📘 আল আযকার > 📄 সুন্দর ও অপছন্দনীয় নাম

📄 সুন্দর ও অপছন্দনীয় নাম


সুন্দর নাম রাখা মুস্তাহাব
(৭২৫) হজরত আবু দারদা রাদি. থেকে উত্তম সনদে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِنَّكُمْ تُدْعَوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِأَسْمَائِكُمْ وَأَسْمَاءِ آبَائِكُمْ، فَأَحْسِنُوا أَسْمَاءَكُمْ.
অর্থ: নিশ্চয় কেয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের ও পিতাদের নামে অভিহিত করা হবে। সুতরাং নিজেদের সুন্দর নাম রেখ।
আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় নামসমূহ
(৭২৬) হজরত ইবনে উমর রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِنَّ أَحَبَّ أَسْمَائِكُمْ إِلَى اللَّهِ، عَبْدُ اللَّهِ ، وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ.
অর্থ: আল্লাহর কাছে তোমাদের নামসমূহের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় নাম হচ্ছে, আবদুল্লাহ এবং আবদুর রহমান。
(৭২৭) হজরত জাবির থেকে বর্ণিত-
وُلِدَ لِرَجُلٍ مِنَّا غُلَامٌ، فَسَمَّاهُ الْقَاسِمَ، فَقُلْنَا: لَا نَكْنِيكَ أَبَا الْقَاسِمِ، وَلَا كَرَامَةَ. فَأَخْبَرَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: سَمَّ ابْنَكَ عَبْدَ الرَّحْمَنِ.
অর্থ: আমাদের একজনের একটি সন্তান জন্মগ্রহণ করে। সে তার নাম রাখে কাসেম। আমরা তাকে বললাম, তোমাকে আমরা আবুল কাসেম উপনামে ডাকব না; এতে তোমার কোনো মর্যাদা থাকবে না। অতঃপর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে অবহিত হলে তাকে বললেন, ছেলের নাম রেখ আবদুর রহমান。
(৭২৮) হজরত আবু ওয়াহব জুমাশি রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
تَسَمَّوْا بِأَسْمَاءِ الْأَنْبِيَاءِ، وَأَحَبُّ الْأَسْمَاءِ إِلَى اللَّهِ، عَبْدُ اللهِ، وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ، وَأَصْدَقُهَا حَارِثُ وَهَمَّامٌ، وَأَقْبَحُهَا حَرْبُ وَمُرَّةٌ.
অর্থ: তোমরা নবিদের নামে নামকরণ কর। আর আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম হচ্ছে, আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান। অধিক সত্য নাম হচ্ছে, হারেস ও হাম্মাম। সবচেয়ে নিকৃষ্ট নাম হচ্ছে, হারব ও মুররা。
অভিনন্দন জানানো ও অভিনন্দন জ্ঞাপনকারীর জবাব
জন্মদাতাকে অভিনন্দন জানানো মুস্তাহাব। আমাদের আলেমরা বলেন, হজরত হুসাইন রাদি. থেকে বর্ণিত শব্দে অভিনন্দন জানানো মুস্তাহাব। তিনি এক ব্যক্তিকে অভিনন্দন জ্ঞাপন শিখাতে গিয়ে বলেন, তুমি এভাবে বলবে-
بَارَكَ اللهُ لَكَ فِي الْمَوْهُوْبِ لَكَ، وَشَكَرْتَ الْوَاهِبَ، وَبَلَغَ أَشُدَّهُ، وَرُزِقْتَ بِرَّهُ.
উচ্চারণ: বারাকাল্লাহু লাকা ফিল মাউহুবি লাকা, ওয়া শাকারতাল ওয়াহিবা, ওয়া বালাগা আশুদ্দাহু, ওয়া রুজিকতা বিররাহ।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা তোমার নবজাতকে বরকত দান করুন, তুমি দানকারীর কৃতজ্ঞতা আদায় করবে, সে সাবালকত্বে পদার্পণ করুক এবং তুমি তার দ্বারা সদ্ব্যবহার প্রাপ্ত হও।
অভিনন্দন জ্ঞাপনকারীর জবাব দেয়াও মুস্তাহাব। তাকে এভাবে বলবে-
اللهُ لَكَ، وَبَارَكَ عَلَيْكَ.
উচ্চারণ: বারাকাল্লাহু লাকা ওয়া বারাকা আলাইক।
অর্থ: আল্লাহ পাক তোমার মাঝে বরকত দান করুন এবং তোমাকে বরকত সমৃদ্ধ করুক। -অথবা বলবে-
جَزَاكَ اللهُ خَيْرًا.
উচ্চারণ: জাযাকাল্লাহু খাইর।
অর্থ: আল্লাহ পাক আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন। -অথবা বলবে-
رَزَقَكَ اللهُ مِثْلَهُ.
উচ্চারণ: রাজাকাকাল্লাহু মিসলাহ।
অর্থ: আল্লাহ পাক আপনাকেও এমনি দান করেন। অথবা বলবে-
أَجْزَلَ اللهُ ثَوَابَكَ.
উচ্চারণ: আযজালাল্লাহু সাওয়াবাক।
অর্থ: আল্লাহ পাক আপনাকে মহা পুরস্কার দান করুক। -অথবা এরকম অন্য কিছু বলবে।
অপছন্দনীয় নাম রাখা নিষেধ
(৭২৯) হজরত সামুরা বিন জুনদুব রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَا تُسَمِّيَنَّ غُلَامَكَ يَسَارًا وَلَا رَبَاحًا وَلَا نَجِيْحًا وَلَا أَفْلَحَ ؛ فَإِنَّكَ تَقُوْلُ: أَثَمَّ هُوَ؟ فَيَقُولُ: لَا . إِنَّمَا هُنَّ أَرْبَعُ، فَلَا تَزِيْدُنَّ عَلَيَّ.
অর্থ: তুমি তোমার সন্তানের নাম রেখ না ইয়াসার, রাবাহ, নাজাহ অথবা আফলাহ। কেননা তুমি বলবে, সে কি এখানে আছে? সে সেখানে থাকবে না তো বলা হবে, না। (এভাবে এই প্রশংিসত বস্তুগুলোর প্রত্যাখ্যান হয়ে যাবে) সামুরা বিন জুনদুব রাদি. বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই চার নামের কথাই বলেছেন, এর বেশি বলেননি। -সুনানে আবু দাউদ ইত্যাদিতে হজরত জাবির রাদি. এর বর্ণনায় বারাকাহ নামকরণের নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে。
(৭৩১) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. এর সূত্রে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন-
إِنَّ أَخْنَعَ اسْمٍ عِنْدَ اللَّهِ، رَجُلٌ تَسَمَّى مَلِكَ الْأَمْلَاكِ.
অর্থ: আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট নাম হচ্ছে, কোনো ব্যক্তি নিজের নাম রাখল মালিকুল আমলাক (সকল অধিপতিদের অধিপতি)। -অন্য এক বর্ণনায় আছে-
أَغْيَظُ رَجُلٍ عِنْدَ اللهِ تَعَالَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَأَخْبَثُهُ رَجُلٍ كَانَ يُسَمَّى مَلِكَ الْأَمْلَاكِ؛ لَا مَلِكَ إِلَّا اللَّهُ.
অর্থ: কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত ও নিকৃষ্ট হবে ঐ ব্যক্তি, যাকে মালিকুল আমলাক নামে অভিহিত করা হয়। অথচ আল্লাহ ছাড়া কোনো মালিক-অধিপতি নেই। -হজরত সুফিয়ান বিন উওয়াইনা রহ. থেকে বর্ণিত আছে যে, মালিকুল আমলাক নামকরণ শাহানশাহ নামকরণের মতো。

টিকাঃ
১০৩৫. সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৪৮, সুনানে দারিমি: ২৬৯৭, মুসনাদে আহমাদ ৫/১৯৪, ইবনে হিব্বান: ১৯৪৪।
১০৩৬. সহিহ মুসলিম: ২১৩২।
১০৩৭. সহিহ বুখারি: ৬১৮৬, সহিহ মুসলিম: ২১৩২, সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৪৯, সুনানে তিরমিজি: ২৮৩৫, সুনানে দারিমি: ২৬৯৮, মুসনাদে আহমাদ ২/২৪, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৮২৮।
১০৩৮. সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৫০, সুনানে নাসাঈ ৬/২১৮, মুসনাদে আহমাদ ৪/৩৪৫, আলআদাব: ৮১৪।
১০৩৯. সহিহ মুসলিম: ২১৩৭, সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৫৮, সুনানে তিরমিজি: ২৮৩৮।
১০৪০. সহিহ মুসলিম: ২১৩৮, সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৬০।
১০৪১. সহিহ বুখারি: ৬২০৬, সহিহ মুসলিম: ২১৪৩, সুনানে তিরমিজি: ২৮৩৯, সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৬১, মু. আহমাদ ২/২৪৪।
১০৪২. সহিহ মুসলিম: ২১৪৩।
১০৪৩. সহিহ বুখারি: ৬২০৬।

📘 আল আযকার > 📄 উত্তম নামে নাম পরিবর্তন করা

📄 উত্তম নামে নাম পরিবর্তন করা


উত্তম নামে নাম পরিবর্তন করা মুস্তাহাব
এ বিষয়ে 'নবজাতকের নামকরণ' পরিচ্ছেদে মুনজির বিন আবু উসাইদের ব্যাপারে হজরত সাহল রাদি. এর হাদিস উল্লেখ হয়েছে।
(৭৩৮) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
أَنَّ زَيْنَبَ كَانَ اسْمُهَا بَرَّةَ، فَقِيلَ: تُزَكِّي نَفْسَهَا . فَسَمَّاهَا رَسُوْلُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَيْنَبَ.
অর্থ: হজরত যয়নাবের নাম ছিল বাররা। তাকে বলা হল, তুমি নিজেকে পবিত্র বলছ? অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম রাখেন যয়নাব।
(৭৩৯) হজরত যয়নাব বিন আবু সালামা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
سُمِّيْتُ بَرَّةَ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : سَمُوْهَا زَيْنَبَ. قَالَتْ: وَدَخَلَتْ عَلَيْهِ زَيْنَبُ بِنْتُ جَحْشٍ ، وَاسْمُهَا: بَرَّةُ، فَسَمَّاهَا: زَيْنَبَ.
অর্থ: আমার নাম রাখা হয় বাররা। নবিজি বললেন, তার নাম রেখ যয়নাব। তিনি আরো বলেন, তাঁর সাথে যয়নাব বিনতে জাহাশের বিয়ে হয়, তারও নাম ছিল বাররা। তিনি তারও নাম রাখেন যয়নাব।
(৭৪০) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত-
كَانَتْ جُوَيْرِيَةُ اسْمُهَا : بَرَّةُ، فَحَوَّلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اسْمَهَا جُوَيْرِيَةً وَكَانَ يَكْرَهُ أَنْ يُقَالَ خَرَجَ مِنْ عِنْدِ بَرَّةً.
অর্থ: হজরত যুওয়াইরিয়ার নাম ছিল বাররা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম পরিবর্তন করে রাখেন যুওয়াইরিয়া। নবিজি এ কথা অপছন্দ করতেন যে, কেউ বলুক- তিনি বাররার কাছ থেকে বেরিয়ে এসেছেন。
(৭৪১) হজরত সাঈদ বিন মুসাইয়াব বিন হাজন থেকে, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন-
أَنَّ أَبَاهُ جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ : مَا اسْمُكَ؟ قَالَ: حَزْنُ. قَالَ: أَنْتَ سَهْلُ. قَالَ: لَا أُغَيْرُ اسْمًا سَمَّانِيْهِ أَبِي. قَالَ ابْنُ الْمُسَيَّبِ: فَمَا زَالَتِ الْحُزُوْنَةُ فِيْنَا بَعْدُ.
অর্থ: তার পিতা হাজন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হলে জিজ্ঞাসা করলেন, নাম কী? বললেন, হাজন। নবিজি বললেন, আজ থেকে তোমার নাম সাহল। তিনি বললেন, পিতার রাখা নাম আমি পরিবর্তন করতে পারি না। হজরত সাঈদ বিন মুসাইয়াব বলেন, এজন্যে সর্বদা আমাদের বংশে কাঠিন্যতা বিদ্যমান ছিল。
(৭৪২) হজরত ডবন উমর রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَيَّرَ اسْمَ عَاصِيَةَ، وَقَالَ: أَنْتِ جَمِيلَةُ.
অর্থ: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসিয়ার নাম পরিবর্তন করে জামিলা রাখেন। -সহিহ মুসলিমের অপর বর্ণনায় রয়েছে-
أَنَّ ابْنَةً لِعُمَرَ كَانَتْ يُقَالُ لَهَا: عَاصِيَةُ، فَسَمَّاهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَمِيلَةَ.
অর্থ: হজরত উমরের এক মেয়ের নাম ছিল আসিয়া। অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম রাখেন জামিলা。
(৭৪৩) হজরত উসামা বিন আখদারি রাদি. থেকে হাসান সনদে বর্ণিত আছে-
أَنَّ رَجُلًا يُقَالُ لَهُ: أَصْرَمُ كَانَ فِي النَّفَرِ الَّذِينَ أَتَوْا رَسُولَ اللَّهِ، صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا اسْمُكَ ؟ قَالَ: أَنَا أَصْرَمُ. قَالَ: بَلْ أَنْتَ زُرْعَةُ.
অর্থ: জনৈক ব্যক্তিকে আসরাম ডাকা হত, সে নবিজির কাছে আগত প্রতিনিধি দলের মাঝে ছিল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার নাম কী? বললেন, আসরাম। নবিজি বললেন, বরং তোমার নাম হবে জুরআ。
(৭৪৪) হজরত আবু শুরায়েহ হানি রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
أَنَّهُ لَمَّا وَفَدَ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَعَ قَوْمِهِ سَمِعَهُمْ يُكَنُّوْنَهُ بِأَبِي الْحَكَمِ، فَدَعَاهُ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَكَمُ، وَإِلَيْهِ الْحُكْمُ، فَلِمَ تُكَنَّى أَبَا الْحَكَمِ ؟ فَقَالَ: إِنَّ قَوْمِي إِذَا اخْتَلَفُوْا فِي شَيْءٍ أَتَوْنِي فَحَكَمْتُ بَيْنَهُمْ، فَرَضِيَ كِلَا الْفَرِيقَيْنِ. فَقَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا أَحْسَنَ هَذَا ، فَمَا لَكَ مِنَ الْوَلَدِ ؟ قَالَ: لِي شُرَيْحُ وَمُسْلِمُ وَعَبْدُ اللَّهِ، قَالَ: فَمَنْ أَكْبَرُهُمْ؟ قُلْتُ: شُرَيْحُ قَالَ: فَأَنْتَ أَبُو شُرَيْحٍ.
অর্থ: তিনি যখন নিজ গোত্রের সাথে নবিজির দরবারে প্রতিনিধি হয়ে আসেন। নবিজি তাদেরকে তাকে আবুল হাকাম উপনামে ডাকতে শুনলেন। অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে বললেন, আল্লাহ তাআলাই হলেন বিচারক, তাঁরই দিকে সকল বিচার প্রত্যাবর্তিত। অতএব, তোমার উপনাম আবুল হাকাম কেন?! তিনি জানান, আমার গোত্র কোনো বিষয়ে ঝগড়া করলে আমার শরণাপন্ন হয়। আমি তাদের মাঝে ফয়সালা করে দেই, ফলে উভয় দল সন্তুষ্ট হয়ে যায়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা কতই না উত্তম। তোমার কি কোনো সন্তান আছে? তিনি বললেন, আমার তিনজন ছেলে আছে: শুরায়েহ, মুসলিম এবং আবদুল্লাহ। তাদের বড় কে? বললাম, শুরায়েহ। নবিজি বললেন, তাহলে তুমি আবু শুরায়েহ。
ইমাম আবু দাউদ বলেন- নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসি, আজিজ, আতলা, শয়তান, হাকাম, গুরাব, হুবাব এবং শিহাব নামগুলো হাশিম নামে পরিবর্তন করেছেন। হারবকে সালাম নামে এবং মুজতাজিকে মুনবায়িস নামে নামকরণ করেছেন। আকিরা নামক এক জমির নাম রেখেছেন খাজিরা। শি'বুদ দালালাকে (বিভ্রান্তির গিরিপথ) শি'বুল হুদা (পথ- প্রদর্শনের গিরিপথ) নামে অভিহিত করেছেন। বনু জিনয়াকে বনু রিশদা এবং বনু মুগবিয়াকে বনু রিশদাহ নামকরণ করেছেন। ইমাম আবু দাউদ বলেন, সংক্ষিপ্তকরণের উদ্দেশ্যে এগুলোর সনদ ছেড়ে দিয়েছি。

টিকাঃ
১০৪৭. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৩৯৯।
১০৪৮. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৩৯৫।
১০৪৯. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৩৯৬।
১০৫০. সহিহ বুখারি: ৬১৯২, সহিহ মুসলিম: ২১৪১।
১০৫১. সহিহ মুসলিম: ২১৪২।
১০৫২. সহিহ মুসলিম: ২১৪০।
১০৫৩. সহিহ বুখারি: ৬১৯০, সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৫৬।
১০৫৪. সহিহ মুসলিম: ২১৩৯, সুনানে তিরমিজি: ২৮৪০, সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৫২, আদাব: ৮২০।
১০৫৫. সহিহ মুসলিম: ২১৩৯।
১০৫৬. সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৫৪।
১০৫৭. সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৫৫, সুনানে নাসাঈ ৮/২২৬, আদাব: ৮১১, মু. হাকেম ৪/২৭৯।
১০৫৮. সুনানে আবু দাউদ ৫/২৪১-২৪২, আলফুতুহাত ৬/১২৯-১৩১।

📘 আল আযকার > 📄 উপনামে ডাকা ও তার বিধান

📄 উপনামে ডাকা ও তার বিধান


নামের সংক্ষেপণ জায়েজ, যদি ব্যক্তি কষ্টবোধ না করে
(৭৪৫) সহিহ হাদিসে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল সাহাবায়ে কেরামের নাম সংক্ষিপ্ত করেছেন। তন্মধ্যে: হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে উদ্দেশ্য করে নবিজির বাণী: হে আবু হির। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে উদ্দেশ্য করে নবিজির বাণী: হে আয়েশ। হজরত আনজাশা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে উদ্দেশ্য করে: হে আনজাশ। হজরত উসামাকে বলেছিলেন: হে উসাইম। হজরত মিকদামকে বলেছিলেন: হে কুদাইম。
কারো অপছন্দনীয় ডাকনামে ডাকা নিষেধ
আল্লাহ পাক বলেন-
وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ.
অর্থ: তোমরা একে অপরকে খারাপ উপাধিতে ডাক না。
মানুষকে তার অপছন্দনীয় ডাকনামে ডাকা হারাম হওয়ার ব্যাপারে উলামায়ে কেরাম সহমত পোষণ করেছেন। এই ডাকনাম তার বৈশিষ্ট্য হোক অথবা পিতা-মাতার। যেমন- আমাশ (দুর্বল দৃষ্টিসম্পন্ন), আজলাহ (টেকো), আমা (অন্ধ), আরাজ (লেংড়া), আহওয়াল (টেরা), আবরাস (কুটে), আসবাজ (মাথা ফাটা), আসফার (হলদে), আহদাব (কুঁজো), আসাম্ম (বধির), আজরাক (নীল), আফতাস (চেপটা নাকবিশিষ্ট), আশতার (ঠোঁট বিদীর্ণ), আসরাম (ফোকলা), আকতা (হাত কাটা), জামিন (পক্ষাঘাতগ্রস্ত), মুকআদ (বিকলাঙ্গ), আশাল্ল (অবশ) অথবা তার অপছন্দনীয় কোনো উপাধি। তারা এ বিষয়েও একমত হয়েছেন যে, পরিচয়দানের লক্ষ্যে এ ধরনের উপাধিও উল্লেখ করা বৈধ আছে, যা ছাড়া ঐ ব্যক্তি পরিচিত না। উল্লিখিত আলোচনার দলিলাদি অনেক, যা প্রসিদ্ধ। সংক্ষিপ্তকরণের লক্ষ্যে এবং প্রসিদ্ধ হওয়ার কারণে আমি এগুলো বিলুপ্ত করে দিয়েছি।
ব্যক্তির পছন্দনীয় ডাকনামে ডাকা বৈধ, বরং মুস্তাহাব
তন্মধ্যে থেকে হজরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু: তার নাম, আবদুল্লাহ বিন উসমান। উপাধি, আতিক। এটাই বিশুদ্ধ, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুহাদ্দিসিন, সিরাতবিদ ও ইতিহাসবিদগণ এটাই বলেছেন। কেউ বলেন, তার নাম আতিক। এ কথা হাফেজ আবুল কাসেম বিন আসাকির তার কিতাব 'আতরাফে' নকল করেছেন। তবে প্রথম মতই বিশুদ্ধ। এটা ভালো উপাধি হওয়ার বিষয়ে উলামায়ে কেরাম একমত, তবে আতিক নামকরণের ব্যাপারে মতানৈক্য করেছেন।
হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
أَبُوْبَكْرٍ عَتِيْقُ اللَّهِ، مِنِ النَّارِ.
অর্থ: আবু বকর জাহান্নাম থেকে আল্লাহর মুক্তকৃত। সেদিন থেকে তার নাম হয়ে যায় আতিক。
হজরত মুসআব বিন যুবায়ের প্রমুখ নসববিদগণ বলেন, আতিক নামকরণ এজন্য যে, তার বংশে এমন কোনো বস্তু ছিল না, যা দ্বারা তাকে ত্রুটিযুক্ত করা যায়। কেউ কেউ অন্য কিছু বলেছেন। আল্লাহ তাআলাই সর্বজ্ঞ।
(৭৪৬) তন্মধ্য থেকে আবু তুরাব: হজরত আলি রাদি. এর উপাধি। তার উপনাম, আবুল হাসান। সহিহ হাদিসে আছে-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَدَهُ نَائِماً فِي الْمَسْجِدِ وَعَلَيْهِ التُّرَابُ، فَقَالَ: قُمْ أَبَا التُّرَابِ، قُمْ أَبَا التُّرَابِ. فَلَزِمَهُ هَذَا اللَّقَبَ الْحَسَنَ الْجَمِيلَ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মসজিদে ধুলোময় হালতে ঘুমাতে দেখে বললেন, দাঁড়াও হে আবু তুরাব, দাঁড়াও হে আবু তুরাব। অতঃপর তিনি এই সুন্দর ও উৎকৃষ্ট ডাকনাম আপন করে নেন。
(৭৪৭) হজরত সাহল বিন সাদ রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
وَكَانَتْ أَحَبُّ أَسْمَاءِ عَلِيَّ إِلَيْهِ، وَإِنْ كَانَ لَيَفْرَحُ أَنْ يُدْعَى بِهَا.
অর্থ: হজরত আলি রাদি. এর কাছে সবচেয়ে প্রিয় ছিল আবু তুরাব ডাকনাম। এ নামেই ডাকলে তিনি খুশি হতেন。
(৭৪৮) তন্মধ্য থেকে জুল ইয়াদাঈন: নাম ছিল খিরবাক। তার হাত তুলনামূলক লম্বা ছিল। সহিহ হাদিসে রয়েছে-
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَدْعُوهُ ذَا الْيَدَيْنِ، وَاسْمُهُ الْخِرْبَاقُ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জুল ইয়াদাঈন নামে ডাকতেন। নাম ছিল খিরবাক。
উপনামে ডাকা বৈধ; বড়দেরকে উপনামে ডাকা মুস্তাহাব
এ অধ্যায়ে কোনো কিছু নকল করার প্রয়োজনবোধ করি না, কেননা এর দলিলাদি বিশিষ্ট ও সর্বসাধারণের জন্য প্রযোজ্য। মর্যাদাবান ব্যক্তিত্ব ও তাদের সমতুল্যদেরকে উপনামে ডাকাই আদাব। তাদের প্রতি চিঠি লিখলে কিংবা তাদের থেকে হাদিস বর্ণনা করতে বলবে, শায়খ হাদিস বর্ণনা করেছেন অথবা ইমাম, অমুকের পিতা অথবা অমুক বিন অমুক। অথবা এরকম কিছু। আদব হল, কিতাব বা অন্য কোথাও তার কুনিয়াত উল্লেখ করবে না। তবে যদি কুনিয়াত ছাড়া পরিচয় করা না যায় অথবা নামের চেয়ে কুনিয়াত প্রসিদ্ধ হয়। ইমাম নাহহাস বলেন, কুনিয়াত অধিক প্রসিদ্ধ হলে সমার্থক শব্দে কুনিয়াত ধারণ করবে এবং তার উপরের নাম নিবে, পরে যুক্ত করবে যে, অমুকের পিতা নামে খ্যাত।
বড় ছেলের নামে উপনাম
এ অধ্যায় এতটা প্রশস্ত যে, এভাবে বিশেষিত হওয়াদের সংখ্যা অগণিত। এতে কোনো অসুবিধাও নাই।
সন্তানহীন ব্যক্তি ও শিশুর উপনাম
(৭৪৯) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحْسَنَ النَّاسِ خُلُقًا، وَكَانَ لِي أَخُ، يُقَالُ لَهُ: أَبُوْ عُمَيْرٍ - قَالَ الرَّاوِي : أَحْسِبُهُ فَطِيمًا - وَكَانَ إِذَا جَاءَ قَالَ: يَا أَبَا عُمَيْرٍ، مَا فَعَلَ التَّغَيْرُ؟ نُغَرُ كَانَ يَلْعَبُ بِهِ.
অর্থ: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবচেয়ে উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। আমার এক ছোট ভাই ছিল, যাকে আবু উমায়ের বলা হত। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয় তিনি বলেছেন, মায়ের দুধ ছাড়ানো হয়েছে এমন শিশু। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ঘরে তাশরিফ আনলে বলতেন- )يَا أَبَا عُمَيْرٍ مَا فَعَلَ النُّغَيْرُ( : )হে আবু উমায়ের, নুগাইরের কী অবস্থা? তার একটা বুলবুল পখির বাচ্চা ছিল, যা দিয়ে সে খেলাধোলা করত।
(৭৫০) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত, তিনি বলেছিলেন-
يَا رَسُولَ اللهِ ، كُلُّ صَوَاحِي لَهُنَّ كُنّى. قَالَ: فَاكْتَنِي بِابْنِكِ عَبْدَ اللَّهِ . يَعْنِي ابْنَ أُخْتِهَا. وَكَانَتْ تُكَنَّى بِأُمَّ عَبْدِ اللهِ .
অর্থ: হে আল্লাহর রাসুল! আমার সকল সতীনদের কোনো-না কোনো উপনাম আছে (অথচ আমার নেই?) নবিজি বললেন, তুমি তোমার ভাগিনা আবদুল্লাহর নামে উপনাম ধারণ কর। বর্ণনাকারী বলেন, অর্থাৎ আবদুল্লাহ বিন যুবায়ের। তিনি ছিলেন হজরত আয়েশার বোন হজরত আসমা বিনতে আবু বকর রাদি. এর ছেলে। এরপর থেকে হজরত আয়েশার উপনাম ছিল উম্মে আবদুল্লাহ। -ইমাম নববি বলেন, এটাই বিশুদ্ধ ও প্রসিদ্ধ।
(৭৫১) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَسْقَطْتُ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَقْطاً فَسَمَّاهُ عَبْدَ اللَّهِ، وَكَنَّانِي بِأُمَّ عَبْدِ اللهِ.
অর্থ: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমার একটি ভ্রূণ অকালপ্রসূত হয়, নবিজি এর নাম রাখেন আবদুল্লাহ এবং আমার উপনাম রাখেন উম্মে আবদুল্লাহ। -এই হাদিস নিতান্ত দুর্বল。
সাহাবায়ে কেরামের একদল ছিলেন, সন্তানাদি জন্মের আগ থেকেই যাদের উপনাম ছিল। যেমন- আবু হুরায়রা, আবু আনাস, আবু হামজা। এছাড়াও সাহাবা, তাবেয়িন ও পরবর্তীদের মধ্য থেকে অগণিত ব্যক্তির এমন উপনাম ছিল। এতে অপছন্দনীয়তার কিছু নেই, বরং এটা পূর্বোল্লিখিত শর্তসাপেক্ষ পছন্দনীয় জিনিস।
আবুল কাসেম উপনাম রাখা নিষিদ্ধ
(৭৫২) হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুসহ এক জামাত সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
سَمُوْا بِاسْمِي وَلَا تَكْتَنُوْا بِكُنْيَتِي.
অর্থ: তোমরা আমার নামে নাম রেখ, তবে আমার উপনামে অভিহিত হয়ো না。
ইমাম নববি রহ. বলেন, আবুল কাসেম উপনামে অভিহিত হওয়ার ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের তিনটি মতামত রয়েছে, যথা-
প্রথম মাজহাব: ইমাম শাফেয়ি রহ. এবং তার সমমনাদের মতে আবুল কাসেম উপনামে অভিহিত হওয়া বৈধ নয়। চাই তার মূল নাম মুহাম্মাদ হোক অথবা না হোক। ইমাম, হাফেজ, ফকিহ, মুহাদ্দিস ব্যক্তিবর্গ এই বিষয়টি ইমাম শাফেয়ি রহ. থেকে নকল করেছেন। যেমন, আবু বকর বাইহাকি তার কিতাবে (সুনানে কুবরা ৯/৩১০), আবু মুহাম্মাদ বাগাবি তাহজিব কিতাবের বিবাহ অধ্যায়ের শুরুতে এবং আবুল কাসেম বিন আসাকির তার তারিখে দিমাশকে (৩/৪৩)।
দ্বিতীয় মাজহাব: ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহুর মতে আবুল কাসেম নামে উপনামে অভিহিত হওয়া বৈধ, মূল নাম মুহাম্মাদ হোক বা না হোক। আর নিষেধাজ্ঞা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশার সাথে নির্দিষ্ট ছিল।
তৃতীয় মাজহাব: যে ব্যক্তির নাম মুহাম্মাদ হবে তার জন্য আবুল কাসেম উপনামে অভিহিত হওয়া বৈধ নয়, অন্যদের জন্য বৈধ। -আমাদের মাজহাবের ইমাম আবুল কাসেম রাফেয়ি বলেন, সম্ভবত এই তৃতীয় মতটি অধিকতর বিশুদ্ধ। কেননা সর্বযুগেই মানুষ আবুল কাসেম উপনামে অভিহিত হয়ে আসছে, অথচ কেউ এ ব্যাপারে কোনো আপত্তি করেনি। কিন্তু এই মাজহাবের প্রবক্তা যা বলেছেন তা স্পষ্টত হাদিসবিরোধী। মানুষকর্তৃক এই মাজহাব ভাঁজকরণে ইমাম মালেকের মাজহাবে বৈধতার দৃঢ়ীকরণ রয়েছে। কেননা, এই উপনামে অভিহিত হওয়া/অভিহিত কারীদের মধ্যে রয়েছেন বড় বড় ইমাম, সমাজের জ্ঞানীগুণী ব্যক্তি ও ধর্মীয় বিষয়ে অনুসরণীয় ব্যক্তিবর্গ। তারা এ কথা অনুধাবন করেছিলেন যে, এই নিষেধাজ্ঞা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশার সাথে নির্দিষ্ট ছিল। কেননা, নিষিদ্ধের কারণ তো প্রসিদ্ধ যে, ইহুদিরা তাকে কষ্টপ্রদানের উদ্দেশ্যেই কাউকে আবুল কাসেম উপনামে অভিহিত করত। এটা এখন আর থাকেনি。
কাফের, বিদআতি এবং ফাসেককে উপনামে অভিহিত করা বৈধ, যদি উপনাম ছাড়া তাকে চেনা না যায় অথবা তার নাম উল্লেখ ফিতনার আশঙ্কা থাকে
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَ تَبَّ.
অর্থ: আবু লাহাবের হাতদ্বয় ধ্বংস হোক এবং সে নিজে ধ্বংস হোক। -এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাকে আবু লাহাব নামে সম্বোধন করেছেন, অথচ তার মূল নাম ছিল আবদুল উজ্জা। বলা হয়, তাকে উপনামে অভিহিত করার কারণ এই যে, সে এই নামেই পরিচিত ছিল। অনেকে বলেন, না; বরং তার মূল নামের অর্থ যেহেতু মূর্তিদাস, তাই নাম অপছন্দ করতঃ এই উপনামে অভিহিত করা হয়েছে।
(৭৫৩) হজরত উসামা বিন জায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে-
أَنَّ رَسُولَ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَكِبَ عَلَى حِمَارٍ لِيَعُودَ سَعْدَ بْنَ عُبَادَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ ..... فَذُكِرَ الْحَدِيثُ وَمُرُورِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى عَبْدِ اللهِ بْنِ أُبَيَّ سَلُوْلِ الْمُنَافِقِ، ثُمَّ قَالَ : فَسَارَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى دَخَلَ عَلَى سَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ، فَقَالَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيْ سَعْدُ، أَلَمْ تَسْمَعْ مَا قَالَ أَبُو حُبَابٍ - يُرِيدُ عَبْدَ اللهِ بْنَ أُبَيَّ ابْنِ سَلُوْلٍ - قَالَ: كَذَا وَكَذَا؟
অর্থ: একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদ বিন উবাদা রাদিয়াল্লাহু আনহুর শুশ্রুষার উদ্দেশ্যে গাধার উপর আরোহন করলেন। এরপর তিনি বিস্তারিত হাদিস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, নবিজির অতিক্রম হয় বিশিষ্ট মুনাফিক আবদুল্লাহ বিন উবাই ইবনে সালুলের পাশ দিয়ে। তারপর বলেন, অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলতে চলতে সাদ বিন উবাদার ঘরে গমন করেন। নবিজি তাকে বললেন, হে সাদ! আবু হুবাব কী বলেছে তুমি কি শুননি? তারপর তিনি পূর্ণ হাদিস বর্ণনা করেন। -এখানে আবু হুবাব দ্বারা আবদুল্লাহ বিন উবাইকে বুঝিয়েছেন。
ইমাম নববি বলেন, হাদিসে আবু তালেব উপনাম বারবার এসেছে, অথচ তার মূল নাম ছিল আবদে মানাফ। সহিহ হাদিসে এসেছে- এটি আবু রুগালের কবর। এছাড়াও এর অহরহ দৃষ্টান্ত হাদিসে বিদ্যমান।
এই বৈধতা তখনই, যখন উপরের শিরোনামে উল্লিখিত শর্ত পাওয়া যাবে। অন্যথায় শুধুমাত্র নাম উল্লেখ করে ডাকবে। সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লিখেছিলেন: আল্লাহ তাআলার বান্দা ও রাসুল মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে হিরাক্লিয়াসের প্রতি। -এখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিরাক্লিয়াসের স্রেফ নাম উল্লেখ করেছেন, তার উপনাম উল্লেখ করেননি কিংবা তাকে রোমান শাসকদের উপাধি কায়সারও উল্লেখ করেননি। এ ধরনের দৃষ্টান্ত অনেক। আমাদেরকে কাফেরদের ব্যাপারে কঠোরতা প্রকাশ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাজেই তাদেরকে উপনামে ডাকা, তাদের জন্য কোমল ভাষা ব্যবহার করা, তাদের সাথে নরম সুরে কথা বলা এবং তাদের প্রতি ভালোবাসা ও ঘনিষ্ঠতা প্রকাশ করা আমাদের জন্য উচিত নয়।
নারী-পুরুষ: অমুকের পিতা বা অমুকের মাতা উপনামে অভিহিত হতে পারবে
জেনে রাখুন: পুরুষ কিংবা নারী কারো জন্যই এ ধরনের উপনাম রাখতে কোনো সমস্যা নেই। এই উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তান সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন এবং পরবর্তীরা “অমুকের পিতা” উপনামে নামে অভিহিত হয়েছেন। তন্মধ্যে-
১. হজরত উসমান বিন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহুর তিনটি উপনাম ছিল; আবু আমর, আবু আবদুল্লাহ এবং আবু লাইলা।
২. আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং তার স্ত্রী উম্মে দারদা কুবরা, তিনি সাহাবিয়া ছিলেন। তার নাম খায়রা। উম্মে দারদা সুগরা হলের আরেক স্ত্রী, নাম হুজাইমা। তিনিও সম্ভ্রান্ত, ফকিহা, সম্মানিত এবং অগাধ বুদ্ধি ও উজ্জ্বল কৃতিত্বের অধিকারিণী ছিলেন। তিনি তাবেয়ি ছিলেন।
৩. আবু লায়লা: তিনি আবদুল্লাহ বিন আবু লায়লার পিতা ছিলেন। তার স্ত্রীর ডাকনাম ছিল উম্মে লায়লা। তারা উভয়ই সাহাবি।
৪. আবু উমামা: একদল সাহাবার উপনাম ছিল।
৫. আবু রাইহানা, আবু রিমসা, আবু রিমা, আবু আমরা বশির বিন আমর, আবু ফাতেমা লাইসি (কেউ বলেন, তার নাম ছিল আবদুল্লাহ বিন উনাইস), আবু মরিয়ম আজদি, আবু রুকাইয়্যা তামিম দারি, আবু কারিমা মিকদাদ বিন মাদি কারিবা। তারা সবাই সাহাবি।
৬. তাবেয়িনের মধ্য থেকে আবু আয়েশা মাসরুক বিন আজদাসহ অগণিত লোক বিভিন্ন উপনামে ভূষিত ছিলেন।
ইমাম সমআনি তার "আনসাব” কিতাবে (৫/৬৫০) বলেন- মাসরুক নামকরণ এজন্য হয়েছে যে, বাল্যকালে তাকে এক ব্যক্তি অপহরণ করে নেয়, পরে তাকে পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- কর্তৃক হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে “আবু হুরায়রা” উপনামে অভিহিত করার বিষয়টি সহিহ হাদিসে প্রমাণিত। আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন।

টিকাঃ
১০৫৯. সহিহ বুখারি: ২৮৫।
১০৬০. সহিহ বুখারি: ৩৭৬৮, সহিহ মুসলিম ২৪৪৭।
১০৬১. সহিহ বুখারি: ৬২০২।
১০৬২. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৪১১।
১০৬৩. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৩৯৩।
১০৬৪. সুরা হুজুরাত: ১১।
১০৬৫. সুনানে তিরমিজি: ৩৬৭৯।
১০৬৬. সহিহ বুখারি: ৬২০৪ সহিহ মুসলিম: ২৪০৯।
১০৬৭. সহিহ বুখারি: ৩৭০৩, সহিহ মুসলিম: ২৪০৯।
১০৬৮. সহিহ বুখারি: ৪৮২, সহিহ মুসলিম: ৫৭৩, সুনানে তিরমিজি: ৩৯৪, সুনানে নাসাঈ ৩/৩০।
১০৬৯. সহিহ বুখারি: ৬২০৩, সহিহ মুসলিম: ২১৫০।
১০৭০. সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৭০, আমাল: ৪১৮, মু. আহমাদ ৬/১০৭।
১০৭১. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৪১৭।
১০৭২. সহিহ বুখারি: ২১২, ৩১১৪, সহিহ মুসলিম: ২১৩৩।
১০৭৩. হানাফি এবং মালেকি ফুকাহাসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ ফুকাহাদের মতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় এই উপনামে অভিহিত হওয়া বৈধ নয়। কিন্তু তার ওফাতের পরে বৈধ; অভিহিত ব্যক্তির নাম মুহাম্মাদ হোক অথবা না হোক। এটা হাম্মলি ও শাফেয়ি মাজহাবেরও একটি মত। ইমাম নববি একেই প্রাধান্য দিয়েছেন। (আলমাওসুআতুল ফিকহিয়‍্যাহ ৩৫/১৬৮)
১০৭৪. সুরা লাহাব: ১। তাফসিরে হেদায়াতুল কুরআন।
১০৭৫. সহিহ বুখারি: ৪৫৬৬, সহিহ মুসলিম: ১৭৯৮।
১০৭৬. সহিহ ইবনে হিব্বান: ৬১৯৮, সুনানে আবু দাউদ: ৩০৮৮।
১০৭৭. সহিহ বুখারি: ৭, সহিহ মুসলিম: ১৭৭৩।
১০৭৮. দেখুন: সহিহ বুখারি: ৫৩৭৩।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন