📘 আল আযকার > 📄 উপনামে ডাকা ও তার বিধান

📄 উপনামে ডাকা ও তার বিধান


নামের সংক্ষেপণ জায়েজ, যদি ব্যক্তি কষ্টবোধ না করে
(৭৪৫) সহিহ হাদিসে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল সাহাবায়ে কেরামের নাম সংক্ষিপ্ত করেছেন। তন্মধ্যে: হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে উদ্দেশ্য করে নবিজির বাণী: হে আবু হির। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে উদ্দেশ্য করে নবিজির বাণী: হে আয়েশ। হজরত আনজাশা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে উদ্দেশ্য করে: হে আনজাশ। হজরত উসামাকে বলেছিলেন: হে উসাইম। হজরত মিকদামকে বলেছিলেন: হে কুদাইম。
কারো অপছন্দনীয় ডাকনামে ডাকা নিষেধ
আল্লাহ পাক বলেন-
وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ.
অর্থ: তোমরা একে অপরকে খারাপ উপাধিতে ডাক না。
মানুষকে তার অপছন্দনীয় ডাকনামে ডাকা হারাম হওয়ার ব্যাপারে উলামায়ে কেরাম সহমত পোষণ করেছেন। এই ডাকনাম তার বৈশিষ্ট্য হোক অথবা পিতা-মাতার। যেমন- আমাশ (দুর্বল দৃষ্টিসম্পন্ন), আজলাহ (টেকো), আমা (অন্ধ), আরাজ (লেংড়া), আহওয়াল (টেরা), আবরাস (কুটে), আসবাজ (মাথা ফাটা), আসফার (হলদে), আহদাব (কুঁজো), আসাম্ম (বধির), আজরাক (নীল), আফতাস (চেপটা নাকবিশিষ্ট), আশতার (ঠোঁট বিদীর্ণ), আসরাম (ফোকলা), আকতা (হাত কাটা), জামিন (পক্ষাঘাতগ্রস্ত), মুকআদ (বিকলাঙ্গ), আশাল্ল (অবশ) অথবা তার অপছন্দনীয় কোনো উপাধি। তারা এ বিষয়েও একমত হয়েছেন যে, পরিচয়দানের লক্ষ্যে এ ধরনের উপাধিও উল্লেখ করা বৈধ আছে, যা ছাড়া ঐ ব্যক্তি পরিচিত না। উল্লিখিত আলোচনার দলিলাদি অনেক, যা প্রসিদ্ধ। সংক্ষিপ্তকরণের লক্ষ্যে এবং প্রসিদ্ধ হওয়ার কারণে আমি এগুলো বিলুপ্ত করে দিয়েছি।
ব্যক্তির পছন্দনীয় ডাকনামে ডাকা বৈধ, বরং মুস্তাহাব
তন্মধ্যে থেকে হজরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু: তার নাম, আবদুল্লাহ বিন উসমান। উপাধি, আতিক। এটাই বিশুদ্ধ, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুহাদ্দিসিন, সিরাতবিদ ও ইতিহাসবিদগণ এটাই বলেছেন। কেউ বলেন, তার নাম আতিক। এ কথা হাফেজ আবুল কাসেম বিন আসাকির তার কিতাব 'আতরাফে' নকল করেছেন। তবে প্রথম মতই বিশুদ্ধ। এটা ভালো উপাধি হওয়ার বিষয়ে উলামায়ে কেরাম একমত, তবে আতিক নামকরণের ব্যাপারে মতানৈক্য করেছেন।
হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
أَبُوْبَكْرٍ عَتِيْقُ اللَّهِ، مِنِ النَّارِ.
অর্থ: আবু বকর জাহান্নাম থেকে আল্লাহর মুক্তকৃত। সেদিন থেকে তার নাম হয়ে যায় আতিক。
হজরত মুসআব বিন যুবায়ের প্রমুখ নসববিদগণ বলেন, আতিক নামকরণ এজন্য যে, তার বংশে এমন কোনো বস্তু ছিল না, যা দ্বারা তাকে ত্রুটিযুক্ত করা যায়। কেউ কেউ অন্য কিছু বলেছেন। আল্লাহ তাআলাই সর্বজ্ঞ।
(৭৪৬) তন্মধ্য থেকে আবু তুরাব: হজরত আলি রাদি. এর উপাধি। তার উপনাম, আবুল হাসান। সহিহ হাদিসে আছে-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَدَهُ نَائِماً فِي الْمَسْجِدِ وَعَلَيْهِ التُّرَابُ، فَقَالَ: قُمْ أَبَا التُّرَابِ، قُمْ أَبَا التُّرَابِ. فَلَزِمَهُ هَذَا اللَّقَبَ الْحَسَنَ الْجَمِيلَ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মসজিদে ধুলোময় হালতে ঘুমাতে দেখে বললেন, দাঁড়াও হে আবু তুরাব, দাঁড়াও হে আবু তুরাব। অতঃপর তিনি এই সুন্দর ও উৎকৃষ্ট ডাকনাম আপন করে নেন。
(৭৪৭) হজরত সাহল বিন সাদ রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
وَكَانَتْ أَحَبُّ أَسْمَاءِ عَلِيَّ إِلَيْهِ، وَإِنْ كَانَ لَيَفْرَحُ أَنْ يُدْعَى بِهَا.
অর্থ: হজরত আলি রাদি. এর কাছে সবচেয়ে প্রিয় ছিল আবু তুরাব ডাকনাম। এ নামেই ডাকলে তিনি খুশি হতেন。
(৭৪৮) তন্মধ্য থেকে জুল ইয়াদাঈন: নাম ছিল খিরবাক। তার হাত তুলনামূলক লম্বা ছিল। সহিহ হাদিসে রয়েছে-
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَدْعُوهُ ذَا الْيَدَيْنِ، وَاسْمُهُ الْخِرْبَاقُ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জুল ইয়াদাঈন নামে ডাকতেন। নাম ছিল খিরবাক。
উপনামে ডাকা বৈধ; বড়দেরকে উপনামে ডাকা মুস্তাহাব
এ অধ্যায়ে কোনো কিছু নকল করার প্রয়োজনবোধ করি না, কেননা এর দলিলাদি বিশিষ্ট ও সর্বসাধারণের জন্য প্রযোজ্য। মর্যাদাবান ব্যক্তিত্ব ও তাদের সমতুল্যদেরকে উপনামে ডাকাই আদাব। তাদের প্রতি চিঠি লিখলে কিংবা তাদের থেকে হাদিস বর্ণনা করতে বলবে, শায়খ হাদিস বর্ণনা করেছেন অথবা ইমাম, অমুকের পিতা অথবা অমুক বিন অমুক। অথবা এরকম কিছু। আদব হল, কিতাব বা অন্য কোথাও তার কুনিয়াত উল্লেখ করবে না। তবে যদি কুনিয়াত ছাড়া পরিচয় করা না যায় অথবা নামের চেয়ে কুনিয়াত প্রসিদ্ধ হয়। ইমাম নাহহাস বলেন, কুনিয়াত অধিক প্রসিদ্ধ হলে সমার্থক শব্দে কুনিয়াত ধারণ করবে এবং তার উপরের নাম নিবে, পরে যুক্ত করবে যে, অমুকের পিতা নামে খ্যাত।
বড় ছেলের নামে উপনাম
এ অধ্যায় এতটা প্রশস্ত যে, এভাবে বিশেষিত হওয়াদের সংখ্যা অগণিত। এতে কোনো অসুবিধাও নাই।
সন্তানহীন ব্যক্তি ও শিশুর উপনাম
(৭৪৯) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحْسَنَ النَّاسِ خُلُقًا، وَكَانَ لِي أَخُ، يُقَالُ لَهُ: أَبُوْ عُمَيْرٍ - قَالَ الرَّاوِي : أَحْسِبُهُ فَطِيمًا - وَكَانَ إِذَا جَاءَ قَالَ: يَا أَبَا عُمَيْرٍ، مَا فَعَلَ التَّغَيْرُ؟ نُغَرُ كَانَ يَلْعَبُ بِهِ.
অর্থ: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবচেয়ে উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। আমার এক ছোট ভাই ছিল, যাকে আবু উমায়ের বলা হত। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয় তিনি বলেছেন, মায়ের দুধ ছাড়ানো হয়েছে এমন শিশু। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ঘরে তাশরিফ আনলে বলতেন- )يَا أَبَا عُمَيْرٍ مَا فَعَلَ النُّغَيْرُ( : )হে আবু উমায়ের, নুগাইরের কী অবস্থা? তার একটা বুলবুল পখির বাচ্চা ছিল, যা দিয়ে সে খেলাধোলা করত।
(৭৫০) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত, তিনি বলেছিলেন-
يَا رَسُولَ اللهِ ، كُلُّ صَوَاحِي لَهُنَّ كُنّى. قَالَ: فَاكْتَنِي بِابْنِكِ عَبْدَ اللَّهِ . يَعْنِي ابْنَ أُخْتِهَا. وَكَانَتْ تُكَنَّى بِأُمَّ عَبْدِ اللهِ .
অর্থ: হে আল্লাহর রাসুল! আমার সকল সতীনদের কোনো-না কোনো উপনাম আছে (অথচ আমার নেই?) নবিজি বললেন, তুমি তোমার ভাগিনা আবদুল্লাহর নামে উপনাম ধারণ কর। বর্ণনাকারী বলেন, অর্থাৎ আবদুল্লাহ বিন যুবায়ের। তিনি ছিলেন হজরত আয়েশার বোন হজরত আসমা বিনতে আবু বকর রাদি. এর ছেলে। এরপর থেকে হজরত আয়েশার উপনাম ছিল উম্মে আবদুল্লাহ। -ইমাম নববি বলেন, এটাই বিশুদ্ধ ও প্রসিদ্ধ।
(৭৫১) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَسْقَطْتُ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَقْطاً فَسَمَّاهُ عَبْدَ اللَّهِ، وَكَنَّانِي بِأُمَّ عَبْدِ اللهِ.
অর্থ: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমার একটি ভ্রূণ অকালপ্রসূত হয়, নবিজি এর নাম রাখেন আবদুল্লাহ এবং আমার উপনাম রাখেন উম্মে আবদুল্লাহ। -এই হাদিস নিতান্ত দুর্বল。
সাহাবায়ে কেরামের একদল ছিলেন, সন্তানাদি জন্মের আগ থেকেই যাদের উপনাম ছিল। যেমন- আবু হুরায়রা, আবু আনাস, আবু হামজা। এছাড়াও সাহাবা, তাবেয়িন ও পরবর্তীদের মধ্য থেকে অগণিত ব্যক্তির এমন উপনাম ছিল। এতে অপছন্দনীয়তার কিছু নেই, বরং এটা পূর্বোল্লিখিত শর্তসাপেক্ষ পছন্দনীয় জিনিস।
আবুল কাসেম উপনাম রাখা নিষিদ্ধ
(৭৫২) হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুসহ এক জামাত সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
سَمُوْا بِاسْمِي وَلَا تَكْتَنُوْا بِكُنْيَتِي.
অর্থ: তোমরা আমার নামে নাম রেখ, তবে আমার উপনামে অভিহিত হয়ো না。
ইমাম নববি রহ. বলেন, আবুল কাসেম উপনামে অভিহিত হওয়ার ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের তিনটি মতামত রয়েছে, যথা-
প্রথম মাজহাব: ইমাম শাফেয়ি রহ. এবং তার সমমনাদের মতে আবুল কাসেম উপনামে অভিহিত হওয়া বৈধ নয়। চাই তার মূল নাম মুহাম্মাদ হোক অথবা না হোক। ইমাম, হাফেজ, ফকিহ, মুহাদ্দিস ব্যক্তিবর্গ এই বিষয়টি ইমাম শাফেয়ি রহ. থেকে নকল করেছেন। যেমন, আবু বকর বাইহাকি তার কিতাবে (সুনানে কুবরা ৯/৩১০), আবু মুহাম্মাদ বাগাবি তাহজিব কিতাবের বিবাহ অধ্যায়ের শুরুতে এবং আবুল কাসেম বিন আসাকির তার তারিখে দিমাশকে (৩/৪৩)।
দ্বিতীয় মাজহাব: ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহুর মতে আবুল কাসেম নামে উপনামে অভিহিত হওয়া বৈধ, মূল নাম মুহাম্মাদ হোক বা না হোক। আর নিষেধাজ্ঞা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশার সাথে নির্দিষ্ট ছিল।
তৃতীয় মাজহাব: যে ব্যক্তির নাম মুহাম্মাদ হবে তার জন্য আবুল কাসেম উপনামে অভিহিত হওয়া বৈধ নয়, অন্যদের জন্য বৈধ। -আমাদের মাজহাবের ইমাম আবুল কাসেম রাফেয়ি বলেন, সম্ভবত এই তৃতীয় মতটি অধিকতর বিশুদ্ধ। কেননা সর্বযুগেই মানুষ আবুল কাসেম উপনামে অভিহিত হয়ে আসছে, অথচ কেউ এ ব্যাপারে কোনো আপত্তি করেনি। কিন্তু এই মাজহাবের প্রবক্তা যা বলেছেন তা স্পষ্টত হাদিসবিরোধী। মানুষকর্তৃক এই মাজহাব ভাঁজকরণে ইমাম মালেকের মাজহাবে বৈধতার দৃঢ়ীকরণ রয়েছে। কেননা, এই উপনামে অভিহিত হওয়া/অভিহিত কারীদের মধ্যে রয়েছেন বড় বড় ইমাম, সমাজের জ্ঞানীগুণী ব্যক্তি ও ধর্মীয় বিষয়ে অনুসরণীয় ব্যক্তিবর্গ। তারা এ কথা অনুধাবন করেছিলেন যে, এই নিষেধাজ্ঞা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশার সাথে নির্দিষ্ট ছিল। কেননা, নিষিদ্ধের কারণ তো প্রসিদ্ধ যে, ইহুদিরা তাকে কষ্টপ্রদানের উদ্দেশ্যেই কাউকে আবুল কাসেম উপনামে অভিহিত করত। এটা এখন আর থাকেনি。
কাফের, বিদআতি এবং ফাসেককে উপনামে অভিহিত করা বৈধ, যদি উপনাম ছাড়া তাকে চেনা না যায় অথবা তার নাম উল্লেখ ফিতনার আশঙ্কা থাকে
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَ تَبَّ.
অর্থ: আবু লাহাবের হাতদ্বয় ধ্বংস হোক এবং সে নিজে ধ্বংস হোক। -এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাকে আবু লাহাব নামে সম্বোধন করেছেন, অথচ তার মূল নাম ছিল আবদুল উজ্জা। বলা হয়, তাকে উপনামে অভিহিত করার কারণ এই যে, সে এই নামেই পরিচিত ছিল। অনেকে বলেন, না; বরং তার মূল নামের অর্থ যেহেতু মূর্তিদাস, তাই নাম অপছন্দ করতঃ এই উপনামে অভিহিত করা হয়েছে।
(৭৫৩) হজরত উসামা বিন জায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে-
أَنَّ رَسُولَ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَكِبَ عَلَى حِمَارٍ لِيَعُودَ سَعْدَ بْنَ عُبَادَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ ..... فَذُكِرَ الْحَدِيثُ وَمُرُورِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى عَبْدِ اللهِ بْنِ أُبَيَّ سَلُوْلِ الْمُنَافِقِ، ثُمَّ قَالَ : فَسَارَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى دَخَلَ عَلَى سَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ، فَقَالَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيْ سَعْدُ، أَلَمْ تَسْمَعْ مَا قَالَ أَبُو حُبَابٍ - يُرِيدُ عَبْدَ اللهِ بْنَ أُبَيَّ ابْنِ سَلُوْلٍ - قَالَ: كَذَا وَكَذَا؟
অর্থ: একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদ বিন উবাদা রাদিয়াল্লাহু আনহুর শুশ্রুষার উদ্দেশ্যে গাধার উপর আরোহন করলেন। এরপর তিনি বিস্তারিত হাদিস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, নবিজির অতিক্রম হয় বিশিষ্ট মুনাফিক আবদুল্লাহ বিন উবাই ইবনে সালুলের পাশ দিয়ে। তারপর বলেন, অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলতে চলতে সাদ বিন উবাদার ঘরে গমন করেন। নবিজি তাকে বললেন, হে সাদ! আবু হুবাব কী বলেছে তুমি কি শুননি? তারপর তিনি পূর্ণ হাদিস বর্ণনা করেন। -এখানে আবু হুবাব দ্বারা আবদুল্লাহ বিন উবাইকে বুঝিয়েছেন。
ইমাম নববি বলেন, হাদিসে আবু তালেব উপনাম বারবার এসেছে, অথচ তার মূল নাম ছিল আবদে মানাফ। সহিহ হাদিসে এসেছে- এটি আবু রুগালের কবর। এছাড়াও এর অহরহ দৃষ্টান্ত হাদিসে বিদ্যমান।
এই বৈধতা তখনই, যখন উপরের শিরোনামে উল্লিখিত শর্ত পাওয়া যাবে। অন্যথায় শুধুমাত্র নাম উল্লেখ করে ডাকবে। সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লিখেছিলেন: আল্লাহ তাআলার বান্দা ও রাসুল মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে হিরাক্লিয়াসের প্রতি। -এখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিরাক্লিয়াসের স্রেফ নাম উল্লেখ করেছেন, তার উপনাম উল্লেখ করেননি কিংবা তাকে রোমান শাসকদের উপাধি কায়সারও উল্লেখ করেননি। এ ধরনের দৃষ্টান্ত অনেক। আমাদেরকে কাফেরদের ব্যাপারে কঠোরতা প্রকাশ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাজেই তাদেরকে উপনামে ডাকা, তাদের জন্য কোমল ভাষা ব্যবহার করা, তাদের সাথে নরম সুরে কথা বলা এবং তাদের প্রতি ভালোবাসা ও ঘনিষ্ঠতা প্রকাশ করা আমাদের জন্য উচিত নয়।
নারী-পুরুষ: অমুকের পিতা বা অমুকের মাতা উপনামে অভিহিত হতে পারবে
জেনে রাখুন: পুরুষ কিংবা নারী কারো জন্যই এ ধরনের উপনাম রাখতে কোনো সমস্যা নেই। এই উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তান সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন এবং পরবর্তীরা “অমুকের পিতা” উপনামে নামে অভিহিত হয়েছেন। তন্মধ্যে-
১. হজরত উসমান বিন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহুর তিনটি উপনাম ছিল; আবু আমর, আবু আবদুল্লাহ এবং আবু লাইলা।
২. আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং তার স্ত্রী উম্মে দারদা কুবরা, তিনি সাহাবিয়া ছিলেন। তার নাম খায়রা। উম্মে দারদা সুগরা হলের আরেক স্ত্রী, নাম হুজাইমা। তিনিও সম্ভ্রান্ত, ফকিহা, সম্মানিত এবং অগাধ বুদ্ধি ও উজ্জ্বল কৃতিত্বের অধিকারিণী ছিলেন। তিনি তাবেয়ি ছিলেন।
৩. আবু লায়লা: তিনি আবদুল্লাহ বিন আবু লায়লার পিতা ছিলেন। তার স্ত্রীর ডাকনাম ছিল উম্মে লায়লা। তারা উভয়ই সাহাবি।
৪. আবু উমামা: একদল সাহাবার উপনাম ছিল।
৫. আবু রাইহানা, আবু রিমসা, আবু রিমা, আবু আমরা বশির বিন আমর, আবু ফাতেমা লাইসি (কেউ বলেন, তার নাম ছিল আবদুল্লাহ বিন উনাইস), আবু মরিয়ম আজদি, আবু রুকাইয়্যা তামিম দারি, আবু কারিমা মিকদাদ বিন মাদি কারিবা। তারা সবাই সাহাবি।
৬. তাবেয়িনের মধ্য থেকে আবু আয়েশা মাসরুক বিন আজদাসহ অগণিত লোক বিভিন্ন উপনামে ভূষিত ছিলেন।
ইমাম সমআনি তার "আনসাব” কিতাবে (৫/৬৫০) বলেন- মাসরুক নামকরণ এজন্য হয়েছে যে, বাল্যকালে তাকে এক ব্যক্তি অপহরণ করে নেয়, পরে তাকে পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- কর্তৃক হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে “আবু হুরায়রা” উপনামে অভিহিত করার বিষয়টি সহিহ হাদিসে প্রমাণিত। আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন।

টিকাঃ
১০৫৯. সহিহ বুখারি: ২৮৫।
১০৬০. সহিহ বুখারি: ৩৭৬৮, সহিহ মুসলিম ২৪৪৭।
১০৬১. সহিহ বুখারি: ৬২০২।
১০৬২. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৪১১।
১০৬৩. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৩৯৩।
১০৬৪. সুরা হুজুরাত: ১১।
১০৬৫. সুনানে তিরমিজি: ৩৬৭৯।
১০৬৬. সহিহ বুখারি: ৬২০৪ সহিহ মুসলিম: ২৪০৯।
১০৬৭. সহিহ বুখারি: ৩৭০৩, সহিহ মুসলিম: ২৪০৯।
১০৬৮. সহিহ বুখারি: ৪৮২, সহিহ মুসলিম: ৫৭৩, সুনানে তিরমিজি: ৩৯৪, সুনানে নাসাঈ ৩/৩০।
১০৬৯. সহিহ বুখারি: ৬২০৩, সহিহ মুসলিম: ২১৫০।
১০৭০. সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৭০, আমাল: ৪১৮, মু. আহমাদ ৬/১০৭।
১০৭১. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৪১৭।
১০৭২. সহিহ বুখারি: ২১২, ৩১১৪, সহিহ মুসলিম: ২১৩৩।
১০৭৩. হানাফি এবং মালেকি ফুকাহাসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ ফুকাহাদের মতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় এই উপনামে অভিহিত হওয়া বৈধ নয়। কিন্তু তার ওফাতের পরে বৈধ; অভিহিত ব্যক্তির নাম মুহাম্মাদ হোক অথবা না হোক। এটা হাম্মলি ও শাফেয়ি মাজহাবেরও একটি মত। ইমাম নববি একেই প্রাধান্য দিয়েছেন। (আলমাওসুআতুল ফিকহিয়‍্যাহ ৩৫/১৬৮)
১০৭৪. সুরা লাহাব: ১। তাফসিরে হেদায়াতুল কুরআন।
১০৭৫. সহিহ বুখারি: ৪৫৬৬, সহিহ মুসলিম: ১৭৯৮।
১০৭৬. সহিহ ইবনে হিব্বান: ৬১৯৮, সুনানে আবু দাউদ: ৩০৮৮।
১০৭৭. সহিহ বুখারি: ৭, সহিহ মুসলিম: ১৭৭৩।
১০৭৮. দেখুন: সহিহ বুখারি: ৫৩৭৩।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন