمَرْأَةِ زَوْجَهَا.
অর্থ: মানুষের ঝগড়া মিটমাট করতে গিয়ে ভালো কথা পৌঁছানো ব্যক্তি মিথ্যাবাদী নয়। সহিহ মুসলিমে অতিরিক্ত আছে- উম্মে কুলসুম বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনটি স্থান ছাড়া আর কোথাও মিথ্যা বলার অনুমতি দিয়েছেন বলে আমি শুনিনি:
এক. যুদ্ধ কৌশলের ক্ষেত্রে।
দুই. মানুষের মাঝে মীমাংসা করার জন্য।
তিন. স্ত্রীর সাথে স্বামীর এবং স্বামীর সাথে স্ত্রীর কথা বলার ক্ষেত্রে。
এই হাদিসে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে, কিছু জায়গায় কোনো কল্যাণে মিথ্যা বলা জায়েজ আছে। কোন কোন জায়গায় মিথ্যা বলা বৈধ উলামায়ে কেরাম সেটার একটা মূলনীতি বর্ণনা করেছেন। আমার দেখা সবচেয়ে উত্তম নীতি হল, গাজালি রহ. যা বর্ণনা করেছেন। আর তা হল- কথা মূলত বলা হয় উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। প্রত্যেক এমন প্রশংসনীয় উদ্দেশ্য যা সত্য ও মিথ্যা উভয় ধরনের কথা বলেই হাসিল করা যায়, সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন না থাকার কারণে মিথ্যা বলা হারাম। যদি কেবল মিথ্যা বলেই উদ্দেশ্য হাসিল করা যায়, সত্য বলে সম্ভব না হয়, তাহলে বৈধ উদ্দেশ্যর জন্য মিথ্যা বলা বৈধ। যদি উদ্দেশ্য হাসিল করা ওয়াজিব হয়, তাহলে সেখানে মিথ্যা বলাও ওয়াজিব। কোনো মুসলিম কোনো অত্যাচারীর ভয়ে আত্মগোপনে থাকলে এবং তার ব্যাপারে কাউকে জিজ্ঞাসা করা হলে তার জন্য মিথ্যা বলা ওয়াজিব।
এ ধরনের আরো বিভিন্ন উদাহরণ কিতাবে আছে। তবে এসব ক্ষেত্রে তাওরিয়া অবলম্বন করাই সর্তকতা। তাওরিয়া বলা হয়- সঠিক কোনো উদ্দেশ্যে এমনভাবে কথা বলা যে, এটার দিকে সম্বন্ধ করাতে সে মিথ্যাবাদী নয়; যদিও বাহ্যিকভাবে মিথ্যাবাদী মনে হয়। তবে এসব জায়গায় তাওরিয়া অবলম্বন না করে সরাসরি মিথ্যা বলাও হারাম নয়। ইমাম গাজালি রহ. বলেন, নিজের বা অন্যের স্বার্থ জড়িত এমন বিষয়ে পূর্ববর্তী হুকুমই হবে।
নিজের স্বার্থ জড়িত থাকার উদাহরণ হল, কোনো জালিম কাউকে গ্রেফতার করতঃ দখলের উদ্দেশ্যে তার সম্পদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করল। এমতাবস্থায় তার জন্য অস্বীকার করা জায়েজ আছে। অথবা বাদশাহ কাউকে তার এমন কোনো মন্দকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল, যার হিসাব তার ও আল্লাহর মাঝেই হবে। এমতাবস্থায় তার জন্য সেটা অস্বীকার করা বৈধ আছে। যেমন বলল- আমি ব্যভিচার করিনি, আমি মদপান করিনি।
অন্যের স্বার্থ জড়িত এমন বিষয়ের উদাহরণ হচ্ছে, কাউকে তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হল। সে তা বলতে অস্বীকার করল। তাকে সত্য-মিথ্যা দুটোর অকল্যাণ নিয়ে ভাবা উচিত। যদি সত্যে বেশি অকল্যাণ হয় তাহলে মিথ্যা বলবে। যদি মিথ্যাতেই বেশি ক্ষতি হয় বা সন্দেহ হয় তাহলে মিথ্যা বলা হারাম। নিজের স্বার্থের কারণে মিথ্যা বৈধ হয়ে থাকলে মিথ্যা না বলা মুস্তাহাব। অন্যের স্বার্থে বৈধ হয়ে থাকলে, অন্যের স্বার্থের ব্যাপারে ছাড় দেয়া বৈধ নয়। ওয়াজিব ছাড়া সাধারণ বৈধতার সব জায়গায়ই মিথ্যা বর্জন করাই বাঞ্ছনীয়।
জ্ঞাতব্য, আহলে সুন্নাতের মত অনুযায়ী মিথ্যা বলা হয়- বাস্তবতার বিপরীত কোনো বিষয়ে সংবাদ দেয়া; হোক তা জেনে-শুনে ইচ্ছা করে অথবা না জেনে অনিচ্ছায়। তবে না জেনে অনিচ্ছায় হলে গুনাহ হবে না। গুনাহ হবে কেবল ইচ্ছা করে বললে। আমাদের দলিল হচ্ছে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে মিথ্যাকে ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত করে বলেছেন-
مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ.
অর্থ: যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে আমার নামে কোনো মিথ্যা হাদিস বলবে, সে যেন জাহান্নাম তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়。
কিছু বর্ণনার ক্ষেত্রে নিশ্চিত হওয়া আবশ্যক; নিশ্চিত না হয়ে বর্ণনা করা নিষেধ
আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ * إِنَّ السَّمْعَ وَ الْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا.
অর্থ: যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তার পিছনে তুমি পড় না। নিশ্চয় কান, চোখ এবং অন্তর সবগুলো (নিজ কৃতকর্ম সম্পর্কে) জিজ্ঞাসিত হবে。
আরো বলেন-
مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ.
অর্থ: মানুষ যাই বলে তা সংরক্ষণের জন্য একজন সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছেন。
অন্যত্র বলেন-
إِنَّ رَبَّكَ لَبِالْمِرْصَادِ.
অর্থ: নিশ্চয় আপনার পালকর্তা প্রতীক্ষমান。
(৯৮৫) আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
كَفَى بِالْمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ.
অর্থ: প্রত্যেক শুনা কথা (যাচাই ছাড়া) বর্ণনা করে দেয়া মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট。
(৯৮৬) হজরত উমর রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
بِحَسْبِ الْمَرْءِ مِنَ الْكَذِبِ أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ.
অর্থ: মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য প্রত্যেক শুনা কথা বর্ণনা করে দেয়াই যথেষ্ট।
এ অধ্যায়ে সাহাবায়ে কেরামের অনেক বক্তব্য রয়েছে।
(৯৮৭) হজরত ইবনে মাসউদ রাদি. অথবা হজরত হুজায়ফা বিন ইয়ামান রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-
بِئْسَ مَطِيَّةُ الرَّجُلِ : زَعَمُوا.
অর্থ: ব্যক্তির "তারা ধারণা করে" নামক বাহনটি কতইনা নিকৃষ্ট。
ইমাম খাত্তাবি রহ. "মাআলিমুস সুনান” কিতাবে বলেন- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষ কথার শুরুতে যে "তারা মনে করে” বা এ জাতীয় কিছু বলে এবং তা দ্বারা উদ্দেশ্য বুঝাতে চায়, সেটাকে বাহনের সাথে তুলনা করেছেন। “তারা মনে করে” বা এ জাতীয় কথা তো কেবল সূত্রবিহীন ও ভিত্তিহীন কথার ক্ষেত্রেই বলা হয়। সেটা আরেকজনকে শুনানোর জন্যই বর্ণনা করা হয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ধরনের কথা বর্ণনার নিন্দা করেছেন। বর্ণনাকৃত বিষয়টি আগেই যাচাই করে নিশ্চিত হতে আদেশ দিয়েছেন। যতক্ষণ কোনো প্রমাণ না পাওয়া যাবে, ততক্ষণ বর্ণনা করবে না।
ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলা ও তাওরিয়ার পথ অবলম্বন করা
জ্ঞাতব্য, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কারণ, এটি প্রচুর পরিমাণ ব্যবহার হয়। বিষয়টি ব্যাপক আকারও ধারণ করেছে। সুতরাং এর পর্যালোচনায় গুরুত্ব দেয়া উচিত। যে সেটা জানে তাকে সে ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা উচিত। মিথ্যার অধ্যায়ে আমরা সেটা মারাত্মক হারাম হওয়ার কথা বলেছি। যবান অনিয়ন্ত্রণের ভয়াবহতার ব্যাপারে বলেছি। এ অধ্যায় হচ্ছে, তা থেকে নিরাপদ থাকার একটা পদ্ধতি।
জ্ঞাতব্য, তারিজ ও তাওরিয়ার ব্যাখ্যা হল, কোনো শব্দ বাহ্যিকভাবে এক অর্থে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু আপনি অন্য অর্থ উদ্দেশ্য নিলেন যা ঐ শব্দের মধ্যে আছে। কিন্তু সেটা বাহ্যিক অর্থের বিপরীতে। এটা এক ধরনের ধোঁকা ও প্রতারণা।
উলামায়ে কেরাম বলেন- শ্রোতাকে ধোঁকা দেয়ার তুলানায় অগ্রগণ্য শরয়ি কোনো কল্যাণ অথবা মিথ্যা ছাড়া পূরণ হয় না এমন কোনো প্রয়োজনের জন্য হলে সমস্যা নেই। এমন কোনো কারণ না থাকলে সেটা মাকরুহ হবে; হারাম নয়। তবে যদি এর মাধ্যমে কোনো অন্যায় পথ গ্রহণ করতে চায় বা কোনো সত্য প্রতিহত করতে চায়, তাহলে সেট হারাম হয়ে যাবে। এটাই হচ্ছে, অধ্যায়ের মূলনীতি।
পক্ষ-বিপক্ষের দলিলগুলো উপরিউক্ত মূলনীতি অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে।
নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে এসেছে:
(৯৮৮) সুফিয়ান বিন আসিদ রাদি. থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-
كَبُرَتْ خِيَانَةً أَنْ تُحَدِّثَ أَخَاكَ حَدِيثًا هُوَ لَكَ بِهِ مُصَدِّقُ وَأَنْتَ لَهُ بِهِ كَاذِبٌ.
অর্থ: কতইনা বড় খেয়ানত যে, আপন মুসলিম ভাইয়ের কাছে কোনো কথা এমনভাবে উপস্থাপন করলেন। যাতে সে তোমাকে সত্যবাদী মনে করছে, কিন্তু বাস্তবে তুমি মিথ্যাবাদী。
হজরত ইবনে সীরিন রহ. থেকে বর্ণিত আছে- কথার ময়দান অনেক প্রশস্ত। চালাক ব্যক্তির জন্য মিথ্যা কথা বলার প্রয়োজনই পড়ে না।
বৈধ তারিজের একটা উদাহরণ যা ইবরাহিম নাখায়ি বলেছেন- যখন কারো কাছে তোমার ব্যাপারে সংবাদ যাবে যে, তুমি তাকে নিয়ে কিছু বলেছ, তখন বলবে-
اللهُ يَعْلَمُ مَا قُلْتُ مِنْ ذَلِكَ مِنْ شَيْءٍ.
অর্থ: আমি এ বিষয়ে কিছু বলে থাকলে আল্লাহ পাক অবগত আছেন। এতে শ্রোতা মনে করবে, তুমি তাকে কিছু বলনি। অথচ তুমি এ কথা বলে উদ্দেশ্য নিয়েছ যে, আমি যা বলেছি সেটা আল্লাহ জানেন। (অর্থাৎ শব্দটি আরবিতে “না” বুঝানোর জন্য আসে, আবার অনির্দিষ্টভাবে ব্যাপকতাও বুঝে আসে। তো শ্রোতা নেতিবাচক অর্থ নিবে, আর তুমি অনির্দিষ্ট ব্যাপকতা বুঝাবে)
ইমাম নাখায়ি রহ. আরো বলেন- তুমি নিজ ছেলেকে এভাবে বলবে না যে, আমি তোমার জন্য মিষ্টি ক্রয় করব; বরং বলবে, দেখ! আমি যদি তোমার জন্য মিষ্টি খরিদ করি? ইমাম নাখায়িকে জনৈক ব্যক্তি তলব করলে তিনি দাসীকে বললেন, তুমি তাকে বলে দাও- তাকে মসজিদে গিয়ে তালাশ করুন। আরেকজন বলেন, আমার পিতা একটু আগে বেরিয়ে গেছেন।
ইমাম শাবি রহ. রেখা টেনে দাসীকে বলতেন, তুমি এখানে আঙ্গুল রেখে বলবে, তিনি এখানে নয়। কিছু বুজুর্গ এমন ছিলেন, কেউ তাদেরকে খানার আমন্ত্রণ জানালে বলতেন, আমি এক নিয়তে আছি। নিজে রোজাদার তাকে এ কথা বুঝাতেন, কিন্তু নিয়ত থাকত দাওয়াত ত্যাগের। এমনিভাবে তুমি কি তাকে দেখেছ? এর জবাবে বলবে, আমি তাকে দেখিনি, অর্থাৎ আমি তার শ্বাসযন্ত্র দেখিনি। এছাড়াও অগণিত দৃষ্টান্ত বিদ্যমান।
যদি উপরিউক্ত পন্থায় শপথ করে এবং শপথে তাওরিয়া করে, তাহলে শপথ ভঙ্গকারী হবে না। চাই আল্লাহর নামে শপথ করুক অথবা তালাক ইত্যাদির শপথ করুক। এ ক্ষেত্রে তালাক ইত্যাদি সংঘটিত হবে না। এ হল যদি বিচারক মকদ্দমায় শপথ না করায়। বস্তুতঃ বিচারক আল্লাহর নামে শপথ করালে বিচারকের নিয়ত বিবেচ্য। যদি তালাকের ব্যাপারে শপথ করায় তাহলে শপথকারীর নিয়ত বিবেচ্য। কেননা, বিচারকের জন্য তাকে তালাকের শপথ করানো বৈধ নয়। এ ক্ষেত্রে সে অন্যান্য মানুষের ন্যায়। আল্লাহ তাআলাই সর্বজ্ঞ।
ইমাম গাজালি রহ. বলেন, মানুষ সাধারণত আধিক্য বুঝানোর জন্য বলে থাকে:- তোমাকে ১০০ বার বলেছি, তোমাকে ১০০ বার ডেকেছি। এটাও হারাম মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত। এখানে মূলত সংখ্যা উদ্দেশ্য থাকে না, আধিক্য উদ্দেশ্য থাকে। যদি কেবল একবারই ডেকে থাকে তাহলে এভাবে বলাটা মিথ্যে হবে। যদি এত বেশি ডাকে যে, সাধারণত মানুষ এতবার ডাকে না, তাহলে সে গুনাহগার হবে না। যদিও ১০০ বার পর্যন্ত না পৌঁছায়। এ দুটোর মাঝে অনেক ধাপ রয়েছে, যা অতিক্রমকারী অতিক্রম করে থাকে।
ইমাম নববি রহ. বলেন, আধিক্য বুঝানোর জন্য এরকম বলার বৈধতা ও সেটা মিথ্যা পরিগণিত না হওয়ার দলিল হল-
(৯৮৯) নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
أَمَّا أَبُو جَهْمٍ، فَلَا يَضَعُ عَصَاهُ عَنْ عَاتِقِهِ، وَأَمَّا مُعَاوِيَةُ، فَصُعْلُوكُ، لَا مَالَ لَهُ.
অর্থ: আবু জাহম তো ঘাড় থেকে লাঠি নামান না। আর মুআবিয়ার তো কোনো সম্পদ নেই।
অথচ সর্বজনবিদিত যে, মুআবিয়ার পরার মত কাপড় ছিল এবং আবু জাহম ঘুম ও অন্যান্য সময় লাঠি নামিয়ে রাখতেন।
টিকাঃ
১৪৫৩. সহিহ বুখারি: ৩৩, সহিহ মুসলিম: ৫৯।
১৪৫৪. সহিহ বুখারি: ৩৪, সহিহ মুসলিম ৫৮, সুনানে আবু দাউদ: ৪৬৮৮, সুনানে তিরমিজি: ২৬৩৪, সুনানে নাসাঈ ৮/১১৬, মু. আহমাদ ২/১৮৯।
১৪৫৫. সহিহ বুখারি: ২৬৯২, সহিহ মুসলিম: ২৬০৫, সুনানে আবু দাউদ: ৪১২১, সুনানে তিরমিজি: ১৯৩৯, মু. আহমাদ ৬/৪০৩।
১৪৫৬. সহিহ বুখারি: ১২৯১, সহিহ মুসলিম: ৪।
১৪৫৭. ইসরা: ৩৬
১৪৫৮. কাফ: ১৮।
১৪৫৯. সুরা গাশিয়া: ১৪।
১৪৬০. সহিহ মুসলিম ১/১০, সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৯২।
১৪৬১. সহিহ মুসলিম ১/১১।
১৪৬২. সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৭২।
১৪৬৩. সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৭১।
১৪৬৪. সহিহ মুসলিম: ১৪৮০।