📄 খাওয়ার পর মেজবানের উদ্দেশ্যে মেহমান যে দুআ করবে
(৫৮৭) হজরত আবদুল্লাহ বিন বুসর রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
نَزَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى أَبِي، فَقَرَّبْنَا إِلَيْهِ طَعَامًا وَوَطْبَةً، فَأَكَلَ مِنْهَا، ثُمَّ أُتِيَ بِتَمْرٍ، فَكَانَ يَأْكُلُهُ، وَيُلْقِي النَّوَى بَيْنَ إِصْبَعَيْهِ، وَيَجْمَعُ السَّبَّابَةَ وَالْوُسْطَى - قَالَ شُعْبَةُ : هُوَ ظَنّي، وَهُوَ فِيْهِ إِنْ شَاءَ اللَّهُ إِلْقَاءُ النَّوَى بَيْنَ الْإِصْبَعَيْنِ - ثُمَّ أُتِيَ بِشَرَابٍ، فَشَرِبَهُ، ثُمَّ نَاوَلَهُ الَّذِي عَنْ يَمِينِهِ، فَقَالَ أَبِي، وَأَخَذَ بِلِجَامِ دَابَّتِهِ : اُدْعُ اللهَ لَنَا، فَقَالَ: اللَّهُمَّ بَارِكْ لَهُمْ فِي مَا رَزَقْتَهُمْ، وَاغْفِرْ لَهُمْ، وَارْحَمْهُمْ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আমার বাবার ঘরে মেহমান হন। আমরা তার সামনে খাবার এবং হায়েস৮০৫ পেশ করি। তিনি এ থেকে গ্রহণ করেন। এরপর খেজুর নিয়ে আসা হলে তিনি খেতে শুরু করেন এবং বীচিগুলো মধ্যমা ও শাহাদাত আঙ্গুলের মাঝখান দিয়ে ফেলতে লাগলেন।- বর্ণনাকারী শুবা বলেন, আমার ধারণা যে, বীচিগুলো মধ্যমা ও শাহাদাত আঙ্গুলের মাঝখান দিয়ে ফেলার কথা হাদিসে আছে। ৮০৬- অতঃপর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পানীয় আনা হল, তিনি তা পান করলেন। অতঃপর ডান পাশের লোককে তা দিলেন। আবদুল্লাহ বিন বুসর রাদি. বলেন, আমার বাবা বললেন, আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করুন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বলে দুআ করলেন-
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَهُمْ فِيْمَا رَزَقْتَهُمْ، فَاغْفِرْ لَهُمْ فَارْحَمْهُمْ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বারিক লাহুম ফিমা রাজাকতাহুম, ফাগফির লাহুম, ফারহামহুম।
অর্থ: হে আল্লাহ, তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছেন তাতে বরকত দান করুন, তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং তাদের প্রতি দয়া করুন। ৮০৭
(৫৮৮) হজরত আনাস রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত-
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদ বিন উবাদা রাদি. এর কাছে গমন করলেন। তিনি মেহমানদারি হিসাবে রুটি ও যাইতুন সামনে দেন, নবিজি তা গ্রহণ করলেন। অতঃপর এই দুআ করলেন-
أَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُوْنَ، وَأَكَلَ طَعَامَكُمُ الْأَبْرَارُ، وَصَلَّتْ عَلَيْكُمُ الْمَلَائِكَةُ.
উচ্চারণ: আফতারা ইনদাকুমুস সায়িমুন, ওয়া আকালা তাআমাকুমুল আবরারু, ওয়া সাল্লাত আলাইকুমুল মালায়িকাহ।
অর্থ: তোমাদের কাছে ইফতার করুক রোজাদাররা, আহার গ্রহণ করুক পুণ্যবানরা এবং ফেরেশতারা তোমাদের মাগফিরাত কামনা করুক। ৮০৮
(৫৮৯) হজরত আবদুল্লাহ বিন যুবায়ের রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একবার) হজরত সাদ বিন মুআজ রাদি. এর বাড়িতে ইফতার করলেন। অতঃপর এই দুআ পাঠ করলেন-
أَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُوْنَ، وَأَكَلَ طَعَامَكُمُ الْأَبْرَارُ، وَصَلَّتْ عَلَيْكُمُ الْمَلَائِكَةُ.
উচ্চারণ: আফতারা ইনদাকুমুস সায়িমুন, ওয়া আকালা তাআমাকুমুল আবরারু, ওয়া সাল্লাত আলাইকুমুল মালায়িকাহ।
অর্থ: তোমাদের কাছে ইফতার করুক রোজাদাররা, আহার গ্রহণ করুক পুণ্যবানরা এবং ফেরেশতারা তোমাদের মাগফিরাত কামনা করুক। ৮০৯
(৫৯০) জনৈক ব্যক্তির সূত্রে হজরত জাবের রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন-
صَنَعَ أَبُو الْهَيْثَمِ بْنُ التَّيِّهَانِ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَعَامًا، فَدَعَا النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَصْحَابَهُ، فَلَمَّا فَرَغُوْا قَالَ: أَثِيْبُوا أَخَاكُمْ قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، وَمَا إِثَابَتُهُ؟ قَالَ: إِنَّ الرَّجُلَ إِذَا دُخِلَ بَيْتُهُ فَأُكِلَ طَعَامُهُ وَشُرِبَ شَرَابُهُ فَدَعَوْا لَهُ فَذَلِكَ إِثَابَتُهُ.
অর্থ: আবুল হাইসাম বিন তাইয়িহান একবার খাবার তৈরি করে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার কথিপয় সাহাবিদের দাওয়াত করেন। অতঃপর সকলের খাবার শেষ হলে নবিজি বললেন, তোমাদের ভাইকে প্রতিদান দাও। তারা জিজ্ঞাসা করলেন: ইয়া রাসুলুল্লাহ, প্রতিদান কী? নবিজি বললেন: নিশ্চয় যখন কারো বাড়িতে গিয়ে পানাহার করা হয়, অতঃপর তার জন্য দুআ করা হয়; এটাই তার প্রতিদান। ৮১০
পানি বা দুধ ইত্যাদি পান করানো ব্যক্তির জন্য দুআ
(৫৯১) হজরত মিকদাদ রাদি. থেকে দীর্ঘ প্রসিদ্ধ হাদিসে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন- অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় মাথা আকাশের দিকে উঠিয়ে এই দুআ পাঠ করলেন-
اللَّهُمَّ أَطْعِمْ مَنْ أَطْعَمَنِي، وَاسْقِ مَنْ سَقَانِي.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আতয়িম্মান আতআমানি, ওয়াসকি মান সাকানি।
অর্থ: হে আল্লাহ, যে আমাকে আহার দিয়েছে তুমিও তাকে আহার দাও এবং যে আমার পিপাসা নিবৃত্ত করেছে তুমিও তাকে নিবৃত্ত কর। ৮১১
(৫৯২) হজরত আমর বিন হামিক রাদি. থেকে বর্ণিত- তিনি একবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দুধ পান করালেন। পরে নবিজি তাকে নিম্নোক্ত দুআ দিলেন। ফলে তিনি আশি বছরে উপনীত হলেও একটিও পশম সাদা হয়নি। দুআটি হল-
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আমতিহু বিশাবাবিহ। اللَّهُمَّ أَمْتِعْهُ بِشَبَابِهِ.
অর্থ: হে আল্লাহ, তাকে তার যৌবন ভোগ করার সুযোগ দিন। ৮১২
(৫৯৩) হজরত আমর বিন আখতাব রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
اسْتَسْقَى رَسُوْلُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَتَيْتُهُ بِمَاءِ فِي جَمْجَمَةٍ وَفِيْهَا شِعْرَةٍ فَأَخْرَجْتُهَا، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اللَّهُمَّ جَمِّلْهُ. قَالَ الرَّاوِي : فَرَأَيْتُهُ ابْنُ ثَلَاثٍ وَتِسْعِينَ أَسْوَدُ الرَّأْسِ وَاللَّحْيَةِ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি চাইলে আমি একটি করোটি দিয়ে পানি নিয়ে আসি। এতে একটি চুল ছিল, সেটা আমি বের করে নিলাম। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দুআ দিলেন: اَللَّهُمَّ جَمَّلْهُ )আল্লাহুম্মা যাম্মিলহু: হে আল্লাহ, তাকে সুসজ্জিত করে দিন)। বর্ণনাকারী বলেন, পরে আমি তাকে তিরানব্বই বছর বয়সেও কালো চুল- দাড়ি বিশিষ্ট দেখেছি। ৮১৩
যে কারো মেহমানদারি করে তাকে দুআ দিয়ে উৎসাহিত করা
(৫৯৪) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِيُضِيْفَهُ، فَلَمْ يَكُنْ عِنْدَهُ مَا يُضِيفُهُ، فَقَالَ: أَلَا رَجُلٌ يُضِيْفُ هَذَا رَحِمَهُ اللهُ؟ فَقَامَ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ يُقَالُ لَهُ: أَبُو طَلْحَةَ، فَانْطَلَقَ بِهِ.
অর্থ: এক ব্যক্তি রাসূলের কাছে মেহমান হতে আসল, কিন্তু তার কাছে মেহমানদারি করার মতো কিছু ছিল না। তখন তিনি বললেন, এই ব্যক্তির মেহমানদারি করার কেউ আছেন? আল্লাহ তার ওপর রহম করুন! এটা শুনে এক আনসারি সাহাবি তাকে নিজের সাথে নিয়ে গেলেন। এরপর পুরো হাদিস উল্লেখ করেন। ৮১৪
মেহমানের মর্যাদা দানকারীর গুণগান
(৫৯৫) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
خَرَجَ رَسُولُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ، أَوْ لَيْلَةٍ فَإِذَا هُوَ بِأَبِي بَكْرٍ، وَعُمَرَ، فَقَالَ: مَا أَخْرَجَكُمَا مِنْ بُيُؤْتِكُمَا هَذِهِ السَّاعَةَ؟ قَالَا: الْجُوعُ يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: وَأَنَا وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَأَخْرَجَنِي الَّذِي أَخْرَجَكُمَا، قُوْمُوْا فَقَامُوا مَعَهُ، فَأَتَى رَجُلًا مِنَ الْأَنْصَارِ فَإِذَا هُوَ لَيْسَ فِي بَيْتِهِ، فَلَمَّا رَأَتْهُ الْمَرْأَةُ قَالَتْ: مَرْحَبًا، وَأَهْلًا. فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيْنَ فُلَانُ؟ قَالَتْ: ذَهَبَ يَسْتَعْذِبُ لَنَا مِنَ الْمَاءِ إِذْ جَاءَ الْأَنْصَارِيُّ، فَنَظَرَ إِلَى رَسُوْلِ اللَّهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصَاحِبَيْهِ، ثُمَّ قَالَ: الْحَمْدُ لِلَّهِ مَا أَحَدُ الْيَوْمَ أَكْرَمَ أَضْيَافًا مِنِّي .... وَذُكِّرَ تَمَامُ الْحَدِيثِ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন বা এক রাতে বের হলেন, পথিমধ্যে আবু বকর এবং উমর রাদি. কে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, এ সময়ে তোমরা ঘরের বাইরে কেন? তারা বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! ক্ষুধার তাড়ায়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঐ আল্লাহর শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! তোমাদেরকে যে জিনিস বের করেছে, আমাকেও সে জিনিস বের করেছে। চল, তারা তার সাথে রওনা করলেন। অতঃপর নবিজি এক আনসারির বাড়িতে গেলেন। ঘটনাক্রমে সেই আনসারি বাড়িতে ছিলেন না। তার স্ত্রী নবিজিকে দেখে বললেন, শুভেচ্ছা স্বাগতম! রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, অমুক কোথায়? স্ত্রী উত্তর দিলেন, তিনি আমাদের জন্য মিষ্ট পানির সংগ্রহে গেছেন। এমতাবস্থায় আনসারি ব্যক্তি উপস্থিত হন, তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার দুই সাহাবিকে দেখে আল্লাহর প্রশংসা করে বললেন, মেহমানের দিক থেকে আজ আমার থেকে অধিক সৌভাগ্যবান আর কেউ নেই। (পরে দীর্ঘ হাদিস উল্লেখ করেছেন) ৮১৭
খাবার শেষে যা করণীয়
(৫৯৮) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
أَذِيبُوْا طَعَامَكُمْ بِذِكْرِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ وَالصَّلَاةِ، وَلَا تَنَامُوْا عَلَيْهِ فَتَقْسُوَ لَهُ قُلُوْبُكُمْ.
অর্থ: তোমরা আল্লাহর স্মরণ ও নামাজের দ্বারা খাদ্যকে তরল কর। খাবার রেখে তোমরা ঘুমিয়ে যেওনা, অন্যথায় তোমাদের অন্তর শক্ত হয়ে যাবে। ৮১৮
টিকাঃ
৮০৫. শুকনো খেজুর, ঘি ও পনির দিয়ে তৈরি এক প্রকার খানা।
৮০৬. এখানে সন্দেহ থাকলেও সহিহ মুসলিমের আরেক বর্ণনায় সন্দেহহীন এ কথা আছে।
৮০৭. সহিহ মুসলিম: ২০৪৩, আমাল: ২৯১-২৯৪, নাসাঈ, আমাল: ৪৭৬।
৮০৮. সুনানে আবু দাউদ: ৩৮৫৪।
৮০৯. সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৭৪৭।
৮১০. সুনানে আবু দাউদ: ৩৮৫৩।
৮১১. সহিহ মুসলিম: ২০৫৫, মুসনাদে আহমাদ ৬/২, সুনানে তিরমিজি: ২৭১৯।
৮১২. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৪৭৫।
৮১৩. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৪৭৭, মুসনাদে আহমাদ ৫/৩৪০, মুস্তাদরাকে হাকেম ৩/৫১২।
৮১৪. সহিহ বুখারি: ৪৮৮৯, সহিহ মুসলিম: ২০৫৪/১৭৩।
৮১৫. সুরা হাশর: ৯। সহিহ বুখারি: ৩৭৯৮, সহিহ মুসলিম: ২০৫৪/১৭২।
৮১৬. সহিহ বুখারি: ৬০১৮, সহিহ মুসলিম: ৪৭।
৮১৭. সহিহ মুসলিম: ২০৩৮, সুনানে তিরমিজি: ২৩৮০, জামেউল উসুল: ২৮০৬।
৮১৮. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৪৮৮, ই. সু., আলকামিল ২/৪৯৩। হাদিসটি বানোয়াট।