📄 সালাম প্রদানের নিয়ম ও বিধান
জ্ঞাতব্য এই যে, উত্তম হল এক মুসলমান অপর মুসলমানকে বলবে: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ (আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ: আপনাদের ওপর আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক) সালাম গ্রহীতা একজন হলেও বহুবচনের সর্বনাম যোগে সালাম দিবে। উত্তরদাতা সংযুক্তকারী ওয়াও অব্যয়সহ বলবে: وَعَلَيْكُمُ السَّلَامُ (وَ رَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ) ওয়া আলাইকুমুস সালামু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ: আপনাদের ওপরও আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক)
সালামের সূচনাকারী “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ” বলা উত্তম হওয়ার ব্যাপারে অন্যান্যদের পাশাপাশি মতামত পেশ করেছেন বিচারপতি ইমাম আবুল হাসান মাওয়ারদি তার 'আলহাভি ফি কিতাবির সিয়ার' (১৮/১৬৬) কিতাবে এবং ইমাম আবু সাদ মুতাওয়াল্লি তার 'কিতাবু সালাতিল জুমুআ' এ। এ সংক্রান্ত দলিলাদি:
(৬০৭) হজরত ইমরান বিন হুসাইন রাদি. হতে বর্ণিত-
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : السَّلَامُ عَلَيْكُمْ. فَرَدَّ عَلَيْهِ السَّلَامَ، ثُمَّ جَلَسَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : عَشْرُ. ثُمَّ جَاءَ آخَرُ فَقَالَ : السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ . فَرَدَّ عَلَيْهِ، فَجَلَسَ، فَقَالَ : عِشْرُونَ. ثُمَّ جَاءَ آخَرُ فَقَالَ : السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ فَرَدَّ عَلَيْهِ، فَجَلَسَ، فَقَالَ: ثَلَاثُونَ.
অর্থ: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এক লোক এসে বলল: "আসসালামু আলাইকুম"। নবিজি তার সালামের জবাব দিলেন, সে বসে পড়ল। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দশ নেকি। তারপর আরেকজন এসে সালাম দিতে গিয়ে বলল: “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ”, নবিজি জবাব দিয়ে বললেন: বিশ নেকি। অনন্তর আরেকজন এসে বলল: “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ", নবিজি তার সালামের জবাব দিলেন, সে বসে পড়ল। নবিজি বললেন: ত্রিশ নেকি। ৮৩২ -সুনানে আবু দাউদের এক রেওয়ায়েতে হজরত মুআজ বিন আনাস রাদি. এর সূত্রে অতিরিক্ত এসেছে-
ثُمَّ أَلَى آخَرُ فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ وَمَغْفِرَتُهُ. فَقَالَ: أَرْبَعُوْنَ. قَالَ: هَكَذَا تَكُوْنُ الْفَضَائِلُ.
অর্থ: অতঃপর অন্য এক ব্যক্তি এসে সালাম দিতে গিয়ে বলল: "আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ওয়া মাগফিরাতুহ”। নবিজি বললেন, চল্লিশ নেকি। তারপর বললেন, এভাবে ফজিলত বৃদ্ধি হতে থাকবে। ৮৩৩
(৬০৮) হজরত আনাস রাদি. হতে দুর্বল সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন-
كَانَ رَجُلٌ يَمُرُّ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْعَى دَوَابَّ أَصْحَابِهِ فَيَقُولُ : السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ، فَيَقُوْلُ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : وَعَلَيْكَ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ وَمَغْفِرَتُهُ وَرِضْوَانُهُ، فَقِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ تُسَلِّمُ عَلَى هَذَا سَلَاماً مَا تُسَلِّمَهُ عَلَى أَحَدٍ مِنْ أَصْحَابِكَ؟ قَالَ: وَمَا يَمْنَعُنِي مِنْ ذُلِكَ وَهُوَ يَنْصَرِفُ بِأَجْرِ بِضْعَةَ عَشَرَ رَجُلاً؟
অর্থ: জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট দিয়ে অতিক্রম করে, যে নাকি সাহাবায়ে কেরামের গবাদিপশু চরাত। সে বলত, “আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ”। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম "ওয়া আলাইকাস সালামু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ওয়া মাগফিরাতুহু ওয়ারিদওয়ানুহ" বলে তার সালামের উত্তর দিতেন। বলা হল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এই লোকটির সালামের উত্তর এমনভাবে দেন, যা আপনার অন্য কোনো সাহাবিকে দেন না। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাকে এভাবে সালাম দেয়া থেকে কোনো জিনিস বাধাগ্রস্ত করবে? অথচ সে দশটি নেকি নিয়েই প্রস্থান করছে! ৮৩৪
আমাদের মাজহাবের ইমামগণ বলেন, যদি সূচনাকারী 'আসসালামু আলাইকুম', 'আসসালামু আলাইকা' কিংবা 'সালামুন আলাইকা' বলে সালাম প্রদান করে, তাহলে সালামের প্রতিদান অর্জন হয়ে যাবে। আর যদি 'ওয়ালাইকাস সালাম' অথবা 'ওয়ালাইকুমুস সালাম' কিংবা ওয়াও বিলুপ্ত করে 'আলাইকুমুস সালাম' বলে উত্তর প্রদান করে, তাহলে এটিও উত্তর হিসাবে যথেষ্ট হবে। এটাই বিশুদ্ধ মাজহাব। ইমাম শাফেয়ি রহ. তার 'কিতাবুল উম্মে' স্পষ্টভাবে এমনটিই উল্লেখ করেছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামায়ে কেরামও এমনটাই বলেছেন। তবে ইমাম আবু সাদ মুতাওয়াল্লি তার কিতাব 'আততাতিম্মা'য় সুদৃঢ়ভাবে উল্লেখ করেছেন যে, এটা জবাবের জন্য যথেষ্ট নয়। তার এই বক্তব্য দুর্বল অথবা ভুল। এটা কুরআন-সুন্নাহ এবং ইমাম শাফেয়ির বক্তব্যের পরিপন্থী।
কুরআনে রয়েছে, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ফেরেশতারা সালাম করলেন, ইবরাহিমও (উত্তরে) সালাম বললেন। ৮৩৫
এটা যদিও আমাদের পূর্বের শরিয়তের বিধান, কিন্তু আমাদের শরিয়ত একে অনুমোদন করেছে। হজরত আবু হুরায়রা রাদি. এর ঐ হাদিস, যা আমরা ইতিপূর্বে ফেরেশতা-কর্তৃক আদমকে উত্তর প্রদানের আলোচনায় উল্লেখ করেছি। কেননা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে জানিয়েছেন: আল্লাহ তাআলা বলেছেন, এটি তোমার এবং তোমার সন্তানদের অভিবাদন। ৮৩৬ আর এই উম্মতও তার সন্তানাদির অন্তর্ভুক্ত।
আমাদের মাজহাবের ইমামগণ এ ব্যাপারে একমত যে, যদি উত্তরে শুধুমাত্র 'আলাইকুম' বলে তাহলে সেটি উত্তর হিসাবে বিবেচিত হবে না। আর যদি ওয়াওসহ 'ওয়ালাইকুম' বলে তাহলে হবে কিনা? এ ক্ষেত্রে আমাদের ইমামগণের দুটি মত রয়েছে। যদি সূচনাকারী 'সালামুন আলাইকুম' অথবা 'আসসালামু আলাইকুম' বলে সালাম দেয় তাহলে উত্তরদাতার জন্য উভয় সুরতেই 'সালামু আলাইকুম' বলা উচিত। 'আসালামু আলাইকুম'ও বলতে পারবে। কারণ, আল্লাহর ইরশাদ রয়েছে:
قَالُوا سَلْمًا قَالَ سَلْمٌ.
অর্থ: তারা তাকে সালাম বললেন। ইবরাহিমও (তদুত্তরে) সালাম বললেন। ৮৩৭
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক তিনবার সালাম প্রদান বিষয়ক বিশুদ্ধ বর্ণনার মর্মার্থ প্রসঙ্গে
(৬০৯) হজরত আনাস রাদি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
أَنَّهُ كَانَ إِذَا تَكَلَّمَ بِكَلِمَةٍ أَعَادَهَا ثَلَاثًا، حَتَّى تُفْهَمَ عَنْهُ، وَإِذَا أَتَى عَلَى قَوْمٍ فَسَلَّمَ عَلَيْهِمْ سَلَّمَ عَلَيْهِمْ ثَلَاثًا.
অর্থ: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো (গুরুত্বপূর্ণ) কথা বলতেন, তখন তা বুঝে নেয়ার জন্য তিনবার বলতেন। আর যখন তিনি কোনো গোত্রের নিকট এসে সালাম দিতেন, তাদের প্রতি তিনবার সালাম দিতেন। ৮৩৮
আমি বলি: এটা তখন, যখন উপস্থিতি বেশি হয়।
সালাম ও উত্তরের আওয়াজ যেমন হতে হবে এবং এক্ষেত্রে মুস্তাহাব পদ্ধতি
যে পরিমাণ উচ্চ আওয়াজে সালাম প্রদান করলে সালাম দাতা সুন্নাত পদ্ধতিতে সালাম আদায়কারী হবে: আওয়াজ এতটা উঁচু করবে যে, সালাম গ্রহীতা সালামের শব্দ শুনতে পাবে। সে যদি না শোনে তাহলে সালামপ্রদানকারী হিসাবে বিবেচিত হবে না এবং উক্ত সালামের উত্তর দেয়াও আবশ্যক হবে না।
অনুরূপভাবে সালামের উত্তর 'সালাম দাতা স্পষ্টভাবে শুনতে পায় পরিমাণ আওয়াজে' দিলে ফরজ আদায় হবে। ৮৩৯ অতএব, সালাম দাতা যদি না শোনে তাহলে উত্তরদাতার জিম্মা থেকে ফরজ আদায় হবে না। ইমাম মুতাওয়াল্লিসহ অন্যরা এমনই বলেছেন।
ইমাম নববি রহ. বলেন, সালাম গ্রহীতা সালামের আওয়াজ ভালোভাবে শুনতে পায় এমন উচ্চস্বরে সালাম দেয়া মুস্তাহাব। যদি এক্ষেত্রে সংশয় দেখা দেয়, তাহলে পুনরায় (প্রয়োজন মতো) উচ্চ আওয়াজে সালাম দিবে। সতর্ক থাকবে এবং স্পষ্টভাবে সালাম দিবে। পক্ষান্তরে ঘুমন্ত মানুষের পাশে থাকা জাগ্রত ব্যক্তিকে সালাম দেয়ার ক্ষেত্রে এমন ক্ষীণ আওয়াজে সালাম দেয়া সুন্নাত, যাতে জাগ্রতরা শুনতে পায় আবার ঘুমন্তরাও সজাগ না হয়ে যায়।
(৬১০) হজরত মিকদাদ রাদি. থেকে বর্ণিত দীর্ঘ হাদিস আছে, সেখানে তিনি বলেন-
كُنَّا نَرْفَعُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَصِيبَهُ مِنَ اللَّبَنِ، فَيَجِيءُ مِنَ اللَّيْلِ فَيُسَلِّمُ تَسْلِيمًا لَا يُوْقِظُ نَائِمًا، وَيُسْمِعُ الْيَقْظَانَ، وَجَعَلَ لَا يَجِيْتُنِي النَّوْمُ، وَأَمَّا صَاحِبَايَ فَنَامَا، وَلَمْ يَصْنَعَا مَا صَنَعْتُ، قَالَ : فَجَاءَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَسَلَّمَ كَمَا كَانَ يُسَلِّمُ.
অর্থ: আমরা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য (দোহনকৃত দুধের) তার অংশ তুলে রাখতাম। অতঃপর তিনি রাতে আসতেন এবং এমনভাবে সালাম দিতেন যাতে ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত না হয়, আর জাগ্রত ব্যক্তি শুনতে পায়। একদিন আমার ঘুম আসছিল না। আমার সঙ্গীদ্বয় তো ঘুমাচ্ছিলেন। এরপর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে যেভাবে সালাম দিতেন সেভাবেই সালাম দিলেন। ৮৪০
তাৎক্ষণিক সালামের উত্তর দেয়া শর্ত
ইমাম আবু মুহাম্মাদ কাজি হুসাইন এবং ইমাম আবুল হাসান ওয়াহিদিসহ অন্যরা বলেন, সালামের জওয়াব তাৎক্ষণিকভাবে দেয়া আবশ্যক। যদি উত্তর দিতে বিলম্ব করে তাহলে উক্ত উত্তর বিবেচিত হবে না। সে উত্তর না দেয়ার কারণে গুনাহগার হবে।
মুখে উচ্চারণ না করে হাত ইত্যাদি দ্বারা ইশারা করে সালাম দেয়া মাকরুহ
(৬১১) হজরত আমর বিন শুআইব রহ. হতে পর্যায়ক্রমে তার বাবা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا ، لَا تَشَبَّهُوْا بِالْيَهُودِ، وَلَا بِالنَّصَارَى ؛ فَإِنَّ تَسْلِيمَ الْيَهُودِ الْإِشَارَةُ بِالْأَصَابِعِ، وَتَسْلِيمَ النَّصَارَى الْإِشَارَةُ بِالْأَكُفَّ.
অর্থ: বিজাতির অনুকরণকারী ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়। তোমরা ইহুদি-নাসারাদের অনুকরণ কর না, কেননা ইহুদিরা আঙ্গুলের ইশারায় এবং নাসারাগণ হাতের ইশারায় সালাম দেয়। -ইমাম তিরমিজি বলেন, এর সনদ দুর্বল।
(৬১২) হজরত আসমা বিনতে ইয়েজিদ রাদি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ فِي الْمَسْجِدِ يَوْمًا، وَعُصْبَةٌ مِنَ النِّسَاءِ قُعُودُ، فَأَلْوَى بِيَدِهِ بِالتَّسْلِيمِ.
অর্থ: একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে গমন করেন, এমতাবস্থায় সেখানে একদল মহিলা উপবিষ্ট ছিলেন। অতঃপর তিনি হাত উচিয়ে তাদেরকে সালাম দিলেন।
ইমাম নববি রহ. বলেন, এ হাদিসটি এবিষয়ে গ্রহণযোগ্য যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই সাথে মুখে উচ্চারণ ও হাতের ইশারায় সালাম দিয়েছেন। এর দলিল হল, ইমাম আবু দাউদ এই হাদিস নকল করেছেন, সেখানে আছে: অতঃপর তিনি আমাদেরকে সালাম দিলেন।
সালামের বিধান
জ্ঞাতব্য, সালাম দেয়া সুন্নাতে কেফায়া, ওয়াজিব নয়। একাধিক ব্যক্তি হলে একজনের সালামই যথেষ্ট। তবে সবাইকে সালাম দেয়া উত্তম। আমাদের মাজহাবের আলেম ইমাম কাজি হুসাইন রহ. তার কিতাবুস সিয়ারে বলেন, আমাদের নিকট সালাম দেয়া ছাড়া আর কোনো সুন্নাতে কেফায়া নেই।
আমার মতে কাজি সাহেবের এই সীমিতকরণ প্রত্যাখ্যাত, কেননা আমাদের উলামায়ে কেরাম বলেছেন, হাঁচিদাতার উত্তরপ্রদান করাও সুন্নাতে কেফায়া। যেমনটা সামনে এর বিবরণ আসছে। আমাদের ঘরানার প্রায় সকলের ভাষ্যমতে প্রত্যেক পরিবারের জন্য কুরবানি করাও একটি সুন্নাতে কেফায়া। তাদের একজন সকলের তরফে আদায় করলে সকলের পক্ষ থেকে সুন্নাহ ও ইসলামের প্রতীক আদায় হয়ে যাবে।
বাকি রইল সালামের জবাব: সালাম গ্রহীতা একজন হলে জবাব দেয়া তার ওপরই আবশ্যক। আর একাধিক হলে প্রত্যেকের ওপর ফরজে কেফায়া।
(৬১৩) হজরত আলি রাদি. হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
يُجْزِئُ عَنِ الْجَمَاعَةِ إِذَا مَرُّوا أَنْ يُسَلَّمَ أَحَدُهُمْ، وَيُجْزِئُ عَنِ الْجُلُوسِ أَنْ يَرُدَّ أَحَدُهُمْ.
অর্থ: অতিক্রমকারী একদলের পক্ষ থেকে একজনের সালাম সকলের জন্য যথেষ্ট। এমনিভাবে উপবিষ্টদের একজনের উত্তর সকলের জন্য যথেষ্ট। ৮৪৪
(৬১৪) হজরত জায়েদ বিন আসলাম রাদি. হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِذَا سَلَّمَ وَاحِدٌ مِنَ القَوْمِ أَجْزَأَ عَنْهُمْ.
অর্থ: একদল লোকের মধ্য থেকে একজন সালাম দিলে তা সকলের জন্য যথেষ্ট। ৮৪৫ - ইমাম নববি বলেন, হাদিসটি মুরসাল, তবে সনদ সহিহ।
আড়াল হতে অথবা পত্র কিংবা দূতের মারফতে সালাম পাঠালে উত্তর দেয়া ওয়াজিব
ইমাম আবু সাঈদ মুতাওয়াল্লিসহ অন্যরা বলেন, কোনো ব্যক্তি যদি কাউকে আড়াল থেকে ডেকে বলে, "হে অমুক! আসসালামু আলাইকা” অথবা চিঠি লিখল এবং তাতে "হে অমুক! আসসালামু আলাইকা” লিখল অথবা "অমুকের ওপর সালাম”। অথবা দূত পাঠিয়ে বলল, "অমুককে আমার সালাম জানাবে”। অতঃপর পত্র বা দূত উক্ত ব্যক্তির কাছে পৌঁছলে সালামের জবাব দেয়া তার ওপর ওয়াজিব। ওয়াহিদিসহ অন্যান্যরা বলেন, চিঠি প্রাপকের কাছে সালাম পৌঁছলে জবাব দেয়া তার ওপর ওয়াজিব।
(৬১৫) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন-
هَذَا جِبْرِيلُ يَقْرَأُ عَلَيْكِ السَّلَامَ. فَقَالَتْ: وَعَلَيْهِ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ.
অর্থ: এই যে জিবরিল তোমাকে সালাম জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি উত্তরে বললাম: ওয়া আলাইহিস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। ৮৪৬-অনুপস্থিত ব্যক্তিকে সালাম প্রেরণ করা মুস্তাহাব।
সালাম অবহিতকারী ও প্রেরণকারীর উদ্দেশ্যে সালামের উত্তর দেয়া মুস্তাহাব
যখন কোনো ব্যক্তি কারো মাধ্যমে সালাম পাঠায় এবং দূত গিয়ে বলে, অমুক আপনাকে সালাম জানিয়েছেন। তাহলে তৎক্ষণাৎ সালাম গ্রহীতার ওপর উত্তর দেয়া ওয়াজিব, সালামের বাহককেও শরিক করা মুস্তাহাব। অর্থাৎ সালাম গ্রহীতা এভাবে উত্তর দিবে: وَعَلَيْكَ وَعَلَيْهِ السَّلَامُ )ওয়া আলাইকা ওয়া আলাইহিস সালাম: তোমার ওপর এবং তার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক)।
(৬১৬) হজরত গালিব কাত্তানের সূত্রে এক ব্যক্তি থেকে বর্ণিত। তিনি তার পিতার সূত্রে দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন-
بَعَثَنِي أَبِي إِلَى رَسُولِ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ : ائْتِهِ فَأَقْرِتْهُ السَّلَامَ. قَالَ: فَأَتَيْتُهُ فَقُلْتُ: إِنَّ أَبِي يُقْرِئُكَ السَّلَامَ. فَقَالَ: عَلَيْكَ وَعَلَى أَبِيْكَ السَّلَامُ.
অর্থ: আমাকে আমার পিতা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পাঠালেন। তিনি বললেন, তার নিকট গিয়ে আমার সালাম জানাবে। আমি তার নিকট গিয়ে বললাম, আমার পিতা আপনাকে সালাম দিয়েছেন। নবিজি উত্তর দিয়েছেন: عَلَيْكَ وَعَلَى أَبِيْكَ السَّلَامُ )ওয়া আলাইকা ওয়া আলা আবিকাস সালাম: তোমার ওপর এবং তোমার পিতার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক)। ৮৪৭
ইমাম নববি বলেন, এটা যদিও অজ্ঞাত ব্যক্তির বর্ণনা, কিন্তু প্রায় সকল আহলে ইলমের নিকট ফজিলত-সংক্রান্ত দুর্বল হাদিস গ্রহণযোগ্য।
টিকাঃ
সুনানে তিরমিজি: ২৬৯৫।
সুনানে তিরমিজি: ২৬৯৭, সুনানে আবু দাউদ: ৫২০৪, মুসনাদে আহমাদ ৬/৪৫৭-৪৫৮, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৭০১, মুসনাদে দারিমি: ২৬৪০, আলআদাব: ১৪০৭।
সুনানে আবু দাউদ: ৫২০৪।
৮৩৪. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ২৩৫।
৮৩৫. সুরা জারিয়াত: ২৫।
৮৩৬. সহিহ বুখারি: ৩৩২৬, সহিহ মুসলিম: ২৮৪১।
৮৩৭. সুরা জারিয়াত: ২৪-২৫।
৮৩৮. সহিহ বুখারি: ৯৫, সুনানে তিরমিজি: ২৭২৪।
৮৩৯. আমাদের কাছে যেটা ওয়াজিব, শাফেয়িদের কাছে সেটা ফরজ।
৮৪০. সহিহ মুসলিম: ২০৫৫।
৮৩২. মুসনাদে দারেমি: ২৬৮২, সুনানে আবু দাউদ: ৫১৯৫, সুনানে তিরমিজি: ২৬৮৯, আমাল: ৩৩৭, নাসাঈ।
৮৩৩. সুনানে আবু দাউদ: ৫১৯৬।
৮৪৪. সুনানে আবু দাউদ: ৫২১০।
৮৪৫. মুয়াত্তা মালেক ২/৯৫৯।
৮৪৬. সহিহ বুখারি: ৬২১৯, সহিহ মুসলিম: ২৪৪৭, সুনানে তিরমিজি: ৩৮৮১, মুসনাদে আহমাদ ৬/৫৫, সুনানে আবু দাউদ: ৫২৩২, সুনানে নাসাঈ ৭/৬৯, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৬৯৬, আমাল: ৩৭৫, নাসাঈ, আমাল: ২৩৯, ইবনুস সুন্নি।
৮৪৭. সুনানে আবু দাউদ: ৫২৩১।
📄 যাদেরকে সালাম দেয়া যাবে এবং যাদের যাবে না
বধির ও বোবাদের সালাম প্রদান এবং তাদের সালামের উত্তরপ্রদানের পদ্ধতি
ইমাম মুতাওয়াল্লি বলেন, কোনো বধিরকে সালাম করলে সে যদি শুনতে না পায়, তাহলে সামর্থনুযায়ী উচ্চকণ্ঠে সালাম দিবে এবং পাশাপাশি হাত দিয়েও ইশারা করবে, যাতে তাকে বুঝানোর এবং উত্তর প্রাপ্তির উপযুক্ত হয়। অতএব, উচ্চারণ ও হাতের ইশারা উভয়ের সমন্বয়ে সালাম না দিলে সে উত্তর প্রাপ্তির উপযুক্ত হবে না।
অনুরূপভাবে কোনো বধির সুস্থ মানুষকে সালাম দিলে তার জবাবও মুখে উচ্চারণ ও ইশারা করে দিতে হবে। যাতে তাকে বুঝানো সম্ভব হয় এবং উত্তর প্রদানের আবশ্যকতা থেকে দায়মুক্ত হয়।
যদি বোবা ব্যক্তিকে সালাম করে এবং সে ইশারায় সালামের জবাব দেয়, তাহলে তার ফরজ আদায় হয়ে যাবে। কেননা বোবা ব্যক্তির ইশারা বলার স্থলাভিষিক্ত। এমনিভাবে বোবা ব্যক্তি তাকে ইশারায় সালাম করলে সে জবাব প্রাপ্তির উপযুক্ত।
নাবালিগের সালাম এবং তার প্রতি বালিগের মালাম
ইমাম মুতাওয়াল্লি বলেন, অপ্রাপ্ত বয়স্ক কাউকে সালাম দিলে তার জন্য জবাব দেয়া আবশ্যক নয়, কেননা নাবালিগ বাচ্চা ফরজের ভারার্পিত নয়। এটাই বিশুদ্ধ। তবে জবাব দেয়া আদব ও মুস্তাহাবের অন্তর্ভুক্ত।
কাজি হুসাইন এবং তার ছাত্র মুতাওয়াল্লি বলেন, যদি অপ্রাপ্তবয়স্ক বাচ্চা প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে সালাম দেয়, তাহলে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ওপর তার জবাব দেয়া ওয়াজিব হবে কিনা? এক্ষেত্রে দুটি অবস্থা হতে পারে, যা নাবালিগের ইসলাম শুদ্ধ হওয়া না হওয়ার ওপর নির্ভরশীল। যদি বলি, তার ইসলাম শুদ্ধ তাহলে তার সালামের বিধান প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির সালামের নামান্তর। সুতরাং তার সালামের জবাব দেয়া ওয়াজিব। আর যদি বলি: নাবালিগের ইসলাম সহিহ নয়, তাহলে সেক্ষেত্রে তার জবাব দেয়া ওয়াজিব নয়, তবে মুস্তাহাব।
ইমাম নববি রহ. বলেন, আমার নিকট উভয় অবস্থার মাঝে বিশুদ্ধ হল: তার সালামের জবাব দেয়া ওয়াজিব। কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন: তোমাদেরকে কেউ যদি সালাম করে তাহলে তোমরাও তাকে সালাম বল; তার চেয়ে উৎকৃষ্ট অথবা তার মতই ফিরিয়ে বল। ৪৮৮ আর তাদের দুজনের বক্তব্য ভুলের ওপর ভিত্তিশীল, যেমনটা ইমাম শাশি বলেছেন।
যদি প্রাপ্তবয়স্ক একদল মানুষকে সালাম দেয় এবং তাদের কোনো নাবালিগও থাকে, আর সে একাই সালামের উত্তর দেয়, তাহলে কি বাকিদের থেকে উত্তরের অপরিহার্যতা আদায় হয়ে যাবে? এক্ষেত্রেও দুটি অবস্থা: বিশুদ্ধ হচ্ছে, যা কাজি হুসাইন এবং তার ছাত্র মুতাওয়াল্লি বলেছেন, আদায় হবে না, কেননা নাবালিগ ফরজের ভারার্পিত নয়। আর সালামের উত্তর দেয়া ফরজ, তার জবাব দ্বারা আদায় হবে না। যেমনিভাবে নাবালিগ বাচ্চা জানাযার নামাজ পড়লে অন্যদের থেকে ফরজ আদায় হয় না। আর দ্বিতীয় অবস্থা হল: আদায় হয়ে যাবে, যেমনটা পুরুষের পক্ষ থেকে নাবালিগের আজান সহিহ হয়ে যায় এবং তাদের পক্ষে পুনরায় আজান দিতে হয় না। (এটা মুস্তাজহিরি কিতাবের রচয়িতা ইমাম আবু বকর শাশির মত)
ইমাম নববি রহ. বলেন, নাবালিগকর্তৃক জানাযার নামাজ: অন্যদের থেকে জানাযার নামাজের আবশ্যকতা আদায় হয়ে যাবে কিনা এ বিষয়ে আমাদের মাজহাবে প্রসিদ্ধ দুটি মতামত রয়েছে। তন্মধ্য থেকে বিশুদ্ধতম মত হল, সকলের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হয়ে যাবে। এটাই ইমাম শাফেয়ির বক্তব্য। ৪৯
সালাম বিনিময় করতঃ পৃথক হয়ে যাওয়ার পর আবার সক্ষাৎ হলে পুনরায় সালাম দেয়া সুন্নাত
যখন কেউ কাউকে সালাম প্রদান করে, অতঃপর পুনরায় তার সাথে সাক্ষাৎ হয়, তবুও তাকে দ্বিতীয়বার, তৃতীয়বার কিংবা এরচে અધિકবার সালাম করা সুন্নাত। আমাদের উলামায়ে কেরাম এর ওপর একমত, দলিল নিম্নোক্ত:
(৬১৭) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে নামাজ বিনষ্টকারী ব্যক্তির হাদিসে বর্ণিত আছে-
إِنَّهُ جَاءَ فَصَلَّى، ثُمَّ جَاءَ إِلَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ، فَرَدَّ عَلَيْهِ السَّلَامَ، وَقَالَ: ارْجِعْ فَصَلَّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلَّ، فَرَجَعَ فَصَلَّى، ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، حَتَّى فَعَلَ ذَلِكَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ.
অর্থ: জনৈক ব্যক্তি এসে (মসজিদে) নামাজ আদায় করলেন। অতঃপর তিনি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে সালাম দিলেন। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, পুনরায় গিয়ে সালাত আদায় কর, কেননা তুমি তো সালাত আদায় করনি। তিনি ফিরে গিয়ে (পূর্বের ন্যায়) সালাত আদায় করলেন। অতঃপর এসে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম করলেন। তিনি তিনবার এমনটি করলেন। ৮৫০
(৬১৮) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নকল করেন-
إِذَا لَقِيَ أَحَدُكُمْ أَخَاهُ فَلْيُسَلِّمْ عَلَيْهِ، فَإِنْ حَالَتْ بَيْنَهُمَا شَجَرَةٌ أَوْ جِدَارُ أَوْ حَجَرٌ ثُمَّ لَقِيَهُ فَلْيُسَلِّمْ عَلَيْهِ.
অর্থ: যখন তোমাদের একজন অপর মুমিন ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করবে, সে যেন তাকে সালাম দেয়। অতঃপর দুজনের মাঝে যদি গাছ, দেয়াল বা পাথর আড়াল হয়ে দাঁড়ায় এবং পুনরায় সাক্ষাৎ হয়, তবুও তাকে সালাম দেয়। ৮৫১
(৬১৯) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
كَانَ أَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَمَاشَوْنَ، فَإِذَا اسْتَقْبَلَتْهُمْ شَجَرَةٌ أَوْ أَكَمَّةٌ فَتَفَرَّقُوْا يَمِينًا وَشِمَالاً ثُمَّ الْتَقُوْا مِنْ وَرَائِهَا، سَلَّمَ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ.
অর্থ: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিগণ রাস্তায় চলার পথে সামনে কোনো গাছ বা টিলা এসে পড়লে তারা ডানে-বামে আলাদা হয়ে যেতেন। অতঃপর মিলিত হলে একে অপরকে সালাম করতেন। ৮৫২
উভয়ের একসঙ্গে অথবা একটু আগপিছ হওয়া প্রসঙ্গে
যখন দুই ব্যক্তির সাক্ষাৎ হয় এবং প্রত্যেকেই একে অপরকে একই সাথে বা আগে-পরে করে সালাম করে ফেলে, তাহলে কাজি হুসাইন এবং আবু সাঈদ মুতাওয়াল্লি বলেন, উভয়ই সালাম দাতা গণ্য হবে। ফলে প্রত্যেককে অপরের সালামের জবাব দেয়া ওয়াজিব। শাশি রহ. বলেন, উক্ত বক্তব্যে আপত্তি আছে। কেননা এমনটা জবাবের জন্য যথেষ্ট। এভাবে যে, একজনের সালাম আরেকজনের পরে হলে জবাব হয়ে যাবে, আর যদি একই সঙ্গে হয় তাহলে হবে না। শাশির বক্তব্যই বিশুদ্ধ। ৮৫৩
উত্তরের শব্দে সালাম দেয়ার বিধান
কেউ যদি কারো সাথে সাক্ষাতের পরে "ওয়া আলাইকুমুস সালাম” বলে সালাম দেয়, তাহলে ইমাম মুতাওয়াল্লি বলেন, এটা সালাম হিসাবে বিবেচিত হবে না। অতএব, সে জবাব পাওয়ারও উপযুক্ত হবে না। কেননা সালামের জন্য এই শব্দ অনুপযুক্ত।
ইমাম নববি রহ. বলেন, তবে যদি 'ওয়াও' বাদ দিয়ে "আলাইকা” বা "আলাইকুমুস সালাম" বলে- তাহলে আবুল হাসান ওয়াহিদি দৃঢ়ভাবে একে সালাম বিবেচিত করেছেন। সম্বোধিত ব্যক্তিকে জবাব দেয়া আবশ্যক, যদিও সে প্রচলিত শব্দ পরিবর্তন করেছে। এটাই দ্ব্যর্থহীন, এটাই ইমামুল হারামাইনের মাজহাব। অতএব, এতে জবাব ওয়াজিব হবে, কেননা একেও সালাম বলা হয়। এও বলা সম্ভব যে, এটি সালাম হওয়ার ব্যাপারে দুটি বক্তব্য বিদ্যমান, যেমনটা নামাজ থেকে ফারেগ হতে কেউ এমন বললে তার ব্যাপারে আমাদের আলেমদের দুটি বক্তব্য বিদ্যমান: আলাইকুমুস সালাম দ্বার নামাজ থেকে বের হতে পারবে কিনা? বিশুদ্ধ মতে পারবে। এও বলতে পারবে, এই ব্যক্তি কোনো অবস্থায়ই এমন সালামের জবাব প্রাপ্তির উপযুক্ত না। দলিল:
(৬২০) হজরত আবু জুরাই হুজাইমি রাদি. থেকে বর্ণিত (তার নাম জাবের বিন সুলাইম। কেউ বলেছেন, সুলাইম বিন জাবের) তিনি বলেন-
أَتَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ: عَلَيْكَ السَّلَامُ يَا رَسُولَ اللَّهِ . قَالَ: لَا تَقُلْ : عَلَيْكَ السَّلَامُ ؛ فَإِنَّ عَلَيْكَ السَّلَامُ تَحِيَّةُ الْمَوْتَى. السَّلَامُ قَبْلَ الْكَلَامِ.
অর্থ: আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললাম: আলাইকাস সালামু ইয়া রাসুলাল্লাহ। তিনি বললেন: আলাইকাস সালাম বল না, কেননা আলাইকাস সালাম দ্বারা মৃত ব্যক্তিকে সালাম দেয়া হয়। ৮৫৪ -ইমাম তিরমিজি একে হাসান সহিহ বলেছেন।
ইমাম নববি রহ. বলেন, হতে পারে উক্ত হাদিসটি উত্তম ও পূর্ণাঙ্গতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, এটি যে সালামই না এমন উদ্দেশ্য নয়। আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন। অবশ্য ইমাম গাজালি রহ. "ইহয়াউ উলুমিদ্দিন” কিতাবে (২/২০৫) উল্লেখ করেছেন যে, এই হাদিসের কারণে "আলাইকুমুস সালাম” শব্দ দ্বারা সালাম দেয়া মাকরুহ। তবে এ ব্যাপারে পছন্দনীয় মত হল, যদিও এমন শব্দে সালাম দেয়া মাকরুহ, কিন্তু দিয়ে ফেললে জবাব দেয়া ওয়াজিব। কেননা এটাও সালাম।
কথার আগে সালাম দেয়া সুন্নাত
কথা শুরু করার আগে সালাম দেয়া সুন্নাত। সহিহ হাদিস এবং পূর্ববর্তী- পরবর্তীদের আমলও এরকম হওয়ার বিষয়টি সুপ্রসিদ্ধ। দলিলের বিবেচনায় এটাই নির্ভরযোগ্য।
(৬২১) হজরত জাবের রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
অর্থ: কথার আগে সালাম। -এই হাদিস দুর্বল। ৮৫৫ ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি মুনকার।
সালামের উত্তর দেয়ার তুলনায় আগে সালাম করা উত্তম
রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহিহ হাদিসে বর্ণিত- "তাদের দুজনের মাঝে যে আগে সালাম করে সে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।” ৮৫৬ কাজেই পরস্পর দুজন মিলিত হলে প্রত্যেকের জন্য সালাম প্রদানে ব্রতী থাকা একান্ত কাম্য।
(৬২২) হজরত আবু উমামা রাদি. থেকে উত্তম সনদে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِاللَّهِ، مَنْ بَدَأَهُمْ بِالسَّلَامِ
অর্থ: আল্লাহ তাআলার কাছে সর্বোত্তম সেই, যে সর্বাগ্রে সালাম প্রদান করে। ৮৫৭-সুনানে তিরমিজির বর্ণনায় হজরত আবু উমামা থেকেই আছে-
الرَّجُلَانِ يَلْتَقِيَانِ أَيُّهُمَا يَبْدَأُ بِالسَّلَامِ ؟ فَقَالَ: أَوْلَاهُمَا بِاللَّهِ تَعَالَى.
অর্থ: জিজ্ঞাসা করা হল; হে আল্লাহর রাসুল, দুই ব্যক্তির পরস্পর সাক্ষাত হলে কে আগে সালাম দিবে? তিনি বললেন: তাদের মাঝে আল্লাহ তাআলার অধিক নিকটবর্তী ব্যক্তি। ৮৫৮-ইমাম তিরমিজি একে হাসান বলেছেন।
টিকাঃ
৮৫৫. সুনানে তিরমিজি: ২৬৯৯।
৮৫৬. সহিহ বুখারি: ৬০৭৭, সহিহ মুসলিম: ২৫৬০।
৮৫৭. সুনানে আবু দাউদ: ৫১৯৭, সুনানে তিরমিজি: ২৬৯৫, মুসনাদে আহমাদ ৫/২৫৪।
৮৫৮. সুনানে তিরমিজি: ২৬৯৪
৮৪৯. হানাফি মাজহাবের বিশুদ্ধ মত হল, নাবালেগ বাচ্চার (পার্থক্যকারী হোক অথবা না হোক) ইমামিত জায়েজ নয়। ফরজ নামাজের ইমামিত হোক কিংবা নফল নামাজের। দেখুন: ফাতহুল কাদির ১/৩১০।
৮৫০. সহিহ বুখারি: ৭৫৭, সহিহ মুসলিম: ৩৯৭, সুনানে আবু দাউদ: ৮৫৬, সুনানে তিরমিজি: ৩০৩, সুনানে নাসাঈ ২/১২৫, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১০৬১।
৮৫১. সুনানে আবু দাউদ: ৫২০০।
৮৫২. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ২৪৫।
৮৫৩. আমাদের মাজহাবও এরকম।
৮৫৪. সুনানে আবু দাউদ: ৪০৮৪, সুনানে তিরমিজি: ২৭২২, আমাল: ৩১৭-৩২০, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ ৫/৬৩, হাকেম ৪/১৮৬।
৪৮৮. সুরা নিসা: ৮৬।
📄 প্রবেশাধিকার ও অনুমতি চাওয়া
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا.
অর্থ: হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য গৃহে প্রবেশ কর না, যে পর্যন্ত না পরিচয় না কর এবং গৃহবাসীকে সালাম না কর। ৮৯২-আরো ইরশাদ করেন-
وَإِذَا بَلَغَ الْأَطْفَالُ مِنْكُمُ الْحُلُمَ فَلْيَسْتَأْذِنُوْا كَمَا اسْتَأْذَنَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ.
অর্থ: যখন তোমাদের বালকেরা বয়োপ্রাপ্ত হয়, তারাও যেন পূর্ববর্তীদের ন্যায় অনুমতি চায়। ৮৯৩
(৬৪০) হজরত আবু মুসা আশআরি রাদি. হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
الِاسْتِنْذَانُ ثَلَاثُ، فَإِنْ أُذِنَ لَكَ وَإِلَّا فَارْجِعْ.
অর্থ: তিনবার অনুমতি প্রার্থনা করবে। অতঃপর তোমাকে প্রবেশাধিকার দেয়া হলে প্রবেশ করবে, অন্যথায় ফিরে যাবে। ৮৯৪
(৬৪১) হজরত সাহল বিন সাদ রাদি. হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِنَّمَا جُعِلَ الِاسْتِنْذَانُ مِنْ أَجْلِ الْبَصَرِ.
অর্থ: চোখের খেয়ানতের জন্যই অনুমতি গ্রহণের বিধান আরোপিত হয়েছে। ৮৯৫
অনুমতি প্রার্থনার সুন্নাত পদ্ধতি হল, অনুমতিপ্রার্থী প্রথমে সালাম দিবে। অতঃপর দরজার কাছে দাড়িয়ে এমনভাবে অনুমতি প্রার্থনা করবে, যাতে ভিতরে যারা আছে তাদের প্রতি দৃষ্টি না পড়ে। অতঃপর বলবে, আসসালামু আলাইকুম, আমি কি প্রবেশ করতে পারি? যদি কেউ উত্তর না দেয় তাহলে দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার এরূপ করবে। তারপরও কেউ সাড়া না দিলে প্রত্যাগমন করবে।
(৬৪২) প্রসিদ্ধ তাবেঈ হজরত রিবয়ি বিন হিরাশ রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত। তিনি বলেন, বনি আমিরের এক ব্যক্তি আমাকে বলেছেন-
أَنَّهُ اسْتَأْذَنَ عَلَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ فِي بَيْتٍ، فَقَالَ: أَلِجُ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِخَادِمِهِ: اخْرُجْ إِلَى هَذَا فَعَلَّمْهُ الِاسْتِئَذَانَ فَقُلْ لَهُ: قُلِ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ، أَأَدْخُلُ؟ فَسَمِعَهُ الرَّجُلُ فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ، أَ أَدْخُلُ؟ فَأَذِنَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَدَخَلَ.
অর্থ: তিনি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অনুমতি কামনা করেন, এমতাবস্থায় নবিজি ঘরে ছিলেন। তিনি বলেছেন, আমি কি প্রবেশ করতে পারি? নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার খাদেমকে বললেন, তুমি তার নিকট গিয়ে তাকে অনুমতি চাওয়ার নিয়ম শিখিয়ে দাও। তুমি তাকে বলবে: এভাবে বল, আসসালামু আলাইকুম, আমি কি ভিতরে আসতে পারি? লোকটি এ কথা শুনে বলল, আসসালামু আলাইকুম, আমি কি ভিতরে আসতে পারি? অতঃপর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দিলে তিনি ভিতরে প্রবেশ করেন। ৮৯৬
(৬৪৩) হজরত কালাদাহ বিন হাম্বল রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন-
أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَدَخَلْتُ عَلَيْهِ وَلَمْ أُسَلِّمْ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ارْجِعْ فَقُلِ : السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَأَدْخُلُ؟
অর্থ: আমি সালাম না দিয়েই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট প্রবেশ করি। তিনি বললেন, তুমি ফিরে যাও এবং বল- আসসালামু আলাইকুম, আমি কি ভিতরে আসতে পারি?। ৮৯৭ - ইমাম তিরমিজি একে হাসান বলেছেন।
উপরের বর্ণনানুসারে অনুমতি চাওয়ার পূর্বে সালাম করাই বিশুদ্ধ নিয়ম। ইমাম মাওয়ারদি এক্ষেত্রে তিনটি পদ্ধতি উল্লেখ করেছেন: এক. পূর্বের আলোচিত পদ্ধতি, অর্থাৎ আগে সালাম দিবে তারপর অনুমতি প্রার্থনা করবে। দুই. অনুমতি প্রার্থনার পরে সালাম দিবে। তিন. এখতিয়ার। যদি প্রবেশের পূর্বে বাড়িওয়ালার ওপর অনুমতিপ্রার্থীর দৃষ্টি পড়ে যায়, তাহলে সালাম আগে দিবে, অন্যথায় আগে অনুমতি চাইবে। ৮৯৮
তিনবার অনুমতি চাওয়ার পরেও যদি অনুমতিপ্রাপ্ত না হয় এবং সে ধারণা করে যে, ভিতর থেকে শুনতে পায়নি তাহলে কি এর বেশি অনুমতি চাইবে? ইমাম আবু বকর ইবনুল আরাবি মালেকি রহ. এ বিষয়ে তিনটি মত ব্যক্ত করেছেন: এক. পুনরায় অনুমতি প্রার্থনা করবে। দুই. তৃতীয়বারের পর আর অনুমতি প্রার্থনা করবে না। তিন. পূর্বের শব্দযোগে হলে অনুমতি প্রার্থনা করবে না, ভিন্ন শব্দে হলে চাইবে। অতঃপর তিনি বলেন, কোনো অবস্থাতেই তিনবারের পরে আর অনুমতি না চাওয়া বিশুদ্ধ। ইমাম নববি রহ. বলেন, তিনি যেটিকে বিশুদ্ধ আখ্যা দিয়েছেন, এটাই সুন্নাত সম্মত।
অনুমতি চাওয়ার সময় পূর্ণ পরিচয় দেয়া উচিত
সালাম কিংবা দরজায় করাঘাত করে অনুমতি চাওয়ার পরে যদি ভিতর থেকে বলা হয়: তুমি কে? তাহলে বলবে: আমি অমুকের পুত্র অমুক বা আমি অমুক কিংবা অমুক যার পরিচয় এমন। এ জাতীয় আত্মপরিচয়মূলক কিছু বলবে, যার দ্বারা পূর্ণ পরিচিতি লাভ করা যায়। তবে আমি, খাদেম, একজন খাদেম, আপনার একজন ভক্ত বা এজাতীয় অস্পষ্ট পরিচয়ের ওপর ক্ষ্যান্ত করা অপছন্দনীয়।
(৬৪৪) মেরাজের প্রসিদ্ধ হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
ثُمَّ صَعِدَ بِيْ جِبْرِيلُ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَاسْتَفْتَحَ، فَقِيلَ : مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ، قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ ، ثُمَّ صَعِدَ بِي إِلَى السَّمَاءِ الثَّانِيَةِ وَالثَّالِثَةِ وَسَائِرِهِنَّ، وَيُقَالُ فِي بَابِ كُلِّ سَمَاءٍ : مَنْ هَذَا؟ فَيَقُوْلُ: جِبْرِيلُ.
অর্থ: অতঃপর জিবরিল আমাকে নিয়ে দুনিয়ার আকাশে গমন করেন এবং দরজা খুলতে বলেন। জিজ্ঞাসা করা হল: কে আপনি? তিনি বললেন: জিবরিল। আপনার সাথে কে? মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। অতঃপর আমাকে নিয়ে পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয়সহ সব আকাশে আরোহন করলেন এবং প্রত্যেক আকাশেই জিজ্ঞাসা করা হল তুমি কে? উত্তরে তিনি বলতেন: জিবরিল। ৮৯৯
(৬৪৫) হজরত আবু মুসা আশআরি রাদি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
لَمَّا جَلَسَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى بِثْرِ الْبُسْتَانِ وَجَاءَ أَبُو بَكْرٍ فَاسْتَأْذَنَ، فَقَالَ: مَنْ؟ قَالَ: أَبُو بَكْرٍ، ثُمَّ جَاءَ عُمَرَ فَاسْتَأْذَنَ، فَقَالَ: مَنْ: قَالَ عُمَرَ، ثُمَّ عُثْمَانَ كَذَلِكَ
অর্থ: একবার নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আরিস কূপের কিনারায় উপবিষ্ট হলেন। ঘটনাক্রমে আবু বকর রাদি. এসে অনুমতি কামনা করেন। নবিজি জিজ্ঞাসা করলেন: কে? তিনি বললেন, আবু বকর। অতঃপর উমরও এসে অনুমতি চাইলে তিনি বললেন: কে? বলা হল, উমর। অনুরূপভাবে উসমান এসে অনুমতি চাইলেন।৯০০
(৬৪৬) হজরত জাবের রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَدَقَقْتُ الْبَابَ، فَقَالَ: مَنْ ذَا؟ فَقُلْتُ : أَنَا. فَقَالَ: أَنَا أَنَا. كَأَنَّهُ كَرِهَهَا.
অর্থ: আমি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে দরজায় করাঘাত করলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কে? বললাম: আমি। তখন নবিজি আমি আমি বলতে লাগলেন, যেন তিনি এ কথা অপছন্দ করেছেন। ৯০১
যে সম্মানসূচক পরিচয় দেয়া ছাড়া অনুমতি প্রার্থীকে চেনা যায় না তাতে কোনো সমস্যা নেই
সম্বোধিত ব্যক্তি যদি চিনতে না পারে তাহলে অনুমতিপ্রার্থীর জন্য নিজের পরিচিত গুণাবলী উল্লেখ করে পরিচয়দানে কোনো সমস্যা নেই। এভাবে যে, নিজের উপাধি বলবে, কিংবা বলবে, আমি অমুক মুফতি, অমুক কাজি অথবা অমুক শায়খ ইত্যাদি।
(৬৪৭) হজরত উম্মে হানি বিনতে আবু তালিব রাদি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَغْتَسِلُ وَفَاطِمَةُ تَسْتُرُهُ، فَقَالَ: مَنْ هَذِهِ؟ فَقُلْتُ: أَنَا أُمُّ هَانِيَّ.
অর্থ: আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গেলে তাকে গোসলরত অবস্থায় পাই এবং ফাতেমা তাকে পর্দাবৃত করে রেখেছিলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন: ইনি কে? আমি বললাম: উম্মে হানি। ৯০২
(৬৪৮) হজরত আবু জর রাদি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
خَرَجْتُ لَيْلَةً مِنَ اللَّيَالِي، فَإِذَا رَسُوْلُ اللهِ، صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمْشِي وَحْدَهُ، فَجَعَلْتُ أَمْشِي فِي ظِلَّ الْقَمَرِ ، فَالْتَفَتَ فَرَآنِي، فَقَالَ: مَنْ هَذَا؟. قُلْتُ: أَبُو ذَرٍّ.
অর্থ: এক রাতে আমি ঘর থেকে বের হই, অকস্মাৎ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একাকী হাঁটতে দেখি। অতঃপর আমি চন্দ্রালোকে তাকে অনুসরণ করতে লাগি। তিনি পিছনে তাকিয়ে আমাকে দেখে ফেললেন। জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কে? বললাম: আবু জর।১০৩
(৬৪৯) হজরত আবু কাতাদা হারিস বিন রিবয়ি রাদি. থেকে ওজুর পাত্র সংক্রান্ত হাদিসে আছে, যা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অগণিত মুজেজা ও সমুদয় জ্ঞানের সমষ্টি। সেখানে আবু কাতাদা বলেছেন-
فَرَفَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأْسِهِ فَقَالَ: مَنْ هَذَا؟ قُلْتُ: أَبُوْ قَتَادَهُ.
অর্থ: অতঃপর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা তুলে জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কে? বললাম: আবু কাতাদা। ৯০৪
ইমাম নববি রহ. বলেন, এর দৃষ্টান্ত অহরহ বিদ্যমান। তবে প্রয়োজনের তাগিদেই এভাবে পরিচয় দেয়া, গর্ব-অহমিকার অভীষ্টে নয়। কাছাকাছি আরেকটি হাদিস-
(৬৫০) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
قُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ، ، ادْعُ اللهَ أَنْ يَهْدِيَ أُمَّ أَبِي هُرَيْرَةَ .... وَذُكِرَ الْحَدِيثُ إِلَى أَنْ قَالَ: فَرَجَعْتُ فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ ، قَدْ اسْتَجَابَ اللَّهُ دَعْوَتَكَ، وَهَدَى أُمَّ أَبِي هُرَيْرَةَ.
অর্থ: আমি বসলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আবু হুরায়রার মায়ের হেদায়েতের জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করুন। তিনি আরো বলেন, আমি পুনরায় এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা আপনার প্রার্থনা কবুল করেছেন এবং আবু হুরায়রার মাকে হেদায়াত দিয়েছেন। ৯০৫
টিকাঃ
৮৯২. সুরা নুর: ২৭।
৮৯৩. সুরা নুর: ৫৯।
৮৯৪. সহিহ বুখারি: ২০৬২, ৬২৪৫, সহিহ মুসলিম: ৭১৫৪, ২১৫৩, সুনানে আবু দাউদ: ৫১৮০, সুনানে তিরমিজি: ২৬৯১, মুসনাদে আহমাদ ৪/৩৯৩, জামেউল উসুল: ৪৮১৯।
৮৯৫. সহিহ বুখারি: ৬২৪১, সহিহ মুসলিম: ২১৫৬।
৮৯৬. সুনানে আবু দাউদ: ৫১৭৭।
৮৯৭. সুনানে আবু দাউদ: ৫১৭৬, সুনানে তিরমিজি: ২৭১০, মুসনাদে আহমাদ ৩/৪১৪।
৮৯৮. আলহাভি ১৮/১৬৪।
৮৯৯. সহিহ বুখারি: ৩৪৯, সহিহ মুসলিম: ১৬২, সুনানে নাসাঈ ১/২২১, সুনানে তিরমিজি: ৩১৩০, মুসনাদে আহমাদ ৩/১৪৮, জামেউল উসুল: ৮৮৬৭।
৯০০. সহিহ বুখারি: ৩৬৭৪, সহিহ মুসলিম: ২৪০৩।
৯০২. সহিহ বুখারি: ২৮০, সহিহ মুসলিম: ৩৩৬।
৯০৩. সহিহ বুখারি: ৬৪৪৩, সহিহ মুসলিম: ৯৪, মুসনাদে আহমাদ ৫/১৮১।
৯০৪. সহিহ মুসলিম: ৬৮১, সুনানে আবু দাউদ: ৪৩৭।
৯০৫. সহিহ মুসলিম: ২৪৯১।
৯০১. সহিহ বুখারি: ৬২৫০, সহিহ মুসলিম: ২১৫৫, সুনানে তিরমিজি: ২৭১২, সুনানে আবু দাউদ: ৫১৮৭, আমাল: ৩২৮, নাসাঈ।
📄 মুসাফাহা (করমর্দন) ও সম্মান প্রদর্শন
সালামের শাখাগত কিছু মাসায়েল
গোসলখানা থেকে বের হওয়ার সময় অভিবাদন জানানো
ইমাম আবু সাদ মুতাওয়াল্লি বলেন, গোসলখানা থেকে বের হওয়ার পর 'তোমার গোসল শুভ হোক' বলে অভিবাদন জানানোর কোনো ভিত্তি নেই। তবে বর্ণিত আছে যে, এক ব্যক্তি গোসলখানা থেকে বের হয়ে আসলে আলি রাদি. তাকে 'তুমি পবিত্র হয়েছ, আর যেন অপবিত্র না হও' বলেছিলেন। ইমাম নববি রহ. বলেন, এ ব্যাপারে বিশুদ্ধ কিছুই বর্ণিত হয়নি। তবে যদি একে অপরকে ভালোবাসা, সম্প্রীতি ও মহব্বত অর্জনের আশায় বলে: আল্লাহ তাআলা তোমাকে সর্বদা নেয়ামতে আবৃত রাখুন ইত্যাদি। তাহলে কোনো সমস্যা নেই।
মানুষ সালামের পরিবর্তে বা পরে সাধারণত যেসব শব্দ ব্যবহার করে
কোনো পথিক কাউকে বলে: আল্লাহ তোমার সকাল কল্যাণময় করুক, তোমার সকাল সৌভাগ্যমণ্ডিত করুক, তোমাকে শক্তিশালী করুক, আল্লাহ তোমার প্রতি বিরক্ত না হন অথবা মানুষের সাধারণ ব্যবহৃত শব্দে অভিবাদন জানালে উত্তর দেয়া আবশ্যক নয়। কিন্তু সম্মুখে তার জন্যও দুআ করা উত্তম। তবে সম্পূর্ণরূপেই তার উত্তর দেয়া থেকে বিরত থাকবে; সালামকে উপেক্ষা ও পৃষ্ঠপ্রদর্শনের তিরস্কার হিসাবে এবং তাকেসহ অন্যদেরকে আগেভাগে সালামের প্রতি যত্নের শিক্ষাদানে।
ছোট কিংবা বড়দের চেহারা ও মাথায় চুমোদানের বিধান
যদি কেউ কারো পরহেজগারি, যোগ্যতা অথবা জ্ঞান, মর্যাদা ও রক্ষণশীলতা কিংবা ধর্মীয় অন্যান্য বিষয়াদির প্রতি মুগ্ধ হয়ে তার হাত ইত্যাদিতে চুমো দিতে চায়, তাহলে এটি মাকরুহ হবে না, বরং এটি মুস্তাহাব। পক্ষান্তরে কারো সুরেলা আওয়াজ, পার্থিব ধন-দৌলত, প্রাচুর্যতা, শক্তি-দাপট ধনীদের কাছে তার প্রভাব-প্রতিপত্তি ইত্যাদির কারণে চুম্বন করা কঠিন পর্যায়ের মাকরুহ। আমাদের ইমাম মুতাওয়ালি বলেন, এ ক্ষেত্রে চুম্বন করা জায়েজ নয়। -তিনি এ কথা বলে হারামের দিকে ইশারা করেছেন।
(৬৫১) হজরত জারি রাদি. হতে বর্ণিত, তিনি আবদুল কায়েসর প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলেন। তিনি বলেন-
فَجَعَلْنَا نَتَبَادَرُ مِنْ رَوَاحِلِنَا ، فَنُقَبِّلُ يَدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرِجْلَهُ .
অর্থ: আমরা মদিনায় এসে আমাদের আরোহী থেকে দ্রুত নেমে এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে-পায়ে চুমো দিতে লাগলাম। ৯০৬
(৬৫২) হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. হতে একটি ঘটনা বর্ণিত আছে, সেখানে তিনি বলেছেন-
فَدَنَوْنَا يَعْنِي مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَبَّلْنَا يَدَهُ.
অর্থ: অতঃপর আমরা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটবর্তী হয়ে তার হাতে চুমো দিলাম। ৯০৭
বস্তুতঃ নিজের ছোট শিশু এবং ভাইয়ের গালে অথবা অন্য কোথাও স্নেহ-মমতা, আদর-দয়া ও সহৃদয়তার প্রকাশে চুম্বন করা সুন্নাত। এ ব্যাপারে বহু প্রসিদ্ধ সহিহ হাদিস বিদ্যমান। এক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ে বরাবর। অনুরূপভাবে বন্ধু বা অন্য কারো ছোট সন্তানকে চুম্বন করাতে কোনো সমস্যা নেই। তবে কামনার সাথে চুমো দেয়া সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। পিতা চুম্বন করুক বা অন্য কেউ, বরং আপনজন হোক বা অপরিচিত কেউ। কামনার দৃষ্টিতে তার দিকে তাকানোও হারাম।
(৬৫৩) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
قَبَّلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْحَسَنَ بْنَ عَلَيَّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، وَعِنْدَهُ الْأَقْرَعُ بْنُ حَابِسٍ التَّمِيمِيُّ، فَقَالَ الْأَقْرَعُ : إِنَّ لِيْ عَشَرَةٌ مِنَ الْوَلَدِ، مَا قَبَّلْتُ مِنْهُمْ أَحَدًا فَنَظَرَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ: مَنْ لَا يَرْحَمُ لَا يُرْحَمُ.
অর্থ: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা হাসান বিন আলিকে চুম্বন করেন। সে সময় তার কাছে ছিলেন আকরা বিন হাবিস তামিমি। তিনি বললেন, আমার দশজন সন্তান থাকা সত্ত্বেও আমি তাদের কাউকেই কোনো দিন চুম্বন করিনি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পানে তাকিয়ে বললেন, যে অন্যদের প্রতি দয়া করে না, সে অন্য থেকে দয়া পায়ও না। ৯০৮
(৬৫৪) হজরত আয়েশা রাদি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
قَدِمَ نَاسُ مِنَ الْأَعْرَابِ عَلَى رَسُولِ اللهِ، صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالُوا: تُقَبِّلُوْنَ صِبْيَانَكُمْ؟ فَقَالُوا : نَعَمْ . فَقَالُوا: لَكِنَّا وَاللهِ، مَا نُقَبِّلُ. فَقَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَوَ أَمْلِكُ إِنْ كَانَ اللَّهُ نَزَعَ مِنْكُمُ الرَّحْمَةَ؟
অর্থ: কিছু বেদুইন লোক নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে জিজ্ঞাসা করল, আপনারা কি শিশুদের চুম্বন করেন? তারা জবাব দিলেন: হ্যাঁ। তারা বলল, আল্লাহর শপথ, আমরা তো চুম্বন করি না। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমাদের হৃদয় থেকে আল্লাহ দয়া উঠিয়ে নিলে আমার কী করার আছে? ৯০৯ এ হল একটি বর্ণনার শব্দ, এই হাদিস বিভিন্ন শব্দে বর্ণিত হয়েছে।
(৬৫৫) হজরত আনাস রাদি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ابْنَهُ إِبْرَاهِيمَ فَقَبَّلَهُ وَشَمَّهُ.
অর্থ: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ ছেলে ইবরাহিমকে কোলে নিয়ে চুম্বন করলেন এবং তার ঘ্রাণ নিলেন। ১১০
(৬৫৬) হজরত বারা বিন আজিব রাদি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
دَخَلْتُ مَعَ أَبِي بَكْرٍ عَلَى أَهْلِهِ أَوَّلَ مَا قَدِمَ الْمَدِينَةَ فَإِذَا عَائِشَةُ ابْنَتُهُ مُضْطَجِعَةٌ قَدْ أَصَابَتْهَا حُمَّى، فَأَتَاهَا أَبُو بَكْرٍ أَبَاهَا فَقَالَ: كَيْفَ أَنْتِ يَا بُنَيَّةُ؟ وَقَبَّلَ خَدَّهَا.
অর্থ: আবু বকর রাদি. মদিনায় আসার প্রথমদিকে একদিন আমি তার ঘরে যাই। এ সময় তার কন্যা আয়েশাকে জ্বরাক্রান্ত বিছানায় শোয়া অবস্থায় দেখি। আবু বকর রাদি. তার কাছে গিয়ে বললেন, কেমন আছ হে আদরের মেয়ে? পরে তার গালে চুমো দিলেন। ৯১১
(৬৫৭) সাহাবি হজরত সাফওয়ান বিন আসসাল রাদি. হতে সহিহ সনদে বর্ণিত, তিনি বলেন-
قَالَ يَهُودِيُّ لِصَاحِبِهِ: اذْهَبْ بِنَا إِلَى هَذَا النَّبِيِّ، فَأَتَيَا رَسُوْلَ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَسَأَلَاهُ عَنْ تِسْعِ آيَاتٍ بَيِّنَاتٍ، فَذُكِرَ الْحَدِيثُ إِلَى قَوْلِهِ: فَقَبَّلُوْا يَدَهُ وَرِجْلَهُ، وَقَالَا : نَشْهَدُ أَنَّكَ نَبِيُّ.
অর্থ: জনৈক ইহুদি তার সঙ্গীকে বলল, আমাকে নিয়ে এই নবির নিকট যাও। অতঃপর তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে তাকে মুসা আলাইহিস সালামের নয়টি স্পষ্ট নিদর্শন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বর্ণনাকারী উল্লেখ করেন: পরে তারা নবিজির হাতে-পায়ে চুমো দিয়ে বলল, আপনি সত্য নবি বলে আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি। ৯১২
(৬৫৮) ইয়াস বিন দাগফাল রহ. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত, তিনি বলেন-
رَأَيْتُ أَبَا نَضْرَةَ قَبَّلَ خَدَّ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيَّ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ.
অর্থ: আমি আবু নাজরাকে হাসান বিন আলির গালে চুমো দিতে দেখেছি। ৯১৩ -আবু নাদরার নাম: মুনজির বিন মালিক। তিনি একজন নির্ভরযোগ্য তাবেয়ি ছিলেন।
ইবনে উমর রাদি. হতে বর্ণিত, তিনি তার ছেলে সালেমকে চুম্বন করে বলতেন: এক শায়খ আরেক শায়খকে চুম্বন করা দেখে মানুষ তাজ্জববোধ করছে। ৯১৪
প্রসিদ্ধ দরবেশ হজরত সাহল বিন আবদুল্লাহ তুসতারি রহ. ইমাম আবু দাউদ সিজিসতানির নিকট এসে বলতেন: আপনি যে জিহ্বা দ্বারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস বর্ণনা করেন তা বাইর করে দেন, আমি চুমো দেব। অতঃপর তিনি চুমো দিতেন। এ অধ্যায়ে সালাফের অগণিত আমল বর্ণিত আছে।
মৃত এবং ভ্রমণ ফেরত ব্যক্তির চেহারায় চুম্বন করা
বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে নেককার মৃতের চেহারায় এবং ভ্রমণ ফেরত বন্ধুর চেহারায় চুম্বন করাতে কোনো অসুবিধা নেই।
(৬৫৯) হজরত আয়েশা রাদি. হতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত সংক্রান্ত দীর্ঘ হাদিসে আছে। তিনি বলেন-
دَخَلَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ فَكَشَفَ عَنْ وَجْهِ رَسُوْلِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ أَكَبَّ عَلَيْهِ فَقَبَّلَهُ، ثُمَّ بكَى.
অর্থ: আবু বকর রাদি. প্রবেশ করলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা উন্মুক্ত করে তার উপর ঝুঁকে পড়লেন এবং চুমু খেলেন। অতঃপর ক্রন্দন করতে লাগলেন। ৯১৫
(৬৬০) হজরত আয়েশা রাদি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
قَدِمَ زَيْدُ بْنُ حَارِثَةَ الْمَدِينَةَ، وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَيْتِي، فَأَتَاهُ، فَقَرَعَ الْبَابَ، فَقَامَ إِلَيْهِ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَجُرُّ ثَوْبَهُ، فَاعْتَنَقَهُ وَقَبَّلَهُ.
অর্থ: জায়েদ বিন হারিসা রাদি. (ভ্রমণ থেকে) মদিনায় ফিরে এলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে ছিলেন। তিনি এসে দরজায় করাঘাত করলেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাপড় টানতে টানতে এগিয়ে তার সাথে কোলাকুলি করলেন এবং তাকে চুমো দিলেন। ১১৬ - ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি হাসান।
শিশু ও ভ্রমণ ফেরত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কাউকে আলিঙ্গন করা ও চেহারায় চুমো দেয়া মাকরুহ।
ইমাম আবু মুহাম্মাদ বাগাবিসহ অন্যরা এ দুটোকে স্পষ্টভাবে মাকরুহ ঘোষণা দিয়েছেন। মাকরুহ হওয়ার দলিল নিম্নরূপ:
(৬৬১) হজরত আনাস বিন মালিক রাদি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
قَالَ رَجُلٌ : يَا رَسُوْلَ اللهِ الرَّجُلُ مِنَّا يَلْقَى أَخَاهُ أَوْ صَدِيقَهُ، أَيَنْحَنِيْ لَهُ؟ قَالَ: لَا قَالَ: أَفَيَلْتَزِمُهُ، وَيُقَبِّلُهُ؟ قَالَ: لَا ، قَالَ : أَفَيَأْخُذُ بِيَدِهِ وَيُصَافِحُهُ؟ قَالَ: نَعَمْ.
অর্থ: জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের কেউ তার ভাই কিংবা বন্ধুর সাথে দেখা করলে তার সামনে কি ঝুঁকে পড়বে? তিনি বললেন, না। পুনরায় জিজ্ঞাসা করল, তাহলে কি গলাগলি করবে ও চুমো দিবে? বললেন, না। সে পুনরায় বলল, তাহলে কি তার হাত ধরে মুসাফাহা করবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। ১১৭-ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি হাসান।
ইমাম নববি বলেন, উপরে যে হুকুম আলোচিত হয়েছে তা সফর থেকে প্রত্যাগমনকারীর ক্ষেত্রে হলে কোনো অসুবিধা নেই। অন্য সময়ে এমন করা মাকরুহে তানজিহি। এগুলো সব সুন্দর্শন শাশ্রুবিহীন নয়- এমন ছেলেদের ব্যাপারে। পক্ষান্তরে শ্মশ্রুবিহীন সুদর্শন বালক হলে সর্বাবস্থায় তাকে চুমো দেয়া হারাম। ১১৮ চাই সফর ফেরত হোক বা না হোক। বাস্তবতা হল, তার সাথে আলিঙ্গন করা চুমো দেয়ারই নামান্তর বা কাছাকাছি। চুম্বনকারী এবং চুম্বকৃত উভয়ে নেককার কিংবা ফাসেক অথবা যে কোনো একজন নেককার হওয়াতে কোনো পার্থক্য হবে না। সবার ক্ষেত্রে বিধান বরাবর।
আমাদের নিকট বিশুদ্ধ মাজহাব হল, সুদর্শন শ্মশ্রুবিহীন বালকের দিকে তাকানো হারাম, যদিও উত্তেজনা ছাড়া হয় এবং সম্পূর্ণ ফিতনামুক্ত হয়। নারীদের দিকে তাকানোর মতোই হারাম, কেননা এটা একই ধরনের। ৯১৯
মুসাফাহা (করমর্দন)
পরস্পর সাক্ষাতের সময় মুসাফাহা করা সর্বজনস্বীকৃত একটি সুন্নাত।
(৬৬২) হজরত কাতাদা রহ. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
قُلْتُ لِأَنَسٍ: أَكَانَتِ الْمُصَافَحَةُ فِي أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: نَعَمْ.
অর্থ: আমি হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করলাম, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিগণের মাঝে কি মুসাফাহার প্রথা ছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ। ৯২০
(৬৬৩) হজরত কাব বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহুর তাওবার ঘটনায় আছে। তিনি বলেন-
فَقَامَ إِلَيَّ طَلْحَةُ بْنُ عُبَيْدِ اللَّهِ، يُهَرْوِلُ حَتَّى صَافَحَنِي، وَهَنَّانِي.
অর্থ: তালহা বিন উবায়দুল্লাহ আমার দিকে দৌড়ে এসে আমার সঙ্গে মুসাফাহা করলেন এবং আমাকে অভিনন্দন জানালেন। ৯২১
(৬৬৪) হজরত আনাস বিন মালিক রাদি. হতে সহিহ সনদে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন ইয়েমেনবাসী নবিজির দরবারে আসে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
قَدْ جَاءَكُمْ أَهْلُ الْيَمَنِ. وَهُمْ أَوَّلُ مَنْ جَاءَ بِالْمُصَافَحَةِ.
অর্থ: তোমাদের নিকট ইয়েমেনবাসী এসেছে। তারাই সর্বপ্রথম মুসাফাহার প্রবর্তন করেছে। ৯২২
(৬৬৫) হজরত বারা বিন আজিব রাদি. বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَا مِنْ مُسْلِمَيْنِ يَلْتَقِيَانِ فَيَتَصَافَحَانِ، إِلَّا غُفِرَ لَهُمَا قَبْلَ أَنْ يَفْتَرِقَا.
অর্থ: দুজন মুসলিম পরস্পর মিলিত হয়ে মুসাফাহা করলে উভয়ে আলাদা হওয়ার পূর্বেই তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। ৯২৩
(৬৬৬) হজরত আনাস বিন মালিক রাদি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
قَالَ رَجُلٌ : يَا رَسُولَ اللهِ ، الرَّجُلُ مِنَّا يَلْقَى أَخَاهُ أَوْ صَدِيقَهُ، أَيَنْحَنِي لَهُ؟ قَالَ: لَا. قَالَ: أَفَيَلْتَزِمُهُ ، وَيُقَبِّلُهُ؟ قَالَ: لَا ، قَالَ : أَفَيَأْخُذُ بِيَدِهِ وَيُصَافِحُهُ؟ قَالَ: نَعَمْ.
অর্থ: জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের কেউ তার ভাই কিংবা বন্ধুর সাথে দেখা করলে তার সামনে কি ঝুঁকে পড়বে? তিনি বললেন, না। পুনরায় জিজ্ঞাসা করল, তাহলে কি গলাগলি করবে এবং চুমো দিবে? বললেন, না। সে পুনরায় বলল, তাহলে কি তার হাত ধরে মুসাফাহা করবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। ৯২৪ - ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি হাসান। ৯২৫ এ বিষয়ে আরো অনেক হাদিস রয়েছে।
(৬৬৭) হজরত আতা বিন আবদুল্লাহ খুরাসানি রহ. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
تَصَافَحُوْا يَذْهَبِ الْغِلُّ، وَتَهَادَوْا تَحَابُّوْا، وَتَذْهَبِ الشَّحْنَاءُ.
অর্থ: তোমরা পরস্পর মুসাফাহা কর; প্রতিহিংসা দূর হবে। পরস্পর হাদিয়া বিনিময় কর; ভালোবাসা সৃষ্টি হবে এবং শত্রুতা বিদূরিত হবে। ৯২৬-ইমাম নববি রহ. বলেন, এটি মুরসাল হাদিস।
জ্ঞাতব্য, প্রত্যেক সাক্ষাতেই মুসাফাহা করা মুস্তাহাব। পক্ষান্তরে মানুষ ফজর ও আসরের নামাজের পরে মুসাফাহার যে অভ্যাস গড়ে তুলেছে- শরিয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। তবে এতে কোনো সমস্যাও নেই। ৯২৭ কেননা মুসাফাহা মূলত সুন্নাত। তাছাড়া তারা কোনো কোনো সময় মুসাফাহার ব্যাপারে উদগ্রীব থাকা আর অধিকাংশ সময় তা থেকে বিরত থাকার কারণে তা শরিয়ত-সম্মত মুসাফাহা থেকে বের হয়ে যায় না।
শায়খ ইমাম আবু মুহাম্মাদ বিন আবদুস সালাম রহ. স্বীয় 'আলকাওয়ায়েদ' গ্রন্থে উল্লেখ করেন- বিদআত পাঁচ প্রকার: ওয়াজিব, হারাম, মাকরুহ, মুস্তাহাব এবং মুবাহ। পরে তিনি বলেন, মুবাহ বিদআতের মধ্য থেকে: ফজর ও আসরের পরে মুসাফাহা করা। আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন। ১২৮
ইমাম নববি রহ. বলেন, শ্মশ্রুবিহীন সুদর্শন বালকের সাথে মুসাফাহা করা থেকে বিরত থাকা উচিত। কেননা শশ্রুবিহীন সুদর্শন বালকের দিকে তাকানো হারাম- এ কথা আমরা পূর্বের পরিচ্ছেদেও আলোচনা করেছি। আমাদের উলামায়ে কেরাম বলেছেন, যার দিকে তাকানো হারাম তাকে স্পর্শ করাও হারাম। বরং স্পর্শ করা আরো মারাত্মক গুরুতর। কেননা বিবাহ, ক্রয়-বিক্রয় কিংবা গ্রহণ-দানে অপরিচিতা নারীর দিকে তাকানো জায়েজ আছে, কিন্তু কোনো অবস্থাতেই তাকে স্পর্শ করা বৈধ নয়। আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন।
মুসাফাহার সময় হর্ষোৎফুল্লতা ও দুআ করা মুস্তাহাব
মুসাফাহার সময় হাস্যোজ্জল চেহারায় থাকা এবং একে অপরের জন্য মাগফিরাত ইত্যাদির দুআ করা মুস্তাহাব।
(৬৬৮) হজরত আবু জর রাদি. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন-
لَا تَحْقِرَنَّ مِنَ الْمَعْرُوْفِ شَيْئًا، وَلَوْ أَنْ تَلْقَى أَخَاكَ بِوَجْهِ طَلَيْقٍ.
অর্থ: তুমি কোনো পুণ্যের কাজকে তুচ্ছজ্ঞান কর না। যদিও তুমি তোমার (মুসলিম) ভাইয়ের সাথে হর্ষোৎফুল্লে সাক্ষাৎ করে থাক (অর্থাৎ হাসি মুখে সাক্ষাৎ করাও পুণ্যের কাজ)। ৯২৯
(৬৬৯) হজরত বারা বিন আজিব রাদি. হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِنَّ الْمُسْلِمَيْنِ إِذَا الْتَقَيَا فَتَصَافَحَا وَتَكَاشَرَا بِوُدٍ وَنَصِيحَةٍ تَنَاثَرَتْ خَطَايَاهُمَا بَيْنَهُمَا ..
অর্থ: যখন দুজন মুসলমান পরস্পর সাক্ষাৎ করে মুসাফাহা করে এবং পরস্পর ভালোবাসা ও উপদেশ বিনিময় করে, তখন তাদের উভয়ের গুনাহ ঝরে পড়ে। ৯৩০-অন্য বর্ণনায় এসেছে-
إِذَا الْتَقَى المُسْلِمَانِ فَتَصَافَحَا وَحَمِدَا اللهَ تَعَالَى وَاسْتَغْفَرَا، غَفَرَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُمَا.
অর্থ: যখন দুজন মুসলমান সাক্ষাৎ করতঃ মুসাফাহা করে, আল্লাহর প্রশংসা করে এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে; আল্লাহ তাআলা তাদের উভয়কে ক্ষমা করে দেন। ৯৩১
(৬৭০) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَا مِنْ عَبْدَيْنِ مُتَحَابَّيْنِ فِي اللهِ، يَسْتَقْبِلُ أَحَدُهُمَا صَاحِبَهُ فَيُصَافِحَهُ، فَيُصَلِّيَانِ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا لَمْ يَتَفَرَّقَا حَتَّى تُغْفَرَ ذُنُوبَهُمَا مَا تَقَدَّمَ مِنْهَا وَمَا تَأَخَّرَ.
অর্থ: দুজন বান্দা যারা আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবাসে, যখন তারা মিলিত হয়ে মুসাফাহা করে এবং নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ পাঠ করে, পৃথক হওয়ার পূর্বেই তাদের আগপিছের যাবতীয় গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। ৯৩২
(৬৭১) হজরত আনাস রাদি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
مَا أَخَذَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِ رَجُلٍ فَفَارَقَهُ حَتَّى قَالَ: اللَّهُمَّ آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.
অর্থ: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো ব্যক্তির হাত ধরে এই দুআ না বলা পর্যন্ত বিচ্ছেদ হতেন না। দুআটি হল-
اللَّهُمَّ آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً، وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً، وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনয়া হাসানাতান, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতান, ওয়া কিনা আজাবান্নার।
অর্থ: হে পরওয়ারদিগার, আমাদেরকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাদেরকে দোযখের আযাব থেকে রক্ষা কর। ৯৩৩
কারো সম্মানার্থে পিঠ বাঁকানো সর্বাবস্থায় মাকরুহ
কারো সামনে পিঠ ঝুকানো সর্বাবস্থায় মাকরুহ। এই বক্তব্যের স্বপক্ষের দলিল পূর্বের দুই পরিচ্ছেদে হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সেখানে আছে গেছে যে, সে কি তার জন্য ঝোঁকবে? নবিজি বলেছেন, না। হাদিসটি হাসান, যেমনটা আমরা উল্লেখ করেছি। এর বিপক্ষে কোনো হাদিস আসেনি, তাই এর বিরোধিতার সুযোগ নেই।
আলেম, বুজুর্গ বা নেককার ব্যক্তিত্বেরকে গণহারে এমনটা করতে দেখে ধোঁকাগ্রস্থ হবেন না। কেননা, অনুসরণ তো হবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের। আল্লাহ পাক বলেছেন-
وَمَا أُتْكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهُكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا.
অর্থ: রাসুল তোমাদের কাছে যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে নিষেধ করেন, তা হতে বিরত থাক। ৯৩৪ অন্যত্র ইরশাদ করেন-
الَّذِينَ يُخَالِفُوْنَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ.
অর্থ: সুতরাং যারা আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধাচরণ করে, তাদের এ ভয় হওয়া উচিত যে, তাদের ওপর কোনো বিপদ এসে পড়বে কিংবা তাদের ওপর কোনো যন্ত্রণাময় আজাব নাজিল হবে। ৯৩৫
আমরা ইতিপূর্বে জানাযা অধ্যায়ে হজরত ফুজাইল বিন ইয়াজ রাদি. থেকে বর্ণনা করেছি, যার সারমর্ম এরকম: তুমি সরল পথের অনুসরণ কর, হকপন্থীদের স্বল্পতা যেন তোমার ক্ষতি সাধন করতে না পারে। আর ভ্রষ্টতার পথ থেকে বেঁচে থাক এবং ধ্বংসপ্রাপ্তদের আধিক্যতায় প্রতারিত হবে না। আল্লাহ তাআলাই তাওফিকদাতা।
বুজুর্গ, পিতা-মাতা এবং ঘনিষ্ঠতম কারো আগমনে দাঁড়ানো মুস্তাহাব
বস্তুতঃ আগন্তুক ব্যক্তিকে দাঁড়িয়ে সম্মান জানানো আমাদের দৃষ্টিতে মুস্তাহাব। ৯৩৬ ঐ ব্যক্তিকে, যার মাঝে রয়েছে বাহ্যিক শ্রেষ্ঠত্ব; জ্ঞান, যোগ্যতা, মর্যাদা, কর্তৃত্ব, জন্মদাতা কিংবা সমবয়স্ক ঘনিষ্ঠতার মধ্য থেকে। আর এই দাঁড়ানো হবে শ্রদ্ধা, সমীহ ও সম্মান-প্রদর্শনের জন্য, প্রদর্শন ও অহমিকার জন্য নয়। আমরা যেটাকে গ্রহণ করেছি, সালাফ-খালাফেরও আমল এমনই ছিল। আমি এ বিষয়ে একটি পুস্তক সঙ্কলন করেছি, যাতে এ সংক্রান্ত হাদিস, আসার এবং সালাফের বক্তব্য ও আমল উল্লেখ করেছি। ৯৩৭ এর বিপরীত বক্তব্যও উল্লেখ করতঃ সুস্পষ্ট উত্তরও প্রদান করেছি। অতএব, যার কাছে এ বিষয়ে কোনো জটিলতা ও সংশয় দেখা দিবে এবং পুস্তিকা অধ্যয়ন করতে আগ্রহী, তার ব্যাপারে আমি আশাবাদী ইনশাআল্লাহ, তার সব জটিলতা ও সংশয় নিরসন হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন।
সমীহ ও শ্রদ্ধার সাথে নেককারদের আশাতে যাওয়া মুস্তাহাব
নেককার, ভাই-বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন কিংবা প্রতিবেশীর সাক্ষাতে যাওয়া মুস্তাহাব। তাদের প্রতি সম্মানপ্রদর্শন, শ্রদ্ধা ও তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনও মুস্তাহাব। আর তাদের অবস্থা, মর্যাদা ও অবসরের ভিন্নতায় এতে স্তর-বিন্যাস রয়েছে। তবে সাক্ষাৎ যেন এমনভাবে না হয় যা তারা অপছন্দ করে। যে সময় তারা সাক্ষাতে আগ্রহী ও স্বতঃস্ফূর্ত থাকেন, সে সময় সাক্ষাৎ করা উচিত। এ সংক্রান্ত প্রসিদ্ধ বহু হাদিস ও আসার বিদ্যমান। তন্মধ্য থেকে শ্রেষ্ঠতর হাদিস হল-
(৬৭২) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
أَنَّ رَجُلًا زَارَ أَذًا لَهُ فِي قَرْيَةٍ أُخْرَى، فَأَرْصَدَ اللهُ لَهُ عَلَى مَدْرَجَتِهِ مَلَكًا، فَلَمَّا أَتَى عَلَيْهِ قَالَ: أَيْنَ تُرِيدُ؟ قَالَ: أُرِيدُ أَذًا لِي فِي هَذِهِ الْقَرْيَةِ قَالَ: هَلْ لَكَ عَلَيْهِ مِنْ نِعْمَةٍ تَرُبُّهَا؟ قَالَ: لَا ، غَيْرَ أَنِّي أَحْبَبْتُهُ فِي اللهِ عَزَّ وَجَلَّ. قَالَ: فَإِنِّي رَسُوْلُ اللهِ، إِلَيْكَ بِأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَبَّكَ كَمَا أَحْبَبْتَهُ فِيْهِ.
অর্থ: এক ব্যক্তি তার ভাইয়ের সাক্ষাতের জন্য অন্য এক এলাকায় গেল। আল্লাহ তাআলা তার জন্য পথিমধ্যে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করলেন। অতঃপর ফেরেশতা এসে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কোথায় যাওয়ার ইচ্ছা করেছ? সে বলল, আমি এ এলাকায় আমার এক ভাইয়ের সাথে দেখা করার জন্য যেতে চাই। ফেরেশতা বললেন, তার কাছে কি তোমার কোনো আবেদন আছে, যা তুমি আরো প্রবৃদ্ধি করতে চাও? সে বলল, না। আমি তো শুধু আল্লাহর জন্যই তাকে ভালোবাসি। ফেরেশতা বললেন, আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে (তার দূত হয়ে) তোমাকে অবহিত করার জন্য এসেছি যে, আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসেন, যেমনটা তুমি তোমার ভাইকে তারই সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ভালোবাস। ৯৩৮
(৬৭৩) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ عَادَ مَرِيضًا، أَوْ زَارَ أَذًا لَهُ فِي اللهِ ؛ نَادَاهُ مُنَادٍ : أَنْ طِبْتَ، وَطَابَ مَمْشَاكَ، وَتَبَوَّأْتَ مِنَ الْجَنَّةِ مَنْزِلًا.
অর্থ: যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি হাসিলের আশায় কোনো অসুস্থ লোককে দেখতে যায় অথবা নিজের ধর্মীয় ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করতে যায়। একজন ঘোষক (ফেরেশতা) তাকে ডেকে বলতে থাকেন- কল্যাণময় তোমার জীবন, কল্যাণময় তোমার এই পথ চলা। তুমি তো জান্নাতে একটি বাসস্থান নির্দিষ্ট করে নিলে। ৯৩৯
টিকাঃ
৯০৬. সুনানে আবু দাউদ: ৫২২৫, আদাব: ৯৭৫, বুখারি, আদাব: ২৯৫, বাইহাকি।
৯০৭. সুনানে আবু দাউদ: ৫২২৩, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৭০৪।
৯০৮. সহিহ বুখারি: ৫৯৯৭, সহিহ মুসলিম: ২৩১৮, সুনানে আবু দাউদ: ৫২১৮, সুনানে তিরমিজি: ১৯১২, মুসনাদে আহমাদ ২/২২৮।
৯০৯. সহিহ বুখারি: ৫৯৯৮, সহিহ মুসলিম: ২৩১৭, মুসনাদে আহমাদ ৬/৫৬, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৬৬৫।
৯১০. বুখারি রহ. 'সন্তানকে আদর-স্নেহ করা, চুমো ও আলিঙ্গন করা' পরিচ্ছেদে (১০/৪২৬) মুআল্লাক সূত্রে নকল করেছেন।
৯১১. সুনানে আবু দাউদ: ৫২২২, সহিহ বুখারি: ৩৯১৮।
৯১২. সুনানে তিরমিজি: ২৭৩৩, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৭০৫, সুনানে নাসাঈ ৭/১১১, মুসনাদে আহমাদ ৪/২৩৯, হাকেম ১/৯।
৯১৩. সুনানে আবু দাউদ: ৫২২১।
৯১৪. মুসনাদে ইবনুল জাদ: ২১০৩।
৯১৫. সহিহ বুখারি: ১২৪১।
১১৬. সুনানে তিরমিজি: ২৭৩৩।
১১৭. সুনানে তিরমিজি: ২৭২৯, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৭০২, মুসনাদে আহমাদ ৩/১৯৮।
১১৮. যদি অপরিচিত হয়, আত্মীয় হলে উত্তেজনা না থাকার শর্তে বৈধ। এর বিবরণ পূর্বে অতীত হয়েছে।
৯১৯. হানাফি এবং বিশুদ্ধ মতানুসারে শাফেয়ি মাজহাবে উত্তেজনার শর্তে শশ্রুবিহীন বালক নারীর হুকুমে। (রাদ্দুল মুহতার ৫/২৩৩, তুহফাতুল মুহতাজ ৭/১৯০; আলমাওসুআতুল ফিকহিয়্যাহ ৬/১৫৩)
৯২০. সহিহ বুখারি: ৬২৬৩, সুনানে তিরমিজি: ২৭৩০।
৯২১. সহিহ বুখারি: ৪৪১৮, সহিহ মুসলিম: ২৭৬৯।
৯২২. সুনানে আবু দাউদ: ৫২১৩, মুসনাদে আহমাদ ৩/২১২।
৯২৩. সুনানে আবু দাউদ: ৫২১২, সুনানে তিরমিজি: ২৭২৭, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৭০৩।
৯২৪. সুনানে তিরমিজি: ২৭২৮, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৭০২।
৯২৫. সুনানে তিরমিজি: ২৭২৮, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৭০২।
৯২৬. মুয়াত্তা মালেক ২/৯০৮।
৯২৭. ইবনে আবিদিন শামি রহ, একে মাকরুহ বলেছেন। (রাদ্দুল মুহতার ৯/৫৪৭)
৯২৮. আলকাওয়ায়েদ ২/৩৩৭-৩৩৯।
৯২৯. সহিহ মুসলিম: ২৬২৬।
৯৩০. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ১৯৫।
৯৩১. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ১৯৩।
৯৩২. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ১৯৪।
৯৩৩. হে আল্লাহ, ইহকাল-পরকালে আমাদেরকে কল্যাণ দান কর এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে আমাদেরকে হেফাজত কর। আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ২০৪।
৯৩৪. সুরা হাশর: ৭।
৯৩৫. সুরা নূর: ৬৩।
৯৩৬. আগন্তুকের জন্য দাঁড়ানো: অহংকার, গৌরব ও সুখ্যাতির লক্ষ্যে হলে নিষেধ। সম্মান-প্রদর্শনের লক্ষ্যে হলে বৈধ। আর পিতা-মাতা এবং হাকেমের সম্মানার্থে দাঁড়ানো সর্বাবস্থায় জায়েজ, কেননা এটা শরিয়তে কাঙ্ক্ষিত। (আলমাওসুআতুল ফিকহিয়্যা ৩৪/১১৪)
৯৩৭. পুস্তিকাটির নাম: আত তারখিসু ফিল ইকরামি বিল কিয়াম লিজাভিল ফাজলি ওয়াল মাজিয়্যাতি মিন আহলিল ইসলাম।
৯৩৮. সহিহ মুসলিম: ২৫৬৭, মুসনাদে আহমাদ ২/২৯২।
৯৩৯. সুনানে তিরমিজি: ২০০৮, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৪৪৩।